#মায়া
#পর্ব_০৯
#ওয়াহেদ_মাহমুদ
আফসানা তো প্রেগন্যান্ট ছিল বাবা। কিছু বলেছে কি? ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?
হ্যাঁ মা, ওয়াহেদের সাথে কথা হয়েছে আজ। আফসানার মেয়ে হবে।
সুরাইয়া তখন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে। এটাই মনে হয় প্রকৃতির প্রতিশোধ। মেয়ে সন্তান হওয়ার জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে আফসানাকে বিয়ে করেছে। তার পেটে আবার মেয়ে সন্তান। না জানি আফসানার সাথে কেমন ব্যবহার করছে ওয়াহেদ আর শ্বাশুড়ি। দোয়া করি আমার সাথে যেমন হয়েছে আফসানার সাথে না হয়। পরিবার নিয়ে সব সময় সুখে থাকুক আফসানা ওয়াহেদ।
ভালো মন্দ কথা বলে সুরাইয়ার ফোন রেখে দেয়। আজ স্কুলে একটা প্রোগ্রাম আছে। সেখানে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে প্রোগ্রাম থেকে ফিরে আসে সুরাইয়া। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিচ্ছে। ঠিক তখন সুরাইয়ার বাবার নাম্বার থেকে ফোন আসে।
~হ্যালো বাবা!
~আমি আপনার বাবা না।
~তাহলে কে বলছেন আপনি? আর আমার বাবার ফোন আপনারা কাছে কেন?
~আসলে আমি আপনার বাবার প্রতিবেশী বলছিলাম। আপনার বাবা হাসপাতালে ভর্তি আছে। হার্ট অ্যাটাক করেছেন। ডায়াল নাম্বারে প্রথমে আপনার নাম্বার ছিল তাই আপনাকে ফোন দিলাম। আপনি তাড়াতাড়ি পপুলার হাসপাতালে চলে আসেন।
আর কথা না বলে ফোন রেখে সুরাইয়া তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসে। দুই ঘন্টার পথ যেতে অনেকটা সময় লেগে যায় আফসানার। হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে দেখে কান্না করে দেয় সুরাইয়া। তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে সুরাইয়ার।
আমি কি আমার বাবাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারি ডাক্তার সাহেব।
আজ নিয়ে যেতে পারবেন না। আজকের দিনটা হাসপাতালে থাকতে হবে। তারপর কাল সকালে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন।
আমি কি জানতে পারি ডাক্তার আমার বাবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কারণ?
প্রধানত অনেক টেনশন করার কারণে আপনার বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
ডাক্তারের সাথে কথা শেষে সুরাইয়া মারিয়ার কাছে ফোন দিয়ে বলে।
~হ্যালো মারিয়া আমি সুরাইয়ার বলছি।
~হ্যাঁ সুরাইয়া বল?
আমি আজ বাসায় আসতে পারব না। আজ বাবার কাছে থাকতে হবে। তুই একটু পূর্ণতাকে দেখে রাখিস। কাল দেখা হবে।
পরেরদিন সকালে হাসপাতালে বিল পরিশোধ করে সুরাইয়া বাসায় যাই। সাথে আফসানার বাবা ছিল। বাসায় গিয়ে বাবাকে বলে তোমার যা যা প্রয়োজন আমি গুছিয়ে নিচ্ছি। আজ তুমি আমার সাথে যাবে। তোমাকে এখানে আর একা একা থাকতে হবে না।
সুরাইয়ার বাবা তখন বলে না মা এখানে তোর মায়ের স্মৃতি আছে। এই জায়গা ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারব না। চিন্তা করিস না তুই।
ডাক্তারে বলেছেন তুমি বেশি টেনশন করো তাই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এখানে আর থাকা যাবে না। আর তোমাকে মাঝে মাঝে এখানে নিয়ে আসব।
আর তুমি এতো চিন্তা করো কেন?
কই চিন্তা করি আমি?
তাহলে ডাক্তার কি ভুল বলল অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য তোমার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তুমি আর পূর্ণতা ছাড়া আমার এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই। তোমার যদি কিছু হয়ে যায় আমি থাকব কাকে নিয়ে।
অনেক বুঝিয়ে তারপর বাবাকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় সুরাইয়া।
বাবা আর পূর্ণতার সাথে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছে সুরাইয়ার। আজ একটা নতুন চাকুরীর ইন্টারভিউ আছে সুরাইয়ার। ইন্টারভিউ দিয়ে এসে কয়েকদিন পরে চাকুরীর সুসংবাদ আসে। আজকের দিনটা অনেক আনন্দময় সময় সুরাইয়ার জন্য। বেতন বেশ আগের থেকে ভালো। কিন্তু টিউশনি এখনো চালিয়ে যাচ্ছে সুরাইয়ার।
দেখতে দেখতে অনেকদিন কেটে যায়। সময় যেন বাতাসের সাথে অতিবাহিত হচ্ছে। বুঝতেই পারছে না সময় কখন পার হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে প্রায় ৯ মাস আগে ওয়াহেদের কাছে থেকে চলে আসে সুরাইয়া। ওয়াহেদের থেকে বিচ্ছেদ কোনো ভাবেই নিতে পারতো না । কিন্তু সময়ের সাথে সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে আর সুরাইয়া মনটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর ওয়াহেদের কথা মনে পড়ে না সুরাইয়ার। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।
আফসানা প্রায় ১০ মাস ধরে প্রেগন্যান্ট। আজ বাড়িতে কেউ নেই। ওয়াহেদ গিয়েছে অফিসে আর শ্বাশুড়ি গিয়েছে ব্যাংক, টাকা তুলতে। আফসানা যন্ত্রণায় ছটফট করছে। মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু খুব কাছাকাছি। খুব কষ্টে ওয়াহেদকে ফোন দেয় আফসানা।
ভাঙ্গা কন্ঠে বলে হ্যালো ওয়াহেদ তুমি কোথায়?
এইতো আমি অফিসে আছি। কি হয়েছে তোমার কোন দরকার?
একটু বাসায় আসতে পারবে আমার পেটের মধ্যে খুব যন্ত্রণা করছে।
তুমি আম্মার সাথে হাসপাতালে চলে আসো। আমি অফিস থেকে হাসপাতালে চলে যাচ্ছি।
কিন্তু মা বাড়িতে নেই ব্যাংকে গিয়েছে। তুমি একটু বাসায় আসতে পারবে।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় চলে আসে তারপর আফসানাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। ডাক্তার বলেছে সিজার করাতে হবে। আর জরুরি রক্ত ম্যানেজ করতে। “এ” পজেটিভ রক্ত লাগবে। ব্লাড ব্যাংকে “এ” পজেটিভ রক্ত নেই। ওয়াহেদ আম্মাকে ফোন দিয়ে হাসপাতালে আসতে বলে।
হ্যালো মা তুমি কোথায়?
এইতো আমি রাস্তায় আছি। কেন কি হয়েছে?
তুমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসো আফসানা কে নিয়ে হাসপাতালে আসছি।
ওয়াহেদের মা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসে।
কোথাও রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক সেদিনই সুরাইয়া তার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসে। কোনো এক মাধ্যমে জানতে পরে একটা সিজারের রোগী আছে তার “এ” পজেটিভ রক্ত লাগবে। তারপর সুরাইয়া নিজ ইচ্ছায় রক্ত দিয়ে যায়। রক্তের ফ্রম পূর্ণ করে সুরাইয়া। রক্ত দিয়ে চলে যায় সুরাইয়া।
ব্লাড ডোনেট করার সময় একটা ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেটা হাতে নিয়ে ওয়াহেদ দেখে। রক্ত তো সুরাইয়া দিয়েছে। নিজের নাম বাবার নাম তো একদম এক। আর লাস্ট ব্লাড ডোনেট তারিখ দেয়া আছে আমি যেদিন এক্সিডেন্ট করেছিলাম আর সুরাইয়া রক্ত দিয়েছিল সেই তারিখ। এটা সুরাইয়ার ছাড়া আর কেউ না। হাসপাতাল খুঁজে কোথাও পায়নি সুরাইয়াকে। নাম্বারের জায়গা ফাঁকা। ফর্মে নাম্বার দেয়া নেই। নাম্বার থাকলে দিয়ে কথা বলতো। অনেকটা কাছে পেয়ে হারিয়ে ফেলে সুরাইয়াকে।
আফসানার সিজার চলছে। বাহিরের ওয়াহেদ আর আফসানার শ্বাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াহেদ অনেক চিন্তা মধ্যে আছে। দোয়া করছে আফসানা আর সন্তান সুস্থ থাকে কোনো বিপদ না হয়।
কিছুক্ষণ পর সিজার সম্পন্ন হয়। ডাক্তার জানিয়েছেন মা ও সন্তান দুজন সুস্থ আছে। ওয়াহেদ ছুটে সিজার রুমে যায়। কিন্তু ওয়াহেদের মা বাহিরে বসে থাকে। মেয়ে হয়েছে বলে খুশি না। একবারে জন্য দেখতেই গেল না।
ওয়াহেদ সিজারের রুমে গিয়ে দেখ,, এটা কিভাবে সম্ভব ডাক্তার তো বলেছিল আপনাদের মেয়ে সন্তান হবে কিন্তু এটা তো ছেলে সন্তান। ওয়াহেদ তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের সাথে বলে। আপনি তো বলেছিলেন আমাদের মেয়ে সন্তান হবে কিন্তু ছেলে সন্তান কিভাবে।
তখন ডাক্তার বলে আল্ট্রাসনোর মাধ্যমে ১০০ ভাগ নিশ্চিত হওয়া যাই না ছেলে নাকি মেয়ে হবে। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। বাচ্চাটা উল্টে থাকায় রিপোর্টে ভুল হয়েছিল। সিজার করে জানতে পারি ছেলে হবে।
ওয়াহেদ গিয়ে সব কথা মাকে বলে। রিপোর্ট ভুল ছিল মেয়ে না ছেলে হয়েছে। ওয়াহেদের মা অনেক খুশি ছেলে হয়েছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে কোলে নেয়। ওয়াহেদের মার চোখে মুখে খুশি আর ধরে না।
হঠাৎ করেই আফসানা,,,,
চলবে,,,,,
বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।