#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_২
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
রিপের চেঁচামেচিতে সারা বাড়ির লোকজন ঘুম থেকে উঠে ছুটে এল। মুনা এসে বলল
‘ কি হয়েছে রে রিপ? মাহি এসেছে?
রিপ গর্জে গর্জে বলল
‘ নাহ। বেয়াদবটা দিন দিন ছোট হচ্ছে নাকি বড় হচ্ছে? কিভাবে ওকে মেরে পালিয়েছে দেখেছ? এত বড় সাহস ওর?
নীরা অবাক চোখে চেয়ে থাকলো। গালে এখনো কান্না লেপ্টে আছে। যার জন্য কেঁদেকেটে সে সাগর বানাচ্ছে সে এই ছোট্ট মেয়েটির গায়ে হাত তুলেছে?
ঘুমঘুম চোখে পরী আর ছিকু ও উঠে এল। পিহুকে ওই অবস্থায় দেখে পরী ছুটে এল। বলল
‘ কি হয়েছে ওর? কাঁদছে কেন?
রিপ বন্ধ করা চোখ খুলে কপালে আঙুল চালালো। বলল
‘ ওকে একটু ফ্রেশ করে দাও। গালটা লাল হয়ে আছে। ওই বেয়াদব কোথায় আমি দেখি। বাদশা হয়ে গেছে সে? আসুক।
মুনা পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বলল
‘ ও তোমাকে কেন মেরেছে পিহু? ঝগড়া হয়েছে?
রিপ বলল
‘ কোনো ঝগড়া টগড়া হয়নি। আমার রাগ পিহুর উপর ঝেড়েছে।
পিহু চোখ মুছতে মুছতে বলল
‘ মাহিদ ভাই মনে করেছে আমি মামাকে বলে দিয়েছি যে ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে সিগারেট খায়। সেজন্য,,
বলতে না বলতেই আবার ও কান্নায় ভেঙে পড়লো পিহু। গালটা ভীষণ জ্বলছে তার। রিপ গিয়ে তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ আচ্ছা আর কেঁদোনা মামা। এভাবে শরীর খারাপ করবে। পরী ওকে নিয়ে যাও। কাপড়চোপড়ে কাঁদা লেগেছে। ফ্রেশ করে একটু বরফ ম্যাসাজ করে দাও।
খালি গায়ে খালি পায়ে এলোমেলো চুলে ঘুমঘুম চোখে ঢুলে ঢুলে ছিকু এল। বলল
‘ চবাই ঘুমায় না কেন? ছিকুর ঘুম ভাঙি দিচে কেন? পিহুচুন্নি কাঁদে কেন?
বলতে না বলতেই নিজেই কেঁদে দিতে যাচ্ছিল। রিপ এসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে কাঁধে মাথাটা রেখে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ তুমি আমার কোলে ঘুমাও ভাই। আম্মা এক্ষুণি চলে আসবে। পিহু কাঁদছে তো।
‘ কেন? পিহু কাঁদে কেন? পিহুকে চবাই মারে কেন?
‘ মিহি মেরেছে।
‘ মিহি মারি ফিলবো এদদম। মিহি ক্যাট। ডগ। মাংকি।
‘ হ্যা তাই।
পিহু কাপড় চোপড় পাল্টে নিল। পরী সামান্য বরফ ম্যাসাজ করে দিয়ে বলল
‘ ঘুমাও। ব্যাথা না কমলে মেডিসিন নিতে হবে।
পিহু মাথা নাড়ালো। শুয়ে পড়লো। পরী তার ঘুম না আসা পর্যন্ত বসে থাকলো। রিপ আসলো ঘুমন্ত ছিকুকে নিয়ে। পিহুর পাশে শুয়ে দিল। পরী বলল
‘ আমরা একসাথে থাকি পাপা।
রিপ বলল
‘ ওর রাতে গায়ে জ্বর আসলে আমাকে ডেকো। ঠিক আছে?
‘ ওকে পাপা।
রিপ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল।
মুনা তাকে ডেকে বলল
‘ ছবিটা কে দিয়েছে তোকে?
‘ আমার এক পরিচিত । ওনি আমার বিপক্ষ দলের হয়ে অনেক কেস লড়েছেন। কাল আমার অফিসে এসে বলল, বিচারআচার তো ভালোই চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু একমাত্র ছেলের খবর রেখেছেন? মহিলা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে আপনার ছেলে।
আমি বিশ্বাসই করলাম না প্রথমে। পরে দেখি উনি প্রমাণ হিসেবে ছবি ও তুলে রেখেছেন। আমি ছবি দেখে থ হয়ে গিয়েছি। এতদিন আমি তাকে এই শিক্ষা দিয়েছি। ও মা বাপ ছাড়া ছেলে?
নীরা চলে গেল কেঁদে উঠে। এই একটা ছেলে তাকে মেরে তবে শান্তি। এই রাতবিরেতে কোথায় চলে গেল কে জানে? কাল পিহুর আব্বা যদি জানতে পারে তার মেয়েকে এভাবে মেরেছে মাহি, কি হবে ভাবতে ও চাইলো না নীরা।
_________
সকাল সকাল বাড়ির সকলে উঠে পড়েছে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য। রিপ মসজিদ থেকে এসেই পিহুকে দেখতে গেল। পিহু আজ উঠেনি। গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে তার। বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমানো ছিকু। পরী দুজনের গায়ে ভালো করে কাঁথা দিয়ে ঢেকে দিয়ে রিপকে বলল
‘ পিহুর জ্বর এসেছে পাপা। আব্বাকে তো বলা যাবে না। ডাক্তার নিয়ে আসলে ভালো হয়। মাহির খোঁজ পেয়েছ?
‘ না,। ডাক্তার তো এত সকাল সকাল আসবেন না। মিনিমাম ন’টা বাজতে হবে।
‘ আচ্ছা ও আরেকটু ঘুমাক।
______
পিহুর ঘুম ভাঙেনি এখনো। তার আগেই ছিকুর ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে সে আবিষ্কার করলো তার আরেকটা মায়ের বুকে। ঘুমঘুম চোখ কচলে বলল
‘ পিহু গুড মর্নিং! ধরি রাখছ কেন?
পিহুর সাড়াশব্দ নেই। ছিকু তার ছোট্ট হাত পিহুর গালে রাখলো। ডাকল
‘ পিহু! পিহু! উঠি যাও। চোখ খুলোনা কেন? পিহু! ও পিহু?
পিহু নড়েচড়ে উঠে ছিকুকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। খানিকটা চোখ খুলার চেষ্টা করে বলল
‘ ঘুম ভেঙেছে কলিজা?
‘ ভাঙিচে।
পিহু তার কপালে চুমু এঁকে ছেড়ে দিল। বলল
‘ যাও। ফ্রেশ হয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট!
‘ কেন বেকফাস্ট কেন? হুজুর আসবে না কেন?
‘ এটা তো নানুর বাড়ি। আজ হুজুর পড়াবে না আপনাকে।
ছিকু খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। ঢুলতে ঢুলতে নেচেনেচে বলল
‘ ওহ ওহ হলিডে হলিডে। ছিকুর হলিডে।
পিহু হেসে ফেলল। কানে ব্যাথা অনুভব হলো
ভার ভার লাগছে। ঝিমঝিম করছে। সে উঠে পড়লো। হাত মুখ ধুয়ে বসার ঘরের দিকে যেতেই দেখলো রিপ ডাক্তার নিয়ে বাড়ি ঢুকেছে মাত্র। পিহুকে দেখামাত্র বলল
‘ সোফায় বসো মামা।
পিহু সোফায় বসলো। ডাক্তার জ্বর মাপলো। ঔষধ লিখে দিল। রিপ ডাক্তারের পেছন পেছন চলে গেল। ঔষধ আনলো। পিহু ঔষধ খেয়ে বলল যে তাকে মেডিক্যালে যেতে হবে। রিপ বাঁধা দিয়ে বলল, আজ যেতে হবে না। কিন্তু দশটা বাজতেই আদির ফোন এল। সে রিপকে বলল, পিহুকে যাতে মেডিক্যালে পৌঁছে দেয়। রিপ তাকে বলল, পিহু আজ মেডিক্যালে যাবে না। কাল থেকে যাবে। আজ বেড়াতে এসেছে, বেড়াক।
আদি রিপের মুখের উপর আর কিছু বলল না। শুধু বলল, একটু দেখে রাখিস। মাহির সাথে ঝগড়া হয় সারাক্ষণ। দুজন না আবার মারামারি করে। রিপ ছোট্ট করে বলল
‘ চিন্তা করিস না। আমি আছি।
মাহিদের ফোনে ফোনের উপর ফোন দিতে লাগলো নীরা। রিং পড়ছে কিন্তু মাহিদ ফোন তুলছেনা। নীরা টেক্সট পাঠালো তার ফোনে। যদি আজকে বাড়ি না ফিরিস আমার মরা মুখ দেখবি মাহি। তুই আমাকে এখনো চিনিসনি। তাড়াতাড়ি ফোন তোল আর ফিরে আয়।
পরের বার মাহিদ ফোন তুললো। চুপ করে মায়ের বকাঝকা শুনলো। নীরা কেঁদে ফেলে বলল
‘ আমার জেঠুর ছয়টা ছেলে ছিল। কোনোদিন তাদের বাড়িতে ছেলেগুলোকে নিয়ে ঠু শব্দ ও শোনা যেত না। তুই একটা হয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারছিস? তুই কি এখনো ছোট আছিস? তোর না বিয়ের বয়স হয়ছে? আমাকে কি মেরে ফেলবি?
‘ বাড়ি ফিরছি। সন্ধ্যায়। কেঁদোনা তো।
বাড়ি ফিরছে বলতেই নীরা বুক কেঁপে উঠলো। ব্যারিস্টার তো ফায়ার হয়ে আছে। ভয়ে মায়ের মন আল্লাহ আল্লাহ ডাকতে লাগলো। মাহিদ ফিরলো সন্ধ্যেবেলায়। হাতে একটি ক্রিকেট ব্যাড। মুখ ভার। পরী এসে ক্রিকেট ব্যাড নিয়ে হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গেল। বলল
‘ চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নে। কোথায় ছিলি?
‘ নিনিতের বাসায়।
‘ পাপা খুব রেগে আছে। আমার ত ভয় লাগছে। পিহুকে ওভাবে মেরেছিস কেন? গাল আর কানের ব্যাথায় জ্বর চলে এসেছে। তুই কি মানুষ ?
মাহিদ উত্তর দিল না। পরী বলল
‘ পাপাকে আমিন আঙ্কেল তোর সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারে বলেছে। পিহু নয়। তুই এজন্য ওকে মেরেছিলি? তা ও ওভাবে?
মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে পরীর দিকে ফিরে বলল
‘ আমিন আঙ্কেল?
‘ হ্যা।
চুপ করে রইলো মাহিদ। তাহলে তো বড্ড ভুল হয়ে গেছে। গোসল সাড়তে চলে গেল সে। গোসল সেড়ে আসতেই ছোট্ট প্রধানমন্ত্রী তার কাছে জবাবদিহিতা চাইতে আসলো। প্রধানমন্ত্রীর পড়নে থ্রি কোয়াটার কালো প্যান্ট। গায়ে লাল টি শার্ট। টি শার্টের বুকে লাগানো কালো চশমা। মাহিদকে শাসিয়ে শাসিয়ে বলল
‘ মিহি পিহুকে মারি পালায়ছে কেন? মিহি পুঁচা কেন? বেরিসতার মিহিকে মারবে কেন?
মাহিদ এগিয়ে গেল তার দিকে। কোলে তুলে নিয়ে খাটে বসালো। বলল
‘ তুই বাপ শাসন করবিনা খবরদার? চুপ কইরা বইসা থাক। নইলে তোর খালার মতো অবস্থা তোর ও হইবো।
ছিকু চুপ থাকলো না। একের পর এক প্রশ্ন করা শুরু করলো। মাহিদ কানে বালিশ চেপে শুয়ে থাকলো। ছিকু তার পিঠের উপর চেপে বসলো। মাহিদের চুল হাতের মুঠোয় নিয়ে নেচেনেচ গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,
ভুউউউ ফিপফিপ। ভুউউউ।
মাহিদ ছিকু নামক অত্যাচারকে মুখ বুঁজে সহ্য করলো। কারণ সে তখন অন্য ভাবনায় বিভোর।
____________
রিপ বাসায় এসে নীরাকে ডাকল। বলল
‘ ও এসেছে?
নীরা ভয়াতুর চোখে চেয়ে বলল
‘ মাত্রই এসেছেন। একটু,,
রিপ হনহনিয়ে এগিয়ে গেল। পড়নে অফিসের পোশাক। কালো কোর্টটি সোফায় রেখে চলে গেল সে।
নীরা দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে মুনাকে বলল
‘ বড়আপা! দেখোনা মাহির ঘরের দিকে গেল তোমার ভাই। একটু যাও না। মেরে ফেলবে।
মুনা ছুটলো হন্তদন্ত হয়ে। যেমন বাপ, তেমন ছেলে। কেউ কারো থেকে কম না এরা।
দরজায় টোকা পড়তেই ছিকু গিয়ে দরজা খুলে দিল। রিপ তাকে দেখে একটু হাসলো। দরজার বাইরে বের করে দিয়ে বলল
‘ পরী ডাকছে। যাও।
ছিকু বোকাসোকা চোখে চেয়ে থাকলো। মাহিদ মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। রিপ দরজায় খিল লাগিয়ে বলল
‘ কাল রাতে কোথায় ছিলি?
‘ নিনিতের বাসায়।
‘ পিহুকে কেন মেরেছিস?
মাহিদ মাথা নামিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রিপ গর্জে বলল
‘ জবাব দে। কেন মেরেছিস? তুই কে ওকে মারার? কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুলিস?
ও কি তোর টাকায় খায় না পড়ে?
মাহিদের চক্ষু তখন ও মেঝেতে নিবদ্ধ।
‘ উত্তর দে মাহি।
মাহিদ উত্তর দিল না। রিপ বলল,
‘ কথা বলছিস না কেন? কোন সাহসে তুই ওর গায়ে হাত তুললি? আবার অন্যের বাড়ি গিয়ে রাত কাটাস? কত্ত বড় হয়ে গেছিস তুই? আমি ভাবতেও পারছিনা তুই এত বড় দুঃসাহস দেখালি কিভাবে?
বলতে না বলতেই রেগেমেগে রিপ ওয়ারড্রবের উপর থাকা মাহিদের বেল্ট হাতে নিল।
মেঝে থেকে চোখ সরানোর আগেই মাহিদের পিঠে আঘাত পড়লো বিরতিহীন একের পর এক। আটকে রাখা শ্বাস ছাড়ার সময় ও পেল না মাহিদ। ক্লান্ত হয়ে শেষ আঘাতটা করে তারপর থামলো রিপ। তারপর বেল্টটি ছুঁড়ে মারলো ঘরের এককোণে। মাহিদ সেই একই ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। মাথাটি এখনো ঝুঁকে আছে নিচের দিকে। ঘেমে উঠেছে তরতরিয়ে। দরজার ওপাশে চিৎকার চেঁচামেচি আর এক মায়ের কান্নার আওয়াজ। সাথে ভয় পেয়ে কাঁদছে ছোট্ট বাচ্চাটিও। রিপ দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো। কাউকে কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল। নীরা পাগলের মতো ছুটে গেল। গিয়ে নিজে ও কষে চড় বসিয়ে দিল মাহিদের গালে। তারপর বলল
‘ এইবার শান্ত হয়েছিস? হয়েছিস?
মাহিদ রক্তাক্ত চোখদুটো নিচ থেকে উপরে তুললো না।
নীরা কেঁদে উঠে শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরলো। কেঁদেকেটে বলল
‘ কেন এমন করিস তুই? জানিস তোর বাপ এরকম। দোষ করলে একচুল ও ছাড় দেননা। তারপরও তুই শোধরাস না কেন রে?
পরী এসে নীরাকে নিয়ে যেতে যেতে মুনাকে বলল
‘ মাম্মা মাহিকে দেখ তো। আমি ছোটমাকে নিয়ে যাচ্ছি।
মুনা মাহিদের কাছে গেল।
ছিকু এখনো কাঁদছে পরীর পিছু পিছু। পরী ডাক দিল পিহুকে।
‘ পিহু? ছিকুকে একটু ধরো। কাঁদছে ও। পিহু?
মুনা মাহিদের কাছে গিয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘেমে উঠা মুখটা মুছে দিতে দিতে বলল
‘ এজন্যই সাবধানে থাকতে বলি। কথা তো শুনিস না। ওদিকে বস তো। শার্টটা খোল, পিঠ দেখি।
মাহিদ চুপ করে থাকলো। মুনা বলল
‘ তুই গিয়ে বস। আমি মলম নিয়ে আসি। খবরদার কোথাও যাবি না মাহি।
মুনা চলে যেতেই দরজার পাশ থেকে ছিকুকে কোলে তুলে নিল পিহু। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে তাকালো রুমের ভেতর। ছিকুর কান্না থামলো। পিহু চোখ রাখলো রুমের ভেতর।
সাথে সাথে দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করা চোখ তার দিকে তাকালো বেশ অন্যরকম ভঙ্গিতে।
পিহু তাকে পিঠ করে দাঁড়ালো। ছিকুকে নিয়ে চলে গেল। মুনা এসে টেনে ফ্যানের নিচে বসিয়ে দিল মাহিদকে । শার্ট তুলে পিঠ দেখতেই শিউরে উঠলো। ছোপছোপ দাগ পড়ে গিয়েছে ইতোমধ্যে। গলা ধরে আসলো মুনার। নিজের হাতে আদর যত্ন করে বড় করা এই ছেলে। নিজ দোষে এতগুলো মাইর খেল। নিজে দিল একটা, খেল দশটা। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিল মাহিদ। সরে পড়ে বলল
‘ হাত দিওনা তো। যাও। আমার ঘুম পাচ্ছে। কেউ যেন আমার ঘরে না আসে।
মুনা জোর করে খানিকটা মলম লাগাতে ও পারলো না। জ্বালা করায় মাহিদ আর ধরতে ও দিল না।
________
রাতে চারপাশটা শান্ত হয়ে আসতেই নীরা এল মাহিদের ঘরে। উপুড় হয়ে ঘুমোচ্ছে সে। পিঠ লাগাতে পারছেনা বিছানায়। নীরা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল তার মাথায়। কপালের চুল সরিয়ে কপালে চুমু খেল। পড়নের পাতলা শার্ট সরাতেই মায়ের নরম মনে আঘাত লাগলো। এভাবে মারতে হয়? চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো নীরার।
পিঠে মলম লাগিয়ে দিল সে ধীরেধীরে। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
ঘরে যেতে না যেতেই রিপ বলল
‘ খেয়েছে?
নীরা জবাব দিল না। গটগট পায়ে হেঁটে বিছানার এককোণায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। রিপ সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রাত তখন এগারোটা। ডিনারটা আজ একটু তাড়াতাড়ি হয়েছে।
আদির আজকে নাইট ডিউটি পড়েছে। পরীর সাথে সন্ধ্যায় কথা হয়েছে। পিহুর সাথে বলা হয়নি। কিন্তু এতরাতে ফোন দেবে কি দেবেনা ভাবতে ভাবতে আদি টেক্সট পাঠালো
‘ জেগে আছেন আম্মা?
সাথে সাথে আনসার এল।
‘ ইয়েস পাপা।
আদি ফোন লাগালো তখুনি। পিহু ফোন তুলে বাইরে বেরিয়ে গেল। বাড়িটা অন্ধকার। পিহু বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। দূরের সড়কবাতির আবছা আলোয় দু একটা গাড়ি চলতে দেখা যাচ্ছে। আদির সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে ঝুলবারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো পিহু। নয়নতারার পাতাগুলো দুলছে। পিহু আনমনে দূরের আকাশের দিকে চেয়ে থাকলো। তারপর চলে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খেল সে। দু পা পিছিয়ে গিয়ে সামনের আগন্তুককে দেখে চিনতে পেরে চুপ মেরে গেল।
ভেঙে যাওয়া ঘুম জোড়া লাগছিল না। পিঠ বিছানায় রাখতে না পারায় ঘুমটা জমছিল না মাহিদের। তাই বারান্দায় এসেছিল। পিহুকে দেখে সে অবাক হলো না। বরঞ্চ দূরের আকাশে চোখ রেখে পকেটে হাত পুরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। পিহু চলে যেতে উদ্যত হলো। পা বাড়ানোর আগে মাহিদ গম্ভীর গলায় শুধালো
‘ দাঁড়া।
পিহু থমকে গেল।
চলবে,
#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_৩
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা
পিহু থমকে গেল। মাহিদ গলা পরিষ্কার করলো। সামনে এল না। পেছনে দাঁড়িয়ে পিহুর কাছাকাছি এল। পিহুর বুক ধুকপুক করছে৷ এই ব্যারিস্টারের বাচ্চার বিশ্বাস নেই। কখন চাটি মেরে বসে।
ভাবতে ভাবতে চোখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নিল পিহু। না মাথায় কোনো চড় পড়েনি। পিহু চোখ খুললো। দেখলো তার চোখের সামনে একটু নুপুর ঝুলছে। পিহু চোখ বড় বড় করে তাকালো। মাইর খেয়ে কি সোজা হয়ে গেল নাকি ব্যারিস্টারের বাচ্চা? কিন্তু নুপুরটি তো পিহুর চেনা। পিহু নিজের পায়ের দিকে তাকালো। দেখলো তা ডান পায়ের নুপুরটি নেই। চট করে মাহিদের হাত থেকে নুপুরটি কেড়ে নিল সে। কাঁদা লেগে আছে খানিকটা। পিহু বলল
‘ আমার নুপুর। তুমি? তুমি কোথায় পেলে এটা?
মাহিদের চেহারায় কাঠিন্যতা। পিহুর দিকে একপলক তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ হেঁটে চলে গেল সে। পিহু নাকফুলিয়ে বিড়বিড় করল,
‘ ভাব দেখায়। আবার পিহুর সাথে ! ঢং।
রুমে যাওয়ার আগে মাহিদের ঘরের দরজায় জোরে ধাক্কা দিল পিহু। ভেবেছিল দরজা বন্ধ। কিন্তু ধাক্কা দিতেই মাহিদের ঘরের ভেতর গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে হবে কে জানতো? ভয়ের চোটে কাঁদোকাঁদো হলো পিহু। মাহিদ আওয়াজ করে হাসলো না। তবে হাসি চেপে রাখার দৃশ্যটা পিহুর চোখ এড়ায়নি। মনে মনে একশ এক গালি দিয়ে পিহু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল
‘ আল্লাহ গো! একটু তুলো না। ধরো।
মাহিদ হাত বাড়িয়ে দিল না। ঘরের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে বলল
‘ দরজা টেনে দিয়ে যাবি।
পিহু উঠে দাঁড়ালো। দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়ালো। এই মাহিদ্দের হয়েছেটা কি? একে তো পিহু চেনে না। কি মনে করে পিহু আবার ঘরের ভেতর পা রেখে লাইট জ্বালালো। বিছানার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। গালের কাছে দু হাত চলে গেল। পিঠে তরতাজা মারের দাগ। এভাবে কেউ মারে? মামাটা কি?
লাইট জ্বলে উঠতেই মাহিদ বিরক্ত নিয়ে উঠে বসতেই পিহু এক দৌড়ে বের হয়ে গেল। হাঁফছেড়ে বলল, উফ কি বাঁচা বাঁচলাম।
মাহিদ দরজা বন্ধ করতে করতে বলল
‘ তোর রুমে কালো বোরকা পড়া কাউকে ঢুকতে দেখলাম।
পিহু তার ঘরের দিকে তাকালো। লা হাউলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহি আলীউল আজীম পড়ে বুকে ফুঁ দিল। মাহিদের ঘরের দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল
‘ মাহিদ ভাই আমার ভয় করছে। সত্যি কালো বোরকা পড়া কাউকে দেখেছ? এখন কি হবে আমার? আল্লাহ!
ভয়ে ভয়ে ঘরে পা রাখলো পিহু। সারারাত লাইট জ্বালিয়ে ঘুমালো।
__________
রিপের সাথে মেডিক্যালের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল পিহু। ছিকু ও বায়না ধরেছে পিহুর সাথে যাবে। পরী যেতে দেবেনা বলায় রিপের কোলে উঠে পড়লো। আর নামতে চাইলো না। শেষমেশ পিহু বলল ছিকুসোনা তার সাথে থাকবে। চিন্তা নেই। পরী দিতে চাইলো না। রিপ আশ্বস্ত করলো। তাই পরী মত দিল।
রিপের অফিসের গাড়ি এসে থামলো মেডিক্যালের সামনে। পিহু নেমে গেল ছিকুকে নিয়ে। রিপ বলল
‘ সাবধানে থেকো মামা। টা টা ছিকুভাই।
ছিকু হেসে ফেলল। হাত নেড়ে বলল
‘ টা টা বেরিসতার। চি ইউ।
রিপ হাসলো। বলল
‘ সি ইউ।
পিহু ছিকুকে নিয়ে প্রথমে আদির কাছে গেল। হসপিটালের নার্সগুলো ছিকুর গাল টানতে টানতে ছিকুকে বিরক্ত করে ফেলেছে। ছিকু রেগেমেগে সবাইকে বলল
‘ মারি ফিলবো এদদম। ছিকুর গাল ধরো কেন? ছিকুর রাগ লাগে কেন?
সবাই তার কথায় হেসে কুটিকুটি। আদি আসলো। স্টেথোস্কোপ ছিকুর গলায় পড়িয়ে দিয়ে গালে চুমু খেল। বলল
‘ ভাই কি ডাক্তার হবে?
‘ হুবো।
‘ হুবেন। তাইলে তো ভালো কথা। ভাইকে তো ডাক্তার ডাক্তার লাগছে। ইশুর নাকি ভাইয়ের জন্য মনপুড়ে। ইশুর কাছে যাবেন?
‘ যাবো। যাবো না কেন? ইশুবুনু ছিকুকে মিচ করে কেন?
পিহু বলল
‘ পাপা এউ পাগলের সাথে কথা বলো না তো। কেন কেন করেই যাবে। ও আমার সাথে চলে এসেছে। তুমি কি ওকে রাখতে পারবে?
আদি ছিকুকে কোলে তুলে নিল। বলল
‘ হোয়াই নট? হি’জ মাই লিটল ব্রাদার। ডোন্ট ওয়ারি। তুমি ক্লাসে যেতে পারো।
পিহু ছিকুর গাল টেনে দিয়ে বলল
‘ ওকে। টা টা কলিজা।
ছিকু আদির স্টেথোস্কোপ নিয়ে ব্যস্ত। তাই ব্যস্ততা নিয়ে বলল
‘ পিহু কুলিজা বলে কেন? ছিকুর গাল টানে কেন?
পিহু তার গালের দু পাশে চুমু খেল। তারপর চলে গেল। ছিকু সারাদিন আদির সাথেই কাটালো। আদির সাথে কাটালো বললে ভুল হবে। পেশেন্ট আর নার্সদের সাথে কেন কেন করেই সময় কাটলো তার।
ভীষণ মিষ্টি মজার একটা বাচ্চা।
____
দুপুরের পরপরই আদি ছিকুকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে হাজির। ইশা আর রাইনা খুশিতে দৌড়ে এল। ছিকুকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
‘ ভাই কি আমাদের মিচ করেছে?
‘ করিছে।
রাইনা বুকে হাত দিয়ে বলল
‘ মন পুড়েছে?
ছিকু মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ পুড়িচে।
রেহান সোফা থেকে উঠে আসলো। ছিকু তাকে দেখে কোলে ঝাপ দিল। জড়িয়ে ধরে রাখলো। রেহান গালে আদর করতে করতে বলল
‘ পাপাকে মিস করেছেন?
‘ করিচি।
রেহান হেসে ফেলল। পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
‘ আপনার মাদার কখন আসবে?
ইশা বলল
‘ বিকেলে মাহি নিয়ে আসবে বলেছে।
ছিকু সোফায় বসে ঝিমুতে থাকা আফিকে বলল
‘ দাদাই ছিকুর সাথে কুথা বুলেনা কেন?
আফি চমকে উঠলো। বলল
‘ আমি তো ভালা নই, ভালা লইয়্যা থাইকো।
রাইনা বিরক্ত হয়ে বলল
‘ মাথা গেছে বোধহয়। সারাদিন আলতুফালতু গান শুনে মাথাটা গেছে।
আদি ইশা রেহান একত্রে হেসে ফেললো । সাথে ছিকু ও কদুর বিচির মতো দাঁতগুলো দেখিয়ে হেসে দিল।
__________
ব্যাগপ্যাক গুছিয়ে নিল পরী। মুনা এসে ছোটছোট কয়েকটা বাক্স ব্যাগে ভরিয়ে দিতে দিতে বলল
‘ এগুলো রেহানের জন্য। ও তো পায়েস পছন্দ করে। আর চিপসগুলো আমার ভাইয়ের জন্য।
পরী বলল
‘ এসবের কি দরকার মা ? তুমি ও পারো।
নীরা একটি আচারের বয়াম নিয়ে এসে বলল
‘ এগুলো পিহুকে সাথে নিয়ে খেতে পারবে মন চাইলে। ফ্রিজে রেখে দিও। হ্যা?
পরী বলল
‘ তোমাদের এসবের জ্বালায় ও আমি আসিনা। ভাই এত ব্যাগপ্যাক দেখলে এখন রাগারাগি করবে।
মুনা বলল
‘ রাগারাগি কেন করবে? গাড়ি করেই তো যাবে। হেঁটে হেঁটে তো যাচ্ছেনা।
বেরোনোর আগে মুনা শক্ত করে পরীকে জড়িয়ে ধরলো। বলল
‘ যখন ইচ্ছা হবে তখন চলে আসতে তো পারো। বাড়িটা খালি হয়ে যাচ্ছে।
পরী তার ছলছলে চোখের দিকে চেয়ে হেসে বলল
‘ মাসের মধ্যে কয়বার আসি মা। তারপর ও তুমি অমন করো।
মুনা পরীর মুখটা আগলে ধরে স্নেহের পরশ দিল কপালে। হয়ত পেটে ধরেনি কিন্তু সে এই মেয়েটির মা। সে সত্যিই মা হতে পেরেছে। এই জীবনে আর কোনো দুঃখ, আফসোস তার নেই। পরী তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
‘ পাপাদের পাঠাবে। তোমরা ও যাবে। আসি।
মুনা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মাহিদ এসে বলল
‘ ভাইরে ভাই তোমাদের প্যা পু শেষ হইলে আসো।
নীরা বলল
‘ সারাক্ষণ মজার তালে থাকে এই ছেলে। শোনো পরী ওকে চোখে চোখে রাখবে যতক্ষণ ওখানে থাকে। পিহুর সাথে আবার না ঝগড়া লেগে যায়।
‘ ঠিক আছে ছোটমা।
পরীকে নিয়ে চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে গেল মাহিদ।
বসার ঘরে ছিকুর সাথে খেলছে পিহু। পিহুর চোখ বাঁধা। তার কাজ ছিকুকে খুঁজে বের করা। ছিকু খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো মাহিদ আর পরীকে দেখে। নেচেনেচে বলল
‘ ওহ ওহ পরী আসিছে। মিহি আসিছে। ওহ ওহ মুজা মুজা।
পরী হেসে বলল
‘ খুব মুজা?
‘ মুজা মুজা।
বলেই পরীর কোলে ঝাপ দিল সে। পরে মাহিদের কোলে ঝাপ দিয়ে বলল
‘ মিহি আসু, খিলবো কিমন?
মাহিদ তাকে নিয়ে হেঁটে সোফার কাছে গিয়ে বসলো। বলল
‘ শালা তুই মুটুরে আমি কোলে চড়াতে পারুম না বাপ। সর।
ছিকু নামলো না। মিহির মুখ ধরে প্রশ্ন করলো
‘ ছিকু মুটু কেন? কেন বাপ কেন?
পরে পিহুর দিকে চোখ গেল মাহিদ। পিহু ওড়নার আঁচল ঘুরাতে ঘুরাতে মুখ মোচড় দিয়ে চলে গেল।
ইশা এসে মাহিদকে বলল
‘ মাহি আজ তোকে যেতে দেব না। থেকে যাহ। মজার রান্না হবে আজ।
মাহিদ তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলল
‘ না না। থাকতে পারব না। আমার পড়া আছে। আব্বা আবার বকাঝকা করবে।
‘ ধুর। রিপদাকে আমি বুঝিয়ে বলব। আজ থেকে যাহ। আমার অনুরোধ। থাকবি না?
মাহিদ সোফায় গা এলিয়ে বসলো। বলল
‘ জানিনা বাপ। এত পাম মারো কিল্লাই?
ইশা খিক করে হেসে বলল
‘ তুই রিপদার ছেলে আমার মাঝে মাঝে বিশ্বাসই হয় না। রিপদা তো গুনেগুনে কথা বলে।
‘ হ বজ্জাত বাপ আমার।
মাহিদ পাশের সোফায় গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। বলল
‘ হয়ছে বাপ। আমি একটু ঘুমাই। আমারে কেউ যেন ডিস্টার্ব না করে।
‘ ঘুমাবি? তো রুমে যাহ।
‘ ধুর বাপের বইন আমি এইখানে ঘুমামু।
আফি পিহুকে ডেকে বলল
‘ আমার ছোট আম্মা কই?
পিহু জবাব দিল
‘ এইখানে বড়পাপা।
‘ আমারে পানি দেও এক গেলাস।
পিহু পানি নিয়ে দৌড়ে এল। দেখলো মাহিদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। পিহু হাতে একটুখানি পানি নিয়ে ঝাড়া মারলো মাহিদের মুখে। তারপর আফিকে ইশারায় চুপ থাকতে বলল। মাহিদের নড়াচড়া নেই। কিছুক্ষণ পর ইশা এল। টি টেবিলে ট্রে রেখে পিহুকে ডেকে বলল
‘ তোমার আব্বাকে ডাক দাও পিহু। মাহি ওঠ। নাশতা খাবি না? এই মাহি?
মাহিদ উঠলো। আদি এসে তার পাশে বসলো। বলল
‘ কি ব্যাপার খান সাহেব? পরীক্ষা প্রস্তুতি কেমন চলছে?
‘ ভালোই। শালার গ্যাঞ্জাম।
আদি হাসলো। বলল
‘ কষ্ট তো করতেই হবে।
টুকটাক কথা বললো তারা। আদি পিহুকে ডেকে বলল
‘ নাশতা করেছ আম্মা?
পিহু এসেই আদির পাশে বসলো। বলল
‘ ইয়েস পাপা।
_________
খাবার টেবিল জমে গেল মাহিদ আর ছিকুর জন্য। দুজনের কান্ড দেখল হাসতে হাসতে সবার পেটে খিল ধরে গেছে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে মাহিদ লম্বা হয়ে সোফায় শুয়ে থাকলো। ইশা এসে বলল
‘ তোর দিদিয়ার পাশের ঘরটায় থাকতে পারবি তো। পিহুকে বলেছি বেডশিট বিছিয়ে দিতে। যাহ ঘুমিয়ে পড়।
মাহিদ ফোনে নোট পড়ছিল। চুপচাপ চলে গেল ঘরের দিকে। পিহু তখন বেডঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝাড়ছিল। মাহিদ এসে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। পিহু পেছন ফিরে তাকে দেখে বলল
‘ কি সমস্যা?
‘ রেহান ভাইয়ের ঘরে যাহ। শার্ট-প্যান্ট নিয়ে আয়। আমাকে চেঞ্জ করতে হবে।
পিহু চলে গেল। রেহানের শার্ট প্যান্ট নিয়ে এসে মাহিদকে দিয়ে বলল
‘ ধরো। আর কি কাজ বাকি আছে হুকুম করো। আমি তো তোমার,,,,
‘ ঘর থেকে বের হ। চেঞ্জ করব। যাহ।
পিহু নাকফুলিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ আবারও হাজির হলো দুধের গ্লাস নিয়ে। মাহিদকে দেখলো আঁড়চোখে। তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। না এই ব্যারিস্টারের বাচ্চার চাইতে সে বেশি সুন্দর। এই ব্যারিস্টারের বাচ্চা একটু সুন্দর না। হুহ!
মাহিদ বলল
‘ আবার কি চাই?
‘ ধরো তোমার বাপের বইন দুধ পাঠাইছে। নাও তাড়াতাড়ি খাও।
‘ আমি ওসব খাইনা। যাহ নিয়ে যাহ।
‘ ওসব তোমার বাপের বইনকে গিয়া বলো। আমাকে নয়।
দুধের গ্লাস রেখে আবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো পিহু। তাকে আর আয়নায় দেখতে পাওয়া অন্য প্রতিবিম্বটিকে দেখতে দেখতে অধৈর্য্য হয়ে পড়লো। চট করে ঘুরে গিয়ে মাহিদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। মাহিদ হাতের ঘড়ির বেল্ট খুলতে ব্যস্ত। চোখ না তুলেই বলল
‘ কি সমস্যা? বের হ ঘর থেকে।
পিহু সরলো না। বলল
‘ মাহিদ ভাই শুনো না, শুনো না। আমার চোখে দেখোতো কি হয়েছে? ভালো করে দেখে বলো কি হয়েছে?
মাহিদ চোখ না তুলেই বলল,
‘ দেখো না কি হয়েছে ?
মাহিদ চোখ তুললো। বেশ সময় নিয়ে চোখগুলো পরখ করে কিছু বলার আগেই পিহু এক দৌড়ে চলে গেল। নিজের ঘরে গিয়ে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ লুকোলো। লজ্জায় লাল নীল বেগুনি কমলা হতে লাগলো ক্রমশ । নাদুসনুদুস একটি বাচ্চা তার ঘরের দরজা ঠেলে ঢুকলো। কোমরে হাত দিয়ে গালফুলিয়ে বলল
‘ ছিকু মিহির ঘর খুঁজি পায় না কেন? মিহি লুকায় আচে কেন? কেন বাপ কেন?
চলবে,