#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৯
_________________
-“মাহিদ তো সবটাই ধরে ফেলেছে!আসলেই তো আমি অনেক অন্যায় করতেছি এইসব করে।ওই কাকা-কাকি আমার মা-বাবা মারা যাওয়ার পরে আমাকে নিজের সন্তানের মতো যত্ন করেছে,ভালোবেসেছে!আর তার ছেলের জীবনটা আমি এভাবে নষ্ট করবো ভাবছি?শুধু মাত্র ও আমাকে ভালোবাসেনি বলে?না আমি আর এমনটা করবো না।মাহিদ আমাকে কখনোই ভালোবাসবে না।মাহিদ আর সুরভির মাঝে সবকিছু ঠিক করে দিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো।
তানিমা কথাগুলো বলে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছলো।
____________
মাহিদ সুরভির জন্য রেস্টুরেন্টে বসে ওয়েট করছে।কিছুক্ষণে পরে সুরভি এসে তার সামনে এসে বসলো।
-“আপনি কি সত্যি এমন একটা কাজের সাথে জড়িত মাহিদ?”
-“তোমার এটা বিশ্বাস হয়েছে সুরভি?”
-“আমার বিশ্বাস হওয়া না হওয়ায় কি যায় আসে!”
-“তোমার বিশ্বাসের উপরই সবকিছু নির্ভর করছে।”
-“সত্যি বলতে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।কিন্তু ভিডিওটা তো আর মিথ্যা নয়।সেখানে স্পষ্ট আপনার মুখ দেখা গিয়েছে।”
মাহিদ মৃদু হেসে রেকর্ডিংটা অন করলো।তানিমা আর মাহিদের কথোপকথন শুনে সুরভি অবাক হয়ে মাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপরে নিজেকে সামলে বললো,
-“তার মানে এইসব তানিমা আপু করেছে?কিন্তু এখানে তুষারের নাম আসছে কোথা থেকে সেটাই তো বুঝলাম না।”
-“সিওর না হলেও আমার মনে হয় তানিমার সাথে তুষার আছে।”
-“তুষার কখনোই আপনার নামে এমন একটা অভিযোগ আনবে না।”
-“কিন্তু তোমাকে মেরে ফেলায় ভয় আমাকে ঠিকই দেখিয়েছে।”
-“মানে?”
মাহিদ সব ঘটনা সুরভিকে বললো।সব শুনে সুরভি বললো,
-“এতোকিছু যে ঘটেছে তা আপনি আগে বলেননি কেনো?”
-“প্রমাণ তো ছিল না এর আগে।”
-“আপনি একটা প্রমাণ পেয়েছেন যে মিথ্যা অভিযোগটা তানিমা এনেছে।কিন্তু ওই লোকটা যে তুষার সেটা তো আপনি জানেন না এখনো।”
-“জেনে যাবো।আমার ধারণা বেশিরভাগই ঠিক হয়।আর তুষার যে তোমাকে ভালোবাসে এটা তো মিথ্যা নয় তাই-না!”
-“হ্যাঁ তা ঠিক।তাই বলে ও এমনটা করবে?”
-“ভালোবাসা এমনি।মানুষকে পাগল করে দেয়।কিন্তু তাই বলে নিজের ভালোবাসার মানুষকে মেরে ফেলার কথা কিভাবে বলে!”
-“আমি কিছুই বুঝতেছি না।বিরক্ত লাগছে আমার।”
ওয়েটার এসে দুই কাপ কফি দিয়ে গেল।
-“এতোকিছু বুঝতে হবে না।আপাতত কফিটা খাও।”
_____________
সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতে মাহিদ দেখলো তানিমা বসে মনোয়ার সাহেবের সাথে কথা বলছে।মাহিদের চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“তুই এখানে কি করছিস তানিমা?”
মাহিদকে দেখে উঠে দাঁড়ালো তানিমা।মনোয়ার সাহেব কিছু বলতে যাবে তার আগে তানিমা বললো,
-“কাকা আমি সবটা বলেতছি।”
তানিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাহিদের দিকে তাকালো।
-“মাহিদ আমি পুলিশের সাথে কথা বলে তোর নামের মিথ্যা অভিযোগ তুলে নিয়েছি।আসলে তুই ঠিকই বলেছিস জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।আমি এতোদিন মরিচিকার পিছনে ছুটেছি।কালকে তোর কথাগুলো শুনে অনেক ভেবে দেখলাম আমি কত পাপ করছিলাম এতোদিন!যেই কাকা-কাকি আমাকে এতো ভালোবাসা দিয়ে বড় করলো তার ছেলের জীবনটা আমি এভাবে নষ্ট করতে চেয়েছি!অনেক অন্যায় করেছি আমি।চিন্তা করিস না।আমি তোর আর সুরভির জীবন থেকে অনেক দূরে চলে যাবো।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতাতেই সুন্দর।”
মাহিদ অবাক হয়ে তানিমা দিকে তাকিয়ে আছে।
-“একদিনে এতো পরিবর্তনের কারণ?”
-“কারণ এতোদিনে আমি বুঝেছি তুই আমার কখনোই হবি না।”
তানিমা কথাটা শেষ করতেই হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।মনোয়ার সাহেব আর মাহিদ এগিয়ে গেল।
-“বাবা ও তো সেন্সলেস হয়ে গেছে।”
রাবেয়া বেগম এসে বললেন,
-“ও-কে এখনি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর।”
মাহিদ আকিবকে কল করে আসতে বললো।তারপরে মাহিদ আর আকিব মিলে তানিমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
-“কি হলো ওর হঠাৎ করে মাহিদ?”
-“আমিও তো কিছু বুঝছি না।সকালে এসে একদম সব ভুল স্বীকার করলো।তারপরেই এই অবস্থা!”
কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার এসে বললো,
-“উনার ব্রেইনে বড় কোনো সমস্যা আছে।কিছু টেস্ট করা হয়েছে।রিপোর্ট আসলে বুঝা যাবে কি হয়েছে!ততক্ষণ উনি এখানেই থাকুক।”
কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে গেল।মাহিদ আকিবের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি যে হলো কে জানে!”
একটু পরে তানিমা ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসলো।
-“তুই আবার ক্যাবিন থেকে কেনো বের হয়ে আসলি?”
-“মাহিদ আমি ঠিক আছি।তোকে জরুরি কিছু কথা জানানোর দরকার।”
আকিব পাশে থেকে বললো,
-“হঠাৎ যে মাহিদকে তুই করে বলছেন!”
তানিমা মৃদু হেসে বললো,
-“আমি আর আগের তানিমা নেই।তাই সবটাই পরিবর্তন করে ফেলেছি।”
-“এইসব বাদ দিয়ে এখন বল জরুরি কথা কি!”
-“ওই লোকটার নামও তুষার।তবে এই তুষার আর সুরভির চাচাতো ভাই তুষার এক নাকি আমি সেটা জানি না।কারণ এই তুষারের সাথে সামনাসামনি কখনো আমার দেখা হয়নি।যা কথা হয়েছে তা মোবাইলে।তবে সুরভির চাচাতো ভাই আর এই তুষার এক তা আমার মনে হয় না।কারণ সুরভির ভাই তুষারকে তো দেখলে অনেক ভদ্র মনে হয়।”
মাহিদ সবটা শুনে বললো,
-“ভদ্রতার আড়ালেই মুখোশধারী শয়*তান থাকে।”
আকিব কিছু একটা ভেবে বললো,
-“ভয়েসের কি মিল আছে?”
তানিমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“সত্যি বলতে আমি ভয়েসের মিল পেয়েছি।আমারও সন্দেহ হওয়ায় সুরভির কাজিন তুষারের সাথে কথা বলেছি।দুজনের ভয়েসে হালকা মিল আছে।আমার সাথে যে মোবাইলে কথা বলতো তাকে অনেকবার দেখা করতে বলেছি কিন্তু সে দেখা করেনি।তাই আমার মনে হয় ওই তুষার আর সুরভির কাজিন তুষার।দুজনল একই লোক।”
-“তানিমা তোকে ধন্যবাদ যে তুই আমাদের এতোকিছু জানালি।দেখছি কি করা যায়!তবে আমার মনে হয় এই দুই তুষার একজনই।”
মাহিদের মেবাইলে কল আসলো।সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো সুরভি কল করেছে।
-“তোরা থাক আমি আসতেছি।”
মাহিদ কিছুটা দূরে গিয়ে কলটা রিসিভ করলো।
-“কি ম্যাডাম,আমাকে মিস করছেন নাকি?”
-“দেখুন আমি আপনাকে কল করেছি তানিমা আপুু্র আপডেট জানতে।এইসব উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না।”
-“তানিমার কথা তুমি জানলে কিভাবে?”
-“আন্টি কল করে সবকিছু জানিয়েছে আমার আম্মুকে।”
-“ওহ্ আচ্ছা।তানিমার কিছু টেস্ট করানো হয়েছে।তার রিপোর্ট আসলে জানা যাবে ওর কি হয়েছে!”
-“ওই লোকটা কে সেই বিষয়ে তানিমা আপু কি কিছু বলেছে?”
মাহিদ তানিমার বলা সব কথা সুরভিকে বললো।
-“বাই দ্যা ওয়ে তুষার বাড়িতে নেই।ও নাকি কোথায় ট্যুরে গেছে!”
-“মানে?ও হয়তো কোনো বিপদের আশংকা পেয়ে পালিয়েছে।এখন তো আমার ধারণাই ঠিক মনে হচ্ছে।এই দুই তুষারই একজন।”
-“হতে পারে।এখন দেখুন কি করবেন!”
সুরভি কলটা কেটে দিল।মাহিদ মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে দেখলো আকিব তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-“তুই এখানে কি করছিস আকিব?তানিমা কই?”
-“ওর মাথা ব্যথা করছে।তাই ক্যাবিনে গিয়ে শুয়ে আছে।”
_________________________
-“সরি।উনার ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে।একদম লাস্ট পর্যায়।আমাদের কিছু করার নেই।”
ডাক্তারের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেন মনোয়ার সাহেব।মাহিদ’ মনোয়ার সাহেবের কাঁধে হাত দিয়ে উনাকে শান্ত করছে।তবে তারও কিছুটা খারাপ লাগছে!
-“এই কথা আমরা কিভাবে তানিমাকে জানাবো!”
মনোয়ার সাহেবের কথা শুনে ডাক্তার বললেন,
-“উনি সবটাই জানেন।”
আকিব পাশে থেকে বললো,
-“মানে?ও-কে আপনি সবটা বলে দিয়েছেন?”
-“লুকিয়ে তো কোনো কিছু হবে না।যেই কয়দিন বেঁচে আছে আনন্দে বাঁচুক।তাই আমি সবটা বলে দিয়েছি।
মাহিদ তানিমার ক্যাবিনে গিয়ে দেখলো সে সেখানে নেই।
-“আকিব’ তানিমা তো ক্যাবিনে নেই!”
-“এটাই হওয়ার ছিল।মাহিদ চল তুই আর আমি ভালো করে চারপাশটা খুঁজে দেখি।”
-“হুম চল।”
মাহিদ আর আকিব মিলে সম্পূর্ণ হসপিটাল খুঁজে কোথাও তানিমাকে পেল না।তারপরে দুজনে গাড়ি নিয়ে বের হলো তানিমাকে খুঁজতে।ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার কারণে রাস্তা-ঘাট একদম নিরব।হঠাৎ করে তারা দেখলো তানিমা রাস্তার মাঝ দিয়ে আনমনে হাঁটছে।তারা গাড়ি থেকে নেমে তানিমার কাছে যাওয়ার আগেই হঠাৎ করে একটা হুডি পড়া ছেলে এসে তানিমার মাথায় বন্দুক ধরে বললো,
-“তুই আমার কথা জানিয়ে দিয়েছিস তাই-না!তোকে আমি ছাড়বো না।”
মাহিদ খুবই সাবধানতার সাথে লোকটার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো।হুডি পড়া লোকটা গুলি করার আগেই মাহিদ তার পিঠ বরাবর একটা লাথি মারলো।যার ফলে সে রাস্তায় পড়ে গেল।লোকটা পালিয়ে যাওয়ার আগেই মাহিদ তাকে ধরে ফেললো।মাহিদ আর আকিব জোর করে মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দেখলো এটা আর কেউ নয় তুষার!
মাহিদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“তাহলে আমার ধারণাই ঠিক হলো।”
#চলবে____