মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি ২ পর্ব-৩৯ এবং শেষ পর্ব

0
593

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#অন্তিম_পর্ব [ প্রথমাংশ ]

আরেকটি নতুন দিনের সূচনা। দিনমণির দীপ্তিতে উজ্জ্বল ধরিত্রী। বাংলার মাটিতে আজ অকল্পনীয়, প্রবল এক বি-স্ফোরণের তুমুল দাবদাহ! একই দিনে চতুর্দিকে তোলপাড় সৃষ্টি করে মুখোশ উন্মোচিত হলো কিছু বিশিষ্ট জনের। সমাজের উঁচু স্তরের, মান্যগণ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত তারা। এতকাল ভালোমানুষীর মুখোশের আড়ালে লুকায়িত ছিল কালো অন্ধকারময় বি’ভৎস-জঘন্য রূপ। আজ জনসম্মুখে প্রকট তাদের সত্য রূপ। দেশের জনপ্রিয় এক সংবাদ চ্যানেলের লাইভে প্রকাশিত হলো তাদের বিরুদ্ধে সকল প্রমাণাদি। অজ্ঞাত পরিচয়ের কোনো এক সুশীল ব্যক্তি এ অসম্ভবকে সম্ভব করে তুললেন। লাইভে প্রদর্শিত হচ্ছিল একাধিক কুকর্মের প্রমাণ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মিডিয়ার দুর্দান্ত গতিশীলতার সুবাদে দেশের আনাচে কানাচে পৌঁছে গেল এই চাঞ্চল্যকর সংবাদ। দেশবাসী লাইভে সবটাই দেখলো। চমকালো! হলো হতবিহ্বল! একাধিক মামলা দায়ের করা হলো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। পুরনো যেসব কেস উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এতকাল মৃ•তপ্রায় ছিল আজ সেগুলোও নতুন রূপে উন্মোচিত হলো। গ্রেফতার হলো দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, কয়েকজন সুপারস্টার। পলায়ন করলো বেশ কিছুজন। তবে তাদের বিরুদ্ধে গ্ৰেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। খুঁজে পাওয়া মাত্রই গ্ৰেফতার করার নির্দেশ। এতসব প্রমাণের ভিড়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী খন্দকার আজগর মল্লিক ও ওনার একমাত্র পুত্র খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিক বাদ যায়নি কিন্তু। তাদের বিরুদ্ধেও বেশকিছু ভ’য়াবহ প্রমাণের সন্ধান মিলেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে খ্যাতিমান বিজনেস পার্সন হিসেবে পরিচিত রুদ্রনীল মল্লিকের গোপন কু”ৎসিত চেহারা অবশেষে প্রকাশ্যে এলো। প্রকাশ পেল নৃ-শংস কিছু অপরাধে যুক্ত থাকার তথ্য। রুদ্রনীলের বিরুদ্ধেও মামলা হলো। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ গোপন যোগাযোগ স্থাপিত হলো। যথাসম্ভব শীঘ্রই তারা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। ফিরিয়ে আনবে নিজ দেশের নি-ষ্ঠুর কীটকে। নিশ্চিত করবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
_

জহির আহসান। এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ওনার নামটিও ছিল চাঞ্চল্যকর ভাবে প্রকাশিত অপরাধীদের তালিকায়। বহু পূর্বেই ওনার নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মিসেস মালিহা চৌধুরী হ;ত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ খুঁজে যাচ্ছিল তাকে। অবশেষে আজ মিললো খোঁজ। এক অজ্ঞাত ফোনকলে পুলিশকে ওনার গোপন অবস্থান সম্পর্কে অবহিত করলো একজন। পুলিশ সে অজ্ঞাত ফোনকলে ঠিকানা পাওয়া মাত্রই পৌঁছে গেল মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলায়। সেখানকার এক বাড়ি থেকে জহির আহসানকে গ্ৰেফতার করা হলো। আশ্চর্যজনক ভাবে জহির পালানোর কোনোরূপ চেষ্টাও করলো না। একদম নিশ্চল রূপে ধরা দিলো। দু হাতে পড়ানো হলো হাতকড়া। পুলিশের সঙ্গে মন্থর পায়ে বেরিয়ে এলো অন্দরমহল হতে। বাহিরে আসতেই ধক করে উঠলো বুক। জ্ব’লছে চোখ। স্বল্প দূরত্বে ওই তো দাঁড়িয়ে আপন ভাগ্নে ইরহাম চৌধুরী। ওনার নির্দয় হাত দুটো দ্বারা এতিম হওয়া সে অভাগা ভাগ্নে। সবসময়ের মতো তুষারশুভ্র পোশাক জড়িয়ে দেহে। চোখে রিমলেস চশমা। চশমার অন্তরাল হতে ফিনকি দিয়ে বেড়োচ্ছে অবজ্ঞার উত্তপ্ত-বিষাক্ত তাপ। নভোনীল দু চক্ষে আকাশসম ঘৃণার আস্তরণ। যা মিটবে না কভু। শক্ত চোয়াল। কাঠিন্যতা উপস্থিত মুখশ্রীতে। মুষ্টিবদ্ধ দু হাত। পারছে না এখুনি ওনায় প্রাণে মে-রে দিতে। আফশোস! জহিরের চঞ্চল দৃষ্টি ইরহামের পাশে গেল। দীর্ঘকায়, সৌম্যরূপী মানুষটির বাঁ পাশেই দাঁড়িয়ে ওনার সহধর্মিণী। এককালের ভালোবাসা পল্লবী। জহিরের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিল স্ত্রীকে দেখে সে কতটা স্তব্ধ! কোনোমতেই এখানে স্ত্রীকে আশা করেনি সে। এই দুর্ভোগের সময় জীবনসঙ্গিনীর চোখে তীব্র বিরাগ দেখাও যেন মৃ•ত্যুসম যন্ত্রণার! বুকের বাঁ পাশে যন্ত্রণা হচ্ছিল। থমকে থমকে স্পন্দিত হচ্ছিল হৃৎপিণ্ড। পল্লবীর মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। হালকা জলের উপস্থিতি চোখে। কিন্তু বুক ভরা অপরিমেয় ঘৃণার স্তূপ। স্বামী হতে তাচ্ছিল্যের সহিত দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন উনি। ফিরে দাঁড়ালেন ইরহামের পানে।

এই অমানুষটির সুবিশাল অপরাধ সম্পর্কে পল্লবী এতদিন জ্ঞাত ছিলেন না। মালিহা হ•ত্যামামলার বিষয়টি ওনার থেকে গোপন করা হয়েছিল। তবে এক সপ্তাহ পূর্বে ইরহাম, রাহিদ দুই ভাইয়ের গুরুগম্ভীর কথোপকথন দুর্ভাগ্যজনক ভাবে উনি শুনে ফেলেন। তখনি জানতে পারেন অতি স্নেহের-ভালোবাসার একমাত্র ননদের করুণ-নৃশংস মৃ•ত্যুর পেছনে ওনার কু•লাঙ্গার স্বামীও জড়িত। দুঃখ-যন্ত্রণায় পুরো রাত কেঁদে কেঁদে পার করলেন তিনি। আফশোস হচ্ছিল। বড্ড অনুশোচনা হচ্ছিল। এর মতো জঘন্য লোকের জন্য কিনা উনি একদা নিজের পরিবারকে ত্যাগ করেছিলেন! ছিঃ! ধিক্কার নিজেকে! পল্লবী আজ শেষবারের মতো ভাগ্নের সঙ্গে এখানে এলেন। দেখে নিলেন ওই মুখখানি। একসময়ের প্রিয় মুখটি আজ সবচেয়ে অপ্রিয়। মৃ•ত্যুর পূর্বে কখনো না দেখা দিক এই মুখটি, এমন প্রার্থনাই মনে মনে করলেন।

” চল বাবা। ”

এক মুহুর্তের জন্য কেঁপে উঠলো কণ্ঠস্বর। ইরহামের জবাবের অপেক্ষা না করে নিজেকে সামলে গাড়ির পানে এগিয়ে গেলেন পল্লবী। পেছনের দ্বার উন্মুক্ত করে অন্দরে প্রবেশ করলেন। ভালোমতো বসে আটকে দিলেন দ্বার। ওনার ডান পাশের সিটে নির্লিপ্ত বদনে বসে রাহিদ। একমনে মোবাইল স্ক্রল করে চলেছে। ভেতরকার অবস্থা বোঝা দুষ্কর। পল্লবী দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে মাথা এলিয়ে দিলেন। বন্ধ চোখের পাতা ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো কয়েক ফোঁটা যন্ত্রণার ভার।

স্ত্রীকে ওভাবে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখে মৃদু হাসলেন জহির। বেদনাবিধুর সে হাস্য আভা। দু’জন পুলিশ ওনায় টেনে পুলিশের গাড়ির পানে নিয়ে গেল। দায়িত্বরত অফিসারের সঙ্গে করমর্দন করছে ইরহাম। পুলিশের গাড়িতে বসে গ্ৰেফতারকৃত জহির। নিষ্পলক নেত্রে তাকিয়ে চৌধুরীর শুভ্র রঙা গাড়িতে। দেখে নিচ্ছে স্ত্রী সন্তানকে। এই বুঝি শেষ দেখা। এ নি-ষ্ঠুর মুখ পুনরায় কেন দেখতে চাইবে তারা? অসংখ্য অপরাধের অভিযুক্ত সে। নিজ বোনের হ•ত্যাকারী। এক নি-ষ্ঠুর সত্তা। তাকে আপনজনেরা যত কম দেখবে ততই তো মঙ্গল। হায় রে নি’র্মম জীবন!

পুলিশের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ সেরে গাড়ির পানে এগিয়ে গেল ইরহাম। দ্বার উন্মুক্ত করে পিছু ঘুরে পুলিশের গাড়ির পানে তাকালো। শেষবারের মতো ঘৃণ্য দৃষ্টিতে দেখলো ওই হৃদয়হীন কাপুরুষটিকে। ভেতরকার সত্তা ক্রো’ধে, প্রতিশোধ স্পৃহায় তীব্রভাবে কাঁপছিল। তবুও নিজেকে সংযত করে নিলো চৌধুরী। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। যথাযথ প্রমাণ জোগাড় হয়েছে। এ জীবনে জহির আহসান কারাগারের বাহিরে এক চিলতে আলো দেখার বাসনা ছেড়ে দিক। অন্ধকার প্রকোষ্ঠের আড়ালেই ধুঁকে ধুঁকে কাটবে শেষ বয়সের রুক্ষ-নিস্পৃহ বসন্তগুলো। কিংবা দণ্ডায়িত হবে ফাঁ•সির দণ্ডে। অপছন্দনীয় দৃষ্টি সরিয়ে নিলো ইরহাম। বসলো চালকের পাশের সিটে। অল্প সময়ের ব্যবধানে বেরিয়ে গেল চৌধুরীর গাড়ি। সঙ্গে দেহরক্ষীদের গাড়ি দু’টো। কিয়ৎক্ষণ বাদে পুলিশের গাড়িও বেরিয়ে পড়লো। বিদায় গজারিয়া উপজেলা।

আঁধারে তলিয়ে ভুবন। ক্লান্তিকর এক দিনের অবসানে আপন নীড়ে ফিরলো ইরহাম। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো হৃদয়ের দু’টো অংশে। দুই সন্তানের পানে। বিছানায় ঘুমিয়ে দুই ভাই-বোন। ছোট পাশবালিশের ঘেরাটোপে শায়িত তারা। ক্লান্ত অধরে মুচকি হাসি ধরা দিলো। ধীরপায়ে এগিয়ে গেল সে। বিছানায় এক হাঁটু উঠিয়ে বসলো। অল্প ঝুঁকে গেল। স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলো পুত্র-কন্যার ললাটে। আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ছোট ছোট চুল হালকা নড়ে উঠলো বাবার আলতো স্নেহময় স্পর্শে। হৃদয়কাড়া হাসি উপহার দিলো মানুষটি। সে হাস্যোজ্জ্বল বদনে হারালো মন। জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল হৃদি। তোলপাড় সৃষ্টিকরা এক দিনের শেষে স্বামীর অপেক্ষায় ছিল। দাঁড়িয়ে ছিল জানালার ধারে। চন্দ্রাবতীর কিরণে চিন্তার আস্তরণ দূরীকরণ করার বৃথা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিল। একসময় পিছু ফিরতেই সাক্ষী হলো এ চমৎকার দৃশ্যের! তৃপ্তিময় আভা ছড়িয়ে পড়লো মুখশ্রীতে। মনে মনে আওড়ালো,

‘ আলহামদুলিল্লাহি আলা কু’ল্লি হাল। ‘
_

বহু রাত বাদে আজ আরামের নিদ্রায় তলিয়ে পুরো পরিবার। ইরহাম, মধ্যখানে দুই সন্তান। ওপাশে হৃদি। ছেলে-মেয়ের পেটের ওপর স্থাপিত তাদের ভরসার হাতখানি। সে এক সুখময় চিত্রপট!

সময়ের পরিক্রমায় পেরিয়েছে কতগুলো দিন। মাস। আজকের রাতটি বেশ দ্রুতই অতিক্রম হচ্ছে। এই তো কিছুক্ষণ আগেই যেন সন্ধ্যা নামলো। এরমধ্যেই হতে চলেছে মধ্যরাত। ঘড়ি নেই সাথে। জানা নেই ঠিক বাজে কয়টা। তবে আশপাশে চলমান সকল প্রস্তুতি দেখে আন্দাজ করতে পারছেন ফুরিয়ে এসেছে সময়। ঘড়ির কাঁটা বারোর কাছাকাছি। আর মাত্র স্বল্প সময়। আজ আর সে-ই বীভৎস দা-নব দেখা দিলো না। ভ’য়াবহ আতঙ্কে ছটফটানি হলো না। হবে কি করে? সে-ই দা-নবের আদৌও কোনো অস্তিত্ব রয়েছে কি! সবই তো হ্যালুসিনেশনের ভ’য়াল কারিশমা। ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশনের শিকার আজগর সাহেব। যার ফলস্বরূপ রাতের পর রাত কেটেছে যন্ত্রণাদায়ক। ভ’য়াবহ আতঙ্ক গ্রাস করে নিচ্ছিল ওনায়। প্রকৃতপক্ষে কি এই ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন?

ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন ঘটে যখন আক্রান্ত ব্যক্তি এমন কিছু দেখে যা বাস্তব নয়। বিকৃতিটি ছোট ফ্ল্যাশের ভিজ্যুয়ালাইজেশন থেকে শুরু করে মানুষ, কাল্পনিক প্রাণী এবং এমনকি জীবিত দৃশ্য পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই সমস্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপশ্রেণিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো… ‘লিলিপুটিয়েন্স।’ যেখানে আমরা যা দেখি তার আকার বাস্তবে দেখতে কেমন হবে (উদাহরণস্বরূপ, একটি দৈত্যাকার মৌমাছি) বা ²অটোস্কোপিয়া [যার দ্বারা সঙ্গতিপূর্ণ নয় ব্যক্তি তার শরীরের বাইরে থেকে নিজেকে দেখতে পারে. এই হ্যালুসিনেশনগুলি পদার্থ ব্যবহারের সাথে খুব সাধারণ।

আজগর সাহেব দীর্ঘদিন যাবত ‘সিজোফ্রেনিয়া’ রোগে আক্রান্ত। সিজোফ্রেনিয়া হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী, গুরুতর মানসিক ব্যাধি যা একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, আচরণ, আবেগ প্রকাশ, বাস্তবতা উপলব্ধি এবং অন্যদের সাথে সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। যদিও সিজোফ্রেনিয়া অন্যান্য বড় মানসিক রোগের মতো সাধারণ নয়, তবে এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এবং অক্ষম হতে পারে। আজীবন এই রোগ নিরাময় করা যায় না। কিন্তু সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আজগর সাহেবের এ রোগের কখনো সুচিকিৎসা করা হয়ে ওঠেনি। দিনের পর দিন ওনার এই রোগ প্রকট আকার ধারণ করছিল। ফলস্বরূপ ‘সিজোফ্রেনিয়া’ থেকে দেখা দিলো ‘ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন’। যখন এ ব্যাধি ভ-য়ানক রূপ নিলো উনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। যথারীতি ওনায় সুস্থ হবার পথ বাতলে দিলেন চিকিৎসক। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে উনি সুচিকিৎসা পাননি। ভুল ঔষধ খাচ্ছিলেন। এছাড়াও রাতের পর রাত ওনার সামনে দেখা দিতো রিমোট চালিত ক্ষুদ্রাকৃতির এক নকল মৌমাছি। ‘লিলিপুটিয়েন্স’ সমস্যার জন্য উনি সে-ই মৌমাছিকেই দা’নবাকার দেখতেন। বি’ভৎস দেখতেন। ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার করতেন। দরদরিয়ে ঘামতেন। হাতজোড় করে ভিক্ষা চাইতেন। তবে মেলেনি কখনো ছাড়। আজও ওনার অজানা কি করে ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশনের অপব্যবহার করে ওনায় চূড়ান্ত রূপে শেষ করে দিলো চৌধুরী। এ অজানা চিরকাল অজানাই রয়ে যাবে। কভু হবে না রহস্যের সমাধান।

দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে এলো। হাতছানি দিয়ে ডাকছে ওই কুৎসিত ভ’য়াল মঞ্চ। উনি যেতে নারাজ। চিৎকার করে উঠছে অন্তরাত্মা। আকুতিমিনতি করছে প্রাণ। তবে ভাগ্যের নি’র্মম লীলাখেলা। একফোঁটাও মিললো না মুক্তি। অবশেষে নির্দয় সত্তার সময় ফুরিয়ে এলো! ঘোর অমানিশায় হারালো পাপী আ’ত্মা। বিদায়! পৃথিবী রক্ষা পেল এক পা’ষাণহৃদয় অস্তিত্ব হতে।

ফুরফুরে এক সকাল। রবির মিঠি রৌদ্র ছুঁয়ে কায়া। বহমান চঞ্চল হাওয়া। ক্যাম্পাসে গোলাকার হয়ে বসে ‘ওরা সাতজন’ এর প্রাণবন্ত সত্তা। সবার মধ্যখানে সাবিত। ওর হাতে মোবাইল। ডান পাশে নাবিল, বাম পাশে ইভা। ইভার বাঁ পাশে হৃদি। একমাত্র সে-ই স্বাভাবিক বদনে বসে। থমথমে মুখশ্রী। এছাড়া বাকি সকলের চঞ্চল দৃষ্টি নিবদ্ধ সাবিতের হাতে থাকা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে। সেথায় প্রদর্শিত হচ্ছে হৃদয়ে দোলা দেয়া প্রশান্তির খবর…

‘ গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁ সি কার্যকরের আগে আসামি খন্দকার আজগর মল্লিককে তওবা পড়ান করান স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আসাদুর রহমান। রাত বারোটার আগেই ওনাকে ফাঁ;সির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত বারোটা এক মিনিটে ফাঁ;সি কার্যকর করা হয়। ফাঁ;সি কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. জব্বর মিয়া। কড়া নিরাপত্তায় ঢাকা ছিল কেন্দ্রীয় কারাগার। গতকাল রাতে সাংবাদিকরা কারাগারের প্রধান ফটক পার হয়ে সামনের চত্বরে যেতে পারেননি। তাদেরকে প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনেক মানুষ এই ফটকের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি পিকআপ ভেতরে ঢোকে। সোয়া বারোটার দিকে কারাগারের পেছনের দিকের গেট দিয়ে সিভিল সার্জন, স্থানীয় প্রশাসনের গাড়িসহ চারটি গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করে। আবার রাত একটার দিকে গাড়িগুলো কারাগার ত্যাগ করে। কারাগার সূত্রে জানা যায়, গত আট তারিখ সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ খন্দকার আজগর মল্লিকের ফাঁ;সির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। দণ্ডিত এই সাবেক মন্ত্রীর ফাঁ;সি কার্যকর স্থগিত চেয়ে পনেরো তারিখে আবারও হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ওনার স্বজনরা। মঙ্গলবার সেই আবেদন খারিজ করে দেয় বিচারপতি মো. সলিম আহমেদ ও প্রবাল সেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। ‘

দেশীয় জনপ্রিয় এক চ্যানেলের চাঞ্চল্যকর এই সংবাদের এতখানি দেখে মোবাইলের ডাটা অফ করে ফেললো সাবিত। মোবাইল পুরে নিলো জিন্সের পকেটে। তাকালো বন্ধুদের পানে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছেলেটা।

” অবশেষে ফাঁ সি হলো? ”

নাবিল তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,

” আল্লাহ্ সব দেখে রে দোস্ত। আজ হোক কিংবা কাল। বিচার উনি করেন। কেউ ইহকালে কেউবা পরকালে। পাপ করলে তার শাস্তি অবধারিত। পাইতেই হবে। বুড়া ব্যাটা জীবনে কম তো কুকাম করলো না। এখন বুড়া বয়সে ফাঁ-সির মঞ্চে। ইশ্!”

আফরিন শঙ্কা প্রকাশ করে বললো,

” হাইকোর্টে যখন ফাঁ;সির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলো। আমি তো ভাবছিলাম, গেল। সব গেল। আমাদের দেশে অন্যায়ের সুবিচার খুব কমই হয় রে। সেখানে উনি তো শীর্ষস্থানীয় নেতা। ভাবছিলাম ঠিক পাড় পাইয়া যাবে। তবে লাকিলি আলহামদুলিল্লাহ্। খেল খাতাম। ”

স্বস্তিময় নিশ্বাসটা ছাড়ল আফরিন। পাশ হতে দিয়া বললো,

” খেল খাতাম না হয়ে উপায় আছে? আমাদের সুপারস্টার জিজু একের পর এক যা কামাল দেখালো না! ওই বুড়া অজগর ধ্বং-স হইতে বাধ্য। ”

নাদিরা কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে বললো,

” কি দুর্ভাগ্য রে! বুড়ো বয়সে এসে শেষমেষ মৃ-ত্যুদণ্ড হলো। কোথায় শেষ বয়সে ইবাদত বন্দেগী করবে। তা না। পাপের শাস্তি পাইলো। কি একটা জীবন রে ইয়ার। এ জীবনের মানেটা কি? পাপ করতে করতেই সুন্দর জীবনটা শেষ। আর বেলাশেষে ফাঁ;সির মঞ্চে বিদায়। হুহ্। ”

ইভা রাগত স্বরে বললো,

” পাপে বাপরেও ছাড়ে না। বুড়া হোক কিংবা ধুড়া। শাস্তি অনিবার্য। একদম ঠিক হইছে। ওই ব্যাটা আজ পর্যন্ত কম মানুষ মা•রছে নি? ভুলে গেছোছ আমগো জুনিয়র মুহিত? ওই ব্যাটাই তো মূল কাণ্ডারি ছিল। বুড়ে বয়সে আকাম কুকাম ছাড়তে পারে নাই। আর ফাঁ সি দিলেই দোষ? যত্তসব। ”

মুখ বাঁকালো মেয়েটা। হঠাৎ কিছু মনে পড়তে বিস্ময়মাখা স্বরে শুধালো আফরিন,

” হ্যাঁ রে। আজগর মল্লিকের না একখান কুপুত্র আছে? নীল না সবুজ নাম? ওটাও নাকি বদের হাড্ডি! তো ওই হাড্ডি এখন কই? বাপরে বাচাইতে পারলো না? হাওয়া ফুঁস? ”

সাবিত চরম আশ্চর্যান্বিত হলো বান্ধবীর কথা শুনে! মেয়েটা এসব ভুলভাল কি বকছে! স্তব্ধ মুখে বললো সে,

” তুই কি মঙ্গল থে আইছোছ? কিছু জানোছ না? ”

লজ্জায় লাল হলো মুখ। আফরিন বুঝে উঠতে পারলো না সে ঠিক কি জানে না! সাবিত এমন শকিং এক্সপ্রেশন দিচ্ছে কেন!

” কি হয়েছে? কিসের কথা বলতাছোছ? ঠিক বুঝলাম না। ”

সাবিত অসন্তুষ্ট বদনে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

” ওরে গা’ধী! রুদ্রনীল মল্লিক ইজ নো মোর। ব্যাটা তো আরো আগেই পরলোকগমন গমন করছে। ”

” হোয়াট! ”

ব’জ্রঝড় হলো মস্তিষ্কে। চোয়াল ঝুলে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে আফরিনের। সাবু এসব কি বলছে! রুদ্রনীল বেঁচে নেই! এ কি করে সম্ভব? কবে কখন কিভাবে মৃ•ত্যুবরণ করলো সে! কবে! বারকয়েক শুকনো ঢোক গিললো মেয়েটা। তাতেও কাজ হলো না। গণ্ডস্থলে পীড়া হচ্ছে। তড়িঘড়ি করে ব্যাগ হতে ওয়াটার বটল বের করলো। বোতলের ছিপি খুলে ভালোমতো ভিজিয়ে নিলো গলা। তৃষ্ণা নিবারণ হতেই বোতলের ছিপি আঁটকে ফেললো। ব্যাগে বোতল রাখতে রাখতে শান্ত স্বরে শুধালো,

” কবে মা রা গেছে? ”

এতক্ষণ মালিহা মায়ের স্মৃতিকথায় বিভোর ছিল হৃদি। এছাড়াও মনমানসিকতা ভালো নেই। বান্ধবীর প্রশ্নটি শুনে মুখ তুলে তাকালো সে। কোমল স্বরে বললো,

” লাস্ট মান্থ। গোয়ায়। কি;লড্ বাই আইপিএস অফিসার্স। ”

বন্ধুমহলে নেমে এলো নিস্তব্ধতা। আফরিন এবং দিয়া অবগত ছিল না এ চমকপ্রদ বিষয়ে। তারা শুনলো। হলো চরম আশ্চর্যান্বিত! রুদ্রনীল ইজ নো মোর! ও এম এ! দিয়া অধর সিক্ত করে কিছু বলতে উদ্যত হলো তখনই বেজে উঠলো রিংটোন। দিয়া ও আফরিন একে অপরের পানে তাকালো। অবেলায় কার রিংটোন বেজে চলেছে? চোখের পলকে মোবাইল হাতে উঠে দাঁড়ালো হৃদি। কালবিলম্ব না করে ফোন রিসিভ করলো।

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। ”

ওপাশ হতে কোনো সংবাদ এলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হলো হৃদির মুখশ্রী। অস্থির হলো তনুমন। কল কেটে দ্রুত কাঁধে ব্যাগ জড়িয়ে নিলো। নাবিল উৎকণ্ঠিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

” কি রে! রেলগাড়ির মতো কই যাচ্ছিস? ”

” আমায় যেতে হবে দোস্ত। আমার মাহি কাঁদছে। মা’কে খুঁজছে। আই হ্যাভ টু গো‌। আল্লাহ্ হাফিজ। আসসালামু আলাইকুম। ”

ত্রস্ত পায়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো হৃদি। বন্ধুরা পুলকিত চিত্তে তাকিয়ে। দু’দিন ধরে মাহিকা অসুস্থ। ঠাণ্ডা কাশি হয়েছে বাচ্চাটার। সময় অসময় কেঁদে ওঠে। মায়ের কোল খোঁজে। মা’কে পেলেই শান্ত। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। তাতেই আবেগী হয়ে পড়ে মা হৃদি। মাতৃহৃদয় কিনা! সন্তানের মুখনিঃসৃত একফোঁটা যন্ত্রণার আভাস, হৃদয়ের অলিগলি অ’গ্নিসংযোগ ঘটায়। মা এমনই হয়। মমতাময়ী। স্নেহের জলধারা। তাই তো গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস অবলীলায় মিস্ করে সন্তানের তরে ছুটে গেল হৃদি। আপন র•ক্তের জন্য মা হাসতে হাসতে প্রাণত্যাগ করতে পারে। ক্লাস ত্যাগ করা কি এমন দুষ্কর! বন্ধুরা বেশ প্রসন্ন তাদের প্রিয় বান্ধবীর নতুন কোমলমতি রূপে।

শান্তশিষ্ট উইদাউট লেজবিশিষ্ট বধূ যখন রণমূর্তি ধারণ করে তা বড় ভ’য়ানক আকার ধারণ করে। উত্তপ্ত লাভা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। যে লাভায় জ্ব’লছে অন্তর। পু’ড়ছে বুক। ইরহাম কোলে ঘুমন্ত পুত্রের পানে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসলো। আস্তে ধীরে বিছানায় শুয়ে দিলো রিহাম’কে। পাশাপাশি শায়িত দুই সন্তান। ছোট পাশবালিশের ঘেরাটোপে তাদের বন্দী করে ফেললো মানুষটা। মাহিকা একটু নড়ে উঠতেই আলতো করে বুকে হাত চাপড়ে দিলো। ফের ঘুমিয়ে গেল শিশু কন্যা। ইরহাম পিছু ঘুরে তাকালো স্ত্রীর পানে। সোফায় বসে তার বধূ। মোবাইলে গেম খেলছে। কোনো অ্যাকশন গেম বুঝি! এমনভাবে খেলছে, শত্রুকে পরাস্ত করছে যেন সে শত্রু স্বয়ং ইরহাম। বোকা হাসি উপহার দিলো ইরহাম। প্রথমবারের মতো এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে সে। বুঝে উঠতে পারছে না ঠিক কি করা উচিত। মনে হচ্ছে স্ত্রীর মন বোঝার চেয়ে বিসিএসের পেপার সল্ভ করা কয়েকশো গুণ সহজ। মেয়েদের মন বোঝা নয় রে নয় সোজা। মানুষটা আলতো করে পেছনের মসৃণ চুল চুলকে নিলো‌। ধীরজ পায়ে এগোলো স্ত্রীর পানে। বসলো বাঁ পাশে। হৃদি তখনও নড়েচড়ে হুড়ুমগুড়ুম করে গেমের শত্রুকে ঘা’য়েল করে যাচ্ছে। এমপি সাহেব উঁকি দিয়ে দেখলো। হ্যাঁ সত্যিই ফাইটিং গেম খেলছে বউপাখিটা। এবার কি করবে সে! ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। খুকখুক কাশি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের বৃথা প্রয়াস চালালো। লাভ হলো না। এবার কণ্ঠস্বর নিচু করে আমতা আমতা করে বললো,

” যা হয়েছে তাতে আমার দোষ কোথায়? হুঁ? শুধু শুধু আমার সঙ্গে মৌনব্রত পালন করবে? ”

হৃদি এমন চাহনিতে তাকালো যে এক্ষুনি পানিবিহীন আস্ত গিলে খাবে তার বরটা’কে। এমপি সাহেব চমকিত বউয়ের নয়া রুদ্রাণী রূপ দেখে! আত্মপক্ষ সমর্থন করে পুনরায় বললো,

” আমি কিছু করিনি তো। আমি নির্দোষ। বিশ্বাস করো।”

হৃদি বুকের ভেতর তীরবি’দ্ধ করার মতো হাসি উপহার দিলো। সঙ্গে বললো,

” জ্বি আপনি তো সম্পূর্ণ নির্দূষ। দূষী আমি নিজে। ঠিক আছে? ”

বিদ্রুপাত্মক বাক্য শুনে প্রতিবাদ জানালো ইরহাম,

” এটা কি হচ্ছে? তুমি থেকে প্রোমোশন হয়ে আবার আপনিতে নেমে গেলে কেন? তুমিটাই তো মিষ্টি লাগতো। ”

গেমে মনোনিবেশ করে নির্লিপ্ত স্বরে বলল হৃদি,

” বেশি মিষ্টি ভালো না। বয়স হচ্ছে। পরে ডায়াবেটিসে পাকড়াও করবে। ”

ইরহাম তৎক্ষণাৎ তীব্র আপত্তি জানিয়ে বললো,

” বুড়ো কাকে বলছো? অনলি থার্টি থ্রি চলছে। এখনো রূপ জৌলুস সব পারফেক্ট। মেয়েরা একবার দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তুমি জানো? ”

” জ্বি হ্যাঁ। কেউ কেউ তো ভালুপাশা-পাশির চিঠিও পাঠায়। তাই না জনাব? ”

সুতীক্ষ্ণ চাহনিতে তাকিয়ে হৃদি। থতমত খেল ইরহাম। ঠিক অনুধাবন করতে পারলো একটু আগে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মে•রেছে সে। ওহ্ শিট! পুরুষালি ভারিক্কি কণ্ঠস্বর যথাসম্ভব নরম করে ইরহাম আহ্লাদে স্বরে বলতে লাগলো,

” এই। শোনো না। ওই গিফট, চিঠি। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি। বিয়ের আগেও কয়েকবার এমন হয়েছে। এমন উদ্ভট গিফট পাঠাতো অজ্ঞাত পরিচয়ের কেউ। কখনোবা প্রশংসায় পঞ্চমুখ চিঠি। ওরা কোনো অন্ধ ফ্যানগার্ল হবে বোধহয়। আমি ওসবে পাত্তা দেয়ার মানুষ নই, ইয়্যু নো না? একবার তো নাম না জানা গিফট বক্স বিরক্ত হয়ে বিনে ফেলেও দিয়েছিলাম। সিকিউরিটি গার্ডকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া ছিল, কখনো যেন এসব কুরিয়ার বাড়ির ভেতরে না আসে। কিন্তু আজ কোনোভাবে এসে পড়েছে। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি জান। ”

হৃদি বিশ্বাস না করে পারলো না। দু বছরের অধিক সময় ধরে এ মানুষটির সঙ্গে আছে। তার শিরায় উপশিরায় চলমান অনুভূতি সম্পর্কে অবগত। সে জানে তার মানুষটা কেমন ব্যক্তিত্বের। সে কোনো আওয়ারা পাবলিক নয়। হৃদির একান্ত পুরুষ হয়। তবুও অভিমান হলো। কি সুন্দর করে কুরিয়ার এলো। আর উনিও গদগদ হয়ে বিছানার ওপর বসে কোলে গিফট বক্স নিয়ে মোড়কমুক্ত করতে আরম্ভ করলো। ভেতর থেকে কতগুলো ছোট্ট ছোট্ট প্রশংসাবাণী যুক্ত সুন্দর লেখনীর চিরকুট আর একটা দামী পারফিউম বেরিয়ে এলো। বোঝাই যাচ্ছিল কোনো মেয়ে দ্বারা এসব প্রেরিত। ব্যাস। চট করে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। স্বামীর হাতে অন্য মেয়ের প্রশংসাবাণী দেখলে সহ্য হয়! পু’ড়বে না বুক! পু’ড়ে তো। তাই তো অভিমান হলো। ছোট্ট আদুরে অভিমান। যা এখন ধীরে ধীরে প্রণয়ধারায় তলিয়ে যাচ্ছে। একান্ত এক বেষ্টনীতে বন্দিনী হলো সে। বউপাখিটাকে মন পিঞ্জিরায় বদ্ধ করে নিলো ইরহাম। চুলে হাত বুলিয়ে সম্মোহনী স্বরে বলে উঠলো,

” অভিমানেরা ডানা মেলে শত সহস্রবার উড়ে যাক,
তোমার আমার প্রণয়াকাঙ্ক্ষা সদা সর্বদা অটুট থাক। ”

একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষটির কথামতো সমস্ত অভিমানেরা ডানা মেলে দূরাকাশে উড়াল দিলো। জানে তারা, সে অভিমানের পারদ নামাতে রয়েছে এক প্রেমিকপুরুষ। যার হৃদয়ে লুকানো অনুভূতি বড় গাঢ়। সুগভীর। মন পিঞ্জিরায় সযতনে আগলে রাখে তার হৃদরাণীকে। কখনো পড়তে দেবে না বিপদের ভ’য়াল আঁচ। হৃদি চুপটি করে স্বামীর বুকে মিশে রইলো। দু হাতে আলিঙ্গনবদ্ধ পিঠ। ঘন শ্বাস পড়ছে তার। অভিমানী খেলা শেষে ঘুম ঘুম পাচ্ছে। মোবাইল অবহেলিত হয়ে পড়ে কোলে। এখনো গেম চলছে। মুচকি হেসে মোবাইলটি একপাশে রাখলো ইরহাম। তন্দ্রাচ্ছন্ন স্ত্রীর ঘাড় ও হাঁটুর নিম্নে হাত গলিয়ে তাকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো। পা বাড়ালো বিছানার ধারে। যত্ন সহকারে শুয়ে দিলো প্রিয়তমা নারীকে। মাথার নিচে ভালোমতো বালিশ ঠিকঠাক করে দিলো। স্ত্রী তখনো দু’হাতে তার গলা জড়িয়ে। ইরহাম হাত ছাড়াতে উদ্যত হতেই চমকালো! টুপ করে অধরে অধর ছুঁয়ে দিলো মেয়েটা। ঘুমকাতুরে স্বরে বললো,

” আর কোনো মেয়ের প্রেমপত্র পড়লে একদম প্রেমবাণে মে-রে দেবো। হুম। ”

ঘুম ঘুম সে আদুরে স্বরে জাগ্রত হলো প্রেমী সত্তা। ভ’য়ানক চাহিদারা মাথা চাড়া দিয়ে তাদের উপস্থিতির জানান দিল। ঘন শ্বাস ফেলে মাথাটা এদিক ওদিক নাড়ল ইরহাম। তবুও নিজেকে সামলাতে ব্যর্থ। অন্তরে জ্ব’লন হচ্ছে। দ্রুততর হৃদস্পন্দন। আর পারা গেল না। অর্ধাঙ্গীর পানে অনেকখানি ঝুঁকে গেল ইরহাম। অধরে গাঢ় এক স্পর্শ অঙ্কন করলো। ঘুমন্ত সঙ্গিনী সাড়া দিতে ব্যর্থ। শুধু কেঁপে উঠলো দু’বার। ত্বরিত সরে গেল ইরহাম। ঘন পড়ছে শ্বাস। নিজস্ব অভিলাষ ধামাচাপা দিতে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। খামচে ধরলো পেছনের চুল। ধীরে ধীরে শান্ত হলো। তপ্ত শ্বাস ফেলে তাকালো স্ত্রীর পানে। পাশ ফিরে শুয়ে মেয়েটা। পুত্রের বুকে আলতো করে স্থাপিত হাত। পুলকিত হলো তনুমন। ঘুমন্ত স্ত্রীর দেহে কাঁথা জড়িয়ে দিলো সে। নিভিয়ে দিলো ঘরের আলো। এখন তো সময় নিদ্রামগ্ন হবার।

চলবে।

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#অন্তিম_পর্ব [ দ্বিতীয়াংশ ] ( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )

তমসাচ্ছন্ন সে কুঠরি। মেঝেতে পাতলা কাঁথার ওপর শুয়ে কারাবন্দী জহির। নিজ বোনের হ•ত্যাকারী সে। এছাড়াও বহু অপকর্মে জড়িত। আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। বাকি জীবনটা কাটবে এ কুঠরিতেই। বাহ্যিক জগৎ, চাকচিক্য হবে না আর দেখা। উপভোগ করা। সিলিংয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে লোকটা। নিজ কর্মে এমন ভবিষ্যৎ জুটিয়েছে সে। নিজের ভাগ্য নিজেই করেছে বরবাদ। এই পাংশুল হাতেই করেছে বোনকে ছু-রিকাঘাত। এমনই হতভাগা, পাপী’ষ্ঠ সে। লুকিয়ে লুকিয়ে চুপিসারে সেদিন গিয়েছিল ছুটে। ছোট বোনের ঘা’তক হয়েও তার জানাজায় অংশ নিতে চেয়েছিল। মুখ লুকিয়ে ছদ্মবেশে গিয়েছিল সে। কিন্তু সফল হতে পারেনি। কড়া নিরাপত্তায় মোড়ানো ছিল সেদিনের ‘আনন্দাঙ্গন’। অজ্ঞাত কারোর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শত চেষ্টা করেও সে অন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ভাগ্যে জোটেনি একমাত্র বোনের জানাজায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ। কিংবা কবরে একমুঠো মাটি ছুঁয়ে দেয়া। এরপরের দিনগুলো ছিল ফেরারী আসামির মতো। এদিক ওদিক পালিয়ে বেড়াচ্ছিল সে। ভবঘুরে মতো যার নেই কোনো স্থায়ী ঠিকানা। ভাগ্নে ইরহাম এছাড়াও পুলিশ অধীর হয়ে তাড়া করে ফিরছে তাকে। শেষমেষ মুন্সীগঞ্জে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। চুপিসারে অবস্থান করলেন এক গোপন ঠিকানায়। তবে রাতের ঘুম, মানসিক শান্তি পালালো অজানায়। প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় দ’গ্ধ হচ্ছিলেন উনি। বারকয়েক আ-ত্মহনন করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। ওই সাহসী সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা তার পক্ষে সহজ ছিল না। বড় জটিল ছিল। তবুও উনি নিজ সিদ্ধান্তে অটল রইলেন। ছদ্ম পরিচয়ে যোগাযোগ করলেন স্বীয় ভাগ্নের সঙ্গে। বাক্য মায়ায় আবিষ্ট করে ওকে আসতে বাধ্য করলেন। লুকোচুরি খেলার ছলে ভাগ্নের হাতে তুলে দিলেন অসংখ্য গোপন প্রমাণ। উনি নিজেও অপরাধ জগতের এক কালো অংশ। বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ উদ্দেশ্যে সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ রেখে দিয়েছিলেন। যে প্রমাণগুলোর ঠাঁই হলো এক ক্ষুদ্রাকৃতির পেনড্রাইভে। সে-ই পেনড্রাইভ, কারাকুরি রিপল আউট পাজল বক্সের মাধ্যমে ভাগ্নের হাতে তুলে দিলেন।

যথাপযুক্ত প্রমাণ পেয়ে বেশ লাভবান হলো ইরহাম চৌধুরী। নিজ গুণে সে ইতোমধ্যে বেশকিছু দুর্দান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এখন অজ্ঞাত পরিচয় হতে প্রাপ্ত প্রমাণাদি। দুইয়ে দুইয়ে মিলে হলো চার। গ্ৰেফতার হলো শীর্ষস্থানীয় বেশকিছু অপরাধী। যার ফলস্বরূপ একসময় বিচারকার্য শেষে মৃ•ত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো খন্দকার আজগর মল্লিকের। জহির আহসান নামক পাপী’ষ্ঠ আ”ত্মা আজ আর বাঁচতে চায় না। মৃ-ত্যুর জন্য দিন গোনে। জানে না পরকালে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। শুধু সে ম-রতে চায়। এই অনুতপ্ত, পাপে ভরা জীবনে শ্বাস প্রশ্বাস নেয়াটাও যেন দিনকে দিন বি-ষাক্ত হয়ে উঠছে। লেখনীতে তাহিরাহ্ ইরাজ। জহির আহসান স্বেচ্ছায় পুলিশে ধরা দিয়েছেন। তবে ওনার অগাধ বিশ্বাস যে ওনাকে কোনো না কোনো ধূর্ত পন্থায় আইনের কবলে ছুঁড়ে ফেলেছে আপন ভাগ্নে ইরহাম। সে ছাড়েনি ওনায়। কখনো ক্ষমাও করবে না। পারলো না শুধু নিজের হাতে প্রাণ নিতে। আইন নিজের হাতে তুলে নিতে অপারগ সে। তাই তো আইনের আওতায় ওনায় শাস্তি পাইয়ে দিলো। এবার আমৃ-ত্যু থাকো কারাবন্দি। সুবুদ্ধি হয়ে থাকলে করো অনুতাপ। তবুও মিলবে না ছাড়। পাপের শাস্তি পেতেই হবে। প্রতিটি মূহুর্তে ধুঁকে ধুঁকে ম-রবে সে। আত্মগ্লানিতে যাবে ডুবে। এরচেয়ে করুণ পরিণতি আর কি হতে পারে? সকল অপরাধের যোগ্য শাস্তি মৃ•ত্যুদন্ড নয়। কখনো কখনো অনুশোচনার আগুনে পু’ড়েও একজনকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়া যায়। এটাই তো সর্বোত্তম শাস্তি। এক জীবন্ত লা শ হয়ে বাকি জীবন কাটানোর নৃ•শংস পন্থা।

সময় ও স্রোত বয়ে চলে অবিরাম। কখনো নেয় না একবিন্দু বিশ্রাম। পেরিয়েছে বেশ কয়েকমাস। রিহাম চৌধুরী ও মাহিকা চৌধুরী এখন দেড় বছর বয়সের দু’টো আদুরে প্রাণ। বাবা মায়ের আহ্লাদে কলিজা তারা। তাদের আগমনে ‘আনন্দাঙ্গন’ এ ফিরেছে আনন্দের স্রোত। বাড়ির অন্দরে সদা বয়ে চলেছে উচ্ছ্বসিত কলতান। সকলে ব্যস্ত এই দুই বিচ্চুর পিছু পিছু। বিশেষত রিহাম। বড় ছোট সকলের ঘাম ছুটিয়ে ছাড়ে এই ক্ষুদ্র পটাকা। আর তার বনু? ভাইয়ের সঙ্গ দেয় মাত্র। চুপটি করে শব্দহীন হাসে। দুই ভাই-বোন এই মুহূর্তে নতুন আরামদায়ক পোশাক পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে চাচু ও ফুপির কোলে। সবাই প্রায় তৈরি। বাড়ির বাহিরে গাড়ি দাঁড়িয়ে। হৃদি ও রাজেদা খানম নেমে এলেই রওনা হবে তারা। গন্তব্য এবার দূরের পথ। রাহিদের কোলে রিহাম। ইনায়া ব্যস্ত কোথাও মাহিকা’কে নিয়ে। বাচ্চা দু’টো এখন ভালোই নাদুসনুদুস শরীরের অধিকারী। বিশেষ করে রিহাম। আস্ত একটা গুলুমুলু আণ্ডাবাচ্চা, রাহিদের ভাষ্যমতে। সে-ই তুলনায় মাহিকা কিছুটা দুর্বল। এখনো পুরোপুরি সবল নয়। মাঝেমধ্যে দুর্বলতার শিকার হয়। রাহিদ তার কোলে থাকা রিহামের সঙ্গে দুষ্টুমি করে কথা বলছে। রিহামও তার আধো আধো ভাষায় কথা বলছে,

” পুপাআআ। পুপায়া। পুউ। উ। ”

ত্বরিত মুখে আঁধার ঘনিয়ে এলো। রাহিদ দুঃখ ভারাক্রান্ত স্বরে বললো ,

” ওরে আমার হাতির বাচ্চা। আমি তোর কোন জন্মের ফুপা লাগি রে? খালি পুপা পুপা করিস। আমি তোর চাচু লাগি রে। চাচু। বল চাচু। চাআআ চুউউ। বল। ”

ফোকলা দাঁতে হাসলো বাচ্চাটা। মজা পাচ্ছে বুঝি। মুখে আঙ্গুল চালান করে ডেকে উঠলো,

” পুপাআ। ”

রাহিদ দাঁতে দাঁত পিষে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,

” ইনুর বাচ্চা। আমার ভাইপোটার মগজ সার্ফ এক্সেল দিয়ে ভালোমতোই ধুয়ে দিয়েছে। এখন বাচ্চা হাতিটা চাচু ডাকতেই চায় না। খালি পুপা পুপা করতে থাকে। আব্বে কে তোর পুপা? নির্ভেজাল খাঁটি চাচু হই আমি। ”

রিহামের পানে তাকিয়ে আদুরে স্বরে,

” ওই বাচ্চা হাতি। আমি তোর চাচু লাগি। বল চাচু। ফুপা আগে না চাচু আগে? চাচু আগে তো। আবার সবচেয়ে আপনও। বুঝেছিস? ডাক না। চাচু। ওই। ডাক না। চা চুউউ। ”

মুখ থেকে লালাসিক্ত আঙ্গুল বের করে রাহিদের গালে বুলিয়ে দিলো পিচ্চিটা। আদুরে স্বরে ডেকে উঠলো,

” পুউউ পা। ”

ব’জ্রকণ্ঠে হু’ঙ্কার দিয়ে উঠলো রাহিদ,

” ইনুর বাচ্চা! ”

কাঁপলো আকাশ। ভাঙলো বাতাস। ঠোঁট উল্টিয়ে কেঁদে দিলো রিহাম। ব্যাস হয়ে গেল। কোথা হতে তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন এজাজ সাহেব। আদরের নাতিকে কোলে নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কান্না থামানোর চেষ্টা করছেন। নাতির কান্নায় ওনার বুকটা ফালাফালা হয়ে যাচ্ছে। দাদুভাই এমন করে কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর? এই অপদার্থটা বকেছে? নাকি মে-রেছে? অসন্তুষ্ট হয়ে এজাজ সাহেব রাহি’কে দিলেন এক ধমক। আর নাতির কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। এদিকে ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদো কাঁদো চাহনিতে তাকিয়ে রাহিদ। ‘চাচু’ বলতে বলায় এতমোটা দণ্ডনীয় শাস্তি! বড় নিষ্ঠুর-নির্মম এ দুনিয়া। থাকবে না সে। এখুনি হিমালয় যাবে। টিকেট এই কাটলো বলে। হুঁ।

.

ফুরফুরে এক চঞ্চল সকাল। মিঠি রৌদ্র খেলা করছে গাত্রে। ‘আনন্দাঙ্গন’ প্রাঙ্গনে ক্রমান্বয়ে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এজাজ সাহেবের কোলে রিহাম ও পল্লবীর কোলে মাহিকা। রাহিদ ও দু’জন দেহরক্ষী দু’টো গাড়ির ডিকিতে লাগেজ তুলতে ব্যস্ত। রায়না ও ইনায়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। শেখ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত সেথায়। এসেছে হৃদিদের বিদায় জানাতে। ইরহাম সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে। কানে ঠেকে মোবাইল। কোনো গুরুগম্ভীর আলাপণে ব্যস্ত মনে হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি হেড রুস্তম।

” আচ্ছা মা। তাহলে সাবধানে যাবি। ঠিক আছে? ওখানে হৈ হুল্লোড় করতে গিয়ে নানুভাইদের আবার অবহেলা করিস না যেন। ওদের মনে করে সময়মতো খাইয়ে দিবি। বেশি গভীর পানির কাছে যাবি না। ঠাণ্ডা লেগে যাবে। আর শীত শীত লাগলে রাতে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাবি। ”

মায়ের উপদেশবাণী শুনে নিঃশব্দে হাসলো হৃদি। মায়ের বাহু আলিঙ্গন করে কোমল স্বরে বললো,

” বুঝেছি আম্মু। তুমি অহেতুক চিন্তা করো না। যা হবে ইনশাআল্লাহ্ ভালোই হবে। আর তোমার আদরের নানুদের আমি অবহেলা করতে পারি? ওদের দাদাজান তো তাহলে আমাকে ত্যাজ্য পুত্রবধূ করবেন। ”

মেয়ের কথায় না হেসে পারলেন না ফারহানা। আসলেই এজাজ সাহেব ইদানিংকালে নাতি-নাতনিকে নিয়ে বেশ পজেসিভ হয়ে পড়েছেন। ওরাই যে ওনার শেষ বয়সের সুখের ফোয়ারা। ফারহানা বললেন,

” আচ্ছা ঠিক আছে। অবহেলা করতে হবে না। নিজের খেয়াল নিস। অন্যদের খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাস না যেন। ”

ফোনালাপে লিপ্ত মানুষটি। পড়নে শ্বেতশুভ্র পাঞ্জাবি পাজামা। মসৃণ চুলগুলো হালকা হাওয়ায় ক্রীড়ারত। বাঁ হাত মাঝেমধ্যে কথার তালে নড়ে চলেছে। নড়ছে নে-শালো অধরোষ্ঠ। সুদর্শন একান্ত পুরুষের পানে অলপক নেত্রে তাকিয়ে হৃদি। আনমনে লহু স্বরে বলে উঠলো,

” আমার খেয়াল রাখার জন্য সে রয়েছে তো। ”

মা ঠিক খেয়াল করলেন না। তাই শুধোলেন,

” কি? ”

চকিতে হুঁশ ফিরলো। জিভ কেটে মায়ের বাহু ছেড়ে দিলো হৃদি। সোজা হয়ে দাঁড়ালো। চমৎকার রূপে মিথ্যা বলে ফেললো,

” ও কিছু না। বলছি তোমরাও নিজেদের খেয়াল রেখো। সাবধানে থেকো। ”

” হুম। তোরাও সাবধানে থাকিস।‌ ”

মেয়ের মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন ফারহানা। হৃদি মুচকি হেসে নিজ পরিবারের সদস্যদের থেকে বিদায় নিলো। আলতো আলিঙ্গন করলো বোনেদের। বাদ গেল না বড় বোন রাঈশাও। রাঈশা মৃদু হেসে ওর গালে হাত বুলিয়ে দিলো। বিপরীতে প্রসন্ন চিত্তে হাসলো হৃদি। রাঈশা কন্যা ফারিজা তখন পল্লবীর পাশে দাঁড়িয়ে। হাত উঁচিয়ে মাহিকার হাত ধরে দুষ্টুমি করছে। হাসছে দু’জনেই। ফারিজা এখন আর সেই বাচ্চা নেই। বড় হয়েছে কিছুটা। টুকটাক ভালোই কথা বলে। পাকনা বুড়ি একটা।

সেভেন সিটার এসইউভি’তে বসেছে পরিবারের সদস্যরা। ইরহাম স্ত্রীর পার্শ্ববর্তী গাড়ির দ্বার বন্ধ করে দিলো। নিজে বসলো চালকের পাশের সিটে। দ্বিতীয় সারির সিটে বসে হৃদি, ইনায়া ও দুই পুঁচকে। শেষের সিটে বসে রায়না ও পল্লবী। পরের গাড়িতে এজাজ সাহেব, রাহিদ ও রাজেদা খানম। এছাড়াও সঙ্গে রয়েছে দেহরক্ষীদের গাড়ি। পরপর চারটে গাড়ি প্রস্থান করলো ‘ আনন্দাঙ্গন ‘ প্রাঙ্গন হতে। সামনে ও পেছনে দেহরক্ষীদের গাড়ি। মধ্যখানে চৌধুরী পরিবার। গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যে। ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে শেখ পরিবার।

কক্সবাজার, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সদর দপ্তরের একটি শহর, মাছ ধরার বন্দর, পর্যটন কেন্দ্র । আইকনিক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত। এটি চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৫০ কিমি (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার ‘Panowa’ নামেও পরিচিত, যার আক্ষরিক অর্থ “হলুদ ফুল”। আরেকটি পুরানো নাম ছিল “পালংকি”। বহুদিন বাদে পারিবারিক ছুটি কাটাতে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ কক্সবাজারে আগমন, চৌধুরী পরিবারের। তারা সকলে চেক ইন করেছে ‘ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্প্যা কক্সবাজার’ এ। সমুদ্র তীরবর্তী অবস্থিত এ রিসোর্ট। অন্দরে প্রবেশ করলো তারা। অজানায় রয়ে গেল কিছু সুতীক্ষ্ণ চাহনি।

.

নিকষকৃষ্ণ রজনী। কক্সবাজার আগমনের পর আজ প্রথম রাত। বিছানায় শুয়ে ইরহাম। পাতলা ফিনফিনে শুভ্র শার্ট পড়ে শুয়ে সে। মানুষটির বক্ষলগ্না হয়ে শুয়ে হৃদি। ওদের আত্মজ-আত্মজা পাশেই নরম পাশবালিশের ঘেরাটোপে নিদ্রায় বিভোর। উন্মুক্ত জানালা। চঞ্চল রূপে ঘরে প্রবেশ করছে ফুরফুরে হাওয়া। নৃত্যরত পর্দার আবরণ। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণবর্ণ দীঘল চুল। আবৃত করে দিচ্ছে মুখ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের নিকটবর্তী অবস্থান করছে তারা। বিছানার মধ্যখানে মোহাচ্ছন্ন-নরম-কোমল মায়ায় লুটোপুটি খাচ্ছে চন্দ্রিমা। হালকা শীতলতম আবহাওয়া। শিরশিরানি ছড়িয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। একান্ত মানবটির সান্নিধ্যে আদিম বন্যতা জেগে তনুমনে। বহুদিন ধরে হয় না কাছাকাছি আসা। হয়না মধুরতম অধর মিলাপ। একে অপরেতে সর্বশেষ কবে মত্ত হয়েছে তা যেন এক সুদূর অতীতের আল্পনা। আজ এ নৈঃশব্দ্য রজনীতে হৃদি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উদ্দাম স্রোতে ভেসে বেড়াতে মরিয়া। ওর ঘন শ্বাস আছড়ে পড়ছিল স্বামীর বক্ষপাশে। পেলব আঙ্গুল গুলো একটু একটু করে আঁকিবুঁকি করে চলেছে বুকের বাঁ পাশে। হৃৎপিণ্ড বরাবর। আঙ্গুলের কোমলতা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল শার্টের পাতলা আবরণ ভেদ করে করে। ধীরে ধীরে হালকা হচ্ছে মানুষটির তন্দ্রাভাব। বুঝে ওঠার চেষ্টা করছে এই প্রলুব্ধকর স্পর্শের মূল হেতু। চকিতে শিরদাঁড়া বরাবর তড়িৎ প্রবাহিত হলো। অধরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরশ অঙ্কিত হচ্ছে উদোম বক্ষপটে। কতখানি সরে শার্ট। ঘন শ্বাস পড়ছে। নিয়ন্ত্রণ হারানোর উপক্রম মানুষটির। মুঠোবন্দী হয়ে আসছে হাত। কোনোরূপ স্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলো সে। বিপরীতে শুনলো নে”শাতুর স্বরে নিজ নাম,

” ইরহাম! ”

অস্ফুট সে স্বর। মা”দকতায় আচ্ছন্ন। স্ত্রীর ঘাড়ে চুলের ভাঁজে পাঁচ আঙ্গুল ডুবিয়ে দিলো মানুষটি। সম্মোহিত স্ত্রীর মুখখানি নিয়ে এলো সন্নিকটে। অধর ছুঁয়ে থুতনি। ফিসফিসিয়ে পরাভূত স্বরে জানায় সে,

” তুমি ক্লান্ত। আজ না সোনা। ”

” নাহ্! ”

থামলো না হৃদি। নিজের সনে প্রমত্ত স্রোতস্বিনীতে ভাসিয়ে নিলো তারে। আবেগের সংযমী বাঁধ ভাঙলো কিছু মুহূর্ত বাদেই। নিজ অর্ধাঙ্গীর এলোমেলো প্রগাঢ় ছোঁয়া ও আকাঙ্ক্ষিত সান্নিধ্যে স্নায়ু দুর্বল হলো। অনিয়ন্ত্রিত সত্তা। আর নিজেকে সামলাতে পারলো না ইরহাম। দুর্বল হাতে সরিয়ে দিলো স্ত্রীকে। বালিশে ঠেকে গেল মাথা। বিছানা ছেড়ে নেমে গেল স্বামী মানুষটি। আকুল নয়নে তাকিয়ে হৃদি। মানুষটি এমন করে ওকে ফিরিয়ে দিতে পারলো? দু চোখে অশ্রুধারা নামলো। অস্থির শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ। ক্ষণিকের মধ্যেই ভাঙলো ভুল। আদরের পুত্রকে কোলে তুলে নিয়েছে ইরহাম। ব্যস্ত পায়ে বিছানার ডান পার্শ্ববর্তী আরামদায়ক দোলনায় শুইয়ে দিলো। একইভাবে শুয়ে দিলো আদরের কন্যাকে। অতঃপর স্ত্রীর পানে ঘুরে তাকালো ইরহাম। সে চাহনির প্রগাঢ়তায় শিরশির করে উঠলো তনুমন। আগত মুহুর্ত অনুভব করেও আজ নত হলো না মেয়েটির আঁখিপল্লব। বরং আগত একান্ত মুহূর্তের জন্য গুছিয়ে নিলো নিজেকে। আবেদনময়ী রূপে প্রণয়-কামনার অ’গ্নি জ্বেলে একান্ত প্রিয় মানুষটিকে আহ্বান জানালো আপন উষ্ণতার শয্যা গ্ৰহণ করতে। বড্ড সাহসী আজ হৃদি নামক রমণী। এ কি হলো তার? স্বভাববিরুদ্ধ এমন সিংহী আচরণ কি করে করছে সে! ধীরপায়ে বিছানায় অগ্রসর হচ্ছে ছোট্ট সিংহীর আজ্ঞাবহ ইরহাম নামক ক্ষমতাধর, শক্তপোক্ত পুরুষটি। প্রেমাসক্ত নেত্রে তাকিয়ে সঙ্গিনীর পানে। বুকের ওপর রাখা হাতটি ধীরলয়ে নিম্নগামী হচ্ছে। একে একে উন্মুক্ত হচ্ছে পাতলা শার্টের বোতাম। একটু একটু করে দৃশ্যমান হচ্ছে পুরুষালি পেটানো দেহের সম্মুখভাগের খাঁজ কাটা একেকটা ভাঁজ। সেথায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই শুকনো ঢোক গিললো নে-শায় আসক্তা মেয়েটি। খোলা শার্টের দু ধার দু দিকে হাওয়ায় দোদুল্যমান। শার্টটি তখনো দেহে জড়িয়ে। আস্তে ধীরে সঙ্গিনীর উষ্ণতামাখা শয্যা গ্রহণ করলো মানুষটি। অতি সন্নিকটে তারা। মধ্যকার দূরত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায়। ছুঁই ছুঁই নাক। ডান হাতের পাঁচ আঙুলে শক্ত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো সঙ্গিনীর মাথার পেছনের এক গোছা চুল। ঊর্ধ্বমুখী হলো মেয়েটির মায়াবী সুশ্রী আনন। কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভূত হলেও কিছু না বলে অনড় দৃষ্টিতে তাকিয়ে একান্ত মানুষটির প্রণয়াসক্ত নভোনীল দু চোখের গভীরে। সন্নিকটে অবস্থিত আদুরে মুখটিতে উষ্ণ শ্বাস-প্রশ্বাস ছড়িয়ে দিতে দিতে, অতি লহু স্বরে নে’শা মেখে বলে উঠলো ইরহাম,

” ক্লান্তিকর রাতটা ছাড় দিতে চেয়েছিলাম। পছন্দ হলো না।এখন সামলে নাও এই উ;ন্মাদ আমিটাকে। ”

বিপরীতে কিচ্ছুটি বললো না হৃদি। করলো না কোনো দ্বিরুক্তি। বরং পরম প্রশ্রয়ে নিজের সনে আরো আগলে নিলো একান্ত মানবকে। পেলব হাত দুটি ব্যস্ত তখন আধখোলা শার্টটা পুরোপুরি দেহমুক্ত করতে। একে অপরের আঁখিতে হারিয়ে অতিবাহিত হলো কিয়ৎপল। আচমকা ইরহামের গলা জড়িয়ে ধরলো হৃদি। বিনিময়ে সে-ও তৎক্ষণাৎ পেশিবহুল দু হাতে গ্ৰহণ করে নিলো শয্যাসঙ্গিনীকে। চঞ্চল পুরুষালি পুরু অধরযুগল তখন ভ্রমরের ন্যায় ভ্রমণ করে গেল রমণীর গালে, কর্ণ পাতায়, কাঁধে, গলদেশ ও ঘাড়ে। অতঃপর সে রাত কাটলো তাদের বিনিদ্র। বাংলার দক্ষিণাঞ্চলীয় সে ঘরে ছড়িয়ে পড়লো প্রেমাকাঙ্ক্ষার তীব্রতা। হলো অধরে অধরে মিলাপ। একান্ত জনের চেনা সান্নিধ্যে নতুন করে মত্ত হলো তারা। অনুভব করতে লাগলো প্রতিটি পরশের প্রখরা। একান্ত লগ্নের অতলতায় পৌঁছে একসময় সে বদ্ধ অন্ধকার কামরায় শোনা গেল তাদের টুকরো ফিসফিসানি ধ্বনি,

” ভী-ষণ ভালোবাসি আমার হৃদরাণী। ”

” আমিও খুব ভালোবাসি আমার এমপি সাহেব। ”
.

অর্ধাঙ্গিনীর নরম-উষ্ণ ওমে ঘুমিয়ে ইরহাম। মুখ লুকিয়ে গলদেশে। ঘুম নেই শুধু সে রমণীর দু চোখে। ঘুমন্ত স্বামীর চুলের ভাঁজে গলিয়ে বাঁ হাতের আঙ্গুল। আলতো করে আঙ্গুল বুলিয়ে চলেছে সে। চিরচেনা, তার একান্ত পুরুষের পানে তাকিয়ে হৃদি। এক ভীষণ মায়া আর মুগ্ধতায় ছেয়ে চাহনি। ঘুমন্ত মানুষটির মুখশ্রীতে কে যেন অপার মায়া ও স্নিগ্ধতার রংতুলি ছুঁয়ে গেছে। তাইতো পরম সুখনিদ্রায় মগ্ন একান্ত মানুষটির প্রতি ভীষণভাবে মায়া-আদর-ভালোবাসা কাজ করছে মেয়েটির হৃদগহীনে। ক্ষণে ক্ষণে নরম ওষ্ঠাধর আলতো ছুঁয়ে যাচ্ছে স্বামীর চওড়া ললাট। হাতের তেলোয় কখনো কখনো আদর করে বুলিয়ে দিচ্ছে চাপদাড়িযুক্ত ডান গালটা। কখনো নিদ্রায় বুজে থাকা দীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট চোখ দুটো। তো কখনো সফেদ চাদরে ঢেকে থাকা উঁচু-নিচু পেশিযুক্ত কাঁধ, পিঠের একাংশ। থেকে থেকে মেয়েটা শুধু আদরের বর্ষন করেই চলেছে ঘুমন্ত ইরহামের প্রতি। অথচ মানব ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না, জানতেও পারলো না। পারলে নিশ্চিত তাকেও পাল্টা আদরটা হিসাব কষে দ্বিতীয় দফায় বুঝিয়ে দিত। ভেবেই স্বচ্ছ হাসলো হৃদি। পরক্ষণেই লজ্জালু আভা ছড়িয়ে পড়লো মুখশ্রীতে। আজ যে মানুষটার ছোঁয়ায় উ”ন্মাদনার আধিপত্য প্রবল ছিল। বিবাহিত জীবনের প্রায় আড়াই বছর পার করে আজ প্রথমবারের মতো মানুষটাকে এতটা বেসামাল হতে দেখলো হৃদি। তবুও কোনো রকম বাধা প্রদান করেনি সে। বরঞ্চ প্রশ্রয় দিয়ে কাছে টেনে নিয়েছিল আরো। এখন যে ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে।

এই সুন্দর চরিত্রের মানুষটি তার অর্ধাঙ্গ। এই বুদ্ধিদীপ্ত নভোনীল চক্ষুদ্বয়ে সদা সর্বদা দেখা যায় তার জন্য মুগ্ধতা-আকাঙ্ক্ষা-ভালোবাসা। এক নারীতে সন্তুষ্ট এ মানুষটি। কখনো কোনোরূপ স্ক্যান্ডাল কিংবা কুকর্মে জড়িয়ে যায়নি সে। নিজ আখলাক নিষ্কলঙ্ক রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই মানুষটিই তার চিরসাথী। ইহকাল ও পরকালে শুধু এরই হয়ে থাকতে চায় মন। প্রতিটি দোয়ায় সদা অটুট থাকে তার নাম। ইরহাম। সে পরম সৌভাগ্যবতী ইরহাম পত্নী হতে পেরে। তার সন্তানদের মা হতে পেরে। ভেবেই বাঁ পাশে তাকালো। বাঁ হাতে নাড়াতে লাগলো দোলনা। নিদ্রায় বিভোর দু সন্তান আরেকটু আরাম পেয়ে ঘুমিয়ে। এ জীবনে মহান আল্লাহ্ তাকে ভাবনাতীত সুখ-শান্তি দিয়েছেন। বিনিময়ে কেড়ে নিয়েছে এক মহামূল্যবান আপনজন। যার কথা স্মরণে এলে আজও ডুকরে কেঁদে ওঠে মন। পাঁজর ভেঙ্গে পায় যাতনায়। জ্বা’লা করে অন্দরে। অশান্ত হয় স্নায়ু। ‘সে’ তাদের মালিহা মা। মাতৃহারা হয়ে কেটে গেল কতকাল। দেখতে দেখতে এক বসন্ত পেরিয়ে গেল। এভাবেই যাবে দিন। কাটবে মাস। বছর। অতঃপর যুগ-যুগ। হায়! কিন্তু ফিরে আসবে না সে। স্নেহময়ী স্বরে ডেকে উঠবে না ‘ হৃদি মা! ‘

‘ মা গো। কেন এভাবে একা করে চলে গেলে? তোমার ছেলেটা যে বড্ড একা হয়ে পড়েছে। তুমি তো জানো তোমার আদরের ছেলেটা কেমন। ভেতরে ভেতরে গুমরে ম•রে যাবে তবুও টু শব্দটি করবে না সে। আমি এমনই হতভাগী স্ত্রী, স্বামীর দুর্দিনে পাশে থাকতে পারিনি। পারিনি তাকে সান্ত্বনার দু’টো বাণী শোনাতে। বুকে টেনে নিয়ে তার দুঃখ নিবারণ করতে। ব্যর্থ আমি। নিজেই যে অর্ধমৃ-ত হয়ে পড়ে ছিলাম। তাকে কিভাবে সামলাতাম? আমায় ক্ষমা করে দিও মা। আমি পারিনি তোমাকে বাঁচাতে। আমার জন্য তুমি চিরতরে হারিয়ে গেলে। চলে গেলে। ‘

ভেতরে এক চাপা কষ্ট অনুভূত হচ্ছিল। ক্রন্দনের উত্তাল তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছিল বুকে। স্বামীর চুলে আলতো করে ওষ্ঠচাপ বসালো হৃদি। মনের অরণ্য হতে প্রভুর তরে আকুলতার সহিত প্রার্থনা করে উঠলো নিভৃতে-নিঃশব্দে,

‘ ইয়া রব্বুল আ’লামিন! আমার ভাগ্যের সুখটুকু কেড়ে আমার মানুষটির নামে করে দিয়েন। কখনো কোনো দুঃখকষ্ট তাকে ছুঁতে না পাক। আমাদের এই ছোট পরিবারে আপনার রহমত ও বরকত বর্ষণ হতে থাকুক আম’রণ, ইয়া আল্লাহ্। আমরা যেন এভাবেই আপনার পথে, ইসলামের পথে থাকতে পারি। একসাথে বৃদ্ধ বয়সে হাতে হাত রেখে একে অপরের অবলম্বন হতে পারি। কখনো বিন্দুমাত্র বিচ্ছেদের স্বাদ গ্রহণ করতে না হোক। আমাদের দয়া করে এভাবেই একসাথে রাখিয়েন। আমিন! ”

দু সন্তানের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। তাদের জন্যও দোয়া করলো মেয়েটা। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো। কোথায় যেন লুকিয়ে আতঙ্ক। ভয়ের হাতছানি। কিছুক্ষণ বাদেই ফজরের ওয়াক্ত আরম্ভ হবে। নিদ্রায় আর মগ্ন হলো না মেয়েটা। নানাবিধ চিন্তায় সময় অতিবাহিত করতে লাগলো। অবচেতন মনে নিজের সঙ্গে আরো আগলে নিলো তার মানুষটিকে।

কক্সবাজার সফরের আজ দ্বিতীয় দিন। চঞ্চল সমুদ্রের স্রোতধারা। উদ্দাম হাওয়ায় উড়ু উড়ু ওড়না। এলোমেলো হয়ে মুখে আছড়ে পড়ছে কেশরাশি। আদুরে রূপে আছড়ে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। ভিজিয়ে দিচ্ছে পদযুগল। বালুকাময় তীরে এখন জলের আধিপত্য। রাহিদ ও ইনায়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। পুরুষালি হাতের মুঠোয় বন্দী পেলব হাত। উড়ে যেতে চাইছে ওড়নার কোণ। তারা নৈঃশব্দ্যে উপভোগ করে চলেছে সমুদ্রের গর্জন। শ্রবণপথে পৌঁছাচ্ছে ঢেউয়ের অনবরত প্রহার। সে এক হৃদয়ছোঁয়া ধ্বনি! পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কপোত-কপোতী। প্রেমময় শান্ত এ মুহুর্তে জাগতিক হুঁশ হারিয়ে তারা। ধ্যান জ্ঞান সবেতে সুবিশাল জলধারা।

বছরের এ সময়টিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে জনসমাগম কম। তাই তো এই সময়টি বেছে নিয়েছে ইরহাম। পরিবারের সঙ্গে এসেছে কক্সবাজার। রা’নায়া দম্পতির বিবাহিত পরবর্তী এটাই দূরের সফর। ইতিপূর্বে তারা কাছেপিঠে গিয়েছে। দূরে যাওয়ার মতো সময় ও সুযোগ কোনোটিই হয়নি। এ প্রথমবার। তাই তো ওদেরকে নিভৃতে ছেড়ে অন্যত্র পরিবারের বাকি সদস্যরা। ওরা নিজেদের মতো করে একটু সময় কাটাক। এনজয় দ্য বিউটিফুল, পিচফুল টুগেদারনেস। তবে তাদের অগোচরেই রয়ে গেল কোনো বিপদের আগমনী বার্তা। ওই তো দূরে। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কারা অনুসরণ করে যাচ্ছে! ঢাকা টু কক্সবাজার। এমনি এমনিই কি এতটা পথ পিছু নিলো তারা! কোনো কারণ তো নিশ্চয়ই রয়েছে। সেটা কি? কি এদের প্রকৃত পরিচয়?

চলবে।

#মনের_অরণ্যে_এলে_তুমি
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#অন্তিম_পর্ব ( শেষাংশ )

গোপন এক অপারেশন সম্পাদিত হলো। গ্ৰেফতার হলো মেছতা ওয়ালা সে ব্যক্তি। টানা এক সমাপ্ত যন্ত্রণাপ্রদ রিমাণ্ডে ছিল সে। সেনাবাহিনীর দু”র্ধর্ষ পিটুনি ও অ-ত্যাচারে মুখ খুলতে বাধ্য হলো। অর্ধমৃ;ত অবস্থায় জানান দিলো, রুদ্র বর্তমানে সুস্থ। অবস্থান করছে খাগড়াছড়ি। সেখান থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই স্থানান্তরিত হবে বান্দরবান। ইরহাম জানলো সবই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে এক গোপন পরিকল্পনা কষে নিলো। বাজি রাখলো নিজের ও পরিবারের প্রাণ।

পরিকল্পনা মোতাবেক সপরিবারে কক্সবাজার এলো ইরহাম। দৃশ্যমান স্বাভাবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে গোপনে কড়া নিরাপত্তায় মুড়িয়ে চৌধুরী পরিবার। ইরহাম নিশ্চিত ছিল। হাতের নাগালে তাকে পেয়ে রুদ্রনীল কখনোই মোক্ষম সুযোগটা হাতছাড়া করবে না। তা-ই হলো। সকলের চোখে ধূলো দিয়ে দিনদুপুরে সমুদ্রতীর হতে অপহ:রণ করলো হৃদি ও ইনায়াকে। আসলেই কি তাই? নাহ্। চৌধুরী নিজে সে সুযোগ করে দিয়েছে। স্ত্রী-বোনের জীবন ঝুঁকিতে রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। মিসেস হৃদি শেখ আজ আর অবলা নারী নয়। স্বামী কর্তৃক আত্মরক্ষার কৌশল আয়ত্ত্ব করেছে সে। যেকোনো বিপদে আত্মরক্ষা করার প্রাথমিক কৌশলটুকু ঠিক করায়ত্ত্বে। স্বামী মানুষটি এই গোপন পরিকল্পনা সম্পর্কে তাকে কিছুই জানায়নি। শুধুমাত্র রিসোর্ট হতে বেরোনোর পূর্বে অনেকটা সময় ধরে ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে রাখলো। বাহুডোরে আবদ্ধ করে ভরসাযোগ্য সেই কণ্ঠে বললো,

‘ আল্লাহ্ ভরসা হৃদরাণী। ইনশাআল্লাহ্ যা হবে কল্যাণকর হবে। ভয়কে জয় করবে এই আমার বিশ্বাস।’

স্বামীর বিশ্বাসের মর্যাদা রেখেছে হৃদি। বিপদের মূহুর্তে ভয় পায়নি। বরং মহান রবের ওপর ভরসা রেখেছে। বিশ্বাস করেছে স্বামীকে। সে নিশ্চয়ই ওদের ইচ্ছাকৃতভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে না! হ্যাঁ। তাই তো কিছু মুহূর্ত বাদেই ওদের উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়লো সেনাবাহিনীর অকুতোভয় বীর সন্তানেরা। অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হলো হৃদি, ইনায়া যুগল। রাহিদ অবশ্য বিপদমুক্ত। সে গিয়েছিল ডাব কিনতে। সে ডাব কিনে ফিরে আসার পূর্বেই ঘটে গেল অঘটন। কক্সবাজার মূল শহর থেকে কিছুটা ভেতর দিকে হৃদি ও ইনায়া অপহৃত ছিল। সেনাবাহিনী ওদের সুস্থ দেহে উদ্ধার করলো। কুপোকাত করলো রুদ্র বাহিনীকে। যা সম্পর্কে অজ্ঞাত স্বয়ং রুদ্রনীল। সে তো ভয়ডর দেখিয়ে, হৃদি ও ইনুর অপহৃত অবস্থার ভিভিও দেখিয়ে ইরহাম’কে হেনস্থা করার ছক কষেছিল। ওদের ইচ্ছা এবং নিজস্ব পরিকল্পনা মোতাবেক শত্রুর সঙ্গ দিলো ইরহাম। প্রথমে গাড়ি অতঃপর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই কক্সবাজার হতে বান্দরবান পৌঁছে গেল ইরহাম। পথিমধ্যে হেলিকপ্টারের দেহে সকলের অগোচরে ইরহাম লেপ্টে দিলো Family1st GPS tracker. যার সাহায্যে সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গেল সেনাবাহিনী। এরপরের ঘটনা কারো অজানা নয়। কিভাবে বধ হলো খন্দকার রুদ্রনীল মল্লিক নামক এক অ:ত্যাচারি জা’লেম।

ঘূর্ণায়মান সময়ের চাকা। পেরিয়েছে দিন, মাস, বছর। অতিবাহিত হয়েছে বছর চার।

হালকা সবুজাভ সে ঘরটি। ঘরের দুই পাশে দেয়াল ঘেঁষে ছোট ছোট আকর্ষণীয় নকশার নিরাপদ টেবিল, চেয়ার। ঘরের দেয়ালে দেয়ালে অঙ্কিত শিশুতোষ বিভিন্ন চিত্র। ফুটবল, চাঁদ, তারা, সূর্য, ছোট গাছ আঁকা দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে। হরেক রঙের রঙপেন্সিলের চিত্র দেয়ালের নিম্ন ভাগে লেপ্টে। মাঝারি আকৃতির রঙিন বোর্ডে কিছু কাঁচা হাতের ছবি ফুটে রয়েছে। ছোট ছোট চেয়ারগুলোতে বসে প্রায় বিশজন শিশু। সকলের বয়স সাড়ে চার থেকে ছয়ের নিচে। স্কুলে এখন টিফিন পিরিয়ড চলছে। বাচ্চারা যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে। ছোট ছোট হাত দিয়ে ওদের টিফিন বক্স খুলছে। কারো কারোর খাবারে মেখে যাচ্ছে হাত, মুখ, বুকের ধারে পোশাক। নাস্তা খাচ্ছে তারা। কেউ ওয়াটার বটল মুখে দিয়ে চু চু করে পানি পান করছে। কেউবা ছোট ছোট পায়ে ছুটছে বন্ধুর পিছুপিছু। সকলের ভীড়ে চুপটি করে পূর্ব কোনার দিকে চেয়ারে বসে এক মেয়ে বাচ্চা। গুলুমুলু দেহে জড়িয়ে স্কুলের ইউনিফর্ম। মসৃণ চুলগুলো দুই ঝুঁটি করে দু’পাশে বাঁধা। ফর্সা মুখখানি কেমন আঁধারে ছেয়ে। ওর পাশেই দাঁড়িয়ে শুকনো তালপাতার সেপাই মতো একটা বাচ্চা ছেলে। কিছু বলছে। আর মিটমিট করে হাসছে। বাচ্চা মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে। লালচে রঙ ছড়িয়ে মুখে। টুপ করে গড়িয়ে পড়বে বুঝি অশ্রুবিন্দু। সহসা শ্রবণেন্দ্রিয়ে পৌঁছালো আরেকটা বাচ্চা কণ্ঠের অস্পষ্ট বুলি,

” তুই ইকানে কি করছিছ? ”

চিকন বাচ্চা ছেলেটা কেমন ভীত হয়ে পড়লো। ভয়ে ভয়ে তাকালো পিছু ঘুরে। ভয় তার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলো। হৃষ্টপুষ্ট শরীরের অধিকারী আগত বাচ্চা ছেলেটা। কোমর ধরে দুই হাত। গোল গোল নভোনীল নেত্রে শাসনের চাহনিতে তাকিয়ে। নাম তার রিহাম। রিহাম চৌধুরী। মিস্টার ইরহাম চৌধুরী ও মিসেস হৃদি শেখের জ্যেষ্ঠ সন্তান। ভাইকে দেখে চেয়ারে বসে থাকা মাহিকা সাহস পেল। টুকটুকে লাল মুখাবয়ব। আস্তে করে আদুরে গলায় ডেকে উঠলো,

” ভাইয়্যু। ”

আহা! সে ডাক বড় ভাইয়ের হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছালো। রিহাম কোমর হতে হাত নামিয়ে ফেললো। ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এলো বোনের কাছে। আদরের বোনের পিঠে ছোট ছোট হাত বুলিয়ে দিলো। আহ্লাদ মাখা স্বরে বললো,

” কাঁদে না বুনু। ভাইয়্যু আসচি তো। ওকে পিট্টি দেবো। ”

মাহিকা তৎক্ষণাৎ ছোট ছোট দুই হাতে ভাইয়ের ডান হাত আঁকড়ে ধরলো। না বোধক মাথা নেড়ে বললো,

” মা-রে না। পতা। ”

” আচ্চা। মারবো না। আমরা গুড বেবি। আম্মু বলেচে। ”

মাথা নাড়ল মাহিকা। রিহাম ছোট ছোট দাঁত বের করে মিষ্টি হাসলো। তাকালো ওই চিকন ছেলেটার পানে। ছেলেটা সে-ই লেভেলের ভয় পেয়েছে। রিহাম যে চিপায় পেলে ওকে আচ্ছামতো মজা বুঝিয়ে দেবে সে বুঝতে আর বাকি নেই। দ্রুত এদিক ওদিক তাকিয়ে এক দৌড়ে পলায়ন করলো ছেলেটা। রিহাম বোনের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে সে পথে তাকিয়ে। অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বললো,

” বেদব বেবি। ”

গোধূলি পূর্ব লগ্ন। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ইনায়া। মাথা আবৃত ঘোমটায়। হাতে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গরম কফি। তাকিয়ে ওই লালচে কমলা তুলিতে অঙ্কিত অন্তরীক্ষে। অধরকোণে ফুটে তৃপ্তির আভা। শুকরিয়া আদায় করছে মহান রবের। ‘তাকে’ অবশেষে পাঠানোর জন্য। কিছুকাল সেভাবে অতিবাহিত হলো। সহসা পেছন হতে হুড়মুড়িয়ে আগমন হলো রাহিদ নামক বিবাহিত প্রেমিক পুরুষটির। আলতো করে ওর হাত ধরলো। ঘুরিয়ে দাঁড় করালো নিজের পানে। শাসক অবতারে অবতীর্ণ হয়েছে সে। চোখ গরম করে তাকিয়ে।

” তোকে না কতবার নিষেধ করেছি আজানের সময় বাইরে থাকতে নেই? কথা কি তোর কানে যায় না? ”

সারাদিন শেষে মাত্র অফিস হতে ফিরলো। ফিরে এসেই বকুনি! অভিমান হলো মেয়েটার। কফির কাপে আর চুমুক দেয়া হলো না। বিস্বাদ লাগছে সবকিছু। আস্তে করে স্বামীর হাতের মুঠো হতে নিজ হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। স্ফীত উদর আগলে ধরে প্রবেশ করলো ঘরে। রাহিদ তপ্ত শ্বাস ফেললো। উফ্। বউটা আবার অভিমান করেছে। বিগত কয়েক মাসে অভিমান আমদানি রপ্তানির পরিমাণ বেশ বেড়েছে। কিছু হলেই অভিমান করে। রাগ করে। আবার আচ্ছামতো আদরও করে। করবেটা কি? বর্তমান পরিস্থিতি যে অমনই। হুটহাট মনমানসিকতা বদলে যায়। ‘সে’ আসছে যে। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো রাহিদ। শীঘ্রই মাগরিবের আজান দেবে। এবার ঘরে ফেরা যাক। বউটার অভিমান ভাঙাতে হবে।

বিবাহিত জীবনের পেরিয়েছে কয়েক বসন্ত। অবশেষে আল্লাহ্’র রহমতে আসছে তাদের প্রথম সোনামনি। তাকে আনার প্রচেষ্টা চলছিল কয়েক বসন্ত ধরে। কিন্তু সফলকাম হয়নি রা’নায়া। ইনুর কিছু শারীরিক জটিলতা ছিল। যার জন্য গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। অমনি ভয় পেল ছেলেটা। তার কোনো বাচ্চাকাচ্চা লাগবে না। অর্ধাঙ্গী ঠিক থাকলেই হলো। সুস্থ সবল থাকলেই হলো। লাগবে না কোনো বাচ্চা। তবে এ কথায় সহমত পোষণ করতে পারেনি ইনায়া। সে জানে তার স্বামী বাচ্চাদের ঠিক কতটা পছন্দ করে। হুটহাট চলে যায় ‘ আনন্দাঙ্গন ‘। রিহাম, মাহিকা ওদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটায়। বেশ বাচ্চাপ্রেমী মানুষটা। সেখানে তাদের নিজের সন্তান হবে না! হাল ছাড়লো না ইনায়া। রবের ইবাদত বন্দেগী এবং সুচিকিৎসা দুই চলমান। অবশেষে বছর কয়েক বাদে মহান রবের অশেষ রহমতে গর্ভে এলো ‘সে’। ওদের প্রথম সন্তান। অপ্রত্যাশিত সে সুসংবাদে কাঁদলো রাহিদ। স্ত্রীকে বুকে আগলে সে কি আবেগপ্রবণ ক্রন্দন! এক বৃদ্ধাশ্রম ও এতিম মাদ্রাসায় সন্তুষ্ট চিত্তে মধ্যাহ্ন ভোজ করালো। চলছে স্ত্রীর খুউব যত্ন খেয়াল। ইনায়া এখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ইনশাআল্লাহ্ কয়েক মাস বাদেই আসবে তাদের প্রথম সন্তান।

প্রায় আধঘন্টার প্রচেষ্টা বাদে অভিমানী কন্যার অভিমান ভঙ্গ হলো। ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো রাহিদ। প্রিয়তমা স্ত্রীর অভিমান ভাঙানো যতটা না সহজ, তার চেয়ে কয়েকগুণ জটিল বাবুর আম্মুর অভিমান দূরীকরণ করা। উফ্!

” তুই আজকাল বড় অভিমানী হয়ে গেছিস রে ইনু। ”

চুলের ভাঁজে চুমু এঁকে দিলো রাহিদ। ইনায়া মুচকি হাসলো। হৃদয়কাড়া সে হাসি। স্বামীর বুকে মাথাটা ভালোমতো এলিয়ে দিলো। আহ্লাদে কণ্ঠে বললো,

” হুঁ। তোমার অভিমানিনী। যার প্রতিটি অভিমান জানে তাকে ভেঙে চুরমার করতে রয়েছো তুমি। ”

রাহিদ তৃপ্তিময় হাসলো। বিছানার হেডবোর্ডে ভালোমতো দেহ এলিয়ে দিলো। বুকে টেনে নিলো তার অনাগত সন্তানের মা’কে। হৃদয়ে লুকানো ইনু’কে।

নতুন এক দিনের সূচনা। ‘ মালিহা নারী উন্নয়ন কেন্দ্র ‘… রোজকার কর্মে ব্যস্ত নারীবৃন্দ। দোতলা এ কেন্দ্রটি। নিচতলায় অফিস ঘর ও কর্মস্থল। দোতলায় নারীদের বসবাসের স্থান। নিচতলার একটি ঘরে ব্যস্ত নারীরা সেলাই মেশিন নিয়ে। শব্দ হচ্ছে মেশিনের। চলছে বেশকিছু দক্ষ হাত। বুনন করছে পোশাক। এ পোশাক পৌঁছে যাবে স্থানীয় এক বুটিক হাউসে। সেথায় বিক্রি হবে। আরেকটি ঘরে ছোট ছোট কাঠের ব্লক দিয়ে কাজ চলছে। বস্ত্রে চলছে নানাবিধ নকশার ব্যবহার।

‘মালিহা নারী উন্নয়ন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নারীদের জন্য। এ সংস্থা সে সকল নি’র্যাতিত নারীদের আশ্রয় দেয়, যারা পারিবারিক স:হিংসতা, যৌ’তুকের জন্য শারীরিক নির্যা’তন, পরিত্যক্ত, তালাকপ্রাপ্ত, জোরপূর্বক প;তিতাবৃত্তি, ধ;র্ষণ, ফতোয়া, প্রতারণা, পা;চার, অ্যা*সিড পো’ড়ানো এবং অন্যান্য স”হিংসতার মতো বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির শিকার। এই ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাটির লক্ষ্য হলো নি’র্যাতিত নারীদের সমাজে পূর্ণ মানবিক মর্যাদার সাথে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ব্যক্তি হিসেবে পুনর্বাসন করা। তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। সেলাই, কাটিং, বুটিক, ব্লক, আর্ট প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুবিধা তৈরি করে তাদেরকে সে কর্মে নিয়োজিত করা। এ সংস্থায় বসবাসরত নারীরা নিজেদের খরচ নিজেরা চালায়। তাদের তৈরিকৃত পোশাক, হস্তশিল্প, ব্লক-বুটিককৃত বস্ত্র বিক্রি হয়। সে অর্থে তাদের জীবনযাপন স্বচ্ছল ভাবে হয়ে থাকে। আর এই উন্নয়নমূলক অগ্রণী সংস্থার মালকিন মিসেস হৃদি শেখ। সে আজ শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ার রায়হান শেখ কন্যা, সাংসদ ইরহাম চৌধুরী পত্নী কিংবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এজাজ চৌধুরীর পুত্রবধূ নয়। এখন তার নিজস্ব পরিচয় হয়েছে। নারীদের কাছে সে এক অনুপ্রেরণা। আদর্শ। সে অনন্যা। এতগুলো নারীর জন্য হৃদি বড় আপন। তাদের প্রতিটি দোয়ায় ঠাঁই পায় প্রিয় ‘বৌমণি’র নাম। হৃদির নাম।

এ সংস্থাটি হৃদির উদ্যোগে তৈরি। প্রত্যহ জীবনে পথেঘাটে বহু অসহায় নারীকে দেখতো সে। মন খারাপের মেলা বসতো অন্তরে। এক সাংসদ, দেশপ্রেমিকের সহধর্মিণী কিনা! দেশের প্রতি কাজ করে অগাধ টান‌। সেই টান হতে অসহায় নারীদের জন্য কিছু করার প্রবল বাসনা। উদ্যোগ নিলো নারী উন্নয়ন সংস্থা তৈরি করার। তবে এই প্রশংসনীয় কর্মে অর্থ পেল কোথায়? বছর দুই পূর্বে তৈরি হয় এ সংস্থা। সংস্থা তৈরীর জন্য স্বামী মানুষটি ওকে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিলো। আহ্লাদে কণ্ঠে আপত্তি জানালো হৃদি। সে নিজ উদ্যোগে কিছু করতে চায়। নিজে কোনো ভূমিকা রাখতে চায়। প্রস্তাবটা বেশ পছন্দ হলো এমপি সাহেবের। সে ওকে এক চমৎকার পথ দেখিয়ে দিলো। দেনমোহরের টাকা আজও অব্যবহৃত। হয়নি খরচ করা। সে অর্থ নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখতে পারে। খুশিতে আটখানা হলো হৃদি। চুমু এঁকে দিলো স্বামীর গালে। প্রস্তাবটা বেশ মনে ধরেছে কিনা। আলতো করে হাসলো ইরহাম। মাঝেমধ্যে ভালো টিপস্ দেয়া যেতেই পারে। যদি বিনিময়ে মেলে বউয়ের অধরের আলতো ছোঁয়া। মুচকি হেসে ইরহাম প্রস্তাব দিলো আরো একটি।

‘ আমি তোমার সংস্থায় ইনভেস্ট করতে চাই। ‘

হৃদি কিছু বলার পূর্বেই,

‘ তুমি তো বিজনেস স্টাডিজ এর স্টুডেন্ট। নিশ্চয়ই মুনাফা চেনো! কি চেনো তো? আমি তোমার প্রজেক্টে ইনভেস্ট করতে চাই। হিসাবকাল শেষে তুমি আমাকে একটা মুনাফা দেবে। আশা করি আপত্তি নেই? ‘

এমন সুন্দর প্রস্তাব। আপত্তি জানাতে ব্যর্থ হলো হৃদি। অবশেষে দেনমোহরের সম্পূর্ণ অর্থ ও স্বামী প্রদত্ত মূলধন নিয়ে শুরু হলো যাত্রা। আজ ‘ মালিহা নারী উন্নয়ন কেন্দ্র ‘ তে প্রায় ষাট জন নারীর বসবাস। তাদের নিরাপদ আশ্রয় ওই কেন্দ্র। তাদের জীবিকার উৎস ওই কেন্দ্র। ওই কেন্দ্র তাদের ভালোবাসার।

সংস্থা হতে যে অর্থ লাভ হয় তার আশি শতাংশ নারী উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। বাকি বিশ শতাংশ তাদের মিয়া বিবির। মিয়া সাহেব ওরফে ইরহামের সে মুনাফা নামক অর্থের প্রয়োজন পড়ে না। টাকাটা রয়ে যায় হৃদির কাছে। হৃদি সে-ই অর্থ নিয়ে ছোটে শপিংমল। স্বামীর জন্য গাদাগাদা শুভ্র রঙা আকর্ষণীয় পাঞ্জাবি ক্রয় করে। নিজ অর্থ দিয়ে বাবুদের জামা কেনে। চৌধুরী সাহেবের কাবার্ড খুললে আজ শুধু শুভ্রতার ছড়াছড়ি। ভিন্ন রঙের পোশাক বোধহয় বিলুপ্ত প্রায়। আরো পড়ো বিধবার পোশাক! স্বামীর আমশে মুখশ্রী দেখে মিটিমিটি হাসে হৃদি। স্বামীর সঙ্গে ম্যাচিং করে পোশাক পড়ার চেষ্টা করে। রোজ সকালে একসাথে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বেরোয় তারা। পাঞ্জাবি পড়ুয়া এমপি সাহেব এবং শাড়ি পরিহিতা তার হৃদরাণী। দেখতে লাগে নজরকাড়া। যেন আস্ত এক রাজযোটক!
_

হৃদি নারী উন্নয়ন কেন্দ্রের অফিস ঘরে বসে। পড়নে তার হালকা রঙের শাড়ি। চুল আবৃত হিজাবে। প্রসাধনবিহীন মুখশ্রী। চোখেমুখে এক উজ্জ্বল-উদ্দীপ্ত আভা। আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কথা বলছে কেন্দ্রের দু’জন নারী সদস্যের সঙ্গে। সে কথোপকথনে চুয়ে চুয়ে পড়ছিল ব্যক্তিত্ববান নারীর চারুতা। হৃদি আজ আর সে-ই পুরনো সহজ-সরল, চঞ্চল দুষ্টু মেয়েটি নেই। আজ তার নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। দু সন্তানের মা সে। সাংসদ ইরহাম চৌধুরীর সহধর্মিণী। প্রায় ষাটজন নারীকে নিয়ে গঠিত তার এই ‘ মালিহা নারী উন্নয়ন কেন্দ্র ‘. হৃদি তখন নিজ কর্মে ব্যস্ত। ঘরের বাহিরে অপেক্ষারত রাঈশা। এসেছে বোনের সঙ্গে দেখা করতে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে হলেও এ কেন্দ্রে আসার চেষ্টা করে সে। জীবনযু”দ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো নারীদের সঙ্গে সময় কাটায়। প্রশান্তির পবন বয়ে যায় তনুমনে।

রাঈশা দেখেছে। সে নিজে সাক্ষী তার বোনের উত্থান-পতন মিশ্রিত জীবনের। রাঈশা মেয়েটা ভেবেই অবাক হয়ে যায় কতটা পরিবর্তন তার সে-ই ছোট্ট হৃদুর! এককালে এই হৃদি ছিল নরমধরম, দুর্বল, সহজ-সরল। আর বড় চঞ্চল। তাই তো সে-ই তথাকথিত বড় বোনের মতো ডমিনেটিং আচরণ করতো সে। ওকে নিয়ে চিন্তিত থাকতো। সর্বদা মনে হতো সে-ই সঠিক। ছোট বোনটা অবুঝ। বোকা। ও চলতে জানে না। সিদ্ধান্ত নিতে জানে না। ভালোমন্দ বোঝে না। এজন্য নিজস্ব মতামত ওর ওপর চাপিয়ে দিতো। ওকে নিজ সিদ্ধান্তে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা সর্বদা বহাল থাকতো। তবে বোঝেনি সে, হৃদি বোকা নয়।‌ বড় বোনের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ওকে বাঁধা দিতো। তাই নীরবে সবটা মেনে নিতো সে। পূর্বের হৃদি প্রতিবাদী ছিল না। অন্যের আবেগ অনুভূতি নিয়ে বেশ সচেতন ছিল। তাই নীরবে মেনে নিতো সব। তবে আজকের হৃদি? আকাশপাতাল তফাৎ। স্বামীর হালাল সান্নিধ্য ও সীমাহীন ভালোবাসা ওকে বদলেছে। জীবনের পাঠ হাতেকলমে শিখিয়েছে। নানাবিধ উত্থান-পতন পেরিয়ে আজকের এই পরিণত হৃদি। রাঈশার আজও মনে পড়ে। আফশোস হয়। কি বোকামিটাই না সে করেছিল! এই ইরহাম চৌধুরীর সঙ্গে বোনের বিয়েতে সে বিন্দুমাত্র রাজি ছিল না। প্রথমত এক রাজনীতিবিদ কখনোই তার নরমধরম বোনের জন্য পারফেক্ট ম্যাচ নয়‌। ও সুখে থাকবে না সেখানে। দ্বিতীয়ত, তার স্বামী ফাহিম একটা ভালো সম্বন্ধ এনেছিল। পাত্র নিউরোসার্জন। বেশ সুদর্শন। হ্যান্ডসাম ইনকাম। জীবনে সুখী হতে আর কি চাই? তাই তো সে বাবার কাছে আপত্তি জানিয়েছিল। তবে ধোপে টেকেনি সে আপত্তি। বাবা নিউরো সার্জনকে বাদ দিয়ে রাজনীতিবিদ’কে বেছে নিলো। হায়! কতটা বোকা কাণ্ড ঘটিয়েছিল সে। ভাগ্যিস বাবা তার আপত্তি মেনে নেয়নি। নাহলে তার বোনটার ভাগ্যে এতখানি সুখ, ভালোবাসা থাকতো! আলহামদুলিল্লাহ্! ভালো আছে, সুখে আছে তাদের হৃদু। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিলেমিশেই তো জীবন। সদা প্রাণবন্ত সুখে থাকুক তার বোনটা। এই ওর প্রার্থনা।

রাঈশার ভাবনায় ছেদ পড়লো ‘ আপু ‘ ডাকে। হৃদি দাঁড়িয়ে সম্মুখে। মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো রাঈশা। সালাম বিনিময়ের পর উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো দুই বোন। কুশল বিনিময় হলো। কথা বলতে বলতে তারা অগ্রসর হলো কেন্দ্রের কর্মস্থলে। এখন সেথায় সময় কাটাবে তারা।

‘আনন্দাঙ্গন’. লিভিংরুমে বসেছে এক আনন্দমেলা। ‘ওরা সাতজন’ হয়েছে একত্রিত। কতদিন পর বন্ধুরা একত্রিত হলো। বর্তমানে সবাই ব্যস্ত নিজ নিজ কর্মে। মাস্টার্স শেষে কেউ নিজ ক্যারিয়ার, কেউবা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। চাইলেই সেই পুরনো আড্ডা, একসাথে জমায়েত হয়ে ওঠে না। তবে আজও অটুট সেই বন্ধুত্ব। ভাটা পড়েনি একটুও। মাসে অন্তত একবার হলেও তারা সময় করে গেট টুগেদারের আয়োজন করে। প্রত্যেকবার সে আয়োজন একেক বন্ধুর পছন্দসই লোকেশনে হয়ে থাকে। এবারের আয়োজন হৃদির পছন্দমতো আনন্দাঙ্গনে। তাই তো দুপুর নাগাদ চলে এলো সব। ছুটির দিন আজ। রাত অবধি চলবে আড্ডা। অতঃপর নৈশভোজ সেরে বিদায় নেবে তারা। রিহাম ও মাহিকাও সেথায় উপস্থিত। মামাই, খালামনিরা ওদের খুব আদর করে। ওদের ভালোবাসে। সাবু আঙ্কেলটা বেশি ভালো। কত আদর দেয়! চকলেট আইসক্রিম দেয়! খুউব ভালো সে। মাহিকা বসে আফরিনের কোলে। পাশে আফরিনের দু বছর বয়সী মেয়ে বসে ইভার কোলে। রিহাম চুপটি করে বসে নেই। মেঝেতে কার্পেটে বসে রিমোট কন্ট্রোল লাল রঙের গাড়ি চালাচ্ছে। বুম বুম শব্দ করছে মুখ দিয়ে। মাঝেমধ্যে ছুটে গিয়ে মায়ের কাছে যাচ্ছে। মা’কে হামি দিয়ে আবার বসে পড়ে খেলছে। নাদিরা হাসছে এ দেখে। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির চোখেমুখে সে এক আলাদাই উজ্জ্বলতা। বন্ধুমহল এ মুহূর্তে তাদের সাবু বেবি ওরফে সাবিতের পেছনে পড়েছে। হাসিঠাট্টার মধ্যে ওকে লেগ পুল করছে। সাবিত বসে বসে ফুঁ’সছে‌। উত্তপ্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে নাসিকা পথ দিয়ে। ফট করে উঠে দাঁড়ালো ছেলেটা। ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে হিসহিসিয়ে বললো,

‘ তোরা একেকটা হারা* ‘

আর দাঁড়ালো না সাবিত। যাওয়ার পূর্বে কাঙ্ক্ষিত নারীকে ঠিক চোখের ইশারা করে গেল। তা লক্ষ্য করে সশব্দে হেসে উঠলো বন্ধুরা। টোন কেটে বলছে,

” ওয়ে ওয়ে ”

মানুষটির একান্ত ইশারা আর উপস্থিত সকলের দুষ্টুমি। লাজে রাঙা হয়ে সে নারী দ্রুত পায়ে সেথা হতে প্রস্থান করলো।

.

ঘরের এ প্রান্ত হতে ও প্রান্ত পায়চারি করে চলেছে সাবিত। ক্ষ্যা’পা ষাঁড়ের মতো ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলছে। ওদিকে ওই বুদ্ধিহীন নারী এখনো কোন চিপায় লুকিয়ে! সব লাজশরম একবারেই পাচ্ছে নাকি? কিছু তো আজ রাতের জন্য বাকি রাখুক। তপ্ত শ্বাস ফেললো বেচারা। পায়চারি থামিয়ে দাঁড়ালো। ইন্দ্রিয় অনুভব করলো কিছু এক। সেকেন্ড কয়েক বাদে আকস্মিক বড় বড় কদম ফেলে এগিয়ে গেল দরজায়। বিন্দুমাত্র বিলম্ব না করে হাত ধরে টেনে নিলো একান্ত মানবীকে। তাকে ঘরে এনেই এক ধাক্কায় বন্ধ করে দিলো দ্বার। নারীর পিঠ ঠেকে বদ্ধ সে দ্বারে। হকচকিয়ে তাকিয়ে সাবিত পানে। সাবিত মিটিমিটি হাসছে। নেচে চলেছে দু ভ্রু। লাজুক কন্যার দু গালে কে যেন মেখে গেল লালিমা। অবনত মায়াবী দৃষ্টি। ডান হাত খামচে ধরে পরিহিত পোশাক। সাবিত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দেখছে স্বীয় অর্ধাঙ্গীকে। বিবাহিত জীবনের দুমাস অতিবাহিত হতে চললো। আজও বউয়ের লজ্জার বহর কমাতে পারলো না সে! অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা! কেমন রোমান্টিক পুরুষ সে, আজও বউয়ের লজ্জা শরম ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলতে পারলো না! হুঁ! স্ত্রীর কোমরের পাশ গলিয়ে দরজায় হাত ঠেকালো সাবিত। দু’জনার মধ্যকার দূরত্ব অতীব ক্ষীণ। আবেশে সিক্ত তরুণীর শ্বাস প্রশ্বাসের গতিবেগ বেহাল। সাবিত দূরত্ব ঘুচিয়ে আরো নৈকট্যে এলো। অধর চাপ বসালো ললাটে। নিমীলিত হলো রায়না’র আঁখিপল্লব। অনুভব করে চলেছে স্বামীর হালাল স্পর্শ। ধুকপুক ধুকপুক করছে হৃৎপিণ্ড।

পুরো পাঁচদিন বাদে মানুষটির সান্নিধ্য পাচ্ছে সে। অফিসিয়াল কাজে শহরের বাইরে গিয়েছিল সাবিত। ফিরলো আজ সকালে। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে খেয়েদেয়ে বউ সমেত চলে এলো ‘আনন্দাঙ্গন’। আফটার অল প্রিয় বন্ধুমহলের ডাক পড়েছে যে। দেখতে দেখতে তাদের হালাল বন্ধনে আবদ্ধ হবার সময় দুই মাস পেরোতে চলেছে। বিয়ের পর তাদের প্রতিটি দিন ছিল আবেগী, মধুরতম। স্বামী মানুষটি কখনো তাকে একলা ছাড়েনি।‌ সদা সর্বদা তার সঙ্গে ছিল। নতুন জীবনে মানিয়ে নিতে যথাসাধ্য সহায়তা করেছে। তাকে মুড়িয়ে রেখেছে ভালোবাসার চাদরে। দুষ্টু লোক একটা। বান্ধবীর ননদকে কবে কখন পছন্দ করে ফেলেছে কে জানে। মুখ ফুটে ওকে তো একবিন্দুও বলেনি। সোজা ইরু ভাইয়ার কাছে প্রস্তাব। বান্ধবী হৃদি অবধি বাদ। সাবিত বর্তমানে প্রাইভেট সেক্টরে জব করছে। হ্যান্ডসাম স্যালারি। দেখতে সুদর্শন। সর্বোপরি হৃদি’র বন্ধু হিসেবে খুব ভালো করেই রয়েছে চেনাজানা। প্রস্তাবটা ইরহামের পছন্দ হলো। গুরুজনদের সঙ্গে আলাপচারিতা শেষে এই সম্বন্ধে ‘হ্যাঁ’ বলে দিলো ইরহাম। এরপর? মাত্র এক মাসের মধ্যেই বাজলো বিয়ের সানাই। দুঃখিত। সানাই বাজেনি। ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী মাঝারি আয়োজন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো সাবিত এবং রায়না। সাবিত সাহেব নাকি বউ ছাড়া আজকাল রাতে ঘুমোতে পারছেন না। গা ম্যাজম্যাজ করে। কোলবালিশটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! তাই তো নিজেই লাজশরম বেচে খেয়ে তাড়াতাড়ি বিয়ের তারিখ ঠিক করার অনুরোধ জানালো।‌ এহেন কাণ্ডে হৃদি ও বন্ধুদের সে কি হাসি! শ্যালক রাহিদ তো হো হো করে হাসলো। পিঠ চাপড়ে সাবাশি দিলো।

পুরনো কথা স্মরণ করে লাজে রাঙা রায়না। লহমায় বদলে গেল তার প্রতিক্রিয়া। শিহরিত তনুমন। স্বামীর এলোমেলো পা:গলপারা পরশ ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকে। কর্ণ গহ্বরে পৌঁছাচ্ছে নে-শালো স্বর,

” আই ব্যাডলি মিসড্ ইয়্যু বেবি। ”

” সাবিত! এ-এখন না। সবাই অপেক্ষায়। ”

ঘন শ্বাস ফেলে আকুল স্বরে বললো রায়না। তা শুনলো না প্রিয়তমায় আস’ক্ত পুরুষ। অধরের মা;দকতাময় পরশ ছুঁয়ে চলেছে অবিরাম। বলিষ্ঠ দু হাতে আগলে কোমল তনু। এগিয়ে চলেছে রঙিন বিছানায়। পাঁচদিনের দুরত্ব শেষে আজ একান্ত সঙ্গিনীকে ছাড়তে নারাজ সে। পুরোপুরি না হলেও অল্প সন্তুষ্টি, আদর চাই তার। অবশ্যই চাই। পা”গলাটে পুরুষটিকে বাঁধা দিতে ব্যর্থ হলো রায়না। আবেশে নিমীলিত চক্ষু জোড়া। সে-ও সঙ্গী হলো প্রেমময় সুখের ভেলায়।

তমসাচ্ছন্ন রজনী। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ইরহাম। বক্ষলগ্না হয়ে বসে আদুরে কন্যা মাহিকা। মোবাইলে চলছে শ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনকাহিনী। মাহিকা বাবার বুকে মাথা এলিয়ে শুয়ে। মন দিয়ে শুনছে শ্রেষ্ঠ নবীর জীবনী। কখনো কোনো ভারিক্কি শব্দ বা ঘটনা বুঝতে অসুবিধা হলে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছে। মুচকি হেসে মেয়ের সমস্ত কৌতূহল মিটিয়ে দিচ্ছে বাবা ইরহাম। এভাবেই অতিবাহিত হলো অনেকটা সময়। জীবনী সমাপ্ত হলে মোবাইল পাশে রেখে দিলো ইরহাম। মেয়ের ললাটে চুম্বন এঁকে শুধালো,

” আম্মা! কি বুঝলে বলো তো? ”

মাহিকা বাবার বুকের ওপর আরেকটু উঠে শুলো। ছোট ছোট হাতে বাবার প্রশস্ত বুক জড়িয়ে ধরার বৃথা চেষ্টা করে খুশি খুশি বললো,

” নবী ভালো। ”

” হ্যাঁ আম্মা। আমাদের নবী ছিলেন শেষ নবী। শ্রেষ্ঠ নবী উনি। শুনলে না? ওনার পর আর কখনো কোনো নবী আসবেন না। উনিই.. ”

” শেচ নবী। ” বাক্য সম্পূর্ণ করলো মাহিকা।

মুচকি হেসে মেয়ের মসৃণ চুলে হাত বুলিয়ে দিলো ইরহাম,

” হ্যাঁ। শেষ নবী। আমাদের নবীজী.. ”

মেয়েকে নবীজীর জীবনী শোনাচ্ছে ইরহাম। কতক্ষণ বাদে অনুভব করলো নিশ্চুপ কন্যা। বুকে আছড়ে পড়ছে ঘন শ্বাস। ঘুমিয়ে পড়েছে সে। আলতো করে হাসলো ইরহাম। মেয়ের চুলের ভাঁজে স্নেহপূর্ণ চুমু দিলো। তখনই ঘরে প্রবেশ করলো হৃদি। কোলে তাদের দুষ্টু ছানা রিহাম। এত রাত হয়েছে। বাবু এখনো জেগে। দাদার সঙ্গে মুক্তিযু;দ্ধের ডকুমেন্টরি দেখছে। কিছুতেই আসবে না। ঘুমাবে না। হৃদি জোরপূর্বক ধরে নিয়ে এসেছে। এজন্য পেঁচামুখ করে বাবু। ঘরে পৌঁছাতেই ফুরুৎ করে মায়ের কোল বেয়ে নেমে গেল। দৌড়ে গেল বাবার কাছে। বাবার কোল ঘেঁষে বসলো। আঁকড়ে ধরলো বাবার শক্তপোক্ত একটি হাত। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললো,

” আব্বু। আমিও বঙ্গোবোন্দু হবো। ”

আধো আধো বুলিতে নিজ ইচ্ছে প্রকাশ করলো বাচ্চা ছেলেটা। চমকিত নেত্রে একে অপরের পানে তাকিয়ে ইরহাম, হৃদি! এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সে-ই শৈশবে এমন করেই তো মা’কে বলেছিল শিশু ইরহাম। আজ বললো তার জ্যেষ্ঠ সন্তান। তবে কি ইতিহাসের সত্যিই পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে! বলবে তা শুধুমাত্র সময়।

সাংসদ ইরহাম আজ আর থেমে নেই। মন কাননে চলছে ভিন্ন কোনো পরিকল্পনা। বড় কিছু করার অপেক্ষায় সে। বদল হতে চলেছে বুঝি সাংসদ পরিচয়!

ফুরফুরে এক ভোর। শীতলতম হাওয়া লুটোপুটি খাচ্ছে ঘরে। হালকা নড়ে উঠছে পর্দা। বিছানায় ঘুমন্ত দুই শিশু। নামাজের স্থানে জায়নামাজে বসে ইরহাম। পড়নে শুভ্র পাঞ্জাবি। মাথায় টুপি। তার বুকে মাথা এলিয়ে বসে হিজাবে আবৃত জীবনসঙ্গিনী হৃদি। দু’জনেই সদ্য সালাত আদায় করেছে। এখন উপভোগ করে চলেছে প্রকৃতির প্রশান্তি। মহান রবে’র অন্যতম সেরা সৌন্দর্য। ভোরের সৌন্দর্য। সঙ্গে অর্ধাঙ্গ। একান্ত সে পুরুষের বক্ষস্থলে মিশে সীমাহীন প্রশান্তি। এক জান্নাতি সুখানুভূতি। আহা! হৃদয়ছোঁয়া সে অনুভূতি! একদা পথভ্রষ্ট ছিল হৃদি শেখ নামক তরুণী। ধর্মের পথে ছিল না সে। ছিল না জীবনের কোনো লক্ষ্য। অতঃপর তার জীবনসঙ্গী রূপে রব পাঠালেন ইরহাম নামক সুপুরুষকে। যার সান্নিধ্যে একটু একটু করে জীবনের মর্ম বুঝলো হৃদি। এলো দ্বীনের পথে। নামাজী হলো। সাওম রাখে সে। শালীনতার সহিত চলাচলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। জীবনসঙ্গী হোক তো এমনই হোক। যে শুধু ইহকাল নয় বরং পরকালের সঙ্গী হবে। হাতে হাত রেখে ভুল পথ হতে সঠিক পথে চালনা করবে। হৃদি সর্বদা কৃতজ্ঞ এ মানুষটির সহধর্মিণী হতে পেরে। আজ তার জীবনের লক্ষ্য রয়েছে। রয়েছে তার জান্নাতি সুখ- তার স্বামী ও দুই সন্তান। মহান রবের নিকটে অশেষ শুকরিয়া। শুকরিয়া মালিহা মায়ের প্রতি। আল্লাহ্’র পূর্ব নির্ধারিত তাকদীর বিহীন এ মানুষটি হয়তো তার হতো না। সেদিনের হঠকারিতায় গ্রহণ করা একটি সিদ্ধান্ত আজ হৃদি’র জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত। পরম শান্তির কারণ।

হৃদি তৃপ্তিময় হেসে স্বামীর বুকে আরেকটু মিশে গেল। বুকের বাঁ পাশে শুভ্র পাঞ্জাবির ওপরেই ছুঁয়ে দিলো অধরের আলতো পরশ। মৃদু স্বরে বললো,

” জাঝাকাল্লাহু খইরন জনাব, আমার জীবনে এসে আমাকে পূর্ণ করার জন্য। ভালোবাসি আমার বাবুর আব্বু। ”

” তোমাকেও এক আকাশ ভালোবাসা বাবুর আম্মু। তুমি আর আমাদের দুই সন্তান। পূর্ণ করেছো আমায়। দিয়েছো আমায় বেঁচে থাকার কারণ। আমার সুখানুভূতির আরেক কারণ তুমি ও তোমরা। বেরঙিন এই জীবনে চিরস্বাগতম আমার হৃদরাণী। ”

স্ত্রীর ললাটে অধরের পবিত্র স্পর্শটুকু ছুঁয়ে ইরহাম। নিমীলিত তাদের দু’জনেরই আঁখিপল্লব। আবেশিত তনুমন। অনুভব করে চলেছে পরম সুখের মুহূর্তটুকু। মনগহীন হতে আবেগমথিত স্বরে জানান দিচ্ছে,

‘ বিপরীত চরিত্রের দুই সত্তার হালাল বন্ধন
খুনসুটির আড়ালে গড়ে উঠে প্রণয়ের ই’ন্দন।
পরস্পরের পারিপার্শ্বিকতায় একে অপরের মোনামি
আকস্মিক লগ্নে মনের অরণ্যে এলে তুমি! ‘
[ – মোহসিনা রুদ্র ]

•• সমাপ্ত ••

[ আসসালামু আলাইকুম পাঠকবৃন্দ। আহা! আজ সে-ই অন্তিম লগ্ন। সাড়ে তিন মাসের যাত্রা শেষে বিদায় নিচ্ছে আপনাদের প্রিয় হৃ’হাম, রা’নায়া, চৌধুরী ও শেখ পরিবার। ভিন্নধর্মী এক প্লট নিয়ে উপন্যাসের যাত্রা। প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে লিখতে যাচ্ছি। নার্ভাসনেস ছিল বেশ। উপন্যাসের প্রয়োজনে বহু অজানা জেনেছি, শিখেছি, আপনাদের মাঝে ভিন্ন কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। জানিনা কতটুকু সফল হয়েছি। তবে আপনাদের কাছ থেকে পেয়েছি অপ্রত্যাশিত অফুরন্ত ভালোবাসা! সে ভালোবাসা ও শুভকামনা-দোয়ায় প্রতিনিয়ত সিক্ত এই আমিটা। এভাবেই পাশে থাকবেন তো বন্ধুগণ? ইনশাআল্লাহ্ থাকবেন, সে আশাই করছি। আজ অন্তিম পর্বে আপনাদের সেরা মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকবো কিন্তু। মন খুলে কমেন্ট করুন। সেরা সাতটি কমেন্ট প্রকাশিত হবে পেইজ ও গ্রুপে। শুকরিয়া পাঠকবৃন্দ! ভালোবাসা অবিরাম। বিদায় নিচ্ছি তবে? আল্লাহ্ হাফিজ। ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে