#মন_পবনের_নাও
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫ (অন্তিম পর্ব)
আনাবিয়া ফ্লোরে বসে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ঘন্টা খানিক কান্না করে উঠে দাঁড়ালো। একটা মূহুর্তের জন্য তার মনে হয়েছিল তানিম হয়তো নির্দোষ নিজের বোঝার মধ্যে হয়েতো কোন ভুল আছে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রুমটার চারদিকে বার কয়েক চোখ বুলিয়ে নিলো, কতশত স্মৃতি জমে আছে এও ঘরের কোনায়, কোনায় এক নিমেষেই সেসব মরিচিকা হয়ে গেলো। চোখ বোলাতে চেয়ে হঠাৎ চোখ পরলো বেড সাইট টেবিলের উপর গ্লাস চাপা দেয়া একটা কাগজের উপর। দ্রুত সেটি হাতে তুলে নিলো বিশাল একখানা চিঠি, বেডে বসে চিঠিটা খুললো…… আমি প্রেম করিনি কখনো তবে বিয়ের পর তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। আমি চাপা স্বভাবের আর তুমি চঞ্চল হরিণীর মত তোমার চাঞ্চল্যের প্রেমে পরেছি বারংবার।শুনেছি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মূল হচ্ছে বিশ্বাস, আর ভরসা এই দুটোর উপর ভর করেই একসাথে পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিতে হয় একে অপরের বাহুডোরে।সুখে, দুঁখে ভালো খারাপে একে অপরের পাশে থাকতে হয়, অথচ তুমি আমাকে ভরসা করতে পারলে না তিন বছর একি বিছানায় একি ছাদের তলায় থেকেও আমার চরিত্র সম্ভব বুঝলে না! মানছি আমার কিছু ভুল আছে তবে সেই ভুল শুধুমাত্র তুমিই ঠিক করে দিতে পারতে আমকন উপর বিশ্বাস রেখে। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি আর বাসবো তবে আর এই লঞ্চনার সংসারে ফিরবো না। আমার নিজের মা আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তুমি তো চলেই গেছো ছেড়ে, আচ্ছা সম্পর্ক বুঝি খুব ঠুনকো তাইতো সামান্য বাতাসে নড়বড়ে হয়ে গেলো। চোখের৷ দেখার মাঝেও ভুল থাকে, সত্যির আড়ালেও সত্যি থাকে। একটু সময় দিলে কি খুব অন্যায় হতো আনা? যাইহোক তুমি ভালো থেকো। তোমার জীবনের তিন বছর নষ্ট করার জন্য পারলে ক্ষমা করে দিও।
ইতি…….
যার অস্তিত্বের পারদ নষ্ট হয়ে গেছে তার নাম আর কোথাও লেখা না হোক।
আনা চিঠি বন্ধ করে বলে,কেন বারবার আমাকে সংশয়ে ফেলে দিচ্ছো! কিছু একটা তো স্পষ্ট করে বলতে পারো কেন বলছো না। আমিও তো তোমার প্রেমে পরেছিলাম, ভালোবেসে মায়ায় বেঁধে রেখেছিলাম। তাহলে ছেড়ে গেলে কেন? কোন করলে এমন। কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে আমি কিভাবে বুঝবো! আনা চিঠিটা বালিশের তলায় রেখে উঠে আসলো। সোজা রাইমার রুমে।
‘রাই আনাকে দেখে বলে,আনা অবশেষে আমি আমার প্রফেসারকে পেতে চলেছি ভাবতেই প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছে।
‘রাই আমার তোর সাথে কথা আছে।
‘বল তোর সব কথা শুনছি।
‘আমার মনে হচ্ছে স্বর্ণা কোন ভাবে তোর ভাইকে ফাঁসিয়েছে এই পুরো ঘটনার পিছনে একটা চক্রান্ত আছে, যেভাবে হোক সেটা আমাদের জানতে হবে।
‘আচ্ছা তাহলে এরজন্য সব সময় স্বর্ণার উপর নজর রাখতে হবে।
দিন কাটছিলো কিন্তু সময় ফুরচ্ছিলো না, সব জেনো কেমন থমকে গিয়েছে। রাইয়ের বিয়ের ডেটও কাছাকাছি চলে আসছে। কিন্তু তানিমের কোন খোঁজ নেই! মোবাইলটাও রেখে গেছে।
রহিমা বেগম বলেন,মা’তুমি আর কতদিন আছো এ বাসায়?রাইমার বিয়ের পর কি চলে যাবে?
‘মা আমার বাসা থেকে আমি কেন যাবো! যে যাওয়ার সে যাবে। এতোদিন অপেক্ষা করছিলাম আপনার ছেলে ফিরে আসবে তার সামনেই সবটা প্রকাশ করবো কিভাবে স্বর্ণা ওকে বোকা বানিয়েছে।
‘স্বর্ণা চোখ বড় বড় করে বলে,বোকা বানিয়েছি মানে? আমার গর্ভের সন্তান কি তবে উড়ে আসলে? সেদিন তোমার তানিম আমার সাথেই রাত কাটিয়েছে।
‘তা অবশ্য কাটিয়েছে, তারপর তোমার আমাকে দেখিয়ে তানিমের আগে পিছে ঘোরা সব কিছুই তো এই ঝামেলা তৈরি করার জন্য। তবে তুমি হয়তো জনো না সত্যি কখনো চাপা থাকে না,সত্য বের হবেই আজ না হয় কাল। সেদিন আমি নিজের হাতে তানিমকে ঘুমের ঔষধ দিয়েছিলাম ওর ঘুম কম তাই। আমি, আম্মু,রাই আন্টির বাসা থেকে ফিরতে পারিনি বৃষ্টির কারণে। আর তুমি সেই রাতটা কাজে লাগালে৷ তানিমের ঘুমের সুযোগ নিয়ে ওর সাথে বাজে, বাজে পিক ক্যাপচার করলে। কিন্তু তানিম তোমাকে স্পর্শও করেনি।
‘আষাঢ়ে গল্প বললেই কেউ বিশ্বাস করবে না৷
‘প্রমাণ আছে তো তোমার গর্ভের সন্তানের ডিএনএ টেস্ট। আর তোমার মোবাইল রেকর্ড।
‘হ্যা এসব আমি করেছি, আমি কি করতাম নাইমের সাথে পালিয়ে গেলাম ও আমাকে বিয়ে না করে শুধু ভোগ করে ছেড়ে দিলো। তাই ভাবলাম তানিম সহজ সরল আছে ওকে কাজে লাগাই এরজন্য এসব করেছি। নিজেন সন্তানের পরিচয়ের জন্য।
‘তোমার পাপের প্রতিফল তুমি ভোগ করবে সেটা আরেকজন কেন ভোগ করবে? এবার এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও আর কখনো এখানে আসবে না।
🌿আজরার বর সেজে রেডি,সবাই বের হয়েছে বউ আনার উদ্দেশ্যে।
‘রাইমা বউ বেশে বসে আছে এমন আনন্দের দিনে সবার চোখে পানি। এখনো তানিমের কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। বাহিরে আওয়াজ আসলো বর এসেছে এসেছে। ঘরোয়া ভাবে এই বাড়িতে বিয়ে সেরে কাল ওই বাড়িতে বড় করে অনুষ্ঠান হবে।
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করবে ঠিক তার আগে তানিম বলে,আমাকে ছাড়া আমার বোনকে বিয়ে করে কে নিয়ে যায় দেখি!
‘রাই একছুটে তানিমকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। সুন্দর ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হলো। রাইকে বিদায় দিয়ে তানিম ঘরে আসলো।
‘আনা জানালা ধরে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
তানিম বলে,বৌ আমার সাথে কথা বলবে না?
‘আনা মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো।
‘কই রাগ করবো আমি, উল্টো তুমি রাগ দেখাচ্ছো!
‘আনা সামনের দিকে ঘুরেই তানিমকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে, আনার চোখের জলে তানিমের বুকের কাছের শার্ট ভিজে যাচ্ছে।
‘আরেহহ পাগলি বৌ কাঁদাছো কেন? আমি তো আছিই।
‘কেন গেলো কিছু না বলে, আমার কত কষ্ট হয়েছে এ ক’দিন।
‘কি করবো বলো, তোমাকে বললে তো বুঝতে না। তুমি আমাকে ভরসাটুকু করতে পারোনি সুযোগ ও দাওনি সোজা বাপের বাড়ি চলে গেছো।
‘আর কখনো যাবো না। আর আপনিও কোন কাজিনকে এতো হেল্প করবেন না। হেল্প করতে হলে আমার মাধ্যমে করাবেন, মনে থাকবে তো?
‘হ্যা খু্ব মনে থাকবে।
‘ভালোবাসি আপনাকে, আপনি আমার #মন_পবনের_নাও
‘তুমি আমার মন পবনের প্রদীপ আর আলোতে আমার জীবন আলোকিত।
🌿 আজরান ধীর পায়ে রাইয়ের পাশে এসে বসলো,আলতে হাতে রাইয়ের ঘোমটা সরিয়ে দিলো তারপর রাইয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,হৃদয়হরনী তোমাকে আমি চিনেছি তুমিই সেই মেয়ে যাকে আমার মন পবনে জায়গা দিয়েছি। আজরান রাইয়ের কপালে আলতো চুমু দিলো৷
রাই আজরানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,আমান ডিয়ার ক্রাশ প্রফেসার বান্ধবীর ভার্সিটিতে আপনাকে দু’বার দেখেই প্রেমে পরেছি,আপনার পকেটে নিজের ঝুমকো দিয়ে আমার মন পাঠিয়েছি তাহলে কিভাবে আমার না হয়ে থাকবেন!
আজরান রাইকে জড়িয়ে ধরে বলে,দুষ্ট বৌ আমার। তোমার কাছে একটাই চাওয়া, আমার বাবা,মা আর বোনকে নিজের মনে করবে। কখনো কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে,আমার মায়ের অনেক শখের তুমি তাই তার সাথে কখনো,খারাপ ব্যবহার করবে না।
‘আজ থেকে আপনার প্রিয়রা আমার প্রিয়। কখনো অভিযোগ করার সুযোগ দিবো,না।
‘তোমরার প্রিয়রা আমার প্রিয়। আর তুমি আমার প্রিয়তমা।
“”সবাই চায় শ্বাশুড়ি যেনো মায়ের মত হয়, অথচ কেউ শ্বাশুড়িকে মায়ের চোখে দেখে না,’মা সারাদিন বকাঝকা করলেও আমরা সেটা সহ্য করি কিন্তু শ্বাশুড়ির সামান্য কথা সহ্য হয় না!!
সমাপ্তি।