#মনের_গহীনে_শুধুই_তুমি
#পর্ব_23
#Mst_Meghla_Akter_Mim
শপিং মলে ভিড় যেনো উপচে পড়ছে। মহিলাদের শপিং সাইড এ মাত্র দুজন ছেলেকে চোখে পড়ছে। সে দুজন আর কেউ না রোদ আর রুদ্র। রুদ্র বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে কেনো এই মেয়েদের ড্রেসের সাইডে রোদ এসেছে কিছুই বুঝতে পারছে না। রোদ কে জিজ্ঞেস করছে কিন্তু রোদ কোনো উত্তর না দিয়ে ভিড় ঠেলে হেঁটে যাচ্ছে। আর রুদ্র ওর পেছন পেছন আসছে। একটু পর রুদ্র অতিষ্ঠ হয়ে বললো,
–“ভাই এইখানে কি আমাদের কোনো কেসের তদন্ত আছে? কোনো নতুন কেস আসছে তা তো আমার জানা নাই।”
রোদ একবার তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে আবার হাঁটছে। রুদ্র আবার বললো,
–“উত্তর দিবি তুই নাকি আমি চলে যাবো?”
রোদ সামনের দিকে তাকিয়ে বললো, “কোনো কেস নেই কিন্তু অন্য কাজ আছে। সারাদিন কেস ছাড়া কি কিছু ভাবতে পারিস না?”
রুদ্র মনে মনে বললো,” কাজ ছাড়া কিছু ভাবতে দিলি কই তুই! তোর জন্য আমি আমার জানেমান কে একটুও সময় দিতে পারছি না।”
রোদ রুদ্রর দিকে সরু চোখে তাকালো। রুদ্র হাসার চেষ্টা করলো। রোদ সামনে দিকে তাকিয়ে বললো,
–” জীবনে সাফল্যের জন্য কাজ করা খুব দরকার কিন্তু তুই আমার বন্ধু হয়েও কেনো যে তা বুঝিস না তাই বুঝিনা। আর অর্চি তোকে accept করেছে বলিস নি কিন্তু!”
রুদ্র অবাক হয়ে বললো, “এই তুই আমার মনের কথা শুনতে পারলি কিভাবে? তুই জাদু শিখেছিস বলিস নি তো!”
রোদ রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললো,” ছোট বেলা থেকে একসাথে বড় হলাম আবার একসাথে একই প্রফেশনে আমরা আর তোর মনের কথা আমি বুঝবো না তা হয়। ছোট থেকে তোকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি।”
রুদ্র হালকা হেসে বললো,” তা অবশ্য কিন্তু আমিও তোকে বুঝি তা কিন্তু মানতে হবে তোর।”
রোদ গম্ভীর গলায় বললো,” কচু বুঝিস তুই!”
রুদ্র রেগে গেলো কিন্তু রোদ হঠাৎ থেমে গেলো। অবাক করা বিষয় এই মলের এই জায়গায় কোনো ভিড় নেই।রুদ্র তাকিয়ে দেখল ওম্যান বোরকা হাউস এইটা কিন্তু রোদ এখানে কেনো আসলো? আর কোনো ভিড় ই নেই বা কেনো রুদ্র ভেবে পাচ্ছে না। ভেবে আর কষ্ট না করে রুদ্র গালে হাত দিয়ে বললো,
–“তুই বোরকা পড়বি ভাই? আর এখানে কেউ নেই কেনো? মানে বোরকা হাউসের মালিক ছাড়া কেউ নাই কেনো?”
রোদ কোনো উত্তর দেয়ার আগেই উক্ত শপের মালিক বললো,
–“welcome স্যার! আপনার জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম। আর আপনার কথা মতই নিউ collection গুলো বিক্রি করিনি। দেখুন এই কর্নারে তো আসা নিষেধ পর্যন্ত লিখে রেখেছি।”
রুদ্র এদিকে ওদিক দেখছে কিন্তু লোক টা র কথা কিছুই বুঝছে না। রোদ মুচকি হেসে বললো, “অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমার জন্য কষ্ট করায়। আচ্ছা আমাকে বোরকা সাথে ম্যাচ করে হিজাব গুলো দেখান।”
উনি কয়েকটা বোরকা দেখালেন কিন্তু রোদ কোন টা রেখে কোনটা নিবে তা সিলেক্ট করতে পারছে না তাই রোদ উনাকে বললো,
–“আপনি সব বোরকা হিজাব প্যাক করে দিন।”
উনি অবাক হয়ে বললো,” সব!”
–” জী তাই তো বললাম।”
–” ঠিক আছে স্যার।”
রুদ্র এতক্ষণ থ মেরে দেখেছিল। রোদ ওকে একটু ধাক্কা দিয়ে বললো,
–” একভাবে তাকিয়ে কেনো? কোথায় হারিয়ে গেলি।”
–“আমি না তুই ।এত বোরকা কি করবি তুই? কার জন্য? আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবার জন্য একটা একটা করে নিলেও তো এত লাগবে না। কিন্তু আমরা তো সবাই ছেলে বোরকা পড়ে কি করব! ও সিট আমি তো ভুলেই গেছি আমাদের অনেক সময় ছদ্মবেশে investigate করতে হয়। রোদ সত্যি তুই অনেক জিনিয়াস। আমার সাথে থাকার গুণ এইটা বুঝলি। কথায় আছে না সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস!”–রুদ্র প্রথমে ভাবুক হয়ে আবার একটু পর ভাব নিয়ে গড় গড় করে রোদ কে কথা গুলো বললো ।
রোদ এইবার ভ্রু কুঁচকে বললো,” শেষ বলা তোর?”
–” হ্যাঁ একদম শেষ।”
রোদ রুদ্রের মাথায় মেরে বললো,” তোর সাথে থেকে জীবনে স্বর্গ বাস হবে না করো বুঝলি। আর এই বোরকা আমি আমার বউ এর জন্য কিনছি।”
রুদ্র অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো। বললো,
–“এতগুলো বোরকা! ভাই এত বোরকা কি করবে? আর তুই তো নাকি ওকে মানিস না তাহলে ওর জন্য কিছু নিয়ে যাবি কারণ কি? তাহলে কি…..”
রোদ রুদ্রের কথা শেষ না করতে দিয়ে বললো,” যা বুঝেছিস বুঝে থাক কিছু বললে তোর খবর আছে। আর শোন আমি ওকে মানিও না। সেদিন ছেলে গুলো বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়েছে আবার কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখলাম আমার বউ এর প্রতি অনেকেই দুর্বল। তাই আমার বউ কে ওদের নজর থেকে রক্ষা করার জন্য বোরকা নিতে এসেছি। যতো ই ঝগরুটে হোক যথেষ্ট সুন্দরী মেয়েটা এইটা যে কেউ মানতে বাধ্য।”
রোদ কথা গুলো বলতে বলতে যেনো একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো। রুদ্র ফিক করে হেসে উঠে বললো,
–” অবশেষে পায়েল আর লেডি বাইকারের ভূত নেমে মেঘ নামক ভূত মাথায় চাপল তোর।”
রোদ বাঁকা হেসে বললো, -” রোদ্দুর চৌধুরী কখনো লক্ষ্য থেকে সরে আসে না রুদ্র।”
_____________
‘সুখ বিলাস ‘ আজ আবারো নতুন করে সেজে উঠেছে ঠিক আজ থেকে পনেরো ষোলো বছর আগের মতো। সুখ বিলাস হল মৌ ইসলাম আর নীল ইসলামের বাড়ির নাম।বাড়ি টি থেকে আজ আবারো আনন্দের সুর ভেসে আসছে। একদিন পায়েল চলে যাওয়ার শোকে বাড়িটা সুখ বিলাস থেকে দুঃখ বিলাসে পরিণত হয়েছিল। মৌ ইসলাম মেঘের জন্য রান্না করছে।নীল ইসলাম আর প্রিন্স ওদের জন্য অপেক্ষা করছে আর পায়চারি করছে। প্রিন্স কিছুক্ষণ পরপরই মেঘ আর রোদের কাছে কল করছে। মৌ ইসলাম রান্না শেষ করে ড্রয়িং রুমের দিকে আসছে আর বলছে,
–“করিম ভাই কোথায় আপনি?”
উনার কথা শেষ হতে না হতে করিম চাচা এসে হাজির হল উনার সামনে বললো, “হ্যাঁ আপা বলুন কি কাজ করতে হবে।”
মৌ ইসলাম উনার টোল পড়া হাসি দিয়ে বললো, “করিম ভাই কোনো কাজ করতে হবে না। এত বছর পুরো বাড়ি তো আপনি সামলে এসেছেন এবার তো আমি এসে গেছি আপনার কোনো কাজ করতে হবে না। বলছি বাগানে নতুন গোলাপের গাছ লাগাতে বলেছিলাম সেটা হয়েছে?”
–” জী আপা হেড্যা তো আপনি বলার পরেই লাগাইয়া লইছি। কিন্তু আপা আপনি আগের মতই আছেন কিন্তু।”
মৌ ইসলাম একটু হেসে বললো,” আপনি ও কিন্তু ঠিক একই আছেন। এখনও সেই আঞ্চলিক ভাষা বদলায় নি।”
করিম চাচা হেসে বললো,” অবভেস আপা ছাড়তে পারি না কি করুম।”
–” কিছু করতে হবে না। এ ভাষা আমার অনেক ভাল লাগে। এ ভাষায় মাটির টান রয়েছে বুঝলেন।”
করিম চাচা খুশি হয়ে বললেন, “আইচ্ছা আপা আজকে কার জন্য এত আয়োজন? পায়েল মা ডা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে এতো আনন্দে আপনিগো কখনো দেহিনি।”
মৌ ইসলাম আনমনে বললো,” আমার আরেক মেয়ে আসছে যে। মেঘ আসছে আজকে। হুবহু যেনো আমার মেয়ে মনে হয়।”
মৌ ইসলামের কথা শেষ হতে ই প্রিন্স চিৎকার করে বলতে লাগলো,” মাম্মা আপু ভাইয়া চলে এসেছে।”
মৌ ইসলাম তড়িঘড়ি করে গিয়ে দেখলো মেঘ, রোদ সহ সবাই এসেছে আর আজকে অবুঝ ছাড়া সবাই এসেছে। মেঘ প্রিন্স, নীল ইসলামের সাথে কথা বলে মৌ ইসলামের কাছে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলো। মৌ ইসলাম মেঘের গালে হাত দিয়ে বললো,
–“আজ আমার মেয়েকে অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু।”
–” আমার চেয়ে তুমি সুন্দর। তোমার গালে কি সুন্দর টোল পড়ে কিন্তু আমার তো পরে না তাহলে আমি কিভাবে সুন্দর হুম?”
মেঘের কথা শুনে মৌ ইসলাম অতীতে হারিয়ে গেলো। মৌ ইসলাম পায়েল কে সুন্দর লাগছে বললে ঠিক একই কথা বলত। মেঘ মৌ ইসলামের আনমনে হওয়া দেখে উনার হাত একটু নাড়া দিয়ে বললো,
–” মামনি…”
মৌ ইসলাম স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো,” তুই সবচেয়ে সুন্দরী আমি তো বুড়ি হয়ে গেছি। তো তোর শাশুড়ি এত সেজেছে কেনো? ওকে সাজলে ভূত লাগে আজও বুঝাল না।”
রোজা চৌধুরী মৌ ইসলামের কথা শুনে তেড়ে এসে বললো, “তুই যে সাজতেই জানিস না এ জন্য চিরকাল এসব বলে আসলি।”
–“হ সত্যি কথা বলছি তাই তোর গায়ে এত লাগছে।”
উনারা দুই বান্ধবী এভাবেই চালিয়ে যেতে লাগলেন। সবাই উনাদের কান্ড দেখে কি যে হাসি। আসলে বেস্ট ফ্রেন্ড এমন ই হয় মুখে কখনো কেউ কাউকে ভালো বলবে না তার সামনে কিন্তু সবাই কে গোপনে ঠিক তার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বেস্ট বলবেই।
.
মেঘ এসে থেকে প্রিন্সের সাথে গল্প করছে। পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে মেঘ কে। রোদ আছে কি নেই সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই মেঘের। মেঘের এ বাড়িটা অনেক আপন লাগছে আর অনেক চেনা চেনা লাগছে। বাড়ির পাশেই বাগানে একটা দোলনা আছে। মেঘ দোলনা টা অনেকবার দেখছে। কেনো যেনো যে আকৃষ্ট হচ্ছে সবকিছুতে। প্রিন্স বললো,
–“আমি এই প্রথম নিজের বাড়িতে আসলাম। আমার বাড়িটা এত সুন্দর আমি জানতাম ই না। এই যে দোলনা দেখছ এইটা তে আপু নাকি দোল খেত মাম্মা বলত।”
মেঘ প্রিন্স কে বললো,” প্রিন্স তোমার আপুর নাম কি?”
–“পায়েল।”
প্রিন্সের বলা শেষ হতে ই ঈশান প্রিন্স কে ডাকল তাই প্রিন্স চলে গেলো। এ দিকে নাম টা শুনে মেঘের আকাশ পাতাল যেনো এক হতে নিলো। তার মানে রোদের পায়েলই মামনির মেয়ে ছিল। মেঘ মৌ ইসলামের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রোদ ওর হাত ধরে ফেললো। বললো,
–” চিন্তিত দেখাচ্ছে তোমায় কিছু হয়েছে?”
মেঘ বলতে গিয়েও বললো না পায়ে এর কথা কারণ রোদ যদি কষ্ট পায়। মেঘ মুখে হাসি টেনে বললো, “না চিন্তা করছি না।”
–“পায়েল আন্টির মেয়ে তা শুনে চিন্তিত তুমি মেঘ! পায়েল মারা যায় নি মেঘ আমার মন বলে সে আছে এখনো আছে।”
রোদের কথায় মেঘ থমথমে হয়ে গেলো। রোদ কিভাবে বুঝলো মেঘ এই কথায় ভাবছিল তা মেঘ কল্পনাও করতে পারছে না। মেঘ বললো, “আপনি নিশ্চিত কিভাবে?”
রোদ একটু হাসল। মেঘের হাত ধরে বললো, “কারণ আমি আমার পায়েলকে দেখেছি। খুঁজে পেয়েও পাই নি যে।”
মেঘের বুকের ভেতরে কষ্ট চাপ দিচ্ছে। নিজের স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের কথা একদম ভালো লাগছে না। মেঘ হাত ছাড়িয়ে বললো,
–“আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না একটু সোজা ভাবে বলবেন?”
–“এমনি বুঝে যাবে সময় হলেই।”
বলে রোদ মেঘ কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো,”সবাই চলে গেছে শুধু আমি আর তুমি বাকি। চলো বাসায় যেতে হবে। আন্টির সাথে দেখা করে আসো।”
মেঘ মৌ ইসলামের সাথে দেখা করলো কিন্তু পায়েলের ছবি দেখার কোনো সুযোগ পেলো না।
_____________
রোদ মেঘের পুরো ঘর শপিং ব্যাগ দিয়ে ভর্তি। মেঘ ঘরে প্রবেশ করেই ঘরের এই অবস্থা দেখে রোদ কে ডেকে বললো,
–” ঘরের এ কি অবস্থা? কি এইসব?”
রোদ মেঘের সামনে এসে একটা ব্যাগ হাতে নিয়ে বললো,”বোরকা!”
–“কার জন্য?”
–“তোমার জন্য। কলেজে রাখতে যায় তো তখন দেখি অনেকেই তোমাকে দেখে আর সেটা আমার ভালো লাগেনা তাই বোরকা পরে যাবে কলেজে।”
মেঘ ব্যাগ গুলো সাইড করে বললো, “তা বুঝলাম কিন্তু এতগুলো বোরকা কি করব? ব্যাপার কি বলুন তো আমার প্রতি এত কিসের খেয়াল আপনার?”
রোদ নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করে বললো,” কোনো খেয়াল না। সবাই জানে তুমি আমার বউ তাই আর কি।”
বলেই রোদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মেঘ রোদের চলে যাওয়া দেখে হাসতে শুরু করলো। একা একা বললো,
–” আমাকে কি ভালোবেসে ফেলেছেন আপনি?”
___________
আজকে আয়রা কলেজে যায় নি। দুদিন ধরে আরো বেশি চুপচাপ হয়ে আছে। ঘরে বসে আনমনে বই এর পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছে। এর মাঝেই মেঘের আগমন ঘটল। মেঘ কোনো জিজ্ঞাসা না করেই ঘরে এসে আয়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আয়রা কি হয়েছে তোমার?”
আয়রা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বললো, “কিছুনা ভাবি। বস আজকে কলেজ যাও নি?”
–“না আজকে কলেজে যায়নি। আজকে আমার কিছু কাজ আছে বলতে পারো অনেক জরুরী কাজ আছে কিন্তু কাজ টা তোমার সাথে।”
–“আমার সাথে আবার কি কাজ!”
–“সে তো এখনই জানবে। আয়রা আমাকে কথা দাও এখন আমি যা যা জিজ্ঞেস করব সত্যি সত্যি উত্তর দিবে।”
আয়রা একটু চিন্তা করে বললো, “আমি তো তোমায় সব সত্যি ই বলি। কি জিজ্ঞেস করবে বল।”
মেঘ আয়রার বাহু ধরে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে বললো,” কাউকে ভালোবাস?”
আয়রা মেঘের চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। মেঘের থেকে পালানোর চেষ্টা করে বললো,
–” কি যে বলো না ভাবি। আমি আবার কাকে ভালবাসব।”
মেঘ আয়রা কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। আয়রার চোখ ছল ছল করছে। মেঘ বললো,
–“তাহলে তোমার চোখে জল কেনো? আয়রা আমি একটা মেয়ে তোমাকে আমি বুঝি। তুমি দিহানকে ভালোবাস?”
–ভাবি…
আয়রা কে থামিয়ে দিয়ে মেঘ বললো,” কোনো কথা না সত্যি করে উত্তর দিবে। ভালোবাস কি না?”
আয়রা নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, “ভালোবাসি।”
বলেই আয়রার চোখ থেকে দু ফোটা পানি পড়লো। মেঘ যেনো হালকা হল কিন্তু আয়রার defrestion এ থাকাটা দূর করতেই হবে। আয়রার চোখের জল মুছে শান্ত গলায় বললো,
–“তো কান্না করছো কেনো? দিহানও তো তোমায় ভালোবাসে। আর বাড়ির সবাই কে আমি বুঝিয়ে বলব সময় হলে আর তোমার ভাইয়া কিছু বলবে না আমি বলছি।”
আয়রা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, “সে ভয় করছি না ভাবি। আমার ভয় করে আমিও যদি ভাইয়ার….”
বলেই আয়রা থেমে গেলো মেঘের দিকে তাকিয়ে। মেঘ মুচকি হেসে বললো,
–” থেমে গেলে কেনো? আয়রা পায়েল হারিয়ে গেছে কিংবা মারা গেছে সেটা নিয়তি তাই বলে তোমার সাথে এমন কিছু ঘটবে তা তো নয়।”
আয়রা অবাক হয়ে বললো, “তুমি পায়েল আপুর কথা জানো? কে বলেছে তোমায়?”
–” তোমার ভাইয়া। এখন আগে বল তুমি আর মন খারাপ করে থাকবে না। হাসিখুশি থাকবে ওকে?”-মেঘ আয়রার গালে হাত দিয়ে বললো।
আয়রা মেঘ কে জড়িয়ে ধরে বললো,” আমার ভয় করে ভাবি। তুমি আমার পাশে থেকো ।”
–” হুম পাশে থাকবো কিন্তু পড়াশোনা complete না হওয়া পর্যন্ত দিহানের সাথে বেশি কথা কিংবা দেখা করবে না মনে থাকবে? আর শোনো এখন দিহানকে বলার দরকার নেই ভালোবাস আগে আমি তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলি?”
–“ঠিক আছে ভাবি।”
আয়রার মন যেনো খুশিতে ভরে গেলো। আয়রা বললো,”পায়েলের কথা শুনে তোমার মন খারাপ হয় নি ভাবি?”
মেঘ মুচকি হেসে বললো,” না, তাঁকে দেখার আগ্রহ শুধু বেড়েছে। তুমি তাঁকে দেখেছ?”
–” আমি তো দেখেছি ভাবি কিন্তু একটা কথা আমি জানি শুনবে?”
–” হুম বল।
–“পায়েল আপু নাকি বেঁচে আছে ভাইয়া বলেছিল। আর রুদ্র ভাইয়ার থেকে জেনেছিলাম ভাইয়া নাকি এক বাইকার লেডি কে দেখে পায়েল ভেব
লেডি বাইকারের কথা শুনে মেঘের মাথার ভেতরে যেনো চক্কর দিলো। মেঘের স্মৃতির পাতায় সেদিনের দৃশ্য মনে পড়তে লাগলো মেঘ বাইক নিয়ে ঘুরছিল। রোদ কে দেখে মেঘ পালিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু রোদ তাঁকে ডাকছিল এমন কি পেছন পেছন ও গেছিল। তাহলে কি রোদ মেঘের পিছু না সেই বাইকার কেই খুঁজতে গেছিল। মেঘের মনে প্রশ্ন জাগছে তাহলে কি রোদ বাইকার রুপি মেঘ কেই খুঁজে বেড়ায়? মেঘ থো মেরে গেলো। সব প্রশ্ন জোট পাকিয়ে যাচ্ছে। মেঘ বাইকার এইটা ঠিক কিন্তু রোদের পায়েল কিভাবে মেঘ এইসব প্রশ্ন বারবার মাথায় ধাক্কা দিচ্ছে। আবার মনে এই প্রশ্ন ও জাগছে বারবার মেঘের নামও পায়েল আবার রোদের পায়েল কিভাবে কি সম্ভব। মাথা ঘুরছে যেনো, মেঘ তাল সামলাতে পারছে না। মেঘের কোনো উত্তর না পেয়ে আয়রা মেঘের হাত স্পর্শ করে বললো,
–“ভাবি…”
মেঘ কেঁপে উঠলো। ওর কল্পনা থেকে বেরিয়ে এলো। এতক্ষণ যেনো খেয়াল ই ছিল না সামনে আয়রা আছে। আয়রাকে দেখে মেঘের মনে হলো সব প্রশ্নের জোট আয়রার থেকেই ছাড়িয়ে নেয়া সম্ভব। আয়রা বললো,
–“ভাবি কিছু ভাবছো? তোমার কি একটুও কষ্ট হয় না ভাবি ভাইয়া যে অন্য কাউকে ভালোবাসে।”
মেঘ বিড়বিড় করে বললো, “কষ্ট হয় কিন্তু রহস্য এত আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।”
আয়রা মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘের বিড়বিড় করে বলা কথা বুঝতে পারলো না। মেঘ স্বাভাবিক হয়ে বললো,
–“তোমার ভাইয়া কাকে ভালোবাসে তাই এখন জোট পাকিয়ে যাচ্ছে। আয়রা পায়েলকে দেখার একটু ব্যবস্থা করে দিবে?প্লিজ আয়রা।”
আয়রা মাথায় হাত দিয়ে বললো,” তুমি আমায় বলছো! ভাবি তোমার ঘরেই তো পায়েল আপুর ছবি আছে তুমি দেখো নি?”
মেঘ অবাক হয়ে বললো,” কোথায়?”
–“তোমার বেডের উপরের দেয়ালে সাদা কাপড়ে ঢাকা আছে। আগে ঢাকা ছিল না তোমার বিয়ের পর আম্মু ঢেকে দিয়েছে।”
মেঘের সব প্রশ্নের জবাব আছে ওই ছবিতেই। লেডি বাইকার কে খোঁজে রোদ সেটা মেঘ ই তা মেঘ বুঝতে পেরেছে কিন্তু পায়েল কে দেখার পালা এইবার। মেঘ আয়রার ঘরে আর এক মুহূর্তও দেরি করলো না। কোনো কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে যেতে নিলো। আয়রা পেছন থেকে ডাকছে কিন্তু মেঘের কানে কথা যেনো যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে মেঘের পা যেনো ভারী হয়ে আসছে। ঘরে গিয়ে ছবিটার উপর থেকে এক টানে কাপড় সরিয়ে ফেললো মেঘ। ছবিটা দেখে মেঘের পায়ের নিচের মাটি যেনো সরে গেলো। মেঘের পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে, কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না। মস্তিষ্কের স্নায়ু তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে মনে হচ্ছে। মেঘ আর তাল সামলাতে পারল না, মেঝেতে বসে পড়লো। ওয়ারড্রোপে হেলান দিয়ে চুপ করে আছে আর ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। ছবিতে একটা ছোট মেঘের হাস্যজ্জ্বল ছবি, সাদা ড্রেস পড়ে আছে, মাথার চুল হালকা বাদামী। আয়রা এসে মেঘ কে বস থাকা দেখে বললো,
–” ভাবি….”
মেঘ আয়রার দিকে তাকালো কিন্তু মনে হচ্ছে মেঘ এই জগতে নেই। আয়রা ছবির দিকে তাকিয়ে বললো, “ভাবি ওইটা ই পায়েল আপু!”
মেঘের মস্তিষ্ক আস্তে আস্তে আবার কাজ করতে শুরু করলো। মেঘ অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে ছবিটা দেখে কারণ ওই ছবি আর ওর ছবি পুরো এক। মেঘ আয়রা কে বললো,
–“আয়রা আমায় একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।”
আয়রা কোনো উত্তর দিলো না। ভাবলো মেঘ হয়তো পায়েল কে দেখে মেনে নিতে পারছে না কারণ কোনো মেয়েই তার স্বামীর মনে অন্য মেয়েকে দেখতে পারে না। মেঘ উঠে দাঁড়ালো আর দরজা বন্ধ করে দিলো। ছবিটি নামিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো আসলেই কি এইটা তার ছবি কি না। মেঘ নিজে নিজে বললো,
–“আমি আর পায়েল এক দেখতে কিভাবে হতে পারি? আর রোদ যে বাইকার লেডি কে খুঁজে সে তো আমিই! তাহলে রোদ আমাকেই ভালোবাসে!”
মেঘের কিছুটা আনন্দ হল কারণ আর যাইহোক রোদ তাঁকে ভালোবাসে পরক্ষণেই আবার মাথায় প্রশ্ন এলো মেঘ আর পায়েল কিভাবে এক হতে পারে। হয়তো কিছুটা মিল আছে। মেঘের হাত কাঁপছে। ফোন হাতে তুললো কারণ এই রহস্যের উন্মোচন আজ তাঁকে করতেই হবে। মৌ ইসলাম কে কল করতেই উনি কল রিসিভ করে বললো,
–“কেমন আছিস মা?”
মৌ ইসলামের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মেঘ বললো,”মামনি আমাকে কয়েকটা পায়েলের ছবি দিবে এখনই।”
মৌ ইসলাম অবাক হয়ে বললো,” কি করবি তুই? কিছু হয়েছে?”
মেঘের হাতে সময় নেই কোনো উত্তর দেয়ার ও তাড়াহুড়ো করে বললো, “মামনি কোনো প্রশ্ন করো না প্লিজ ছবি দাও।”
–” ঠিক আছে।”
মৌ ইসলাম তখনই কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিলো। মেঘ সব ছবি দেখলো আর সব ছবি দেখে মেঘ এইটা শিউর হল কিছুটা না পুরোপুরি এক দেখতে ওদের। মেঘের মাথার ভেতরে চাপ শুরু হয়েছে। হাত দিয়ে মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। এসব কি হচ্ছে ওর সাথে। মেঘ বিড়বিড় করে বললো,
–” এইসব কিভাবে সম্ভব! আমার উত্তর জানতেই হবে কিন্তু কে দিবে উত্তর!”
পরক্ষণেই মেঘ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। কাউকে কিছু না বলে নিজে ড্রাইভ করে ওর বাবার বাসায় এলো। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো প্রতীক হাসান আর মিমি হাসান বসে গান শুনছে। মেঘ কে দেখে উনারা অবাক হয়ে গেলো। মিমি হাসান হাসি মুখে এগিয়ে গিয়ে বললো,
–” তুই একা কেনো? আয় মা ভেতরে আয় বসবি।”
মেঘ মিমি হাসানের দিকে তাকালো কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। সোজা গিয়ে গান বন্ধ করে দিলো। প্রতীক হাসান মেঘ কে দেখে অবাক হয়ে গেলো কারণ মেঘের চুল এলোমেলো আর মেঘ কে অস্বাভাবিক লাগছে। প্রতীক হাসান মেঘের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–” কিছু হয়েছে মা। বস আগে দাঁড়িয়ে আছো কেনো।”
মেঘ প্রতীক হাসানের হাত নামিয়ে দিয়ে বললো, “আমি আজ বসতে আসি নি পাপ্পা। আমার অস্তিত্ব কি জানতে এসেছি।”
মিমি হাসান আর প্রতীক হাসান অবাক হয়ে গেলো। মিমি হাসান একটু ভয় পেলো যেনো কিন্তু তা লুকানোর চেষ্টা করে বললো,
–” তোর অস্তিত্ব মানে কি?”
প্রতীক হাসান বললো, “তুমি আমাদের মেয়ে মেঘলা এইটাই তোমার অস্তিত্ব মা।”
মেঘ চোখ বন্ধ করে নিলো। রাগে যেনো মাথা ফেটে যাচ্ছে। বাম হাতের পাশে থাকা ফুল দানী ফেলে দিলো মেঘ আর ওর হাত কেটে রক্ত ঝরতে নিলো। মিমি হাসান, প্রতীক হাসান এগিয়ে যেতে নিতেই মেঘ হাত বাড়িয়ে ওদের থামিয়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
–” তোমরা কেউ আসবে না আমার কাছে। তোমরা মিথ্যাবাদী। আমি তোমাদের মেয়ে না তাইনা?”
“না মা তুমি আমাদের ই মেয়ে। তোমার কি হয়েছে বলতো।” – প্রতীক হাসান বললো।
মিমি হাসান ঘামছে। মেঘ আরো উত্তেজিত হয়ে বললো,”আমি তোমাদের মেয়ে তাহলে মামনির মেয়ে আর আমার ছোট বেলার ছবি এক কেনো উত্তর দাও।”
মিমি হাসান আরো ঘাবরে গেলো তবুও তুতলিয়ে বললো,”পৃথিবীতে দুটো মানুষের মিল থাকতেই পারে মা।”
–” মিল না হুবহু! আমি কে উত্তর দাও তোমরা। আর পাপ্পা আমার পায়েল নাম আর মামনির মেয়ের নাম এক কেনো? আর আমাকে কেনো ই বা পায়েল বলে ডাকতে দিত না মাম্মা? আর আমার একেবারে ছোট বেলার কোনো ছবি তো তোমাদের কাছে নেই কিন্তু কেনো নেই? মামনির মেয়ের সাথে সবকিছু কেনো মিলে গেলো আমার।”
প্রতীক হাসান চুপ করে আছে। মিমি হাসান বললো,” শান্ত হও তুমি। মিল হতে ই পারে তাতে কি। আর তোমার ছোট বেলার ছবি হারিয়ে গেছে তাই নেই।”
মেঘ কোনোমতেই বিশ্বাস করতে পারছে না কথাগুলো। চিৎকার করে বললো,
–” আমায় প্লিজ সত্যি টা বল তোমরা। আমি কে পায়েল নাকি তোমাদের মেয়ে? আর তোমাদের মেয়ে যদি হয় তাহলে পায়েলের সাথে আমার কেনো এতো মিল?বাবা রোদ পায়েল কে ভালোবাসে বাবা, অনেক কষ্ট হয় আমার। কিন্তু পায়েলের ছবি দেখে আমার সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে তোমরা আমার উত্তর দাও। কে আমি?”
মিমি হাসান কিছু বলতে যাবে কিন্তু প্রতীক হাসান উনাকে থামিয়ে দিলো। মিমি হাসান কাঁপা গলায় বললো,
–” তুমি কি বলবে মেঘ কে?”
প্রতীক হাসান মিমি হাসানের বাহু শক্ত করে ধরে বললো,”এইবার বোধহয় সময় এসে গেছে মিমি!”
মিমি হাসানের চোখ থেকে পানি ঝড়তে শুরু করলো। উনি প্রতীক হাসান কে আটকানোর চেষ্টা করে বললো,
–“না! তুমি কিছু বলবে না।”
কিন্তু প্রতীক হাসান মিমি হাসানের কথা শুনল না। মেঘের কাছে গিয়ে মিমি হাসান কে বললো,
–“মেয়েটার এমন অবস্থা আমি দেখতে পারবো না মিমি।”
মিমি হাসান প্রতীক হাসান কে বললো, “তুমি এখানে আসো।”
প্রতীক হাসানের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ। কি উত্তর পাবে মেঘ তা বুঝতে পারছে না। প্রতীক হাসান মেঘ কে বললো,
–“তুমি ই রোদের পায়েল!আর মৌ ইসলাম আর নীল ইসলামের মেয়ে!”
প্রতীক হাসানের কথা শুনে আরেক দফা ধাক্কা খেলো মেঘ। মিমি হাসান যেনো পাথর হয়ে বসে পড়লো। মেঘের চোখে পানি ছল ছল করছে। কথা আর বলতে পারছে না। এতদিন যাদের মা বাবা মেনেছে সে তাদের মা বাবা না এইটা মেনে নেয়া বোধহয় অনেক কঠিন। মেঘ তুতলিয়ে কষ্ট করে বললো,
–” ত.. তবে আমি কি করে তোমাদের কাছে?”
প্রতীক হাসান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, “মিমি আর আমাদের কোনোদিন সন্তান হয় নি! তোমাকে আমি এক জায়গায় পেয়েছিলাম!তবে বিশ্বাস করো কখনো নিজের মেয়ের চেয়ে কম ভালোবাসি নি।”
মিমি হাসান কাঁদছে। মেঘ মিমি হাসানের হাঁটুর কাছে বসে উনার হাত ধরে বললো,
–” মাম্মা আমি তোমার মেয়ে না! তোমরা আমাকে কোথায় পেয়েছ? আমার জীবনে কি আছে যা আমি জানি না?”
মিমি হাসান আরো কেঁদে উঠলো। মেঘের গালে হাত দিয়ে বললো,” তুই শুধু আমার মেয়ে।”
মেঘ বললো,” আমিও তো তাই জানতাম। কখনো কল্পনা ও করিনি তোমরা আমার মা বাবা না। কিন্তু এইটা তো সত্যি মৌ ইসলাম আর নীল ইসলামের মেয়ে আমি! মানতে কষ্ট হচ্ছে মা। আমার জীবন টা এমন কেনো?আমাকে আগে কেনো বল নি?”
বলেই মেঘ কেঁদে উঠলো। প্রতীক হাসান ওদের পাশে এসে বললো,
–“কাঁদিস না মা। তোকে আমরা অনেক ভালোবাসি তাই বলতে পারিনি কোনোদিন।”
মেঘ কাঁদতে কাঁদতে বললো,”আমাকে কিভাবে তোমরা পেয়েছিলে? মামনি বলেছিল পায়েল হারিয়ে গিয়েছিল কিন্তু তুমি কিভাবে পেলে?”
প্রতীক হাসান একটু চুপ করে থাকার পর বললো,” আজ থেকে পনেরো ষোলো বছর আগে প্রায় রাত এক টায় আমি হাসপাতাল থেকে আসছিলাম এমন সময়ে দেখলাম কয়েকজন মানুষ একটা ব্রিজ এর সামনে একটা মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখ, হাত পা বাঁধা অবস্থায়। আমি বাইক আর এগিয়ে নিলাম না। লুকিয়ে পড়লাম একটা গাছের পেছনে কারণ লোকগুলোর সামনে গেলে তোকে সেদিন বাচাতে পারতাম না। আমি লুকিয়ে দেখছিলাম লোক গুল তোকে পানি তে ফেলে দিলো। আমার বুকের মাঝে মোচর দিয়ে উঠলো একটা নিষ্পাপ মেয়েকে কিভাবে কেউ পানিতে ফেলতে পারে। ইচ্ছা করছিলো মানুষ গুলো কে মেরে ফেলি কিন্তু আমার সে সামর্থ্য ছিল না। কিছুক্ষণ পর মানুষ গুলো ওখান থেকে চলে যায় আর আমি তখনই পানিতে ঝাঁপ দিয়ে তোকে পানি থেকে উঠায়। তোকে উঠানোর পর দেখলাম অনেক পানি খেয়ে ফেলেছিস কিন্তু শ্বাস তখনও চলছিল। আমি অনেক চেষ্টার পর তোকে বাঁচিয়ে নেই আর নিয়ে আসি আমাদের বাড়িতে। আমাদের কখনো সন্তান হবে না জানতাম আমরা। মিমি একটা সন্তানের জন্য অনেক কেঁদেছে আর সেদিন তোকে দেখার পর ও তোকে ই নিজের মেয়ে করে নিয়েছিল। সেদিন থেকে তুই আমাদের ই মেয়ে হয়ে রয়ে গেলি।”
মেঘ চুপ হয়ে গেলো। কে ওকে পানিতে ফেলেছিল! মেঘ জিজ্ঞেস করলো,
–” পাপ্পা কে আমাকে ফেলেছিল আর তোমরা কেনো মামনির কাছে আমাকে দাও নি? তোমাদের আমি কোনো দোষ দিচ্ছিনা কিন্তু একটা মা তার মেয়েকে ছাড়া তো কষ্ট পেয়েছে।”
প্রতীক হাসান বললো,” তুই তখন শুধু তোর নাম ই বলতে পেরেছিলি। আর মিমি চায় নি তোকে দিয়ে দিতে। আর সবচেয়ে বড় কথা তোর জীবনের ঝুঁকি ছিল। আর কে ছিল লোক টা এইটা আমি জানি না।”
সব কথা বিশ্বাস হলেও প্রতীক হাসানের শেষের কথাটা মিথ্যা মনে হলো মেঘের। কে ছিল তা হয় তো প্রতীক হাসান জানে নাহলে উনি কেনো বারবার মেঘ কে সাবধানে থাকতে বলতেন। মেঘ জানে আর কোনো উত্তর পাবে না ও। তাই একটা জোরে শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। মিমি হাসান মেঘের হাত ধরে বললো,
–“আমাদের ছেড়ে কোথায় যাবি তুই?”
মেঘ মিমি হাসানের হাত ধরে বললো, “আমি তোমাদের ও মেয়ে কিন্তু আমার গর্ভধারী মা কে তার সন্তান তো ফিরিয়ে দিতে হবে আমার। তবে তোমাদের মেয়ে তোমারই থাকবে। আসি এখন।”
–“না তুই কোথাও যাবি না।”
মেঘ বললো,” মাম্মা প্লিজ আমায় যেতে দাও। আমি আগেও যেমন ছিলাম এখনও তেমনই থাকবো শুধু আমার কিছু কাজ আছে মাম্মা। আমি তোমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।”
মেঘ প্রতীক হাসানের দিকে তাকালো। প্রতীক হাসান মেঘের কাঁধে হাত রেখে বললো,” যা মা। আমরাও তোকে ভালোবাসি খুব আমাদের ভুল বুঝিস না।”
মেঘ মাথা নারাল।
.
চলবে……