#মায়া
#পর্ব_০৮
#ওয়াহেদ_মাহমুদ
ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে আলট্রাস্নোগ্রাফ রিপোর্টে জানা যায় আফসানার মেয়ে সন্তান হবে। ওয়াহেদ, আফসানা আর শ্বাশুড়ি অপেক্ষা করছিল রিপোর্টের জন্য। রিপোর্ট নিয়ে এসে ডাক্তার বলে। কনগ্রাচুলেশন ওয়াহেদ আফসানা আপনাদের মেয়ে সন্তান হবে।
রিপোর্ট শুনে আফসানার চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ। কিন্তু ওয়াহেদের মুখে বিষন্নতার ছাপ নেই। ওয়াহেদের মুখে খুশির ছাপ। কারণ সুরাইয়ার একটা কথা এখনো ওয়াহেদের মনের মধ্যে নাড়া দিয়ে উঠে। সুরাইয়া তার চিঠিতে লিখে যায় তুমি যে মেয়ে সন্তান জন্য আজ আমাকে প্রত্যাখ্যান করলে সেই মেয়ে সন্তানের পেটেই কিন্তু একটা ছেলে বা মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ওয়াহেদ তার ভুল বুঝতে পেরেছে।
হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসে সবাই। বাসায় এসে আফসানা চিন্তায় পড়ে যায়। মেয়ে সন্তান হওয়ার জন্য ওয়াহেদ সুরাইয়াকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে করেছিল। অনেক যন্ত্রনা সহ্য করতে হয়েছে সুরাইয়াকে। নিজের স্বামী কে অন্য মেয়ের সাথে শেয়ার করা সত্যিই অনেক কষ্ট কর। আবার কি ওয়াহেদ অন্য বিয়ে করবে নাকি আমাকে চাপ সৃষ্টি করবে সন্তানের জন্য। অনেক চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে খেলতে থাকে আফসানার।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ওয়াহেদ অফিস থেকে বাসায় আসে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তারপর খাবার খেতে আসে। খাবারের টেবিলে ওয়াহেদ আর ওয়াহেদের মা বসে আছে কিন্তু আফসানা নেই।
আফসানা নেই কেন মা?
জবাবে ওয়াহেদের মা গম্ভীর গলায় বলে। জানি না আসেনি কেন। তুই গিয়ে দেখ।
ওয়াহেদ আফসানার রুমে গিয়ে দেখে কান্না করছে। ওয়াহেদ আফসানার পাশে গিয়ে বলে কি হলো কান্না করার কারণ কি?
কিছু হয়েছে কি?
আফসানা চোখ মুছে বলে তুমি সুরাইয়ার মতো কি আমাকেও ছেড়ে দিবে? আফসানার সাথে তুমি, শ্বাশুড়ি আমরা অনেকে অন্যায় করেছি। ছেলে সন্তান হবে নাকি মেয়ে সন্তান হবে সেটা আমরা নির্ধারিত করি না। এটা তো একমাত্র আল্লাহ নির্ধারণ করে।
ওয়াহেদ আফসানাকে খাওয়ার টেবিলে নিয়ে আসে। আফসানার শ্বাশুড়ি তখন বলে আমাদের সময় এমন ছিল না। আমাদের স্বামী আমাদের হাত ধরে খাবারের টেবিলে নিয়ে আসেনি। আমরা তো আগে থেকেই খাবার টেবিলে এসে খাবার গুছিয়ে রাখতাম। স্বামী, শ্বাশুড়ি, শ্বশুর কে খেতে দিয়ে তারপর আমরা খাওয়া দাওয়া করতাম।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদের মা বলে তোর সাথে কিছু কথা আছে ওয়াহেদ।
হ্যাঁ মা বলেন?
তোর আগের বোউ সুরাইয়ার মেয়ে হয়েছিল তখন তুই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিস। এখন তো আর তৃতীয় বিয়ে করা যাবে না। মানুষ খারাপ বলবে। তুই কাল গিয়ে আফসানার এবোরশন করিয়ে নিয়ে আসবি।
আফসানা তখন অবাক চোখে বলে এসব কি বলছেন আম্মা এবোরশন কেন করবো। কারোর কি মেয়ে সন্তান হতে পারে না? তাই বলে কি এবোরশন করতে হবে?
শ্বাশুড়ি তখন ধমক দিয়ে বলে তুমি চুপ থাকো তোমার কাছে কি কোনো অনুমতি চেয়েছি? আমি ওয়াহেদের সাথে কথা বলছি আমরা যাই বলব সেটা করবে তুমি।
আফসানা তখন খাবার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আপনার কি মনে হয় আমি সুরাইয়ার মতো নরম না যা ইচ্ছা বলে যাবেন যা ইচ্ছা করে যাবেন। এটা আমার আর ওয়াহেদের সন্তান যা করার আমরা করব আশা করি আপনি আমাদের বিষয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করবেন না। তারপর আফসানা নিজের রুমে চলে যায়।
ওয়াহেদের মা তখন ওয়াহেদকে বলে দেখছিস বোউ এর সাহস কত আমার সাথে কিভাবে কথা বলে। তোর জন্য এমন হয়েছে বেশি মাথার তুলে ফেলেছিস। আজ থেকে বোউ কে লায় দিবি না শাসনের মধ্যে রাখবি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদ বলে। আফসানা একদম ঠিক বলেছে মা। আফসানার কথায় ভুল দেখছি না আমি।
কি সব আজেবাজে বলিস তুই। মায়ের থেকে কি বোউ বড় হয়ে গিয়েছে এখন তোর কাছে? আর এখন আফসানার পক্ষ নিয়ে কথা বলছিস।
আমি কারোর পক্ষে নিয়ে কথা বলছি না মা। তুমি একটা জিনিস গভীর ভাবে ভেবে দেখো। আফসানা কিন্তু ঠিক বলেছে এটা আমার আর আফসানার বিষয়। মেয়ে সন্তান হলেই কি এবোরশন করতে হবে।
তাহলে আমার কথায় কোনো দাম নেই।
আচ্ছা মা তুমিও তো একজন মেয়ে তাহলে মেয়ের প্রতি এতো ঘৃণা কেনো? তোমার জন্মের সময়ই কি তোমার বাবা, মা আর নানা নানি কি তখন তোমার মাকে বলেছিল এবোরশন করে নিতে। আচ্ছা এটা বাদ দাও তোমার যখন মেয়ে হয় মানে আমার বোনের সংবাদ যখন তোমার বাসায় পৌছে তখন কি তোমার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি তোমার স্বামী কি তোমাকে বলেছিল আমাদের ছেলে সন্তান লাগবে মেয়ে সন্তান লাগবে না। তখন কি বলেছিল এবোরশন করে নিতে। একজন মেয়ের গর্ভে কিন্তু একটা সন্তানের জন্ম হয় সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে হোক। একটা মেয়ে হয়ে একজন মেয়েকে ঘৃণা করতে তোমার লজ্জা করে না?
ওয়াহেদের মা আর কিছু বলছে না। চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ওয়াহেদ বলে। এখন আমার অনেক আফসোস হয়। সুরাইয়ার সাথে আমি অনেক অন্যায় করেছি। তোমার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও অনেক নির্যাতন করেছি। দ্বিতীয় বিয়ে করেছি ঠিক মতো কথা বলিনি সময় দেয়নি তার সাথে। সুরাইয়া কে ছাড়া এই বাসা শূন্য শূন্য লাগে। যে মানুষটার সাথে দশ বছর সংসার করলাম সন্তান বাদে নিঃস্বার্থ ভাবে। আর যেই মেয়ে হলো তোমার উস্কানিমূলক কথায় কথায় সুরাইয়ার সাথে নির্মমভাবে আচরণ করলাম। যেভাবেই হোক আমি সুরাইয়াকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আর আফসানার বিষয়ে তুমি নাক গলাতে আসবে না। এটা বলে ওয়াহেদ চলে যায়।
অফিস শেষে পরেরদিন আবার সুরাইয়ার বাসায় যায় ওয়াহেদ। সুরাইয়ার বাবা কে বলে সুরাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বাবা।
না সুরাইয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আপনার কোনো আত্মীয়ের বাসায় খোঁজ নিয়ে দেখেছেন কি সেখানে আছে কি?
হ্যাঁ আমি খোঁজ নিয়েছি কোথায় নেই।
বাবা আপনি যদি অনুমতি দেন আমাকে তাহলে আমি পুলিশ রিপোর্ট করতে পারি? আর আপনিও জানেন না সুরাইয়া এখন কোথায়। আমার মনে পুলিশ রিপোর্ট করলে ভালো হবে। জানিনা কোথায় কোন বিপদে আছে।
সুরাইয়া কোথায় যেতে পারে এটা তুমি ভালো জানো। আমি কিভাবে বলব। তোমার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্যই তো বাসা থেকে চলে গিয়েছে। এখন কেনো বারবার খোঁজ নিতে আসো সুরাইয়ার। আবারও নির্যাতন করতে চাও। আমার বাসায় যদি সুরাইয়ার থাকতো তাহলে আমার মেয়েকে তোমার মতো কাপুরুষের হাতে কখনো তুলে দিতাম না।
আর হ্যাঁ পুলিশ রিপোর্ট করলে তুমিই বিপদে পড়বে। রিপোর্ট করার পর তোমাদের সাথে কথা বলবে। তখন কি বলতে পারবে তুমি আর তোমার মা কতটা পরিমাণ নির্মমভাবে অত্যাচার করেছ।
ওয়াহেদের মুখে আর কথা নেই। অনুশোচনা দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে বাবা তো ঠিক বলছেন। বাবার দিকে তাকিয়ে বলে হ্যাঁ আমি সব বলতে পারব। আমি সব শাস্তি গ্রহণ করতে রাজি আছি বাবা। আমি শুধু সুরাইয়াকে ফিরে পেতে চাই।
সুরাইয়ার বাবা তখন বলে কিছু করতে হবে না তোমার, পুলিশ রিপোর্ট ও করতে হবে না। সবকিছু আমি দেখব। তুমি যদি সুরাইয়াকে ফিরে পেতে চাও তাহলে চুপচাপ বাসায় চলে যাও যা করার আমি করব।
আর হ্যাঁ শুনো তোমার দ্বিতীয় স্ত্রী তো প্রেগন্যান্ট ছিল তার কি খবর। নিশ্চয়ই ছেলে সন্তান হবে। ছেলে সন্তান হওয়ার কথা কারণ ছেলে সন্তানের জন্য তো দ্বিতীয় বিয়ে।
না বাবা আবারও মেয়ে হবে। ওয়াহেদ আর কিছু না বলে লজ্জা মাথায় চুপচাপ সুরাইয়ার বাসা থেকে চলে আসে। ১০২২
ওয়াহেদ চলে যাওয়ার পরে। সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়াকে ফোন দিয়ে সব কথা বলে। আর এটাও বলে যে তুই চলে আই মা। ওয়াহেদ অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ওয়াহেদের সাথে আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।
না বাবা এমন টা আর হবে না। ওয়াহেদ আফসানার সাথে সাথে সুখে থাকুক। আর আফসানা তো প্রেগন্যান্ট ছিল। কিছু বলেছে কি? ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে?
হ্যাঁ আফসানার,,,,,
চলবে,,,