#মন_পবনের_নাও
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৪
‘ রাই তুই কার জন্য অপেক্ষা করছিস?যে লোকের ম্যনারস নাই তার জন্য! একটা ছেলে যার কমন সেন্স নাই, যে জানেনা মেয়েদের অপেক্ষা করাতে নেই তার জন্য আমরা আধঘন্টা ধরে বসে আছি!
‘ আনা তুই এতো অস্থির কেন বলতো! জানিস তো তোর শ্বাশুড়ি আম্মাকে যদি দেখা না করে যাই তবে প্যারা দিবে।
‘ তুই বলে দিবে ছেলে আসেনি।
‘ এসব কিছু হচ্ছে তোর জন্য, চল বাসায় ফিরে চল কয়েকদিন বিয়ের প্যারা থেকে মুক্ত থাকবো৷
‘ শাঁকচুন্নি আছে নাকি গেছে?
‘ শোন শাঁকচুন্নিরা নিজে থেকে যায় না, তাদের ঝাঁটিয়ে বিদায় করতে হয়।
‘তোর কি মনে হয় তোর ভাইয়ের কোন সম্পর্ক নেই ওই পেত্নীর সাথে?
‘আমার মনে হয় কোন একটা ঘাপলা আছে যেটা আমরা ধরতে পারছি না। আমার সাথে বাসায় চল দু’জন মিলে গোয়েন্দা গিন্নি হয়ে সব বের করবো।
‘তুই শিউর কোন কিছু উদঘাটন করতে পারবো? যদি আরো ভয়ংকর কিছু বেরিয়ে আসে তো!
‘তো তুই চলে আসবি তোকে কে আটকাবে? আমার ভাই তা বলে কি অন্যায় প্রশয় দেবো!
‘ আনা রাইয়ের গালে হালকা কিস করে বলে,’লাভ ইউ।
পেছন থেকে একজন কর্কশ কন্ঠে বলে,আপনারা কি পাবলিক প্লেসের প্রাইভেসি বোঝেন না?
‘আনা বলে, আপনি কি মিন করতে চাইছেন?বলেই সামনে তাকিয়ে বলে,মিস্টার প্লাস্টিক আপনি?
‘ মুখ সামলে কথা বলুন আমি আপনার বেয়াই না যে যেখানে সেখানে উদ্ভট বিহেভিয়ার করবেন।
‘ রাই এক পলক তাকিয়ে বলে,প্লিজ কিছু মনে করবেন না বসুন। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড তবে আপনারা কি পূর্বপরিচিত?
‘এ আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হলে কথা এগোনের দরকার নেই।
‘এটাই ছেলে হলে বিয়ের তো প্রশ্নই উঠেনা।
‘উপরোক্ত কথাটা বললো আজরান আর দ্বিতীয় কথাটা আনার। রাই মনে,মনে বলে কোন জায়গায় ফেঁসে গেলাম।
‘রাইমা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,আসসালামু আলাইকুম আমি রাইমা।
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম, আমি আজরান।
‘আনা হেসে দিয়ে বলে আজরাইল।
‘রাই আনার হাতে চিমটি কেটে চুপ করতে বলে।
‘আজরান বলে,স্যরি আমার পক্ষে অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের সাথে বসা সম্ভব না। আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য দুঃখিত।
‘আমি আপনার সাথে পরিচিত হতে ইন্টারেস্টটেট। আর আমার ফ্রেন্ড সুস্থ তবে কাউকে ছাড় দেয় না, হয়ত আপনাদের মাঝে কোন ভুলবোঝাবুঝি হয়েছে। মিটিয়ে নিন প্লিজ।
‘আনা হেসে বলে,আরেহহহ তেমন কিছু না সব বাদ এখন বিয়ের আলাপ।( মনে, মনে বলে রাই একে পছন্দ করে না তো কোন ভাবে? দেখা যাক কি হয় এখন মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।) আচ্ছা ভাইয়া ওইদিনের জন্য স্যরি।
‘ইট’স ওকে। তো মিস রাইমা আপনি বর্তমানে করছেন কি? স্টাডি নাকি জব?
‘স্টাডি আর পাশাপাশি একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নেই ।
‘ভেরী গুড। আমি প্রফেসর। তো ভবিষ্যতে আপনার কি হওয়ার ইচ্ছে?
‘প্রফেসারের বৌ। হুট করে মুখ ফসকে কথাটা বের হয়ে গেলো রাইয়ের। জিহ্বে কামড় দিয়ে বলে, স্যরি এখনো ভাবিনি৷
‘আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আজরান চলে গেলো।
আজরান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই আনা বলে,কিরে রাই কি চলছে বল তো? এটাই তোর ওই ব্রাশ বয় না তো?
‘না মানে হ্যা আসলে।
‘ওহহহ এই খবর। তবে ছেলেটা দেখতে ঠিকঠাক কিন্তু বেয়াদাব।
‘শোন এই স্যার অনেক ভালো আমি জানি ওইদিন লিজার ভার্সিটিতে তার সাথে দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছে আমি তার পকেটে চুপিচুপি আমার ইয়ার রিং রেখে আসছি।
‘কি প্রেম!
‘তোরে তো,প্রেম করতে দিলাম না তার আগেই আমার ভাইয়ারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলাম।
‘বহুত উপকার করেছেন এবার বাসায় চলেন বিয়ের তোড়জোড় শুরু করতে হবে।
‘বিয়ে মানে?
‘দেখিস এই প্লাস্টিক তোকেই বিয়ে করবে চল বাসায়।
‘এটা সত্যি হলে তোরে আমি ট্রিট দেবো জানু।
আনা এবাড়িতে আসলো নিজের বাড়ি নিজের সংসারের প্রতি অন্য রকম টান থাকে। এসেই রহিমা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আম্মু কেমন আছেন।
‘রহিমা বেগম বলে, তুই চলে এসেছিস এবার আমি সবার চেয়ে ভালো থাকবো।
‘স্বার্ণা বলে,তা মুখ উঠিয়ে আবার চলে আসলে যে?
‘আমরার বাড়ি আমি তো আসবোই আমি না আসলে তোমাকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে কে?
‘মুখ সামলে কথা বলো আনা।
‘আমার মুখ আর হাত কখনো উচিৎ জায়গা পেলে সামলাতে পারি না। তাই এখান থেকে বিদায় হও।
স্বর্ণা কিছু না বলে সোজা ছাদে চলে গেলো।
রাহিমা বেগম বলে, তোর রুমের চাবি আমার রুমের বালিশের তলায় যা নিয়ে আয়।
‘ আম্মু রুমে তালা দেয়া কেন?
‘কারন তোর স্বামী বলে গেছে তোকে ছাড়া আর কাউকে রুমে ঢুকতে দিতে না।
‘তা তোমার ছেলে কই আম্মু?
‘জানিনা কিছুই তো ঠিকমত বললো না।
আচ্ছা আমি দেখছি। বলেই আনা নিজের রুমে আসলো, মনে মনে বলে আমি ফিরে আসিনি শুধু রাইয়ের জন্য এসেছি। এতোই যদি আমাকে ভালোবাসেন তবে সত্যিটা কেন বলছেন না! আমি সহজ তবে পানির মত। “তৃষ্ণা মেটাতেও জানি আবার ডুবিয়ে মারতেও জানি।
🌿আজরান বাসায় এসে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে, ‘জারা আমাকে এক গ্লাস ঠান্ডা ঠান্ডা লেবুর শরবত দে তো।
‘আমি কেন দেবো? বিয়ে করে এনে নিজের বৌকে হুকুম দাও আমার পড়া আছে পারবো না৷
‘আম্মু তোমার মেয়েকে কিছু বলবা? দিনদিন মুখে মুখে তর্ক করা শিখছে।
‘উচিৎ কথা কারোই সহ্য হয় না বাবজান। আমার এখন বয়স হয়েছে তোর খেতমদ করবো নাকি নিজের নাকি তোর বাবা, বোনের। তুই বিয়ে করলে করবি না করলে আমরা করাবো তুই শুধু কবুল বলবি।
‘আচ্ছা তাহলে আজকের মেয়েটাকে দিলাম তোমাদের করে, তবে মনে রেখে বিয়ে করবো আমি তবে সে হবে তোমার বৌ মা আর আমার বোনের ভাবিজান। আমার কিছুই না৷
‘সত্যি বলছিস তুই বিয়ে করবি! নাহার বেগমের কন্ঠে উৎফুল্ল সে জারা কে ডেকে বলে তাড়াতাড়ি রেডি হ আজই আংন্টি পরিয়ে আসবো মেয়েকে।
🌿আনাবিয়া অনেকক্ষণ রুমের মধ্যে পায়চারি করে নিজের ফোন নিয়ে তানিম কে কল করলো৷ কিন্তু ওপাশ থেকে বলছে সুইচড অফ।
আনা ভাবলো না আর কল দেবো না। আমাকে সত্যিটা বের করার কাজে লেগে পরতে হবে।
আনা খুঁজে ও কোথাও কিছু পেলো না।আনা বেডে এসে বসলো, কিছুক্ষণ বসে থেকে বালিশে মাথা রাখলো কোন ফাঁকে ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও জানেনা৷
ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে দেখে রাত প্রায় ন’টা ছাড়িয়েছে। আড়মোড়া ভেঙে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে আনা। ফ্রেশ হয়ে বেে হবে তখন চোখে পরলো একটা প্রেগন্যান্সি কিটের। আনা ঘামতে লাগল, তার ওয়াশরুমে এটা কে রাখলো? নাকি আনা যা ভাবছে তাই সতি। আনা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিচ্ছে। বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পরছো নোনা জল। এই মূহুর্তে ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে চিৎকার করে কান্না করতে৷ চোখের সামনে ভেসে উঠলো অতীতেের কিছু স্মৃতি…….
তানিম আনার কপালে চুমু খেয়ে আনার চেহারার উপরে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো হাতে কানের পিছে গুঁজে দিয়ে বলে, কখন বাবা হলে আমার। মেয়ে চাই তোমার মত সুইট কিউট মেয়ে, আর তার না। থাকবে আতিফা আনজুম।
‘আনা তানিমের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, যখন হবে কখন দেখা যাবে।
‘তানিম পরম যত্নে আনাবিয়াকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,চাইলে কি আতিফাকে আনার ট্রাই করতে পারি।
‘আনা তানিমের বুকে আদুরে কিল মেরে বলে সব সময় মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি। এসব ছাড়া আর কিছু আসে না মাথায়?
‘বুঝলা বৌ তোমারে দেখলেই আমার প্রেম, প্রেম পায়, তুমিই আমাকে বিগড়ে দিয়েছি এবার দ্রুত আমাকে ঠিক করো।
#চলবে