#মন তোমাকে ছুঁয়ে দিলাম পর্ব-০১+০২
লেখনীতে – আভা ইসলাম রাত্রি
[১]
সম্পূর্ন অচেনা অজানা এক মেয়েকে নিজের পুরুষালি বুকে বলিষ্ঠ হাতে জড়িয়ে ধরে রাখার মত অপ্রীতিকর কিছু আপাতত আহনাফের কাছে দুটো মনে হচ্ছে না। আহনাফ হতবুদ্ধি অনুভব করছে। ছোটবেলা থেকে আহনাফ শান্তিপ্রিয় এক মস্ত গুরুগম্ভীর মানুষ! শোরগোল-হট্টগোল তার পছন্দ না। আপাতত সে ‘ যমুনা এক্সপ্রেস ‘ নামক বাসে বসে আছে। বন্ধু বান্ধবের সাথে তিনদিনের জন্যে সাজেক যাচ্ছে। যেতে একদিন। আর সাজেক থাকবে দুদিন।
আহনাফের বন্ধুরা সব মস্ত ফাজিল। তারা একেকজন গাড়িতে গিটার নিয়ে গলা ছেড়ে গান করছে, কেউ কেউ জোকস শুনিয়ে একে অপরের উপর হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। বাসের সবাই তাদের এই শোরগোলে আনন্দিত হলেও আহনাফ কিছুটা বিরক্ত! তাই বাসের এসব নয়েজ এড়াতে আহনাফ সবাইকে সামনে ছেড়ে পেছন সিটে এসে বসেছিল। কানে হেডফোন গুঁজে অপেক্ষা করছিল বাস ছাড়ার। সেসময়ই এই অজানা মেয়েটার আগমন! মেয়েটা কিছুক্ষণ এটা সেটা কাজ করে আধা ঘণ্টা পরই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমানোর ফাঁকে আহনাফের বুকে এসে লুটিয়ে পড়েছে। এসব লক্ষ্য করতে পেরে বাসের সামনের সিটে বসে থাকা তার ফাজিল বন্ধুবান্ধব সবাই আহনাফকে মিনিটে মিনিটে টিজ করছে। বন্ধুদের মাত্রাতিরিক্ত টিজে আহনাফ ভীষণ রাগ নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। কেমন মেয়ে? কান্ড জ্ঞ্যান নেই। অচেনা এক ছেলের বুকের মধ্যে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কত জনমের চেনা। আহনাফ ভাবলো একবার ডাক দিবে। কথামত আলতো কণ্ঠে মেয়েটাকে ডাকল। তবে মেয়েটা শুনতে পেল না বোধহয়। বরং বাসের ঠান্ডা বাতাসে মেয়েটা শীতে আহনাফের বুকে উষ্ণতা খুঁজতে লাগল। আহনাফ এবার অতিষ্ট হলো। সে মেয়েটার গালে দুটো আলতো হাতের থাপ্পড় দিয়ে বলল,
‘ এই যে মেয়ে! উঠুন! ‘
আভা নিভুনিভু নয়নে চোখ খুলল। প্রথমে নিজেকে আবিষ্কার করল এক সাদা শার্ট জড়ানো শক্ত এক বুকে। আভা চকিতে চোখ উপরে তুলে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ তখন ভ্রু কুচকে বিরক্ত বদনে আভা দিকে চেয়ে। এক পুরুষের বুকে এতক্ষণ লেপ্টে ছিল ভাবতে আভার মনে ভয়ংকর অনুভব হলো। সে আঁতকে উঠে চট করে আহনাফের থেকে সরে বসল। কানের পেছনে চুল গুঁজতে গুঁজতে মিনমিনিয়ে বললো,
‘ আম সরি। আমি বুঝতে পারি নি…’
‘ ইটস ওকে। নেক্সট টাইম থেকে খেয়াল রাখবেন। এবার ভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম। পরের বার খারাপ কেউ থাকতে পারে। সো বি সেইফ। ‘
আভা মাথা নাড়ালো। খুব লজ্জা লাগছে তার। ছেলেটা কি ভাবলো? এভাবেই ঘুমিয়ে পড়া একটুও উচিত হয়নি। আভা খানিক আড়চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। ছেলেটা ইংলিশ একটা বই পড়ছে। চোখে চশমা। সাধারণত এসব চশমা পড়া ছেলেরা খুব পড়ুয়া হয়। ছেলেটা বোধহয় সেরকম। আভা খুব বিরক্ত লাগছে। সাজেক যেতে আরো এক ঘন্টা লাগবে। এতক্ষন একটা বই পড়া যাক। আভা নিজের ব্যাগ থেকে বই বের করল। নাম, ‘ কোথাও কেউ নেই ‘
বইটা হুমায়ূন আহমেদের লেখা। ভীষন সুন্দর। বইয়ে মুনা চরিত্র আভার খুব পছন্দের। অবশ্য হুমায়ূন আহমেদের সবগুলো বই-নাটক আভার প্রিয়! আভা মনযোগ দিয়ে বই পড়ছে। ভ্রু জোড়া কুচকে বইয়ের ক্লাইম্যাক্স অনুভব করার চেষ্টা করছে।
আধা ঘন্টা পর, আভা বই থেকে মুখ তুললো।আভা চোখের সামনে থেকে বই সরিয়ে এক চোখ প্রকাশ করে তাকালো পাশে বসে থাকা সুদর্শন সেই ছেলেটার দিকে। ছেলেটা কেমন যেন অদ্ভুত! পাশে সুন্দরী এক মেয়ে বসা! জগতের নিয়ম অনুযায়ী ছেলেটার এখন আভার দিকে নির্লজ্জের মত চেয়ে থাকা উচিত! অথচ ছেলেটা একবারও আভার দিকে তাকাচ্ছে না। বরং ইংলিশ বইয়ের মুখ গুঁজে পড়ে আছে। ছেলেটা কি ভীষন চুপচাপ ধরনের? হয়তো!
-“এই আহনাফ, কোক ধর। ‘
আহনাফের এক বন্ধু দিহান দু সিট সামনে থেকে একটা কোকাকোলার বোতল ছুঁড়ে দিল আহনাফের দিকে। আহনাফ সঙ্গেসঙ্গে হাত বাড়িয়ে তা ক্যাচ করে নিল। আভা এদের চোখ তুলে এদের কাজ দেখলো। ছেলেটা তাহলে একা আসেনি! বন্ধুদের সাথে এসেছে।
আহনাফ কোকের বোতলের ছিপি খুলছিল। আভা তখন আহনাফের দিকে চেয়ে বলে উঠলো,
-” হাই, আমি আভা! আভা ইসলাম রাত্রি! ”
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো আভার দিকে। কোনো মেয়ে নিজে আগ্রহ নিয়ে অচেনা ছেলের সাথে কথা বলছে, বিষয়টা আহনাফ এই প্রথম দেখলো! আহনাফ বিস্ময় সামলে মুচকি হেসে বললো,
-” আমি আহনাফ, আহনাফ শাহরিয়ার। ”
-” ওহ! আপনার বন্ধুরা সব সামনে। আপনি একা পেছনে কেন?
আহনাফ মৃদু হাসল। আভার কাছে সেই হাসিটা ভীষন চমৎকার ঠেকলো। দারুন করে হাসে তো ছেলেটা! আহনাফ বললো,
-” সামনের চারটা সিট আমার চার ফ্রেন্ড দখল করেছে। তাই আমি একা পেছনে বসেছি। ”
আহনাফের কথার মধ্যে সামনের সিট দিয়ে উঁকি দিল বাঁধন। আভার উদ্দেশ্যে বললো,
-” আরে মেইন কাহিনী এটা না। কাহিনী হচ্ছে, এই আহনাফ হলো প্রচুর আঁতেল পাবলিক। সামনে বসলে বই পড়তে পারবে না, তাই পেছনে এসে বসেছে। এর মাথায় দিনরাত বই দিয়ে থাপরানো উচিত! ”
বাঁধনের কথায় তার দিকে বেশ রাগ নিয়ে তাকালো আহনাফ। বললো,
-” বাজে বকিস না। একদম মুখে সুপার গ্লু লাগিয়ে দেবো। ”
আহনাফের কথা শুনে পাশের সিট থেকে কামরুল উঁকি দিয়ে বললো,
-” হুহ, সত্য কথা বললেই তো তা তোর কাছে বাজে কথা হয়ে যায়! মিথ্যে বলবি না, বই পড়ার জন্যেই তো তুই পেছনে বসেছিস। ”
আহনাফ এবার তার হাতে থাকা ইংলিশ বইটা দিয়ে কামরুলের মাথায় চাটা দিয়ে বললো,
-‘ হুহ, তোর মাথা। গাঁধার মত কথা না বলে, চুপ করে সিটে বসে থাক, শালা। ”
কামরুল মাথা ঘষতে ঘষতে আভার দিকে তাকালো। বললো,
-‘ বাই দ্য ওয়ে, আপনার নামটা কি? ”
আভা এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে এদের কথা শুনছিল। এরা কত সুন্দর করে কথা বলে। কামরুলের প্রশ্ন শুনে আভা মিষ্টি হেসে বললো,
-” আমি আভা ইসলাম রাত্রি। ছোট করে আভা বলতে পারেন। রাতও বলে অনেকে। আর ভাইয়া তো চান্দের রাইত, সূর্যের আভা বলে। আমার অনেক নাম। বলতে গেলে রাত পেরিয়ে যাবে। ”
বাঁধন হতাশ কণ্ঠে বললো,
-” পরীক্ষার পড়াই মুখস্ত করতে পারিনা, সেখানে আপনার এই হাবিজাবি নাম মুখস্ত করা জাস্ট ইম্পসিবল। আমরা কি আপনাকে আভা ডাকতে পারি? ”
-” ইয়াহ, সিওর। আমার কোনো প্রবলেম নেই। ”
আভার ছটফটে কথা শুনে আহনাফ বেজায় অবাক। মেয়েটা এত কথা বলতে পারে? দিহান জিজ্ঞেস করলো,
-” আপনি কি একা যাচ্ছেন সাজেক? ”
আভা ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” কেন? মেয়েরা কি একা কোথায় যেতে পারেনা? ”
দিহান অপ্রস্তুত হাসলো। বললো,
-” না, না। আমি সেটা বলিনি। সাধারণত মেয়েরা একা এতদূর ট্রাভেল করে না। তাই বললাম। ”
আভা হেসে বললো,
-” আমি কলেজ লাইফ থেকেই একা একা ট্রাভেল করি। ট্রাভেলিং আমার শখ বলতে পারেন! ”
এতক্ষন চুপ করে আভা ও বাকিদের কথা বসে একধ্যানে শুনছিল চিত্রা। সে এবার কথা না বলে থাকতে পারলো না। অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলো,
-” তোমার ভয় লাগে না একা একা ট্রাভেল করতে? ”
-” ভয় কেন লাগবে? আমি ক্যারাটে জানি। যেই ক্ষতি করতে আসবে, আই উইল ডিস্ট্রয় হিম। ”
-” বাহ, বাহ, বাহ। ”
সবাই করতালি দিয়ে তারিফ করতে লাগলো আভার সাহসের। আহনাফ এতক্ষণ চুপটি করে আভার সব কথা শুনছিল। মেয়েটার মুখ একবার চললে আর বন্ধই হয়না। মুখে ব্যথা করে না এই মেয়ের? তাছাড়া মেয়েটা সবার সাথে কত সহজে মিশে গেল। মেয়েটার মধ্যে মানুষের সাথে সহজে মিশে যাওয়ার প্রবল ক্ষমতা আছে। বিষয়টা দারুন লাগলো আহনাফের কাছে! আহনাফ চোখের সামনে বই ধরা অবস্থায় চোরাচোখে মাঝেমধ্যে আভার দিকে তাকাতে লাগলো!
#চলবে
#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ২
লেখনীতে – আভা ইসলাম রাত্রি
________________________________
–’ আপনারা সবাই দারুন মজার মানুষ তো! ‘
বাঁধন মাথা চুলকে লজ্জা পাওয়ার ভান করল। কামরুল অবশ্য মুখ ভেংচি দিল। বলল,
–’ আমাদের বন্ধুদলের সবাই মজা করতে পছন্দ করি। শুধু আহনাফ ছাড়া। আহনাফের মজা করা পছন্দ না। আমরা যত মজাদার জোকস্ বলি না কেন। আহনাফের রিয়েকশন শূন্যই আসবে। ব্যাটা সারাজীবন নিরামিষ থেকে গেল। আমিষ আর হলো না। ‘
কামরুলের কথা বলার ভঙ্গিতে আভা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আভা খুব উপভোগ করছে তাদের সকলের কথা। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল,
–’ তোদের ফালতু জোকসে কে হাসে? ‘
– ‘ সবাই হাসে। শুধু তুই ছাড়া। ‘
আহনাফ কপালে ভাঁজ নিয়ে কামরুলের দিকে তাকাল। পরক্ষণে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বই পড়ায় মন দিল। আভা আড়চোখে বেশ খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আহনাফ নামক এই গুরুগম্ভীর অ্যাটিটিউডের রাজাকে। সুদর্শন বটে তবে একটু নিরামিষ। মজা বুঝে না, হাসে না, কথা বলে না। একটু কেমন যেন! আভা বলল,
–’ আপনি হাসেন না কেন? হাসতে পয়সা লাগে না। আর আমাদের সবার উচিৎ হাসা প্র্যাকটিস করা। এতে মন শরীর সবকিছু ভালো থাকে। ‘
আভার বিজ্ঞদের মত কথা বলা দেখে আহনাফ বেজায় অবাক হল। আভার দিকে চেয়ে বলল,
– ‘ আমি অকারনে হাসতে পছন্দ করি না। ‘
–’ কারণেও ত হাসছেন না। ‘
আহনাফ উত্তর দিল না। চুপ করে বইয়ে মন দিল। দিহান মাঝখানে ফোরন কাটল। বলল,
– ‘ আরে ,ওর কথা বাদ দাও। ওর আচরনে সমস্যা আছে। ‘
আভা তবুও চোরের মত আহনাফকে দেখতে লাগল। আভার আহনাফকে খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলেটা কথা কম বলে, আভা বেশি কথা বলে। দুজন ব্যতিক্রম ধর্মী। তবুও আভার ভালো লেগেছে আহনাফকে। একজন ইন্টারেস্টিং চরিত্র কি না। তাই!
সম্পূর্ন রাস্তা আভা আহনাফের বন্ধুদের সাথে কথা বলল, হাসল, দু একবার গান গাইল, খাবার ভাগাভাগি করল। আভা খুব সহজেই মিশে গেল তাদের সাথে। বাসের লম্বা সফর আভার বোধ হল মিনিটেই ফুরিয়ে গেল। তবে আহনাফের সকল বন্ধুরা আভার সাথে কথা বলেছে ঠিকই। তবে চিত্রা নামক মেয়েটা আভার সাথে একটুও কোধা বলেনি। কেমন যেন মুখ গোমড়া করে বসে ছিল। আভা দু একবার চিত্রার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাজে দেয়নি। মেয়েটা স্পষ্ট আভাকে এড়িয়ে গেছে। তবে আভা তা নিয়ে ভাবে নি। মেয়েটা হয়তো অসুস্থ বোধ করছে। তাই কথা বলতে চাইছে না। আভা তাই আহনাফের অন্য বন্ধুদের সাথে কথা বলল। আসর বেশ জমে উঠল তাদের।
________________________________
বাস সাজেক পৌঁছে গেছে। বাসের সবাই নেমে দাড়িয়েছে। আহনাফ বন্ধু বান্ধবের সাথে একপাশে দাড়িয়ে গল্প করছে। আভা একা একা একটা বেঞ্চে বসে মোবাইলে কি যেন দেখছে। হঠাৎ ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–’ সবাই এদিকে আসুন! ‘
সবাই ম্যানেজারের কথামত তার পাশে এসে দাঁড়াল। ম্যানেজার বললো,
–’ ‘ আমরা সবাই মেঘের রাজ্য সাজেক পৌঁছে গেছি। এখন আপনারা কি করে এই জায়গা অনুভব করবেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার। আপনারা চাইলে হোটেলে থাকতে পারেন। আমরা হোটেল বুক করেছি। আর যারা হোটেলে থাকতে চান না, তারা সাজেকের একপাশে তাবু খাঁটিয়ে থাকতে পারেন। সর্বোপরি এই ভীষন সুন্দর জায়গা আপনারা নিজ নিজ মতন উপভোগ করুন। ধন্যবাদ! ‘
আহনাফরা সিদ্ধান্ত নিল তারা তাবু খাটিয়ে থাকবে। কিছুটা কষ্ট হবে! তবে সাজেকের জায়গাটা পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে তাবু ইজ দ্য বেস্ট অপশন।
কিন্তু আভা হোটেলে থাকবে। সাজেক একা এসেছে সে। তাবু খাটিয়ে থাকা তার দ্বারা অসম্ভব। অতঃপর সবাই যার যার লাগেজ নিয়ে হোটেলে চলে গেল।
হোটেলে পৌঁছে একটা লম্বা ঘুম দিল আভা। সেই ভাতঘুমে একটা দারুন স্বপ্ন দেখলো সে। কাকে? আহনাফ নামক সেই ভয়ংকর সুদর্শন তথা গুরুগম্ভীর ছেলেকে। আভার এলোমেলো খোঁপায় সুন্দর একটা বেলি ফুলের গাজরা গুঁজে দিয়েছে। ইশ, কি মনোরম সেই দৃশ্য! আভার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল আল্যার্মের টিংটিং শব্দে। আভা বিরক্ত হলো। কিন্তু পরক্ষণেই স্বপ্নের কথা ভেবে সে ভীষন রকম অবাক হলো। একদিনের পরিচয়ে ছেলেটাকে নিয়ে এমন অদ্ভুত স্বপ্ন কেন দেখলো সে? কি জানে ছেলেটা সম্পর্কে? খারাপ ছেলেও হতে পারে। অথচ ছেলেটাকে নিয়ে আকাশ কুসুম ভেবে বসে আছে। ছিঃ, লজ্জা লাগছে! এত বিশ্রী স্বপ্ন দেখে আভার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। আভা মনেমনে নিজেকে কতক গালি দিয়ে বাথরুমে চলে গেল। একটা হট শাওয়ার নেওয়া দরকার! ভীষন ঠান্ডা সাজেকে!
দুপুরে খাবার খাওয়া সময় হয়েছে। আভা শাওয়ার নিয়ে নিচে নেমে এসেছে। ট্রাভেল এজেন্সির সবাই খেতে বসেছে। শুধু আহনাফরা আসেনি। ওরা বোধহয় তাবুতে নিজেদের খাবার তৈরি করেছে। আভার ভীষন মন খারাপ হল। সে চুপচাপ খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেল হোটেলের ডাইনিং সেক্টর থেকে।
______________________________
অতঃপর সবাই বের হলো সাজেক ঘুরতে। আভার খুব ঠাণ্ডা লাগছে। ভুল করে শাল আনা হয়নি। যার দরুন ঠান্ডায় আভার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। দাতে দাত লেগে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। বাঁধন দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করলো। সে নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আভার দিকে এগিয়ে এল।
–’নাও, এটা গায়ে দাও। ঠাণ্ডা কম লাগবে। ”
আভার ভীষন ঠান্ডা লাগছে। তবুও ভদ্রতা স্বরূপ সে চোখ বললো,
–’নো, থ্যাংকস! ”
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে বললো,
–’ তুমি সিওর? আমরা আরো অনেক দূর যাবো। যেতে যেতে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে যাবে। সাজেকে কিন্তু অত্যন্ত বৈরী আবহাওয়া। ‘
আভা কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর হাত বাড়িয়ে বলল,
-‘ দাও। ‘
বাঁধন জ্যাকেট দিল আভাকে। আভা জ্যাকেট গায়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তোমার ঠান্ডা লাগবে না? ”
বাঁধন মুচকি হেসে বলল,
-” ডোন্ট ওয়ারী। আমরা ত প্রায় সাজেক আসি। এসব প্রায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ”
বাঁধনের জ্যাকেটটা আভার গায়ে কাকতাড়ুয়ার মত লাগছে। জ্যাকেটের হাতা আভার হাতে ঝুলে আছে। জ্যাকেটটা আভার হাঁটু অব্দি আসে। আভা ঠোঁট উল্টে বাঁধনের দিকে তাকালো। বলল,
-” এটা অনেক লম্বা। কি করব? ”
আভার এমন অবস্থা দেখে বাঁধন শব্দ করে হেসে ফেলল। আভা বোকার মত চেয়ে থাকল বাঁধনের দিকে। বাঁধন হাসি থামিয়ে বললো,
-” সরি, সরি। দাড়াও, আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ”
বাঁধন আভার জ্যাকেটের হাতা ফোল্ড করে দিল। জ্যাকেটের নিচে অংশ কোমড় অব্দি ফোল্ড করে দিল। আভা এবার যেন রেহাই পেল। আভা কৃতজ্ঞতার সহকারে বলল,
–’ তুমি খুব ভালো বন্ধু, বাঁধন। ‘
বাঁধন মুচকি হেসে আবারও নিজের বন্ধুদের কাছে চলে গেল। দূর থেকে আহনাফ এসব তীক্ষ্ম চোখে লক্ষ্য করছিল। আভা নামক মেয়েটার প্রতি বাঁধনের এরূপ তোয়াক্কা আহনাফকে খুব একটা খুশি করল না। বরং অখুশিই করল। আহনাফ বাঁধনের কাধে হাত রাখল। বাঁধনের ঠোঁটে হাসি। আহনাফ বলল,
–’ কি রে! মেয়েটাকে লাইন মারছিস? ‘
বাঁধন বলল,
–’ তেমন কিছু না। মেয়েটা বেশ উচ্ছল। ভালো লেগেছে। ‘
– ‘ শুধু ভালো লেগেছে? ‘
–’ আব….জানিনা। এত কথা বলিস কেন? সবাই চলে যাচ্ছে। দ্রুত পা চালা। ‘
দেখা গেল, বাঁধন আহনাফকে ছেড়েই এগিয়ে গেল সামনে। আহনাফ পেছনে থেকে গেল। আড়চোখে আভাকে লক্ষ্য করে রাগে ফুসতে লাগল।
#চলবে