মন চায় তোকে পর্ব-১৫

0
1937

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

—- “Believe me sir please.” (বিশ্বাস রাখুন স্যার প্লিজ।)

—-“All right. Hurry up.” (ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি যান।)

অন্তর আর দেরি না করে যেই না ফার্ম হাউজের দরজার দিকে পা বাড়াতে যাবে অমনি নীল বেশ রেগে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ফার্ম হাউজ থেকে বের হলো। সামনে তাকাতেই নীল অন্তর আর পিছনে পুলিশ সেনা দেখে যেই না বাড়ির পিছনের দিকে দৌঁড় লাগাতে যাবে অমনি অন্তর দৌঁড়ে গিয়ে খপ করে পিছন থেকে নীলের শার্টের কলার চেঁপে ধরল। সাথে সাথে পুলিশ সেনারা এসে নীলকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। নীল অঝড়ে ঘামছে আর শুকনো ঢোক গিলছে। অন্তর চোয়াল শক্ত করে হাত জোড়া মুষ্টিবদ্ধ করে নীলের নাকে বসিয়ে দিলো এক ঘুঁষি। নাক থেকে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে নীলের। আচমকাই অন্তরের কানে মল্লিকার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসল। মল্লিকা চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,

—-“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন মিষ্টি আপু। অন্তর আপনাকে ভালোবাসে না। অন্তর কেবল আমাকে ভালোবাসে। আপনি কেনো এখনো অতীত নিয়ে পড়ে আছেন? অতীতে অন্তর তো আপনাকে ক্লিয়ার করে বলে দিয়েছে অন্তর আপনাকে ভালোবাসে না। আপনি তো এখন নিজের মুখেই সবটা স্বীকার বললেন এরপরে ও কেনো অন্তরের পিছনে এভাবে লেগে আছেন? প্লিজ আপু আমাকে আর মারবেন না। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছি।”

অন্তরের মাথাটা ফট করে ধরে গেলো। মল্লিকার আত্নচিৎকার অন্তরকে হিংস্র বাঘে পরিণত করছে। অন্তর আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। নীলকে পুলিশ ইন্সপেক্টরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দৌঁড়ে ঢুকে গেলো ফার্ম হাউজের ভিতর। মল্লিকাকে এক্টা চেয়ারের সাথে দঁড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মল্লিকার হাতের কাটা জায়গা বরাবর দড়িটা টাইট করে বাঁধা হয়েছে। যার কারণে মল্লিকার কাটা জায়গা থেকে অঝড়ে রক্ত ঝড়ছে। মল্লিকা পিটপিট করে চোখ খুলে রেখেছে। পুরো শরীরটা ঘামে চুপচুপ হয়ে গেছে। মল্লিকার সামনে হাতে চাবুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি। চোখ, মুখ লাল করে মিষ্টি যেই না মল্লিকার গায়ে চাবুক মারতে যাবে অমনি অন্তর দৌঁড়ে গিয়ে পিছন থেকে মিষ্টির হাত থেকে টান দিয়ে চাবুকটা ছিনিয়ে নিয়ে এলোপাথারী মিষ্টির পিঠে আঘাত করছে আর মৃদ্যু চিৎকার করে বলছে,,,,,,

—-“ইউ ব্লাডি, বিচ। তোর সাহস হয় কি করে আমার নীলান্জ্ঞনার গায়ে আঘাত করার? আমি আমার নিজের থেকে আমার নীলান্জ্ঞনাকে বেশি ভালোবাসি। তিন বছর আগে আমার হাতের থাপ্পড় খেয়ে ও তোর শখ মিটে নি? আমার সাথে অসভ্যতা করতে গিয়ে শত শত লোকের সামনে ধরা খেয়েছিস। আমার বোনের বার্থ ডে পার্টি টা শুধু মাএ তোর জন্য স্পয়েল হয়েছিলো। সবার সামনে তুই আমার সাথে জোর জবরদস্তি করতে চেয়েছিলি। কিন্তু পেরে উঠতে পারিস নি। এর আগেই আমি তোকে বাড়ি থেকে ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে বের করেছিলাম। আমি বুঝতে পারি নি এতো বছর পরে ও তুই ঐ দিনটার কথা মনে রাখবি। তোর ভাইকে আমার বোনের পিছনে লেলিয়ে দিবি। আমার বউয়ের ক্ষতি করতে চাইবি। এবার আমি তোকে ছাড়ব না। মারতে মারতে ঠিক মেরেই ফেলব।”

মিষ্টি চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে,,,,

—-“প্লিজ অন্তর এবারের মতো আমাকে মাফ করে দাও। তৃতীয় বার এই ভুল গুলো হবে না। আমি আর নীল টোটালী ভালো হয়ে যাবো অন্তর। আর কখনো তোমাদের পিছনে লাগব না। প্লিজ এবারের মতো আমাদের ছেড়ে দাও।”

—-“আগে বল তোর বোন মাইশা কোথায়?”

—-“মাইশা এই ব্যাপারে কিছু জানে না অন্তর। সে বাড়িতে ও নেই। ওর হাজবেন্ড হিমেশকে নিয়ে সে ফুফু শ্বাশুড়ীর বাড়ি বেড়াতে গেছে। এই সুযোগেই আমরা মল্লিকাকে কিডন্যাপ করার প্ল্যানিং টা করেছি। প্লিজ আমাদের ছেড়ে দাও অন্তর প্লিজ।”

অন্তর এরপরে ও থামছে না। এলোপাথারী চাবুক মেরেই যাচ্ছে। মল্লিকা হাতের ব্যাথায় অনেকক্ষন আগেই সেন্সলেস হয়ে গেছে। পুলিশ ইন্সপেক্টর ফার্ম হাউজের ভিতরে ঢুকে পিছন থেকে অন্তরের হাত থেকে চাবুক টা কেড়ে নিয়ে শান্ত কন্ঠে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—- “Calm down. Leave him in our hands. Both will be severely punished. Take your wife to the lodge. We’ll see the rest.”

(শান্ত হোন। উনাকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। দুজনকেই কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। আপনার ওয়াইফকে নিয়ে লজে চলে যান। বাকিটা আমরা দেখছি।)

অন্তর কিছুটা হাঁফিয়ে রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলল,,,,,

—- “I want them to be severely punished, sir. They should not be able to get out of the lock-up before one year. Of course, I will back the Bangladesh tomorrow. I hope you will not compromise with injustice. At the end of the term Not before. I will call them all the time to get the news. Of course you will not disappoint the guests. Give us the right justice.

(আমি ওদের কঠোর শাস্তি চাই স্যার। এক বছরের আগে যেনো ওরা লক আপ থেকে বের হতে না পারে। অবশ্য আমি কাল ই বিডি ব্যাক করব। আশা করছি আপনারা অন্যায়ের সাথে আপোস করবেন না। সাজার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আপনি ওদের দুজনকে ছাড় দিবেন। এর আগে না। আমি অল টাইম কল করে খবর নিবো ওদের। আপনারা অবশ্য অতিথিদের নিরাশ করবেন না। সঠিক ন্যায় দিবেন আমাদের।)

পুলিশ ইন্সপেক্টর অন্তরের সাথে হ্যান্ড শেক করে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,

—- “Guest Devbhav. Please don’t worry. You will get the right justice. Nice to meet you. Next time you will come to visit our country again. But then you will get full safety. You will not have to face these unpleasant incidents anymore. Take care of your wife. I’m coming then. ”

(অতিথি দেবভব। প্লিজ চিন্তা করবেন না। আপনারা সঠিক ন্যায় পাবেন। আপনার সাথে পরিচয় হয়ে খুব ভালো লাগল। নেক্সট টাইম আবারো আমাদের দেশটা ঘুড়তে আসবেন। তখন কিন্তু ফুল সেইফটি পাবেন। এসব অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি আর হতে হবে না। আপনার ওয়াইফের খেয়াল রাখবেন। আসছি তাহলে।)

কথাগুলো বলেই ইন্সপেক্টর মিষ্টি আর নীলকে টানতে টানতে ফার্ম হাউজ থেকে বের হয়ে সোজা পুলিশ জিপে উঠে জিপ ছেড়ে দিলো। অন্তর মল্লিকার হাতের বাঁধন ছুটিয়ে মল্লিকাকে আধকোলে করে মাইশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে এক্টা ক্যাব বুক করে লজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মল্লিকাকে বুকের ভিতর চেঁপে ধরে রেখেছে অন্তর। মল্লিকার নেতিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আচমকাই দুই ফোঁটা চোখের জল ছেড়ে দিলো অন্তর। মল্লিকাকে এই অবস্থায় দেখতে পারছে না অন্তর। হানিমুন করতে এসে এতো বড় বড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি পড়তে হবে অন্তর আসলেই বুঝতে পারে নি।

প্রায় আধ ঘন্টা পর ক্যাব এসে পৌঁছে গেলো লজের সামনে। অন্তর ভাড়া চুকিয়ে মল্লিকাকে আধ কোলে করে গাড়ি থেকে নেমে সোজা হসপিটাল এপার্টমেন্টে চলে গেলো। মল্লিকাকে বেডে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। ডক্টর মল্লিকার চেক আপ করছে। শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝড়ে গেছে মল্লিকার। হাতের এক্টা সেলাই ও ছুটে গেছে। ডক্টর মল্লিকার হাতের ব্যান্ডেজটা খুলে কাটা জায়গাটা ওয়াশ করে আবারো সেলাই করে দিচ্ছে। মল্লিকাকে আধ ঘন্টার জন্য ইনজেকশান পুশ করে অজ্ঞান করে দেওয়া হলো। হুট করেই যদি মল্লিকার সেন্স ফিরে আসে তাহলে ডক্টর ভালো করে মল্লিকার হাতটা ওয়াশ করতে পারবে না। মল্লিকা ব্যাথায় কাঁদবে ছটফট করবে। অন্তর চোখের সামনে এসব সহ্য করতে পারবে না। তাই অন্তরের কথা অনুযায়ী ডক্টর মল্লিকার শরীরে ইনজেকশান পুশ করেছে। আধ ঘন্টার আগে মল্লিকার জ্ঞান ফিরবে না।

প্রায় আধ ঘন্টা পর। ডক্টর খুব ভালো করে মল্লিকার হাতটা ওয়াশ করে আবারো সেলাই করে দিয়েছে। মল্লিকার শরীর যথেষ্ট দুর্বল বলে ডক্টর মল্লিকার শরীরে স্যালাইন পুশ করার প্রস্তাব রাখল অন্তরের কাছে। অন্তর মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। ডক্টর সাথে সাথেই মল্লিকার শরীরে স্যালাইন পুশ করে দিলো।

এভাবে কেটে গেলো প্রায় এক ঘন্টা। দুপুর ঘনিয়ে বিকেল নেমে এলো। অবশ্য বিকেল বললে ভুল হবে। সন্ধ্যা অলরেডি নেমে এসেছে। আস্তে আস্তে সূর্য্যের আলো মিলিয়ে রাতের আভা ফুটে উঠছে। মল্লিকার স্যালাইন এতোক্ষনে শেষ হয়েছে। মল্লিকা ও পিটপিট করে চোখ খোলা আরম্ভ করেছে। অন্তর মল্লিকার মাথার কাছে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো। মল্লিকা মুভ করছে দেখে অন্তরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। চোখ খুলেই মল্লিকা চোখের সামনে অন্তরকে দেখল। অন্তরকে দেখেই মল্লিকা মুচকি হেসে ফটাফট শোয়া থেকে বসে গেলো। অন্তর আর দেরি না করে মল্লিকাকে আধ কোলে করে কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা তিনতলায় উঠে নিজেদের রুমে চলে গেলো।

মল্লিকাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে অন্তর আচমকাই মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরে অঝড়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,

—-“ভালোবাসি নীলান্জ্ঞনা। খুব খুব খুব ভালোবাসি। তোমাকে কিছুটা সময়ের জন্য চোখের সামনে দেখতে না পেয়ে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কাঙ্গাল লাগছিলো নিজেকে। মনে হচ্ছিলো তোমাকে ছাড়া আমার পুরো দুনিয়াটা ফাঁকা। মরুভূমির চেয়ে কম না। তখন তোমাকে মরিচীকা মনে হচ্ছিলো। ধরতে গেলেই হারিয়ে যেতে। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না নীলান্জ্ঞনা। তুমি আমার সব। যাকে ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটা ও দায়। কখনো আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যেও না নীলান্জ্ঞনা। আমি বাঁচতে পারব না। মরে যাবো। সত্যি সত্যি মরে যাবো।”

মল্লিকা অন্তরকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,

—-“অন্তর আমিই কি আপনার সেই নীলান্জ্ঞনা?”

—-“হুম তুমিই আমার নীলান্জ্ঞনা। যাকে আমি বিয়ের আগে থেকেই চিনি। যার চোখ দেখে আমি সারা জীবনের জন্য থমকে গেছি। তোমার নীল চোখে আমি অনেক আগেই হারিয়ে গেছি নীলান্জ্ঞনা। ঐদিন চট্টগ্রাম রেজিস্ট্রি অফিসে তোমাকে প্রথমবারের মতো দেখেছিলাম। তাও আবার তোমার ঐ নীলাভ চোখ দুটো ছাড়া আর কিছুই না। কারণ তুমি বোরখা পড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলে। দূর থেকে আমি তোমাকে দেখেছিলাম। কাছে আসতে আসতেই তুমি কোথাও হারিয়ে গেলে। খুঁজে পেলাম না তোমায় আর। খুব খুঁজেছি তোমাকে। দিন রাত এক করে খুঁজেছি। কিন্তু বার বারই হতাশ হয়েছি। কারণ তোমার নামটা ও আমি জানতাম না। এর মাঝেই আমচকা আম্মু, আব্বু আমার বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে ফেলে। আমার মতামত ছাড়াই। আম্মু, আব্বুর জেদের কাছে হাড় মেনে আমাকে বিয়েটা করতে হয়। তাই বিয়ের পরের দিনই তোমার সাথে অহেতুক রাগ করে আমি ফুফু আম্মুর বাড়ি চলে যাই। তখন সাহেদ আমাকে শান্তনা দেয় তোমাকে মেনে নিতে। উপায়, বুদ্ধি না পেয়ে আমি সাহেদের কথা মেনে নেই। বাড়িতে ফেরার পর তোমাকে নীল শাড়িতে দেখে কেনো জানি না বার বার মনে হচ্ছিলো তুমিই আমার সেই নীলান্জ্ঞনা। যাকে অনেক আগেই আমি ভালোবেসে ফেলেছি। মনের খচখচ থেকে ফাইনালী আমি তোমাকে চট্টগ্রাম যাওয়ার কথাটা জিগ্যেস করি। পর পর অনেকগুলো প্রশ্নই তোমাকে জিগ্যেস করেছিলাম। সব গুলো প্রশ্নের উওরই আমার নীলান্জ্ঞনার সাথে মিলে যাচ্ছিলো। তুমি জানো না ঐদিন আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম। ইচ্ছে করছিলো তোমাকে আমার সব মনের কথা বলে দেই। কিন্তু আমি চাইছিলাম আস্তে আস্তে তোমার মনে জায়গা করে এরপর তোমাকে মনের কথাটা বলব। আই থিংক আজ সেই দিনটা চলে এসেছে। তুমি ও হয়তো আমাকে ভালো….”

অন্তর আর কিছু বলতে পারল না। এর আগেই মল্লিকা বলে উঠল,,,,,

—-“আমি ও ভালোবাসি অন্তর। হয়তো আপনার মতো না। তবে অতোটা ও কম না। আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন অন্তর। আর কখনো না বুঝে আপনার সাথে রাগ করব না। জানেন অন্তর, আমি খুব লাকী। আপনার মতো একজন উওম হাজবেন্ড পেয়ে। আম্মু, আব্বুর কাছে ভীষন ঋণি আমি। ওরা আমার জন্য বেস্ট একজনকে সিলেক্ট করেছে। আসলেই মা-বাবা যা করে সন্তানদের ভালোর জন্যই করে। যা আমি আমার জীবন দিয়ে বুঝেছি। কক্ষনো আমাকে ভুল বুঝবেন না অন্তর। সবসময় আমাকে এভাবে ভালোবেসে যাবেন। এক্টু ও যেনো কমতি না হয়।”

অন্তর খুশিতে মল্লিকার পুরো মুখে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিচ্ছে। মল্লিকা অন্তরের চোখের জল গুলো দুহাত দিয়ে মুছে দিচ্ছে। অন্তর মল্লিকার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে কান্নাসিক্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“কোনো দিন ও ভালোবাসার কমতি হবে না নীলান্জ্ঞনা। উল্টে ক্রমবৃদ্ধিমান হারে বাড়বে। যা গনণা করা ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো নীলান্জ্ঞনা। এই অন্তর কেবল তোমার। সারাজীবন দুজন এভাবেই মিলেমিশে থাকব। ছেড়ে যাওয়ার কথা কক্ষনো কল্পনাতে ও আনব না।”

কথাগুলো বলেই অন্তর আচমকাই মল্লিকার উপর শুয়ে মল্লিকার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা চোখ বন্ধ করে অন্তরের পিছনের চুল গুলো আঁকড়ে ধরল। প্রায় দশ মিনিট পর অন্তর মল্লিকাকে ছেড়ে যেই না মল্লিকার উপর থেকে উঠতে যাবে অমনি মল্লিকা অন্তরের হাত টেনে অন্তরকে থামিয়ে দিয়ে বেশ আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠল,,,,,,

—-“অন্তর….আমি স্ত্রীর অধিকার চাই। প্লিজ আমাকে পূর্ণ করুন।”

অন্তর বাঁকা হেসে আবারো মল্লিকার উপর উঠে গেলো। মল্লিকার ঠোঁট জোড়া ডান হাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে অন্তর ঘোর লাগা কন্ঠে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি এতোদিন ধরে এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম নীলান্জ্ঞনা। আমি সবসময় চাইতাম তুমি নিজ থেকে আমার কাছে ধরা দাও। আজ আমার কান দুটো সার্থক হলো সাথে বেসামাল মনটা ও। আজ রাতটা শুধু তোমার♥আমার।”

অন্তর হেচকা টান দিয়ে মল্লিকার শাড়ির আঁচলটা খুলে ফেলল। পড়নের শার্ট টা খুলে অন্তর মল্লিকার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। পরম আবেশে মল্লিকা চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলল। অন্তর ওর ভালোবাসায় মল্লিকাকে ভরিয়ে দিচ্ছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের ভালোবাসা গুলো গাঁয়ে মাখিয়ে নিচ্ছে। দুজনই ভালোবাসার নেশায় মেতে উঠেছে। সারা রাত অন্তর মল্লিকাকে জ্বালিয়েছে। এক্টু ও ঘুমাতে দেয় নি। তবে মাঝ রাতে উঠে অন্তর আর মল্লিকা খাবার অর্ডার করে খেয়ে নিয়েছে। খাওয়ার দাওয়ার পর ও অন্তর মল্লিকাকে ছাড়ে নি। আবারো মল্লিকাকে খুব জ্বালিয়েছে। সারা রাত দুজনই নির্ঘুম ছিলো।

পরের দিন,,,,,,

সকাল আটটা। মল্লিকা ঘুম থেকে উঠে অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেডের নিচে পড়ে থাকা শাড়িটা কোনো রকমে গাঁয়ে পেঁচিয়ে ল্যাকেজ থেকে এক্টা এ্যাশ কালার শাড়ী বের করে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করেই মল্লিকা দরজার সাথে ঠ্যাস দিয়ে দাঁড়িয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,

—-“উফফফ উনি জাগার আগেই নিজেকে উনার থেকে মুক্ত করতে পারলাম। সজাগ থাকলে কখনো নিজেকে ছাড়াতে পারতাম না। আবারো আমার উপর ঝাপটে পড়ত। লোকটা বড্ড অসভ্য। কাল সারা রাত আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। এক্টু ও ঘুমোতে দেয় নি।”

মল্লিকা আবারো খানিক লজ্জা পেয়ে বলে উঠল,,,,,

—-“অবশ্য আমার খারাপ লাগে নি। বরং ভালোই লেগেছে। নিজেকে পূর্ণ মনে হচ্ছে। মানতে হবে, আমার বর বেশ রোমান্টিক।”

এর মাঝেই অন্তর ঘুম থেকে উঠে খালি গায়ে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কানো শুরু করল। মল্লিকা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল,,,,,

—-“কি হচ্ছে কি এসব? শাওয়ার ও শান্তি মতো নিতে পারব না নাকি?”

অন্তর ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,,

—-“আমি ও তোমার সাথে শাওয়ার নিবো। দরজাটা খোলো।”

মল্লিকা চোখ দুটো বড় বড় করে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,

—-“মাথার তার সবগুলাই ছিড়ছে আপনার। কি নির্লজ্জের মতো কথা বলছেন। ছিঃ, ওয়াক, থু। মাগো মা আমার গাঁ গোলাচ্ছে।”

অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-‘”এমা প্রথম দিনই যে মা হয়ে যাবে বুঝতে পারি নি। আমার ভালোবাসার এতো জোড়? তা কনসিভ করলে কখন?”

মল্লিকা ওয়াশরুমের দরজা খুলে অন্তরের গলা চেঁপে ধরে তেজী কন্ঠে বলল,,,,,

—-“তোকে মেরে এরপর আমি শান্তি হবো। বেটা বেসরম। মুখে কিছুই আটকায় না।”

অন্তর মল্লিকার হাত দুটো গলা থেকে ছাড়িয়ে মল্লিকাকে ওয়াশরুমের দরজার সাথে ঠেকিয়ে মল্লিকার হাত দুটো দুপাশে চেঁপে ধরে বলল,,,,,

—-“আমাকে মারলে তো তুমিই বিধবা হয়ে যাবে। বাচ্চা কাচ্চার মা ও হতে পারবে না।”

#চলবে,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে