মনের গহীনে সে পর্ব-২৫+২৬ এবং শেষ পর্ব

0
727

#মনের গহীনে সে❤️
#পর্ব-২৫ +২৬ ( মিলন নাকি বিচ্ছেদ?)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
হুট করে কারো হাতের শীতল স্পর্শে কেঁপে উঠতেই, নিজের শাড়ি খামচে ধরলো মেহেভীন। আখিজোড়া অদ্ভুদ ভালো লাগা নিয়ে নিবদ্ধ করে ফেললো। কারণ সে জানে বরাবরের মতো তার সামনে তার ভালোবাসার মানুষ, তার আরহাম সাহেব রয়েছে। আরহাম হাত বাড়িয়ে, মেহেভীনের ললাটে চুমু দিয়ে, ললাটের টিপখানা ঠিক করে দিলো। হলুদ রঙের শাড়ি তার সাথে কাঠগোলাপের গয়নাতে, অপরুপ শুভ্রের ন্যায় সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে তার প্রেয়সীর মুখস্রীতে। মুখে নেই কোন আলাদা কৃত্রিম সাঁজের ছোঁয়া। আরহামের নির্দেশেই মেহেভীনের মুখস্রীতে কোনপ্রকার কৃত্রিম ম্যাকাপের প্রলেপ দেওয়া হয়নি। সাধারণ সাঁজের মাঝেই, অসাধারণ সৌন্দর্য ফুটে উঠে মেহেভীনের। আজ মেহেভীন এবং আরহামের গাঁয়ে হলুদ। হ্যা আজ শত বাঁধা অতিক্রম করে আবারো এক হতে চলেছে তারা। অন্তু মারা যাওয়ার তিনমাস পেরিয়ে গিয়েছে। এই তিন মাসে মেহেভীন নিজের বাড়িতেই ছিলো, তার বাবার সাথে। কারণ সামনে তার ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা ছিলো।শিরিন বেগম ঠিক করেছিলেন, পরীক্ষা শেষে, অনুষ্টান করে ঘরের বউকে স্বীকৃতি দিয়ে ঘরে তুলবেন। অন্তু চলে যাওয়াতে সকলের মনের উপর বেশ প্রভাব পরেছিলো। বিশেষ করে আরিয়ানের উপর বেশ ক্ষতিকর প্রভাব পরে। সে একপ্রকার ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। যদিও সকলের সামনে নিজেকে ঠিক দেখালেও, দিনশেষে রাতের অন্ধকারে অন্তুর বিরহে তার বুক কেঁদে উঠে। অভ্রও অস্ট্রেলিয়াতে চলে গিয়েছে। সেই ধর্ষক এবং মিসেস জুলি এখনো জেলে৷ তাদের রায় এখনো আদালত দেয়নি। তবে কেস চলছে। সবমিলিয়ে সকল প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে আরহাম এবং মেহেভীনের কালকে আবারোও বিয়ে সম্পূর্ন হবে। মেহেভীনের ঘরে, তার কাজিনেরা তাকে সাঁজিয়ে চলে গিয়েছে, তখনি সকলে অগোচরে সেখানে হুট করে আরহাম চলে আসে। আরহামের ছোঁয়ায় মেহেভীনে লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে, চলে যেতে নিলে, আরহাম মেহেভীনের হাত খপ করে ধরে, তার মুখ মেহেভীনের কানের নিকট নিয়ে ফিসফিসিয়ে আওড়ালো,
‘ ওগো হৃদয়হরনী! আমার হৃদয়খানা চুরি করে, পালিয়ে যাচ্ছো? ভুলে যেও না। অফিসার আরহামের চোখকে ফাঁকি দেওয়া এতো সহজ নয়।’

‘আ…আমি? চুরি করেছি আপনার হৃদয়?ইস বললেই হলো? ‘

মেহেভীন কিছুটা তোতলিয়ে কথাটি বলে, মেঝের দিকে তাঁকিয়ে বললো। আরহাম মেহেভীনকে টেনে, মেহেভীনের ললাটে থাকা কেশগুলো আলতো করে সরিয়ে, কানে গুজে দিয়ে বললো, ‘ চুরি তো অবশ্যই করেছো। তাও আবার বিরাট চুরি। হৃদয়হরণের মতো চুরি! এর শাস্তি বেশ কঠিন হবে কিন্তু। ‘

‘ সামান্য হৃদয়টুকুই তো চুরি করেছি। তাতে কি এমন মহাভারত অসাধ্য হয়ে গেলো শুনি? ‘

মেহেভীন মুখ বেকিয়ে প্রশ্ন করলো আরহামকে। আরহাম আলতো হেসে জবাব দিয়ে বললো,

‘ বেশ বিরাট ক্ষতি হয়ে গিয়েছে ম্যাম! আমার হৃদয়জুড়ে আপনি এমন ভাবে বিচরণ করছে। আমার সাধ্যি নেই, আপনাকে দূরে সরানোর। ‘

মেহেভীন চুপ থাকলে, আরহাম আবারোও বলে উঠে,

‘ কখনো ছেড়ে যেও না প্রেয়সী। তুমি যে আমার ব্যাক্তিগত সুখ। ‘

মেহেভীন আরহামের বুকে মাথা রেখেই উত্তর দেয়,

‘ কখনো ছেড়ে যাবো না। মৃত্যু ব্যতীত কেউ আপনার থেকে আমায় আলাদা করতে পারবে না। ‘

দরজার অপাশ থেকে ডাক পড়তেই, আরহাম এবং
মেহেভীনের হুশ ফিরে আসে। সকল কাজিনেরা মেহেভীন এবং আরহামকে একত্রে দেখে হু হা করে হেঁসে উঠে। একজন হাঁসতে হাঁসতে বলে,

‘ কি আরহাম ভাই! বউকে না দেখে থাকতে পারছো না? ‘

আরেকজন তাল মিলিয়ে দেখে, ‘ মেহেভীন ও কি কম যায় নাকি? দেখছিস না? কীভাবে বরকে জড়িয়ে রয়েছে, যেন কেউ এসে তার এত্তো হ্যান্ডসাম বরকে টুকুস করে নিয়ে চলে যাবে। হা হা হা। ‘

আরেকদফা সবাই হেঁসে উঠলো। মেহেভীন তৎক্ষনাৎ আরহামকে ছেড়ে দিয়ে, শাড়ির আচল ধরে, বার বার মোচরে যাচ্ছে হাত। আরহাম নীচের দিকে তাঁকিয়ে, আলতো করে মুচকি হাঁসে। মেহেভীন এক পলক সেই হাঁসির দিকে তাঁকায়। আরহামের আলতো মুচকি হাঁসি যেন তার সৌন্দর্যকে দ্বিগুন বৃদ্ধি করে তুলেছে।

__________________

আরহাম এবং মেহেভীনকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু আরহাম বায়না ধরেছে, তার বউকে সে সর্বপ্রথম হুলুদ লাগিয়ে দিবে। আরহামের আবদারে সে আলতো করে, মেহেভীনের ললাটে সামান্য হলুদ ছু্ঁইয়ে দিয়ে, চুমু দিয়ে দেয়। সকলে তা দেখে মুচকি মুচকি হাঁসতে থাকে। মেহেভীন তাতে আরেকদফা লজ্জা পেলেও, আরহামের তাতে বিন্দুমাত্র লজ্জাও নেই, সে তো হাতে হাত দিয়ে, তার লজ্জাবতী বউকে দেখতে ব্যাস্ত। আরহাম ফিসফিস করে শুধায়,

‘ ওগো আমার লজ্জাবতী! এখনি সব লজ্জা পেয়ে বসলে বুঝি চলবে? বাসর রাতের জন্যেও তো কিছু মনের কুঠিরে জমিয়ে রাখতে পারো তাইনা? ‘

আরহামের শীতল কথাগুলো শুনে শরীরে এক আলাদা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মেহেভীনের। আজই যেন লজ্জায় মে/রে ফেলবে আরহাম নামক অসভ্য লোকটি।

সকলে একে একে এসে, মেহেভীন এবং আরহামকে
হলুদ লাগিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে এমন সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করে যাচ্ছে অন্য একজন। দুজনকে মুগ্ধ নয়নে দেখে যাচ্ছে মায়রা। সাদা কাতান শাড়িতে বেশ সুন্দর লাগছে তাকে। খোপা করে চুলে নেই, কোন ফুলের সাঁজ। থাকবে কি করে? সে একসময় যাকে নিজের খোপাতে ফুল গুজে দেওয়ার অধিকার দিতে চেয়েছিলো, সে আজ অন্য কারো। না চাইতেও বুকটা হাহাকার করে উঠে মায়রার। চিৎকার করে কাঁদতে চায় আখিজোড়া, তবুও প্রিয় মানুষটিকে সুখে দেখে, নিজের কাছে ভালো লাগছে তার। সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে না পেলেও, তার ভালোবাসার মানুষ, তার ভালোবাসাকে পেয়েছে। মায়রা স্টেজে যাওয়ার ধৈর্য্যটুকু পাচ্ছে না, সেখানে গেলে যদি কেঁদে ফেলে? সকলে যদি টের পেয়ে যায় তার মনের গহীনে যে রয়েছে সে আর কেউ নয় স্বয়ং আরহাম। তখন ব্যাপারটা কেমন হবে? তা অত্যান্ত জঘন্য হবে। মায়রা, আরহাম এমনকি মেহেভীনও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যাবে। তাই দূরেই দাঁড়িয়ে থাকে মায়রা। শিরিন বেগম এবং আকবর হোসেন নিজের ছেলে -মেয়েকে একসাথে দেখে বেশ খুশি।অবশেষে তারা এক হতে চলেছে কিন্তু শিরিন বেগমের চিন্তা এখনো শেষ হয়নি। আরিয়ানের অবস্হা তাকে ভাবাচ্ছে। ছেলেটা হসপিটালেই পরে থাকে সারাদিন। রাতে দেরী করে বাসায় ফিরে, সেই সকালে বেড়িয়ে পরে। শুধুমাত্র নিয়ম করে মাকে ওষুধ খায়িয়ে চলে যায়। তার প্রানবন্ত ছেলেটি হুট করে কেমন ছন্নছাডা হয়ে গেলো। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড মেহেভীন এবং নিজের বড় ভাইয়ের গাঁয়ে হলুদের প্রোগামেও থাকার তার সময়ও হলো না। এতো ব্যাস্ত সে। যদিও সব তার অজুহাত। তিনি জানেন তার ছেলে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে তার হাতেও সময় কম। শরীর দিনের পর দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বড় ছেলেটি সংসারী হলেও, ছোট ছেলেটির কি হবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় ভোগছেন তিনি।

________________
রাত প্রায় তিনটার দিকে নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ির গেটে প্রবেশ করে আরিয়ান। বিয়ে বাড়ির সজ্জায় ফুটে উঠেছে তালুকদার বাড়িতে। এতো রাতেও কি সুন্দর আলোর রেশ চকচক করছে পুরো বাডিতে।
গভীর রাত হওয়ায় সকলেই ঘুমের রাজ্যে পারি দিয়েছে। অন্ধকারের তীব্র যন্ত্রনা শুধু আরিয়ানের মনেই বিষাদের দাগ কেটে ফেলেছে। আরিয়ান কিছুক্ষন আগেও, অন্তুর মাকে নিজে গিয়ে দেখে এসেছে। ভদ্র মহিলাকে নিজের মায়ের মতো যত্ন করে, নিজের হসপিটালেই চিকিৎসার ব্যাবস্হা করে দিয়েছে। আরিয়ান নিজের কক্ষে যায় না। তাদের বাগানের ধারের কাছে একটা সুইমিংপুলের সামনে, অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে। মৃদ্যু মৃদ্যু বাতাস এসে তাকে ছুইঁয়ে দিচ্ছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে তবুও সে ঠায় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বারংবার অন্তুর কথা মনে পরছে তার। অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলো তাকে। তার কথা মতোই, প্রকৃতির মাঝেই নিজের মনের গহীনে থাকা প্রিয়াকে খুঁজে বেড়ায় আরিয়ান। উপলব্ধি করে গভীরভাবে। আরিয়ান কিছুক্ষনের জন্যে আখিজোড়া বন্ধ করলেও, তার আখিজোড়ায় ভেঁসে উঠে অন্তুর হাসিমাখা স্নিগ্ধ মুখস্রীখানা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে, এক হাতে কফি নিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছিলো মায়রা। আরহামের বিয়ে উপলক্ষ্যে সে এখন আরহামের বাড়িতে রয়েছে। কিন্তু যতই ভালো থাকার নাটক করুক, দিনশেষে আরহামকে হারানোর বেদনায় তার বুকটাও হু হু করে কেঁদে উঠে। তখনি তার চোখ যায়, বাগানে থাকা একজন বেদনাদায়ক প্রেমিকের দিকে। মৃত্যু প্রেমিকার শোকে একেবারে ছন্নছাডা হয়ে গিয়েছে মানুষটি। মায়রার মনে পরে যায়, আরিয়ান আগে কত ঝগড়া করতো, কত হাঁসাতো সকলকে। সেই দিনগুলো বড্ড মিস করছে সে। সেই চঞ্চল ছেলেটির এমন বিষাদময় পরিনতি না হলেও, পারতো। মায়রা আকাশের পানে তাঁকিয়ে বলে,

‘ কি অদ্ভুদ না? সৃষ্টিকর্তা চাইলেই মিলন ঘটিয়ে দিতে পারতো তাদের! অথচ তা ঘটলো না। তার বদলে লিখে রাখলো একরাশ বিষাক্ত বিচ্ছেদের যন্ত্রনা! সেই একি যন্ত্রনায় পু/ড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি আমিও। কি চাইছে তবে সৃষ্টিকর্তা? ‘

আরিয়ানের জন্যে বড্ড খারাপ লাগছে মায়রার। সে
এক পা দু পা করে বাগানের দিকে এগিয়ে গেলো। হাতে তার ছাতা, তখনি শুনতে পেলো, আরিয়ানের মনের গহীনের ক্ষতটির আর্তনাদ। হ্যা আজ ছেলে হয়েও, সে কাঁদছে। সেদিন অন্তুর মৃত্যুতে সে কাঁদেনি। শক্ত পাথরের ন্যায় অন্তুর লাশ বুকে নিয়ে বসে ছিলো, তবে আজ সে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতেই, অন্তুকে অনুভব করে বলছে,

‘ যাকে হীনা আমি শূন্য, যার বিরহের দহনে আমার হৃদয়খানা ছাড়খাড়, অদ্ভুদ হলেও সত্যি আমার মনের গহীনে রয়েছে সে, এখনো। ‘

মায়রা কি মনে পরে যেন, আরিয়ানের কাঁধে হাত রাখলো। মায়রা কাঁধে হাত রাখতেই, আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে পিছনে ঘুড়ে, মায়রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। যেন সে এই মুহুর্তে জড়িয়ে ধরার একটার মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। মায়রা এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে গেলো। অজান্তেই তার হাত আরিয়ানের পিঠে চলে যায়। আরিয়ান মায়রাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছে এবং বিড়বিড়িয়ে বলছে,

‘ কেন আল্লাহ আমার থেকে আমার অন্তুকে কেড়ে নিলো? ও তো নিজের ভুলের শাস্তি পেয়েছিলো তাইনা? তবে আল্লাহ কেন এতো বড় ওকে শাস্তি দিলো? আমিও যে বড্ড শাস্তি পেয়ে যাচ্ছি। আমি পারছি না অন্তুকে ছাড়া থাকতে। প্লিয ফিরে এসো অন্তু। ‘

আরিয়ানের আর্তনাদে মায়রার আখিজোড়া বেয়েও, জল গড়িয়ে পরছে। আরিয়ান বেশ কিছুক্ষন পর কান্না থামিয়ে, যখন উপলব্ধি করেছে সে আবেগে, মায়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, তৎক্ষনাৎ সে মায়রাকে ছেড়ে দিলো। নিজের মাথা নুইয়ে, বিনয়ের সহিত কিছুটা অপরাধীর ন্যায় বলে,

‘ সরি মায়রা! প্লিয আমাকে ভুল বুঝো না। আমি আসলে….’

আরিয়ানকে থামিয়ে, আরিয়ানের দিকে একটা ছাতা এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘ সমস্যা নেই। আমি বুঝেছি।এই নাও ছাতাটা। ভিজে গিয়ে কিন্তু জ্বর এসে পরবে। তখন তোমার ভাই নিজের বিয়ে ফেলে, তোমার পিছনেই ছুটে বেড়াবে। বিশেষ করে তোমার অসুস্হ মা। ‘

‘ লাগবেনা। কোন জ্বর টর আসবে না আমার। তুমি এখন চলে যাও। আমি নিজেকে ঠিক সামলাতে পারবো না। ‘

আরিয়ান কিছুটা বিরক্ত নিয়েই কথাগুলো বলে, পকেট থেকে সিগারেট বের করে নিলে, মায়রা তা নিয়ে দ্রুত ফেলে দেয়। আরিয়ান মায়রার এমন আচরণে চরম ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ক্ষেপে গিয়ে বলে,

‘ সমস্যা কি তোমার? বলছি না চলে যেতে। ‘

‘সমস্যা তো অবশ্যই রয়েছে। ডক্টর হয়ে হেলথের জন্যে ক্ষতিকর সিগারেট খাবে। তা তো মোটেও ঠিক নয়। অনেক সময়টা পেরিয়ে গিয়েছি। এখন তো নিজেকে সামলাও।তোমার মতো আমিও বলতো গেলে একি সিচিয়উশনে রয়েছি। যদিও তোমার যন্ত্রনা তীব্র কিন্তু আমার অবস্হা দেখো? তুমি তাও এই ভেবে বেঁচে রয়েছো, তোমার প্রিয় মানুষটি বেঁচে নেই বলে, তাকে তুমি হারিয়েছো কিন্তু আমি? আমার ভালোবাসার মানুষতো বেঁচে থেকেই আমার হলো না। সে কাল হবে অন্যকারো। ভালোবাসার মানুষ অন্য কারো হয়ে যাওয়া ব্যাথা সহ্য করেও কিন্তু আমি দিব্যি নিজেকে ঠিক রেখেছি তাহলে তুমি কেন পারবে না? আন্টির অবস্হা দেখেছো তুমি? মানুষটা তোমার শোকে কাতর প্রায়। লাস্ট স্টেজে আছেন এখন উনি। উনার শেষ সময়ে যদি তিনি মানুষিক অশান্তিতে ভোগেন, সেইটা উনার জন্যে কতটা ক্ষতিকর হবে, বুঝতে পারছো তুমি? নিজের জন্যে না হলেও, নিজের মা, নিজের পরিবারের জন্যে নিজেকে এইবার একটু সামলাও, দয়া করে। ‘

মায়রার কথাগুলো শুনে একমুহুর্তের জন্যে থমকে দাঁড়ায় সে। সত্যিই তাকে এইবার নিজেকে সামলাতে হবে। অন্তুকে সে আজীবন মনের গহীনে রেখে দিবে কিন্তু নিজের পরিবারের জন্যে হলেও, তাকে এগিয়ে যেতে হবে। সামলাতে হবে নিজেকে। সে হাত বাড়িয়ে,মায়রার থেকে ছাতা নিয়ে নেয়। মায়রাকে ভিজতে দেখে, সে নিজেও মায়রার মাথায় ছাতা ধরে। মায়রা আলতো হাঁসে।

দূর থেকে নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে, সমস্ত কিছুই গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করেন শিরিন বেগম। অনেক বড় পাথর যেন বুক থেকে সরে গেলো তার। অজান্তেই মুচকি হাসি দেন তিনি। তার ছন্নছাড়া ছেলেটির জীবনের ছন্ন ফিরিয়ে দিতে, অবশেষে মহান আল্লাহ তায়ালা কাউকে পাঠিয়ে দিলেন, আর কোন চিন্তা নেই তার।

___________________________
বৃষ্টির মাঝে আরহামের কথা বেশ মনে পরছে মেহেভীনের। বৃষ্টি আসলেই যেন অজানা এক লজ্জা তাকে ঘিড়ে ধরে। দু মাস আগেই সেই বৃষ্টিভেজা রাতের কথা মনে পরতেই, সে একপ্রকার লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে। ভার্সিটি ক্লাস শেষে মেহেভীনের বেশ রাত হয়ে গিয়েছিলো, কিছু প্রযেক্টের কাজ ছিলো তার। তাই সে আরহামকে কল করে জানায়, সে যেন আজ মেহেভীনকে এসে নিয়ে যায়। আরহাম ও নিজের অফিস থেকে বেড়িয়ে মেহেভীনের ভার্সিটিতে আসে কিন্তু সেখানে মেহেভীনের বান্ধুবীরা আরহামকে কালো স্যুটে দেখে একপ্রকার ফিদা হয়ে, বেশ প্রশংসায় ভাঁসিয়ে দেয় আরহামকে। সেসব কথা আসতেই, রেগে ফেটে পরে মেহেভীন। সে রাগ করে, আরহামকে ছেড়েই, একাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আরহাম ও মেহেভীনের খপ করে হাত ধরে বলে,

‘ সমস্যা কি তোমার? এইভাবে চলে যাচ্ছো কেন? ‘

আরহামের প্রশ্নে মুখ ঘুড়িয়ে, মেহেভীন রাগে ফুশতে ফুশতে বলে, ‘ আমি আবার কিসের সমস্যা? যান, যান ওইসব শাকচুন্নিদের কাছে যান। ওদের তামিল হিরো আপনি। তামিল হিরোও তো আপনার কাছে ফেইল! আর আপনি! কি সুন্দর করে শুনছিলেন। একটিবার প্রতিবাদও করেননি।’

আরহাম মাথায় হাত দিয়ে ফেলে, তার প্রেয়সী আজ খুব ক্ষেপেছে। আরহাম হতাশার সুরে বলে,

‘ তো আমি কি করবো? এইগুলো নরমালি নাও।আরহাম হাসান তালুকদারের প্রতি সবসময়ই এই ক্রাশড টাইপ ব্যাপারটা রিলেটেড ছিলো। এইগুলো কমন ব্যাপার।কেন? আমার ভার্সিটি থাকাকালীন একজন তো আমার জন্যে সুইসাই/ড ও করার চেষ্টা করেছিলো । যদিও মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী ছিলো। সব ছেলেরা হাবুডুবু খেতো তার প্রেম। কিন্তু তাও তার মতো সুন্দরীকে আমি তোমার জন্যে ইগনোর করেছি, ওইযে ছোটবেলার সেই এক প্রেমে পরেছি। সেই প্রেমের মায়া থেকে আর সরতেই পারলাম না। সেদিক থেকে এই মেয়ের কাছে তোমার এইসব ভার্সিটির ফ্রেন্ড রা কিছুই নয়। বুঝলে? ‘

আরহামের মুখে অন্য কারো সৌন্দর্যের কথা শুনে আরো আরেকদফা রেগে যায় মেহেভীন। চিৎকার মেরে বলে উঠে, ‘ তো সেই মেয়েকেই বিয়ে করতেন, এতোই যখন বিশ্বসুন্দরী ছিলো সে। আমাকে কেন বিয়ে করেছেন হু! আমিও চলে যাবো, হু! অনেক দূরে যাবো। কোথাও খুঁজে পাবেন না আমাকে। তখন বুঝবেন মজা। ‘

মেহেভীনের কথা শুনে বুক মোচর দিয়ে উঠে আরহামের। তার মস্তিষ্কে হুট করে একরাশ ক্ষোভ চেপে বসে, সে খপ করে মেহেভীনের হাত ধরে চেঁচিয়ে বলে,

‘ কি কখন ধরে চলে যাবো? চলে যাবো বলছো হ্যা?
এখন তুমি চাইলেও আমার থেকে কোথাও যেতে পারবে না। দুনিয়ার কারো সাধ্য নেই, আমার মনের গহীনে থাকা প্রেয়সীকে আমার থেকে দূরে সরানোর। মাইন্ড ইট। ‘

কথাটি বলেই, আরহাম মেহেভীনকে জোড় করে নিজের গাড়িতে বসিয়ে দেয়। মেহেভীন যথেষ্ট ছটফট করে চলেছে, গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার।মেহেভীন কিছুটা ন্যাকা কান্না দিয়ে বলে, ‘, এমন করলে আমিও কিন্তু অন্তুর মতো একদিন চলে যা…’

কথাটি বলতে গিয়ে মেহেভীনের থেমে যায়। আরহামের আখিজোড়া যথেষ্ট লাল হয়ে গিয়েছে। রাগে রগ তার কপালে স্পষ্ট ফুঠে উঠেছে মেহেভীন ভয়ে কেঁপে উঠে। সে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে বিষয়টি। আরহাম যথেষ্ট স্প্রিড নিয়ে গাড়ি চালায়। মেহেভীন ভয়ে চুপচাপ থাকে। ফুল স্প্রিডে গাড়ি চালিয়ে, পাঁচ মিনিটে নিজের বাড়ির সামনে ব্রেক কষে সে। মেহেভীন কিছুটা ঝুঁকে যায়। মেহেভীন কিছুটা অবাক হয়ে যায়, আরহাম কেন তাকে তালুকদার বাড়িতে নিয়ে এসেছে? এমনিতে সে শান্ত মেজাজের মানুষ হলেও, একবার রেগে গেলে তাকে সামলানো মুশকিল হয়ে উঠে। আরহাম বেড়িয়ে, মেহেভীনের হাত ধরে, টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ি আজ সম্পূর্ন ফাঁকা। শিরিন বেগমকে নিয়ে, আরিয়ান দুদিনের জন্যে মালেশিয়া গিয়েছে চিকিৎসার জন্যে। অন্যান্য কাজের স্টাফরাও, আরহামকে দেখে নিজেদের ঘরে চলে যায় ভয়ে। আরহাম মেহেভীনকে টেনে নিয়ে আসে। অত:পর দরজা বন্ধ করে ফেলে। নিজের গাঁয়ের ব্লেজার টা ফেলে দিয়ে, মেহেভীনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

‘ খুব শখ না? আমাকে ছেড়ে দূরে চলে যাওয়ার। আজ তুমি মাত্রাধিক কথা বলেছো। তার শাস্তি তো, তোমাকে পেতেই হবে। ‘

মেহেভীন কাঁপতে কাঁপতে বলে, ‘ আমি…..

তারপর আর কিছু বলতে পারেনি মেহেভীন। আরহাম তার অধরজোড়া নিজের অধরের দখলে নিয়ে নেয়। ভালোবাসার সাথে বেশ কয়েকটা কামড় দিয়েও দেয়। মেহেভীন ব্যাথায়, আরহামের পিঠ খামচে ধরে। বেশ কিছুক্ষন পরে, মেহেভীনের অধরজোড়া ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আরহাম। মেহেভীন আয়নায় নিজের ক্ষতখানা দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। আরহাম তা দেখে আলতো হেসে বলে, ‘ এখন থেকে বুঝে শুনে কথা বলবে, আর যতবার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাব্বে ততবার এই ক্ষত দেখে নিও। ‘

তখনি বাইরে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বাজ পরতে থাকে বেশ জোড়ে। মেহেভীন দ্রুত গিয়ে আরহামকে খপ করে জড়িয়ে ধরে, কাঁপতে থাকে ভয়ে। দুজনের হৃদয়ে একইসাথে কম্পিত হতে থাকে। আরহাম হাত দিয়ে খুব যত্ন করে মেহেভীনের কাঁপা কাঁপা চিকন অধরজোড়াতে আলতো করে স্পর্শ করে। কেঁপে উঠে সারা অঙ্গ মেহেভীনের। বাইরের ঝড়ের সাথে সাথে দুজনের মনেও সমানতালে ঝড় বইতে থাকে। আরহাম যেন নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না। সে মেহেভীনের কানে ফিসফিস করে, অনুরোধের সুরে বলে, ‘ প্রেয়সী! আজ কি আমরা আমাদের সম্পর্ককে পূর্নতা দিতে পারি? তোমায় সম্পূর্ন নিজের করে নেওয়ার অধিকার টুকু দিবে আমায়? আজ বড্ড ইচ্ছে করছে, তোমায় নিয়ে ভালোবাসার এক সুখের সাগরে ডুব দিতে। সঙ্গী হবে আমার? ‘

মেহেভীনের কি সাধ্যি আছে এমন অনুরোধকে নাখোচ করার? সে তৎক্ষনাৎ আরহামের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে। নিজের প্রেয়সীর ইতিবাচক উত্তরে মুচকি হেসে, পাজকোলে তুলে, বিছানায় পরম যত্নে তাকে শুইয়ে দেয়। মেহেভীন বিছানার চাঁদর খামচে ধরে। আরহাম আস্তে করে নিজের শার্ট খুলে, মেহেভীনের কপালে চুমু খেয়ে, শক্ত করে তার হাতজোড়া আকড়ে ধরে,পাড়ি দেয় এক সুখের ভালোবাসার সমুদ্রে।

________________

সেই রাতের কথা মনে পরতেই, মেহেভীন লজ্জায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। লজ্জায় তার ফর্সা মুখস্রী টকটকে লাল হয়ে উঠে।৷ দুমাস আগে সেই রাতেই তাদের ভালোবাসা পূর্নতা লাভ করে। মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, তার প্রেমিক পুরুষ তাকে ফোন দিয়ে দেয়। মেহেভীন তৎক্ষনাৎ ফোন রিসিভ করে ফেলে। অপাশ থেকে সুমুধর পুর‍ুষ কন্ঠে আরহাম শুধায়, ‘ কি করছো প্রেয়সী? ‘
মেহেভীন উত্তর দেয় না। লজ্জায় মাথায় নুইয়ে থাকে। মেহেভীন লজ্জামাখা কন্ঠে উত্তর দেয়,
‘ তেমন কিছু করছি না। ‘
‘ হঠাৎ করে লজ্জার কারণ কি? ওহ এক সেকেন্ড! এক সেকেন্ড! তুমি বৃষ্টি দেখে, আবার সেই রাতের কথা ভেবে লজ্জা পাচ্ছো না তো? ‘

সঙ্গে সঙ্গে মেহেভীন ভাবে লোকটা বুঝলো কী করে?
মেহেভীনের ভাবনার মাঝেই, আরহাম ফের হেসে বলে,

‘ কালকে রাতের লজ্জা টুকুও একটু রেখে দিও প্রেয়সী। ‘

মেহেভীন আরহামের কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে বলে,

‘ অসভ্য লোক একটা। ‘

আরহাম সঙ্গে সঙ্গে হেঁসে উঠে।

________________
আজ আরহাম এবং মেহেভীনের বিয়ে। মেহেভীন বধুবেশে সেন্টারের একটি বিশাল রুমে বসে ছিলো, তখনি শুনতে পায় আরহাম চলে এসেছে। লজ্জায় আরেকদফা মুখ ঢেকে ফেলে। মেহেভীনের বাবা আজ মহা ধুমধাম করে বড় সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করেছেন। আরহাম ও বিশালবহুল গাড়ি করে, প্রায় ২০টির মতো গাড়ি নিয়ে সেন্টারে প্রবেশ করে। তার পড়নে গোল্ডেন শেডের ব্লাকের মধ্যে শেরওয়ানী পরেছে। চোখে কালো সানগ্লাস। বেশ সুদর্শন লাগছে তাকে। আরহামের সঙ্গে আরিয়ান এবং মায়রাও রয়েছে। আরিয়ান নিজেকে সামলিয়ে নিচ্ছে একটু একটু করে।আরহাম গিয়ে মেহেভীনের সেই রুমে গিয়ে, মেহেভীনকে পাজকোলে হুট করে তুলে ফেলে। মেহেভীন চেচিয়ে বলে, ‘ ইসস! কি করছেন আপনি? সবাই দেখলে কি ভাব্বে? ‘

‘ কেউ কিচ্ছু ভাব্বে না। আমার লাল টুকটুকে বউকে আমি নিজে বিয়ের আসরে নিয়ে যাবো। মনে রেখো প্রেয়সী, আজ আজীবনের জন্যে তোমায় আপন করে নিবো। নিজের হাতে তোমার মনের গহীনে নিজের নাম রেজিস্ট্রি করবো। ‘

আরহাম মেহেভীনকে কোলে তুলে বিয়ের আসরে নিয়ে যায়। দুজনের মধ্যে পর্দা টেনে দেওয়া হয়। কাজি সাহেব আরহামকে কবুল বলতে বললে, সে তৎক্ষনাৎ কবুল বলে ফেলে। মেহেভীনকে কবুল বলতে বললে, মেহেভীন পর্দার আড়াল থেকেই আরহামের হাঁসিমাখা মুখস্রী দেখে মুচকি হেঁসে কবুল বলে ফেলে। কবুল বলার সময় তার আখিজোড়া জলে পরিপূর্ন ছিলো। তা যে এক চরম সুখের কান্না। অবশেষে শত বাঁধা পেরিয়ে, তারা এক হয়েছে।

__________________

মেহেভীনের পছন্দের কাঠগোলাপে আরহাম এবং মেহেভীনের ঘরটি সাঁজানো হয়েছে। তার পাশে ছোট্ট পুলে, লাল ফুলে সজ্জিত করে রাখা হয়েছে। মেহেভীন অপেক্ষা করছে, কখন আরহাম আসবে। আজ বাসর রাতে সে আরহামকে এক বিশেষ সারপ্রাইজ দিবে, কিন্তু আরহাম এখনো আসেনি। এই বাড়িতে আসার পরেই, দরজায় প্রবেশের আগ মুহুর্তে আরহামের একটি কল চলে আসায়, আরহাম বেড়িয়ে যায়। আরহাম মেহেভীনকে কথা দিয়েছিলো, সে সময়মতো চলে আসবে। কিন্তু বেশ অনেক্ষন হয়ে গিয়েছে,তাও আরহামের কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে। মেহেভীনের চিন্তা হচ্ছে প্রচন্ড। সে ফোন হাতে নিয়ে, আরহামের নাম্বার ডায়াল করে, কিন্তু ফোন বন্ধ ! এইবার সে প্রচন্ড টেনশনে পরে যায়। রাত পেরিয়ে যাচ্ছে এদিকে। প্রায় সাড়ে তিনটে বাজে। মেহেভীন কল করে যাচ্ছে কিন্তু আরহামকে কিছুতেই সে ফোনে পাচ্ছে না। আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে, আরিয়ানের দরজায় নক করে। আরিয়ান ঘুমাচ্ছিলো না। অন্তুর পছন্দ এক উপন্যাস পরছিলো, তাই সে তৎক্ষনাৎ দরজা খুলতেই, মেহেভীনকে হাপাতে দেখে বলে, ‘ মেহু! কি হয়েছে তোর? ‘

‘ তোর ভাই এখুনি আসেনি আরিয়ান। আমি বুঝতে পারছি না। কোথায় সে? ফোনটাও বন্ধ। ‘

‘, কি বলিস? বাসর রাতে ভাই হঠাৎ কোথায় গেলো?
আর তুই আমাকে এই কথা এতোক্ষনে জানাচ্ছিস?’

‘ আমি ভাবলাম, তোরা সবাই ক্লান্ত। তার মধ্যে ফুপি অসুস্হ। জানলে যদি আরো অসুস্হ হয়ে যায়। ‘

মেহেভীনের কথা শুনে আরিয়ান বলে, ‘ আচ্ছা, আমি দেখছি। ‘

আরিয়ানের কথার মাঝেই, তার ফোন বেজে উঠে। সেখানে মায়রা জানায় আরহামের ছোট খাটো একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। আরহামের এক্সিডেন্ট এর খবর শুনে, এক মুহুর্তের জন্যে পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে। সে এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে, বধুবেশে হসপিটালের দিকে ছুটে যায়। আরিয়ান মেহেভীনকে থামাতে গিয়ে, নিজেও মেহেভীনের পিছনে পিছনে ছুটে যায়। মেহেভীন দৌড়াতে দৌড়াতে হসপিটালের করিডরে এসে পৌঁছায়। মেহেভীনের পিছনে আরিয়ানও আসে। সেখানে মায়রা দাঁড়িয়ে ছিলো। মেহেভীন মায়রার কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ মায়রাপু? উনি কোথায়? উনার কি হয়েছে? উনি ঠিক আছে তো? ‘

মায়রা কিছু বলার পূর্বেই, আরহাম খুড়িয়ে খুড়িয়ে কেবিন করিডোরে এসে বলে, ‘ আমি এখানে। চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি প্রেয়সী। ‘

আরহামকে দেখে বুক মোচর দিয়ে উঠে মেহেভীনের। শার্টের কলার কেমন অগাছালো। শার্টের এক সাইড ছেড়া। কপালে, হাতে ব্যান্ডিজ। মেহেভীন জাপ্টে গিয়ে, আরহামকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ আপনার এমন অবস্হা হলো কী করে? কোথায় চলে গিয়েছিলেন আপনি আমাকে ছেড়ে? ‘

আরহাম সামান্য হেসে, মেহেভীন মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ আরে পাগলি তেমন কিছু হয়নি। শুধু দোষীদের তাদের প্রাপ্য শাস্তি টুকুর ব্যাবস্হা করেছি।’

মেহেভীন আরহামের বুক থেকে উঠে অবাক হয়ে বলে, ‘ মানে? ‘

আরহাম সম্পূর্ন ঘটনা বলতে থাকে। অন্তুকে যেসব ধর্ষকেরা মে/রেছিলো, তারা কোনভাবে পালিয়ে গিয়েছিলো, তাই তাদের তৎক্ষনাৎ ধরতে আরহাম তার ফোর্স নিয়ে তাদের পিছনে ধাওয়া করে কিন্তু সেখানে এক পর্যায়ে তাদের সাথে বেশ মার/পিট হয়।
আরহামের মা/র খেয়ে অনেকেই হসপিটালে ভর্তি। মারা/মারির সময়ে আরহামও কিছুটা আঘা/ত পাওয়ায় মায়রা তাকেও হসপিটালে নিয়ে আসে।
আরহাম ঘটনাটি বলে, মেহেভীনের গালে হাত রেখে বলে, ‘ আর কোন চিন্তা নেই প্রেয়সী। ওই ধর্ষ/কদের বিরুদ্ধে সমস্ত ডকুমেন্ট জমা দেওয়া হয়েছে। কালকেই রায় বেড়িয়ে যাবে। মিসেস জুলি এবং ওই রেপি/স্টদেদ ফাঁ/সি এইবার কেউ আটকাতে পারবে না। আমাদের অন্তুর খু/নের বিচার সঠিকভাবে হবেই।’
সবকিছু শুনে আরিয়ান স্বস্তির নি:শ্বাস ফেল, তার অন্তুর খু/নিদের শাস্তি হবে অবশেষে। মেহেভীনের মুখেও হাঁসি ফুঠে উঠে। তার মধ্যে হুট করে মায়রা বলে উঠে, ‘ তার মধ্যে আরেকটা ব্যাড নিউজ ও আছে। আরহামের কাজে খুশি হয়ে, উপর মহল থেকে আরহামকে এমন একটা মিশনে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে গেলে বেঁচে ফিরে আসার চান্স ১%। এতো ডেঞ্জারেস প্লেস। ‘

মেহেভীন কথাটি শুনে আরহামের হাত ধরে, ছলছলে নয়নে বলে, ‘ এইসব কী বলছে মায়রাপু? ‘

আরহাম গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়, ‘ নিজের ডিউটি তো ফুলফিল করতেই হবে প্রেয়সী। নিজের জীবনের কথা ভাবলে চলবে না। ‘

কথাটি বলে আরহাম মেহেভীনের ললাটে চুমু খেয়ে, আশ্বাস দিয়ে বলে, ‘ তবে চিন্তা করো না। আমি ঠিক ফিরে আসবো। ‘

‘ প্লিয যাবেন না আরহাম সাহেব। এতে প্রচুর রিস্ক। ‘

আরহাম মেহেভীনের হাত ছেড়ে বলে, ‘ আমাকে আটকিও না প্রেয়সী। ৫-৬ দিনের মধ্যে আমার ফ্লাইট। ডিউটি আমাকে করতেই হবে। এখন আপাতত আমরা বাসায় যাই? ‘

কথাটি বলে আরহাম এক পা বাড়ালে, পিছন থেকে মেহেভীন আরহামের হাত নিজের পেটে রেখে, অনুরোধের সুরে বললো,

‘থেকে যান না। আরহাম সাহেব খুব বেশি কি ক্ষতি হয়ে যাবে? আমাদের জন্যে থেকে গেলে? ‘

আরহাম কথাটি শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। মেহেভীন কি বললো তাকে? আরহাম পিছনে ঘুড়তেই, মেহেভীন আরহামকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ এখন তো আমরা একা নই, আমাদের সাথে আরেকটি প্রানও রয়েছে আরহাম সাহেব। যে আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে আসতে চলেছে দুনিয়াতে। তার জন্যে হলেও, থেকে যান। ‘

আরিয়ান এবং মায়রা মেহেভীনের কথা শুনে হয়ে যায়। হ্যা মেহেভীন মা হতে চলেছে, সেই খবরটিই সে আরহামকে তাদের বিয়ের দিন উপহার হিসেবে দিতে চেয়েছিলো।
মেহেভীন আরহামের প্রতিক্রিয়া জানতে পারলো না। কিন্তু অনুভব করলো, আরহাম নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। আরহাম কিছুক্ষন পর, মেহেভীনের ললাটে চুমু খেয়ে বললো, ‘ ইউ নো প্রেয়সী? আমি হয়তো পৃথিবীর প্রথম লাকি বাবা, যে কিনা নিজের বিয়েতে নিজের সন্তানের দুনিয়াতে আগমনের বার্তা উপহার হিসেবে পেলো। সত্যিই তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। অনেক ভালোবাসি তোমায়। ‘

মেহেভীনসহ সকলে আরহামের খুশি দেখে হেসে উঠে। আরহাম ফের বলে, ‘ তাকেও আমি অনেক ভালোবাসবো দেখো! সে যে রয়েছে আমাদের মনের গহীনে। ‘

মেহেভীন মুচকি হেসে জবাব দিয়ে বলে, ‘ আমিও আপনাকে অনেক ভালোবাসি আরহাম সাহেব। আপনার খুশিতেই আমার খুশি। ‘

আরিয়ান হুট করে মেহেভীন এবং আরহামকে প্রশ্ন করে, ‘ আচ্ছা তার নাম কি রাখা হবে? ‘

আরহাম এবং মেহেভীন একসাথে উত্তর দেয়,’আরভিন। ‘

সমাপ্ত।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে