মনের গহীনে সে পর্ব-০৮

0
840

#মনের_গহীনে_সে 💜
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের পরে নিজের প্রাক্তন ভালোবাসাকে কাছ থেকে দেখে একধাপ পিছিয়ে গেলো মেহেভীন। যদিও প্রাক্তন ভালোবাসা বললে ভূল হবে, তার ধারণামতে সে এখনো ভালোবাসে অভ্রকে,কিন্তু অভ্র? সে কি আদোও ভালোবাসে মেহেভীনকে নাকি কোনদিন ভালোবেসে ছিলো। মেহেভীন যখন পার্টিতে প্রবেশ করে, তখন অভ্রের মা তাকে একটি বড় পার্টি হোলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে, মধ্যখানে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘ মেহেভীন সারপ্রাইজ। ‘ ‘ সারপ্রাইজ’ শব্দটি কানে পৌঁছে যাওয়ার সাথে সাথেই মেহেভীন দেখতে পায় ব্লাক জ্যাকেট পরিহিত ফুলের বুকে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। অভ্রকে দেখে মেহেভীন এক প্রকার স্তব্ধ হয়ে আছে। যার জন্যে এতো অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার বুঝি অবসান হলো? তার প্রেমিক পুরুষের আবির্ভাব ঘটলো অবশেষে।

___________
অপরদিকে অফিসে বসে কিছু কেসের ফাইল দেখছিলো আরহাম। পাশেই মায়রা আরহামের দিকে তাঁকিয়ে আছে। আরহাম খেয়াল করে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো,’ এভ্রিথিং ইজ ওকে?’ মায়রা মাথা নাড়িয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো। আরহাম সেদিকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে,কাজে মন দিলো। তখনি আরহামের ফোনে একটা কল আসলো। সেই কল রিসিভ করে আরহাম জানতে পারলো অভ্র ফিরে এসেছে। কথাটি শুনে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। মায়রা আরহামকে অস্হির হতে দেখে প্রশ্ন করলো, ‘ কি হলো তোমার আরহাম? তোমাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন? ‘

‘ আমি আসছি। ‘ কথাটি বলেই অভ্র দ্রুত বেড়িয়ে গেলো। মায়রা বুঝতে পারলো না আরহাম হঠাৎ এমন হন্তদন্ত হয়ে কোথায় গেলো?

_______________
অভ্র এগিয়ে এসে মেহেভীনের সামনে দাঁড়ালো। মেহেভীন গালে হাত রেখে,উচ্চাস্বিত সুরে বললো, ‘ মেহেভীন দেখো আমি ফিরে এসেছি, তুমি একা নও মেহেভীন। ‘ অভ্রের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ নিজেকে সরিয়ে ফেললো। মেহেভীনকে সরিয়ে যেতে দেখে মুখস্রী গম্ভীর করে ফেললো অভ্র। মেহেভীন মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্রের দিকে তাঁকানোর সাহস হচ্ছে না তার। অদৃশ্য এক জড়তা কাজ করছে। অভ্র ফিরে এসেছে যতটা খুশি হওয়ার কথা, ততটা খুশি হতে পারছে না মেহেভীন।

অভ্র আরেকটু এগিয়ে যেতে দেখে,মেহেভীন পিছিয়ে যেতে নিলেই,অভ্রের মা এসে মেহেভীনের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘ মেহেভীন! আমার ছেলে ফিরে এসেছে এতো দূর থেকে, শুধুমাত্র তোমার জন্যে। আজকের দিনে অন্তত আমার ছেলেকে ফিরেও দিও না। অভ্রের বাবা তোমাকে আরহামের মায়ের হাতে তুলে দিয়ে, যেই ভুলটি করেছিলো, সময় এসেছে সেই ভুল শুধরানোর। ‘
অভ্রের মায়ের কথার মাঝেই, অভ্র মেহেভীনের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ মেহু! তুমি তো আমাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসো, আরহাম ও এখন অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলেছে,তাহলে আমরা কেন পারবো না? ‘
মেহেভীন হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো, কিন্তু অভ্র তাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে,একটি ডায়মন্ডের রিংয়ের বক্স বের করে। তা থেকে ছোট্ট একটি ডায়মন্ডের রিং বের করে, মেহেভীনের সামনে ধরে হাটু গেড়ে বলে, ‘ আই লাভ ইউ মেহেভীন। আই রেইলি লাভ ইউ। প্রথমে আমি আমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি,কিন্তু যখন আরহাম তোমাকে বিয়ে করে ফেললো, আমি তখন ক্ষনে ক্ষনে উপলব্ধি করেছি, আমি ঠিক কতটা তোমাকে ভালোবাসি,কিন্তু বিশ্বাস করো যখন শুনেছি তোমাদের ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে,আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। ছুটে চলে এসেছি দেশে। শুধুমাত্র তোমাকে নিজের করার জন্যে। ‘
মেহেভীন কিছুটা দিদ্বাজড়িত গলায় শুধায়, ‘ কিন্তু অভ্র!’
‘ কোন কিন্তু নয় মেহেভীন। আজকের দিনে অন্তত তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। মেহেভীন ওইল ইউ বি মাই ভেলেন্টাইন?’
মেহেভীনের ভালোবাসার মানুষ তাকে নিজের থেকে আপন করে নিতে চাইছে, কিন্তু মেহেভীনের মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। তার মন-মস্তিষ্ক জুড়ে যেন আরহামের বিচরন। মেহেভীনের থেকে কোনরুপ উত্তর না পেয়ে, অভ্র বিনা অনুমতিতে মেহেভীনের হাত ধরে আংটি পরিয়ে নিতে নিলে, হুট করে মাঝখানে আরহাম এসে, মেহেভীনকে নিজের পিছনে সরিয়ে রেখে, অভ্রের সামনা সামনা দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরহামকে বোধহয়
এইসময়ে আশা করেনি অভ্র। অভ্র বিরক্তির সহিত প্রশ্ন করে, ‘ আরহাম তুই এখানে কি করছিস? ‘

আরহাম কিছুটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় উত্তর দেয়, ‘ ওহ মাই গড! আমার বউকে তুই আমার পারমিশন ছাডা বিয়ের প্রপোজাল দিচ্ছিস, সেইটা আমি কি করে মেনে নিবো বল তো? যাক গে প্রপোজ করবি ভালো কথা, আমার থেকে পারমিশন নিবি তো তাইনা? ‘

‘ তোর বউ মানে? ‘

অভ্রের বোকা প্রশ্নে আরহাম কিছুটা উচ্চস্বরে হেসে, মেহেভীনের দিকে কডা চোখে তাকিয়ে, জবাব দেয়, ‘ কেন যাকে তুই প্রপোজ করছিলি, সে তোকে বলেনি? আমাদের ডিভোর্সের এখনো তিন মাস বাকি,প্রসেসিং চলছে। তাছাড়া সে এখনো আমার বাড়িতে থাকতে বাধ্য। তাই তোর এখনো বিয়েটা করা হচ্ছে না। ‘

অভ্রের মা এগিয়ে এসে তেড়ে প্রশ্ন করলেন, ‘ তুমি তো অন্য কাউকে বিয়ে করেই ফেলেছো, তো এখন তো অভ্র এবং মেহেভীনের বিয়েতে কোনরুপ বাঁধা দিতে পারো না তুমি। ডিভোর্সের প্রোসেসিং চলছে, ফাইন! বিয়েটা তিন মাস পরেই হবে, যখন ডিভোর্সটা কার্যকর হবে। ‘

‘ কাকিমনি তাহলে বিয়ের প্রসঙ্গটা নাহয় তিন মাস পরেই দেখা যাবে? ওকে? ‘

কথাটি বলে আরহাম মেহেভীনের হাত ধরে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে, পিছন থেকে অভ্র চেচিয়ে মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ মেহু! তুমি কোন চিন্তা করো না। তিন মাসের ব্যাপার তো? তিন মাস পরেই আমি তোমাকে বিয়ে করবো। তখন দেখবো আরহাম হাসান তালুকদার কী করে আটকায় আমাদের বিয়ে। ‘

আরহাম তৎক্ষনাৎ মেহেভীনের হাত ছেড়ে অভ্রের কাছে গিয়ে, অভ্রের জ্যাকেটের কলার ঠিক করতে করতে অভ্রের কানে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ অভ্র আমার প্রেয়সীর দিকে নজর দিবি না, আগেও বলেছিলাম, এখনো বলছি, নাহলে ইউ হেভ টু পে ফর দিজ। আরহাম হাসান তালুকদার ওয়ার্নিং একবারই দেয়। মাইন্ড ইট। ‘

কথাটি বলেই অভ্রের কলার ছেড়ে দিয়ে মেহেভীনকে নিয়ে বেড়িয়ে যায় আরহাম। অভ্র নিজের হাত শক্ত করে মুঠোয় নিয়ে,স্মিত হেসে বলে, ‘ অভ্র তালুকদারের থেকে শি/কার কেড়ে নেওয়া এতো সহজ নয় আরহাম। ‘

______________________
গাড়িতে মেহেভীনকে পাশে বসিয়ে নিজের মতো করে ড্রাইভ করে যাচ্ছে আরহাম। হিসাব সব গুলিয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের। অভ্রের হুট করে দেশে ফিরে আসা, তারমধ্যে আরহামের হঠাৎ এমন কান্ড! সবকিছু মিলিয়ে বেশ চিন্তিত মেহেভীন।

‘ খুব আনন্দ হচ্ছে না তোমার? যার জন্যে এতো অপেক্ষা করছিলে সে ফিরে এসেছে, কিন্তু আফসোস মাঝখানে আমি চলে এলাম। ‘

এতোক্ষনের ঘটনা নিরব দর্শকের ন্যায় দেখে গেলেও বর্তমানে আরহামের খোঁ/চানো কথা নিজেকে নিশ্চুপ রাখতে পারলো না। মনে পরে গেলো আরহাম এবং মায়রার ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো। মেহেভীন কিছুটা চেচিয়েই জবাব দিলো,

‘ আমি অভ্রকে ভালোবাসি! হ্যা আমি খুশি হয়েছি। আপনার তাতে কি? মুক্তি দিচ্ছেন না কেন আমাকে?
নিজে তো বিয়ে করে দিব্যি বউ নিয়ে সুখে আছেন। আমি করলেই দো/ষ? ‘

আরহামের মুখস্রী রাগে টকটকে লাল আভাতে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। সে শান্ত গলায় বললো, ‘ মেহেভীন স্টপ। ‘

মেহেভীন যেনো থামলোই না। সে তার সব ক্ষোভ উগড়ে গিয়ে বললো, ‘ কেন থামবো আমি? আপনি আমাকে দয়া করে মু/ক্তি দিন। আমি পারছি না, আপনার বন্দিনী হয়ে থাকতে। আমিও মানুষ আরহাম সাহেব। আর কত সহ্য করবো আমি? আমি যদি আমার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরে যায়, তাতে দোষের কি?’

আরহাম সহ্য করতে না পেরে গাড়ি থামিয়ে, মেহেভীনের কোম/ড় টেনে নিজের কাছে এনে নেয়। অত:পর মেহেভীনের ললাটে নিজের ললাটে ঠেকিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস নিয়ে বলে,

‘ তোমাকে আজীবন আমার মনের গহীনে বন্দিনী হয়ে থাকতে হবে মেহেভীন। ‘

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে