#মন মহুয়া
রাইটার – Farhana Rahaman আয়াত
পার্ট-১২
পরের দিন।
তানিয়া ক্লাসে গিয়ে মহুয়াকে খোঁজতে লাগলো কিন্তু মহুয়া নেই।মিমি বলে মহুয়া এসেছে কিন্তু ক্লাস করতে আসেনি এখনো। তানিয়া বুঝতে পারে মহুয়া কোথায় থাকতে পারে তাই ছুটে যায় মহুয়া গাছের দিকে।যা ভেবেছে তাই মহুয়া চুপচাপ বসে আছে একা একা।
কিরে এখানে কি করছিস?চল না ক্লাস শুরু হলো বলে।
তানিয়ার কথা যেন কানেই নিচ্ছেনা মহুয়া। গতকাল থেকে অনেক কিছু মাথায় ঘুরছে মহুয়ার।যদি মিনার আর ও একসাথে ঘুরতে যেতে পারতো তাহলে কতো কি না করতো।আর সবাই কে যদি বলতে পারতো ও মিনারের বউ।এইভাবে বরকে ভাই বলতে কি ভালো লাগে।যদিও বলে না কিন্তু হুট করে একসাথে কেউ দেখলে জিজ্ঞেস করে কে হয়,কেনো নিতে আসে মাঝে মাঝে। মহুয়ার ইচ্ছে করে বলতে আমার বর আমাকে নিতে এসেছে সমস্যা কি!কিন্তু সবটা কল্পনা।১৮ হতে আরো কয়েকমাস অপেক্ষা করতেই হবে।
তানিয়া হুট করেই বলে উঠে, আরে দুলাভাই।মহুয়ার হুশ ফিরে। বলে কই ওনি?
তানিয়া রাগি চোখ করে মহুয়ার দিকে তাকায়।মহুয়া বলে এভাবে দেখার কি আছে?আর মিথ্যা বলেছিস কেনো।
তানিয়া বলে তোর হুশ ফিরানোর জন্য।চল ক্লাসে বলে হাত ধরে নিয়ে গেলো মহুয়া।ক্লাস তখনো শুরু হয়নি।সিনিয়র কয়েকজন বড় ভাই কি যেনো বলছে।
একজন বলে, তাহলে আমি আবার নামগুলো বলছি যারা যারা শিক্ষাসফরে যাচ্ছি। এক এক করে সবার নাম বলা হচ্ছিলো। একদম শেষে মহুয়ার নাম যখন মহুয়া শুনলো মহুয়া অবাক হয়ে যায়।মহুয়া তো নাম দেয়নি।তারমানে মিনার দিয়েছে।কিন্তু মহুয়া তো যাবে না বলেছিলো।
তানিয়া খুশিতে মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে। বলে কতোদিন পর ঘুরতে যাব একসাথে। কিন্তু মহুয়া মন খারাপ করে আছে।
মহুয়ার ফোন টা চেক করে দেখে মিনারের মেসেজ।ফি জমা দিয়ে দিয়েছি।এঞ্জয় করো। মেসেজ পড়ে আরও মন খারাপ হয়ে গেছে মহুয়ার।
বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া সেরে কিছুক্ষন ঘুমানোর চেস্টা করে মহুয়া কিন্তু ঘুম আসছে না।দুপুরের এই সময় যেন কাটেনা।মহুয়ার ইচ্ছে করছে মিনার কে ফোন দিয়ে বলতে ও একা যেতে চায়না পিকনিকে।
রাতে মিনার আসলে মহুয়া ওকে একবার বলেছিল ওর ভালো লাগছে না যেতে। মিনার বলে, এখন লাগছে না হয়তো কিন্তু যাওয়ার পর সব ভালো লাগবে।আর রাঙামাটি খুব সুন্দর জায়গা। তোমার ভালোই লাগবে।আর মিমি আর তানিয়া তো আছেই সাথে।মহুয়া আর কিছু বলেনি।
দুইদিন পর,
মহুয়া খুব ভোরে উঠে রেডি হয়ে নিলো যাওয়ার জন্য।
সকাল ৭ টায় বাস ছেড়ে দিবে।মিনার উঠে ফ্রেশ হয়ে জগিং এ চলে গেলো। মহুয়া কি আর করবে ভেবেছিলো অন্তত এগিয়ে দিতে যাবে তাও গেলো না। তাই একাই চলে আসে কলেজে।তানিয়া অনেক্ষন আগে থেকে বাসের পাশে দাড়িয়ে আছে। মহুয়া আসার পর যখন বাসে উঠতে যাবে তখন সিনিয়র একজন এসে বলে মহুয়ার সিট পরের গাড়িতে।তানিয়া শুধু এ বাসে বসবে।মহুয়ার এবার কান্না করার অবস্থা। তানিয়া তো ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। ওর একটা কথা মহুয়ার সাথেই বসবে।কিন্তু সিট একটা তাই সম্ভব না বলে জানিয়ে দিলো।মহুয়া তানিয়াকে বুঝিয়ে নিজে অন্যবাসে উঠে পড়ে। প্রতিটি সিট ভর্তি। দেখে মনে হচ্ছে কাপলদের জন্য এই বাস।মাস্টার্স এর ছাত্রছাত্রী সবগুলো। মহুয়া মাঝখানে দুইটা সিট ফাকা দেখে গিয়ে জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।মহুয়া বসে বসে মিনারের পিক দেখছে ফোনে।একটা ছেলে এসে মহুয়ার পাশের সিটে বসে। মহুয়ার সেদিকে খেয়াল নেই।চোখ ছলছল করছে ওর।হঠাৎ কানের কাছে এসে কেউ যেনো বলে ওর,এতই যখন জামাইকে মিস করছো জামাইকে নিয়ে আসলেই পারতে?
মহুয়া তাকিয়ে দেখে কালো রঙের হুডি পরা কালো সানগ্লাস আর মাস্ক পরা একটা ছেলে।মহুয়া বলে আপনি কে?
মিনার বলে তোমার জামাই।
মহুয়া টান দিয়ে মাস্ক টা খুলে দেখে সত্যি সত্যি মিনার।হাসবে নাকি রাগ করবে বুঝতে পারছে না। তার মানে মিনার ইচ্ছে করে মহুয়াকে জ্বালাতন করেছিল।
মহুয়া চুপচাপ মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। মিনার বুঝতে পারছে মহুয়া অভিমান করেছে।
মিনার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মহুয়ার এমন কান্নাকান্না মুখের প্রেমে পড়ে গেছে মিনার। যতবার এই ভাবে দেখেছে মহুয়াকে ততোবার মহুয়ার প্রতি মায়া অনুভব হয় যেন।
মহুয়া বাইরের চারপাশ দেখছে।মনের মধ্যে যেন অন্যরকম ভালো লাগছে এখন।অভিমান গুলো যেনো পথের বাঁকে মিলিয়ে যাচ্ছে।
দুজনেই চুপ কিন্তু মনের মধ্যে যেনো হাজারো কথা হচ্ছে।গাড়িতে রোমান্টিক গান বাজানো হচ্ছে একটার পর একটা। তার উপর মাঝে মাঝে কয়েকজন স্পিকার হাতে নিয়েও গাইছে।
মহুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মিনার হঠাৎ গেয়ে উঠে,
তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো,
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দিব আরো।
তুমি হাতটা শুধু ধরো আমি হবো না আর কারো,,
তোমার স্বপ্নগুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়োসরো,,,,
মহুয়া অবাক হয়ে মিনারের দিকে তাকিয়ে আছে। কত ভালো গাইছে মিনার।তাও আবার মহুয়ার প্রিয় গান।
মহুয়া প্রায় গানটা গুনগুন করে গায়।মিনার লক্ষ্য করেছিলো।
রাত ৯টা,,
বাসের সবাই ক্লান্ত হয়ে রেস্ট করছে।কিছুক্ষনের মধ্য পৌঁছে যাবে বাসায়।মহুয়ারও বেশ ক্লান্ত লাগছে। কিন্তু মন খুব ভালো লাগছে।আজ সারাদিন রাঙামাটির অনেকগুলো জায়গায় ঘুরেছে সবাই।বৌদ্ধ মন্দির তারপর ঝুলন্ত ব্রিজে যাওয়া,নৌকায় চড়া আর কেনাকাটায় পুরোটা দিন ভালোই কেটেছে।
মিনার মহুয়াকে একা ছাড়েনি সবসময় সাথেই ছিলো।তানিয়াও সাথেই ছিলো।কিন্তু তানিয়া মিনার থাকায় ওদের সময় দেওয়ার জন্য দূরে সরে সরে থেকেছে কিছুটা সময়।অবশ্য একাও ছিলো না।মিলন সারাক্ষন ভিডিও কলে কথা বলছিলো তানিয়ার সাথে।
মহুয়ার তেমন টাকা পয়সা ছিলো না সাথে।তাই কিছুই কিনতে চাইছিলোনা। কিন্তু মিনার একটা কথা বলছিলো। নিজের পছন্দে নিলে নাও নাহলে আমার পছন্দের নিয়ে নিলে সেটাই নিতে হবে।মহুয়া কি নিবে কিছুই বুঝতে পারছিলো না।সবগুলো পাহাড়িদের হাতের তৈরি জিনিস পত্র।মহুয়া মা,আর ফুফুর জন্য ২টা চাদর নিলো।মিমি আর মিরার জন্য হ্যান্ডব্যাগ আর মিনার, মিলন ও বাবার জন্য পাঞ্জাবী নিলো।মিনার কে বলে শেষ।মিনার জিনিসগুলো একবার দেখে নিলো তারপর সেগুলো হাতে দিয়ে তানিয়ার পাশে মহুয়াকে বসিয়ে কই যেন গেলো।কিছুক্ষন পর ফিরে আসে।
রাত এগারোটার দিকে মিনার আর মহুয়া বাসায় ফিরে রিকশা করে।গেইটের সামনে গাড়ি থামিয়ে মিনার জিনিসপত্র গুলো নামিয়ে রিক্সা বিদায় করে।ফাহাদ তখন সিড়িতে বসেই সিগারেট খাচ্ছিলো। ওদের একসাথে এতরাতে দেখে মেজাজ যেন খারাপ লাগছে ওর।সারাদিন মহুয়াকে একবারও না দেখে খোজ করে জানতে পারে ও শিক্ষাসফরে গেছে।কিন্তু মিনারও যে সাথে ছিলো জানতো না।মহুয়া ফাহাদকে দেখে থেমে যায়।মিনার পিছন থেকে বলে মহুয়া উপরে যাও আমি আসছি।মহুয়া পাশ কাটিয়ে উপরে চলে যায়।ফাহাদ মিনার কে বলে, কিরে বোনের বডিগার্ড হলি নাকি?
মিনার বলে বোন হবে তোর। আর তোর কেনো গায়ে লাগছে?
ফাহাদ বলে, তাহলে সোজা ভাবেই বলি।মহুয়াকে আমার পছন্দ। আমি মহুয়াকে বিয়ে করতে চাই।
মিনার বুঝতেই পেরেছিলো ফাহাদ এই মতলবে আছে।মিনার হেসে বলে, আমি বাকাভাবেই বলি,তোর ইচ্ছে টা পুরন হবেনা।আর মহুয়া কে নিয়ে ভাবার চিন্তাও করবি না।
ফাহাদ বলে, কেনো তুই কে এসব কথা বলার?
-আমি কে সেটা তুই জানিস আর আমি কি করতে পারি সেটাও তুই জানিস।অনেক ক্লান্ত পথ ছাড় আমার।
ফাহাদ বলে,যা তবে জেনে রাখ মহুয়াকে আমার চাই।
মিনার বলে,মহুয়া খেলনা না যে চাইলেই পাবি।গিয়ে স্বপ্ন দেখ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।
মিনার চলে আসে উপরে।
রুমে গিয়ে দেখে মহুয়া ফ্রেস হয়ে গেছে। মিনার কে দেখে বলে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবার দিচ্ছি।
মিনার বলে আমি খাব না তুমি খেয়ে নাও।
– কেনো?
মিনার রেগে বলে,যা বলছি তাই করো এতো প্রশ্ন কেনো করো?
মহুয়া মুখটা কালো করে বাইরে চলে আসে।মিনার অহেতুক কেন বকা দিলো তা বুঝতে পারছেনা। মহুয়াও না খেয়ে এসে শুয়ে পড়ে।
কিছুক্ষন পর মিনার এসে দেখে মহুয়া শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। মিনার আবারও ধমক দিয়ে বলে, বলেছিলাম না খেয়ে নিতে।মহুয়া চুপ করে আছে। মিনার এবার রেগে গিয়ে মহুয়াকে টেনে তুলে। দুজনেই খাবার টেবিলে গিয়ে খেয়ে নিলো।
মিনার যে কেন এমন করে মহুয়া বুঝেনা,প্রথমে বকা দেয় তারপর নিজেই আবার ঠিক হয়।রুমে গিয়ে মিনার মহুয়াকে এক্টা ব্যাগ দিলো।মহুয়া ব্যাগ টা খুলে অবাক হয়ে গেলো।এক এক করে জিনিস বের করছে মহুয়া।ব্যাগ,হেয়ার ক্লিপ, ব্রেসলেট, চুড়ি,বার্মিজ আচার,তাতের নীল রঙের শাড়ী।মিনার এতসব কিনেছে কখন ভাবছে মহুয়া।
মিনার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,বলেছিলাম নিজের পছন্দের কিনতে কথা শুনলে না এবার আমার পছন্দের জিনিসগুলোই পরো।
মহুয়া একটু হেসে মিন্ মিন কিরে বলে ভ্যাগিস নিজে কিনি নাই।
মিনার বলে কি বলছো?
মহুয়া বলে কিছুনা।
চলবে,