#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৬ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
” আপনি! ”
স্বল্প চেনা মানুষটি অপ্রত্যাশিত ভাবে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে। বিস্ময়ে বাকশূন্য হৃদি! দুর্বল শরীরটা যেন বেশ কেঁপে উঠলো। ঝাপসা প্রায় দৃষ্টি। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে মানুষটি। ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে মেয়েগুলো। একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে সাহস সঞ্চয় করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষটির নোংরা নজর ঘুরে বেড়াচ্ছে সুন্দরী ললনাদের কমনীয় দেহের ভাঁজে ভাঁজে। হৃদিও তন্মধ্যে একজন। ওড়নাবিহীন শরীর। হাত-পা বাঁধা। তা সত্ত্বেও জড়োসড়ো হয়ে নিজেকে ওই লোলুপ দৃষ্টি হতে আড়াল করার চেষ্টা করে চলেছে হৃদি। জুনায়েদ শিকদার তা লক্ষ্য করে হাসলো। কেমন বি শ্রী হাসি। ঘৃণায়-বিদ্বেষে মুখ কুঁচকে গেল ইরহাম পত্নীর। সন্নিকটে এলো জুনায়েদ। বসলো একটি মেয়ের শরীর ঘেঁষে। কিশোরী মেয়েটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে কেঁপে উঠলো। সিক্ত হলো নয়ন। একটুখানি সাহায্যের জন্য চোখ দু’টো এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলো। নিরূপায় বাকিরা। চোখের তারায় অসহায়ত্ব। জুনায়েদ মেয়েটির ভীত ভাব সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে হঠাৎই তার গলদেশ বরাবর নাক ডুবিয়ে দিলো। লম্বা করে নাসিকা গ্ৰন্থিতে টেনে নিলো মেয়েলি সুবাস। ভয়ে-অপমানে মেয়েটি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। কঠিন হলো হৃদির মুখভঙ্গি। চরিত্রহীন লোক একটা। কিশোরী মেয়েটির ভীত মুখ দেখে বেশ বিনোদন পেল জুনায়েদ। গলদেশে চুম্বন এঁকে অকস্মাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সে হাস্যধ্বনি বদ্ধ ঘরে এক নি-ষ্ঠুর দা”নবের হুঙ্কারের ন্যায় প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। দেয়ালে দেয়ালে আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে হাস্য ধ্বনি। ভয়ে রক্তশূন্য অবস্থা মেয়েগুলোর। ব্যতিক্রম একমাত্র এক অনন্যা। নাম যার হৃদি! জুনায়েদ তখন দাঁড়িয়ে। হেসে চলেছে মেয়েগুলোর ভীতিগ্ৰস্থ অবস্থা দেখে।
” এই তাহলে আপনার আ আসল রূপ? ”
দুর্বল স্বরে বলে উঠলো হৃদি। হাসির শব্দ থেমে গিয়েছে। কিন্তু হাস্য আভা এখনো লেপ্টে অধরে। জুনায়েদ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো ওর পানে। চকচক করে উঠলো চোখ। দুই হাত দু’দিকে প্রসারিত করে গর্বিত ভঙ্গিতে বললো,
” ইয়েস। দিস ইজ দ্য রিয়েল মি। জুনায়েদ শিকদার। ”
কুকর্ম করে গর্ব বোধ হচ্ছে! দৃষ্টি সরিয়ে নিলো হৃদি। জুনায়েদ হাঁটি হাঁটি পায়ে এগিয়ে এলো। সম্মুখে বসলো হাঁটু গেড়ে। হৃদি ঘৃণায় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় যথাসম্ভব পিছিয়ে গেল ইঞ্চি খানেক। ওর দেহজ সৌন্দর্য্য নোংরা দৃষ্টিতে উপভোগ করতে করতে জুনায়েদ বললো,
” এমপির এলেম আছে বলতে হবে। কয় মাসের মধ্যেই ** বানিয়ে ছেড়েছে। ** ম্যান। ”
জঘন্যতম বাক্যে হৃদির কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। লজ্জা, অপমানে র’ক্তিম হলো মুখ। ধিক্কার জানালো অভিব্যক্তিতে। জুনায়েদ হাসলো। বক্র হাসি।
” কি বেব? মুখ কুঁচকে ফেলছো কেন? ভুল কিছু বলেছি কি? তোমার ** চেঞ্জ হয়নি বুঝি? স্বামী সোহাগ করেনি? ”
” চুপ করুন আপনি। নোংরা কথা বলে আর নিজেকে নিচে নামাবেন না। এই আপনার উচ্চ শিক্ষার পরিচয়? ”
কম্পিত কণ্ঠে জোরপূর্বক বললো হৃদি। কণ্ঠস্বর জড়িয়ে আসছে। দুর্বল শরীরে এত কথা বলা যেন দুষ্কর। বাঁধা হাত-পা দিয়ে দেহের ঊর্ধ্বভাগ আবৃত করার বৃথা চেষ্টা চালালো। জুনায়েদ শব্দ করে হেসে উঠলো।
” ইয়্যু আর সো সে** বেব! দেখলেই কেমন ** হয়। ”
নামমাত্র উচ্চ শিক্ষিত জুনায়েদের ভাষাশৈলী অত্যন্ত নোংরা। জঘন্য। যে কোনো মেয়ের জন্য অপমানজনক। লজ্জায়-ঘৃণায় হৃদির চোখে পানি জমলো। মাটির অভ্যন্তরে লুকিয়ে যেতে চাইছে তনুমন। এত জঘন্য শব্দ! ছিঃ!
” বেবস্! এখানে কেন এসেছো জানো তো? ”
হৃদি তখন আনত বদনে বসে। এই নোংরা লোকটার সঙ্গে বিন্দুমাত্র কথা বলতে ইচ্ছুক নয়। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে জুনায়েদ একপেশে হাসলো। উঠে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
” বেবি’স। আর মাত্র দু’টো দিন। এনজয় করে নাও। এরপর তোমাদের ঠাঁই হতে চলেছে ইউরোপ। আহা! সে* সে* স্লা* ইন ইউরোপ! লা জবাব! ”
উচ্ছ্বসিত বদনে বললো জুনায়েদ। তার ইংরেজি ভাষায় বলা অনাকাঙ্ক্ষিত বাক্য হয়তো সকলে বুঝতে পারেনি। তবে হৃদি সহ যারা বুঝতে পারলো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো তাদের চোখমুখে। তাদেরকে ইউরোপে পা চা র করা হবে! নোংরা মেয়ে হিসেবে জীবন আরম্ভ হতে চলেছে। ইয়া খোদা! চোখ ফেটে পানি গড়িয়ে পড়ছে। হৃদি ভাঙা স্বরে কিছু বলতে চাইলো। তবে শুনলো না জুনায়েদ। শিষ বাজাতে বাজাতে আনন্দিত চিত্তে সেথা হতে প্রস্থান করলো। পুনরায় বদ্ধ হলো দ্বার। বন্দী হয়ে পড়ে রইলো ওরা এগারোজন। হৃদি অস্ফুট স্বরে স্বামীকে ডেকে উঠলো,
” কো থা য় আপনি ইরহাম? ”
.
নিজের ঘরে বন্দী রূপে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে রুবেল। শহরের অন্যতম কুখ্যাত অপহ:রণকারী এ মুহূর্তে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। হাত-পা, মুখ, শরীরের দৃশ্যমান সকল অংশে আঘাতের চিহ্ন। পুলিশের বেদম মা র বলে কথা। জায়গায় জায়গায় ছাপ পড়ে গেছে। চাঁদবদনখানির নকশা উল্টে গেছে যেন। ব্যথায় জর্জরিত হয়ে কাতরাচ্ছে রুবেল। তবুও বিন্দুমাত্র দয়া দেখাতে নারাজ সম্মুখে কাঠের চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি। কনুই ঠেকে চেয়ারের হাতলে। দু হাত মুঠো করে তার ওপর থুতনি স্থাপিত। সুগভীর নীলাভ গহ্বর আজ ওই দু চোখে। ভেতরকার সমস্ত অস্থিরতা লুকিয়ে সে নিরেট খোলসবন্দী। তার সমস্ত অবয়বে যন্ত্রণা, ভয়ের ছাপ। একান্ত হৃদরাণীর জন্যে। বাহ্যিক ভাবে সে এখন আপাদমস্তক রোবট। এক যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। দিনরাত এক করে নাওয়াখাওয়া ভুলে যে ব্যস্ত প্রিয় নারীর সন্ধানে। শহর ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও এখন খোঁজ চলছে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। নিখোঁজ তার হৃদি। আজ এক চিলতে আশার আলো দেখে এখানে উপস্থিত হয়েছে। বন্ধু তাঈফ এবং তার সাগরেদরা আচ্ছামতো খাতিরযত্ন করেছে রুবেলের। এখনো মুখে কুলুপ এঁটে রুবেল। একই সুরে গান গাইছে। সে কিছু জানে না। সে এই কি ড ন্যা পে জড়িত নয়।
বন্ধুর ভেতরকার অবস্থা অনুধাবন করে তাঈফ এগিয়ে গেল রুবেলের কাছে। হাঁটু গেড়ে বসে বাঁ হাতে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে চেপে ধরলো। ডান হাতে চেপে চোয়াল। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো রুবেল। হিসহিসিয়ে শুধালো তাঈফ,
” ভাবীকে কোথায় রেখেছিস? বল। নইলে দানা ভরে দেবো মগজে। বল হারা*। ”
রুবেল বেদনা মিশ্রিত কণ্ঠে একই কথা বললো,
” আ আমি জানি না। করিনি আমি। আ আমি.. ”
আর বলা হলো না। অকস্মাৎ এক ভয়াবহ কাণ্ড! ঝড়ের গতিতে চেয়ার ছেড়ে অতি নৈকট্যে পৌঁছালো মানুষটি। তাইফের কোমরে সংযুক্ত পি:স্তল হোলস্টার হতে পি:স্তল বেদখল হলো। রুবেলের কণ্ঠনালী বরাবর পি:স্তল গেঁথে ধরেছে ইরহাম। পি শা চ ভর করেছে বুঝি এ মানবদেহে। র-ক্তলাল দু চোখের সফেদ অংশ। ন্যায় অন্যায়ের উর্ধ্বে তার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা। প্রিয়তমার বিরহে অত্যন্ত প*রাক্রমশালী দেহায়বয়। রুবেল চোখের সামনে মৃ ত্যু দেখতে পাচ্ছে। অতি ভয়ে দু চোখ ছাপিয়ে অশ্রু নামলো। অতীব শীতল কণ্ঠে থেমে থেমে শুধালো ইরহাম,
” কাজটা কে করেছে? ”
তাঈফ স্তব্ধ বন্ধুর অপ্রত্যাশিত রূপ দেখে! অর্ধাঙ্গীর বিরহে শান্ত পুরুষটি এতখানি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে! কারোর প্রাণ নিতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না! রুবেল শঙ্কায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” আ। আমি নাহ্! ”
কণ্ঠনালীতে শক্ত করে গেঁথে গেল পি:স্তলের মুখ। চামড়ার আবরণ ছিঁড়ে কণ্ঠনালী ছিন্নভিন্ন করে দেবে কি! পুনরায় হিমশীতল কণ্ঠে শুধালো ইরহাম,
” কে করেছে? ”
” ন নরেন করতে পারে। দক্ষিণাঞ্চলের ন। নরেন। ”
কণ্ঠনালী ফুঁড়ে এতটুকু শব্দ বের হলো। মৃ-ত্যুভয়ে চক্ষু বুজে রুবেল। ইরহাম নভোনীল চোখে তাকালো বন্ধুর পানে। নিঃশব্দ আদেশটুকু ঠিক বুঝতে পারলো তাঈফ। বন্ধুর কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার প্রয়াস চালালো। ত্বরিত উঠে দাঁড়ালো ইরহাম। হাঁটা আরম্ভ করলো ডান দিকে। চলতি পথে পি-স্তল ছিটকে পড়লো মেঝেতে। সহসা শক্তপোক্ত এক ঘু:ষি পড়লো দেয়ালে। হাতের চামড়ায় লাল আভা ছড়িয়ে। আঁতকে উঠলো তাঈফ। ছুটে গেল বন্ধুর পানে। বন্ধুকে শান্ত করার কোনোরূপ উপায় না পেয়ে অস্থির সে। কি করে শান্ত করবে এ পা-গলটাকে! বিড়বিড়িয়ে অসহায় কণ্ঠে আওড়ালো,
” ভাবী কোথায় আপনি? এ পা”গলটার জন্য হলেও ফিরতে হবে আপনায়। ”
চলবে.
#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_১৭ [ প্রাপ্তমনস্কদের জন্য ]
আঁধারিয়া চাদরে আচ্ছাদিত ধরিত্রী। নিজ ঘরে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ইনায়া। দু গালে অশ্রু রেখা। চোখমুখে বিষন্নতা। কোলে বসে হৃদির আদুরে বিড়াল পকিমন। অবুঝ প্রাণীটিও বোধহয় তার বন্ধু’র অনুপস্থিতি অনুধাবন করতে পেরেছে। তাই তো দু’দিন ধরে বড় শান্ত। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছে না। বাড়ি জুড়ে ছোটাছুটি করছে না। মাঝেমধ্যে মন্থর পায়ে হৃ’হামের ঘরে যাচ্ছে। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে মৃদু স্বরে ডেকে উঠছে ‘ ম্যাঁও ‘। কোথাও কেউ নেই। তার ডাক শুনে ছুটে এলো না হৃদি। কোলে নিয়ে আদর করে দিলো না। পেল না আহ্লাদ। আবার ডেকে উঠলো ‘ ম্যাঁও’। অবুঝ প্রাণীটির করুণ স্বর বড় হৃদয়বিদারক ছিল! শোকের বাড়িতে পকিমন এখন একা। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে শুধু যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে মালিহা কিংবা ইনায়া তাকে আগলে ক্রন্দনে ভেঙে পড়ে। বিড়ালটি দেখে তা। মৃদু স্বরে ডেকে ওঠে ‘ ম্যাঁও ‘।
বিছানায় হেলান দিয়ে দুঃখ বিলাস করছিল ইনায়া। তখন ক্লান্ত দেহে ঘরে এলো রাহিদ। মেয়েটি খেয়াল করেনি। সে তো ব্যস্ত আপন দুঃখে। হঠাৎ ঘোর কেটে গেল। ডান কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বসেছে অর্ধাঙ্গ। তার রাহি। পকিমন একবার ওদের দেখে আবার ইনুর কোলে শুয়ে রইলো। মেয়েটি স্বামীর পানে তাকালো। করুণ কণ্ঠে থেমে থেমে শুধালো,
” খোঁজ মেলেনি তাই না? ”
চোখ বুজে নেতিবাচক মাথা নাড়ল রাহিদ। না। ভাবীর খোঁজ মেলেনি। ইনুর কপোল ছুঁয়ে অশ্রু নামলো। ভেজা কণ্ঠে ভাইয়ের খোঁজ নিলো,
” ভাইয়া কোথায়? ”
” ফেরেনি। ভাবীর খোঁজ করে চলেছে। ”
নিম্ন অধর কা’মড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে ইনায়া। আল্লাহ্ তার ভাই ভাবীকে আলাদা করে এ কি পরীক্ষা নিচ্ছে! কোথায় হারিয়ে তার প্রিয় ভাবী! প্রিয়তমা বিহীন তার ভাইয়ার অবস্থা যে অত্যন্ত করুণ! রাহিদ স্ত্রীর কাঁধে আলতো পরশ এঁকে সোজা হয়ে বসলো। বললো,
” আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। খাবার রেডি কর। খেয়ে আবার বেড়োতে হবে। ”
বলে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রাহিদ। এগিয়ে গেল ওয়াশরুমে। ইনায়া অশ্রুসজল নয়নে ঘড়ির পানে তাকালো। রাত এগারোটা বাজে। খেয়ে মানুষটা আবার বেড়োবে। কখন ফিরবে ঠিক নেই। আর ভাইয়া? সে খেয়েছে কিছু? এখনো তো বাড়ি ফিরলো না। ভাবীর বিরহে ভাইয়া তার কেমন পাথর হয়ে গেছে। নামমাত্র জিন্দা লা শ হয়ে বেঁচে আছে।
” ভাবী! ”
অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো ইনায়া। ঝাপসা হয়ে আসছে নেত্র জোড়া। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এর আনন্দ আজ হারিয়ে কোথা!
.
ষাট ঘন্টার বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে নিখোঁজ হৃদি। সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট এখন। টয়োটা প্রিমিও’টি ছুটে চলেছে খুলনা-বাগেরহাট হাইওয়ে ধরে। পিছু পিছু আসছে আরো দু’টো গাড়ি। যেথায় রয়েছে বন্ধু তাঈফ এবং দেহরক্ষীবৃন্দ। তিনটে গাড়ি একত্রে ছুটে চলেছে। গন্তব্য বাগেরহাট। ‘নরেন’ এর ডেরা। রুবেলের কাছ থেকে নরেন নামটি জানতে পেরে একটুও দেরী করেনি ইরহাম। বিশ্বস্ত সোর্স কাজে লাগিয়ে রাতের মধ্যেই নরেনের বায়োডাটা বের করে ফেলেছে। দিনমণির কিরণে পৃথিবী আলোকিত হতেই রওনা হয়েছে ইরহাম। অপেক্ষা কিছু সময়ের। মুখোমুখি হতে চলেছে সে এবং নরেন। চোখেমুখে তার কঠোরতা। দপদপ করে চলেছে শিরা উপশিরা। আশার আলো লুকিয়ে বক্ষ মাঝারে।
” তোমার ইরহাম আসছে! একটুখানি ধৈর্য ধরো জান। ”
বৃদ্ধি পেল গাড়ির গতিবেগ। দক্ষ হাতে ক্ষি”প্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে টয়োটা প্রিমিও। তাঈফ ফোনে কাউকে নির্দেশনা দিতে ব্যস্ত। দলবেঁধে আসছে তারা। নরেনের পালানোর সমস্ত পথ বন্ধ।
.
শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি! ঘামে জবজবে দেহ। আতঙ্কিত মেয়েগুলো দেয়াল কিংবা পাশের জনের সাথে সেঁটে। থরথর করে কাঁপছে তনুমন। অগণ্য প্রহর শেষে মুক্তির এক চিলতে আলো দেখা দিয়েছিল। তা যে এভাবে ভণ্ডুল হবে জানা ছিল না। তেজস্বী চাহনিতে তাকিয়ে হৃদি। চোখের সামনে এলোপাথাড়ি মা র খাচ্ছে এক কিশোরী কন্যা। ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে বসছে নয়টি মেয়ে। হৃদি চিৎকার করে চলেছে। থামতে বলছে ওই অমানবিক গু:ণ্ডাটিকে। কিন্তু কে শুনছে তার কথা? মেয়েটিকে ইচ্ছামতো মে রে র-ক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে দিলো ওরা দু’জন। একটুও দয়ামায়া দেখালো না। বরং উপস্থিত সকলকে সাবধান করে দিলো ক্রো-ধান্বিত স্বরে,
” ** এইডাই শেষবার। আর একবার যদি এমন দুঃসাহস দেহি.. জ্যা ন্ত ক:বর দিমু। মনে থাহে য্যান। ”
আঙ্গুল তাক করে শাসিয়ে গেল একজন। হৃদি তীব্র প্রতিবাদ করে উঠলো। দুর্বল কণ্ঠে যথাসাধ্য তেজ প্রকাশ করে বললো,
” তোরা আস্ত অমানুষ। এভাবে মেয়েটাকে মা-রলি? আল্লাহ্ সব দেখছে। সব। তোদের একটাকেও ছাড়বেন না উনি। ”
মেজাজ বিগড়ে গেল। তেড়ে যেতে উদ্যত হলো সে’জন। কিন্তু বাঁধাপ্রাপ্ত হলো। পাশের জন তার হাত ধরে বাঁধা দিয়েছে। সে খ্যাক খ্যাক করে হেসে বললো,
” আস্তে ভাই। এইডা দামী মাল। বুঝোস না ক্যান? আঁচড় লাগান যাইবো না। প্রাইস কুইমা যাইবো তো। ”
বি শ্রী হাসিতে মেতে উঠলো তারা। আসলেই তো। এমপি পত্নী হলো তাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। এর গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড় লাগানো যাবে না। নইলে ইউরোপিয়ান সাহেবরা যে ন্যায্য দাম দেবে না। হৃদি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। মমতাময়ী চাহনিতে তাকিয়ে রইলো নি’র্যাতিত কিশোরী মেয়েটির পানে। সামান্য ভুলের জন্য এ কি অবস্থা! নাক ঠোঁট ফেটে র ক্ত বের করে হচ্ছে। মাটিতে গুঙিয়ে চলেছে সে। হৃদির চোখে পানি জমলো। সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলো মহান রবের নিকটে। ততক্ষণে গু ণ্ডা দু’টো ওদের সবার হাত-পায়ের বাঁধন পরীক্ষা করে সেথা হতে প্রস্থান করেছে। পালানোর সব রাস্তা বন্ধ। কেন হলো এমনটি? এমনটি তো হওয়ার কথা ছিল না…
_ _
বিগত দশ ঘণ্টা ধরে পালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল হৃদি। ক্রমাগত চেষ্টা করতে করতে পেছনে বাঁধা দু হাতের বাঁধন একটু আলগা হলো। অতিরিক্ত প্রচেষ্টায় চামড়া চিঁ’ড়ে বেরিয়ে এলো র ক্ত। তাতে ভ্রুক্ষেপ না করে মুক্তির আশায় জ্বলজ্বল করে উঠলো দু চোখ। ফিসফিসিয়ে সঙ্গীদের মুক্তির সংবাদ জানালো সে। খুশিতে আটখানা সকলে। চোখে বাঁধভাঙা অশ্রু। অবশেষে মুক্তির স্বাদ মিলবে! কিন্তু কি থেকে কি করবে! ভাবনায় মশগুল হয়ে অতিবাহিত হলো কয়েক ঘন্টা। চট করে মস্তিষ্কে কড়া নাড়লো একটি বুদ্ধি। হৃদির থেকে মাত্র তিন হাত দূরে পেছন দিকে ছিল কিশোরী মেয়েটি। বুদ্ধিমতী হৃদি শ’ত্রুদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগিয়ে সে মেয়েটির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হলো। মেঝেতে পিচ্ছিল খেয়ে খেয়ে পৌঁছেছিল। চতুরতার সহিত একে অপরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে বসলো তারা দু’জন। পেছন দিকে বাঁধা হাত। হৃদি ও মেয়েটি আস্তে ধীরে সময় নিয়ে একে অপরের হাতের বাঁধন খুলতে সক্ষম হলো। ওরা চালাকি করে হাতে আলগা ভাবে রশি জড়িয়ে রাখলো। শত্রুদের ধোঁ’কা দেয়ার জন্য। তবে বাকিদের হাতের বাঁধন খোলার সুযোগ হয়ে উঠলো না। ওভাবেই ওরা দু’জন অপেক্ষা করতে লাগলো সঠিক সময়ের জন্য। তবে তাদের আশায় যে এভাবে কেরোসিন পড়বে ভাবতেও পারেনি ওরা।
দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী আজও বদ্ধ ঘরে টহল দিতে এলো একটা গু:ণ্ডা। ওদের হালচাল নিরীক্ষা করে দেখলো। প্রতিদিনের ন্যায় আজও এক নারীদেহের কোমলতায় ডুব দিতে আনচান করছে মন। পুরোটা না হোক একটুখানি তো করা যেতেই পারে। লোকটি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। চঞ্চল পায়ে অগ্রসর হতে লাগলো হৃদির পেছন দিকে বসে থাকা কিশোরী মেয়েটির পানে। ভয়ে জমে গেল মেয়েটি। কেঁপে উঠলো কায়া। হৃদি ঠিক অনুধাবন করতে পারলো আসন্ন পরিস্থিতি। বারবার দুর্বল কণ্ঠে নিষেধ করতে লাগলো। কে শোনে কার কথা? কিশোরী মেয়েটির পিঠের কাছে মিথ্যামিথ্যি ভাবে বাঁধা দু’টো হাত কেঁপে চলেছে। জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছে দেহ। চোখে নোনাজল।
” অ্যাই! যাবি না ওর কাছে। চলে যা। চলে যা। ”
হৃদির নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে লোকটি বসলো কিশোরী মেয়েটির সম্মুখে। বি”শ্রীভাবে হেসে উঠলো। তার নোংরা চাহনি ঘুরে বেড়াচ্ছে কিশোরী দেহের যত্রতত্র। ভয়ে আতঙ্কে দিশেহারা মেয়েটি। হঠাৎই লোকটি সে মেয়ের অধরপানে ডুব দিলো। স্তব্ধ ওরা সকলে! এসব নতুন নয়। একমাত্র সোনার ডিম পাড়া হাঁস অর্থাৎ হৃদি ব্যতীত কম-বেশি সকলেই বিগত দিনগুলো ধরে এসবের শিকার হয়ে এসেছে। হৃদি অপমানে চিৎকার করে উঠলো। ছাড়তে বললো বাচ্চা মেয়েটিকে। কতই বা বয়স ওর? তেরো কি চৌদ্দ হবে। এই বয়সে এসব! কিশোরী মেয়েটি অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ আর সইতে পারলো না। স্নায়ু যু-দ্ধে পরাজিত হয়ে আলগা হাত দিয়ে লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললো নিজের থেকে। ঘৃণিত স্পর্শে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে কাঁদতে ছুটলো স্বল্প খোলা দরজার দিকে। লহমায় সব শেষ। হতবিহ্বল ওরা তাকিয়ে দেখলো নির্মমতা। অবুঝ মেয়েটি ঠিক ধরা পড়ে গেল।
_ _
এরপরের ঘটনা অজানা নয়। দু’জন পালোয়ান মতো গু”ণ্ডা ওকে বেদম প্রহার করে র-ক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে ফেলে দিলো। ত্বরিত নিরীক্ষা করে দেখলো আর কার হাত খোলা। না চাইতেও পরাজিত হলো হৃদি। অত্যাধিক দুর্বলতা ওকে হারিয়ে দিলো। অতি কষ্টে খোলা হাত দু’টো পুনরায় শক্ত রশির বন্ধনে আবদ্ধ হলো। পরাজিত হরিণীর ন্যায় নত হলো মুখ। নীরবে-নিঃশব্দে বিসর্জন দিতে লাগলো অশ্রুবিন্দু।
•
দিবাবসুর দীপ্তি সে ঘরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ। ভারী পর্দার আস্তরণ দিবাবসু’কে টেক্কা দিয়ে টহলরত। ঘরের মধ্যে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারছে না। জানালার বাইরে লুটোপুটি খাচ্ছে। হালকা কৃত্রিম আলোতে উজ্জ্বল ঘরটি। বিছানায় শায়িত এক দুর্বল দেহ। মমতাময়ী মালিহা আজ শয্যাশায়ী। ওনার শিয়রে বসে এজাজ সাহেব। দুঃখী বদনে আলতো করে স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। কন্যাসম পুত্রবধূর শোকে এ কি হাল হয়েছে তার সহধর্মিণীর? হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় বটে। এক অদ্ভুদ মায়াজালে জড়িয়ে ছিল যে তারা মা বেটি। তাদের দেখে যে কেউ বলবে এরা আপন মা ও মেয়ে। শাশুড়ি-বৌমা এ যেন কেউ ভাবতেও পারতো না। মালিহা যেন একটু বেশিই জড়িয়ে পড়েছিল পুত্রবধূর সঙ্গে। মাতৃহৃদয় তো! একজনের অনুপস্থিতি আরেকজনকে দিয়ে মিটিয়ে নিচ্ছিল। ভরাট করছিল তার শূন্য হৃদয়।
শিশু ইরহাম তখন আট বছরের। দ্বিতীয়বারের মতো মা হতে চলেছেন মালিহা। খুশির বন্যা বয়ে গেল ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ এ। গম্ভীর এজাজ সাহেবও অনাগত সন্তানের অপেক্ষায়। ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত খুশি। উদগ্রীব শিশু কন্যাকে কোলে তুলে আদর করার জন্য। বোন আসতে চলেছে। শিশু ইরুও বেশ খুশি। গর্ভকালীন সময়ের শুরু থেকেই মালিহা দুর্বল। শরীরে নানারকম জটিলতা। তবুও অনাগত কন্যার জন্য উনি সকল কষ্ট সহ্য করে যাচ্ছিলেন। তবে সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন কিছু। নির্ধারিত সময়ের কিছুদিন পূর্বে প্রসব বেদনা উঠলো। মালিহার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। অপারেশন টেবিলে যন্ত্রণায় ছটফট করে চলেছেন উনি। অনবরত মহান রবের সাহায্য চাইছেন। খিঁচুনি উঠে গেল শরীরে। দীর্ঘ সময় ধরে অস্ত্রপাচার সম্পন্ন হলো। ভূমিষ্ঠ হলো মৃ ত কন্যা সন্তান। এক গম্ভীর পিতা সেদিন মৃ ত কন্যাকে কোলে নিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল। মিনিট কয়েকের দুঃখ। অতঃপর স্ত্রীর কথা বিবেচনা করে নিজেকে শক্ত করে নিয়েছিলেন এজাজ সাহেব। মালিহা তখন কন্যা শোকে পাথর। এজাজ সাহেব, বালক ইরহাম, রাজেদা খানমের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে মাস ছয়েক বাদে সুস্থ হলেন মালিহা। উদগ্রীব হয়ে উঠলেন পুনরায় মা হওয়ার জন্য। দুর্বলতা এবং শারীরিক জটিলতার জন্য এজাজ সাহেব সে আবদারে প্রশ্রয় দিলেন না। অতঃপর বছর গড়ালো কয়েক। ইরহামের তখন বারো বছর বয়স। কন্যা সন্তানের মা হলেন মালিহা। সে কি আবেগপূর্ণ মুহূর্ত! নবজাতক ইনুকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলেন উনি। এজাজ সাহেবের চোখে খুশির অশ্রু। ইরহাম স্বভাবসুলভ গম্ভীর মুখে ছোট্ট বোনটার হাতে চুমু খেল। কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিলো প্রথমবারের মতো। তার বোন এসেছে!
ইরহামের জন্য পাত্রী দেখতে গিয়ে প্রথমবারের মতো হৃদির সঙ্গে সাক্ষাৎ। মমতাময়ী মালিহা এক দেখাতেই অদ্ভুদ ভাবে মেয়েটার মায়ায় জড়িয়ে পড়লেন। ওপর ওয়ালার ইশারায় চৌধুরী বাড়ির বউ হয়ে এলো হৃদি। মালিহা যেন ওনার হারিয়ে যাওয়া কন্যাকে ফিরে এলেন। নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি আদর-যত্ন করতে লাগলেন ওকে। ওনার মেয়ে ফিরে এসেছে। সে মা’কে ছেড়ে যায়নি। এই তো কি সুন্দর পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায়। মধুর কণ্ঠে ‘ মা ‘ বলে ডাকে। পরাণ জুড়িয়ে যায় ওনার। অর্থবিত্তে দাম্ভিক এজাজ সাহেব হৃদিকে পুত্রবধূ মানতে নারাজ। সময়ের পরিক্রমায় মেয়েটির আচরণ বদলে গেল। দিনরাত ওনায় ‘ পাপা ‘ ‘ পাপা ‘ বলে ডাকে। আপন কন্যার ন্যায় এটা ওটা আবদার করে। পাখির মতো কিচিরমিচির করে সারাক্ষণ। কি মিষ্টি করে হাসে। আজ যদি ওনার মেয়েটা বেঁচে থাকতো এমনই হতো তাই না? ইরহামের ত্রিশ চলছে। মেয়েটা তাহলে বছর বাইশের হতো। হৃদির চেয়ে বড়। অল্প একটু বড়। কিন্তু ঠিক এমন আদুরে হতো। তাই না? ওনার কাছে কতশত আবদার করতো। মেয়েরা তো বাবার রাজকন্যা হয়। ইনায়া ছোট থেকেই বাবার গম্ভীর স্বভাবের জন্য ভয় পায়। ওনায় কেমন এড়িয়ে চলে। তাই হৃদির আদুরে ব্যক্তিত্বে অল্পতেই ওনার হৃদয়ের বরফ গলে পানি হলো। অজান্তে উনিও হারিয়ে যাওয়া মেয়ের আসনে বসিয়ে ফেললেন ওকে। এভাবেই চলছিল দিন। ইরহাম, হৃদি, ইনায়া এবং ওনারা।
হঠাৎ এ কি হয়ে গেল! দমকা হাওয়ায় এলোমেলো হলো সাজানো গোছানো ঘর। কোথায় হারিয়ে আনন্দাঙ্গন এর আনন্দ উৎস! এজাজ সাহেব ম্লান বদনে স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিলেন। আল্লাহ্ ভরসা। ইনশাআল্লাহ্ সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘ আনন্দাঙ্গন ‘এ ফিরবে সে-ই পুরনো আনন্দমেলা।
চলবে.