ভয় পর্ব-১+২+৩

0
1502

ভয়
লেখিকা_বিন্দু_মালিনী
#১ম_পর্ব

বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ আমার ওড়নায় টান পড়লো।আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি লিমন।ভয়ে আমার গা ছমছম করছে।
এলাকার সবাই এক নামে চিনে লিমনকে।
সবাই দূর থেকে গু”ন্ডা বল্লেও সামনে থেকে তাকে গু”ন্ডা বলার সাহস পায়না।কারণ সবারই নিজের জানের ভয় আছে।

লিমন এলাকার নাম করা গু”ন্ডা।
গু”ন্ডা বলছি কেন?এমন কোন সপ্তাহ নেই যে ও কারো সাথে মা”রামারি না করে।
কারণে বা অকারণে সে যেখানে সেখানে মা”রামারি করে।কখনো কখনো নিষ্পা”প ছেলে গুলোকেও মেরে আসে।র”ক্তা”ক্ত করে আসে।
ওদের পরিবারের সবাই এমন।ওর ভাইয়েরা,ওর চাচা রা,মামা রা সবাই নামকরা।
এলাকার সবাই ওদের ভয় পায়।

লিমনকে দেখে আমার হাত পা কাঁপতে থাকে।
_কি হলো?এই ভাবে কাঁপছো কেন?
_আপনি আমার ওড়না ধরেছেন কেন?
_তোমাকে একটা কথা বলবো বলে।
_আচ্ছা আগে ওড়না ছাড়ুন।

লিমন আমার ওড়না ছাড়ার সাথে সাথেই আমি চোখ মুখ বন্ধ করে সজোরে দৌড় দেই।লিমন দাঁড়াও দাঁড়াও বলতে বলতে আমার পেছন পেছন দৌড়াতে থাকে।

ও যদি ওড়না না ছাড়তো আমি ওই ওড়না ছেড়ে দিয়েই দৌড়ে বাসায় চলে যেতাম।কারণ ওটা ছিলো আমার গায়ে দেয়া এ”ক্সট্রা ওড়না।সাথে তো ক্র”জ ওড়না ছিলোই।তাই ওই ওড়না ছেড়ে গেলেও কোন সমস্যা হতোনা।অনেক মেয়েই ক্লাসে শুধু ক্র”জ ওড়না পরেই আসে।

কিছু দূর যাবার পর দেখি আমাদের এলাকার এক মুরুব্বি।
আর তখনই লিমন তাকে দেখে থেমে যায়।
আমি গিয়ে মুরুব্বি কাকার হাত ধরে ফেলি।

_কি হয়েছে?এভাবে দৌড়াচ্ছিস কেন?তুই ওমুকের মেয়ে না?তুই জানিস তোর বাবা আমার ছাত্র।আমি ওকে পড়িয়েছি।খুব ভালো ছাত্র ছিলো তোর বাবা।

আমি তাকে কোন উত্তরই দিতে পারছিলাম না।ভয়ে আমার ক”লিজা শুকিয়ে গেছে।

তিনি আমার চুপ থাকা দেখে একাই বললেন,কু”কুর ধা”ওয়া করেছে?
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হুম বললাম।
তারপর তিনি আমার হাত ধরেই আমার বাসায় পৌছে দিলেন।

আমার আব্বু প্রবাসী।
আব্বুও বাসায় নেই যে আব্বুকে কিছু বলবো।
বাসায় গিয়েই আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
আম্মু জিজ্ঞেস করছে,কি হয়েছে?
অনেক ক্ষণ কান্না করার পর আম্মুকে সব কিছু বললাম।

আম্মু বল্লো,কয়েক দিন স্কুলে যেতে হবেনা।
আর গেলেও আমি নিয়ে যাবো সাথে।
যেই কথা সেই কাজ।গেলাম না স্কুলে।
কিন্তু কয়দিন পরই আমার টেস্ট এক্সাম।টাকা জমা দিতে হবে।
তাই আম্মুকে সাথে করে নিয়ে স্কুলে গেলাম।

হঠাৎ ফোন এলো আম্মুর কাছে,আমার চাচাতো ভাইকে খুঁজে পাচ্ছেনা।মাত্র দুই বছর তখন ওর বয়স।বাসায় কান্নাকাটি লেগে গেছে।
আম্মু আমাকে স্কুলে রেখে বাসায় চলে যায়।

কি আর করার,
ক্লাস শেষ করে,কাজ শেষ করে।
আমাদের বাসা থেকে অনেক দূরে বাসার দুইটা মেয়ে আছে।ওদের বললাম,আমি আজ তোমাদের সাথে যাবো।
ওরাও অপেক্ষা করলো আমার জন্য।
আমরা তিন জনই এক সাথে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।

রাস্তায় আজ লিমনকে দেখা যাচ্ছেনা তাই ভয় কিছুটা কম লাগছে।

কিন্তু কিছু দূর যাবার পরই দেখি আমার সাইড ব্যাগ এ টান লাগছে।ব্যাগটা আমার ডান সাইডের কা”ধে ঝুলানো।

পিছন ফিরে দেখি লিমন আমার ব্যাগ টে”নে ধরেছে।
আমার ক্লাসমেট দুজন ওকে দেখেই দৌড়ে চলে যায়।

আর আমি অস”হায়ের মত লিমনের দিকে তাকিয়ে বলি,
আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
ব্যাগ ছাড়ুন আমার।
কিন্তু ও আমার ব্যাগ ছাড়েনা।
উলটা আমাকে ধ”মক দিয়ে বলে,
_সেদিন তো দৌড়ে পালিয়েছিলি,আজ কি করবি?আজ তোকে আমি আমার বাসায় নিয়ে যাবো।এই বলে লিমন আমার ব্যাগ ধরে টানতে টানতে…

চলবে..

ভয়_
লেখিকা_বিন্দু_মালিনী
#২য়_পর্ব_ও_৩য়_পর্ব

_সেদিন তো দৌড়ে পালিয়েছিলি,আজ কি করবি?আজ তোকে আমি আমার বাসায় নিয়ে যাবো।এই বলে লিমন আমার ব্যাগ ধরে টানতে টানতে কিছু দূর নিয়ে যায় আমাকে।

আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম আজ লিমন এমন কিছু করবে যার জন্য সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবোনা।

কিছু দূর যাবার পরই আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম,কি করা উচিৎ এখন আমার।আমি কি চিৎকার করবো?চিল্লাবো?
চিৎকার করে বা চিল্লাচিল্লি করে কোন লাভ নেই কেননা যদি কেউ দেখে লিমন আমার ব্যাগ ধরে টানছে,তবে কেউই সামনে এগিয়ে আসবেনা।কারণ লিমনকে সবাই ভয় পায়।এমনকি লিমনের পুরো পরিবারকেই সবাই ভয় পায়।

আমি কোন দিশা না পেয়ে আমার ব্যাগ টা কাধ থেকে খুলেই দেই দৌড়।
ব্যাগ রয়ে যায় লিমনের কাছে।আর আমি দৌড়ে বাসায় চলে আসি।
লিমন ভেবেছে ব্যাগ টেনে ধরলে হয়তো আমি ওর সাথে সাথেই চলে যাবো,কেননা ব্যাগে আমার বই রয়েছে।আর এক্সামেরও অল্প ক’দিন বাকি।
বই ছেড়ে তো আমি পালিয়ে যাবোই না।
কিন্তু বো’কা গু”ন্ডা বুঝেনি,বই তো আমি আরো হাজার বার কিনতে পারবো কিন্তু স’তী”ত্ব হারালে তা আর লাখ টাকার বিনিময়েও কিনতে পারবোনা।তাছাড়া ব্যাগে আমার দুইটা বই ছিলো মাত্র,
ওই দুইটা কিনে নেয়া যাবে।

আমি বাসায় গিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি।আম্মুকে খুলে বলি সব।
আম্মু এলাকার একজন কাকার কাছে সব কিছু খুলে বলে।
সে আশ্বাস দেয় লিমন আর কোন ঝা’মেলা করবেনা আমার।
আম্মুও আমাকে বলে,তোর জসিম কাকাকে সব বলেছি আমি,সে বলেছে এর পর আর কোন ঝা’মেলা করবেনা ওই ছেলে।

আমি কিছুটা স্বস্তি পাই।কারণ জসিম কাকাও খুব ডে”ঞ্জা”রাস পারসন।

কিন্তু পরের দিন আমি যা দেখতে পাই তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুতই ছিলাম না।
দেখি জসিম কাকা আর লিমন দুজন মিলে হাসাহাসি করছে।
তাহলে নিশ্চয়ই জসিম কাকা সব কিছু বলে দিয়েছে লিমনকে।
এখন আমার কি হবে,লিমন যদি আমার কোন ক্ষ”তি করে এখন।

আমি তাড়াতাড়ি করে বাড়ী ফিরে যাচ্ছি।
আর তখনই লিমন আমাকে দূর থেকে ডেকে বলে,
আমার নামে বি”চার বসাও?
আমার নামে বি”চার দেয় তোর মা অন্যের কাছে?
তোকে আর তোর মাকে আমি দেখে নিবো।

আমি কোন দিকে না তাকিয়ে বাসায় ফিরে যাই।
স্কুলে,মার্কেটে সব জায়গায় যাওয়া বন্ধ করে দেই।শুধু বাসায় বসে থাকি।
কিছুই ভালো লাগেনা আমার।হ”তাসায় ভু”গতে থাকি আমি।কি করবো এখন আমি।বাসায় বসে না হয় পড়বো।কিন্তু এক্সামের সময় এক্সাম দিতে যাবো কি করে।

আম্মুকে কেঁদে কেঁদে বলি,কি করবো এখন বলো তো?
আম্মু আব্বুকে বিদেশ ফোন করে জানায় সব।
আব্বু এলাকার মে’ম্বার,মা’তবর সবাইকে জানান।
কিন্তু সবার একই কথা,ওই ছেলেকে কেউ কিছু বলতে পারবেনা।কারণ ওই ছেলের পেছনে বড় এক গ্যাং* আছে।ওকে কিছু বললে,কাউকে ও ভালো থাকতে দিবেনা।

এদিকে আমার এক্সাম চলে আসে।
লিমন তো অপেক্ষায় আছে,এক্সাম তো দিতে যাবোই আমি।
তখন ও আমার সামনাসামনি হবে।

আজ আমার পরীক্ষা,
আমি পরীক্ষা দিতে ওর সামনে নিয়েই যাই।কিন্তু ও আমাকে চিনতেই পারেনা।বরং আমার জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে।

ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দেই আমি।
কারণ আমার যেভাবেই হোক পরীক্ষায় পাশ করতেই হবে।
আমি স্কুল লেভেল টা পেড়িয়ে যেতে পারলেই আমার ঝা’মেলা কমবে কিছুটা।কারণ তখন আমার আর এই স্কুলে পড়তে হবেনা।আমি দূরে কোন কলেজে ভর্তি হতে পারবো আর লিমনের য’ন্ত্রণা থেকে বাঁচতে পারবো।

আমার পরীক্ষা দেয়া শেষ হয়।
আবার আমি লিমনের সামনে দিয়ে বাসায় চলেও আসি,কিন্তু এবারো লিমন আমাকে চিনেনা।
কারণ হলো এই,
আমি বোরকা পরে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি।
আর এমন বোরকা পরেছি যেটা পরলে আমাকে ইয়াং একদমই দেখাবেনা।
বয়স্ক মহিলারা ওমন বোরকা পরেন।
আর আমার সাথে যায় আমার আম্মু এবং আমার কাকী।তিন জন এক সাথে যাই আমরা।তাই বোঝার কোন ক্ষ’মতা নেই যে ওই তিন জনের মাঝে আমি একজন।

এইভাবে সব গুলো পরীক্ষা আমি শেষ করি।
লিমন শেষ পরীক্ষা দিয়ে আসার সময় আন্দাজ করে,
এই তিন মহিলা প্রতিদিন এমন টাইমে কই যায়।

আমরা যখন চলে আসছিলাম,তখনই লিমন প্রশ্ন করে বসলো,

__আপনারা কোথায় যান?আর কোথা থেকে আসলেন?
__জ্বী আমরা পরীক্ষা দিয়ে আসলাম।
__এই বয়সে পরীক্ষা?
__পড়ালেখার কোন বয়স নেই ভাই।

আমার কাকী লিমনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়।আর আমরা চলে আসি।
কিন্তু লিমন ঠিক সেদিনই বুঝে যায় ওই বোরকা পরা মহিলা গুলোর মধ্যেই আমি আছি।

কিছু দিন পর আমার রেজাল্ট দেয়,আমি টেস্টে এলাউ হই।
এত দিন ক্লাস করিনি ঠিক আছে।কিন্তু এখন যে আমার কোচিং ক্লাস করা লাগবে।কিছু দিন পরই তো ফাইনাল এক্সাম।তাই কোচিং ক্লাস মিস দেয়া যাবেনা।

পরের দিন আমি আম্মু কাকীকে নিয়ে স্কুলে রওনা দেই।লিমন এমন ভাবে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে যেন আমাদের দেখেইনা।

এভাবে দুই তিন দিন যায় ও আমাদের একটুও ফলো করেনা।

কাকী বল্লো,এখন তাহলে তুই একাই যাওয়া আসা কর।আমাদের আর আসতে হবেনা তোর সাথে।ও তোকে চিনেনা যখন।আর ঝা’মেলাও করবেনা।

আমিও সম্মতি জানালাম।

পরের দিন আমি একাই স্কুলে গেলাম কোচিং এর জন্য।
যাবার সময় একই রিয়েকশন।লিমন যেন আমাকে চিনেই না।
আমি শান্তির নিশ্বাস ফেলে ওর সামনে দিয়ে স্কুলে চলে গেলাম।

কিন্তু আসার সময় আমার সাথে যা ঘটে,তা আমি কল্পনাও করিনি একবারের জন্য।

আমি স্কুল থেকে বাসায় যাবার জন্য হাঁটছি আর ঠিক সেই সময় লিমন পেছন থেকে আমার হাত ধরে বলে,

_নিজেকে খুব চা’লাক ভাবো তাইনা?
তুমি চলো শাখায় শাখায় আর আমি চলি পাতায় পাতায় বুঝেছো?আজ কে র’ক্ষা করবে তোমায়?

এই কথা বলে লিমন আমার হিজাবের মুখের পাশ টা খুলে ফেলে,
আর আমি আমার বুকের ভেতর জমিয়ে রাখা সমস্ত ভয় কে বুকের ভেতরই দা”ফন করে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলি,

_কি চান আপনি আমার কাছে?জো”রাজোরি না করে ইজিলি বলুন।আমার সাধ্য থাকলে আমি তা আপনাকে দিবো,কিন্তু কোন রকম জো’র যবর”দ”স্তি করবেন না।কেমন?

এবার আমার হাত টা ছাড়ুন।কথা দিলাম আমি পালাবোনা।আমি আপনার সামনেই আছি,সামনেই থাকবো।

_হা হা হা,আমি যা চাই তুই আমাকে দিবি?
_হ্যাঁ দিবো।
_তাহলে শোন আমি তোর….

#পর্ব_৩

_হা হা হা,আমি যা চাই তুই আমাকে দিবি?
_হ্যাঁ দিবো।
_তাহলে শোন আমি তোর ভালবাসা চাই।তোকে চাই।
চল আমার সাথে।
_ভালবাসা চাইলে,আমাকে চাইলে জোড় করে কেন?ভালবাসা ভালবেসে পেতে হয়।ভালবাসা অর্জন করে নিতে হয়।জোর করে দে”হ পাওয়া যায়,ভালবাসা পাওয়া যায়না।
_তুমি কি আমাকে ভয় পাওনা?
_আমি কেন,এলাকার সবাই আপনাকে আর আপনার পরিবারকে ভয় পায়।
_হা হা হা জানি আমি।
আমি এখন তোমাকে রে* করলেও কেউ আমার চুল টাও বাঁকা করতে পারবেনা।
_বুঝলাম আমি সেটা।তবে এটা করে লাভ কি হবে আপনার বলুন তো?
আমার শরীর টা পাবেন আপনি।
কিন্তু আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে যাবে।
হয়তো আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারবোনা ভেবে নিজেকে শেষ করে দিবো
একটা জীবন গড়ে উঠার আগেই নিঃ’শেষ হয়ে যাবে।

অথচ শরীর পেতে হলে অনেক জায়গা আছে,যেখানে ৫০০ টাকার বিনিময়ে আপনি আপনার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন।
তারা নিজ ইচ্ছায় আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে।
দয়া করে আমার জীবন টা ন’ষ্ট করবেন না।

কথা গুলো শেষ হতে না হতেই লিমন ঠা’স করে আমার গায়ে চ’ড় বসিয়ে দেয়।

-তোকে বলেছি আমি?আমি তোর দে’হ চাই?
তোকে বলেছি আমি?আমি তোকে রে* করবো?
আমি তোকে শুধু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছি।

আমি তোকে ভালবাসি।ভালবাসা বুঝিস?
আমি তোকে ভালবাসি।আর ভালবাসার বস্তুটার ক্ষ’তি একটা প”শুও করবেনা।সেখানে আমি তো একটা মানুষ।
মানলাম আমি খারাপ মানুষ।তবে মানুষ তো নাকি?

লিমনের কথা শুনে আমি তো রীতিমত অবাক।কি বলে এই ছেলে?

যা তোকে আজ আমি ছেড়ে দিলাম।আর তোকে জ্বালাবোনা।কিন্তু বিয়ে তোর আমাকেই করতে হবে।আর এটাই শেষ কথা।
যা এবার।

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ওখান থেকে প্রস্থান করলাম।

বাসায় গিয়ে আম্মুকে সব জানালাম।
আম্মু বল্লো,
তুই চুপচাপ থাক,কোন কিছু বলবিনা।
শুধু তোর এক্সাম টা শেষ হোক।তারপর তোকে আমি দূরে এক কলেজে ভর্তি করে দেবো।

আমি রেগুলার কোচিং ক্লাস করছি।লিমন এখন আমাকে আর জ্বা’লায় না।
হঠাৎ একদিন আমায় আমার এক ক্লাস্মেট জানায়,

_জানিস বিন্দু, রিতার ভাই না ক্লিনিকে ভর্তি।অবস্থা খুবই খারাপ।
_কেন?কি হয়েছে রিতার ভাইয়ের?
_রিতার ভাই তোকে খুব পছন্দ করে জানিস?
_হ্যাঁ সেটা তো আমি জানি,গত কাল আমাকে প্রপোজও করেছে।
_হ্যাঁ।তোকে যখন প্রপোজ করেছে তখন লিমন ভাই নাকি দেখে ফেলেছে।
আর সুযোগ পেয়ে ওকে ইচ্ছে মত মে’রেছে।
আর বলেছে,বিন্দু শুধু আমার।ওর দিকে কেউ হাত বাড়ালে আমি ওর জীবনই নিয়ে নিবো।

_আল্লাহ্‌!এখন রিতার ভাইয়ের কি অবস্থা?কই এখন সে?
_এখন ক্লিনিকে।
_তাহলে ক্লাস শেষ করে আমরা ক্লিনিকে গিয়ে দেখে আসবোনে।
_আচ্ছা।

ক্লাস শেষ করে আমি আর আমার ক্লাসমেট ক্লিনিকে গিয়ে রনিকে দেখে আসি।
ওকে প্রচুর মা’র মেরেছে লিমন।
লোক জন ফিরিয়েছিলো বলে,
নইলে হয়তো রনির লা”শ দেখতে যেতে হতো।

বাসায় ফেরার পথে দূরে দেখি লিমন দাঁড়িয়ে।

_এই যে শুনুন তো।

লিমন দৌড়ে এসেছে।

_আপনি রনি ভাইয়াকে মে’রেছেন?
_হ্যাঁ মে’রেছি।
_কেন মে’রেছেন?
_ও তোমাকে প্রপোজ কেন করলো?
_আ’জব!প্রপোজ তো যে কেউই করতে পারে।
_চুপ একদম চুপ।
_আপনি আমাকে ধ’মকাচ্ছেন কেন?
_প্রপোজ যে কেউ করতে পারে,না?
তোকে আমি ছাড়া কেউ প্রপোজ করতে পারবেনা।
আমিই তোকে ভালবাসবো,আমিই তোকে প্রপোজ করবো।আর কেউনা।

_প্লীজ আপনি আমার জীবন থেকে সরে যান।আমি আপনাকে হাত জোর করে বলছি।
আপনার সোসাইটি আমার সোসাইটি অনেক আলাদা।
আপনার পরিবেশ আমার পরিবেশ অনেক ভিন্ন।

আমাদের মিল কোন দিন সম্ভব না।কারণ আমি আপনাকে কোন দিন ভালবাসতে পারবোনা।ভালো তো আমাকে তোর বাসতেই হবে।

জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি আমি।
এখন শুধু তোকে পাওয়াই বাকি,তুইও আমার হবি।
আর এটাই সত্য।

উলটা পালটা কোন কথা বলে এখন আমার মে’জাজ খারাপ করিস না।
যা বাসায় যা।

_আমি যেন আর কোন দিন শুনিনা,আমার জন্য কোন ছেলে আপনার হাতে মা’র খেয়েছে।

_তোর দিকে কেউ ন”জর দিলে মাইর না।আমি ওর জা’ন কেড়ে নেবো।
কথা টা মাথায় রাখিস।

আমি বাসায় চলে আসি।

দেখতে দেখতে আমার কোচিং ক্লাস শেষ হয়ে ফাইনাল এক্সামও শেষ হয়ে যায়।

আগে ও আমার বাসার সামনে আসতোনা।এখন ও ইদানীং আমার বাড়ীর মেইন গেইটের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।উদ্দেশ্য আমাকে এক নজর দেখা।
কারণ এক্সাম শেষ,
এখন আর আমি বাসার বাইরে বের হইনা।
আমাকে দেখেও না অনেক দিন।তাই দাঁড়িয়ে থাকে বাসার সামনে দল”ব’ল নিয়ে।আই মিন ওর বন্ধুদের নিয়ে।

এলাকার লোক জন এটা ফলো করেছে।
কিন্তু কেউ কিছু বলেনা।কারণ জা”নের ভয় সবারই আছে।

একদিন আমার ছোট বোন বাসা থেকে বেরিয়ে দোকানে গিয়েছিলো।
আসার সময় দেখে লিমন আর ওর বন্ধুরা বাড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে।

লিমন ওকে ডাকে,

_শোনো,তুমি বিন্দুর বোন না?
_জ্বী।
_বিন্দুকে বলবে,ও যেন ১০ মিনিটের মধ্যে আমার সাথে এখানে এসে দেখা করে।
আর যদি না আসে,তাহলে আমি নিজেই বাসায় ঢুকে ওর রুমে গিয়ে ওর সাথে দেখা করে আসবো।

_আপুতো বাসায় নেই।
_কোথায় গেছে?
_আপুতো নানু বাড়ী গেছে।
_কবে আসবে?
_রেজাল্টের দিন আসবে।
এত দিন বেড়াবে সব জায়গায়।
_আচ্ছা তুমি যাও।ও এলে যদি পারো আমাকে একটু জানিয়ো।
_জ্বী আচ্ছা।

বোন আমার হেব্বি বুদ্ধিমতী।ঘরে থাকা বোন কে নানু বাড়ী পাঠিয়ে দিয়েছে।

_আপু জানিস,ওই গু”ন্ডা টা না আমাকে ডেকে এই বলেছে।
আর আমিও এগুলো বলে দিয়ে এসেছি।
_খুব ভালো করেছিস সোনা।
অন্তত কত গুলো দিন ভালো থাকা যাবে।

কিছু দিন পর আমাদের রেজাল্টের দিন চলে আসে।
আমি আর রেজাল্ট আনতে যাইনি।
নেট থেকে এক ভাইয়া রেজাল্ট জেনে আমাকে জানায়।

আমি খুব ভালো রেজাল্ট করি।
আমার এক ক্লাস মেটের কাছ থেকে লিমন জানতে পারে আমার রেজাল্টের কথা।তারপর শুনি লিমন সারা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে।

অথচ আমার সাথেই এখনো ওর দেখা হয়নি।

কিছু দিন পর আমি কলেজে ভর্তি হবার জন্য স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র আনতে যাই।
যাবার সময় লিমনের সাথে আমার দেখা হয়না।

কিন্তু আসার সময় হঠাৎ ই লিমন কোত্থেকে রিক্সা করে এসে আমার হাত ধরে টান দিয়ে আমাকে রিক্সায় তুলে ফেলে।
আর রিক্সাওয়ালাকে বলে,চলো এবার।

আর আমি চি”ল্লাচিল্লি করে বলতে থাকি,
আ’জব তো,কি করছেন আপনি?
আমাকে এভাবে টেনে হি”চড়ে রিক্সায় তুল্লেন কেন?
প্লিজ হাত ছাড়ুন আমার।আমাকে যেতে দিন।
প্লীজ আপনার পায়ে পড়ি যেতে দিন আমায়।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে আপনি আমাকে?
প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন।

_আজ আর তোমাকে ছাড়ার জন্য আমি ধরিনি সুইটহার্ট।
আজ তো আমি তোমাকে আমার করে তবেই ছাড়বো।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে