মনের গহীনে সে পর্ব-০৬

0
880

#মনের_গহীনে_সে ❤️
#Jannatul_ferdosi_rimi
#পর্ব-৬
দূর থেকে স্বামীর সাথে তার প্রাক্তনের অতি ঘনিষ্টতা দেখে মায়রা এগিয়ে গেলো। মায়রাকে দেখে মেহেভীন কিছুটা পিছে হটে গেলো। ‘ আরহাম, ঘরে চলো প্লিয। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ‘ কথাটি বলেই আরহামের হাত ধরে কোন কিছু না বলেই আরহামকে দ্রুত বাগান থেকে নিয়ে গেলো। আরহাম হয়তো কিছু বলতে চাইছিলো, কিন্তু বলতে পারলো না। মেহেভীন দুধের গ্লাস হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো,যেন দৃশ্যটি তার কাছে যথেষ্ট মন্দ ঠেকেছে। মজনুকে ভিজে থাকতে দেখে রাহেলা তাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। মেহেভীনের মনে হলো তার থেকে কেউ প্রতিনিয়ত তার শখের জিনিস কেড়ে নিচ্ছে, কিন্তু সে চাইলেও কিছু করতে পারছে না। শুধুমাত্র সহ্য করা ছাড়া।
বসন্তের শুরুর দিকের আবহাওয়াতে আকাশ জুড়ে ঘন মেঘে ঢাকা , হালকা বাতাস জানান দিচ্ছে আজকের রাতের অন্ধকারের তীব্র বৃষ্টিপাতের কথা। মেহেভীন আকাশের পানে অদ্ভুদ্ভাবে তাকিয়ে রইলো। অপরদিকে আরহামকে ঘরে নিয়ে এসে, মায়রা বিছানায় বসে পরে। আরহাম তা দেখে কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘ আমাকে এইভাবে টেনে নিয়ে আসলে কেন মায়রা?’

মায়রা বিছানার পাশে থাকা জানালা হাত দিয়ে কিছুটা ভিড়িয়ে রাখা জানালা খুলে দিলো। ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে উৎফল্লিত হয়ে বললো, ‘ আমরা আজকে ভিজবো বৃষ্টিতে আরহাম কি বলো? বৃষ্টিতে ভিজতে আমার খুব ভালো লাগে। আমার সাথে ভিজবে তুমি? ‘

আরহাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর সুরে বলে, ‘ এখন? এইসময়ে? ‘

মায়রা আরহামের হাত ধরে জানালার ধারে দেখিয়ে, বাগানে দাঁড়িয়ে থাকা মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘হ্যা এখুনি। মেহেভীনও আছে। চলো ছাঁদে যাই। ‘

আরহাম মেহেভীনের দিকে তাকিয়ে আলতো হাঁসলো। আকাশের বুকে ঠায় করে নিয়ে শীতল ধরনীতে বৃষ্টি নামলো, ভালোবাসার রং হয়ে। মেহেভীন ভাবলো সে এবার ঘরে চলে যাবে, কিন্তু ছাদের দিকে তার চোখ পড়তেই, তার আখিজোড়া স্হীর হয়ে যায়। নেত্রকোণা হয়ে পরে টলমলে। মেহেভীন তাকিয়ে দেখে ,মায়রা আরহামের হাত ধরে হাসতে হাসতে ছাদে বৃষ্টিতে ভিজছে। আরহামের সাদা শার্টে স্পষ্ট তার বিশাল দেহীর গঠনের শরীর। সেই শরীরের বুকে ঠায় করে নিয়েছে মায়রার মাথা। মেহেভীনের ছোটবেলা থেকে বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর হয়। তাই সে বৃষ্টিতে তেমন একটা ভিজতে পছন্দ করে না, কিন্তু আরহামের প্রতি মনের গহীনে থাকা সুপ্ত অভিমান নামক ক্ষোভ থেকে সে ঠায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। মেহেভীন হয়তো জানেনা, আরহামের শীতল দৃষ্টি শুধুমাত্র তাকে ঘিড়েই। আরহামের মায়রার দিকে তাঁকাতেই, তার আখিজোড়া যায়, বাগানের বাশঝাড়ের দিকে। সেখানে কেউ রিভল/বার হাতে নিয়ে মেহেভীনের দিকে শুটের উদ্দেশ্য দাঁড়িয়ে আছে। সে গু/লি করার পূর্বেই, আরহাম দ্রুত মায়রাকে ছাড়িয়ে, নিজের পকেট থেকে রিভল/বার বের করে দ্রুত সেই লোকটার পায়ে গু/লি করে দেয়।
বৃষ্টিতে ভিজে মেহেভীনের মাথা ধরে এসেছিলো,তার মধ্যে গুলা/গু/লির তীব্র শব্দ তার কানে আসতেই, মাথা ধরে সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। আরহাম তার রিভল/বার হাতেই নীচে ছুটে চলে। আরহামের দেহরক্ষীগন তৎপর হয়ে সেই আগন্তকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরে। আরহাম দ্রুত নিচে এসেই,মেহেভীনের কাছে ছুটে যায়। সে মেহেভীনের অবস্হা দেখে অস্হির হয়ে উঠে। বুকের মাঝে শক্ত করে আকড়ে ধরে মেহেভীনকে। মায়রাও দৌড়ে আরহামের কাধে হাত রেখে বলে, ‘ জাস্ট কুল ডাউন, ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে, তেমন কিছু হয়নি। ‘

মায়রার কথা শুনে আরহাম চেঁচিয়ে জবাব দেয়, ‘ কিচ্ছু হয়নি? যদি আমার প্রেয়সীর আজ গু/লি লেগে যেতো? কি হতো? তুমি বলতে পারো? যাও এখুনি খোঁজ নাও, কোন রাস্কেলের এতো বড় সাহস হয়েছে, আমার প্রেয়সীর দিকে নজর দেওয়ার। ‘

মায়রা মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে কাউকে ফোন করতে করতে বেড়িয়ে যায়। আরহাম মেহেভীনকে কোলে তুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আরিয়ান তার ভাইকে এবং মেহেভীনকে এমন অবস্হায় দেখে দ্রুত ছুটে এসে প্রশ্ন করে, ‘ ভাই! মেহুর কি হয়েছে? ‘ আরিয়ান ফাস্ট আমার ঘরে আয়।
মেহেভীন জ্ঞান হারিয়েছে। ‘কথাটি বলেই দৌড়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আরহাম।

__________

‘ আরহাম যত কিছুই করুক, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো মেহেভীনের সাথে আরহামের ডিভোর্সটি হয়নি। সবকিছুই ফেইক। আজ আমি টোটালি সিউর হয়ে গিয়েছি। ‘

একজন মহিলার কথায়, আরহামের হাতে গু/লি খাওয়া সেই যুবক জবাবা পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে জবাব দেয়, ‘ আরহাম তালুকদার আমাদের মিসগাইড করার চেষ্টা করেছে, আর কিছুই না। ‘

মহিলাটি উচ্চস্বরে হেসে জবাব দেয়, ‘ আরহাম যত বড়ই অফিসারই হোক, আমার কাছে একজন নাদান শিশু! নিজের অজান্তেই কত বড় বোকামি করে ফেললো, এইটা তো একটা ছোট জাল ছিলো, সেই জালে আরহাম হাসান তালুকদার ফেঁসে গেছে। আহা বেঁচারা। কত বড় বোকামি করে ফেললো। ‘

যুবকটি মহিলার কথা শুনে নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে হাসে।

‘ মেহেভীনের উপর নজর রাখো। সব খবর রাখো মেহেভীনের। আরহাম হাসান তালুকদারের ওয়েক পয়েন্ট সে!’

_________

আরিয়ান মেহেভীনকে চেক করছে, পাশেই মেহেভীনের হাত ধরে একঝাঁক দুশ্চিন্তা নিয়ে বসে আছে আরহাম। আরিয়ান মেহেভীনকে ইঞ্জিকশেন পু/শ করে, আরহামের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ ফোবিয়া থেকে অজ্ঞান হয়ে পরেছে,তারমধ্যে এতোক্ষন বৃষ্টিতে ভিজে, জ্বর চলে এসেছে। আমি ইঞ্জেকশন পু/শ করে দিয়েছি। হোপ সো! কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে মেহু। এখন ঘুমাচ্ছে। ‘

মায়রা ঘরে ঢুকেই একপ্রকার ক্ষিপ্ত গলায় আরহামকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ তুমি কি করেছো, আরহাম তুমি বুঝতে পারছো?
এতোটাই এক্সাইটেড না হলেও পারতে। আমাদের সাঁজানো এতো প্ল্যান সব নষ্ট হয়ে গেলো মুহুর্তেই। এখন আমাদের মিশনের মাঝখানে বেচারি মেহেভীন ফেঁসে গেলো। ‘

‘ আমি জানি, কিন্তু..’

‘ কিন্তু কি আরহাম? ‘

আরহাম শান্ত গলায় জবাব দেয়, ‘ তাই বলে কী আমি আমার মেহেভীনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবো? নো ওয়ে। আমি থাকতে আমার প্রেয়সীর কিচ্ছু হবে না। ‘

মায়রা চুপ হয়ে গেলো। আরিয়ান মেহেভীনের কপালে হাত দিয়ে বললো, ‘ জ্বর বাড়ছে ভাইয়া। ‘

আরহাম উঠে দাঁড়িয়ে একজন মেয়ে স্টাফকে দিয়ে একটা বাটিতে করে পানি আনিয়ে নিলো। ছোট কাপড় হাতে নিয়ে মেহেভীনের পাশে বসলো।

‘ এখন কি সারারাত তুমি মেহেভীনের সাথে থেকে জলপট্টি দিবে? প্লিয ডোন্ট ডু দিজ আরহাম। মেহেভীনও কিন্তু এখন সবকিছু জেনে যাবে। ‘

মায়রার কথায়, আর‍হাম ভেজানো কাপড় মেহেভীনের কপালে ঠেকিয়ে,জবাব দেয়, ‘ চিন্তা করো না। জ্বরটা কমলেই, ভোরের আগে আমি চলে যাবো। তোমরা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ‘

‘ ওকে ভাইয়া টেক কেয়ার হার। আমি আবারো মাঝরাতে এসে, দেখে যাবো। ‘

কথাটি বলেই আরিয়ান বেড়িয়ে যায়। মায়রা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়। আরহামের নেত্রকোনা বেয়ে একফোটা জল গড়িয়ে, মেহেভীনের ললাটে টুপ করে গড়িয়ে পরে। আরহাম মেহেভীনের হাতজোড়া নিজের গালে ঠেকায়, কতটা ভয় পেয়েগিয়েছিলো সে তখন। হয়তো দেরী হলে আজীবনের জন্যে হারিয়ে ফেলতো তার প্রেয়সীকে।

‘ আমি তোমাকে সবকিছুর বিনিময়ে যত্ন করে আমার মনের গহীনে লুকিয়ে রাখবো প্রেয়সী। তোমার অস্তিত্ব, উপস্হিতি সবটুকুতে ঘিড়ে আছে আমার ভালোবাসা। ‘

কথাটি বলেই আরহাম মেহেভীনের ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। মেহেভীন হাল্কা নড়ে গিয়ে আরহামের হাত শক্ত করে আকড়ে ধরে গভীর ঘুমে আছন্ন হয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয় মেহেভীন। আরহাম তা দেখে ফিক করে হেঁসে উঠে।

______________

ভোরের আলো ফুটতেই, মেহেভীনকে রেখে আরহাম ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

_________

ভার্সিটি এসে গভীর এক চিন্তায় মগ্ন মেহেভীন। কালকের রাতের কথা কিছুতেই যেন মনে পরছে না তার। সবকিছুই ঝাঁপসা তার কাছে। অন্তু মেহেভীনের পাশে বসে প্রশ্ন করে,’ কি এতো ভাবছিস রে? ‘

মেহেভীন হাল্কা হেসে জবাব দেয়, ‘, তেমন কিছুনা রে। ‘

‘ কালকে ভ্যালেন্টাইন ডে, কি প্ল্যান তোর? ‘

‘ সিংগাল মানুষের আবার কিসের ভ্যালেন্টাইন। তিনি তো অভিমান করে বিদেশে আছেন। ‘

অভ্রের কথা বলে মুখটা বেকিয়ে ফেললো মেহেভীন। মেহেভীনের কথার মাঝেই মেহেভীনের ফোনে অভ্রের মায়ের ফোন আসলো। এতোদিন পর ভদ্র মহিলার ফোন দেখে, কিছুটা অবাক হয়ে রিসিভ করে প্রথমে সালাম দিলো মেহেভীন।

জবাবা ‘ওলাইকুমুসস্লাম ‘ বলে, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ কেমন আছো মেহেভীন? ‘

‘ জ্বী ভালো, আপ্নারা ভালো আছেন?’

‘ তোমার ডিভোর্সের তো অনেকদিন হলো, তা এখন কি পরিকল্পনা তোমার? কি করবে ভেবেছো? ‘

জবাবে মেহেভীন নিষ্চুপ। তিনি উত্তর না পেয়ে বললেন, ‘ কালকে আমার বাসায় একটা পার্টি থ্রো করেছি, একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে। এসো কিন্তু। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।

কথাটি বলেই অভ্রের মা ফোন কেটে গেলেন। মেহেভীন বুঝতে পারলো, হঠাৎ তাকে কেন ডেকে পাঠালো অভ্রের মা? কিসের সারপ্রাইজ?

চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে