#মাতৃত্বের স্বাদ
#পর্ব-৯
#লেখায়-নামিরা নূর নিদ্রা
৩২.
“আমাকে এখানে কেন আটকে রাখা হয়েছে?”
কথাটা এক প্রকার চিৎকার করেই বললো রাজ। তানভীর রাজের ঠিক বিপরীত পাশে বসে আছে। রাজের এমন চিৎকার শুনে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে মুচকি হাসলো তানভীর।
“নাম মাত্র পুলিশ এখন তার ডিউটি সঠিকভাবে পালন করছে মিস্টার রাজ!”
রাজ তানভীরের এমন খোঁচা দিয়ে কথা বলার কারণ বুঝতে পেরে আরো রেগে গেল।
“হেই মিস্টার তানভীর! খুব বড়ো ভুল করছো তুমি।”
“ওহ্ আচ্ছা তাই? তা কী ভুল করলাম শুনি।”
“আমাকে এই জেলখানায় আটকে রেখেছো কেন?”
“কারণ তুমি তোমার প্রেমিকাকে খু*ন করেছো। তাও কিনা গর্ভাবস্থায়! ছিঃ রাজ। তুমি এতটা নিচু কীভাবে হতে পারলে? ভার্সিটিতে তোমার দাদা গিরি দেখেও কিছু বলিনি। অন্যায় করলেও চুপ থেকেছি। কিন্তু এখন আমি একজন আইনের লোক। আর তুমি একজন অপরাধী। তাই এবার তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে।”
“আমি কাকে মেরেছি?”
“রিংকিকে।”
“আমি যে রিংকিকে মেরেছি তার কোনো প্রমাণ আছে?”
“হ্যা প্রমাণ আছে।”
“কোথায় সেই প্রমাণ? দেখাও আমাকে।”
রাজের কথা শুনে তানভীর চুপ করে ভাবতে লাগলো,
“আসলেই তো আপাতত আমাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। হ্যা রিংকি সেদিন থানায় এসে যা যা বলেছে তার সবকিছুই আমাদের সিসিটিভি ফুটেজে রেকর্ড করা আছে। কিন্তু একটা খু*নের মামলার জন্য আরো স্ট্রং প্রমাণ দরকার। সেটা কোথায় পাবো?”
“কি হলো পুলিশ অফিসার? কী ভাবছেন?”
রাজের এমন বাকা হাসি দেখেও কিছু বললো না তানভীর। বেশ কিছুক্ষণ পর তানভীর রাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“প্রমাণ দেখাবো। তার আগে তৈরি হও কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর জন্য। আদালতে সবার সামনে প্রমাণ পেয়ে যাবে। তোমার নামে চার্জশিট তৈরি করা হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।”
তানভীরের কথা শুনে রাজ ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে মনে মনে বললো,
“তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবে না অফিসার। এখন তোমার নিজের জীবনই হুমকির পথে হাহাহাহাহা!”
৩৩.
রকিং চেয়ারে বসে আছে তানভীর। চোখ দুটো বন্ধ। কিন্তু মনটা অশান্ত। কষ্ট হচ্ছে খুব। এতদিন চুপ ছিল। কিন্তু আজ আর নয়। বন্ধু হিসেবে অনেক ছাড় দিয়েছে সে রাজকে। রাজ ওর জীবন থেকে যা যা কেড়ে নিয়েছে তাতে সে চাইলেই পারতো রাজকে শাস্তি দিতে। কিন্তু বন্ধু তো! এই ভেবে বারবার ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তানভীর এখন আইনের রক্ষক। এই তো সময় রাজকে শাস্তি দেওয়ার৷ যেভাবেই হোক রাজের এত বড়ো অন্যায়ের শাস্তি রাজকে পেতেই হবে। টাকার জোরে বা মিথ্যা সাক্ষী দিয়েও যেন সে ছাড় না পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। রিংকি যেই প্রমাণের কথা বলেছিল সেটা খুঁজতে হবে। আর চুপ করে বসে থাকা যাবে না। এবার যা করার তানভীরকেই করতে হবে।”
এটা ভেবেই তানভীর রকিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। তখনই কলিং বেলের আওয়াজ হলো। কলিং বেলের আওয়াজে তানভীরের ভ্রূদ্বয় খানিকটা কুঁচকে গেল। ঘড়িতে এখন রাত দুইটা! বাড়ির সবাই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। নন্দিনী ও এখন বাড়িতেই আছে। ওদের ঘরে ঘুমাচ্ছে সে। তবে এত রাতে কে আসলো? আবারো কলিং বেল বাজতেই তানভীর ‘আসছি’ বলে মেইন দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলে কাউকে না দেখে আশেপাশে তাকালো তানভীর। তখনই দরজার পাশে একটা ছোট্ট বক্স পেল সে। বক্সটা তুলে ভালো করে চেক করে নিলো তানভীর। তারপর দরজা লাগিয়ে ভেতরে এসে বক্সটা খুলতে গিয়ে তানভীর অবাক হয়ে গেল। কারণ ভেতরে দুইটা সিডি, একটা পেন ড্রাইভ, একটা মোবাইল ফোন আর একটা চিরকুট আছে। চিরকুটে লেখা,
“এই সবকিছু রিংকির খু*নের সাথে সম্পর্কিত। রিংকির খু*নের সকল প্রমাণ এখানে আছে। আর সবথেকে বড়ো প্রমাণ সময় মতো পেয়ে যাবেন আপনি। আপনার কাছে শুধু একটাই রিকোয়েস্ট স্যার। রিংকির খু*নের যেন সঠিক বিচার হয়।”
ব্যাস! এটুকুই লেখা ছিল চিরকুটে। তানভীর চিরকুট রেখে দ্রুত পদে হেঁটে স্টাডি টেবিল থেকে ল্যাপটপ এনে পেন ড্রাইভ ঢুকিয়ে ভিডিয়ো অন করতেই রাজ আর রিংকির অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দেখতে পেল। ঘৃণায় তানভীর চোখ বন্ধ করে ফেললো। তবুও ইনভেস্টিগেশনের জন্য সম্পূর্ণ ভিডিয়োটা দেখলো সে। ভিডিয়োতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রাজ রিংকির সাথে জোর করে নয়, বরং রিংকি নিজ ইচ্ছাতেই রাজের সাথে ফিজিক্যালি ইনভলভ হয়েছে। তাহলে রিংকি কেন বললো যে রাজ তার সাথে জোর করে সম্পর্কে জড়িয়েছে? আর রিংকি যদি এই পেন ড্রাইভের কথা ই বলে থাকে৷ তাহলে রিংকি ফেঁসে যেতো। না না, কোনোভাবেই হিসাব মিলছে না। কিছু একটা ঝামেলা তো অবশ্যই আছে। আর সবথেকে বড়ো কথা, এগুলো তানভীরকে কে পাঠালো? কিছুই বুঝতে পারছে না তানভীর। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে সিডিগুলোর মধ্যে একটা অপেন করতেই তানভীর দেখতে পেল, রাজ রিংকিকে নিয়ে একটা রিসোর্টে বসে আছে। রিংকির মুখে হাসি। আর রাজের মুখে দুশ্চিন্তা। সিডিতে সাউন্ড শোনা যাচ্ছে না। তাই রাজ আর রিংকির মধ্যে কী কথা হয়েছে বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎই রাজ রিংকিকে জড়িয়ে ধরে৷ আর তারপর কিছু দেখা গেল না। আরেকটা সিডি অপেন করার আগেই পেছন থেকে নন্দিনী ডেকে উঠলো তানভীরকে।
“এখনো ঘুমাওনি তুমি?”
“নতুন একটা কেসের কাজ করছি। একটু পরেই ঘুমাবো। কিন্তু তুমি এখনো জেগে আছো কেন?”
“না না। আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম। ওই আমার একটু ক্ষুধা লেগেছে তাই খাওয়ার জন্য উঠেছি।”
“আচ্ছা তুমি খেয়ে নাও। আমি যাই। ঘুমাবো। বাকি কাজ পরে করবো।”
“আচ্ছা যাও তুমি ঘুমাও। আমি কিছু খেয়ে একটু পরেই আসছি।”
কথাটা বলেই নন্দিনী রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। এদিকে তানভীর সবকিছু প্রমাণ গুছিয়ে নিজের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রেখে ঘুমাতে চলে গেল।
৩৪.
অনু টিভি দেখছিল। চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে খবরের চ্যানেলে আসতেই একটা খবর দেখে চোখ আটকে গেল অনুর। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হচ্ছে,
“ঢাকা কলেজের আসিফ নামের একজন ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে কিছু দিন আগে। সেই কেসের তদন্ত শেষ না হতেই আজ ভোরে ঢাকা নিউ মার্কেটের পাশের একটা জায়গায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরব নামের একজন ছাত্রকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে আসিফ আর নিরবের মৃত্যুর বেশকিছু মিল রয়েছে। তাই পুলিশ কমিটি সন্দেহ করছে এগুলো কোনো সড়ক দুর্ঘটনা নয়। বরং পরিকল্পিত খু*ন। তাই এই কেসের তদন্ত করতে কোনো রকম গাফিলতি করবে না কেউ। এমনটাই জানিয়েছেন পুলিশ সুপার জিয়াউল ইসলাম।”
নিউজটা দেখেই অনু কিছুটা সময় এক ধ্যানে টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল। কোনো এক অদৃশ্য কারণে অনুর মনে হচ্ছে এসব বড়ো কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস। এই সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। অনু টিভি বন্ধ করে অজান্তার ঘরে গিয়ে দেখলো অজান্তা পড়ছে৷ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। বোনকে এমন মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখে অনু আর কিছু না বলেই অজান্তার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তারপর নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।
চলবে…