মনেরও গোপনে পর্ব-০৭

0
434

#মনেরও_গোপনে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৭
(মুক্তমানদের জন্য উন্মুক্ত)
তাহলে বিয়ে না করে কার জন্য অপেক্ষা করবে সে? তাছাড়া লোকটা তো বিবাহিত হতে পারে! বয়সের কথা না হয় না-ই ভাবলো কিন্তু বউ,বাচ্চা নেই তার গ্যারান্টি কী? চোখ বন্ধ করে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো মিহি। মনেরও গোপনে পুষে রাখা সুপ্ত ভালোবাসা আজীবন গোপন রেখেই অন্যের সংসার করবে বলে সিন্ধান্ত নিলো মিহি। বাস্তবতা কঠিন আর সেই কঠিন বাস্তব জীবনে কাল্পনিক ভালোবাসার কোনো অস্তিত্ব নেই।

” মা আমি বিয়ে করতে রাজি,তোমরা তোমাদের পছন্দমতো ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করতে পারো।”
মিহি আবারও বসার ঘরে ফিরে এসে বাবামায়ের উদ্দেশ্য বললো। আকস্মিক মিহির এরকম কথায় রিনা বেগম ও সালমান খুরশিদ দুজনেই চমকালেন।
” তুই ঠিক বলছিস তো?”
রিনা বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো।
” হ্যাঁ। আমার কাছে বাবার শরীর আগে তারপর পড়ালেখা। ”
মিহির কথা শুনে মুচকি হাসলেন সালমান খুরশিদ। মনে মনে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতেই ঠোঁটের কোণের হাসি আরো কিছুটা প্রসস্থ হলো।

দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নির্দিষ্ট সময় হলো কি-না সেটা পরখ করে নিলো বারকয়েক। সামনে অফিসের গেটের দিকে তাকাতেই বুকের ভেতর কেমন ছলাৎ করে উঠলো আদ্রিয়ানের। সেই পরিচিত চেহারা! বছরখানেকের বেশি হয়েছে মুখখানা দেখেনি সে। তবে বদলেছে তার পোশাকআশাক। শাড়িতে যাকে সংসারের সব কাজকর্ম করতে দেখতো এখন সে সুট বুট পরে অফিসে যাওয়া আসা করে। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিল খেয়াল করেনি আদ্রিয়ান কিন্তু গাড়ির আওয়াজে ঘোর কাটলো তার। ততক্ষণে রাহি নিজের গাড়িতে উঠে বসেছে। আদ্রিয়ান আর কালক্ষেপণ না করে দ্রুত গাড়ির কাছে দৌড়ে গেলো। গাড়ির জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকবার দম নিয়ে নিলো আদ্রিয়ান। এতক্ষণে রাহির দৃষ্টিগোচর হয়েছে বিষয়টা। তাই ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালাতে বললো সে।
” রাহুল দাদা গাড়ি স্টার্ট করুন, কারো জন্য দাঁড়ানোর দরকার নেই। ”
” রাহি প্লিজ! একবার শোনো যেও না। রাহি! রাহি!”
আদ্রিয়ান গাড়ির পিছনে ছুটলো মিনিটখানেক কিন্তু একটা সময় হাল ছেড়ে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। রাহির কথামতো ড্রাইভার তখনই গাড়ি চালাতে শুরু করেছিলেন। গাড়ির পাশের আয়নায় কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল রাহি। চেহারায় কেমন রোগা হয়ে গেছে লোকটার। মনে হয় ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না! আপন মনে বিরবির করছে রাহি। যতই শক্ত হোক সময় চলে যাক মনের গোপনে যে ভালোবাসা রয়েছে সেটুকু অস্বীকার করার কিছু নেই।
” রাহি আপু কিছু বলছেন? ”
ড্রাইভার রাহুলের কথায় ভাবনার ছেদ ঘটলো রাহির। আস্তে আস্তে কথা বললেও লোকটা শুনে ফেলেছে নিশ্চিত।
” না দাদা,একা একাই হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছিলাম।”
” আচ্ছা। ”

রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে আছে আদ্রিয়ান। দু-চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে তার। এতটা পরিবর্তন কীভাবে হলো মেয়েটা? অবশ্য পরিবর্তন তো আগেই হয়েছিল তবে তখন সেটা অগ্রাহ্য করেছিল তখন। সেদিন যদি রাহির অভিমান ভাঙাতো আদ্রিয়ান তাহলে আজ এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হতোনা। বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো আদ্রিয়ানের। আসলেই সময় গেলে সাধন হয় না!

সালমান খুরশিদ যেদিন প্রথম রুদ্র চৌধুরীকে দেখেছিলেন সেদিনই মনে মনে মেয়ের জামাই করবেন বলে ভেবেছিলেন। সেই আরজি নিয়ে আজ রুদ্রর বাসায় এসে উপস্থিত হয়েছেন তিনি,সাথে রিনা বেগমও আছেন। সময়টা রাত আটটা এখন। রুদ্র একটু আগেই বাসায় ফিরেছে মাত্র। এসেই এই দম্পতিকে দেখে খুব চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে ছিল সে। চিকিৎসা করানোর জন্য নিশ্চয়ই একেবারে বাড়িতে এসে উপস্থিত হননি তারা! রিনা বেগম অবশ্য স্বামীর এরকম পাগলামিতে বিশেষ খুশি নন। দেশে তো ডাক্তার ছেলের অভাব নেই যে বলেকয়ে এই ছেলেকেই মেয়ের জামাই করতে হবে। রহমান চাচা এরমধ্যেই দু’জনকে চায়ের সাথে হালকা নাস্তা পরিবেশন করেছেন। সেগুলো অবশ্য এখনও সামনে রাখা টি-টেবিলের ওপর রাখাই আছে কোনো খাবারে হাত দেননি দুজনের কেউ। জামাকাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে এতক্ষণে মুখোমুখি সোফায় বসলো রুদ্র।
” তা কেমন আছেন আপনারা? আঙ্কেলের শরীর কেমন এখন?”
হাসি মুখে প্রশ্ন করলো রুদ্র। মিহির বাবা সন্তুষ্ট চিত্তে বললেন,
” আলহামদুলিল্লাহ বাবা, আমরা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? ”
” এইতো ভালো। চা তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, শরবত হয়ে গেলে মোটেও ভালো লাগবে না খেতে। চা খেতে খেতে বরং কথা বলুন আপনারা।”
রুদ্রর কথামতো দুজনেই চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।
” আসলে বাবা আমরা একটা বিশেষ প্রয়োজনে তোমার কাছে এসেছি। এ-র আগে তোমার হসপিটালে গিয়ে তোমার ঠিকানা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছে আমার ছেলে।”
” হ্যাঁ সেটা তো বুঝতে পেরেছি আঙ্কেল। নিশ্চিত কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কথা বলতে এসেছেন। কিন্তু চিকিৎসা ব্যতীত আমার সাথে কী গুরুত্বপূর্ণ কথা থাকতে পারে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না আমার। আর চিকিৎসার ব্যাপার হলে নিশ্চয়ই বাসায় আসতেন না!”
” বুদ্ধিমান তুমি। আসলে অন্য বিষয় কথা বলতে এসেছি আমরা। কিন্তু কথাগুলো তুমি কীভাবে নিবে সেটাই বুঝতে পারছি না। ”
সালমান খুরশিদ বেশ ইতস্ততভাবে বললেন কথাগুলো। রিনা বেগম ভাবলেশহীনভাবে চায়ের দিকেই মনোযোগ দিয়ে আছেন। রুদ্র মিহির বাবার অস্বস্তি কাটাতে হাসলো একটু।
” সমস্যা নেই আঙ্কেল, আপনি নিশ্চিতে বলতে পারেন।”
” বাবা আমি তোমাকে আমার ছেলে হিসেবে পেতে চাই,আমার একমাত্র মেয়ে মিহির স্বামী হিসাবে। ”
এরমধ্যে রহমান চাচা রুদ্রর পাশে এসে দাঁড়িয়ে উনাদের কথোপকথন শুনছিলেন। হঠাৎ ভদ্রলোকের এরকম প্রস্তাবে খুশিতে দু-চোখ চকচক করে উঠেছে তার। রুদ্র বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। সালমান খুরশিদের থেকে এরকম একটা প্রস্তাব কল্পনাতীত ছিল তার। তাই ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গেছে রুদ্র। রুদ্র চুপ করে আছে, সালমান খুরশিদ রুদ্রর চেহারার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতায় ছেয়ে গেছে। রিনা বেগম রুদ্রর হাবভাব দেখে স্বামীকে ফিসফিসিয়ে বললেন,
” মনে হয় উনার অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে কিংবা তোমার থেকে এরকম প্রস্তাব আশা করেনি।”
” চুপ করো, দেখি কী বলে ছেলেটা। ”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রহমান চাচা নিজে থেকেই বলে উঠলেন,
” বাহ এটা তো খুব ভালো প্রস্তাব। এমনিতেই রুদ্র বাবার বিয়ের জন্য যথেষ্ট বয়স হয়েছে ”
রহমান চাচার কথায় রুদ্র চমকালো। লোকটা কী বলছে উনাদেরকে! রুদ্র মোটেই বিয়েসাদী করতে চায় না। সে হোক এখন কিংবা পরে। কিন্তু ভদ্রলোক যথেষ্ট ভালো মনে হচ্ছে কীভাবে মুখের উপর না বলবে রুদ্র?
” চাচা আপনি থামুন। আঙ্কেল আসলে এখনই বিয়ে করার কথা ভাবছি না আমি। ”
রুদ্রর কথায় সালমান খুরশিদ যেনো খুব কষ্ট পেলেন। হঠাৎ বুকের বামপাশে হাত দিয়ে কেমন কেঁপে উঠলো তার শরীর। রুদ্র তৎক্ষনাৎ সালমান খুরশিদের বুকে হাত দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলো।
” ঠিক আছি আমি বাবা। আসলে খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম তো কেমন যেনো কষ্ট লাগলো। দুঃখিত এরকম অন্যায় আবদার নিয়ে তোমার কাছে আসার জন্য। ”
রিনা বেগম যথেষ্ট রেগে গেছেন কিন্তু সেটা রুদ্রর সামনে খুব কষ্ট করে চেপে যাচ্ছেন।
” এখন বাসায় ফিরে চলো। অযথা উনাকে বিব্রত করলে আর নিজেও অসুস্থ শরীর নিয়ে এলে।”
রিনা বেগম কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন স্বামীকে। রুদ্রর বেশ খারাপ লাগছে বটে। ভদ্রলোক আসলেই বেশ দুঃখ পেলেন। কিন্তু এতে রুদ্রর কী করবার আছে? হঠাৎ করে এরকম অদ্ভুত আবদার করলে সেটা তো মানা যায় না। তাছাড়া বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়।
” ক্ষমা করবেন আঙ্কেল। আপনি নিজের শরীরের খেয়াল রাখবেন। আর দরকার হলে অবশ্যই চেম্বারে আসবেন। ”
” ঠিক আছে বাবা। আমরা আসছি।”
রিনা বেগম ও সালমান খুরশিদ ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে গেলেন। রুদ্র ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বসার ঘরে। রহমান চাচা নাস্তাগুলো নিয়ে রান্নাঘরে রেখে এসেছে। এতক্ষণে রহমান চাচার দিকে খেয়াল করেছে রুদ্র।
” উনাদের সামনে আগ বাড়িয়ে বিয়ের কথা বললেন কেনো আপনি? আপনার যদি আরেকটা বিয়ে করার ইচ্ছে থাকে তো বলুন চাচীকে গিয়ে বলে আসছি।”
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে