#মরীচিকাময়_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
প্রত্যুষ মৌকে দেখে সম্পূর্ণ ভাবে এড়িয়ে যায়। এমন ভাব করে যেন চেনেই না। অন্যদিকে মৌ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে প্রত্যুষের দিকে। প্রত্যুষ যে এই ক’বছরে এত ধনী হয়ে উঠবে সেটা কল্পনাও করতে পারে নি মৌ। এখন তো সে শামিমের থেকেও বেশি ধনী। ভেবেই হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে মৌয়ের। এখন সে ভাবছে প্রত্যুষকে ছেড়ে দিয়ে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।
পুরো পার্টি জুড়ে মৌ সুযোগ খুঁজছিল প্রত্যুষের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলার। কিন্তু সেই সুযোগটাই পাচ্ছিল না।
এরমধ্যে মৌরীও সেই পার্টিতে এসে উপস্থিত হয়। মৌরীকে দেখে শামিম হাসিমুখে এগিয়ে যায়। তাকে স্বাগতম জানিয়ে বলে,
“আসুন মিস মৌরী চৌধুরী। কেমন আছেন আপনি?”
“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ভাইয়া আর আপনি?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ। আপনি পার্টিতে আসায় আমি তো ভীষণ খুশি হয়েছি। এনজয় করুন।”
মৌরী স্মিত হাসে। তন্মধ্যে প্লাবণও হঠাৎ করে তাদের মাঝে চলে আসে। প্লাবণ ও মৌরী একে অপরকে দেখে কিছুটা বিব্রতবোধ করে। শামিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বলে,
“প্লাবণ তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে আয়।”
মৌরী বলে,
“আচ্ছা আমি তাহলে আশপাশটা একটু ঘুরে দেখি।”
বলেই সে চলে যায়। প্লাবণের সামনে পড়লেই মৌরী তাকে এভাবে এড়িয়ে যায়। ডিভোর্সের পর থেকে তাদের মধ্যে আর কখনো কথা হয়নি। মৌরী তো প্লাবণকে দেখলেই এড়িয়ে যায় আর প্লাবণও নিজ থেকে মৌরীর সাথে কোন কথা বলে না। এর মূল কারণ নিজের মধ্যে থাকা গিলটি ফিলিংস। শামিম প্লাবণের কাধে হাত রেখে বলে,
“মৌরী যে এভাবে তোকে এড়িয়ে গেল এটা কি তোর খারাপ লাগল?”
“খারাপ লাগলেও আমার কিছু করার নেই। আমি ওর সাথে যেই অন্যায় করেছিলাম তাতে ওর এমন করাই স্বাভাবিক। তাছাড়া আমাদের মধ্যে তো সব সম্পর্ক অনেক আগেই শে’ষ হয়ে গেছে।”
শামিম আর কিছু বলল না। প্লাবণের জন্য তার খারাপ লাগলেও সে জানে যা হয়েছে তার জন্য প্লাবণই দায়ী। আর কর্মফল তো সবাইকেই ভোগ করতে হবে।
★★★
প্রত্যুষকে একা পেয়ে তার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে মৌ। প্রত্যুষের মধ্যে একই সাথে বিরক্তি ও রাগ ভড় করল। ইচ্ছা করল মৌকে ঠা’টিয়ে একটা চ’ড় মা’রতে। কিন্তু পরিস্থিতি সাপেক্ষে সে এটা করতে পারল না। নিজের রাগ দমিয়ে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করল। অতঃপর বলল,
“কি হয়েছে কি তোমার? কেন আমার সামনে এসেছ?”
“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
“কিন্তু আমার তোমার সাথে কোন কথা নেই। ভালোয় ভালোয় আমার পথ ছেড়ে দাঁড়াও।”
“এমন কেন করছ তুমি প্রত্যুষ? আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসতাম!”
“ভালোবাসা মাই ফুট! তোমার মতো মেয়েকে আমি একসময় ভালোবাসতাম ভেবেও আমার কেমন জানি লাগছে। নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে।”
“তুমি মুখে যতো যাই বলো প্রত্যুষ আমি এটা জানি যে, তুমি এখনো শুধু আমায় ভালোবাসো।”
প্রত্যুষ বিদ্রুপাত্মক হেসে বলে,
“তুমি তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছ। কারণ তোমার প্রতি ঘৃণা ছাড়া আমার আর কোন অনুভূতি নেই।”
“তাহলে তুমি এখনো লাইফে মুভ অন করোনি কেন? কেন এখনো একা আছ? আমি জানি তুমি এখনো আমার ফেরার অপেক্ষায় আছ। আমাকে পাওয়ার জন্যই তো তুমি এত বড়লোক হয়েছ।”
“জাস্ট সাট আপ। তুমি কি করে ভাবলে যে তোমার মতো একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য আমি অপেক্ষা করব? আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আর খুব শীঘ্রই তাকে বিয়েও করতে চলেছি।”
“আমি জানি তুমি মিথ্যা বলছ প্রত্যুষ। আমি ছাড়া আর অন্য কোন মেয়েকে তুমি ভালোবাসতে পারো না। আর যদি ভালোবেসে থাকো তাহলে কোথায় সেই মেয়ে? তার তো এখন তোমার সাথে এই পার্টিতে থাকার কথা।”
“সে এই পার্টিতেই আছে। একটু ওয়েট করো যখন কাপল ডান্সের সময় আসবে তখন আমরা দুজনে একসাথে কাপল ডান্স করব। ও তোমার থেকেও সুন্দরী জানো? আমাদের না খুব সুন্দর মানায়।”
প্রত্যুষের কথা শুনে খুব ঈর্ষা হয় মৌয়ের। সে বলে ওঠে,
“আমিও দেখব তুমি আমার থেকে কত সুন্দরী মেয়ে পেয়েছ।”
★★★
প্রত্যুষ খুব চিন্তায় পড়ে গেছে। সে তো বলে দিয়েছিল যে তার প্রেমিকার সাথে একসাথে কাপল ডান্স করবে। কিন্তু এখন সে প্রেমিকা কই পাবে? তার জীবনে তো কেউ নেই! প্রত্যুষ এটা নিয়েই চিন্তিত ছিল এমন সময় নিজের চোখের সামনে মৌরীকে দেখতে পায়। সাথে সাথেই তার মুখে ক্রুর হাসি ফুটে ওঠে। সে মৌরীর কাছাকাছি যায়। মৌরী প্রত্যুষকে আচমকা দেখে হচকচিয়ে যায়। প্রত্যুষ মৌরীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,
“আপনি কি আমার সাথে ডান্স করবেন?”
মৌরী ভীষণই অবাক হয়। কিন্তু এভাবে সবার সামনে না করে দেওয়া ভালো হবে না জন্য সে প্রত্যুষের সাথে ডান্স করতে রাজি হয়ে যায়।
মৌও শামিমের সাথে ডান্স করছিল। মৌ আর প্রত্যুষকে একসাথে ডান্স করতে দেখে হিংসায় জ্বলে পু’ড়ে যায় সে। কারণ মৌ সৌন্দর্য, যোগ্যতা এবং চাল চলন সব দিক দিয়েই তার থেকে যোজন যোজন এগিয়ে। তার সাথে মৌরীর কোন তুলনাই চলে না। তবে তাদের এই কাপল ডান্স শুধু মৌকেই না প্লাবণের অন্তরকেও জ্বা’লিয়ে ভস্ম করে দেয়।
★★★
প্রত্যুষ মৌয়ের জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। মৌ প্রতিনিয়ত তাকে ফোন করে নানাভাবে বিরক্ত করছে। মৌরী যদি তার প্রেমিকা হয় তাদের একসাথে কেন দেখা যায়না, তারা বিয়ে করবে কবে এরকম নানা প্রশ্ন করে সে। প্রত্যুষ মৌয়ের এরকম জ্বা’লায় অতীষ্ঠ হয়ে খুবই বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এখন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যই মৌরীর কোম্পানির দিকে যাচ্ছে সে।
মৌরীর কোম্পানিতে গিয়ে সে মৌরীর সাথে পার্সোনাল মিটিংয়ের কথা বলে। যেখানে শুধু মৌরী আর প্রত্যুষই থাকবে। মৌরী নিজের কোম্পানির কথা ভেবে রাজি হয়ে যায়।
এই রুদ্ধদ্বার বৈঠককে প্রত্যুষ মৌরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“দেখুন মিস চৌধুরী আমরা এই প্রজেক্টটার জন্য অনেক বড় বড় কোম্পানির থেকে অফার পেয়েছি। আপনাদের কোম্পানি সেই তুলনায় কিছুই নয়। তবুও আমি আপনাদের কোম্পানির সাথে ডিল ফাইনাল করতে রাজি আছি তবে একটা শর্ত আছে।”
“কি শর্ত আছে আপনার?”
“আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে।”
“হোয়াট!!”
“আগে আমার পুরো কথা শুনুন, এটা কোন স্বাভাবিক বিয়ে হবে না। এটা হবে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ।”
“আপনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি মিস্টার প্রত্যুষ খান। আপনি এখানে বিজনেস মিটিং করতে এসে আমাকে ম্যারেজ প্রপোজাল দিচ্ছেন!”
“আমি যেই প্রপোজাল দিচ্ছি সেটা আপনার জন্যেও লাভজনক। আমি আপনাদের কোম্পানির বর্তমান অবস্থা জানি। আপনাদের অনেক লোন আছে। যা খুব দ্রুত শোধ করতে হবে। নাহলে আপনাদের দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে। তাই আমাদের সাথে বিজনেস ডিলটা করা আপনাদের জরুরি। এছাড়া আপনার ব্যক্তিগত লাভও আছে। ৬ মাস পর ডিভোর্স হলেও আমার প্রোপার্টির একটা হিউজ শেয়ার আপনি পাবেন।”
“আপনি কি আমাকে লোভ দেখাচ্ছেন নাকি?”
“লোভ না আমি আপনাকে অফার দিচ্ছি। আপনি অফারটা নেবেন কিনা ভেবে দেখুন।”
প্রত্যুষ উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর মৌরীর দিকে নিজের কার্ড এগিয়ে দিয়ে বলে,
“যদি আমার অফারটা ভালো লাগে। তাহলে এই কার্ডে দেওয়া নাম্বারে ফোন করবেন।”
বলেই প্রত্যুষ চলে যায়।
★★★
মৌরী নিজের বাসায় ফিরে প্রত্যুষের অফারটার কথাই ভাবতে থাকে। সত্যিই তাদের কোম্পানির অবস্থা খারাপ। তার বাবার তিল তিল করে গড়ে তোলা এই কোম্পানির এত বাজে অবস্থা দেখে তার মোটেই ভালো লাগছে না। তবুও মৌরী অনেকটাই সংকোচে ছিল। এরমধ্যে হঠাৎ করে আতিফা বেগম তাকে ফোন করেন। মৌরী ফোনটা রিসিভ করতেই তিনি বলেন,
“তোর বাবার সাথে আমি সব কথা বলে নিয়েছি। কাল থেকে তোর জন্য পাত্র দেখা শুরু করব। তোর কোন বারণ শুনব না।”
মৌরী কোন কিছু না বলে ফোনটা রেখে দেয়। অতঃপর ভাবতে থাকে,
“আমার মনে হয় প্রত্যুষ খানের অফারটা এক্সসেপ্ট করাই ভালো হবে এমনিতেও তো আমি বিয়েতে ইন্টারেস্টেড নই। কিন্তু আব্বু আর বড়মা মিলে তো আদাজল খেয়ে আমার বিয়ে দিতে নেমে পড়েছে। প্রত্যুষ খানকে বিয়ে করলে ৬ মাসের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যাবে আবার কোম্পানিরও প্রব্লেম সলভ হবে।”
এমন ভাবনা থেকে মৌরী প্রত্যুষের কার্ডটা থেকে তার নাম্বার নিয়ে ডায়েল করে। অতাপ প্রত্যুষ ফোনটা রিসিভ করে বলে,
“হ্যালো কে বলছেন?”
“আমি মৌরী চৌধুরী বলছিলাম।”
“বাহ, এত দ্রুত যে কল করবেন ভাবতে পারিনি। বলুন কি বলবেন।”
“আমি আপনার অফারটা নিয়ে অনেক ভাবলাম। আমি আপনার সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে রাজি আছি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨