#মন_পবনের_নাও
#নুসাইবা_ইভানা
সূচনা পর্ব
“আমার হ্যাসবেন্ড আর তার বোনকে এতোটা কাছাকাছি দেখে,রেগে গেলাম আমি। স্বর্ণা আমাকে দেখেই সরে গেলো। ‘বাপ্পি বললো আনা তুমি ভুল ভাবছ!
‘একদম আমাকে ঠিক ভুল শেখাতে আসবে না। আমি এতোটা অবুঝ না। নিজের চোখে যেটা দেখেছি সেটা অবিশ্বাস করবো!
‘চোখের দেখাও ভুল হয় আনা।
‘তুমি তো কথাই বলো না৷ লজ্জা করলো না তোমার! নিজের ওয়াইফ নেই সেই সুযোগে বোনের কাছাকাছি আসতে! ছিহহহ আমার ত ভেবেই গা গুলিয়ে বমি আসছে।
‘কি বলছো এসব আনা!
আনা বাপ্পির হাত ধরে আয়নার সামনে নিয়ে আসলো৷ আমি তো ভুল বলছি, কিন্তু আয়না নিশ্চই ভুল বলবে না! দেখো আর বলো তোমার ঠোটে এই লিপস্টিক কোথা থেকে আসলো! এবার এটা বলো না আমি নেই তাই আমার লিপস্টিক তুমি ব্যবহার করেছিলে।
‘আমি আর স্বর্ণা যাস্ট কথা বলছিলাম। আমি বসেছিলাম হুট করে দাঁড়িয়ে যাওয়াতে এই দূর্ঘটনা।
‘তা তোমার বউ নেই সেটা জানার পরেও নিজের বেড রুমে তোমার বোনকে আসতে দিলে কেনো?
‘ও আমার কাজিন ছোট থেকে এখানে বড় হয়েছে৷ ও নিজেদের মানুষের মতই৷ রাইমা যেমন আসতে পারে স্বর্ণাও পারে!
‘রাইমা আর স্বর্ণা এক না, রাইমার সাথে তোমার বিয়ও বৈধ না আর এরকম দূর্ঘটনা ও ঘটতো না।
‘আনা তুমি নিজের লিমিট ক্রস করছো!
‘যাস্ট সেট আপ মিস্টার বাপ্পি হাসান। আপনার আওয়াজ নিচে। আপনি যে ঘৃণ্য কাজ করেছেন তারপর এসব কথা মানায় না। ভুলে যাবেননা আমি আপনার সাথে একা একা আসিনি৷ আপনার বাবা মা আমাকে নিয়ে এসেছে৷ তো যা বলার তাদের সামনে বলবেন।
‘তুমি এতোদিনে আমাকে এই চিনলে!
‘পুরো জীবন কাটিয়ে দিলেও মানুষ চেনা যায় না৷ আর আপনার সাথে মাত্র তিন বছরের সম্পর্ক আমার! এতো কথা আমাকে না আপনার বাবা মাকে বলবেন!
‘আনা এই সমান্য বিষয় তুমি বাবা মাকে বলবে!
‘এটা আপনার মত চরিত্রে লোকদের জন্য সামান্য হতে পারে! কিন্তু আমার মত মেয়ের জন্য অসামান্য।
‘আচ্ছা কথা দিচ্ছি আর কখনো এরকম করবো না। আজকে থেকে স্বার্ণার সাথে কথা বলা বন্ধ।
‘আজকেই ওকে এ বাসা থেকে বের করে দেবেন। আমি এ বিষয়ে দ্বিতীয় কোন কথা শুনতে চাইনা।
‘আচ্ছা আমি বাবা মায়ের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো।
‘দেখো আমি তোমাকে যেটা বলছি সেটা না হলে, আমি যা করবো ভাবছি তাই করবো!
‘বাপ্পি চলে গেলো রুম থেকে। রাস্তায় বেড় হয়ে সিগারেট ধরালো। একে একে পুরো প্যাকেট শেষ করলো। কিন্তু কি করবে বুঝতে পারছে না।
✨প্রফেসার আজরান চৌধুরী। নিজের ফ্যামেলি নিয়ে এসেছে মেয়ে দেখতে, এ পর্যন্ত শ’খানেক মেয়ে দেখেছে। তবে কাউকে তার মনে ধরছে না।
আজরান বসে আছে তার পাশেই জারা আর নাহার বেগম। সাথে জসিম আবসার চৌধুরী। তিনজনে ফিসফিস করছে, আজ যদি মেয়ে পছন্দ না হয় তবে আমরা আর মেয়ে দেখতে আসবো না।
এরমধ্যেই ট্রে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক ষোড়শী কন্য আসলো। আজরান মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলো, তুমিই কি পাত্রী?
‘মেয়েটি লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।
‘কানে শুনতে পাওনি কি জিজ্ঞেস করছি?
‘পাশ থেকে মেয়ের ভাবি বলে, এতো হাইপার হচ্ছেন কেন! এটাই পাত্রী। ওর নাম নীরু।
‘বাকি কথা না শুনেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো আজরান। রাগে নিজেই ড্রাইভার রেখে একা বেরিয়ে পরলো। চৈত্রমাসের প্রখর গরমে অতিষ্ঠ জন জীবন। তারচেয়ে বেশি অতিষ্ঠ আজরান । কি হচ্ছে তার সাথে!শেষে কিনা একজন টিনেজার মেয়েকে দেখতে আসলো আজরান! গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করছে, আসতে আসতে কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছে?হুট করেই গাড়ী হার্ট ব্রেক করলো। আরো বিরক্তি নিয়ে কাঁচ নামিয়ে বললো চোখে দেখতে পাননা নাকি!
‘এই যে মিস্টার” একটা প্লাস্টিকের গাড়ীর ড্রাইভার হয়ে এতো তেজ! দেখছেননা রাস্তায় পানি আপনার প্লাস্টিক ধীরে চালাতে পারলেননা।
‘,আজরান গাড়ি থেকে বের হয়ে বলে,সমস্যা কি!
‘আমার তো কেন সমস্যা নেই সব সমস্যা আপনার মিস্টার প্লাস্টিক।
‘প্রচন্ড লেভেলের বেয়াদব আপনি। মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে তর্ক করছেন!
‘তো ভয় পাই নাকি, এই রাস্তা আমার।
‘এটা সরকারি রাস্তা তাই এখানে কারো মালিকানা নেই।
‘বললেই হলো নেই! এই যে দেখছেন বাউন্ডারি এটাকে বলে, তানিন কুঞ্জ।তার পাশে যে বিল দেখতে পাচ্ছেন সেখানে আমাদের জমি আছে। আর আমাদের জমির সোজা রাস্তাটুকু আমাদের! সরকার রাস্তা করেছে তাতে কি!
‘এসব ভুলভাল থিওরি আপনাকে কে শিখিয়েছে!
‘মোটেও ভুলভাল থিওরি না।আমার দাদাজান বলেছেন।
‘থাকেন তো এই নোংরা পরিবেশে। কেমন পানি জমে আছে রাস্তায়।
‘থাকি তাতে আপনার কি! আর এই নোংরা পরিবেশে আপনাকে নিশ্চয়ই কেউ নিমন্ত্রণ করে আনেনি। এবার এসেই যখন পরেছেন দেখুন কেমন মজা।
আনাবিয়া হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে আজরানকে ভিজিয়ে দিয়ে চলে গেলো।
‘বাসায় চেয়ে চেঁচামেচি করে ডাকতে লাগলো দাদা।
আফজাল সাহেব বললেন, কি গো প্রেমিকা জামাই রাইখা এই বুইড়া প্রেমিকরে কেন মনে পড়লো?
‘আমি আর ওই বাড়িতে যাবো না।তোমাদের কথায় বিয়ে করেছি এখন যদি জোড় করে ওই বাসায় পাঠাও তাহলে সোজা ঝুলে পরবো সিলিংয়ে।
‘ওরেহহ বাপরেহহহ মেয়ের ত দেখি ভারি অভিমান হয়েছে! আয় ঘরে আয় তোর বাড়ি তোর যতদিন ইচ্ছে থাকবি কেউ তোকে জোড় করবে না।
‘তোমার ছেলে যদি কিছু বলে তাহলে?
‘ছেলের ঘাড়ে ক’টা মাথা? যে আমার প্রেমিকারে কিছু কইবো! কিন্তু এই পানিতে গড়াগড়ি খেয়ে কেন আসছেন বিবিজান?
‘আমার ইচ্ছে এবার সরো আমি ফ্রেশ হবো।
বাপ্পি বাসায় ফিরে দেখে স্বর্না লাল শাড়ী পরে সোফায় বসে আচার খাচ্ছে। বাপ্পি আসেপাশে তাকিয়ে বলে,আনা কই?
‘তোমার আনা তুমিই খুঁজে দেখো। খুচরো পয়সা ত হয়তো এদিক সেদিক পরে আছে।
‘রহিমা বেগম এসে বলে, হইছে তোর মনের খায়েশ পূরণ? আনাবিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। চরিত্রহীন পুরুষের সাথে কোন মেয়ে থাকবে?
‘মা’ ‘তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো ভুলে যেওনা আমার টাকায় সংসার চলে।
‘আমার কথা কম আর বেশি!একদিন এই মেয়ে কাল নাগিনীর মত তোর সব চুষে খাবে দেখে নিস। ঘরে সুন্দরী বউ থাকতে যে পুরুষ পর নারীর দিকে নজর দেয় এমন পুরুষের দিকে কেউ থুথুও ফেলে না। আর যে মেয়ে জেনে শুনে বিবাহিত পুরুষের মাথা খায় সে তো পতিতালয়ের ব্য’শ্যার চেয়ে নিকৃষ্ট। এটা এখন সংসার না বিষ মনে হচ্ছে। ‘কথাটা জানাজানি হলে পাড়া প্রতিবেশীর কাছে মুখ দেখানোর জো থাকবে না। ছিহহহ ছিহহহহ শেষে কিনা এইদিন ও দেখতো হলো! ‘ এসব দেখার আগে মরন আসলো না কেন?
বাপ্পি স্বর্নার দিকে রক্ত চক্ষু নিক্ষেপ করে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই বাপ্পির ফোনে টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠলো মোবাইল হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দেখল স্পষ্ট অক্ষরে লেখা…….. তোমাকে বলেছিলাম, যতদিন তোমার স্পর্শ শুধু আমার থাকবে, ততদিন যা হয়ে যাক আমি তোমার থাকবো।তবে কথায় আছে না পুরুষ মানুষ এক নারীতে আসক্ত থাকতে পারে না।ঘরে বিরিয়ানি থাকলেও পরের ঘরের পান্তা ভাতের দিকে নজর দেবেই।
বিচ্ছেদ আমি কখনো চাইনি তবে ভাগের স্বামী আর ভালোবাসাও চাইনি। ডিভোর্স লেটার খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন। বাপ্পি হাসান।
কয়েক মূহুর্ত টেক্সটের দিকে তাকিয়ে থেকে লম্বা পা ফেলে নিজের রুমে প্রবেশ করে। স্বর্ণাও বাপ্পির পিছু পিছু আসে কিন্তু বাপ্পি স্বর্নাকে রুমে ঢুকতে না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।
স্বর্ণা বাহির থেকে বলে,’ সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দাও। মনে রাইখো সত্যি বেশিদিন চাপা থাকে না। আজ না হয় কাল জানাজানি হবেই। ‘ তখন দেখা যাবে কেঁচো খুড়তে কেউটে বেড়িয়ে আসবে”!!
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জিত ভাষায় ধরিয়ে দিবেন, ইনশা আল্লাহ শুধরে নেয়ার চেষ্টা করবো।