#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১১
#নিশাত_জাহান_নিশি
নিচে নেমে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অন্তর আর মল্লিকা গাড়িতে উঠে পড়ল। ড্রাইভার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। অন্তর মল্লিকার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে।
মল্লিকার দৃষ্টি জানালার কাঁচে ঢাকা নিস্তব্ধ রাতের শহরে। জানালার কাঁচে স্বচ্ছ ভাবে রাতের আঁধারটাকে দেখা যাচ্ছে। অন্তর মল্লিকার দৃষ্টিকে ফলো করে মৃদ্যু হেসে জানালার কাঁচটা সরিয়ে দিলো। সাথে সাথেই শোঁ শো বেগে বাতাস হানা দিলো পুরো গাড়িতে। প্রবল বাতাসের তান্ডবে মল্লিকার খোঁপা থেকে চুল সরে যাচ্ছে। খোঁপাটা আস্তে আস্তে করে খুলতে শুরু করেছে। অন্তর ঘোর লাগা দৃষ্টিতে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা এখনো জানালার বাইরে চোখ দিয়ে রেখেছে। দৃষ্টি তার স্থির। হুট করে অন্তর মল্লিকাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। মল্লিকা বড় বড় শ্বাস ফেলে অন্তরের শার্ট আঁকড়ে ধরল। অন্তর মল্লিকার চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে আর ঘোর লাগা কন্ঠে বলছে,,,,,,
—-“মল্লিকা….তোমার চুলের স্মেইলটা সাংঘাতিক আকৃষ্টকর। আমাকে মাতাল করে দিচ্ছে। ভুল কিছু হয়ে গেলে আমাকে দোষ দিয়ো না প্লিজ।”
মল্লিকা তাড়াহুড়ো করে অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শাড়ীটা ঠিক করে গাড়ির দরজা ঘেঁষে বসে পড়ল। অন্তর বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,,,,,
—–“তুমি বেশিদিন আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে পারবে না মল্লিকা। নিজেই এসে আমার কাছে ধরা দিবে। ঐ দিনটা শীঘ্রই আসবে মল্লিকা। অপেক্ষায় থাকব আমি ঐ দিনটার।”
কথাগুলো বলেই অন্তর গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। মল্লিকা গাড়ির দরজায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে ফেলল। এক পর্যায়ে মল্লিকা ঘুমিয়ে পড়ল। অন্তর তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা থেকে মল্লিকার মাথাটা তুলে মল্লিকাকে ওর সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিলো। অন্তরের বুকে মাথা রেখে মল্লিকা গুটিশুটি হয়ে আরামসে ঘুম দিলো। অন্তর মুচকি হেসে মল্লিকার কপালে চুমো খেয়ে দিলো।
এভাবেই কেটে গেলো প্রায় এক ঘন্টা। গাড়ি এসে পৌঁছে গেছে এয়ারপোর্টে। অন্তর মল্লিকার গালে আস্তে করে কয়েকটা চাপড় মেরে মল্লিকাকে ঘুম থেকে উঠালো। ঢুলুঢুলু চোখে মল্লিকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“আমরা এয়ারপোর্ট পৌঁছে গেছি মল্লিকা। আর এক্টু দেরি করলে হয়তো প্লেইনটাই মিস করব।”
মল্লিকা চট জলদি অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। অন্তর ল্যাকেজ নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মল্লিকার পাশে এসে দাঁড়ালো। আচমকা মল্লিকা অন্তরের হাতে হাত ঢুকিয়ে সামনে হাঁটা ধরল। অন্তর বেশ অবাক হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা মৃদ্যু হেসে অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—–“অবাক হওয়ার কি আছে অন্তর? আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি না?”
—-“শুধু হাত কেনো মল্লিকা। আমার জীবনের প্রতিটা জিনিসেই তোমার হাত দেওয়ার হক আছে। হাত ধরাতে আমি অবাক হই নি তবে অবাক হয়েছি তোমার মন মর্জি চেইন্জ্ঞ হওয়াতে।”
মল্লিকা গলা ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,
—-“হয়েছে হয়েছে এবার চলুন তো। না হয় আবার ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে।”
দুজনই এবার দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরল। এয়ারপোর্টের লনে আসার সাথে সাথেই এনাউন্সমেন্ট শুরু হয়ে গেলো। প্লেইন আর দশ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে। অন্তর মল্লিকার হাতটা শক্ত করে ধরে চেইকিং পর্ব শেষ করে সোজা প্লেইনে উঠে পড়ল। জানালার পাশের সিটটাতে বসেছে মল্লিকা। অন্তর বসেছে মল্লিকার পাশের সিটটাতে। মল্লিকা বেশ এক্সাইটেড। খুশিতে সে খিলখিল করে হাসছে। অন্তর বেশ কেয়ারফুললি মল্লিকার সিটবেল্ট বেঁধে দিচ্ছে। মল্লিকার লাফালাফিতে অন্তর ঠিকভাবে সিটবেল্টটা বাঁধতে পারছে না। অনেক সাধনার পর অন্তর সফল হয়েছে মল্লিকার সিটবেল্টটা বেঁধে দিতে। অন্তর এবার নিজের সিট বেল্টটা ও বেঁধে নিলো। প্লেইন আস্তে আস্তে আকাশে উড়া শুরু করল। মল্লিকা অন্তরকে ঝাপটে ধরে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মল্লিকাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। প্লেইন এবার আকাশপথে ছুটা শুরু করল। মল্লিকা অনেকক্ষন জানালার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ বুজে ঘুমিয়ে পড়ল। মল্লিকার ঘুম থেকে অন্তরের ও কেমন চোখ লেগে এলো। এক পর্যায়ে অন্তর ও ঘুমিয়ে পড়ল।
ঘুমে ঘুমে কেটে গেলো প্রায় পাঁচ ঘন্টা। প্লেইন এসে সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে থেমেছে। এক এক করে সবাই প্লেইন থেকে নেমে পড়ছে। লোকজনের হাক ডাকে অন্তরের ঘুম ভাঙ্গল। অন্তর আর দেরি না করে মল্লিকাকে ঝাঁকিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো। মল্লিকা আধ খোলা চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর ল্যাকেজটা হাতে নিয়ে মল্লিকার হাত ধরে প্লেইন থেকে নেমে সোজা এয়ারপোর্টের বাইরে চলে এলো। দুজনই এক্টা ক্যাব বুক করে আশেপাশের ভালো এক্টা লজে উঠল। লজটা দেখতে চমৎকার। সাত তলার বিরাট ভবন বিশিষ্ট লজটা রাতের বেলায় ও দিনের মতো আলোয় আলোচিত থাকে। চারদিকে অগনিত লাইট আর রোশনাই। দেখলেই চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো।
মল্লিকাদের রুমটা পড়েছে তিনতলায়। রুমটা বেশ বড় সাথে এডজাস্ট ওয়াশরুম। পুরো রুমটায় বিভিন্ন কালারের ঝাড়বাতি লাগানো। ব্যালকনি থেকে বিশাল এক নীল পানির ল্যাক দেখা যায়। পাশাপাশি মৃদ্যুমন্দ বাতাস ও আসে। মল্লিকা রুমে ঢুকেই হা করে পুরো রুমটা চোখ বুলিয়ে দেখছে। অন্তর রুমের দরজা আটকে পিছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মল্লিকার কান্ড দেখছে। মল্লিকা বেডের উপর উঠে ইচ্ছে মতো লাফালাফি করছে। এক লাফের সাথে মল্লিকা দুই, তিন ফুট উপরে উঠে যাচ্ছে। বেডের গদিটা খুবই সফট। সফটনেসের কারণে এমনটা হচ্ছে। মল্লিকা লাফাচ্ছে আর খিলখিল হেসে অন্তরকে বলছে,,,,,,
—-“অন্তর প্লিজ আপনি ও এসে আমার সাথে জয়েন করুন। খুব মজা পাবেন।”
অন্তর বুকের উপর দুই হাত গুজে মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“আমি তোমাকে এভাবে দেখেই খুব মজা পাচ্ছি। নিজে গিয়ে করতে হবে না। তোমাকে এতো হাসি খুশি দেখে বেশ ভালো লাগছে।”
মল্লিকা লাফালাফি থামিয়ে চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। অন্তর বুঝতে পেরেছে মল্লিকা ক্লান্ত হয়ে গেছে। অন্তর ব্যালকনির দরজাটা লাগিয়ে মল্লিকার পাশে এসে বসল। মল্লিকা এতক্ষনে চোখ বুজে নিয়েছে। অন্তর এক্টু ঝুঁকে মল্লিকার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“ফ্রেশ হয়ে নাও মল্লিকা। খেয়ে দেয়ে এরপর ঘুমিও। আমি খাবার অর্ডার করছি।”
মল্লিকা ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,,
—-“আমি এখন চেইন্জ্ঞ ও করতে পারব না, খেতে ও পারব না। ঘুম পেয়েছে আমার।”
অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“তাহলে কি আমি তোমাকে চেইন্জ্ঞ করিয়ে খাইয়ে দিবো?”
মল্লিকা রাগী কন্ঠে বলল,,,,
—-“আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন তাই না?”
—-“একদমই না। আমি এখনই করে দেখাচ্ছি।”
কথাটা বলেই অন্তর হেচকা টান দিয়ে মল্লিকাকে শোয়া থেকে বসিয়ে এক টানে মল্লিকার শাড়িটা খুলে ফেলল। মল্লিকা বেকুব হয়ে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর ল্যাকেজ থেকে আরেকটা শাড়ী বের করে মল্লিকাকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে দিলো। অন্তর এবার চোখটা বন্ধ করে খু্ব পারদর্শিতার সাথে মল্লিকাকে শাড়ীটা পড়িয়ে দিলো। মল্লিকা মুখে হাত দিয়ে অন্তরের কান্ড দেখছে। শাড়ীটা ঠিকভাবে পড়ানোর পর অন্তর মল্লিকাকে আধ কোলে করে সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। মল্লিকা অবাক হয়ে অন্তরকে দেখছে। ট্যাব ছেড়ে অন্তর মল্লিকার চোখে, মুখে পানি ছিটিয়ে মল্লিকাকে নিয়ে আবার রুমে ঢুকে পড়ল।
রুমে ঢুকার সাথে সাথেই অন্তর আচমকাই ব্যালকনির দরজার সাথ ধাক্কা খেলো। দরজাটা একদম খোলা। অন্তর কপাল কুঁচকে দরজাটার দিকে তাকিয়ে আছে। হিসেব মিলাতে পারছে না সে। অন্তর চোখে, মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,
—–“দরজাটা খুলল কিভাবে? আমি তো দরজাটা এক্টু আগেই বন্ধ করে গেলাম। বাইরে তো অতোটা ও বাতাস নেই। যতোটা বাতাসে দরজাটা আপনা আপনি খুলে যাবে।”
অন্তর মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে মল্লিকাকে বেডে বসিয়ে ব্যালকনীতে গিয়ে দাঁড়ালো। অন্তরের রুমের পাশাপাশি আরেকটা ব্যালকনী। ঐ ব্যালকনীতে নজর পড়ার সাথে সাথেই কিছু এক্টা ব্যালকনী থেকে সরে গেলো। মনে হচ্ছে কোনো মানুষের ছায়া। অন্তর বেশ আগ্রহ নিয়ে ওর ব্যালকনীর শেষ কর্ণারে গিয়ে ছাঁয়াটাকে খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু ছায়াটা আর দৃশমান হচ্ছে না। অন্তর অনেকক্ষন যাবত উঁকি চুকি মেরে ছায়াটাকে খুঁজছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—-“আই থিংক ছায়াটা কোনো পুরুষের ছায়া হবে। আমাদের ব্যালকনীতে পুরুষের ছায়া কিভাবে পড়তে পারে? তাছাড়া দরজাটা আপনাআপনি খুলে নি, মনে হচ্ছে কেউ ব্যালকনীতে এসে দরজাটা খুলেছে। কে হতে পারে সে? তাহলে কি কেউ আমাদের ফলো করছে?”
মল্লিকা বসে থাকতে থাকতে কিছুটা অধৈর্য্য হয়ে বেড থেকে নেমে তেড়ে গেলো ব্যালকনীর দিকে। পিছন থেকে অন্তরের পিঠে এক্টা চিমটি মেরে মল্লিকা দাঁত গিজগিজ করে বলল,,,,,
—–“এই….আপনি এতো ইররেস্পন্সিবল কেনো? আমাকে একা রুমে বসিয়ে রেখে আপনি ব্যালকনীতে দাঁড়িয়ে চন্দ্র বিলাস করছেন তাই না?”
অন্তর মাথাটা ঝাঁকিয়ে নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে মল্লিকার হাত ধরে রুমে ঢুকে আবারো ভালো করে ব্যালকনীর দরজাটা লাগিয়ে মল্লিকাকে নিয়ে বেডে বসে পড়ল। অন্তর খুব টেনশানে পড়ে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সে কিছু এক্টা ভাবছে। অন্তরের এমন ভাবুক লুক দেখে মল্লিকা বেশ হকচকিয়ে গেলো। মল্লিকা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে অন্তরের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,
—-“কি হয়েছে অন্তর? আপনাকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে!”
অন্তর মাথা থেকে হাত সরিয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“মল্লিকা এই দুটো দিন আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। প্লিজ আমাকে না বলে তুমি কোথাও যেও না। এমনকি ওয়াশরুমে ও না।”
—-“কেনো অন্তর? আপনি কি কোনো কিছু নিয়ে ভয় পাচ্ছেন?”
—-“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে মল্লিকা। এটা জাস্ট আমার ধারণা। বাকীটা আস্তে আস্তে বুঝতে পারব। তাই আমাদের যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।”
অন্তরের কথা শুনে মল্লিকা বেশ ভয় পেয়ে গেছে। অন্তর মল্লিকার ভয় কাটানোর জন্য মল্লিকাকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,
—–“ভয় পাওয়ার কিছু নেই মল্লিকা। আমি তো আছি। আমি থাকতে তোমার কোনো ভয় নেই।”
মল্লিকা অন্তরের শার্ট আকঁড়ে ধরে বলল,,,,
—-“আমি ঘুমাবো অন্তর। ঘুমালে আর ভয় করবে না।”
অন্তর মল্লিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,
—-“আগে খেয়ে নাও মল্লিকা। এরপর ঘুমাবে। ওয়েট আমি নিচ থেকে ফুড অর্ডার করে আনছি।”
—-“না না অন্তর প্লিজ আপনি কোথাও যাবেন না। আপনি এখান থেকেই খাবার অর্ডার করুন।”
—-“ওকে বাবা করছি। আগে তো আমাকে ছাড়ো।”
মল্লিকা অন্তরকে ছেড়ে গুটিশুটি মেরে খাটে বসে পড়ল। অন্তর তাড়াহুড়ো করে ল্যান্ডলাইনে কল করে খাবার অর্ডার করে দিলো। প্রায় দশ মিনিট পর একজন ওয়েটার হাতে করে অন্তরের অর্ডার অনুযায়ী খাবার নিয়ে এলো। ওয়েটার যেই না রুমের দরজা ধাক্কা দিতে যাবে অমনি পিছন থেকে কেউ এসে ওয়েটারের মুখে রুমাল চেঁপে ধরল। সাথে সাথে ওয়েটার টা সেন্সলেস হয়ে গেলো। খাবারের ট্রে টা হাতে নিয়ে হুডি ওয়ালা লোকটা অন্তরের রুমের দরজা ধাক্কালো। অন্তর মল্লিকার পাশ থেকে রুমের দরজাটা খুলে দিলো। অন্তর দরজা খুলেই হুডি ওয়ালা লোকটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,,,
—-“ডুড আপনার ফেইসটা দেখান। সচরাচর ওয়েটার রা তো এভাবে হুডি পরে চলাচল করে না। আপনার হঠাৎ এই লুক? বিষয়টা কেমন সন্দেহজনক না?”
হুডির নিচ থেকে মেয়েলী কন্ঠ ভেসে আসল। কাঁপা কাঁপা গলায় মেয়েটি হুডির নিচ থেকে অন্তরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,
—-“স্যার মাফ করবেন। আমি এই লজটাতে নতুন কর্মচারী। কোনো এক্টা দুর্ঘটনায় আমার ফেইসটা এসিডে পুড়ে যায়। কেউ শত্রুতা করে আমার ফেইসটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। নিজের ট্রিটমেন্টের খরচ চালানোর জন্য আমাকে বাধ্য হয়ে এই কাজটা বেছে নিতে হয়েছে। আমি আপনাকে এই জ্বলন্ত ফেইসটা দেখাতে পারব না। মাফ করবেন আমায়।”
অন্তর অসহায় দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর বেশ ব্যথিত হয়ে মেয়েটার হাত থেকে ট্রে টা হাতে নিয়ে রুমের দরজা আটকে রুমে ঢুকে পড়ল। মুহূর্তেই মেয়েটি হুডির ক্যাপটা মুখ থেকে সরিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,
—-“অন্তর তুমি মোটে ও ঠিক করলে না আমার শহরে এসে আবার আমার মুখোমুখি হয়ে। তোমার সাথে প্রথম দেখাটা আমার এভাবে অন্য সুরুত ধরে করতে হবে আমি জাস্ট ভাবতে পারি নি। কাল থেকে খেলা জমবে। এবার তুমি আমারই হবে।”
কথাগুলো বলেই মেয়েটা দ্রুত পায়ে প্রস্থান নিলো।
#চলবে,,,,,,,,
#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১২
#নিশাত_জাহান_নিশি
কথাগুলো বলেই মেয়েটা দ্রুত পায়ে প্রস্থান নিলো।
অন্তর কিছুটা আপসেট হয়ে মল্লিকার পাশে এসে খাবার প্লেইট নিয়ে বসল। মল্লিকা থম মেরে বসে আছে। অন্তর খাবারের লোকমা ধরে মল্লিকাকে খাইয়ে দিচ্ছে। পর পর কয়েকটা লোকমা খাওয়ার পর মল্লিকা কায়দা করে অন্তরের মুখে ও খাবারের লোকমা পুড়ে দিলো। অন্তর এক ভ্রু উঁচু করে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা খাবার চিবুচ্ছে আর বলছে,,,,,
—-“আরে খান তো। এভাবে তাকাবেন না। আমি ও খাই আপনি ও খান কেমন?”
অন্তর মুচকি হেসে খাবারটা চিবুতে লাগল। এভাবেই দুজন সম্পূর্ণটা খাবার শেষ করল। অন্তরের মনে শান্তি নেই। সে বেশ টেনশানে আছে ঐ অদৃশ্য ছায়াটা নিয়ে। মল্লিকার মুখ মুছিয়ে অন্তর খাবারের প্লেইটটা ডেস্কের উপর রেখে পুরো রুমটা ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলো। সবকিছু চেইক করে অন্তর বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলো। মল্লিকা আর অন্তর মুখোমুখি শুয়ে আছে। দুজনই দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকার কেমন শীত শীত লাগছে। তাই সে গায়ে কম্বল জড়িয়ে নিলো। খানিকটা অন্তরের গায়ে ও মেলে দিয়েছে। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা অন্তরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“অন্তর এক্টা সত্যি কথা বলব?”
—-“হুম বলো।”
—-“আপনি না দেখতে অন্নেক কিউট। আচ্ছা আপনার ঠোঁট গুলো এতো লাল কেনো? আপনি কি লিপস্টিক ইউজ করেন?”
অন্তর হু হা করে হেসেই যাচ্ছে ওর হাসি যেনো থামছেই না। মল্লিকা কিছুটা আহ্লাদি কন্ঠে অন্তরকে বলল,,,,,
—-“অন্তর প্লিজ বলুন না, আপনি কোন ব্যান্ড্রের লিপস্টিক ইউজ করেন? আমি ও ঐ লিপস্টিকটা ইউজ করব।”
অন্তর এবার হাসি থামিয়ে মল্লিকাকে হেচকা টান দিয়ে ওর গাঁয়ের সাথে মিশিয়ে নিলো। মল্লিকা চোখ বড় বড় করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,
—-“তোমাকে লিপস্টিক ইউজ করতে হবে না মল্লিকা। এক্ষনি তোমার ঠোঁট গুলো আমি আমার ঠোঁটের মতো লাল করে দিচ্ছি।”
কথাগুলো বলেই অন্তর মল্লিকার ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা বেকুব হয়ে অন্তরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর ব্যস্ত মল্লিকার ঠোঁটের রং পাল্টাতে। পরম আবেশে মল্লিকা এক পর্যায়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে অন্তরের পিছনের চুলগুলো আঁকড়ে ধরল। মল্লিকার সায় পেয়ে অন্তর আরো উওেজিত হয়ে উঠল। প্রায় দশ মিনিট পর হুট করেই ব্যালকনীর দরজায় কিছু এক্টা পড়ার আওয়াজ হলো। আওয়াজ টা খুবই জোরে সোরে হলো। মনে হচ্ছে পুরো দরজাটা কেঁপে উঠেছে। অন্তর তাড়াতাড়ি মল্লিকার ঠোঁট ছেড়ে দৌঁড়ে ব্যালকনীর দরজার দিকে গেলো। দরজার সামনেই বড় এক্টা পাথর পড়ে আছে। অন্তর নিচু হয়ে পাথরটা হাতে নিয়ে দেখল পাথরটাতে মেয়েদের লিপস্টিক লেগে আছে। লাল লিপস্টিক দিয়ে পুরো পাথরটা রঙ্গিন হয়ে আছে। অন্তর তাড়াতাড়ি পাথরটা হাত থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দিলো। ওর পুরো হাতটা লিপস্টিক দিয়ে লাল হয়ে গেছে।
মল্লিকা ভয়ে গুটিসুটি মেরে কম্বল আঁকড়ে শুয়ে আছে। অনেকক্ষন হওয়ার পর ও অন্তর আসছে না দেখে মল্লিকা খানিক চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,
—-“অন্তর আপনি ঐখানে কি করছেন? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন। আমার ভয় লাগছে।”
মল্লিকার চেঁচানোর আওয়াজ পেয়ে অন্তর আবারো ব্যালকনীর দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে হাতটা ভালো করে ওয়াশ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ল। মল্লিকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,
—-“কি হয়েছে অন্তর? ওটা কিসের আওয়াজ ছিলো?”
অন্তর ব্যাপারটাকে হাসি দিয়ে উড়িয়ে বলল,,,,,
—-“আরে না কিছু না মল্লিকা। বাইরে খুব বাতাস তো তাই ব্যালকনীর দরজাটা এক্টু নড়ে চড়ে উঠেছে। এতোটাই গভীর ভাবে নড়ছে যে, মনে হচ্ছে কেউ ঢিল ছুড়ছে।”
মল্লিকা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,,,,,
—-“সত্যি বলছেন তো?”
—–“জ্বি ডিয়ার সত্যি বলছি।”
কথাটা বলেই অন্তর আবারো মল্লিকার ঠোঁট আঁকড়ে ধরল। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের শার্ট আঁকড়ে ধরল। দুজনই আবার প্রেম নেশায় মগ্ন হয়ে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর অন্তর কিছুটা উওেজিত হয়ে মল্লিকার শাড়িটা খুলতে নিলেই আবারো ব্যালকনীর দরজায় ঢিল ছোড়ার আওয়াজ হলো। অন্তর ব্যাপারটাকে আমলে না নিয়ে এক টানে মল্লিকার শাড়িটা খুলে ফেলল। মল্লিকা ঢিল ছুড়ার আওয়াজে ভয় পেয়ে আছে। সে পুরোপুরি তব্দা লেগে আছে। অন্তর ওর শার্ট টা খুলে যেই না মল্লিকার গলায় মুখ ডুবাতে যাবে অমনি রুমের প্রতিটা লাইট আপনা আপনি জ্বলতে, নিভতে শুরু করল। মুহূর্তেই পরিবেশটা পুরো ভুতূড়ে হয়ে গেলো। অন্তরের কাছে ব্যাপারটা এতক্ষনে খোলসা হলো কেনো বার বার এমন ঘটনা ঘটছে। অন্তর গায়ে শার্টটা জড়িয়ে বেডের উপর থেকে নামছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“কেউ নিশ্চয়ই আছে, যে আমাকে আর মল্লিকাকে এক হতে দিচ্ছে না। লোকটা হয়তো আমার সাথে রিলেটিড, নয়তো মল্লিকার সাথে। এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমাকে এক্ষনি নিচে গিয়ে কারেন্টের লাইনটা চেইক করতে হবে। আশা করছি হাতে নাতে ধরতে পারব।”
কথাগুলো বলতে বলতে অন্তর শার্টের বাটন গুলো লাগিয়ে নিচে পড়ে থাকা শাড়ীটা মল্লিকার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—-“শাড়ীটা পড়ে নাও মল্লিকা, আমি এক্টু নিচ থেকে আসছি।”
মল্লিকা শাড়ীটা আঁকড়ে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,
—-“আমাকে একা রুমে রেখে যাবেন না অন্তর। আমার বেশ ভয় করছে।”
—-“চলো তাহলে শাড়ীটা তাড়াতাড়ি পড়ে নাও।”
রুমের লাইট গুলো এখনো জ্বলছে আর নিভছে। অন্তর আর মল্লিকার ভয়টা ও ক্রমশ বাড়ছে। শাড়ীটা কোনো রকমে গায়ে পেঁচিয়ে মল্লিকা বেড ছেড়ে উঠে নিচে নেমে দাঁড়ালো। অন্তর মল্লিকার হাত ধরে রুমে থেকে বের হয়ে সোজা নিচে নেমে গেলো। ইলেকট্রিসিটি কাউন্টারের দিকে মোড় নেওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন দৌঁড়ে কাউন্টার থেকে বের হয়ে গেলো। অন্তর লোকটার ছায়া দেখেছে তবে লোকটাকে স্পষ্ট দেখে নি। অন্তর ছায়াটাকে ফলো করে দৌঁড়াচ্ছে আর চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,
—-“হেই হু আর ইউ? কেনো আমাদের পিছনে লেগেছেন? আমাদের এভাবে ডিস্টার্ব করার মানে কি? প্লিজ দাঁড়ান বলছি। আমি আপনার সাথে ফেইস টু ফেইস কথা বলতে চাই।”
হুট করেই ছায়াটা যেনো কোথায় মিলিয়ে গেলো। অন্তর এদিক সেদিক তাকিয়ে ছায়াটাকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও ছায়াটার লেশ মাএ দেখা যাচ্ছে না। আচমকাই অন্তরের কানে মল্লিকার চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসল। অন্তর আর দেরি না করে ইলেকট্রিসিটি কম্পাউন্ডে দৌঁড় লাগালো। মল্লিকার হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। এই রক্ত থামবার নয়। থামবে কি করে? মল্লিকার হাতে কেউ ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে। কমচে কম তিন, চারটে সেলাই তো লাগবেই। মল্লিকা ব্যাথায়, যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। অন্তর দৌঁড়ে এসে মল্লিকাকে ঐ অবস্থায় দেখে মুহূর্তেই মুর্তি রূপ ধারণ করল। সে চেষ্টা করে ও নিজেকে নাড়াতে পারছে না। অন্তরের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। মল্লিকাকে এই অবস্থায় সে দেখতে পারছে না। বুকের ভিতরটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। মল্লিকা পিটপিট করে চোখ খুলে বার বার ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে। অন্তর নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে মল্লিকাকে কোলে তুলে লজের হেলথ কমপ্লেক্সে চলে গেলো। মল্লিকার চেয়ে ও অন্তর কাঁদছে বেশি। মল্লিকার হাতের রক্ত দিয়ে অন্তরের হোয়াইট শার্টটা লাল হয়ে গেছে। দুজনই রক্তে মাখামাখি হয়ে গেছে। অন্তর কান্নাজড়িত কন্ঠে মল্লিকার কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,
—–“তোমার কিছু হবে না মল্লিকা। তুমি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। তোমার এই অবস্থা যে করেছে তাকে আমি ছাড়ব না। আজ রাতটা কোনো রকমে পাড় করতে দাও। কাল থেকেই খেলা শুরু হবে।”
কথাগুলো বলেই অন্তর মল্লিকাকে নিয়ে হেলথ কমপ্লেক্সের ভিতর ঢুকে গেলো। একজন ডক্টর মল্লিকাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে কেবিনে ঢুকিয়ে নিলো। কেবিনে ডক্টরের পাশাপাশি অন্তর ও আছে। মল্লিকাকে সেন্সলেস করে কাটা জায়গাটা সেলাই করা হচ্ছে। মোট পাঁচটা সেলাই লেগেছে কাটা জায়গাটায়। ডক্টর কয়েকটা ঔষধ উনার কম্পাউন্ড থেকে অন্তরের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। অন্তর ঔষধ সহ মল্লিকাকে কোলে নিয়ে ওর রুমের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর অন্তর রুমে ঢুকে মল্লিকাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে মেডিসিন প্যাকেটটা ডেস্কের উপরে রেখে মল্লিকার পাশে ধপ করে বসে পড়ল। মল্লিকার ফর্সা মুখটা কালচে রূপ ধারণ করেছে। চোখের পানি গুলো শুকিয়ে জায়গা গুলো সাদা সাদা হয়ে আছে। অন্তর চোখে জল নিয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে অন্তর নিজেকে দোষী মনে করছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না সে।
হুট করেই অন্তর কিছু এক্টা মনে করে বসা থেকে উঠে রুমের প্রত্যেকটা লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দেয়ালের প্রতিটা আনাচে কানাচে গভীর মনযোগ দিয়ে কিছু এক্টা খুঁজছে। অন্তর কিছুটা ভাবুক হয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—–“আ’ম ডেম সিউর। কেউ আমার রুমে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। কেউ দূরে থেকেই আমাদের ফলো করছে। আমাদের প্রতিটা স্টেপ সে দেখছে। যে করেই হোক সিসি ক্যামেরাটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।”
রুমের দরজার কাছাকাছি যেয়ে অন্তরের নজর পড়ল সিসি ক্যামেরাটার দিকে। ছোট্ট ক্যামেরাটা রুমের দরজায় ফিট করা আছে। কেউ রুমে ঢুকে এই কান্ড করে গেছে। অন্তর ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,
—–“তাহলে কি ঐ ছায়াটাই আমাদের এ্যাবসেন্সে রুমে ঢুকে ক্যামেরাটা ফিট করে দিয়ে গেছে? আমি যখন মল্লিকাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ছিলাম তখন ঐ ছায়াটা ব্যালকনী বেয়ে এসে আমার রুমের দরজায় ক্যামেরাটা ফিট করে দিয়ে গেছে? হবে হয়তো।”
অন্তর কিছুক্ষন ভেবে আবার বলল,,,,,
—-“এটা তো সম্ভব না। আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মল্লিকাকে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। পাঁচ মিনিটেই কারো পক্ষে সম্ভব না ব্যালকনী বেয়ে রুমে ঢুকে দরজার কাছে এসে সিসি ক্যামেরা ফিট করে আবার রুম থেকে বের হয়ে ব্যালকনী বেয়ে নিজের গন্তব্যে ফিরে যাওয়া। তাহলে কি ঐ ছায়াটা ছাড়া ও অন্য কেউ আছে এর পিছনে?”
অন্তর মাথায় হাত দিয়ে আবার বিড়বিড় করে বলল,,,,,,
—-“না ঐ ছায়াটা এই কাজ করে নি। করেছে অন্য কেউ। আমি, মল্লিকা আর ছায়াটা ছাড়া নিশ্চয়ই কোনো চতুর্থ ব্যক্তি আমাদের রুমে ঢুকেছে। দরজা থেকেই সে চলে গেছে। তাছাড়া আমি যখন এক্টু আগে এ ছায়াটার পিছনে দৌঁড়াচ্ছিলাম, তখন হুট করেই অন্য কেউ এসে পিছন থেকে মল্লিকার উপর এ্যাটাক করেছে। ছায়াটার পক্ষে অবশ্যই সম্ভব না দুই দিক ব্যালেন্স করা। এক সাথে দুই জায়গায় থাকা সম্ভব না। আই থিংক চতুর্থ কোনো ব্যক্তি ও আছে আমাদের পিছনে।”
অন্তর কিছু এক্টা মনে করে মাথা থেকে হাত সরিয়ে বেশ পেরেশান হয়ে আবার বলল,,,,,
—-“এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড, আমি, মল্লিকা আর ছায়াটা ছাড়া ও চতুর্থ কোনো ব্যক্তি রুমে এসেছিলো। হুডি পড়া মেয়েটা। মেয়েটা দরজা থেকেই চলে গিয়েছিলো। হয়তো মেয়েটাই সুযোগ বুঝে দরজায় ক্যামেরাটা ফিট করে গেছে। ইয়েস আমি ধরতে পেরেছি। মেয়েটাই আছে সবকিছুর পিছনে। এখনি আমাকে লজ ম্যানাজারের সাথে মেয়েটা সম্পর্কে কথা বলত হবে।”
কথা গুলো বলেই অন্তর যেই না রুম থেকে বের হতে যাবে এর আগেই মল্লিকা বিড়বিড় করে অন্তরকে ডাকা শুরু করল। ব্যাথায় নাক, মুখ খিঁচে রেখেছে মল্লিকা। অন্তর তাড়াতাড়ি মল্লিকার কাছে ছুটে গেলো। মল্লিকা পিটপিট চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে মিনমিনিয়ে বলল,,,,,
—-“অন্তর আমরা আর কেউ ই রুম থেকে বের হবো না। রুম থেকে বের হলেই ঐ কালো হুডি পড়া লোকটা আমাদের মেরে দিবে। লোকটা খুব খারাপ অন্তর। বলা নেই, কওয়া নেই হুট করে পিছন থেকে এসে লোকটা আমার হাতে ছুরি বসিয়ে দিলো। আমি ঠিক ঠাওর করতে পারি নি অন্তর। তবে আমার মনে হচ্ছে ঐটা কোনো মেয়ের হাত ছিলো। হাতটা কেমন সফট ছিলো। ব্রেস লাইট জাতীয় কিছুর আঁচ পেয়েছি আমি।”
এতক্ষনে অন্তরের কাছে সবটা ক্লিয়ার হলো। অন্তর আবারো ভাবনায় পড়ে গেলো। অন্তর আপন মনে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“তাহলে আমার ধারনাটাই ঠিক ছিলো। চতুর্থ ব্যক্তি ঐ মেয়েটি। যে মেয়েটি ওয়েটারের ভেষে এসেছিলো। মেয়েটা আমাদের ক্ষতি করতে চায়। বিশেষ করে মল্লিকার। তবে মোটিভটা ঠিক বুঝতে পারছি না। নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে। যা আমার অজানা।”
অন্তরের মৌণতা দেখে মল্লিকা অন্তরকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,
—-“কি ভাবছেন অন্তর? বিশ্বাস করুন আমি যা যা বলছি সব ঠিকঠাক বলছি। ঐ লোকটা এক্টা মেয়ে ছিলো।”
অন্তর মল্লিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,
—-“শান্ত হও মল্লিকা। ঔষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো। কাল সকালে আমরা এই বিষয়ে কথা বলব।”
অন্তর ডেস্কের উপর থেকে মেডিসিন প্যাকেটটা নিয়ে এক এক করে মেডিসিন ছাড়িয়ে মল্লিকাকে খাইয়ে দিলো। মল্লিকা এবার চোখ বুজে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল। অন্তর ও আর দেরি না করে মল্লিকাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরের দিন,,,,,
#চলবে,,,,,,,,,