#মন শহরে তোর আগমন
#লেখনীতে – Kazi Meherin Nesa
#পর্ব – ১৪ + ১৫
নাতাশা এসেছিল শুনেই কেমন সন্দেহ হতে শুরু করলো জাফরানের। মনে পড়লো সেদিন ক্যাফেটেরিয়ায় বসে নাতাশার করা অন্যায় আবদারের কথা। কিন্তু এসব সম্পর্কে সুরভীকে কিছু জানায়নি ও
“নাতাশা বাড়িতে এসেছিলো। এতো বড় একটা কথা তুমি আমাকে এখন বলছো? সিরিয়াসলি সুরভী?”
“জাফরান, সত্যিই আমার খেয়াল ছিলো না। গত রাতে আপনি তো রেগে ছিলেন, আপনার রাগ ভাঙ্গানোর কথা ভাবছিলাম,নাতাশার কথা মনে ছিলো না”
“ও হঠাৎ এখানে কি করতে এসেছিলো?”
“যদিও শুরুতে আমি ভেবেছিলাম আপনার সাথে মিট করতে এসেছে পরে বললো আমার সাথে দেখা করতে এসেছে”
“তোমার সাথে মিট করতে?”
“হুমম, তাইতো বললো”
খানিকক্ষণ চুপ রইলো জাফরান। নাতাশার হঠাৎ এই বাড়িতে দেখা করতে আসা আর সুরভীর চোট পাওয়ায় দুটো একি দিনেই হয়েছে। কেনো যেনো ওর মনে হচ্ছে নাতাশার হাত আছে এর পেছনে! সুরভীকে নাতাশার পছন্দ নয় সে সম্পর্কে জাফরান অবগত, তাই সন্দেহ টা আরো বেড়ে যায় ওর। অনেক ভেবে জাফরান বলে উঠলো
“এরপর থেকে আমার পারমিশন ছাড়া বাড়িতে কাওকে ঢুকতে দেবে না। কেউ এলে আমায় জানাবে, আমি বললেই তাকে বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেবে নাহলে না”
“যে কেউ? চেনা জানা কেউ এলেও আপনাকে ইনফর্ম করতে হবে নাকি?”
“হ্যা করবে। যতোই চেনা হোক, আমার জানা দরকার আছে বাড়িতে কে আসে আর কে আসেনা। এইযে যেমন কাল তুমি জানাওনি নাতাশা এসেছিল, এসব আর চলবে না”
কিছুটা অবাক হলাম আমি, হঠাৎ এই কথা কেনো বলছেন? মনে হচ্ছে যেনো নাতাশার কথা শুনে বিরক্ত হচ্ছেন উনি? আমি জাফরানের হাতের ওপর হাত রেখে সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করলাম
“জাফরান, হঠাৎ এভাবে বলছেন কেনো? মনে হচ্ছে যেনো নাতাশা এখানে এসেছিল শুনে আপনার ভালো লাগেনি। ও তো আপনার বন্ধু তাইনা?”
“আমার বন্ধু বলেই বলছি, তোমার সাথে ওর কোনো দরকার নেই। আমি বাড়িতে প্রেজেন্ট থাকা অবস্থায় যদি ও আসে সেটা অন্য ব্যাপার কিন্তু আমার অনুপস্থিতিতে যে কাওকে বাড়িতে ঢুকতে দেবে না আর না এখন থেকে একা কোথাও বাইরে যাবে”
“এটা কি বললেন? একা কোথাও যেতে পারবো না? আপনি আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছেন জাফরান? এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না”
“আমি চাই তুমি স্বাধীনভাবে চলাফেরা করো, তোমাকে কোনোদিন আটকাবো না আমি। জাস্ট কয়েকটা দিন একটু আমার কথা একটু শোনো”
আমি কিছু বললাম না, প্রশ্নও করিনি কেনো উনি এমন বলছেন। কিন্তু কোথাও একটা গন্ডগোল আছে যার জন্যে উনি এভাবে বলছেন তা বুঝতে বাকি নেই
_____________________________
রায়হান সাহেব মেয়ের রুমে এসেছিলেন কিছু কথা বলতে, মেয়েকে বোঝাতে যে ও যা করছে সেটা ভুল। যে আবদার করছে সেটা অন্যায়। কিন্তু এসে দেখলেন নাতাশা ঘুমাচ্ছে। মেয়েকে আর ডাকলেন না উনি। কিন্তু মাথার কাছে থাকা জাফরানের ছবিটা তার নজর এড়ায়নি, বুঝলেন তার মেয়ের মাথায় এখনও এসবই ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব দেখে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন আগামীকাল নাতাশার সাথে আরেকবার কথা বলবেন, বোঝানোর চেষ্টা করবেন। আর যদি নাতাশা বুঝতে না চায় তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেবেন
_______________________________
কলিং বেল বাজতেই এসে দরজা খুলে রুহান ভাইয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম!
“রুহান ভাইয়া তুমি!”
“হাই সুভী, নে খালামণি এগুলো তোর জন্যে পাঠিয়েছে আর এই ফুলগুলো স্পেশালি তোর জন্যে”
ভাইয়া আমার দিকে মাঝারি সাইজের একটা একটা ব্যাগ আর লাল গোলাপের গোছা এগিয়ে দিলো, আমার মন ভালো করার সমস্ত উপায় যেনো রুহান ভাইয়ার জানা!
“থ্যাংক ইউ ভাইয়া, ভেতরে এসো”
রুহান ভাইয়া এসে বসলো, আমি তাকে একটু শরবত করে দিলাম
“আসলে একটা কাজে এদিকে আসবো, খালামণিকে বলেছিলাম তাই তোর জন্যে এগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে আমার কাছে। তোর পছন্দের অনেককিছু আছে বুঝলি!”
“ভালোই করেছো ভাইয়া, এদিকে এলে মাঝে মাঝে এসো আমাদের বাসায়। খালামণিকেও সাথে নিয়ে এসো”
“অবশ্যই আনবো। তুই তো দেখছি একদম পাক্কা গিন্নি হয়ে উঠেছিস! ছোট্ট সুভী আর নেই”
আমাদের কথার মাঝেই জাফরান এসে উপস্থিত হলো। দুর্ভাগ্যক্রমে জাফরান আজ একটু দেরীতে অফিসের জন্যে বেরোচ্ছিল। জাফরান আর রুহান ভাইয়া দুজনেই সামনাসামনি পড়ে গেছে। যদিও জাফরান মুখে কিছু বলেনি কিন্তু আমি তো জানি রুহান ভাইয়াকে জাফরান বিশেষ একটা পছন্দ করেনা।
“আরে রুহান যে, হঠাৎ আমাদের বাড়িতে!”
রুহান ভাইয়া হাল্কা হেসে জবাব দিলো
“সুভীর বিয়ে হয়েছে এতদিন হলো, কিন্তু ওর শ্বশুরবাড়ি টাই তো দেখা হয়নি আমার তাই দেখা চলে এলাম। এই সুযোগে আপনাদের সাথেও দেখা হয়ে গেলো”
রুহান ভাইয়ার কথার প্রতিউত্তরে ছোট্ট একটা হাসি দিলো জাফরান, এবার আমার হাতে থাকা ফুলগুলোর দিকে নজর পড়তেই হাসি মিলিয়ে গেল ওনার!
“এই ফুলগুলো কে দিলো তোমায়?”
“এগুলো? রুহান ভাইয়া এনেছে আমার জন্যে”
“কেনো?”
এখন ওনার প্রশ্নের কি জবাব দেবো ভেবে পেলাম না, তখন রুহান ভাইয়াই আমার হয়ে জবাব দিয়ে দিলো
“আসলে সুভীর রেড রোজ অনেক পছন্দ। খালামণি কিছু জিনিস পাঠিয়েছে ওর জন্যে, তাই ভাবলাম সাথে ওর পছন্দের গোলাপ…”
রুহান ভাইয়া পুরো কথা শেষ করার আগেই জাফরান আমার হাত থেকে এক টান দিয়ে গোলাপের গোছাটা নিয়ে নিলো, ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা একটা হাসি দিয়ে বললো
“ইটস ওকে রুহান! নেক্সট টাইম এতো ভাবনাচিন্তা করতে হবে না। আমার শ্বাশুড়ি মা যদি কিছু পাঠান শুধু সেগুলোই নিয়ে এসো। আলাদা করে কারো জন্যে কিছু আনার কোনো দরকার নেই”
“অ্যাজ ইউ নো, বাট সুভী আমার ফেটাভিরেট সিস্টার। ওর বাড়িতে খালি হাতে চলে আসবো সেটা ভালো দেখায় না”
“একেকজনের পয়েন্ট অফ ভিউ একেকরকম রুহান। তুমি খালি হাতে এলেও আমি বা সুরভী কিছু মনে করব না”
কথাটা বলেই আমার দিকে তাকালেন জাফরান, হ্যা না কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমি কোনো উত্তর দিচ্ছি না দেখে উনি চোখ গরম করে আবার বলে উঠলেন
“আমি ঠিক বললাম তো সুরভী? তোমার রুহান ভাইয়া খালি হাতে এলেও তো প্রব্লেম নেই তার। অ্যাম আই রাইট?”
আমি দ্রুত হ্যা সূচক মাথা হেলিয়ে হাল্কা হাসার চেষ্টা করলাম। জাফরান কি যে করতে চাইছে! তৎক্ষণাৎ আমার হাতের ফুলগুলো নিয়ে ড্রইং রুমের ফ্লাওয়ার ভাসের মধ্যে রেখে দিয়ে আমার পাশে এসে বসলো। রুহান ভাইয়া কিছু বললো না তবে, মুচকি হাসলো। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি এসব দেখে। ভাইয়ার সামনেও এরকম করছে তাও সামান্য গোলাপ ফুল নিয়ে? আমি ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম ওনার অফিস যাওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে! জাফরান হুট করে রুহান ভাইয়াকে প্রশ্ন করে বসলো
“বিয়ে করছো কবে?”
রুহান ভাইয়া মুচকি হেসে একবার আমার দিকে তাকালো
“আর বিয়ে, যাকে ভালবাসতাম তাকে তো বলতেই পারলাম না। বিয়ের ইচ্ছেটাও এখন তেমন নেই!”
“ইচ্ছে নেই বললে হবে নাকি! বিয়ে তো করতে হবে। আমাকেই দেখো, বিয়ে করার ইচ্ছে কোনোদিন ছিলো না। এখন তোমার বোনকে নিয়ে সংসার করতে হচ্ছে”
সরু চোখে জাফরানের দিকে তাকালাম, বারবার আমার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে “তোমার বোন” কথাটা উল্লেখ করছে। লোকটার কান্ড কারখানা দেখে হাসি পাচ্ছে আমার, তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি! ভাইয়ার সাথে কথার এক পর্যায়ে জাফরান আমায় বলে
“সুরভী, আমার মনে হয় রুহানের সাথে তোমার বান্ধবী কেয়ার ভালো ম্যাচিং হবে তাইনা?”
“কিহ! কেয়া আর রুহান ভাইয়া?”
“হ্যা তো প্রব্লেম কি আছে? দুজনেই তো সিঙ্গেল, কেয়া সেদিন আমায় ছেলে খোঁজার কথা বলছিলো না? রুহান মন্দ হবে না”
আমি আর রুহান ভাইয়া দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম জাফরানের কথায়, ওনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেনো কেয়াকে হাতের কাছে পেলে এখনি ধরে রুহান ভাইয়ার সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিতেন! ভাইয়া আমার দিকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে, আমি পরিস্থিতি সামাল দিতে জাফরানকে বলে উঠলাম
“আপনি কি এখানে ঘটকালি করতে বসেছেন! অফিস নেই আপনার? কটা বাজে দেখেছেন? অফিসে যাবেন না?”
“কাম অন! বাড়িতে গেস্ট এসেছে, তাকে রেখে যাওয়াটা ভালো দেখাবে না। আমি বরং একটু পরেই যাবো। তুমি ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করো, আমি তোমার রুহান ভাইয়ার সাথে একটু কথাবার্তা বলি”
“নো থ্যাংকস জাফরান, এখন কিছু খাবো না। আমি তো শুধু ওকে এগুলো দিতে এসেছিলাম”
“ওহ! তাহলে চলো আমরা একসাথেই বের হই। তোমাকে না হয় বাস স্ট্যান্ড অব্দি ড্রপ করে দেবো”
আমরা দুজনেই হতভম্ব হয়ে গেলাম জাফরানের কথা শুনে। রুহান ভাইয়াকে যাওয়ার জন্যে তাড়া দিচ্ছে লোকটা, এতো রাগ হচ্ছে না আমার ওনার ওপর। জানিনা ভাইয়ার সাথে কিসের শত্রুতা ওনার!
“ভাইয়া যাবে কেনো? সবে তো এলো। আপনি যান, ভাইয়ার কথা ভাবতে হবে না আপনাকে”
“কিন্তু ওর এখানে কাজ তো শেষ। আমিও বেরোচ্ছি, তাই ভাবলাম ওকে একটু ড্রপ করে দেই”
“তাই বলে এখনি চলে যাবে?”
“জাফরান ঠিকই বলছে। আমি তাহলে আসি সুভী, ইনশাআল্লাহ আবার দেখা হবে”
“না না ভাইয়া, ওনার কথায় কান দিও না তো। তুমি প্রথম এলে আমার বাসায়, এইভাবে যেতে দেবো নাকি?”
জাফরান কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু ওনাকে বলার সুযোগ না দিয়ে আমি বললাম
“আগে আপনি উঠুন এখান থেকে। অফিসে যান, আর ভাইয়া তুমি এসো তো। ফ্রেশ হয়ে নাও, না খেয়ে তোমাকে যেতেই দেবো না আমি”
জাফরানকে টেনে উঠালাম, লোকটা এখানে থাকলে রুহান ভাইয়ার সাথে শান্তিতে দুটো কথাও বলতে পারবো না সে বোঝা হয়ে গেছে। ওনার কথা শুনে রুহান ভাইয়া চলে যেতে চাইছিল কিন্তু আমিই জোর করে তাকে ফ্রেশ হতে পাঠালাম। কিন্তু জাফরানকে এখনও বের করতে পারলাম না
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো ওনার সাথে? জানেন না উনি আমার ফ্যাভরেট ভাইয়া? প্রথমবার এই বাড়িতে এসেছে। কোথায় তাকে একটু সমাদর করবেন তা না করে আপনি..”
“রুহান তোমার ফ্যাভরেট হতেই পারে কিন্তু ওকে আমার পছন্দ নয়। আর ও তোমার জন্য রোজ কেনো আনবে?”
“আপনার জেলাসি দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি। এই গোছা গোলাপ এনেছে বলে এমন করছেন?”
ভ্রু কুঁচকে নিলেন উনি, ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব দেখিয়ে বলে উঠলেন
“ও হ্যালো! কিসের জেলাসি হবে? আমার জাস্ট তোমার রুহান ভাইয়ার প্রেজেন্স পছন্দ না”
“কিহ! এছাড়া আর কোনো কারণে হিংসে হচ্ছে না?”
“নাহ! আমি একটুও জেলাস নই”
“জেলাস নন? ওহ বুঝেছি! তারমানে আপনার একটুও বিশ্বাস ভরসা কিছু নেই আমার ওপর তাইনা? তাইতো এখানে থেকে পাহারা দিতে চাইছেন, আমরা কি কথা বলবো শুনতে চাইছেন”
“কি বলো এগুলা!”
“ঠিকই তো বলছি! আপনি সন্দেহ করেন আমায় জাফরান তাই এমন করছেন তাইনা!”
“এই কথা বলতে পারলে তুমি?”
“আপনি যেরকম করছেন তাতে এই কথা ছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না আমার। রুহান ভাইয়া কি ভাববে বলুনতো?”
“তুমি রুহানের বোন, ও তোমার জন্য রোজ কেনো আনবে? অন্য কিছু আনতে পারতো। কোন ভাই তার বোনের জন্যে গোলাপ ফুল আনে?”
“কি মুশকিল! আপনি শুধু ভাবুন ওইটা একটা ফুল মাত্র আর কিছুনা। আমার পছন্দ তাই এনেছে। আপনি শুধু শুধু এইটুকু ব্যাপারকে বড় ইস্যু বানাচ্ছেন!”
“আমার পছন্দ হচ্ছে না এসব! সেদিন তোমার বাড়িতেও একি কাজ করেছে। তোমার যা ভালো লাগে আমি এনে দেবো, অন্য কেউ তোমায় কিছু দিক সেটা আমি চাইনা”
“কেনো চাননা? এইতো বললেন আপনি জেলাস নন। তাহলে কে আমায় কি দিলো তাতে আপনার কি যায় আসে শুনি!”
আমার কথায় বেজায় চটে গেলেন উনি, মুখে কিছু না বললেও সেই রাগ চোখের মাধ্যমে প্রকাশ করছেন! আরেকটা কথা বললেন না উনি। রাগ দেখিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলেন! এইযে মশাই রাগ করলেন, এই রাগ ভাঙাতে যে কতো কষ্ট করতে হবে আমায় আল্লাহ জানে! একটু বাদেই ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে এসে বসলো, আমি খাবার এনে বেড়ে দিলাম তাকে
“জাফরান কোথায় গেলো?”
“পাঠিয়ে দিয়েছি অফিসে”
” ওহ! আচ্ছা তোর রান্না কি প্রথম খাচ্ছি আমি?”
“নাহ! এটা দ্বিতীয়বার! আগেও একবার খেয়েছিলে”
মুচকি হাসলো ভাইয়া, এরপর খাওয়া শুরু করলো। খেতে খেতে ভাইয়া বলে উঠলো
“জাফরান মনে হয় আমাকে বিশেষ একটা পছন্দ করেনা তাইনা! যাই হোক, কোন মেয়ের কথা বলছিল ও বলতো! বিয়ে আমাকে একটু ছবি দেখাস তো। পছন্দ হলে বিয়েটা করেই ফেলব এবার!”
“সরি ভাইয়া, উনি আসলে মজা করে বলেছেন ওগুলো। তুমি কিছু মনে করো না। উনি মানুষটা ভালো তবে আজ জানিনা কি হয়েছিল, ভুল বুঝোনা ওনায়”
“না রে সুভী, জাফরানের কথায় আমার একটুও রাগ হয়নি। উল্টে তোর প্রতি ওর এই পসেসিভনেস দেখে ভালো লাগলো। আই থিঙ্ক হি লাভ ইউ আ লট”
“তোমার মনে হয় উনি আমায় ভালবাসেন?”
“অফ কোর্স, একটা ছেলে হিসেবে জাফরানের আচরণ দেখেই রিয়ালাইজ করতে পারছি যে তোকে ও অন্য ছেলেদের সাথে দেখতে পছন্দ করে না। যেমন আমার সাথেও বিশেষ পছন্দ করেনা। সো ইটস ক্লিয়ার হি লাভস ইউ”
ভাইয়ার কথা শুনে পজিটিভ ভাইবস আসতে শুরু করেছে আমার মনে। ওনার মনেও তাহলে আমার জন্যে ফিলিংস আছে? আমি কি তাহলে জাফরানের সাথে নিজের মনের কথাগুলো শেয়ার করতে পারি? এলোমেলো ভাবনায় কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম আমি,রুহান ভাইয়ার কথায় ধ্যান ভাঙলো
“একটা কথা জানার জন্যে কিউরিসিটি জাগছে, বলবি?”
“কি?”
“দেখ জাফরানের মনের খবর তো আমি পাবো না কিন্তু তোর মনের খবর পেতেই পারি। সত্যি করে বলতো ভালবাসিস ওকে তাইনা?”
ভাইয়ার প্রশ্নে মুচকি হাসলাম। হ্যা সূচক মাথা নেড়ে জবাব দিলাম। এতদিন না বুঝতে পারা অনুভূতিটা এখন বুঝতে শিখেছি, নিজের কাছে এখন অনেকটাই পরিষ্কার যে জাফরানের জন্যে আমার মনে জমে থাকা অনুভূতির নামই ভালবাসা। তাই ভাইয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় লাগেনি! আমার উত্তরে কয়েক মুহূর্তের জন্য ভাইয়ার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছিলো। বেশ বুঝেছি তার কারণ কি, একটু বাদেই ভাইয়া মুখে হাসি এনে বললো
“যাক! তুই তাহলে তোর ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েই গেলি। জাফরান অনেক লাকি”
“দেখবে তোমার লাইফেও শীঘ্রই ভালোবাসার মানুষটা এসে যাবে। বেশিদিন আর সিঙ্গেল থাকবে না তুমি”
“আসবে হয়তো। কিন্তু তোর মতো কাওকে তো আর পাবো না”
কথাগুলো বলার সময় ভাইয়ার চোখেমুখে বেদনার অভ্যাস পেয়েছি, কিন্তু তাকে সান্তনা দেবো কি বলে? কিছু বলতে পারিনি আমি
______________________________
মেয়ের সাথে আজ খোলাখুলি আলোচনায় বসেছেন রায়হান সাহেব, মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় বোঝানোর চেষ্টায় আছেন যেটা ও ভাবছে বা করছে সেটা ভুল
“দেখ তুই এতদিন যা চেয়েছিস যেভাবে চেয়েছিস সব দিয়েছি তোকে কিন্তু এখন তুই যা করতে চাইছিস সেটা করতে দেবো না। একটা মেয়ের সংসার নষ্ট করতে চাইছিস তুই”
“সুরভী আমার আর জাফরানের মাঝে এসেছে বাবা। তুমি জানো আমি জাফরানকে ভালোবাসি, আর জাফরান ও আমাকে ভালোবাসে”
“তুই ঠান্ডা মাথায় ভাব তো, ব্রেকআপ এর পর আবার কেনো জাফরান তোকে ভালোবাসতে যাবে? তাছাড়া ও এখন ম্যারেড, একটা অন্য মেয়ে ওর জীবনে আছে। সেখানে তুই জোর করে কেনো ঢুকতে চাইছিস!”
“সুরভীকে জাফরানের পাশে আমি সহ্য করতে পারছি না। বাবা আমি জাফরানকে ভালোবাসি, তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো”
“তুই নিজে বোঝ নাতাশা, জাফরানের প্রতি এখন তোর মনে যেটা কাজ করছে সেটা ভালবাসা না। একটা ভ্রম মাত্র, তোর সাথে ওর একটা সময় সম্পর্ক ছিলো এখন নেই। এতদিন পর তুই ওকে দেখেছিস তাও আবার ম্যারেড। এটা ক্ষণিকের খারাপ লাগা আর কিছু না। কিছুদিন গেলেই দেখবি তোর মনে এসব ভালোবাসার ছিটেফোটাও থাকবে না”
“কি বলতে চাইছো তুমি! আমি ভালোবাসি না ওকে?”
“হ্যা বাসিস না। এখন তুই যেটাকে ওর প্রতি ভালোবাসা বলছিস সেটা ক্ষণিকের ব্যাপার মাত্র। আস্তে আস্তে সেটাও বিলীন হয়ে যাবে। যদি সত্যিই ভালোবাসা থাকতো তোদের মধ্যে তাহলে তোদের সম্পর্ক এখনও টিকে থাকতো। ভাঙতো না”
শুরুতে বাবার কথা শুনে রাগ হচ্ছিলো নাতাশার কিন্তু হুট করে রাগ ঠান্ডা হয়ে গেলো। রায়হান সাহেবের বলা একেকটা কথা যেনো মাথায় এটে গেলো ওর! সত্যিই কি তাহলে জাফরানের প্রতি ক্ষণিকের ভালো লাগা ছাড়া আর কিছুই না এটা?
“পাগলামি ছেড়ে আমার কথাগুলো ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ, বোঝার চেষ্টা কর। তোর বাবা আমি নাতাশা, ভালোর জন্য বলছি। একটা মেয়ের সাজানো সংসার ভাঙতে যাসনা”
“আমি কারো সংসার ভাঙতে চাইনা বাবা”
“সেটাই করতে যাচ্ছিস তুই, এইযে জাফরানের কথা বলছিস। ওকে চাইছিস, ভেবে দেখ তো তুই যেটা করছিস ঠিক না অন্যায়। ও এখন অন্য একটা মেয়ের হাসবেন্ড!”
বাবা মেয়ের কথার মাঝেই জাফরান এসে উপস্থিত হয়। রায়হান সাহেব আর নাতাশা দুজনেই এই সময় জাফরানকে দেখে অবাক!
“জাফরান তুই!”
“হুমম! আসলে তোর সাথে কিছু দরকারী কথা ছিলো তাই ভাবলাম সোজা তোর বাড়িতে চলে আসি। কেমন আছেন আঙ্কেল?”
রায়হান সাহেব উঠে দাড়ালেন
“এইতো ভালো আছি, আচ্ছা তোমরা তাহলে কথা বলো আমি তাহলে ওপরে যাই”
রায়হান সাহেব ওপরে চলে যায়। নাতাশা কিছুটা ঘাবড়ে আছে, জাফরান কি কথা বলতে এসেছে ভেবে পাচ্ছে না। ঐযে বলেনা চোরের মন পুলিশ পুলিশ করে, নাতাশার অবস্থাও অনেকটা তেমন! সেদিন ও সুরভীর ক্ষতি করতে চেয়েছিল সেটা কি জাফরান জেনে গেলো? নাতাশা কিছুটা নার্ভাস হয়ে আছে, জাফরানের চোখে তা ধরা পড়ে গেছে!
“এতো ঘাবড়ে আছিস কেনো! তোকে দেখে কি মনে হচ্ছে জানিস? ক্রাইম করে ধরা পড়ে গেছিস”
“না তো! তুই হুট করে এসেছিস তো তাই একটু সারপ্রাইজ হয়ে গেছি”
নাতাশা নিজেকে যথেষ্ট কুল রাখার চেষ্টা করলো কিন্তু প্রথম যখন কেউ অন্যায় করে তখন কি এতো সহজেই কুল থাকতে পারে? নাতাশা ও পারছে না!
“চাইলে আমি আংকেলের সামনেই কথা বলতে পারতাম, কিন্তু আমি চাইনা তোর ইমেজ ওনার সামনে নষ্ট হোক! উনি এটা জেনে কষ্ট পাক যে ওনার একমাত্র মেয়ে কিরকম একটা জঘন্য কাজ করে এসেছে”
চমকে উঠে নাতাশা, যেটার ভয় পাচ্ছিলো সেটাই সত্যি হচ্ছে। ও বুঝে গেছে জাফরান কি নিয়ে কথা বলতে চাইছে তবুও নিজেকে বাঁচানোর একটা শেষ চেষ্টা করে ও
“ক..কি বলছিস তুই জাফরান!”
“আমি কি বলছি তুই ভালোভাবেই জানিস নাতাশা। তুই সেদিন আমার বাড়িতে গেছিলি তাও আমার অ্যাবসেন্সে। সুরভীকে ভালো লাগেনা তোর তাও ওর সাথে দেখা করতে গেছিলি। তুই যাওয়ার পরই একটা ইনসিডেন্ট হলো, কেনো?”
জোর গলায় জাফরান কথাগুলো বলে, নাতাশা ভয় পেয়ে যায়। জাফরানের রাগ সম্পর্কে ও অবগত, এমনিতে শান্ত স্বভাবের হলেও রেগে গেলে রেহাই নেই! নাতাশা হুড়মুড় করে বলে ফেলে যে
“সুরভী পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলো জাফরান, এখানে আমার কি..”
“দোষ তোরই ছিলো তাইতো নিজেই সাফাই গাওয়া শুরু করলি! সুরভী যথেষ্ট কেয়ারফুল থাকে যেকোনো ব্যাপারে, তাই পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলো এই কথা আমাকে বোঝাতে আসিস না”
“তুই ভুল বুঝছিস আমাকে”
“ভুল তো এতদিন বুঝেছিলাম। ভুল হয়েছে আমার, ব্রেকআপের পর তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ রেখে ভুল করেছি। তোর মাথায় যে এসব চলছিলো ভাবতেই পারিনি আমি!”
নাতাশা কিছু বলতে পারছে না, জাফরানের কথাগুলো শুনে বলার সাহস পাচ্ছে না কিছু! জাফরান কয়েক সেকেন্ড থেমে আবার বলে
“আই হেইট লাইস নাতাশা, ইউ নো দ্যাট! আর হ্যা মিথ্যে বলে একদম ভালো সাজার নাটক করবি না। প্রমাণ হয়তো নেই আমার কাছে বাট আই অ্যাম সিওর সেদিন সুরভী এমনি এমনি পড়ে গিয়ে চোট পায়নি”
“তুই একটা সামান্য ঘটনাকে এতো বড় করে দেখছিস কেনো জাফরান!”
“এটা সামান্য ঘটনা নয় নাতাশা, সেদিন যদি কোনো বড় আঘাত লাগতো ওর বা ওর কিছু হয়ে যেতো তখন আমি কি করতাম? একবার আমার কথাটা ভেবে দেখেছিস তুই? আমার দিকটা ফিল করেছিস? ওই মেয়েটা ছাড়া এখন কে আছে আমার? ও না থাকলে আমার কি হবে সেসব কি একবার ভেবেছিস তুই! তোর কোনো আইডিয়া নেই সুরভীর আমার লাইফে কেমন জায়গা আছে। মেয়েটা যেভাবে আমায় সামলেছে তুইও পারতিস না, ধৈর্য্য ধরা কি সেটা ওর থেকে শিখেছি আমি। ভালবাসা নিঃস্বার্থ হয় নাতাশা, তুই তেমন ছিলি না আর আজও নস! শুধু নিজের কথা ভাবিস, নিজের চাওয়াটা বুঝিস। তোকে আমি হয়তো ভালোই বাসিনি কোনোদিন, যা ছিলো আমাদের মধ্যে সেটা ভালো লাগা, ভালোবাসা না!”
জাফরানের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়, হুট করেই চোখে পানি চলে আসে ওর। মেয়েটা ঝোঁকের বশে অন্যায় করে ফেললেও ততটা খারাপ নয় তাইতো জাফরানের বলা কথা শুনে খারাপ লাগছে ওর, কষ্ট হচ্ছে
“আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিলো না?”
“যদি সত্যিই ভালোবাসা থাকতো তাহলে আজ আমার লাইফে থাকা মেয়েটাকে তুই রেসপেক্ট করতি। অবশ্য আমাদের মাঝে ভালোবাসা কখনোই ছিলো না। একটাই মেয়ে আছে এখন আমার লাইফে, সে সুরভী আর লাইফ টাইম ওই থাকবে”
চোখ নিচু করে আছে নাতাশা, আজ বুঝেছে এই কদিন একটা মিথ্যে ঘোরের মাঝে ছিলো। জাফরান কোনোদিন ওর ছিলোই না আর না হবে! ঝোঁকের মাথায় শুধু শুধু নিজেকে ওর চোখে নিচু করে ফেলেছে
“তুই এমন নস নাতাশা, কেনো খারাপ হচ্ছিস তুই? নাকি আমি বলবো আঙ্কেল তোকে সঠিক শিক্ষায় বড় করতে ব্যর্থ হয়ে গেছে বা তুই আংকেলের দেওয়া শিক্ষার মান রাখিসনি!”
এবার আর চুপ থাকতে পারলো না নাতাশা, নিজের দোষে আজ ওর বাবাকেও কথা শুনতে হবে সেটা মানতে পারছে না ও
“জাফরান প্লিজ! আমার বাবাকে টানিস না এসবের মাঝে”
“আমি কাওকে নিয়ে কিছু বলতে চাইনা, শুধু তোর মুখে সত্যিটা জানতে চাই”
নাতাশা বুঝে গেছে এখন আর লুকিয়ে লাভ নেই, জাফরানকে মিথ্যে বললেও সত্যিটা প্রকাশ পেয়েই যাবে। তাই ও নিজেই স্বীকার করে নেয়
“হ্যা ভুল করেছি আমি! স্বীকার করছি! আই ওয়াজ রেসপনসিবল ফর দ্যাট ইনসিডেন্ট! তোর সাথে ওকে আমার সহ্য হচ্ছিলো না জাফরান, তাই আমি সুরভীকে হার্ট করেছি”
নাতাশার কথা শুনে চোখমুখ শক্ত হয়ে যায় জাফরানের, যদিও ও আগে থেকেই সিওর ছিলো কিন্তু নাতাশার স্বীকারোক্তিতে ওর প্রতি এই মুহূর্তে ঘৃনা ছাড়া আর কোনো অনুভূতি কাজ করছে না। নাতাশা কান্না করতে করতে বলে
“আমায় ক্ষমা করে দে জাফরান, আমি এতোটা খারাপ নই। অন্যায় করে ফেলেছি, এবারের মতো ক্ষমা করে দে”
উঠে দাড়ায় জাফরান, নাতাশার থেকে যা শুনতে এসেছিল তা শুনে নিয়েছে। আর এখানে এক মুহূর্ত দাড়ানোর ইচ্ছে নেই ওর। থমথমে গলায় ও বলে উঠলো
“তোর থেকে এটা এক্সপেকটেড ছিলো না নাতাশা, তুই বাচ্চা নস যে এরকম একটা কাজ করেছিস আর ক্ষমা করে দেবো। সুরভী আমার বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এখন আর তোর জন্যে আমি ওকে হারাতে বসেছিলাম”
“ভুল তো মানুষ মাত্র করে, আমিও করে ফেলেছি”
“অন্যায় করেছিস তুই, এটাকে ভুল বলেনা। একটা মেয়ে হয়ে অন্য একটা মেয়ের ক্ষতি করতে গেলি, তোর একটুও বাঁধলো না!”
“আই অ্যাম সরি। এবারের মতো বন্ধু হিসেবে ক্ষমা করা যায়না আমায়? দরকার পড়লে আমি সুরভীর কাছেও ক্ষমা…”
“সুরভী বড্ড সাদাসিধে মেয়ে, তোর দোষ জানা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দেবে তোকে। আমি সেটা চাইনা। আরেকটা কথা কি জানিস? বন্ধুত্ব একটা পিওর সম্পর্ক আর তুই যা করেছিস তারপর তোর সাথে কোনরকম সম্পর্কও রাখতে চাইনা আমি তাই ক্ষমা করার প্রশ্ন আসেনা”
নাতাশা আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু জাফরান সুযোগ দেয়নি। নাতাশা বেশ বুঝেছে ওর বিরক্তি, আর এটাও বুঝেছে আজ ওদের মধ্যে যা সম্পর্ক বেচে ছিলো তাও শেষ হয়ে গেলো
“সুরভীর একটু চোট পাওয়ার জন্য আজ তুই এতটা টেন্সড, ওর জন্যে তুই আজ আমার বাড়িতে এলি! তুই ওকে ভালোবাসিস জাফরান?”
নাতাশার প্রশ্নের দাড়িয়ে যায় জাফরান, ওর দিকে ঘুরে গম্ভীর স্বরে বলে
“তুই বোধহয় ঠিকমতো শুনিসনি কি বললাম আমি! ওই মেয়েটাই এখন লাইফ, আমার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ড সবকিছু। ভালোবাসা নামক একটা ওয়ার্ড ইউজ করার থেকে কি এই কারণগুলো তুলে ধরা বেশি নয়?”
নাতাশা আর কিছু বলতে পারলো না, জাফরানের কথায় স্পষ্ট উত্তর মিলে গেছে। একটা মেয়েকে একটা ছেলে যখন সবকিছুর উর্ধ্বে রাখে সেটা ভালোবাসা ছাড়া আর কি হতে পারে?
“আরেকটা কথা নাতাশা ভবিষ্যতে এমনকিছু করিস না যার জন্যে আংকেলের মাথা হেঁট হয়ে যায়। বাবার ভালো মেয়ে হয়ে থাকার চেষ্টা কর। নিজেকে খারাপ বানাস না”
কথাটা বলেই বেরিয়ে এলো জাফরান, ধপ করে সোফায় বসে পড়ে নাতাশা। নিজের করা অন্যায়টা এতদিন ওর অন্যায় মনে না হলেও আজ বিশাল অপরাধ মনে হচ্ছে। আজ বুঝতে পারছে বাবার কথা শুনে যদি ঠান্ডা মাথায় কাজ করতো তাহলে আজ হয়তো এমন কিছু হতো না, অন্তত জাফরানের সাথে বন্ধুত্ব এর সম্পর্কটুকু টিকে থাকতো!
_______________________________
রুহান ভাইয়া যাবার পর কিছু জামাকাপড় ধুয়ে দিয়েছি, নাহলে সার্ভেন্ট এর আবার আগামীকাল কাজের চাপ বেশি পড়ে যাবে। রাতেরবেলা ওগুলো ঘরে এনে ভাজ করে গুছিয়ে রাখছিলাম, জাফরান কিছুক্ষণ আগে অফিস থেকে ফিরেছে, সবে ফ্রেশ হয়ে এলো। রাগী রাগী চোখে আমার দিকে দেখছিলো
“তোমাকে কতগুলো কল করেছিলাম আমি? একবারও কেনো রিসিভ করনি?”
“দেখেছিলাম তো, কিন্তু ধরার সুযোগ পাইনি। রুহান ভাইয়ার সাথে একটু গল্প করলাম, তারপর গার্ডেনে গাছের আগাছা গুলোও পরিষ্কার করেছি। তারপর কিছু জামাকাপড় ধুয়ে দিয়েছিলাম, অনেক ব্যস্ত ছিলাম”
“বাড়িতে ওয়াশিং মেশিন থাকতে তোমাকে হাতে জামা কাপড় কে ওয়াশ করতে বলেছে? আর অন্যান্য কাজ তুমি কেনো করবে?”
“বাড়িতে সারাদিন একা একা থাকি, সব যদি অন্যরা করে দেয় তাহলে আমি কি করবো? হাতে জামা কাপড় কাচলে অন্তত সময় তো কেটে যায়”
“এক্সকিউজ দেখিও না আমায়। আমার ফোনের থেকেও তোমার কাছে কাজের ব্যস্ততা বেশি হয়ে গেলো সুরভী? জানো আমি কতো ব্যস্ততার মাঝে তোমায় কল করেছিলাম?”
মুচকি হাসলাম ওনার বিরক্তি ভরা মুখখানি দেখে। যে লোক একটা সময় ভুলেও আমায় ফোন করতো না সেই আজ আমায় নিজে থেকে ফোন করছে আবার ফোন ধরিনি বলে এতো রাগ দেখাচ্ছে?
“আচ্ছা সরি, পরেরবার যখন ফোন করবেন আমি সঙ্গে সঙ্গে ধরবো”
“রুহানের সাথে ভালোই আড্ডা দিয়েছো মনে হচ্ছে”
জাফরানের অভিমান নিবারণের চেষ্টায় আমি আহ্লাদী স্বরে বলে উঠলাম
“বলছি তো মস্ত ভুল হয়ে গেছে আমার। আর হবেনা”
“থাক! তোমার শান্তনা লাগবে না আমার”
মুখ গোমড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো লোকটা, আমি শুধু তামাশা দেখে গেলাম। কি এমন করেছি যার জন্যে এতো তেজ দেখাচ্ছেন উনি? কে যেনো বলেছিলো মেয়েদের মন বোঝা নাকি কঠিন, এখন তো দেখি উল্টো। ছেলেদের মন বোঝা আরো কঠিন!
ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন জাফরান, আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ওনাকে দেখছি। চোখমুখ থেকে এখনও বিরক্তি ভাবটা কাটেনি। আড়চোখে জাফরান দেখলো সুরভী ওর দিকে দেখছে
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
“আমার ইচ্ছে করছে আপনাকে দেখতে তাই তাকিয়ে আছি”
“আমাকে নতুন করে দেখার কিছু হয়নি”
“আপনাকে রোজই নতুন লাগে আমার কাছে, রোজ নতুন নতুন রূপ দেখতে পাই কিনা আপনার”
পাল্টা উত্তর পেলাম না ওনার দিক থেকে। আজ মনে হচ্ছে একটু বেশিই ঠান্ডা হয়ে আছেন উনি! জাফরান সুরভীকে নাতাশার ব্যাপারে কিছু বলেনি, ওইসব কথা আর তুলতেই চায়না ও!
“আপনি কি প্রেগনেন্ট জাফরান?”
আমার প্রশ্নে প্রথমে একটু থতমত খেয়ে তাকালেন জাফরান। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আমার উদ্ভট কথার আগামাথা নেই বুঝে ভ্রু কুঁচকে ফেললেন
“হোয়াট নন্সেস!”
আমি বড় একটা হাসি দিয়ে বললাম
“না মানে মুড সুইং হচ্ছে দেখছি আপনার, এগুলো তো প্রেগন্যান্সিতে হয়”
জাফরান নাক ফুলিয়ে চশমা খুললেন। চোখদুটো একটা আঙ্গুল দিয়ে রাব করে ল্যাপটপের দিকে তাকালেন। বুঝলাম রাগের মাত্রা একটু বেশি তাই এতে কাজ হবেনা, অন্য কিছু করতে হবে! হুট করেই কোত্থেকে যেনো এত্তো সাহস এসে জড়ো হলো আমার মাঝে, উঠে গিয়ে টুপ করে জাফরানের গালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম। কয়েক মিনিটের জন্যে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেলো জাফরান
“এটা কি করলে?”
“আপনি রাগ করেছেন আমার ওপর! তাই রাগ ভাঙ্গানোর ছোট্ট একটা প্রচেষ্টা করছি। বলছি আপনার রাগ কি একটু কমেছে?”
জাফরান ল্যাপটপ কাচের গোল টেবিলটার ওপর রেখে আবার ঝাঝালো কণ্ঠে প্রশ্ন করে বসলো
“কি করলে এখন তুমি সেটা আগে বলো”
“কি আবার করলাম? আপনি আমার আমারই ওপর জন্যে রাগ করেছিলেন, সেই রাগ দুর করার জন্য একটু আদর করে দিলাম”
“উইদাউট মাই পারমিশন, আমাকে কিস করার সাহস পেলে কোত্থেকে তুমি?”
থতমত খেয়ে গেলাম আমি, কিস করতে পারমিশন লাগে নাকি? কোথায় ভাবলাম জাফরান খুশি হবে। এ তো উল্টে রাগ দেখাচ্ছে! অদ্ভুত একটা লোক!
চলবে…