#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৮
_________________
-“কিন্তু আমি তো বাড়াবাড়ি করবোই।”
সুরভি আর কিছু না বলে নিশাকে কল করে শপিংমলের পাশের রেস্টুরেন্টে আসতে বললো।সেখানে গিয়ে তিনজনে মিলে পিজ্জা খেলো আর আড্ডা দিল।
বাড়ি ফেরার পথে নিশা বললো,
-“কি রে সুরভি আবার মন দিয়ে বসলি নাকি?”
-“এমন কিছুই না।তবে আমার মনে হচ্ছে উনাকে বিশ্বাস করা যায়।আমি যতটা খারাপ ভাবতাম উনি ততটা খারাপ নন।”
-“আমারও এটা মনে হয়েছে।আচ্ছা যা তুই আমি নেমে গেলাম।”
-“আচ্ছা যা।”
_______________
-“ইয়াহু!আজকে যে কি আনন্দ হচ্ছে!সুরভি আমাকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।এই বিশ্বাস নিজে কখনোই ভাঙবো না সুরভি।”
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ কানে আসতে মাহিদ গিয়ে দরজা খুলে দিলো।দরজা খুলে দেখলো মনোয়ার সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।
-“বাবা তুমি এখানে?”
-“তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
-“আচ্ছা ভিতরে আসো।”
মনোয়ার সাহেব মাহিদের রুমে প্রবেশ করলেন।মাহিদ কিছু বলতে যাবে তার আগে মনোয়ার সাহেব বললেন,
-“সেদিন বিয়েটা কেনো ভেঙেছিলে তার সত্যি কারণটা আমাকে বলো!”
মাহিদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-“বাবা পরে বললে হয় না?”
-“মাহিদ বেশি কথা বলো না।যা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো।”
মাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,
-“বিয়েটা ঠিক হওয়ার কিছুদিন পরে আমাকে কেউ একজন কল করে বলে ও নাকি সুরভিকে ভালোবাসে আমি যেন এই বিয়েটা না করি।আমি তো ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে কল কেটে দেই।তার কিছুদিন পরে আমাকে সেই নাম্বার থেকে একটা ভিডিও সেন্ড করে যেখানে সুরভির পিছনে হুডি পড়া এক লোক তার দিকে বন্দুক তাক করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি যদি বিয়ে না ভাঙি তাহলে সুরভিকে গুলি করে মেরে ফেলবে।সুরভির পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলবে।আমি পুলিশকে ইনফর্ম করি কিন্তু ওদিকে আরেক ঝামেলা।তারা আমাকে জানায় আমি নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িত।কোনো জোরদার প্রমাণ না থাকায় তারা আমাকে গ্রেফতার করতে পাচ্ছে না তবে তারা আমাকে কোনোভাবে সাহায্যও করবে না।এই খবর কিভাবে যেন তানিমা পেয়ে যায়।ও আমাকে ব্লাকমেইল করতে শুরু করে আমি যদি সুরভিকে বিয়ে করি তাহলে ও সবটা সুরভিকে জানিয়ে দিবে।আমি ভালো করেই জানি এইসব জানলে সুরভি কখনোই আমাকে বিয়ে করতো না।তাও আমি বিয়েটা করতে গিয়েছিলাম তবে সেদিন আমাকে সেই পুলিশ অফিসার কল করে জানায় সুরভিকে বিয়ে করা ঠিক হবে না।তাহলে সুরভির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।তারা ইনফর্ম পেয়েছে ওই বিয়ে বাড়িতেই নাকি কারো কাছে বন্দুক ছিল আর সে অপেক্ষায় ছিল কবুল বলার।কবুল বললেই সুরভির পিঠে গুলি করে দিতো!আর আমি সেই কারণে সেদিন কবুল না বলেই উঠে গিয়েছিলাম।”
সবটা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন মনোয়ার সাহেব।
-“তুমি এইসব আগে কেনো বলোনি?”
-“কারণ আমার কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই যে আমি নির্দোষ।আর ওই লোকটা কে সেটাও জানি না।আজকে বললাম তুমি জোর করার কারণে।জানোই তো বাবা আমি তোমাকে একটু ভয় পাই।”
মনোয়ার সাহেব মাহিদকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“কত কথা তোকে বলেছি বাবা কিছু না জেনে।তোর কোনো চিন্তা নেই আমি সবটা দেখছি।”
হঠাৎ করে মাহিদের রুমে আকিব আসলো।মনোয়ার সাহেব মাহিদকে জড়িয়ে ধরে আছে দেখে মৃদু হেসে আকিব বললো,
-“যাক বাবা-ছেলের সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে।”
মনোয়ার সাহেব মাহিদকে ছেড়ে আকিবের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-“মাহিদ তুমি কোনো চিন্তা করো না।আমি আজই আমার বন্ধুর সাথে কথা বলতেছি এই বিষয়ে।তোমার আমাকে সবটা আরো আগেই জানানো উচিত ছিল।”
মনোয়ার সাহেব মাহিদের রুম থেকে চলে গেলেন।
-“কি আগে জানানোর কথা বললো ফুপা?”
মাহিদ সব ঘটনা আকিবকে বললো।
-“কি এতো কিছু ঘটে গেছে?তুই ওই তানিমাকে থা*প্পড়াতে পারিস না?আর ওই লোকটাই বা কে যে সুরভিকে ভালোবাসে?”
-“অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছি।আমার মনে হয় ওই লোকটা আর কেউ না।সে হলো তুষার।”
-“আর ইউ সিওর মাহিদ?”
-“জোর দিয়ে বলতেছি না তাও আমার ধারণা হচ্ছে।”
-“এক কাজ করি ওর উপর নজর রাখা শুরু করি।তাহলে হয়তো কোনো প্রমাণ পেয়ে যাবো।আর তোর নামে এমন অভিযোগ কে উঠিয়েছে?”
-“তানিমাই হবে হয়তো।নাহলে আমার এই অভিযোগ কাজে লাগিয়ে তো আর আমাকে ব্লাকমেইল করতো না।তবে ওর কোনো কিছুতেই আমি পাত্তা দেই না।”
-“তুই সুরভিকে এইসব কিছু জানা।তাহলে দেখবি সবটা ঠিক হয়ে যাবে।”
-“কিন্তু ও যদি আমার কথা বিশ্বাস না করে?যদি ভাবে আমি সত্যিই নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িত?ভাই রে অনেক কষ্টে রাগ একটু কমাতে পারছি যদি এটা বিশ্বাস না করে তাহলে তো সব শেষ!”
-“এতো চিন্তা করা বাদ দে।সময় করে সবটা ও-কে বল।আপাতত চল নিচে যাই।”
দুজনে নিচে গিয়ে দেখলো বারেয়া বেগম আর মাইশা বসে বসে কথা বলছে।মাহিদ আর আকিবকে দেখে রাবেয়া বেগম বললেন,
-“মাহিদ এতো কিছু ঘটে গিয়েছে তুই আমাদের জানাবি না?”
-“মা জানাতাম তো সময় হলে।বাবা কোথায়?”
-“তোর বাবা গিয়েছে তার বন্ধুর কাছে।কি নারী পাচার চক্রের সাথে তুই নাকি জড়িত!এইসব অভিযোগ কে করছে?”
-“আমি কিছুই জানতে পারিনি এই বিষয়ে আম্মু।”
-“তানিমা এইসব কেনো করলো?”
-“জানোই তো মা ও আমাকে পছন্দ করে।তবে কোনো লাভ নেই।আমি শুধুমাত্র সুরভিকেই ভালোবাসি।”
তানিমা মাহিদদের বাড়িতে প্রবেশ করতে গিয়ে এইসব কথা শুনতে পেল।সে আর বাড়িতে না ঢুকে রাগে হনহন করতে করতে চলে গেল।গাড়িতে বসে কাউকে কল করে বললো,
-“ভিডিওটা সুরভির নাম্বারে পাঠিয়ে দেও।”
কলটা কেটে তানিমা বললো,
-“তুমি আমার না হলে আর কারো হতে পারবে না মাহিদ।”
_________
সুরভির মোবাইলে একটা ভিডিও আসায় সেটি সে ওপেন করে দেখে,’মাহিদ একজন পুলিশ অফিসারের সাথে কথা বলছেন।তিনি মাহিদকে বলছেন মাহিদের নামে নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।কোনো জোরদার প্রমাণ না থাকায় তিনি তাকে গ্রেফতার করতে পারছেন না।’
ভিডিওটা দেখে সুরভি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
-“মাহিদ এমন একটা কাজ করতে পারে?”
সুরভি আর কিছু না ভেবে মাহিদকে কল করলো।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল মাহিদ।হঠাৎ মোবাইলে কল আসায় মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো সুরভি কল করেছে।সুরভির নাম্বার থেকে কল আসায় মাহিদ বেশ অবাক হলো।সে আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করলো।কলটা রিসিভ করতে সুরভি বললো,
-“আপনি নারী পাচার চক্রের সাথে জড়িত?”
সুরভির মুখে এমন কথা শুনে হতবাক হয়ে গেল মাহিদ।মাহিদ নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
-“কি বলছো তুমি এইসব?তুমি কি করে জানলে এই বিষয়ে?”
-“আমাকে কে যেন একটা ভিডিও পাঠিয়েছে সেখানে দেখেছি।”
মাহিদের আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা তানিমার কাজ।মাহিদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“সুরভি আজ সন্ধ্যায় তুমি আমার সাথে …… জায়গায় দেখা করো।তোমাকে আমি সবটা বুঝিয়ে বলবো।”
-“আপনার মতো একজন লোকের সাথে আমার দেখা করার কোনো ইচ্ছা নেই।”
-“প্লিজ সুরভি।”
সুরভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
সুরভি কলটা কেটে দিল।মাহিদ রেডি হয়ে বাড়ি থেকে বের হতে গেলে মাইশা বললো,
-“কোথায় যাচ্ছিস তুই ভাইয়া?”
-“কিছু হিসাব বাকি আছে!”
মাহিদ গাড়ি নিয়ে সোজা তানিমাদের বাড়িতে গেলো।কলিংবেল বাজাতেই তানিমা এসে দরজা খুলে দিলো।মাহিদকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-“আমি জানতাম তুমি আসবে।”
মাহিদ ঠাস করে তানিমার গালে একটা চ*ড় মারলো।তানিমা চোখ রাঙিয়ে মাহিদের দিকে তাকালো।
-“লজ্জা করে না তোর?এতো বেহায়া হতে পারিস কি করে তুই?তোর জন্য আমার জীবনটা জাহান্নামে পরিণত হয়েছে।এইসব বাদ দে তানিমা।আর বল কার সাথে মিলে তুই এইসব করছিস?”
তানিমা আমতা আমতা করে বললো,
-“ম মা মানে?”
-“মানে হলো তুই আর ওই লোক যে একসাথে মিলে এইসব করছিস সেটা আমি বুঝে গেছি।”
-“কোন লোক?আমি কোনো লোককে চিনি না।”
-“তুষারকে চিনিস না তুই?”
তুষারের নামটা শুনতেই তানিমা ভয় পেয়ে গেলো।যা দেখে মাহিদ মৃদু হেসে বললো,
-“তোর এই মুখ দেখেই সবটা বুঝা যাচ্ছে।আর তুই যে আমার নামে ওই অভিযোগ এনেছিস সেটাও আমি ভালো করে বুঝতে পেরেছি।তবে তুই ওই ভিডিওটা কেনো সুরভিকে পাঠালি?”
-“কারণ আমি তোমাকে হারাতে চাই না।”
-“আমি তো কখনো তোর ছিলামই না যে তুই আমাকে হারাবি!জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।তুই যদি আমাকে এতোই ভালোবাসিস তাহলে আজ থেকেই তুই এইসব বন্ধ করবি।”
মাহিদ পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে রেকর্ডিংটা অফ করে বললো,
-“আপাতত এটা শোনালেই সুরভি আমাকে বিশ্বাস করবে।আর বাকি রইলো তোর ওই অভিযোগ!সেটা না হয় পরে দেখবো।আর হ্যাঁ ওই তুষারকেও পরে দেখতেছি।”
মাহিদ তানিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।
#চলবে____