মন গহীনে তুমি পর্ব-০৬

0
849

#মন গহীনে তুমি
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৬
আপু বললো, তোর ভাইয়ার তো আর বেশিদিন ছুটি নেই তাই বিয়েটা ২/৩ দিনের মধ্যেই হবে। তোর সময় না থাকলে সাদামাটাভাবে বিয়েটা হউক। পরে সময় বুঝে সবকিছু করা যাবে। কাজী সাহেব সাথে যাবে বিয়েটা পরাবে তারপর আমরা মেয়ে নিয়ে আসবো।

– হঠাৎ আপু এমন কিছু বলবে তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না৷ ভেবেছিলাম যে করেই হোক বিয়েটা আটকাতে পারবো৷ আজকে বাসায় এসে এটা নিয়ে কথাও বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই তারা আমাকে চমক দিয়ে দিলো। বিয়ের সব প্রস্তুতি শেষ তাদের অথচ আমি কিছুই জানিনা। ১/২ দিনের ভিতরে তারা সবকিছু শেষ করেছে। এখন তাদের কিভাবে বলবো, “আমি এই বিয়েটা করতে চাইনা ” সেটাই মাথায় আসছেনা।

একদিকে আমার পরিবার অন্যদিকে ওই মেয়েটা। কি করলে যে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবো তাও জানিনা৷ যা করার তা তো আমাকেই করতে হবে। মেয়েটা নিজে থেকে কিছুই করতে পারবেনা। সবাইকে দেখাবে সে বিয়েটা করতে চায় অথচ আমাকে প্যাড়া দিচ্ছে বিয়েটা ভাঙার জন্য।

———

কায়রার বাবা ওকে বললো, আদ্রিশ খুবি ভালো একটা ছেলে। আমি জানতাম তোরও আদ্রিশকে পছন্দ হবে। ওর সাথে থাকলেই বুঝা যায় তুই কতটা খুশি। এখনই একে অপরের সাথে এমন ভাবে কথা বলছিস মনে হয় তোরা কত আগে থেকে জানিস। আমি ভেবেছিলাম, হয়তো আমি ভুল করছি৷ তোর সাথে চুক্তি করে তারপর বিয়েটা দিচ্ছি। কিন্তু আমি জানতাম তুই আদ্রিশকে পছন্দ করবি।

– কায়রা হাসবে না কাঁদবে বুঝতেছে না। সবাই সবকিছু পজিটিভ ভাবে নিচ্ছে। একবার নেগেটিভ ভাবে নিলে সব কিছু ঠিক হয়ে যেতো। এখন যদি ওর বাবাকে সত্যিটা বলে দেয় তাহলে ওর বাবা অনেক কষ্ট পাবে৷ এমনিতেই তার হার্টের সমস্যা আছে। তাই যা করার ওই অভদ্র ছেলেটাকেই করতে হবে। তাকেই এই বিয়েটা ভাঙতে হবে।

তাকে একটা কল দেওয়া উচিত। সে তো বললো আজকে বাসায় গিয়ে সবাই বলবে। দেখি কি হলো।

কায়রা আদ্রিশকে লাগাতার কল দিয়ে যাচ্ছে আর আদ্রিশ কেঁটে দিচ্ছে। এটা দেখে আদ্রিশের পরিবার হাসতে লাগলো। তারা বুঝতে পেরেছে কায়রা কল দিচ্ছে। আদ্রিশ সবার সামনে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে তাই কেঁটে দিচ্ছে।

– এখনই একমুহূর্ত কথা না বলে থাকতে পারেনা। বিয়ের পর তো আমাদেরকেই ভুলে যাবে।

আদ্রিশ কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। কায়রার উপর অনেক রেগে আছে আদ্রিশ। ও ভেবে পাচ্ছেনা কিভাবে ওর পরিবারকে বলবে তার উপর কায়রা এখন কল দিলো। সবাই তো আরও উল্টা- পাল্টা ভাবলো।

আদ্রিশ কল দেওয়ার পর কায়রা বললো, এত বার কল দিলাম কেঁটে দিলেন কেন? এতবার যখন কল দিতেছি তখন তো বুঝা যায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু।

– যখন আমি বারবার কল কেঁটে দিলাম তখন তো বুঝা যায় আমি কথা বলার পরিস্থিতিতে নাই। তারপরও লাগাতার কল দিলেন কেন? আপনার কি কমন সেন্স বলতে কিছু নেই।

– আপনি কেন বুঝলেন না গুরুত্বপূর্ণ কিছু হবে তাই তো কেঁটে দেওয়ার পরও কল দিচ্ছে।

– আপনি কেন বুঝলেন না গুরুত্বপূর্ণ কিছু হবে তাই কেঁটে দিচ্ছে। আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলছিলাম। সবাই বুঝতে পেরেছে আপনি কল দিয়েছেন। কি লজ্জারে বাবা। আপনার জন্য সবসময় আমি এমন সিচুয়েশনে পরি।

– আজব! আমি কি জানতাম নাকি আপনি পরিবারের সাথে কথা বলতেছেন।
– কেঁটে দেওয়ার পরও যে বুঝতে পারেনা তার আর যাই হোক কমন সেন্সটা নাই।

– দেখুন মোটেও আমাকে এসব বলবেন না। আপনার দোষ এটা।

– মেয়েদের এই একটা অভ্যাস যখন কথায় পারবেনা তখন বলে দিবে আপনার দোষ। তা এখন বলেন কি সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা যার জন্য এতবার কল দিলেন।

– আপনি বলছিলেন বাসায় গিয়ে সবাইকে বলবেন। বলেছিলেন কি?

– আমি বলার আগেই তারা আমাকে চমক দিয়ে দিলো।

– মানে?

– তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১/২ দিনের ভিতরেই সাদামাটাভাবে বিয়েটা হবে। কাজী সাহেব যাবেন বিয়েটা হবে তারপর আমারা খাবো৷ তারপর মেয়ে নিয়ে আসবো।

– আপনি কিছু বললেন না কেন?

– কি আর বলবো। তারা সবাই বুঝতে পেরেছে আমরা একে অপরকে কতটা পছন্দ করি। আপনি হুটহাট সবার সামনে এরকম করেন তাইতো তারা এমন ভেবেছে।

– দেখুন এখন সব দোষ আমাকে দিবেন না। আপনারও সমান দোষ। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে তারপরও আপনি এই বিয়েটা ভাঙার কোন চেষ্টা করছেন না তাতেই বুঝা যায় আপনি কেমন। আপনি এতদিন আমার সাথে গেইম খেলেছেন। আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।

– আর আমি মনে হয় আপনাকে বিয়ে করার জন্য নাচতেছি৷ আমারও আপনাকে বিয়ে করার কোন ইচ্ছে নেই। দরকার হলে সারাজীবন বিয়ে না করে থাকবো। তারপরও আপনাকে বিয়ে করবো না।

– তাহলে বিয়েটা ভাঙছেন না কেন?

– ভাঙাটা যদি এত সহজই হত তাহলে আপনিই এটা করতেন৷ আমার সিচুয়েশনটা একবার বুঝার চেষ্টা করেন৷

– আপনার সিচুয়েশন বুঝতে বুঝতে বিয়েটা হয়ে যাবে। আর আপনি এটাই চান। আপনার মত অভদ্র ছেলের চিন্তা-ভাবনাই এমন।

দিলাম কল কেঁটে। সবসময় আমাকে অপমান করে কথা বলবে৷ নিজেকে যে কি মনে করে। মেয়ে মানুষ বলে কিছু বলতেও পারছিনা৷ একবার একটা প্রশ্ন করেই যে হাল হয়েছে। কিছু না বুঝে বলবে।

মেয়েটা আবার কল দিলো৷ রিসিভ করার পর বললো, আমার কথা শেষ হওয়ার আগে আপনি কল কেঁটে দিলেন কেন?

– আপনি আমাকে অপমান করে কথা বলবেন আর সেগুলো আমাকে শুনতে হবে?

– হ্যা শুনতে হবে৷ দোষ করলে তার ফল ভোগ করতে হবে এটাই স্বাভাবিক।

– আপনি নিজে বলেন আর নিজেই শুনেন আমি বাধ্য নই।

– কালকে যেনো আমি শুনি বিয়েটা হবেনা।

কায়রা কল কেঁটে দেওয়ার পর আদ্রিশ ভাবতেছে, কি বলবে সবাইকে? সবাই যখন জানতে চাইবে কেন বিয়েটা করবো না তখন কি বলবো?

যদি বলি মেয়েটাকে পছন্দ হয়নি তাহলে এটা কেও বিশ্বাস করবেনা৷ তখন অনেক গুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। একটা উপায় আছে যেটা বললে ওর পরিবার বিয়েটা ভেঙে দিবো। শুধু বলতে হবে মেয়েটার চরিত্র খারাপ৷ ওর অন্য আর একটা রিলেশন আছে। কিন্তু এটা যদি তারা বিশ্বাস না করে তখন কি হবে৷ কায়রাকে তো তারা অনেক ভালো জানে আর বিশ্বাসও করে৷

চলবে—

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে