মায়াবন বিহারিনী পর্ব – ০১

0
1987

#মায়াবন বিহারিনী🖤
#১ম পর্ব
#ফাহমিদা চৌধুরী

খাবারের প্লেট এর দিকে তাকিয়ে রাহিদ মায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় “হাউ ডেয়ার ইউ?আপনাকে কে বলেছে আমার প্লেটে খাবার দিতে?”

প্রতুত্তরে রাহিদের কথায় মায়া বলে “সবাইকে দিয়েছি তাই আপনার প্লেটেও খাবার দিলাম,মায়ের আদেশ। মাফ করবেন”

রাহিদ মায়ার কথা শুনে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছে, “তোমাদের সমস্যা কি? আমি কি এখন নিজের খাবারটা ও শান্তি মতো খেতে পারবোনা? এখানে ও তোমাদের কথা শুনে চলতে হবে,নিজের কি কোনো ইচ্ছে নেই? অবশ্য তোমাদের বলে কি হবে সবসময় বাধ্য করেছ তোমাদের কথা শুনতে, নিজেদের ইচ্ছেমতো বিয়ে করিয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছো, আর কি বাকি আছে”
কথাগুলো বলে রাহিদ খাবার টেবিল থেকে উঠে হনহন করে চলে গেলো নিজের রুমে। মায়া রাহিদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

মায়া খেতে বস। ওর কথায় কিছু মনে করিস না ছেলেটা বড্ড অগোছালো তুই একটু ঠিক করে দিস।আর হে তোমায় বলছি রাহিদের মা, ছেলেটাকে আশকারা দিয়ে দিয়ে উচ্ছন্নে পাঠিয়েছো তুমি। কার সামনে কীভাবে কথা বলতে হয় তা পর্যন্ত শেখে নি।(রাহিদের বাবা)

বারেহ সব দোষ আমায় দিচ্ছো কেন? সন্তান তো তোমারো। তুমি কি করেছো এতদিন (রাহিদের মা)

হয়েছে মা হয়েছে বাবা এখন আপনারা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি করবেন না ব্যপারটা নিয়ে, উনি হয়ত একটু রেগেছে পরে ঠিক হয়ে যাবে (মায়া)

সেটা তোর বাবাকে বল। সারাদিন আমাকে ঘ্যান ঘ্যান করে মাথা খায়। বিয়ে হয়েছে যাবত শান্তি দিলো না আমায়। ছেলেমেয়ে দোষ করলে আমাকেই কথা শোনাবে (রাহিদের মা)

আচ্ছা হয়েছে মা খেয়ে নিন। আমার কিছু কাজ কিচেনে পড়ে আছে,শেষ করে খেয়ে নিবো। বাবা আর কথা চাই না। খেয়ে নিন (মায়া)

মায়া কথাগুলো বলে দ্রুত কিচেনে চলে গেলো। কিচেনের কাজ শেষ করে সে রুমে গিয়ে নিজের কাপড় নেওয়ার সময় রাহিদের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে মায়া,

রাহিদ উকিলের সাথে কথা বলছে, “যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডির্ভোস পেপার রেডি করুন আমি এই সংসারের ভোজা বইতে পারবো না। আমি মায়াকে খুব শীগ্রই ডিভোর্স দিতে চাই। আপনি প্লিজ ব্যবস্থা করুন ডিভোর্সের”।
এই কথা বলে রাহিদ ফোন রেখে দেয় পকেটে। পাশ ফিরে রাহিদ মায়াকে দেখে থতমত খেয়ে যায় আর ভাবতে থাকে “মায়া যদি তার কথা শুনে ফেলে তাহলে মাকে বলে দেবে। আর মা না জানি কোন কান্ড বাধিয়ে বসে,”
রাহিদের ভাবনার মাঝে মায়া কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
শাওয়ারের নিছে দাঁড়িয়ে মায়া ভাবতে থাকে তার জীবন তো এমন ছিল না। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।নাম ওয়ারিনা আহমেদ মায়া। পড়াশোনা অনার্স পর্যন্ত। এরপর বাবা মায়ের কথায় রাহিদ কে বিয়ে করে। এই বিয়েটাই মায়ার জীবন এ বড় ভুল ছিল। কারণ রাহিদ তাকে কখনো মন থেকে মেনে নেয়নি। বিয়ের প্রথম রাতে মায়া যখন রাহিদকে সালাম করতে যায়, তখন রাহিদ দুই পা পিছিয়ে গিয়ে মায়াকে বলে
” ছোঁবেন না আমায়। বাবা মায়ের কথা রাখতে আমি আপনাকে বিয়ে করেছি। আর তাছাড়া আমি আপনাকে কখনো স্ত্রীর মর্যাদা দিতে পারবো না। আমার উপর অধিকার দেখানোর চেষ্টা করবেন না। যথাসম্ভব আমার থেকে দূরে থাকবেন। কথাগুলো বলে রাহিদ মায়াকে পাশ কাটিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। আর মায়া ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে, মায়ার চোখ ভিজে উঠেছে। তার ও সপ্ন ছিল বাকি আর পাচটা স্বামী সংসার নিয়ে সংসার করার,কিন্তু সেই স্বামী থাকে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এরপর থেকে শুরু হয় মায়ার জীবনে অবহেলা। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে মায়ার চোখ থেকে অঝোর দাঁড়ায় অশ্রু ঝরতে থাকে।”

বেশ কিছুক্ষণ পর মায়া গোসল করে বের হয়। কাপড় গুলো বারান্দায় নেড়ে দিয়ে যখন রুমে আসে তখন রাহিদের মুখোমুখি হয়ে যায়।রাহিদ তাকে দেখেই সরে যেতে নেয় এমন সময় মায়ার কথায় থেমে যায়

“আমি আপনার সব কথা শুনেছি। আপনি আমায় ডির্ভোস দিতে চান তাইনা “(মায়া)

রাহিদ অপ্রস্তুত ভঙিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে এখন সে, মায়া যদি এটা মেনে না নেয়,
রাহিদকে এভাবে দেখে মায়া হাসে এরপর বলতে থাকে, “আপনি যদি ডিভোর্স চান তবে তাই হবে। জোর করে কিছুই হয়না। আপনি ডিভোর্স এর ব্যবস্থা করুন আর হে টেনশন নিয়েন না এই ব্যাপারে মা বাবা জানবে না। ”

এই কথা বলে মায়া রাহিদকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। রাহিদ এখনো বিশ্বাস করতে পারছেনা যে মায়া এত সহজে মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা যাক ভালোই হলো সে মুক্তি পাবে সংসার নামক ভোজা থেকে। নাহ যতটা খারাপ ভেবেছিলাম মেয়েটাকে ততটাও না। আমিই
শুধু শুধু খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। আজ থেকে আমি মায়ার সাথে ভালোভাবে কথা বলবো আর কিছুদিনের অতিথি মাত্র, তারপর সে তার জায়গায় আমি আমার জায়গায়। ভেবেই রাহিদ হেসে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
চারিদিকে আজান হচ্ছে মায়া তার হাতের কাজটুকু শেষ করে অযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় আর মোনাজাতে আল্লাহর দরবারে শুধু নিজের সংসার ভিক্ষা চাই।
রুমে মায়ার ফোন বাজছে অনবরত। মায়া নামাজ সেরে রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে তার মায়ের ফোন। চোখ মুছে গলার স্বর স্বাভাবিক করে ফোন রিসিভ করে,
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছ?” (মায়া)
ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভালো আছি মা। তুই কেমন আছিস? তোর শশুরবাড়ির সবাই কেমন আছে? ( মায়ার মা)

হুম মা আমরা সবাই ভালো আছি। বাবা কেমন আছে মা? বাবার শরীর ঠিক আছে তো? ( মায়া)

হুম তোর বাবা একদম ভালো আছে সুস্থ আছেন। মায়া তোর গলার স্বর এমন কেন শোনাচ্ছে তুই কি ঠিক আছিস? ওখানে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? ( মায়ার মা)

হুম মা সব ঠিক আছে। আচ্ছা মা পরে কথা বলবো এখন কাজ আছে কেমন। ভালোথেকো তোমরা রাখি।এইবলে মায়া ফোন রেখে দেয়। ভাল্লাগছে না কিছু তার সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করছে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার। সেই মুহুর্তে আকাশ ঝাপিয়ে বৃষ্টি নামে। মায়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির পানির আঁচ তার গায়ে লাগছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই সে আপনমনে বৃষ্টি দেখতে ব্যাস্ত। অপরদিকে রাহিদ রুমে এসে ভেজা কাপড় পালটে নিয়েছে। বারান্দায় গিয়ে মায়াকে দেখে সে তার পাশে দাঁড়ায়। আর আড়চোখে মায়াকে পর্যবেক্ষণ করছে বেশকিছুক্ষন পর রাহিদ নিজ থেকে মায়াকে বলে এভাবে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ঠান্ডা লাগবে তো, মায়া এখনো স্থির হয়ে বৃষ্টি দেখছে। মনে হয় কথাগুলো তার কানে গেলো না। রাহিদ মায়াকে জবাব দিতে না দেখে আবারো মায়ার উদ্দেশ্যে বলে

“দেখুন আগের ব্যবহার নিয়ে কষ্ট পাবেন না। আমি না চাইতে ও আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি আসলে এই বিয়েটা করতে চাইনি। বাবা মায়ের চাপে পড়ে আপনাকে বাধ্যগত বিয়ে করতে হয়েছে। আমি একজনকে খুব ভালোবাসতাম হয়তো এখনো বাসি তাই আমার পক্ষে আপনাকে কখনো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। এখন যেহেতু আমি এই বিয়েটা মানিনা তাহলে আপনার সাথে থাকাটা ও বেমানান। আর আমাদের যেহেতু ডিভোর্স হয়েই যাবে তাই আমি চাই এইকয়েক দিন আপনার সাথে ভালোভাবে থাকতে।”

আগের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি দুঃখিত কথাগুলো বলে রাহিদ থামে। মায়া এবার রাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে তার কি বলা উচিত সে নিজে ও বুঝতে পারছে না। শেষমেষ সে কারো জীবনের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে ঢুকে পরলো কথাটা মস্তিষ্কে আসতেই মায়া একমুহূর্তও রাহিদের সামনে দাড়ালো না, রাহিদকে পাশ কাটিয়ে মায়া….

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে