#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_30
#Mst_Meghla_Akter_Mim
রোদ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো। মেয়েটা রোদের দিকে তাকিয়ে আছে ।মেয়েটার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের। রোদ ভ্রু কুঁচকে মেয়েটি কে পর্যবেক্ষণ করলো। মৌ ইসলামের দিকে তাকাতেই উনি রোদের কাছে এসে বললো,
–” এই মেয়ে আমার মেয়ে হতে ই পারে না। ”
রোদ কিছু বলার আগেই মেয়েটি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, “মা আমি ই তোমার মেয়ে বিশ্বাস করো। এতদিন, এত বছর তোমাদের ছাড়া আমার খুব কষ্ট হয়েছে। তারপর যখন ই জানলাম আমি তোমাদের মেয়ে আর দেরি না করে ছুটে চলে এসেছি। ”
রোদ শান্ত গলায় বললো,” কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে যা দ্বারা তুমি দাবি করছো তুমি পায়েল?”
রোদের কথা শেষ হতে না হতে মেয়েটি একটা ছবি বের করে সবাই কে দেখিয়ে বললো,” এইযে আমার ছোট বেলার ছবি। আমার চুলের রং দেখেও চিনতে পারছ না মা? মা আমি তো তোমার গর্ভে ছিলাম তাও নাড়ীর টান অনুভব করে দেখো।”
রোদ মেয়েটির অভিনয় দেখে মনে মনে তাৎচ্ছিল্ল্যের হাসি দিলো। অবুঝ চৌধুরী আর ইশা চৌধুরী কে আজ বেশ খুশি লাগছে তা রোদের নজর এরায় নি।
মৌ ইসলাম মেয়েটির কথা কিছুতেই বিশ্বাস করছে চাইছে না। রোদ শান্ত কন্ঠে বললো,
-” ও ছবি দেখালো তাও কেনো বিশ্বাস করছো না আন্টি? হতে ই তো পারে ও তোমারই মেয়ে। ওর সব কথা শুনা দরকার আমাদের।”
রোদ আদিল চৌধুরী আর নীল ইসলামের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
–“তোমরা গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো? আনন্দের দিন তো আজকে। আমার হারিয়ে যাওয়া পায়েল ফিরে এসেছে।”
নীল ইসলাম গাল থেকে হাত সরিয়ে কড়া গলায় বললো,”পায়েল যখন হারিয়ে গিয়েছিল তখন ও শবে তিন বছরের ছিল। সে বয়সের মেয়ের নিশ্চয় এত কিছু মনে থাকবে না। মেয়েটা এসেই তোমার আন্টি আর আমাকে চিনে গেলো ব্যাপার টা আজব না?”
ইশা চৌধুরী হুট করে বলে উঠলো,” ভাই এইটাই তো সন্তানের টান। নিজের সন্তান তো তাই বুঝতে পেরেছে।”
রোদ মুখে হাসি টেনে বললো,” হুম ঠিক বলছো।”
মৌ ইসলাম বললো,” কিসের ঠিক? আমাদের মেয়েকে intentionally কেউ কিডনাফ করেছিল তাই এই মেয়েটা আমাদের মেয়ে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেউ আবারো শত্রুতা করে এই মেয়েকে পাঠাতে পারে।”
মেয়েটির মুখ শুকিয়ে গেলো, কেমন যেনো ভয়ের ছাপ মুখে ফুটে উঠলো। অবুঝ চৌধুরীর দিকে তাকালো। উনি চোখ দিয়ে কি যেনো ইশারা করলো আর মেয়েটি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
–” আমাকে এখন নিজের পরিচয়ের জন্য নিজের মা বাবার থেকে এইসব শুনতে হবে কখনো ভাবিনি। আগে যদি জানতাম এতকিছু হবে তাহলে আমি কোনোদিন ফিরে আসতাম না।”
রোদ সবকিছু ভালোভাবে খেয়াল করলো। মেয়েটির সামনে গিয়ে মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
–” আমি বিশ্বাস করি তুমি আমার পায়েল। কারণ তোমার কাছে তো ছবি আছে। আচ্ছা পায়েল কিভাবে তুমি নিজের পরিচয় পেলে? এতদিন কোথায় ছিলে? ”
মেয়েটি মুখে হাসি ফুটে তুলে বললো,” আমাকে কেউ একজন ইন্ডিয়া তে নিয়ে গিয়েছিলো ছোট বেলায়। হয়তো শিশু পাচারকারীরা আমায় কিডনাফ করেছিলো। কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো সেখানে থেকে একটা মহিলা আমাকে নিয়ে যায় আর এতদিন আমি একটা আশ্রমে ছিলাম। ওখান থেকে অবুঝ আঙ্কেলের টুইটারে একটা হারানো বিজ্ঞপ্তি দেখে দেখলাম আমার ছবি! আমি আর এক মুহূর্ত থাকতে পারি নি ওখানে ছুটে চলে এসেছি মা বাবার জন্য আর তোমার জন্য রোদ ।”
ঈশান বলে উঠলো,” ভাই ওই মেয়েটা মিথ্যা বলছে। ”
ঈশানের কথা শুনে মেয়েটা কিছুটা ভয় পেলো। রোদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” তুই কিভাবে জানলি? ”
–” ওই মেয়েকে আমি আজকে সকালেই দেখেছি ওষুধ আনতে গিয়ে। ”
মেয়েটি তুতলিয়ে বললো,” হুম আমার শরীর খারাপ লাগছিল তাই ওষুধ নিতে গেছিলাম। প্রায় তিন দিন আপনাদের খুঁজতে খুঁজতে আমার শরীর বেশ খারাপ লাগছে।”
ঈশান আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা চৌধুরী দাঁতে দাঁত পিসিয়ে ঈশানের হাত ধরে বললো,
–” তোর এত কথা বলতে হবে কেনো? যা এখান থেকে।”
–“কিন্তু মা….
ঈশানের কথা শেষ না হতে ই রোদ বললো, “কারো থেকে কিছু শুনতে চাই না আর। আমি বুঝতে পেরেছি এই আমার পায়েল। ওর কাছে যথেষ্ঠ প্রমাণ আছে ওর পরিচয় নিয়ে। আর দরকার হলে সবার বিশ্বাস এর জন্য ডিএনএ টেস্ট করে নিবো!”
অবুঝ চৌধুরী বললো, “আর করতে হবে না। আমি সবকিছু করে এনেছি।”
উনার কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকালো। কিভাবে উনি টেস্ট করলো? স্যাম্পল কই পেলো উনি এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মাথায়। মৌ ইসলাম আর নীল ইসলাম বললো,
–” কিভাবে টেস্ট করলে তুমি? আমাদের তো কোনো স্যাম্পল নেয়া হয় নি।”
আদিল চৌধুরী এতক্ষণে গম্ভীর গলায় বললো,” সেই তো অবুঝ তুই কিভাবে টেস্ট করালি?”
অবুঝ চৌধুরী একটু হাসি দিলো। মুখে হাসি টেনে বললো,”ভাইয়া সব প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত আমি কিভাবে একটা মেয়েটা পায়েল বিশ্বাস করি বলতো? মেয়েটি আমার কাছে এসে সবকিছু বললো কিন্তু আমি কথায় বিশ্বাস করি নি। মৌ আপার চুল থেকে স্যাম্পল নেয়া হয়েছে আর আমার এক বন্ধু টেস্ট করেছে সেজন্য কিছু ঘণ্টার মধ্যেই সবকিছু বুঝতে পেরেছি। ”
মৌ ইসলাম বললো,” আমার চুল তো আমার থেকে নাও নি তুমি! ”
ইশা চৌধুরী মৌ ইসলামের পাশে গিয়ে বললো,” আপা তুমি তো জানো না। অবুঝ আমায় ফোন করে সবকিছু বলার পর তোমার চিরুনী তে তোমার কয়েকটা চুল ছিল সেখান থেকে চুল নিয়েছি। তোমায় জানায় নি কারণ যদি মেয়েটা পায়েল না হয় তাহলে তোমাদের কষ্ট আরো বেড়ে যেতো। ”
নীল ইসলাম টেস্ট রিপোর্ট দেখলো। সবকিছু মিলিয়ে মৌ ইসলাম আর নীল ইসলাম মেনে নিলো এইটাই পায়েল কিন্তু মৌ ইসলামের মনের মাঝে খুত খুত করছে।
প্রিন্স যেনো কোনো মতেই এই মেয়েকে দেখে খুশি নয়। যেখানে সে বোন কে দেখার জন্য এত আগ্রহ করত। আয়রা সবকিছু দেখে মেঘের কথা ভাবছে। মেঘ কতটা কষ্ট পাবে এ ভেবে আয়রার অনেক খারাপ লাগছে কিন্তু মেঘ কই এই চিন্তা হঠাৎ মাথায় আসলো। আয়রার এই চিন্তার মাঝেই প্রিন্স আয়রার কাছে ফিস ফিস করে বললো,
–“এই মেয়েটা কে দেখে আমার আনন্দ হচ্ছে না আপু। কিন্তু মেঘ আপু কে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন আমার খুব আনন্দ হয়েছিলো।”
আয়রা কিছু বললো না। ওর মাথার ভেতরে মেঘের কথা ঘুরছে। রোদের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোদ বেশ স্বাভাবিক। ঈশান কে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। আয়রা আর দেরি না করে মেঘের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। ঈশানও সাথে সাথে গেলো। আয়রা ঈশান মেঘের ঘরের সামনে যেতেই দেখলো মেঘ ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। মেঘের মুখ ফ্যাকাসে। ঈশান চিন্তিত চোখে তাকিয়ে আছে আর আয়রা কেও অস্থির লাগছে। মেঘ ওদের এ অবস্থা দেখে বললো,
–“তোমাদের এমন দেখায় কেনো?”
আয়রা গড় গড় করে সবকিছু বলে দিলো। কথাগুলো শোনার পর মেঘ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। তার বিরুদ্ধে এক বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে তা বুঝতে বাকি রইলো না কিন্তু রোদ এইভাবে মেয়েটা কে মেনে নিয়েছে শুনে বিরাট ধাক্কা খেলো। মেঘের কোনো কথায় শুনল না কিন্তু বাহিরের একটা মেয়ের কথায় বিশ্বাস! এ কিভাবে মানবে মেঘ? মেঘ কেনো কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। একের পর এক ধাক্কা এই অসুস্থ শরীর আর নিতে পারলো না। মেঘ মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে নিতেই ঈশান ধরে নিলো। ঈশানের দিকে ছল ছল চোখে তাকালো মেঘ। ঈশান মেঘ কে দাঁড়িয়ে দিয়ে বললো,
–“তুই ঠিক আছিস এখন? মেঘ বিশ্বাস কর ওই মেয়েটা মিথ্যা বলছে। আজ যে মেয়ের কথা বললাম তোকে ওই মেয়েটা ই সেই মেয়ে।”
আয়রা বললো,” ভাবি তুমি ভেঙে পড় না। পায়েল আসলে আসুক তুমি তো ভাইয়ার বউ।”
মেঘ ওদের কারো কথার উত্তর দিলো না। বললো, “নিচে যাব।”
বলেই যেতে নিলো ঈশান, আয়রা ধরতে নিলো কিন্তু কারো কথা ই শুনল না। দ্রুত পায়ে হাঁটছে কিন্তু পথ যেনো শেষ হচ্ছে না পা ভারী হয়ে আসছে। মেঘ প্রায় নিচে আসতেই মেঘের দিকে আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরীর চোখ গেলো। মেঘ কে উন্মাদের মত লাগছে। আদিল চৌধুরী আর রোজা চৌধুরীর চিন্তা আরো গাঢ় হল মেঘ কে দেখে। মেয়েটি বসে আছে, রোদ নীল ইসলামের পাশে বসে। মেঘ কে দেখে সবাই চিন্তিত হলেও রোদ বেশ স্বাভাবিক। মেঘ কে আসতে দেখেই রোজা চৌধুরী মেঘের কাছে গেলো।মেঘ রোজা চৌধুরীর দিকে তাকিয়েই রোদের দিকে তাকালো ।এই চোখে বড্ড অভিমান জমা হয়েছে।
রোদ উঠে দাঁড়িয়ে মুখে হাসি টেনে বললো, “মেঘ এই সেই পায়েল। যাকে আমি ভালোবাসি! তোমাকে ওর কথা বলেছিলাম না!”
মেঘ মোটেও আশা করেনি রোদ এভাবে বলবে। মেঘের মনে প্রশ্ন জাগছে অনেক। রোদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে,
— এক মুহূর্তে কিভাবে মানুষ পাল্টে যেতে পারে রোদ? আমাকে পায়েল না মানলে ও মেঘ হিসেবে যে যত্ন করতেন তাও কি শেষ মুহূর্তে ই? একটুও কি ভালবাসেন না আমায়?”
রোদ যেনো মেঘের প্রতিটা কথা বুঝতে পারছে কিন্তু রোদ নিরুপায়। মেঘের এই কষ্ট রোদ দেখতে পারছে না একদম ই। রোদ মনে মনে বললো,” ক্ষমা করো আমায় প্লিজ। ”
মেঘের কোনো উত্তর না পেয়ে আয়রা, রোজা চৌধুরী মেঘের গায়ে স্পর্শ করে বললো,” মেঘ! ”
মেঘ ঘোর থেকে বেরিয়ে আসলো। চোখে আসা জল আর পড়তে দিলো না। মুখে মৃদু হাসি টেনে বললো,
–‘congratulations মিস্টার রোদ্দুর চৌধুরী ।তাহলে তো আমার সময় শেষ এখানে!’
আদিল চৌধুরী উঠে বললো, “না বউ মা এইটা তোমার বাড়ি। আর তুমি রোদের বিবাহিত স্ত্রী।”
মেঘ উনার দিকে একটু তাকিয়ে রোদের দিকে তাকালো। রোদ মেঘের চোখে চোখ রাখছে না। মেঘ বললো,
–” বাবা আমি তো সারাজীবনের জন্য এ বাড়িতে আসি নি। পায়েল কে রোদ ভালোবাসে আর ভালোবাসার মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আমি থাকতে চাই না। ”
মৌ ইসলাম গড়া গলায় বললো,” মেঘ আজেবাজে কথা বলিস না। তোরা-স্বামী স্ত্রী ভুলে যাস না। পায়েল এখন তৃতীয় ব্যক্তি তুই নয়।”
মৌ ইসলামের কথা শেষ হতে ই রোদ বললো, “আন্টি ভুল বললে। আমার জীবনে শুধু পায়েল ছাড়া কেউ থাকতে ই পারে না। মেঘ কে এমনিতেই কখনো আমি মানি নি।”
মেঘের কণ্ঠ ধরে আসলো। মানুষ টা কেনো এমন করছে তার সাথে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে এমন সময়ে ই একটা মেয়েলি কণ্ঠ মেঘের কানে আসলো, বলছে,
-“রোদ তুমি আমাকে এত ভালোবাস! জানতাম আমার জন্য এমন ই একজন রয়েছে। ”
কণ্ঠ টা খুব চেনা লাগলো।তবে বুঝলো এইটাই ছদ্মবেশী পায়েল হবে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মেঘ আরেক দফা চমকে গেলো। মেঘ আস্তে করে বললো,
–“জান্নাত!”
মেয়েটি মেঘের মুখ দেখেই চমকে গেলো। জান্নাতের দিকে মেঘ এগিয়ে গেলো, জান্নাত মেঘের দিকে আর চাইছে না। জান্নাতের কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,
–” কেমন আছো পায়েল? তোমাকে দেখার প্রচণ্ড ইচ্ছা ছিল আমার কিন্তু সেই পায়েল যে এই পায়েল হবে আমি কল্পনা ও করি নি। ”
জান্নাত ভেবেছিল মেঘ হয়তো তার নাম ধরে ডাকবে। মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
–“হুম ভালো আছি।”
–“হুম এখন তো ভালো থাকার ই কথা! তোমায় না আমার খুব চেনা চেনা লাগছে কোথাও কি দেখেছি? ”
মেয়েটি বললো,” না না কোথায় দেখবে আমায় আবার। ”
মেঘ আর কিছু বললো না। একটু হাসি দিলো আর মনে মনে বললো, “বাহ জান্নাত! শেষমেশ তুমি ই। সেদিন রাস্তায় দেখা হয়ে বোধহয় বিরাট বড় ভুল হয়েছিল। তবে আমার কোনো দুঃখ নেই আর কারণ আমার মানুষ ই তো আমায় বিশ্বাস করলো না। ”
আদিল চৌধুরী, রোজা চৌধুরী, মৌ ইসলাম আর নীল ইসলামের কাছে গিয়ে মেঘ বললো,” আমি কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও আমায়। তোমাদের সারাজীবন মনে থাকবে আমার যেখানেই থাকি না কেনো?”
রোজা চৌধুরী বললো,” যেখানে থাকিস মানে কি? তুই তো আমাদের সাথেই থাকবি। ”
–” না মা আমার সময় শেষ। আমার যেতে হবে। সবকিছু সবার জন্য নয়। রোদের পাশে পায়েলের জায়গা আমার নয়। ”
” কিন্তু…
আদিল চৌধুরীর কথা শেষ না হতে ই রোদ বললো,” আহা তোমরা এত কথা বলছো কেনো? মেঘ তো ঠিক ই বলেছে। আচ্ছা মেঘ কাল কে তোমার বাবার বাড়িতে চলে যেও কিংবা আমি রেখে আসবো নি।”
মেঘ তাৎচ্ছিল্ল্যের হাসি দিয়ে বললো, “তার কোনো প্রয়োজন নেই আমি একা যেতে পারবো। আর কাল কেনো? আজকে এই মুহূর্তেই আমি চলে যাবো।”
রোদ বললো,” ওকে তোমার বাবা কে কল করছি নাহলে বাড়ির গাড়ি গিয়ে রেখে আসবে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। ”
-” আপ্নার এতকিছু ভাবতে হবে না। এখন শুধু পায়েল কে নিয়ে ভাবুন আমি একা যেতে পারবো। ”
আদিল চৌধুরী বললো,” রাত নয় টায় একা কিভাবে যাবে তুমি? আর রোদ যা বলে বলুক তুমি এই বাড়িতেই থাকবে। তুমি আমার মেয়ে মনে যেনো থাকে। ”
মেঘ মনে মনে বললো,” আমিও যেতে চাই না একবার রোদ বললে সত্যি যাবো না কিন্তু বাবা এই সব মেনে নিতে পারছি না।”
মেঘ বললো,” বাবা চিন্তা করবেন না এতো। আজ আসি আমি। ”
মৌ ইসলাম আর নীল ইসলামের দিকে তাকিয়ে মেঘের প্রচণ্ড কান্না আসছে। নিজের মা বাবা আজ আর নিজের নয়। অন্য কেউ তার জায়গায় এসেছে। মেঘ উনাদের সাথে কথা বললো না কারণ নিজেকে সামলে রাখতে পারবে না। প্রিন্স শুকনো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ কাছে যেতেই প্রিন্স মেঘ কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। মেঘ তবুও কিছু বললো না। প্রিন্সের চোখের জল শুধু মুছে দিলো।
আয়রার কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,” ভালো থেকো। ”
আয়রা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,” তুমি যেও না প্লিজ।”
মেঘ উত্তর দিলো না। ইশান বললো, “তুই যাবি না মেঘ। রাতে রাস্তায় বিপদ হলে কি হবে?”
মেঘ মলিন মুখে বললো, “আমার আর ক্ষতি হওয়ার কিছু নেই রে। এতো চিন্তা করিস না।”
রোদ বললো,” ঈশান আমার সাথে যেতে ওর প্রবলেম আছে তুই ওকে রেখে আয়।”
মেঘ বললো,” আমি একা যেতে পারবো। ভালো থেকো সবাই।”
বলেই বাড়ি থেকে চলে গেলো কারো কথা শুনল না। মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুধু অবুঝ চৌধুরী আর ইশা চৌধুরী বেশ খুশি হল। আর অবুঝ চৌধুরীর মুখে একটা অদ্ভূত হাসি লেগে আছে। মৌ ইসলাম আর নীল ইসলাম মন খারাপ করে ঘরে চলে গেলো। রোদ এতক্ষণ নিজেকে সামলে রাখতে পারলেও বুকের মাঝে কষ্টের আনল জ্বলছে।
.
চলবে…