মন চায় তোকে পর্ব-১০

0
1988

#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_১০
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“হুম অন্তর আমি ছেলেটাকে খুব ভালো করে চিনি। ছেলেটা আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিলো।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই অন্তরের চোখে এক রাশ জল এসে হানা দিলো। অন্তর নির্বিকার দৃষ্টিতে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবেই প্রায় পাঁচ মিনিট কেটে গেলো। অন্তরের মৌনতা দেখে মল্লিকা মাথা তুলে অন্তরের দিকে তাকালো। অন্তরের চোখে অজস্র জলের ছুটাছুটি দেখে মল্লিকা কান্নাজড়িত কন্ঠে অন্তরের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—–“আমি ভুল করেছি অন্তর। ঐ ফেইক ছেলেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো। আমি কথা দিচ্ছি অন্তর, নেক্সট টাইম আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে ভাবব না, অন্য কারো দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাবো না। এই বারের মতো আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।”

অন্তর নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল গুলো মুছে মল্লিকার পাশে এসে বসল। মল্লিকা ছলছল চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে অন্তর মল্লিকাকে ঝাপটে ধরে বিড়বিড় করে বলল,,,,,

—-“ছেলেটা তোমার সাথে খারাপ কিছু করে নি তো মল্লিকা?”

—-“না অন্তর। তবে করত যদি না আমি নীলকে হাতে নাতে না ধরতাম। জোর বাঁচা বেঁচে গেছি আমি। আল্লাহ্ র কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া।”

অন্তর কিছুটা শান্ত হয়ে বলল,,,,,

—-“সবার জীবনেই এক্টা ফার্স্ট থাকে মল্লিকা। তদ্রুপ তোমার জীবনে ও ছিলো। এ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। তুমি ছেলেটার থেকে নিরাপদে ছিলে এটাই অনেক। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম ছেলেটা না আবার তোমার সাথে কিছু উল্টো পাল্টা করে বসেছে। এসব ক্যারেক্টারলেস ছেলেদের সাথে কোনো বিশ্বাস নেই। কখন কি করে বসে। আমাকে জাস্ট কয়েকটা দিন সময় দাও মল্লিকা। আমি ঐ ছেলের বারোটা বাজাব। অনন্যার ও বিয়ের ব্যবস্থা করব। তাহলেই অনন্যা ঐ নোংরা ছেলেটাকে ভুলতে পারবে। নতুন করে নিজের লাইফটাকে গুছিয়ে নিতে পারবে।”

মল্লিকা হেসে বলল,,,,,

—-“ঠিক বলেছেন অন্তর। আমি ও তাই ভাবছি। অনন্যার জন্য এক্টা ভালো ছেলে খুঁজে বের করতে হবে। আগে নীলের এক্টা ব্যবস্থা করতে হবে।”

—-“আমার মাথায় এক্টা প্ল্যানিং ঘুড়ছে মল্লিকা। আমি ডেম সিউর এই প্ল্যানিংটা দিয়েই আমরা নীলকে জব্দ করতে পারব। অনন্যার সামনে ও ছেলেটার মুখোশ খুলবে প্লাস ছেলেটার বিরুদ্ধে মামলা ও টুকে দেওয়া যাবে।”

—-“কি প্ল্যানিং অন্তর? প্লিজ আমাকে ও বলুন।”

—-“তোমাকে না বললে তো হবে না মল্লিকা। কজ তুমিই হলে সেই প্ল্যানের মেইট আর্টিস্ট।”

—-“মানে?”

অন্তর কিছুটা ভেবে বলল,,,,,

—-“আচ্ছা মল্লিকা… তুমি ভয়েজ চেইন্জ্ঞ করতে পারো? ধরো তোমার নিজের ভয়েস পাল্টিয়ে অন্য রকম ভাবে কথা বলতে পারো?

—-“হুম পারি অন্তর। খুব ভালো পারি। কেনো বলুন তো?”

—-“নীলের সাথে তুমি ফেইক নাম্বার দিয়ে কথা বলে নীলের সাথে ঘনিষ্ট হবে। আই থিংক নীল ও তখন তোমার সাথে ফ্ল্যাটিং শুরু করবে। তোমার কথা অনুযায়ী নীল খুবই ক্যারেক্টারলেস ছেলে। তোমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার পর ঐ বেটা আশা করছি তোমার সাথে দেখা করার বা খারাপ কিছু করার স্কোপটা ছাড়বে না। তখনই আমি নীলকে হাতে নাতে ধরব। সাথে পুলিশ আর অনন্যা ও থাকবে।”

—-“ওয়াও খুব ভালো আইডিয়া অন্তর। খুব ভালো প্ল্যানিং করেছেন আপনি। আমি পারব নীলের সাথে অভিনয় করতে।”

—-“ওকে ডান তাহলে কাল থেকেই আমাদের মিশন শুরু। নীলের মুখোশ না খোলা অব্দি অনন্যাকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া যাবে না। বাড়িতে আটকে রাখতে হবে। সুযোগ বুঝে ছেলেটা কখন অনন্যার ক্ষতি করে বসে বলা যায় না।”

—-“হুম এজন্যই আমি অনন্যাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি।”

অন্তর মল্লিকাকে টাইট করে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—-“মল্লিকা আমি চাইলেই হয়তো পারি অনন্যার সাথে ছেলেটার সাথে বিষয়ে ওপেনলি ডিসকাস করতে। কিন্তু আমি এই মুহূর্তে তা চাইছি না। কজ এতে অনন্যা তোমাকে ভুল বুঝবে। ভাববে যে তুমি ইচ্ছে করে অনন্যার সম্পর্কটা ভাঙ্গার জন্য আমাকে সত্যিটা বলে দিয়েছ। এতে তোমাদের মধ্যে অনেকটা ভুল বুঝাবুঝি তৈরী হতে পারে। আমি চাই না আমার এক্টা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য তোমাদের ভাবী, ননদের সম্পর্কটা নষ্ট হোক। আর হ্যাঁ…. থ্যাংকস মল্লিকা। আমাকে সবকিছু খোলসা করে বলার জন্য। তুমি চাইলেই হয়তো পারতে ব্যাপারটা হিডেন করে গাঁ বাচিয়ে নিতে। তবে না, তা তুমি করো নি। উল্টে আমাদের হেল্প করলে। অনন্যা জীবনটাকে বাঁচালে।”

—-“আমি জানতাম অন্তর, আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। আপনাকে আমার ভালো করে চেনা হয়ে গেছে। তাই নির্ভয়ে সবটা বলে দিয়েছি।”

এর মাঝেই দরজায় টোকা পড়ল। মল্লিকা অন্তরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে দরজা খুলে দিলো। মল্লর মুসকানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুসকান মল্লরের চুল নিয়ে খেলছে। মল্লিকা দাঁত বের করে হেসে যেই না মুসকানকে কোলে নিতে যাবে এর আগেই মল্লর মল্লিকাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,

—-“এখন আর কোলে নিতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে অন্তরকে নিয়ে নিচে চলে আয়। নিচে সবাই তোদের ডাকছে।”

মল্লিকা মুখটা ফুলিয়ে বলল,,,,,

—-“আসছি।”

মল্লর মল্লিকার মাথায় গাড্ডা মেরে মুসকানকে নিয়ে দরজা ছেড়ে সোজা নিচে চলে গেলো। মল্লিকা রুমের দরজা আটকে বেডের দিকে তাকিয়ে দেখল অন্তর বেডের উপর নেই। তবে ওয়াশরুম থেকে পানি ছাড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। মল্লিকা বেশ বুঝতে পেরেছে অন্তর ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছে। তাই সে কাবার্ড থেকে এক্টা জাম কালার শাড়ী বের করে রুমের মধ্যেই চেইন্জ্ঞ করা শুরু করল।

মল্লিকা এক এক করে সব অরনামেন্টস গাঁ থেকে খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখছে। দোপাট্টা খুলে সে কাবার্ডে গুছিয়ে রাখল। খোঁপা খুলে চুলের জট ছাড়িয়ে সে চুলটা ছেড়ে দিলো। এবার শুধু লেহেঙ্গাটা চেইন্জ্ঞ করার পালা। মল্লিকা আনমনা হয়ে লেহেঙ্গার উপরের পার্টটা খুলে শাড়ির ব্লাউজটা পড়ে নিলো। এবার নিচের পার্টটা খুলে শাড়িটা গাঁয়ে জড়ানোর পালা। এর মাঝেই হুট করে অন্তর ওয়াশরুমের দরজা খোলে রুমের ভিতর ঢুকে পড়ল। মল্লিকা চোখ দুটো বড় বড় করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর গলায় টাওয়াল ঝুলিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা তাড়াতাড়ি পিছু ঘুরে শাড়িটা কোনো রকমে গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো। অন্তর পিছন থেকে কিছুটা চিল্লিয়ে বলল,,,,,

—-“নিজেকে এতো ঢেকে লাভ নেই। যা দেখার আমি দেখে নিয়েছি। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত। আঃহা এতেই আমার শান্তি।”

মল্লিকা অন্তরের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“কি কি কি দেখেছেন আপনি? সব তো আমি ঢেকে রেখেছি!”

—-“সবকিছু যেহেতু ঢেকেই রেখেছ তাহলে পিছু ঘুড়লে কেনো? ভালোই তো লাগছিলো ঐভাবে দেখতে।”

—-“আপনি এক্টা নির্লজ্জ বুঝেছেন? আপনার মুখে কিছুই আটকায় না।”

—-“হাজবেন্ড হই তোমার। আটকাবে কেনো?”

মল্লিকা মুখটা বাঁকা করে শাড়িটা হাতে গুটিয়ে নিয়ে অন্তরকে ক্রস করে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। মল্লিকার কান্ড দেখে অন্তর বেশ মজা পাচ্ছে আর হু হা করে হাসছে। হাসিটা কিছুক্ষনের জন্য থামিয়ে অন্তর ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলটা সেট করে টাওয়ালটা বারান্দায় নেড়ে দিয়ে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো। অন্তরকে দেখে ড্রইং রুমের উপস্থিত সবাই বেশ খুশি হলো। এবার শুধু মল্লিকার আসার অপেক্ষা। অন্তর চোখ বুলিয়ে অনন্যাকে খুঁজছে। অনন্যা ড্রইং রুমে কোথাও নেই। অন্তর বেশ বুঝতে পেরেছে অনন্যা মন খারাপ করে রুমেই বসে আছে।

প্রায় পনেরো মিনিট পর মল্লিকা শাড়ীটা সম্পূর্ণভাবে পড়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মল্লিকা চুলটা হাত খোঁপা করে ঠোঁটে সামান্য ভ্যাসলিন লাগিয়ে রুম থেকে বের হয়ে সোজা নিচে চলে গেলো। মল্লিকাকে জাম কালার শাড়ীতে বেশ মানিয়েছে। অন্তর হা হয়ে মল্লিকাকে দেখছে। মল্লিকা অন্তরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধপাস করে অন্তরের পাশে বসে পড়ল। অন্তর আর মল্লিকাকে দেখে সারফারাজ চৌধুরী গলা ঝাঁকিয়ে বেশ মিষ্টি স্বরে ওদের দুইজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“তোমাদের দুজনের জন্য এক্টা বিগ সারপ্রাইজ ওয়েট করছে।”

অন্তর আর মল্লিকা সারফারাজ চৌধুরীর দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। উপস্থিত সবাই চুপ হয়ে আছে। মল্লিকা কিছুটা উতলা হয়ে সারফারাজ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বেশ আহ্লাদী কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“প্লিজ আব্বু বলো না কি সারপ্রাইজ। আর ওয়েট করতে পারছি না।”

সারফারাজ চৌধুরী এক গাল হেসে মল্লিকার হাতে দুটো টিকেট গুজে দিলো। মল্লিকা টিকেট দুটো চেইক করে দেখল সিঙ্গাপুর যাওয়ার টিকেট। মল্লিকা মনে মনে ব্যাপক খুশি হয়েছে তবে প্রকাশ করছে না। অন্তর বেশ খুশি হয়ে মল্লিকার হাত থেকে টিকেট দুটো নিয়ে সারফারাজ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,,,

—-“থ্যাংকস আব্বু। বেস্ট এক্টা সারপ্রাইজ দিলে আমাদের।”

সারফারাজ চৌধুরী অন্তরকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—-“আজ রাত বারোটায় তোমাদের ফ্লাইট। তো এখন থেকেই প্যাকিং এ লেগে যাও।”

মাঝখান থেকে হুট করে মল্লিকা বলে উঠল,,,,,,

—-“বউভাতের দিনই হানিমুন যেতে হবে? কাল, পড়শু গেলে হয় না?”

মিসেস অরুনীমা বাঁকা হেসে বলে উঠল,,,,,

—-“না হয় না। কজ আমরা খুব শীঘ্রই এক্টা ছোট্ট মল্লিকা নয় ছোট্ট এক্টা অন্তর চাই।”

মল্লিকা লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেলল। অন্তর বাঁকা হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। উপস্থিত সবাই খুশিতে দাঁত বের করে হাসছে। মিসেস লিজা ট্রে ভর্তি চা, নাস্তা নিয়ে এলো। সবাই এবার আলাপের পাশাপাশি নাস্তায় মন দিলো। এভাবেই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত ঘনিয়ে এলো। অনন্যা ও সবার সাথে এসে যোগ দিলো। অনন্যার মন মর্জি হুট করেই চেইন্জ্ঞ হয়ে গেলো। অনন্যার এই পরিবর্তন অন্তরকে বেশ ভাবাচ্ছে। মল্লিকা এখনো অনন্যার দিকে তাকায় নি। তাই কিছু আঁচ করতে পারছে না। অন্তর বসা থেকে উঠে মিসেস অরুনীমাকে টেনে এনে আলাদা করে ড্রইং রুমের একপাশে দাঁড়ালো। মিসেস অরুনীমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর গলাটা ঝাঁকিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে মিসেস অরুনীমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“আম্মু….আমরা যতোদিন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে না ফিরছি ততদিন পর্যন্ত তুমি অনন্যাকে চোখে চোখে রেখো। বাড়ি থেকে বের হতে দিবে না। দরকার হলে ২৪ ঘন্টা ওর আশেপাশে থাকবে। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেই আমি তন্ময়ের সাথে অনন্যার বিয়ের ডেইট টা ফিক্স করে নিবো। তন্ময় অনেক আগে থেকেই অনন্যাকে পছন্দ করে। তন্ময়ের ফ্যামিলি ও অনন্যাকে বেশ পছন্দ করে। কিছুদিন আগেই তন্ময় আমাকে ব্যাপারটা জানায়। আমি ও রাজি হয়ে যাই। কজ তন্ময় ছেলেটা ভীষন ভালো। ছোটবেলা থেকেই আমরা তন্ময়কে চিনি। আমাদের চোখের সামনেই ছেলেটা বড় হয়েছে। আশা করছি তোমরা দ্বিমত করবে না। তন্ময়কে মেনে নিবে।”

—-“এতো তাড়াহুড়োর কি আছে অন্তর? অনন্যা তো সবে মাএ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পা দিলো। আর এক বছর পর না হয় বিয়ের সিদ্ধান্তটা নেওয়া হোক।”

—-“তুমি বুঝবে না আম্মু। এতোদিন পর্যন্ত অনন্যাকে রাখা যাবে না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব অনন্যার বিয়ে দিতে হবে। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে তোমাকে সমস্তটা বুঝিয়ে বলব। আপাতত তুমি অনন্যাকে দেখে শুনে রেখো।”

মিসেস অরুনীমা আর কথা না বাড়িয়ে অন্তরের কথায় সায় জানালো। এরপর দুজনই এসে সবার মাঝখানে বসে পড়ল। আবার শুরু হয়ে গেলো ড্রইং রুমের জমজমাট আড্ডা।

ঘড়িতে বাজছে রাত দশটা। মল্লর জোড়াজুড়ি করে মল্লিকাকে রুমে পাঠিয়ে দিলো ব্যাগ গুছাতে। সাথে অন্তর ও গেছে। দুজনই রুমের দরজা আটকে নিজেদের কাপড় গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অন্তর ওর বাড়ির কেয়ার টেকার জলিল কে দিয়ে ওর সমস্ত জামা কাপড় নিয়ে এসেছে। এবার শুধু মল্লিকার জামা কাপড়ের সাথে ওর জামা কাপড় গুলো প্যাকিং করার পালা। মল্লিকা কাবার্ড থেকে সমস্ত শাড়ী বের করে একের পর এক শাড়ী গুলো ল্যাকেজে প্যাক করছে। অন্তর বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে গালে হাত দিয়ে মল্লিকার কান্ড দেখছে। এক পর্যায়ে অন্তর অধৈর্য্য হয়ে মল্লিকাকে বলে উঠল,,,,,

—-“এতো শাড়ী নিয়ে কি হবে মল্লিকা? থাকবো তো মাএ দুইদিন!”

মল্লিকা মুখটা লাল করে বলল,,,,,

—-“মিনিটে মিনিটে আমি শাড়ী পাল্টাবো। আপনার কোনো প্রবলেম আছে?”

—-“হুম আছে তো। এতো বড় ল্যাকেজ আমি কেরি করতে পারব না।”

মল্লিকা দাঁত কিড়মিড় করে শাড়ী গুলো উলোট পালোট করছে আর বলছে,,,,,

—-“পারতে হবে আপনাকে। উফফফ লোকটা ভনভন করে আমার মাথা নষ্ট করে দিচ্ছে। বিরক্ত লাগছে আমার, এক্টা ঠিকঠাকক শাড়ী খুঁজে পাচ্ছি না। ধ্যাত।”

অন্তর বসা থেকে উঠে মল্লিকার পাশে দাঁড়িয়ে এক এক করে কাবার্ড থেকে সমস্ত শাড়ী নামিয়ে মাএ তিনটে শাড়ী চুজ করে কাবার্ডে রাখল। মল্লিকা চোখ লাল করে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর আড়চোখে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এতো রাগ হওয়ার কিছু নেই। আপাতত তিনটে শাড়ী নাও। সিঙ্গাপুর গিয়ে অনেক অনেক গর্জিয়াস শাড়ী কিনে দিবো তোমাকে। সাথে ম্যাচ করা অরনামেন্টস।”

মল্লিকা মুহূর্তে বএিশ দাঁত বের করে অন্তরকে ঝাপটে ধরে খিলখিল করে হেসে বলল,,,,,

—–“সত্যি অন্তর আপনি আমাকে শপিং এ নিয়ে যাবেন?”

—-“শুধু শপিং মল কেনো, সিঙ্গাপুরের প্রত্যেকটা জায়গায় আমি তোমাকে নিয়ে ঘুড়ব। তুমি যা চাইবে তাই কিনে দিবো।”

মল্লিকা খুব এক্সাইটেড হয়ে অন্তরের গালে টাইট এক্টা চুমো বসিয়ে দিলো। অন্তর বাঁকা হাসি দিয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা ওর কাজে বেশ লজ্জিত হয়ে মাথাটা নিচু করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল রেডি হতে। অন্তর বুঝেছে মল্লিকা খুব লজ্জা পেয়েছে। তাই সে মল্লিকাকে আর ঘাটায় নি। সে নিজে ও রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ঘড়িতে রাত এগারোটা। মল্লিকা আর অন্তর রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামছে। মল্লিকা সামনে হাঁটছে আর অন্তর পিছনে ল্যাকেজ নিয়ে আসছে। মল্লিকার শাড়ীর সাথে ম্যাচ করে অন্তর ও জাম কালার শার্ট পড়েছে। দুজনকেই দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। অন্তরের রিকুয়েস্টে মল্লিকা খোঁপায় বেলি ফুল এঁটেছে। বাড়ির গার্ডেন থেকে অন্তর মল্লিকার জন্য বেলিফুল নিয়ে এসেছে। কয়েকটা বেলি ফুল মল্লিকা খোঁপায় গুজে নিয়েছে। ওদের দুইজনকে একসাথে দেখে বাড়ির সবাই বেশ খুশি।

নিচে নেমে সবার থেকে বিদায় নিয়ে অন্তর আর মল্লিকা গাড়িতে উঠে পড়ল। ড্রাইভার এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। অন্তর মল্লিকার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। মল্লিকা মুচকি হেসে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে।

#চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে