#মন_চায়_তোকে
#পার্ট_৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
—-“অনন্যার হাতেই তোর খেলা শেষ করব নীল। দরকার হলে অন্তরের সাথে আমি তোর ব্যাপারটা নিয়ে খোলসা করে কথা বলব। তোর চ্যাপ্টার যে করেই হোক ক্লোজ করব।”
অনন্যা মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। মুসকান মল্লিকার কানের দুল নিয়ে খেলছে। মাঝে মাঝে দু এক্টা টান ও দিচ্ছে। মল্লিকার ব্যাথা লাগছে এরপর ও সে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। অন্তর দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুসকানের দুষ্টুমি দেখছে। তবে মল্লিকার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন অন্তরকে খুব ভাবাচ্ছে। মুসকানের সাথে ও গ্যারান্টি নেই কখন সে সত্যি সত্যি মল্লিকার কান ছিড়ে হাতে দুল নিয়ে আসে বলা যায় না।
অন্তর বেশ পেরেশান হয়ে দৌঁড়ে গিয়ে মুসকানকে কোলে তুলে নিলো। মল্লিকা নির্বাক দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে। মুসকানকে কোলে নিয়ে অন্তর মল্লিকার দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“হোয়াট হ্যাপেন মল্লিকা? এইভাবে জড় সড় হয়ে বসে আছো কেনো? খুব টেনসড দেখাচ্ছে তোমাকে।”
মল্লিকা অনন্যার থেকে চোখটা সরিয়ে অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
—-“হুম বলো কি কথা?”
এর মাঝেই মুসকান ঠোঁট উল্টিয়ে মা মা বলে কান্না জুড়ে দিলো। অন্তর বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ল মুসকানের কান্না থামাতে। মল্লিকা ও চুপ হয়ে গেলো। মিসেস অরুনীমা এসে মল্লিকা আর অন্তরকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমে এসেছে। খেয়ে দেয়ে ওদের মল্লিকাদের বাড়িতে রওনা দিতে হবে। তাই মিসেস অরুনীমা তাড়াহুড়ো করে ওদের খাবার টেবিলে বসিয়ে দিলো। অনন্যা না খেয়েই কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে গেলো। নীলের ঐভাবে চলে যাওয়াটা অনন্যা মানতে পারছে না।
খাবার টেবিলে দুই পরিবারে সবাই বসে আছে। মল্লিকা বেশ আকুপাকু করছে অন্তরকে নীলের ব্যাপারে সত্যিটা বলার জন্য। কিন্তু স্কোপ ই পাচ্ছে না। মল্লিকা কিছুটা মন খারাপ করে মাথাটা নিচু করে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“ধ্যাত অন্তরকে তো কিছু বলতেই পারছি না। জরুরী কথা বলার সময় এক্টা না এক্টা বাঁধা পড়বেই। অনন্যার বড় সড় এক্টা ক্ষতির হওয়ার আগে অনন্যাকে আমার সাবধান করতে হবে। অন্তরকে ও সব বলতে হবে। নীলের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে। বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই আমাকে অন্তরের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। অনন্যাকে একা রেখে এই বাড়ি থেকে কিছুতেই যাওয়া যাবে না। সাথে করে আমি ঐ বাড়িতে অনন্যাকে ও নিয়ে যাবো। নীলের সাথে বিশ্বাস নেই। কখন সে একা বাড়ি পেয়ে অনন্যার ক্ষতি করে দেয়। আব্বু থাকবে অফিসে। পুরো বাড়িতে আম্মু আর অনন্যা। না…এই রিস্কটা নেওয়া যাবে না। দরকার হলে আম্মুকে ও আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। ফুফু আম্মুরা তো অলরেডি প্রিপারেশন নিয়ে নিয়েছে বাড়ি যাওয়ার। খেয়ে দেয়েই ওরা চলে যাবে। বাড়িটা পুরো ফাঁকা হয়ে যাবে।”
কথা গুলো আপন মনে বিড়বিড় করে অনন্যা সারফারাজ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে মলিন হেসে বলল,,,,,,
—-“আব্বু আপনার কাছে আমার এক্টা আবদার ছিলো।”
সারফারাজ চৌধুরী বেশ খুশি হয়ে আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,
—-“কি আবদার মা?”
—-“আব্বু আমি চাইছিলাম যে, আম্মু আর অনন্যাকে ও আমাদের সাথে ঐ বাড়িতে নিয়ে যেতে। এখন ওদের ছাড়া এক মুহূর্ত ভালো লাগে না। এই দুইদিনে অভ্যাস হয়ে গেছে ওরা। তাছাড়া কাল তো আমরা সবাই এই বাড়িতে চলেই আসব। একদিনের জন্য ওরা আমাদের সাথে গেলে আশা করি কোনো প্রবলেম হবে না।”
অন্তর সহ খাওয়ার টেবিলের বাকি সবাই মল্লিকার কথা শুনে বেশ খুশি। মল্লিকার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে মিসেস লিজা ও বলে উঠল,,,,,,
—-“হুম সারফারাজ ভাই। মল্লিকা তো ঠিকই বলেছে। চলেন না আমরা সবাই এক্টা দিন এভাবে হাসি খুশিতে একসাথে কাটিয়ে দেই। প্লিজ আপনি আপওি করবেন না।”
সারফারাজ চৌধুরী মিসেস অরুনীমার দিকে তাকিয়ে দেখল উনি ও বেশ খুশি। উনি ও চাইছে মল্লিকার সাথে ঐ বাড়িতে যেতে। তাই সারফারাজ চৌধুরী আর বারণ করতে পারল না। উনি মল্লিকার দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,,
—-“মল্লিকা মা….মেনে নিলাম তোমার আবদার। এক্টা দিনের ই তো ব্যাপার।”
মল্লিকা খিলখিল হেসে সারফারাজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,
—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ আব্বু।”
বিনিময়ে সারফারাজ চৌধুরী মুচকি হাসল। অন্তর মুগ্ধ হয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। এই দুই দিনে যে মল্লিকা এতো সহজে সবার সাথে মিশে যাবে সবাইকে এতোটা আপন করে নিবে অন্তর ভাবতে ও পারে নি। মল্লিকা দিন দিন অন্তরকে দারুনভাবে আকৃষ্ট করে তুলছে। মুচকি হেসে অন্তর প্লেইটে খাবার মেখে সবার সামনে মল্লিকার মুখে খাবারের লোকমা পুড়ে দিলো। মল্লিকা লজ্জায় মাথাটা নিচু করে রেখেছে। উপস্থিত সবাই অন্তরের পাগলামী গুলো চোখ ভরে দেখছে।
মল্লিকা খাবারের লোকমা চিবুচ্ছে আর এদিক সেদিক তাকিয়ে অনন্যাকে খুঁজছে। অনেক ক্ষন ধরে খোঁজার পরে ও অনন্যাকে দেখতে না পেয়ে মল্লিকা অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,
—-“অনন্যাকে দেখেছেন? খাবার টেবিলে ও দেখছি না”
অন্তর মল্লিকার মুখে ভাতের লোকমা পুড়ছে আর বলছে,,,,,,,
—–“অনন্যা ওর রুমে। খাবে না বলেছে। এক্টু আগেই নাকি অনন্যা নুসাইবা ভাবীর সাথে লাঞ্চ করে গেছে।”
—-“আপনি সিউর?”
—“হুম নুসাইবা ভাবী বলেছে। আমি জিগ্যেস করেছিলাম।”
—-“নুসাইবা ভাবী কোথায়?”
—-“রেডি হচ্ছে বাড়ি যাওয়ার জন্য।”
—“ওহ।”
খাওয়ার মাঝখানে মিসেস হৈমন্তী, সাহেদ, সাহেল আর নুসাইবা এসে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। মিসেস হৈমন্তীর শরীরের অবস্থা বেশি ভালো না বলে কেউ উনাদের জোর করে নি থাকতে। অন্তর এখনো মল্লিকার মুখেই খাবার পুড়ে যাচ্ছে নিজের মুখে এখনো এক লোকমা ও পুড়ে নি। মল্লিকা কিছুটা বিরক্ত হয়ে অন্তরের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,
—-“এবার আপনি ও খান। আমাকে আর কতো খাওয়াবেন?”
—-“আমি খাবো না ডিয়ার। তাই তোমাকে সব গুলো খাবার ভ্যানিশ করতে হবে।”
মল্লিকা চোখ লাল করে বলল,,,,,,,
—-“খাবেন না মানে? কেনো খাবেন না? আপনাকে খেতেই হবে। না হয় আমি ও খাবো না।”
অন্তর মুখটা কাচুমাচু করে বলল,,,,,,
—-“খেতেই হবে?”
—-“হুম হবে।”
মল্লিকার চোখের দিকে তাকিয়ে অন্তর ব্যাপক ভয় পেয়ে গেছে। তাই সে গপাগপ মুখে ভাতের লোকমা পুড়ে নিচ্ছে। অন্তরের কান্ড দেখে মল্লিকা মনে মনে হেসে কুটিকুটি।
প্রায় পনেরো মিনিট পর খাওয়া দাওয়া শেষে এবার ঘনিয়ে এলো বিদায় লগ্ন। অনন্যা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এসেছে। অনন্যার চোখ, মুখ দেখে মল্লিকা বেশ বুঝতে পেরেছে অনন্যা অনেকক্ষন ধরে কান্না করেছে। মল্লিকার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে অনন্যাকে খুব বকতে আর নীলের নাকটা ফাটিয়ে দিতে। আপাতত সে নিজের রাগটাকে কিছুটা কন্ট্রোল করে রেখেছে। অনন্যাকে এখন হাজার বুঝালে ও অনন্যা মল্লিকার কথা বিশ্বাস করবে না। উল্টে ভুল বুঝবে। তাই সে আপাতত অনন্যাকে কিছু বুঝাতে চাইছে না। প্রমান সহ নীলকে হাতে নাতে ধরে সে অনন্যার সামনে প্রেজেন্ট করবে। এর জন্য অন্তরের হেল্প ভীষণভাবে দরকার।
বাড়ির সব গেস্টরা এক এক করে চলে গেছে। বাড়ির গার্ডেনে দুটো গাড়ি পার্ক করা। এক্টা সারাফারাজ চৌধুরীর, অন্যটা মিঃ নাজিমের। অন্তর ওর গাড়িটা পার্ক রুম থেকে বের করতে নিলেই মল্লিকা চেঁচিয়ে বলল,,,,,,
—-“আরে আরে গাড়ি বের করতে হবে না। দুটো গাড়িতেই আমাদের হয়ে যাবে।”
অন্তর বাঁকা হেসে বলল,,,,,
—-“আমার হবে না মিসেস। আমি আপনাকে একান্তে পেতে চাই।”
—-“আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আমি যা বলছি তাই হবে ব্যাস।”
মল্লিকার ফেসিয়াল রিয়েকশান দেখে অন্তর মনে মনে হেসে বিড়বিড় করে বলল,,,,
—-“আমি জানি মিসেস নীলান্জ্ঞনা, তুমি কেনো আরেকটা গাড়ি নিতে বারণ করছ। একচুয়েলি তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে চাও। তবে তুমি এটাই বুঝলে না শেষ মেষ তোমাকে আমার কাছাকাছি ই বসতে হবে। আমার কোলে তোমাকে বসতে হবে। কজ দুটো গাড়িতে এতগুলো লোকের জায়গা হবে না। তোমার জালে তুমি নিজেই ফেঁসে গেলে মল্লিকা। তুমি বরং আমার জন্য সুবিধেই করে দিলে।”
অন্তর গলা ঝাঁকিয়ে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,,,,,,
—-“ওকে তোমার কথাই হবে। দুটো গাড়িই এনাফ।”
অন্তরের কথা শুনে মল্লিকা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল। প্রথম গাড়িতে বসল মিঃ নাজিম, সারফারাজ চৌধুরী, মিসেস অরুনীমা, মিসেস লিজা। দ্বিতীয় গাড়িতে বসল মল্লর, মল্লরের হাজবেন্ড, অনন্যা, মুসকান। বাকি আছে আর মাএ এক্টা সিট। মল্লিকা ধপাস করে সিটে বসতে নিলেই অন্তর সিটটা দখল করে নেয়। মল্লিকা মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্তর শেরোয়ানীর কলারটা ঠিক করে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল,,,,,
—-“কোলে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই মল্লিকা। তোমাকে এখন আমার কোলে বসতে হবে। এই জন্যই বলেছিলাম আলাদা এক্টা গাড়ি নিতে। তুমি তো আমার কথা শুনলে না।”
মল্লর শয়তানী হাসি দিয়ে মল্লিকাকে টান দিয়ে অন্তরের কোলে বসিয়ে দিয়ে বলল,,,,,,
—-“বসে পড়। এই সুযোগ আর পাবি না। জামাইয়ের কোলে বসে ট্রাভেল করার মজাই আলাদা। আমরা মুখে হাত দিয়ে রাখব। তোদের দিকে তাকাব না।”
মল্লিকা মল্লরের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে। মল্লরের হাজবেন্ড মৃদ্যু হেসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। অন্তর মল্লিকার কোমড়টা শক্ত করে ধরে রেখেছে আর কিছুক্ষন পর পর বাঁকা হাসছে। মল্লিকা ওর আঙ্গুলের বড় বড় নখ দিয়ে অন্তরের হাতে খামচি দিয়ে রেখেছে। অন্তর খুব ব্যাথা পাচ্ছে এরপরে ও মুখ বুজে সব সহ্য করে নিচ্ছে। মল্লিকা মনে মনে হেসে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,
—-“কেমন লাগছে মিঃ অন্তর? আমাকে কোলে নেওয়ার শাস্তি ভোগ করো। হাত দুটোকে আজ রক্তাক্ত করে ফেলব।”
অন্তর হাসি মুখে সব ব্যাথা সহ্য করে নিচ্ছে। এক্টা টু শব্দ ও করছে না। উল্টে মল্লিকাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে। মল্লিকা যেনো স্লিপ খেয়ে কোল থেকে পড়ে না যায় সেজন্যই এতো শক্ত করে ধরা।
প্রায় বিশ মিনিট পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মল্লিকার বাড়ির সামনে। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। মল্লিকা অন্তরের কোল থেকে নেমে ওর নখের দিকে তাকিয়ে দেখল নখগুলোতে রক্ত লেগে আছে। প্রত্যেকটা নখ থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে। অন্তর গাড়ি থেকে নেমে মল্লিকার পাশে দাঁড়াল। মল্লিকা চোখে জল নিয়ে অন্তরের হাত দুটো চেইক করে দেখল অন্তরের দুটো হাতেই নখের দাগ গুলো গর্ত হয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ক্ষত হয়ে আছে জায়গা গুলো। দেখলেই গাঁ শিউরে উঠবে। অন্তর হাসি মুখে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকার এবার নিজের প্রতিই নিজের খুব রাগ হচ্ছে। তাই সে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ির ভিতর ঢুকে সোজা রুমে গিয়ে ধপ করে বেডে বসে ইচ্ছে মতো চোখের জল ছাড়ছে।
অন্তর বেশ পেরেশান হয়ে মল্লিকার পিছু পিছু দৌঁড়ে রুমে ঢুকে মল্লিকার পাশে বসল। হুট করে মল্লিকা অন্তরকে ঝাপটে ধরে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলল,,,,,
—-“আপনি এতো বোকা কেনো অন্তর? কিভাবে পারলেন এতোটা ব্যাথা মুখ বুঝে সহ্য করতে? কেনো আমাকে থামালেন না? কেনো আমাকে বকলেন না কেনো অন্তর?”
অন্তর মল্লিকাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,,
—-“আমি এক্টু ও ব্যাথা পাই নি মল্লিকা। উল্টে ভালো লাগছিলো। তোমাকে বকার কথা আমি ভাবতে ও পারি না। তোমার সব টর্চার ই আমার ভালো লাগে। তবে তুমি কাঁদলে বা মন খারাপ করলে খুব কষ্ট লাগে। কখনো আমার সামনে কেঁদো না মল্লিকা। আমি সহ্য করতে পারব না।”
মল্লিকা হেচকি তুলে কাঁদছে আর বলছে,,,,,,
—-“আপনি খুব ভালো অন্তর। খুব খুব খুব ভালো। আপনার মতো কাউকে বর হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এই প্রথম আমার আব্বুর পরে কেউ আমাকে এতোটা বুঝছে। আমার পাগলামী গুলো মুখ বুজে সহ্য করে নিচ্ছে। আমি কি আসলেই আপনাকে ডিজার্ভ করি অন্তর?”
—-“আমার মনে ও একই প্রশ্ন মল্লিকা। আমি কি আদৌ তোমাকে ডিজার্ভ করি?”
মল্লিকা অন্তরের বুক থেকে মাথা তুলে ছলছল চোখে অন্তরের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্তর মলিন হেসে মল্লিকার দিকে তাকিয়ে আছে। মল্লিকা চোখের জল গুলো মুছে ডেস্কের উপর থেকে ফার্স্টএইড বক্সটা এনে অন্তরের হাতে তুলো দিয়ে স্যাভলন ঘঁষে দিলো। নখের আঁচড় খুব বিষাক্ত হয়। মাঝে মাঝে ইনফেকশান ও হয়ে যায়। তাই মল্লিকা রিস্ক নিতে চাইছে না।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর মল্লিকা অন্তরের হাতটা ছেড়ে ফার্স্ট এইড বক্সটা ডেস্কের উপর রেখে কিছুটা সিরিয়াস হয়ে অন্তরকে বলল,,,,,
—-“অন্তর আপনার সাথে আমার কিছু ইম্পরটেন্ট কথা আছে। এক্ষনি বলতে হবে।”
—-“এক্ষনি বলতে হবে?”
—-“হুম এক্ষনি বলতে হবে।”
—-“ফ্রেশ হয়ে বলা যায় না? আসলে কিছুটা ক্লান্ত লাগছে।”
—-“আমার কথা গুলোর উপর কিন্তু অনন্যার ফিউচার নির্ভর করছে।”
অন্তর ভ্রু জোঁড়া কুঁচকে বলল,,,,
—-“অনন্যার ফিউচার নির্ভর করছে মানে? কি এমন কথা মল্লিকা?”
মল্লিকা দ্রুত পায়ে হেঁটে অন্তরের পাশে বসে খুব সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,
—-“মানে অনন্যা যে ছেলেটাকে ভালোবাসে সে ছেলেটা এক নম্বরের ফ্ল্যাটিং বয়। অনন্যার লাইফ ঝুঁকির মধ্যে আছে।”
অন্তর চোখ লাল করে বলল,,,,,,
—-“এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড। অনন্যা ছেলেটাকে ভালোবাসে মানে? কাকে ভালোবাসে?”
—-“যে ছেলেটা আজ আমাদের রিপিসশানে এসেছিলো। আপনি তো কথা ও বলেছেন ছেলেটার সাথে।”
অন্তর রাগে গিজগিজ করে চোয়াল শক্ত করে বলল,,,,,
—-“হোয়াট? ছেলেটা অনন্যার বয়ফ্রেন্ড?”
—-“হুম। আমি আগে থেকেই জানতাম। অনন্যা আমাকে প্রথমেই বলেছিলো। কিন্তু ছেলেটাকে দেখার পর আমার মনে হচ্ছে আপনাকে সত্যিটা বলা উচিত। ছেলেটা পুরোপুরি ক্যারেক্টার লেস। অনন্যা এক্টা ফেইক ছেলেকে ভালোবেসেছে।”
অন্তর বসা থেকে উঠে বেডের কার্ণিশে জোরে এক্টা ঘুঁষি মেরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,
—-“তুমি কি করে জানলে ছেলেটা খারাপ বা ক্যারেক্টারলেস? তোমার কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে তুমি ছেলেটাকে খুব ভালো করে চিনো!”
মল্লিকা চোখে অজস্র জল নিয়ে মাথাটা নিচু করে নরম স্বরে বলল,,,,,
—-“হুম অন্তর আমি ছেলেটাকে খুব ভালো করে চিনি। ছেলেটা আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড ছিলো।”
#চলবে,,,,,,