#মধুরেণ সমাপয়েৎ
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৭
_________________
-“আর যেই তীব্র যন্ত্রণা আমি সহ্য করছি তার কি হবে?”
সুরভির কথায় মাহিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“একটু সময় দেও।সবটা জানতে পারবে।শুধুমাত্র আমার উপর একটু বিশ্বাস রেখো।”
-“তা আপনার আমার কথা বিশ্বাস না করার কারণ কি?”
-“তোমার কথাগুলো কেনো যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না।তবে মা যখন বললো তুমি ওগুলো আমাকে মিথ্যাও বলতে পারো তখন আমি একদম সিওর হয়ে গেলাম।আসলেই তুমি মিথ্যা বলতে পারো!”
-“হ্যাঁ আমি মিথ্যাই বলেছিলাম কারণ আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই।”
-“সেটা তো হওয়ার নয়।আর হ্যাঁ এখন বাসায় যাও।অনেক রাত হয়েছে তো আমাদের কেউ দেখলে তোমাকেই আবার কথা শুনতে হবে।আর আমার শুনতে হবে তোমার থেকে কথা!”
সুরভি মাহিদের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালে মাহিদ হেসে দিলো।সুরভি আর কিছু না বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল।মাহিদ গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করলো।সুুরভি তার রুমে এসে প্যাকেটটা খুলে দেখলো সেখানে একটা ফটো ফ্রেম আর তাতে তার ছবি আঁকা।যা দেখে সুরভি অবাক হয়ে গেল।
-“কি সুন্দর আর্ট!কে এঁকেছে আমার ছবি এতো সুন্দর করে?”
_____________________
-“মাহিদ তুই কি কাল রাতে কোথাও গিয়েছিলি?”
-“কেনো হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস যে আকিব!”
-“না দেখলাম তুই অনেক রাতে রুমে ঢুকলি হাতে গাড়ির চাবি নিয়ে।আমি ঘুমের চোখে থাকায় আর উঠতে পারিনি।”
-“সুরভির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”
-“বাহ্!তুই তো একদম নাম্বার ওয়ান প্রেমিক হয়ে যাবি দেখছি।”
আকিবের কথায় মাহিদ হেসে দিলো।দুজনে ব্রেকফাস্ট করে বাড়ি থেকে বের হলো।
-“মাহিদ তুই বরং অফিসে যা।আমার একটা জরুরি কাজ আছে।”
-“তোর আবার কিসের কাজ?তুই তো এখনো মামার বিজনেসে জয়েন করিসনি।”
-“এমনি একটু কাজ আছে।তুই যা।”
-“আচ্ছা থাক তাহলে।”
মাহিদ গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।অফিসে গিয়ে ক্যাবিনে যেতেই তার মেজাজ গরম হয়ে গেল।কারণ সেখানে তানিমা বসে আছে।
-“তুই এখানে কি করছিস তানিমা?”
-“তোমার সাথে দেখা করতে আসলাম।”
-“তুই এতো নির্লজ্জ কিসের জন্য?তুই জানিস আমি তোকে পছন্দ করি না তাও তুই এভাবে আমাকে বিরক্ত করছিস!”
-“তোমাকে তো আমি ছাড়বো না মাহিদ।কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
মাহিদ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ঠাস করে তানিমার গালে একটা চ*ড় মারলো।তানিমা গালে হাত দিয়ে উচ্চস্বরে হাসছে।যা মাহিদের অত্যন্ত বিরক্ত লাগছে!
-“জাস্ট স্টপ ইট তানিমা।”
-“কেনো?আমার হাসি শুনতে ভালো লাগছে না?”
-“তুই আসলেই একটা সাইকো।নিজের মাথার চিকিৎসা করা আগে।”
-“হ্যাঁ আমি সাইকো।শুধু তোমার জন্য।তুমি ওই সুরভির পিছনে কেনো পড়ে আছো?আমি যে এতোটা ভালোবাসি তোমায় তা তোমার চোখে পড়ে না!”
-“তোর এইসব ভালোবাসার কথা রাখ।যে ভালোবাসে সে কখনো তার ভালোবাসার মানুষের জন্য বিষাক্ত হতে পারে না।তুই আমার জন্য কতটা বিষাক্ত সেটা শুধুমাত্র আমি জানি।”
মাহিদের কথায় ফের উচ্চস্বরে হেসে উঠে তানিমা।এই হাসির স্বর বেশ বিরক্ত লাগছে মাহিদের কাছে।মাহিদ গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“তানিমা তুই কি এখান থেকে যাবি নাকি আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে বাধ্য হবো!”
-“তুমি কিছুই বুঝতেছো না মাহিদ।আমি শুধু বিষাক্ত না তার সাথে ভয়ঙ্করও।”
তানিমা কথাগুলো বলে রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেল।
-“আমার কেনো যেন মনে হচ্ছে ওই লোকের সাথে তানিমার কোনো যোগসূত্র আছে।তবে ওই লোকটা কে?”
_________
-“মাইশা শোন,,”
আকিবের কণ্ঠ শুনে মাইশা বেশ চমকে গেল।সে পিছনে ঘুরে তাকাতে দেখলো আকিব দাঁড়িয়ে আছে তার কলেজের সামনে।মাইশা তার দিকে এগিয়ে গেল।
-“তুমি এখানে কি করছো আকিব ভাইয়া?”
-“উফ মাইশা!ভাইয়া ডাকিস না তো।”
আকিব মুখ কুঁচকে কথাটা বললো।যা দেখে মাইশা মুচকি হাসলো।তবে তা আকিবের চোখ এড়ালো না।
-“আরো বেশি করে হাসি দে।কিছু তো নিজেও বলিস না আর আমি কিছু বলতে গেলে ভাইয়া ডেকে সবটা বারোটা বাজিয়ে দিস।”
-“তা তুমি তো আমার ভাই হও।তোমাকে ভাইয়া না ডেকে কি ডাকবো!”
-“হ্যাঁ ভাই হই।তবে সেটা তো আর আপন ভাই না।তোর আপন ভাই মাহিদ আছেই।ও-কে বেশি করে ভাইয়া ডাক।কিন্তু আমাকে ডাকবি না।”
-“আরে আকিব ভা….”
এটুকু বলতেই আকিব চোখ রাঙিয়ে তাকালো।মাইশা ডোন্ট কেয়ার ভাব করে বললো,
-“তুমি এখানে কেনো এসেছো সেটা বলো?”
-“তুই কি বুঝিস না?ছোট বাচ্চা নাকি তুই?অনার্স প্রথম বর্ষে তো পড়িস তাহলে তো আর বাচ্চা না তুই।”
-“তুমি এতো কথা না বলে আসল কথা বলতে পারো না?”
-“আমি বলতে পারলে তো হতোই।”
-“এভাবেই চুপ করে থাকো।তাহলে তোমার আর……”
মাইশা পুরো কথা না বলে চোখ রাঙিয়ে হনহন করে হেঁটে চলে গেল।
-“পুরো কথাটা না বলেই চলে গেল।ধূর!ভালো লাগে না আমার।”
________
ক্লাসে আনমনে বসে কি যেন ভাবছে সুরভি!তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নিশা বললো,
-“কি রে সুভি!এমন চুপচাপ বসে আছিস কেনো?”
-“এমনি ভালো লাগছে না।চল দুজনে মিলে ঘুরতে যাই।আজ তো আর কোনো ক্লাস নেই।”
-“ভালো কথাই বলেছিস।চল ঘুরে আসি দুজনে গিয়ে।”
সুরভি আর নিশা হাওয়াই মিঠা খাচ্ছে আর গল্প করতে করতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।হঠাৎ করে একটা গাড়ি এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।একটু পরে মাহিদ গাড়ি থেকে নেমে আসলো।মাহিদকে দেখে সুরভি বিড়বিড় করে বললো,
-“আবার এসে হাজির হলো।থাক ভালোই হয়েছে এখন জেনে নিতে পারবো আমার ছবিটা কে এঁকেছে!”
মাহিদ চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে তাদের দিকে এগিয়ে আসলো।নিশা সুরভিকে আস্তে করে বললো,
-“তোর প্রেমিক পুরুষ চলে এসেছে।তুই থাক আমি বরং শপিংমলে গিয়ে কিছু ড্রেস দেখি।”
-“আরে তুই আমাকে একা রেখে চলে যাবি?”
-“একা কোথায়?মাহিদ ভাইয়া আছে তো!আর কিছু সময়েরই তো ব্যাপার।আমি আসছি আবার একটু পরে।”
নিশা শপিংমলের দিকে চলে গেলো।মাহিদ নিশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“যাক মেয়েটার বুদ্ধি হয়েছে তাহলে!”
-“কি বলতে চান আপনি?”
-“এই যে ও এটা বুঝেছে যে আমাদের প্রাইভেসি দেওয়া দরকার।”
-“চুপ করুন তো।কিসের প্রাইভেসি?আমাদের মাঝে এমন কিছু নেই যে প্রাইভেসি লাগবে।”
-“সামনেই হবে সমস্যা নেই।”
-“আপনার এইসব কথা বাদ দেন।আগে বলেন কালকের আর্টটা কে করছে?”
-“অবিয়াসলি আমি।কারণ তোমার ছবি আমি অন্য কাউকে দিয়ে আর্ট করাবো না।”
-“আপনি আর্ট করতে জানেন?”
-“হুম একটু-আধটু।পড়াশোনা যখন করতাম তখন এইসব করার শখ ছিল।”
-“ভালোই গুণ আছে দেখছি।ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে আমার ছবি আঁকার জন্য।”
-“নিজের লোককে আবার কেউ ধন্যবাদ দেয়?”
-“আপনি আমার কোনো নিজের লোক না।”
সুরভির কথায় মুচকি হাসলো মাহিদ।সুরভি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“আচ্ছা সত্যি করে বলেন তো সেদিন বিয়ে কেনো ভেঙেছিলেন?”
-“হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করছো যে?”
-“কারণ ইদানীং মনে হচ্ছে যতটা খারাপ আপনাকে ভেবেছিলাম ততটা খারাপ আপনি না।আর এই বিয়ে ভাঙার পিছনেও হয়তো কোনো কারণ আছে।”
মাহিদের মুখে হাসি ফুটলো।
-“তোমার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনে বেশ শান্তি পেলাম সুরভি।একটু সময় দেও আমাকে।সবটা জানাবো প্রমাণসহ!”
-“কিসের প্রমাণ?”
-“জানাবো তো।সবটা আগে আমি জেনেনি।আপাতত চলো তোমার বান্ধবীকে ডেকে তিনজনে মিলে পিজ্জা খেতে যাই।”
-“আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না!”
-“একটু আগেই না কি সুন্দর বললে আমাকে এখন আগের মতো খারাপ ভাবো না।”
-“তাই বলে কি আপনার সাথে পিজ্জা খেতে যাবো?”
-“হ্যাঁ যাবে।”
মাহিদ সুরভিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে নিয়ে গেল।বেশ আগলে রেখে মাহিদ সুরভিকে রাস্তা পাড় করালো!যা দেখে সুরভির মুখে মৃদু হাসি ফুটলো।সুরভি মনে মনে বললো,
-“আসলেই লোকটা ওতোটা খারাপ না।”
মাহিদ রাস্তা পাড় হতে হতে খেয়াল করলো সুরভি তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।যা দেখে শপিংমলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
-“এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমারও তো লজ্জা করে তাই-না!”
মাহিদের কথায় সুরভি কিছুটা লজ্জা পেল।মাহিদকে না বুঝতে দিয়ে বললো,
-“আমি মোটেও আপনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম না।আমি ভাবছিলাম আপনি আমাকে বাচ্চাদের মতো আগলে রাস্তা পাড় করালেন কেনো!”
-“কারণ তুমি আমার কাছে খুবই স্পেশাল।আমার প্রিয়দর্শিনী।আমার হৃদয়হরণী।আমার সুন্দরীতমা।”
সুরভি এক দৃষ্টিতে মাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কিছু মনে পড়তে বললো,
-“ওয়েট আমি কি বললেন?সুন্দরীতমা?তার মানে সেদিন ওই চিঠি আপনি দিয়েছিলেন?”
-“হ্যাঁ আমিই দিয়েছিলাম।আর কারো সাহস আছে নাকি তোমাকে লাভ লেটার দেওয়ার!”
-“এই যে হ্যালো!বেশি বাড়াবাড়ি করা বন্ধ করুন।”
#চলবে____