মন গোপনের কথা পর্ব-১০+১১

0
1105

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১০
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

সড়কবাতি জ্বলছে মিটমিট করে। মাহিদের বন্ধুরা পেছন পেছন আসছে। সবাইকে চুপচাপ দেখে ভ্রুকুটি হলো মাইশার। বলল

‘ সবাই এত চুপচাপ কেন? এনি প্রবলেম?

মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে বন্ধুদের দিকে ফিরে তাকালো। আবার হাঁটতে লাগলো। বলল

‘ আপনি কোথায় থাকেন ?

‘ এখানেই।

‘ কোথায়?

‘ ওইতো শপের পেছনে যে মোড়টা আছে। ওইদিকে গিয়ে রাস্তার বামপাশেই যে বাড়িটা আছে ওটা আমাদের বাড়ি।

‘ তাহলে তো কাছেই।

‘ হ্যা। আপনি কোথায় থাকেন?

‘ আমি ও এখানকার।

‘ তাহলে তো মাঝেমাধ্যে দেখা হবে।

মধ্যবয়স্ক একটা লোক টর্চ লাইট মেরে একজনের সাথে কথা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে লাগলো। মাইশা তাদের আসতে থেকে থমকে দাঁড়ালো। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,

‘ দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?

পরক্ষণেই মাইশার চোখ অনুসরণ করেই সামনে তাকালো মাহিদ। লোকটি এগিয়ে এল। সবার দিকে টর্চলাইট তাক করলো। মাহিদ চোখ বন্ধ করে হাত দিল চোখের উপর। মাইশা দৌড়ে গেল। বলল

‘ আব্বা এইতো আমি। কোথায় যাচ্ছ তুমি।

মেয়েকে পেয়ে লম্বা দম নিলেন মুহিব উদ্দীন। একহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন

‘ তোমাকে বলেছিলাম আমার পাশ না ছাড়তে। কোথায় গিয়েছিলে? এরা কারা?

আবার ও টর্চলাইট নিক্ষেপ করলেন তিনি মাহিদের দিকে। মাইশা লাইট সরিয়ে বলল

‘ উনি মিঃ মাহিদ। আমার সাথে কিছুক্ষণ আগেই পরিচয় হয়েছে। উনি মনে করেছিলেন আমি সুসাইড করতে যাচ্ছি তাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন।

বলেই মাইশা একগাল হাসলো। মুহিব উদ্দীনের চেহারা দেখে মনে হলো তিনি মাইশার কথায় বেশ ভয় পেয়ে গেছেন। মাহিদের কাধেঁ হাত রেখে বললেন, ধন্যবাদ তোমাকে।

মাহিদের কপালের ভাঁজ কুঁঞ্চিত হলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই মুহিব সাহেব মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। মাইশা পিছু ফিরে সবার উদ্দেশ্যে বলল

‘ আমাদের বাসা ওখানেই। আপনারা একদিন আসবেন কিন্তু। মিঃ মাহিদ আসবেন প্লিজ।

মাহিদ মাথা দুলালো। মিনিট খানেক যেতেই নিরুদ্দেশ হলো বাবা মেয়ে। মাহিদের বন্ধু তপু বলল

‘ রেলিঙের সাথে ঝুঁকে মাছ দেখছিলো? অদ্ভুত মেয়ে না? আমার ও মনে হয়েছিল সুসাইড কেস।

মাহিদ কোনো কথা বললো না। চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। তখনি নীরার ফোন লাগলো। ফোন তুলে কানে নিল মাহিদ। নীরা ওপাশ থেকে চিন্তিত গলায় বলল

‘ এতক্ষণে তোর ফোনটা খোলার সময় হলো? আমার তো টেনশন হয়। নাকি তুই জেনেশুনে এমন করিস?

‘ ফোন অনেক আগেই খুলেছি মা।

‘ আর আমাকে ফোন করার প্রয়োজন মনে করলি না? বাসায় কখন ফিরছিস।

‘ দশ মিনিট।

‘ আয়।

ফোন রাখলো মাহিদ। বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরলো। নীরা ছুটে এল সে বাড়িতে পা রাখতেই। দৌড়ে এসে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। মাহিদ অবাক হলো। মাকে ও দুহাতে আগলে ধরে বলল

‘ কি হয়েছে?

‘ কিছুক্ষণ আগেই টিভিতে দেখালো। ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে গাড়ির নিচে চাপা পড়েছে। তুই কেন অত দূরে দূরে যাস মাহি? তুই দূরে কোথাও গেলে আমার কোনো কাজেই মন বসেনা। চৌধুরী বাড়ি থেকে আসার পর থেকে তোকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি। তোর কোনো সাড়াশব্দ নেই। মায়ের সাথে কেউ অমনটা করে মাহি? তোর আব্বা তো মেজাজ দেখাচ্ছে আমার উপর। তোর আব্বার ফোন ও তুলবি না?

‘ বাড়ি ফিরছি তাই আর ফোন করিনি। টায়ার্ড লাগছে। গোসল নেব।

নীরা ছেলেকে ছাড়লো। চোখের কোণায় তার জল জমা পড়েছে। মাহিদ বলল

‘ মা!!!

নীরা তাড়াতাড়ি চোখ মুছলো। বলল

‘ যেখানে যা আমাকে বলে যাবি। ফোন তুলবি। বল।

‘ আচ্ছা ঠিক আছে।

মুনা পেছনে দাঁড়িয়ে বলল

‘ তোর সবাইকে টেনশন দিতে ভালো লাগে? সকাল সকাল চলে গেলি! ওখানে ও ইশু বারাবার জিজ্ঞেস করলো, তোর বড়আব্বা জিজ্ঞেস করলো। তোর বাপ এসে নীরুর উপর চেঁচামেচি করলো। তুই কি এখনো ছোটটা আছিস? যথেষ্ট বড় হয়েছিস। আর এমন করলে হাত পা ভেঙে বাড়িতে বসিয়ে রাখবো।

মুনার কথায় হাসলো মাহিদ। ক্লান্তিতে জড়ানো মলিন হাসি।

‘ আবার হাসিস?

মাহিদ মুনার কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মুনা বলল

‘ সর, ঢং করিস না।

মাহিদ আবার ও হেসে বলল

‘ আমার ব্যারিস্টার বাপের উচিত তোমাদের ফাইলপত্র গুছানোর কাছে লাগিয়ে দেওয়া। নইলে তোমাদের এই বেকার চিন্তা কখনোই দূর হওয়ার নয়। আ’ম ফিট এন্ড ফাইন। অলওয়েজ বি পজেটিভ বড়মা।

‘ সর, তোর পজেটিভগিরি তোর কাছে রাখ।

তখনি মুনার ফোন বেজে উঠলো। মাহিদ দেখলো ফোনের স্ক্রিনে লিখা

‘ মা।

মাহিদ ফোন ধরলো। কানে দিতেই পরীর ফোন থেকে ছিকু বলল

‘ নানু মিহি চকাল চকাল চলি গিছে কেন? এখুনো আসেনা কেন? ছিকুর দুক্কু লাগে কেন?

মাহিদ হেসে ফেলল। বলল

‘ মিহি যাবেনা।

ছিকু মাহিদের গলা শুনে লাফ দিয়ে উঠলো। রেগে বলল

‘ কেন? আসবে না কেন? মিহির জুন্য মন পুড়ে কেন? মিহি আসেনা কেন?

মাহিদ বলল

‘ চুপ থাক শালা। ফোন রাখ। তোর বাড়ি বিয়া আমি কি করুম ? আমার কি তোর বাড়ি আওনযাওন ছাড়া আর কোনো কাজ নাই। ফোন রাখ বাপ।

‘ মিহি চবচময় পুঁচা পুঁচা কথা বলে কেন? বিটিফুল কথা বলেনা কেন?

নীরা মুনা হেসে ফেলল। মাহিদ বলল

‘ তুই বাপ ফোন রাখ৷ পারলে এইখানে আয়। তোর মাইর জমা পড়তাছে। আয়, মার খায় যা। আয়।

‘ কেন? মার জুমা পড়ে কেন? মিহি ওমন করে বলে কেন?

মাহিদ ফোন মুনাকে ধরিয়ে দিয়ে ঘরে চলে গেল। মুনার সাথে কথা বললো ছিকু। মিহি আর যাবেনা শুনে কান্নাকাটি জুড়ে দিল। ঠোঁট টেনে টেনে কাঁদলো। কেউ আর শান্ত করাতে পারলো না। শেষমেশ ইশা ঘুম পাড়ালো বহুকষ্টে। পিহু এসে কোলে করে নিয়ে গেল তার ঘরে।

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

পিহু তখন পড়ছিল। বিছানায় আলুথালু হয়ে ঘুমাচ্ছে ছিকু। আদি রুমের দরজা ঠেলে উঁকি দিল পিহুর ঘরে। পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। আদি বলল,

‘ আসতে পারি।

‘ ইয়েস পাপা।

‘ ছিকুসোনা ঘুম।

‘ হ্যা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

আদি প্রথমেই ছিকুর কাছে গেল। কপাল ঢেকে রাখা চুল সরিয়ে কপালে গালে চুমু দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। পিহু এসে তার সামনে দাঁড়ালো। বলল,

‘ কিছু বলবে পাপা?

আদি মিঠে হাসলো। পিহুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল

‘ না এমনিই এলাম। ইদানীং কাজের চাপে আছি। তোমাদের সময় দিতে পারছিনা। পড়াশোনা ঠিকঠাক?

‘ হ্যা।

ইশা এসে বলল

‘ আপনি এখানে? আমি আপনাকে খুঁজছিলাম।

‘ মিস করছিলে?

ইশা ভুরু কুঁচকে তাকালো। বেয়াদব লোক। মেয়ের সামনে আর কথা পেল না। ইশাকে ওভাবে তাকাতে দেখে হেসে ফেলল পিহু। আদি তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে বলল

‘ মিষ্টি দেখোতো আমার পিচ্চিটা কত বড় হয়ে গেল। ওকে আমি এইদিন হাঁটা শেখালাম, কথা বলা শেখালাম। কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ি ও চলে যাবে। কি আশ্চর্য!

ইশা একটুখানি হাসলো। পিহু আদির বুকে গুঁজে যেতে যেতে মিনমিন করে বলল

‘ বিয়ে করব না আমি।

আদি বলল

‘ কি বললে?

‘ নাহ কিছুনা।

আদি বলল

‘ আমার কাছ থেকে কোনোকিছু লুকোবেনা পিহু। মনে আছে ছোটবেলার কথা, একটা ছেলে তোমাকে টাকায় ফোন নাম্বার লিখে দিয়েছিল আর তুমি সেটা এনে আমাকে দিয়েছিলে। কত হাসা হেসেছি আমরা সেটা নিয়ে। আমি তোমার যেমন বাবা তেমন বন্ধু ও৷ আমার কাছ থেকে কোনোকিছু লুকোবে না।

ইশা চিন্তিত গলায় বলল

‘ কি লুকোবে?

‘ যদি ওর বিয়েতে অমত থাকে। কিংবা,,

ইশা বলল

‘ অমত। পিহুর কি,,

পিহু বলল

‘ না অমত নেই। শুধু আমি আরেকটু সময় চাই।

আদি বলল

‘ তাতে সমস্যা নেই। আমরা এখন এগোচ্ছি না। তুমি যত ইচ্ছা তত সময় নাও। নিনিতের ব্যাপারে কি বলবে তুমি?

পিহু চুপসে গেল। পরপর ছোট্ট করে বলল

‘ উনি ভালো মানুষ পাপা।

‘ ঠিক। আর ভালো মানুষরাই ভালো রাখতে জানে।

পিহু চুপ করে থাকলো। আদি তার মুখ আগলে ধরে বলল

‘ তাহলে বলো আমার সিদ্ধান্ত ভুল?

পিহু চেয়েই থাকলো। সে কথার জবাব না দিয়ে কাঁপা গলায় বলল

‘ বিয়ে না করলে কি হয় পাপা?

আদি হেসে ফেলল। এই মেয়েটা কোথায় বড় হলো আজও?

‘ মা বাবা চিরকাল থাকবে না তোমার পাশে। আমরা ছাড়া তুমি তো অসহায়। কোনো মা বাবাই চায় না তাদের সন্তান অসহায় থাকুক। সবসময় চাইবে একটা ভালো মানুষ সন্তানের পাশে থাকুক। আগলে রাখুক। আমরা ও এটাই চাই। আমরা চাই তোমরা ভালো থাকো। সুখে থাকো।

পিহু আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। দীর্ঘশ্বাস লুকোলো। মনে মনে বলল,

‘ আমায় ক্ষমা করো পাপা। আমি সত্যিটা তোমায় বলতে পারলাম না । আমি যাকে চাই সে আমায় চায় না। সে আমায় চাইলে আমি সবকিছু ডিঙিয়ে তাকে চাইতাম তোমার কাছে। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি পাপা, আমার কাছে এসে যদি সে কখনো ধরা না দেয় আমি কখনো তার কথা কাউকে জানতে দেব না। না তাকে না পাওয়ার কষ্ট কাউকে বুঝতে দেব। আমি খুব ভালো থাকবো। ভালো থাকার চেষ্টা করব৷ আমি সুখী হবো।

নিজের অজান্তে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে আদির শার্ট ভিজিয়ে দিল পিহু। আদি আর ইশা একে অপরের দিকে অন্যমনস্ক হয়ে তাকালো।

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

পিহুর ঘরের দরজা বন্ধ। ইশা, আদি, পরী রাইনা দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিন্তু পিহুর দরজা খোলার নামগন্ধ নেই। ইশা ভয়ে কেঁদে ফেলল। ধুপধাপ দরজা ধাক্কানোর একটা পর্যায়ে মাহিদ এল। ইশা বলল

‘ মাহি পিহু দরজা খুলছেনা। কেন খুলছেনা কিচ্ছু জানিনা। তুই কিছু একটা কর না।

মাহিদ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। আফি এসে বলল

‘ এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা। দরজা ভাঙতে হবে দরকার হলে। আমি লোকজন ডেকে আনি।

বলেই আফি দৌড়ে চলে গেল। আদি দরজা ধাক্কাতে বলল

‘ পিহু কি করছ ওখানে? দরজা খোলো।

পরী মাহিদকে ধাক্কা দিয়ে বলল

‘ ভাই তুই কেন কিচ্ছু করছিস না?

মাহিদ তারপর ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অনেক লোকজন এল। দরজা ভাঙার প্রয়াস চললো। আধঘন্টা লাগলো দরজা পুরোপুরি ভাঙতে৷ তারপর যখন দরজা ভেঙে সবাই ভেতরে ঢুকলো তখন হাত পা শীতল হয়ে গেল সবার। ইশা চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়লো সাথে সাথে। মেয়ের ঝুলন্ত লাশ দেখে চোখে অন্ধকার দেখলো আদি। বোবা হয়ে গেল যেন। মাহিদের পা কাঁপছে। মনে হচ্ছে মাথার উপর পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে। দম বন্ধ লাগছে। নিঃশ্বাস আটকে আসছে। যন্ত্রণায় বুকে কাঁটার মতো বিঁধছে। থেকেথেকে নিঃশ্বাস আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে শ্বাস আসছে যাচ্ছে। যেন আর কিছুক্ষণ সে। তারপর খুব ভয়ানক কিছু একটা হয়ে যাবে। কান চেপে ধরলো মাহিদ। ঝুলন্ত শরীরটার দিকে পাথরের দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে রইলো মাহিদ। তারপর গগন কাঁপানো চিৎকার দিয়ে বলল

‘ পিহু,,,,,,,

সাথে সাথে কে যেন খিকখিক করে হাসা শুরু করলো। মাহিদ পেছন ফিরে দেখলো আজকের মেয়েটিকে। মাইশা!
মাহিদ গর্জন করে বলল

‘ কেন মজা করছেন আমার সাথে?

হাসির আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা গেল না।
সাথে সাথেই তন্দ্রাভাব কেটে গেল মাহিদের। অন্ধকার ঘরে নিজেকে আবিষ্কার করলো মাহিদ। লাফ দিয়ে নামলো খাট থেকে। ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে খুলে দিল দরজা। বুক ধড়ফড় করছে এখনো। হাত পা কাঁপছে। কপালটা ভিজে উঠেছে ঘামে। ঘড়ির কাঁটায় সময় দেড়টা। জগ থেকে ঢেলে পানি খেয়ে গলা ভিজালো মাহিদ। এটা কেমন দুঃস্বপ্ন!

ফোন হাতে নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে পিহুর ফোনে কল দিল। পিহু তুললো না। দশ বারো বার দিয়ে আর দিল না মাহিদ। কয়েক মিনিট পর আবার দিল। পনের বারের মাথায় পিহু ফোন তুললো ঘুমঘুম চোখে। ভারভার গলায় বলল

‘ কে?

মাহিদ চুপ করে থাকলো। গলার আওয়াজটা শুনে তার শান্তি লাগছে। পিহু আবার জিজ্ঞেস করলো

‘ কে?

উত্তর এল না। পিহু ডিমলাইটের আলোয় উঠে বসলো। চোখ কচলে ফোনের দিকে তাকিয়ে নাম্বার দেখে হতভম্ব হলো। বারবার চাইলো। বিশ্বাস হলো না। তাই বলল

‘ মাহিদ ভাই?

মাহিদ এবার জবাব দিল,

‘ হু৷

পিহুর গলা ধরে এল। নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে কঠিন গলায় বলল

‘ কি চাই এতরাতে?

‘ একটা অনুরোধ করি?

‘ বলো।

‘ তুই কথা বলতে থাক । আমি ঘুমায়। ফোন রাখিস না৷

চলবে,

#মন_গোপনের_কথা
#পর্ব_১১
লেখনীতে, পুষ্পিতা প্রিমা

বাকি রাতটা পিহুর নির্ঘুম কাটলো। এটা সত্যিই মাহিদ ভাই ছিল? ফজরের আজানের কিছু আগেই ফোন বিচ্ছিন্ন হলো। পিহু বিচ্ছিন্ন করেনি। হয়ত ফোনে ব্যালেন্স শেষ হয়েছিল। কে জানে?
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গেল সে। ফজরের নামাজকালাম আদায় করে পড়তে বসলো। পরে রান্নাঘরে উঁকি দিতেই দেখলো রাইনা আর ইশা রান্নাঘরে। পিহুকে দেখে রাইনা বলল

‘ এখানে কি?

‘ আমি কি একটু হেল্প করব বড়মা?

‘ না। গিয়ে পড়তে বোস। ডাকলে নাশতা করতে আসিস।

পিহু আবার চলে গেল। মাহিদ ভাইকে এখন একটা কল দেওয়া যাবে? কেন কাল অত রাতে ফোন করেছিল সেটা জানার জন্য। নাহ পিহুর মত পাল্টে গেল। মাহিদ ভাইকে নিশ্চয়ই ভূতে পেয়েছে তাই অত রাতে ফোন করেছিল।
পিহু আর ভাবলো না।
ছিকু ব্রাশ হাতে নিয়ে পিহুর ঘরে ঢুকে এল। ব্রাশ ধরে রেখে মেঝেতে বসে কাঁদোকাঁদো গলায় চোখ কচলাতে কচলাতে বলল

‘ মিহি এখুনো আচেনি কেন? মিছিমিছি বলেছে কেন?

পিহু তার সামনে গিয়ে বসলো। বলল

‘ মিহি কাল ফোন করেছিল কলিজা। আপনার কথা জিজ্ঞেস করেছে। মিহি খুব শীঘ্রই আসবে।

ছিকু খুশি হয়ে গেল।

‘ পিহু মিছিমিছু বলে না?

‘ না বলে না।

ছিকু একগাল হাসলো। পিহু ব্রাশ নিয়ে ফেলে বলল

‘ আসেন ব্রাশ করিয়ে দিই।

ছিকু তার কোলে উঠলো। পিহু তাকে নিয়ে বেসিনের সামনে দাঁড়ালো। আয়নায় দেখিয়ে দেখিয়ে ব্রাশ করিয়ে দিতে দিতে বলল

‘ কলিজা তো বড় হচ্ছে। একা একা ব্রাশ করা শিখতে হবে তো।

‘ পিহু বিয়ে হবে কেন? পিহু চলে যাবে কেন?

পিহু ব্রাশ থামিয়ে বলল

‘ কে বলেছে এসব কথা?

‘ পরী। পরী ইমুন বলেছে কেন?

পিহু চুপ করে থাকলো। বলল

‘ পিহু চলে গেলে আপনার কান্না পাবে?

ছিকু মাথা দুলালো। পিহু তার গালে আদর দিয়ে বলল

‘ পিহু কলিজাকে সাথে করে নিয়ে যাবে।

ছিকু দারুণ খুশি হলো। পিহু কল ছেড়ে তাকে কুলি করালো। মুখ ধুয়ে দিল। হাত পা ধুঁয়ে দিল। তারপর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে দিতে দিতে বলল

‘ চলেন ব্রেকফাস্টে যাই।

ছিকু মাথা নাড়লো। টেবিলের কাছাকাছি যেতেই সবাইকে দেখে ছিকু বলল

‘ গুড মুর্নিং।

সবাই জবাব দিল সাথেসাথে। আফি বলল

‘ আমার ভাইজান আইছে। এইদিকে আসো ভাই। আমার পাশে বসো।

পিহু তাকে নিয়ে গিয়ে আফির পাশে বসিয়ে দিল। নিজে ও চেয়ার টেনে বসলো। আফিকে বলল

‘ বড়পাপা তুমি নাকি কাল লনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলে? আমাকে বড়মা সব বলেছে।

আফি রাইনার দিকে তাকালো। বলল

‘ মিছা কথা আম্মাজান। ওই মহিলার প্যাঁচ লাগোন ছাড়া কোনো কাজ নাই আর।

পিহু বলল

‘ আমি ডাক্তারি পড়ছি। তুমি আমাকে একদম শেখাতে আসবেনা। তোমার চেহারায় লিখা আছে যে তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খাও।

আফি মুখে হাত দিল। আদি রেহান হেসে উঠলো। ইশা আর রাইনা ও ঠোঁট টিপে হাসলো। ছিকু কপাল কুঁচকে রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল

‘ দাদাই সিগিট খায় কেন? ছিকুকে দেয় না কেন?

রেহান বলল

‘ ওসব পঁচা খাবার পাপা। ওসব খায় না।

‘ দাদাই খায় কেন? দাদাই পুঁচা কেন?

আফি টেবিল থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল

‘ করুম না নাশতা। কিছু খামু না। সবাই মজা লয় আমারে নিয়া।

পিহু টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আফিকে পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে বলল

‘ কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

সবাই হেসে উঠলো। ছিকু ও গালে হাত দিয়ে খিকখিক করে হেসে বলল

‘ দাদাই রাগ করিচে কেন?

পিহু আফিকে ধরে এনে টেবিলে বসিয়ে দিল। বলল

‘ বড়পাপা শোনো। ধূমপান যেমন তোমার জন্য ক্ষতিকর তেমন আমাদের সবার জন্য। প্রত্যক্ষ ধূমপানের চাইতে পরোক্ষ ধূমপান বেশি ক্ষতিকারক। তোমার আমাদের সাথে অনেকদিন বাঁচতে ইচ্ছে করেনা?

‘ করে।

চট করে নিচের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল আফি। পিহু বলল

‘ তাহলে আর কখনো ওসব খাবে না।

আফি চুপচাপ খেতে লাগলো। পিহু বলল

‘ কিছু বলছ না কেন?

আফি ঢকঢক করে পানি খেয়ে বলল

‘ আম্মারে ওসব না খায় চলতে পারিনা। পেট ফুলে যায়। আমারে মাফ করো। কিন্তু আমি তোমারে কথা দিতাছি এই বাড়ির আশেপাশে দাঁড়াইয়্যা ও আমি সিগারেট খামু না।

বলেই টেবিল ছাড়লো আফি। পিহু বলল

‘ অল্প করে খেলে কেন?

‘ পরে খামু। তোমরা খাইয়্যা লও।

রাইনা বিড়বিড়য়ে বলল

‘ বাজে লোক কোথাকার।

___________________

হসপিটালের সামনেই দাঁড়িয়েছিল পিহু আর নিশিতা। দুজনের হাতে আইসক্রিম। সুযোগ পেলেই দুজন আইসক্রিম খেতে মেডিক্যাল থেকে বেরিয়ে আসে। আজ পিহুর কাছে আদির টিফিনবাক্স। আদি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়ায় ইশা টিফিন রেডি করে দিতে পারেনি। তাই পিহুই নিয়ে এসেছে। আইসক্রিম খাওয়া শেষ হলো পিহু আর নিশিতার। পিহু বলল

‘ তুই ও কি যাবি?

‘ চল।

টিফিনবাক্সটি নিয়ে হসপিটালের ভেতর ঢুকে পড়লো দুজন। একটি মেয়ে তড়িঘড়ি করে ছুটছে এদিকওদিক। একটা নার্সের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল হাতের সব রিপোর্ট। নার্সটি বললেন

‘ এটা হসপিটাল ম্যাম। এভাবে দৌড়া উচিত নয়।

সরি ‘ বলেই মেয়েটি রিপোর্টগুলো কুড়াতে লাগলো। নার্সটি ও গুছিয়ে দিল অনেকগুলো। পিহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে পরখ করলো। পড়নে কালো সাদা মিশেল লং কামিজ আর জিন্স। গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়েছে। গোলগাল মুখের মেয়েটি দেখতে সুন্দর। মিষ্টি। পিহু এগিয়ে গেল। বলল

‘ হাই! আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি?

মেয়েটি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

‘ হাই। আমি ডক্টর আদি চৌধুরীর চেম্বারটা কোথায় খুঁজে পাচ্ছি না। খুব দরকার। আমার আব্বার অবস্থা খুব খারাপ। প্লিজ হেল্প মি।

পিহু বলল

‘ আদি চৌধুরী! আসুন আমার সাথে। রিল্যাক্স। কিছু হবে না আপনার আব্বার।

মেয়েটি যেন পিহুর কথায় একটু শান্তি পেল। বলল

‘ আপনি মেডিকেল স্টুডেন্ট?

‘ ইয়েস।

পিহুর পিছু পিছু মেয়েটি আদির চেম্বারের দিকে এগিয়ে গেল।
ভেতরে পেশেন্টের সাথে কথা বলছে আদি। সেক্রেটারি রাজীব বলল এখন যাওয়া যাবে না ম্যাডাম। ভেতরে পেশেন্ট আছে।
পিহু টিফিন বাক্স দেখিয়ে বলল

‘ এখন ও যেতে পারব না রাজীব ভাই?

রাজীব মাথা চুলকালো। বলল

‘ ওরকম নিয়ম নেই ম্যাডাম।

পিহু বলল

‘ ঠিক আছে। আমরা একটু ওয়েট করি।

পেশেন্ট বের হলো প্রায় দশ বারো মিনিট পরে। মেয়েটি পায়চারি করতে লাগলো এদিক ওদিক। পিহু বলল

‘ আরেকটু অপেক্ষা করুন।

পেশেন্ট যেতেই রাজীব পিহুকে ঢুকতে দিল। পিহু ঢুকেই বলল

‘ পাপা রাজীব ভাইকে কেমন নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছ? যে আমাকে ও এলাউ করছেনা।

রাজীব মাথা চুলকালো। আদি তার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বলল

‘ এজন্যই তো আমি ওকে বেশি বিশ্বাস করি। বলো কি হয়েছে?

পিহু মেয়েটিকে ডাকলো। বলল

‘ আসুন।

মেয়েটি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল

‘ আপনি ডক্টর আদি চৌধুরীর ডটার?

পিহু হেসে বলল

‘ ওসব পরে কথা হবে। আগে আসুন।

মেয়েটি ঢুকেই আদিকে সালাম দিল। বলল

‘ আমাকে চিনতে পেরেছেন স্যার?

আদি সালামের জবাব দিয়ে গ্লাসের পানিতে চুমুক দিল। বলল

‘ মাইশা জান্নাত! কেমন আছ তুমি? সব ঠিকঠাক?

‘ আমি ঠিক আছি। কিন্তু আমার আব্বার কাল রাতে বুকে ব্যাথা ভীষণ রকম বেড়ে গিয়েছে। আপনি এই সব চেকআপ করাতে বলেছিলেন।

আদি হাত বাড়িয়ে রিপোর্ট গুলো নিল। বলল

‘ আগে কোথায় ট্রিটমেন্ট হয়েছিল?

‘ সিলেটের ডক্টর হাবীব মাসুদের কাছে। ওনার রিপোর্ট এবং প্রেশক্রিপশন গুলো ও দেওয়া আছে। আপনি দেখুন।

আদি রিপোর্ট পিহুর দিকে ঠেলে দিল। বলল

‘ বুঝতে পারছ কেসটা?

পিহু সবগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখলো।
বেশ কিছুক্ষণ পর বলল

‘ ইয়েস পাপা।

আদি হাসলো। বলল

‘ তাহলে নেক্সট স্টেপটা তুমি সেড়ে ফেল। নিনিত যাবে কিছুক্ষণ পর। তোমার বাবা কোন কেবিনে আছে মাইশা?

‘ জ্বি স্যার, চারশ পাঁচে।

পিহু রিপোর্টগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল। নার্স সিরিঞ্জ আর ঔষধপত্র নিয়ে পিহুর পেছন পেছন ছুটলো। পিহু মাইশার বাবার কেবিনে ঢুকে প্রথমে ইনজেকশন পুশ করলো। নিশিতা তখনি এল। বলল

‘ তুই ডাক্তারি শুরু করে দিয়েছিস?

‘ পাপার ডিরেকশন।

‘ তাহলে তো ঠিকই আছে।

কিছুক্ষণ পর নিনিত এল। পিহুকে বলল

‘ অল রাইট?

‘ ইয়েস স্যার।

‘ ওকে। তুমি যেতে পারো। বাকিটা আমি দেখব।

পিহু মাথা দুলিয়ে বের হয়ে গেল। মাইশা তার পেছন পেছন দৌড়ে এসে বলল

‘ এক্সকিউজ মি!

পিহু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। হেসে বলল

‘ ইয়েস।

‘ আমি থার্ড ইয়ারে। প্রানীবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছি।

পিহু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

‘ নাইস টু মিট ইউ।

মাইশা হাত মিলিয়ে বলল

‘ নাইস টু মিট ইউ ঠু। সি ইউ এগেইন।

পিহু মাথা নাড়লো। নিশিতা বলল

‘ আমরা এর হসপিটালের আশেপাশেই থাকি রোজ। যখন তখন দেখা হতেই পারে। তুমি কি আইসক্রিম খাওয়া পছন্দ করো?

মাইশা মাথা দুলালো।

‘ ইয়েস।

‘ তাহলে তো ছক্কা। চলো তাহলে আইসক্রিম খেয়ে আসি। চলো চলো।

মাইশাকে টেনে নিয়ে গেল নিশিতা। পিহু মনে মনে বলল

‘ এই পাগলটা ও পারে।

তিনজন মিলে আইসক্রিম খেল। পিহু টাকা দিতে গেল। মাইশা দিতে দিল না। বলল, আমাকে হেল্প করার জন্য আজ আমি খাওয়ায়। অন্যদিন আপনাদের কাছ থেকে খাব।

নিশিতা বলল

‘ ধুর মিয়া আপনি আপনি বাদ দাও। আমরা কি বেডামানুষ নাকি?

মাইশা হেসে ফেলল নিশিতার কথায়। বলল

‘ তুমি দারুণ মজার।

তিনজনই আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এল। গল্পে মজে গেল তিনজনই । মাইশা কথা বলার এক ফাঁকে আর ও দু তিনটি আইসক্রিম কিনে নিয়ে এল দৌড়ে গিয়ে। নিশিতা আর পিহু ভুরু কুঁচকে তাকালো। মাইশা আইসক্রিম নিয়ে দৌড়ে আসলো। বলল

‘ ওয়েট।

পিহু এপ্রোনের পকেটে হাত পুড়ে হেঁটে হেঁটে মাইশার কান্ড দেখছে। এই মেয়ে আইসক্রিম নিয়ে যাচ্ছে কোথায়? মাইশা একদৌড়ে গিয়ে রাস্তা পার হলো। ছুটতে ছুটতে রাস্তার ওপাশে গিয়ে পার্কিং লটের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। আর কিছুদূর হেঁটে গিয়ে দাঁড়ালো কাঙ্ক্ষিত মানুষগুলোর সামনে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল

‘ মিঃ মাহিদ! আইসক্রিম।

মাহিদ এমন রৌদ্রদুপুরে মাইশাকে দেখে চিনতে না পেরে চোখ সরু করে তাকালো।

‘ চিনতে পারছেন না? আমি মাইশা। কাল যে আমাদের দেখা হলো। সন্ধ্যায়। মনে পড়েছে?

মাহিদ বলল

‘ ওহ আপনি? এজন্যই চেনা চেনা লাগছিল। আসলো আবছা আলোয় চেহারা পুরোপুরি খেয়াল করিনি তাই। সরি।

‘ কিন্তু দেখুন আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। এই নিন আইসক্রিম।

বাকি দুজনকে ও আইসক্রিম দিল মাইশা। মাহিদ আইসক্রিম নিয়ে বলল

‘ থ্যাংকস। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?

‘ আমি? আমি আমার আব্বাকে নিয়ে হসপিটালে এসেছি। আব্বা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আম্মাকে তো বাড়িতে থাকতে হয় তাই আমাকেই সবকিছুতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। ভাইয়া তো বাইরের দেশে থাকে।

মাহিদ ঠোঁট গোল করে বলল

‘ ওহহ। আপনার আব্বা এখন কেমন আছেন?

‘ ডক্টর আদি চৌধুরীর কাছে এলেই ভালো হয়ে যায় আব্বা। ওনি রোগ বুঝেন ভালো। আমি ওনার কাছে এর আগেও ট্রিটমেন্ট নিয়েছি।

‘ গুড।

মাইশা ঘাড় ঘুরিয়ে পিহু আর নিশিতার দিকে তাকালো। নিশিতা বলল

‘ ওটা মাহিদ ভাই না? মাহিদ ভাইয়ের বান্ধবী ও আছে। আর কত কি দেখবোরে ভাই।

‘ বেশি কৌতূহল দেখাস তুই । ওসব জেনে আমাদের কি? থাকলে থাকতেই পারে।

বিরক্তি ঝড়ে পড়লো পিহুর কন্ঠে। মাইশা হাত নেড়ে ডাকলো পিহু আর নিশিতাকে। মাহিদ কপাল কুঁচকে রাস্তার ওপাশে দাঁড়ালো। পিহুর হাত ধরে টেনে টেনে নিশিতা চলে এল। বলল

‘ পিহু আসতেই চাইছেনা। টেনে নিয়ে এলাম।

মাইশা মাহিদকে বলল

‘ ওরাও আমার বন্ধু। ওর নাম নিশিতা আর ওর নাম পিহু।

নিশিতা বলল

‘ ধুর মিয়া কারে কি বলো? আমরা এই ছেড়ার চৌদ্দ গুষ্ঠির খবর জানি। আর সে ও জানে।

মাইশা অবাক হয়ে বলল

‘ আপনারা একে অপরকে চেনেন? ওয়াও।

নিশিতা বলল

‘ মাহিদ ভাই তোমার মেয়ে বান্ধবী ও আছে? ও আল্লাহ! আর কি কি দেখার বাকি আছে ভাই।

মাইশা খিক করে হেসে ফেলল। বলল

‘ আমরা অল্প সময়ের পরিচিত। কালকেই পরিচিত হলাম।

পিহু রাস্তায় গাড়ি দেখছে। একটা দুইটা তিনটা,,,

মাইশা বলল

‘ তাহলে এখন আসি মিঃ মাহিদ। পরে দেখা হবে।

মাহিদ সায় জানালো। মাইশা বলল

‘ আপনি কি কম কথা বলেন?

পিহু চাইলো একটু অবাক হয়ে। নিশিতা ও। মাহিদ ভাই কম কথা বলে? আর কি কি শোনা লাগবে? কি কি? আজকে কার মুখ দেখে দিন শুরু হলো কে জানে?

মাহিদ মাথা নাড়ালো। হ্যা না কিছু বুঝা গেল না। মাইশা বলল, ওকে। টা টা। পরে দেখা হচ্ছে।

বলেই চলে গেল সে হসপিটালের দিকে। পিহু আর নিশিতা ও তাকে বিদায় দিল। মাইশা যেতেই মাহিদ অর্ধেক খাওয়া আইসক্রিমটা নিশিতার মাথায় ছুঁড়ে মারলো। বলল

‘ এত ফটরফটর করিস কেমনে বাপ? মুরগীর লাস্ট পিস খাইছোস আজ?

নিশিতা মাথা চেপে ধরে বলল

‘ তোমার জীবনে ও বউ জুটবে না মাহিদ ভাই। পিহু দেখলি। ও আল্লাহ!

পিহু বলল

‘ ভালো হয়েছে।

লাবীব আর তপু চলে গেল মাহিদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। পিহু নিশিতাকে বলল

‘ তুই যাহ। আমি আসছি। আমার কথা আছে।

নিশিতা হেলেদুলে হেঁটে চলে গেল। নিশিতা যেতেই মাহিদ বাইকের উপর বসে পা দুলাতে লাগলো। সাথে গালে শিঁষ বাজাতে লাগলো। পিহু বলল

‘ গতরাতে ফোন দিয়েছিলে কেন?

‘ দুঃখে।

পিহু নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো যথাসম্ভব। বলল

‘ তুমি আসলেই পাগল।

‘ আর কি?

‘ জঘন্য। অসহ্য।

‘ জানি।

পিহুর রাগ বাড়লো তরতরিয়ে।

‘ কেন ফোন দিয়েছ সেটা বলে দিলেই তো হয় । আসলেই তোমার মুখ দিয়ে ভালো কথা শুধু আমার জন্য বেরোয় না।

‘ এই যাহ তো বাপ। মাথা গরম করিস না। যাহ। তোর লগে আমার কি? আমি কি তোর জামাই লাগি যে তোরে রাত বিরেতে খুশির ঠেলায় কল দিমু? কল ভুলে চইলা গেছে। ভুলে। এইবার যাহ।

‘ ভুলে?

মাহিদ আর জবাব দিল না।

‘ ভুলে কি অন্য নাম্বার ছিল না? আমার ফোনে কেন কল গেল? সত্যি করে বলো।

মাহিদ লাফ দিয়ে নামলো বাইক থেকে। হাত ঝেড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বলল

‘ আমার যারে ইচ্ছা তারে ফোন দিমু। তাতে তোর বাপের কি বাপ? তুই তোর মতো থাক। আমারে আমার মতো থাকতে দে। তোর ব্যাপারে আমি নাক গলায় না, তুইও আমার ব্যাপারে নাক গলাবিনা।

‘ আমাকে ফোন দিবে আর আমি জিজ্ঞেস করতে পারব না?

‘ পারবি না। তোর লগে আমার কি বাপ? আমার কাছ থেইকা একশ হাত দূরে থাকবি। খবরদার ভুলে ও উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবি না। আমি তোরে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই। আউট।

পিহু বরফ কঠিন চোখে চেয়ে রইলো। মাহিদ মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ালো। পিহু দাঁতে দাঁত চেপে চোখের জল চেপে ধরে রেখে বলল

‘ আমার জীবনে সবচাইতে বেশি আঘাত দেওয়া মানুষটা তুমি মাহিদ ভাই। বিনা কারণে তুমি এমন করো আমার সাথে। তুমি যদি মনে করো আমার সাথে এসব করে তুমি শান্তি পাও। ভালো থাকো। তাহলে মনে রেখো আমার মতো দ্বিতীয়টি তুমি কোথাও পাবে না। শান্তি পাবে না তুমি। ভালো থাকবে না।

মাহিদ জবাব দিল না। সে বুঝে পায় না সে ভালো কথা বললে ও কি, না বললে ও কি? তার কথা এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কি দরকার। সে সিরিয়াস কেউ নয়। তুচ্ছ একজন। এককোণায় পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট। চোখে না পড়া অণুজীব। চোখে ও পড়ে না এমন। এত তুচ্ছ মানুষের কথায় এত আঘাত পাওয়ার কি দরকার? পাগলের কথায় ও চোখে জল আসে নাকি?

গাড়ি থামিয়ে রিপ অনেকক্ষণ দুজনকে দেখছিল।

পিহু কব্জি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে রাস্তা পার হলো। নিজের কাছেই নিজেই প্রতিজ্ঞা করলো, এই ছেলেটার কাছে তার সব প্রত্যাশা শেষ আজ থেকে।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে