#মায়াবন বিহারিনী🖤
#৩য় পর্ব
#ফাহমিদা চৌধুরী
তাই বাবা মা যা ভাবার ভাবুক ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আপনার সাথে আমাকে এভাবেই থাকতে হবে মনে রাখবেন কথাটা। মায়া রাহিদের কথাগুলো শুনার পর আর দাঁড়ায়নি রুম থেকে বের হয়ে এসেছে। আপাতত তার কোনো ইচ্ছে নেই রাহিদের সাথে কথা বাড়ানোর। রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে রাহিদ মায়া যাওয়ার বেশকিছুক্ষন পর রাহিদ বের হয়ে যায় ছাদের উদ্দেশ্যে। ছাদে আসার পর কিছুটা ভালোলাগছে। বৃষ্টি হওয়ায় চারিদিকে শীতল বাতাস বইছে। ছাদের একপাশ নানারকম ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো তার মধ্যে অন্যতম হলো বেলি ফুল। পুরো ছাদে বেলিফুলের সুবাসে মৌ মৌ করছে। সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাহিদ প্রকৃতি বিলাস করছে একা একা ছাদে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না ভালোই লাগছে। এই পরিবেশে একটা গান হয়ে গেলে মন্দ হয় না এই ভেবে রাহিদ গুন গুন করে গানের সুর ধরে গান গাইতে লাগলো……
তাকে অল্প কাছে ডাকছি।
আর আগলে আগলে রাখছি।
তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার।
তাকে ছোঁব ছোঁব ভাবছি।
ফের ছুঁয়েই পালাচ্ছি।
ফের তাকেই ছুঁতে যাচ্ছি আবার।
গান শেষ করে রাহিদ কিছুক্ষণ থেকে নিচে চলে যায় রাত হয়ে এসেছে। সবাই ডিনার করে যে যার রুমে চলে যায় শুতে। সেইদিনের মতো রাহিদের সাথে কোনো কথা হয়নি মায়ার। পরেরদিন সকালের আযানের সুমধুর সুরে ঘুম ভাঙে মায়ার। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামায পরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মায়া। বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হয়ে নতুন সূর্য উদয় হবে। বারান্দা থেকে দূরে একটি নদী দেখা যায়। মায়া সেদিকে তাকিয়ে আছে কিছুক্ষণ পর নিচে চলে যায়। এরইমধ্যে সবাই উঠে গিয়েছে। মায়া নাস্তা রেডি করে টেবিলে সাজিয়ে রাখছে। রাহিদ উঠে ফ্রেশ হয়ে একেবারে অফিসের জন্য রেডি হয়ে খাওয়ার টেবিলে এসে বসে পরে। সবাই চলে এসেছে মায়া সবাইকে খাওয়ার পরিবেশন করে দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে রাহিদ ইশারায় মায়াকে বসতে বলে। মায়া ও বাধ্য মেয়ের মতো বসে পরে। রাহিদ খেয়ে অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। আর মায়ার শশুর শাশুড়ী রুমে চলে যায়। মায়া সবগুছিয়ে কিচেনে চলে যায়। রাহিদ অফিসে বসে তার কাজ করছে এরমধ্যে তার ফ্রেন্ড আশিক এসে হাজির হয়। সে এসে রাহিদের পিঠে চাপর দিয়ে তার পাশে বসে পরে। কিরে দোস্ত কি খবর? (আশিক)
হুম আছি আরকি কোনোরকম। তোর কি অবস্থা?(রাহিদ)
হুম আমার অবস্থা ভালো। তা এতদিন দেখা করিস নি কেন রাহিদ? (আশিক)
ওহ এমনি আসলে কিছু সমস্যাই ছিলাম তো এইজন্য। (রাহিদ)
কি সমস্যা আর তাজরির কি খবর? তোরা কবে বিয়ে করছিস?(আশিক)
এবার রাহিদ আশিকের কথাশুনে মুখ মলিন করে ফেলে। তা দেখে আশিক রাহিদকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে তোর রাহিদ? এই প্রশ্নে রাহিদ কিছুক্ষণ চুপ থাকে এরপর এক এক করে আশিক কে সব বলতে শুরু করে। বলার পর রাহিদ দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। আশিক সব শুনে রাহিদকে বলে যা হওয়ার হয়ে গেছে সব ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু কর। দেখ আগের ঘটনা এখন অতিত তাই অতিতের কথা নিয়ে পরে থাকলে হবে না। বর্তমানের দিকটা ও ভেবে দেখতে হবে। যাইহোক তোদের বিয়েটা হয়ে গিয়েছে তুই মান আর না মান সবার সামনে তো স্বামি স্ত্রী। তাই এতদুর এসে ডিভোর্স এর ব্যাপার টা মানায় না। তোর জন্য মায়ার জীবনটা ও নষ্ট হয়ে যাবে। আধো এমনটা কি ঠিক হবে? মেয়েটা কিন্তু তোর খারাপ আচরণ সহ্য করেছে দিনের পর দিন মুখ বুজে, কিচ্ছু বলেনি। তবুও মেয়েটাকে এত কষ্ট দেয়া কি ঠিক। সে তোকে কিছু বলছে না কিন্তু রোজ ই কষ্ট পাচ্ছে। তাই বলছি এই ডিভোর্স এর চিন্তা বাদ দে মায়াকে সময় দে বুঝতে শিখ দেখবি একদিন ঠিক হয়ে যাবে সব নয়তো পরে আফসোস করবি নিজের কর্মের জন্য এই বলে আশিক চলে গেল। আর রাহিদ আশিকের কথাশুনে দোটানায় পরে যায় তার কি আধো মায়ার সাথে এমন করা কি ঠিক হবে কিছুতে কিছুই মেলাতে পারছে না।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে মায়া তার শাশুড়ীর সাথে বসে কথা বলছে। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে মায়া গিয়ে দরজা খুলে দেখে ফাবিহা এসেছে। দরজাই মায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাবিহা বলে এভাবে সং এর মতো দাঁড়িয়ে থাকবে, ভেতরে ঢুকতে দিবে না নাকি? মায়া জ্বি বলে ফাবিহার কথায় দ্রুত দরজা থেকে সরে যায় আর ফাবিহা ভেতরে ঢুকে। ফাবিহা রাহিদের খালাতো বোন। প্রথম থেকেই কেন যেন সে মায়াকে সহ্য করতে পারে না। সবসময় কথা শোনাতে বসে থাকে। মায়া দরজা লাগাতে যাবে এমন সময় রাহিদ এসে উপস্থিত হয়। সে ফাবিহার কথা ও শুনে। ফাবিহা এসে সবার সাথে আলাপ করছে। রাহিদ কে দেখে ফাবিহা দৌড়ে আসে। আর রাহিদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত হয়ে পরে। রাহিদ ফাবিহার কথায় প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত, সে ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে এসে এখনো ফ্রেশ অবদি হয়নি এই মেয়ে তাকে কথাবলার জন্য বসিয়ে রেখেছে। রাহিদের অবস্থা মায়া বুঝতে পেরে বলে আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার জামাকাপড় সব বের করে রেখেছি এই বলে মায়া চলে গেলো। আর রাহিদ মায়ার কথা শোনামাত্র উঠে রুমে চলে গেলো। যাক একপ্রকার বাচিয়ে দিলো মায়া তাকে এই ফাবিহার হাত থেকে নয়তো কথা বলতে বলতে জান বের করে দিতো। শেষ পর্যন্ত মায়া তার অবস্থা বুঝতে পেরেছে ভেবেই রাহিদ মুচকি হেসে উঠে। কাপড় নিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মায়া ফাবিহার জন্য স্যুপ নিয়ে তার রুমে যায়। ফাবিহা মোবাইল টিপছে। মায়াকে স্যুপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ফাবিহা বলে এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন যা দিতে এসেছ দিয়ে চলে যাও। এই বলে ফাবিহা আবার মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। রাহিদ ওইপাশ দিয়ে যাওয়ার পথে ফাবিহার কথা শুনতে পায়। সে ফাবিহার রুমে গিয়ে দেখে ফাবিহা নিজের কাজে ব্যাস্ত আর মায়া ফাবিহার বেডসাইড টেবিল পরিষ্কার করে তার জন্য স্যুপ রাখছে। রাহিদ কিছু না বলে নিচে এসে সোফাতে বসে পরে। মায়াকে নিচে নামতে দেখে রাহিদ মায়াকে একগ্লাস পানি আনতে বলে। মায়া রাহিদের জন্য জগ থেকে পানি এনে দেয় রাহিদ সেটা হাতে নিয়ে মায়াকে বসতে বলে। মায়া না বসে বলে আপনার আর কিছু লাগলে বলুন আমি বসতে পারবো না। রাহিদ পানি খেয়ে গ্লাসটা মায়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে আগে এটা রেখে আসুন আপনার সাথে কিছু কথা আছে। মায়া ও গ্লাসটা টেবিল এ রেখে দেয় তারপর বলে এবার বলুন কি বলবেন। রাহিদ মায়াকে বলে ফাবিহা আপনাকে তখন কথা কেন শোনালো কি প্রব্লেম?
মায়া রাহিদের কথার বিপরীতে বলে এটা আপনি জেনে কি করবেন।আর উনি আমায় কথা শোনায় নি আপনার বুঝতে প্রব্লেম হচ্ছে কোথাও, এই বলে মায়া দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। রাহিদ এখন মায়ার ব্যবহারে প্রচুর বিরক্ত। এই মেয়েটা সবসময় ভালো কথায় উল্টো বুঝে তাকে। যা রাহিদের প্রচুর বিরক্তিকর লাগে। যখন থেকেই রাহিদ মায়ার সাথে ভালোভাবে কথা বলছে তখন থেকেই মায়া যেন তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে একপ্রকার। এই মেয়েটা সে বুঝতে পারে না কখনো। সেই দিন আর মায়া রাহিদের আশেপাশে যায়নি। যে যা বলার বলুক ওই লোককে কেন বলবে সে। কে হই ওইলোক তার দুইদিন পর তো আলাদা হয়ে যাবে এইভেবে মায়া নিজেকে সামলে নেই।
চলবে