ভয় পর্ব-০৬

0
907

ভয়
লেখিকা_বিন্দু_মালিনী
#পর্ব_৬

আর তখনই অভ্র ভাইয়া এসে এক হাত দিয়ে তার বন্ধুর শার্টের ক’র্লার ধরে,
আর আরেক হাত দিয়ে গালে থা”প্পড় বসিয়ে দেয়।

_তুই এখানে কেন?ওর রুমে কি করিস তুই?
কেন এসেছিস আন্টিকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে?
আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি?আমাকে না বলে আসলি কেন?
আর কাকে বিয়ে করবি তুই হ্যাঁ?কাকে?বিন্দুকে?বিন্দু কে জানিস?
জানিস তুই বিন্দু কে?
বিন্দু আমার ভালবাসা।ভালবাসি ওকে আমি।বিয়ে করবো আমি ওকে।

যা এক্ষুণি বেরিয়ে যা।আর আন্টিকে গিয়ে বলবি,তুই বিন্দুকে বিয়ে করতে চাস না।
ও হ্যাঁ,চা নাস্তা খেয়ে যাবি।

_কাজ টা তুই ঠিক করলিনা দোস্ত।
একটা মেয়ের জন্য এই ভাবে
আমার গা’য়ে হাত তুল্লি।
_হ্যাঁ তুল্লাম,যা এবার প্লিজ।

অভ্র ভাইয়ার বন্ধু তার মায়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো।

_ভাইয়া,কি হয়েছে তোমার?এসব কি বলছো তুমি?
_হ্যাঁ বিন্দু,আমি তোকে ভালবাসি।
আর আমি মাকে এক্ষুণি বলে দিচ্ছি,আমাদের বিয়ের আয়োজন করতে।
তুই অন্য কারো হবি এটা আমি মানতে পারবোনা।

_ভাইয়া,কি বলছো তুমি এগুলো?আমি তোমার বোন হই।তুমি আমার ভাই।
_হ্যাঁ ভাই বোন আমরা।তবে মায়ের পেটের না।আমরা দুজন খালার পেটের ভাই বোন।
তার মানে খালাতো ভাই বোন।
আর খালাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়ে জায়েজ।

_আমি মাকে এক্ষুণি গিয়ে বলছি।

_না ভাইয়া প্লিজ।আমি তোমাকে ভালবাসিনা।আমি তো তোমাকে ভাইয়ের চোখে দেখি।
আমার পক্ষে তোমাকে বর ভাবা কোন দিনই সম্ভব না।
আমি তোমাকে বর হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা।

_দেখ বিন্দু,
আগের যুগে কিন্তু মানুষ প্রেম ভালবাসা করে বিয়ে করতোনা।বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করে নিতো।ধীরেধীরে তাদের মধ্যে প্রেম ভালবাসা হতো।
তুই আমাকে এখন বর মানতে পারবিনা।ছয় মাস পরে তো মানতে পারবি?
আমার তাতে কোন সমস্যা নেই।

তখন না হয় আমাকে ভালবাসিস।
আমি কথা দিচ্ছি,আমি কোন দিন জোর করে তোর কাছে ভালবাসার দাবি নিয়ে আসবোনা।

_ভাইয়া প্লিজ!আমি পারবোনা তোমাকে স্বামীর আসনে বসাতে।আমাকে তুমি মা”ফ করে দাও।
আর খালামণিকে কিছু বলোনা।
তাহলে তিনি কষ্ট পাবেন।

_সত্যিই তুই আমাকে বিয়ে করবিনা?
_ভাইয়া আমি এখনো ছোট।প্রেম ভালবাসা কি বা কেমন তা আমি জানিনা।
কিন্তু তোমাকে আমি আমার ভাই হিসেবে জেনে এসেছি।
সেখানে তোমাকে স্বামী রুমে মেনে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।আমাকে তুমি ক্ষ”মা করো প্লিজ।

_ওকে।যদি কোন দিন মনে হয়,তুই আমাকে তোর স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবি।তখন আমাকে জানাস।
আমি সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।

অভ্র ভাইয়া আমার রুম থেকে চলে যায়।

আমি বসে বসে কাঁদতে থাকি।

কি থেকে কি হয়ে গেলো,
লিমনের থেকে বাঁচতে এখানে আসলাম।আর এখানে এসে মনের অজান্তে অভ্র ভাইয়াকে দুঃ”খ দিয়ে ফেললাম।
কি করবো আমি এখন?
আমি যে ভাইয়াকে নিজের ভাই বলে জেনেছি।তাকে তো আমি কোন দিনই স্বামী হিসেবে মানতে পারবোনা।

রাতে খাবার টেবিলে বসে ভাইয়া খালামণিকে জানায়,
_মা আমি বিদেশ বিদেশ যাবো।
যে করেই হোক বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করো।
_কিরে?হঠাৎ তোর কি হলো?
তুই না বলতি,কোন দিন তুই দেশের মাটি ছেড়ে যাবিনা?
_আমার আর এখন এ দেশে থাকতে ইচ্ছে করছেনা।
প্লিজ তুমি আব্বু,চাচ্চুকে ফোন করে বলো ভিসা দিতে।
_আমি কি করে থাকবো একা বাসায়?
_কেন?বিন্দু আছে না?ও থাকবে।
_ও কি সারাজীবন থাকবে নাকি এ বাসায়?
_রাখতে চাইলেই কি থাকবে নাকি ও সারাজীবন।
_কি বললি?
_না কিছুনা।বললাম কি,আমিও কি সারাজীবন দেশের বাইরে থাকবো নাকি?
আসবো তো নাকি?
আর আব্বু চাচ্চুর ওখানে গেলে তো যে কোন সময় আসতে পারবো যেতে পারবো।

আমার একটু বিদেশের হাওয়া গায়ে মাখা দরকার।

_উঠছিস কেন?খাওয়া শেষ কর।
_হয়ে গেছে খাওয়া।

_কি হয়েছে রে অভ্রর?
জানিস কিছু?
_আমি কি করে জানবো খালামণি?
আমি কিছু জানিনা।

_কিরে তুই আবার উঠছিস কেন?
_আমারো খাওয়া শেষ খালামণি।

অভ্র ভাইয়া বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

_কেন করছো এমন ভাইয়া?
_কি করছি?
_এই যে বিদেশ যেতে চাইছো।
_এই দেশের আবহাওয়া টা স’হ্য হচ্ছেনা।তাই একটু ঘুরে আসি।
_এ দেশের আবহাওয়া সহ্য হচ্ছে না,নাকি আমাকে স’হ্য হচ্ছেনা?
তাহলে বলো,চলে যাই আমি।

_পা”গল হয়েছিস?ভালবাসার মানুষ কি কখনো বিরক্তিকর হয়?
_ভাইয়া সরি।
_সরি বলতে হবেনা।আমিই দুঃ”খিত।ক্ষ”মা করিস আমাকে।মন দিয়ে পড়াশোনা কর।নিজের পায়ে দাঁড়া।
_আর তুমি?
_আমি?
আমি ঘুরে আসি বিদেশ।

কিছু দিনের মধ্যই ভাইয়া বিদেশ চলে যায়।
যাওয়ার সময় হাত ধরে বলে যায়,
আমার মাকে দেখিস।তোর হাতে আমার মাকে তুলে দিয়ে গেলাম।

খালামণি একা হয়ে যান।
এই প্রথম তার ছেলেকে ছাড়া তিনি থাকছেন।
কখনো অভ্র ভাইয়া খালামণিকে ছেড়ে কোথাও থাকেনি।
অথচ আজ আমার জন্য সে এত দূরে চলে গেলেন।
নিজেকে বড্ড অপ”রা”ধী মনে হচ্ছে।
কিন্তু আমিই বা কি করতাম।
আমার যে তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব হবেনা।

আমি খালামণির বাসায় থেকেই পড়াশোনা করতে লাগলাম।
এদিকে লিমন আমাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।
আম্মু আব্বুকে সব খুলে বল্লো।
আব্বু তার ভাই বোনদের সাথে ফোনে আলোচনা করলো,কি করা যায়।

পরে আব্বু তাদের জানালো,আব্বু দাদার বাড়ী থেকে দূরে যেই একটা জায়গা কিনেছে সেখানে গিয়ে ঘর তুলতে চান।
যাতে লিমন তার কোন মেয়েরই ক্ষ”তি না করতে পারে কোন দিন।

সবাই সম্মতি দিলো।
কারণ আমার আর কাকাদের কোন মেয়ে নেই।আমার আব্বুরই মেয়ে।
সবাই আমাদের ভালো চায়।

তাই আব্বু আম্মুর সাথে আর সবার সাথে পরামর্শ করে নতুন জায়গায় ঘরের কাজ শুরু করলো।

ঘর কমপ্লিট।
আব্বু দেশে আসলেন ছুটিতে।
আর আমাদের নিয়ে নতুন বাড়ীতে উঠলেন।যেহেতু দাদার বাসা থেকে অনেক দূরে আমাদের নতুন বাসা।সেহেতু লিমন আর আমাদের বাসার খোঁজ পেলোনা।

আমি খালামণিকে নিয়ে বাসায় উঠি।
তারপর নতুন বাসায় দু দিন থেকে খালামণিকে নিয়ে আবার খালামণির বাসায় চলে যাই।

যেহেতু আমার কলেজ খালামণির বাসার ওখানে।
অবশ্য চাইলেই আমি আমাদের এখান থেকে গিয়েও ক্লাস কর‍তে পারতাম।
কিন্তু খালামণি যে একা হয়ে যাবেন।
তাই আমি খালামণির বাসায় চলে যাই।

মন দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকি।অভ্র ভাইয়াও বিদেশ গিয়ে ভালো আছেন।এর মধ্যে অভ্র ভাইয়ার ফুফা মা”রা যান।
ফুফুর কোন ছেলে মেয়ে নেই।আর ফুফুর যেহেতু স্বামী নেই সন্তান নেই সেহেতু শশুড় বাড়ীই বা থেকে কি করবে।তাই তিনি অভ্রদের বাসায় চলে আসেন।খালামণিও অভ্রর ফুফুকে বুকে টেনে নেন।

এরপর একদিন আম্মু খালামণিকে বলেন

_আপা,এখন তো তোমার ননদ আছে তোমার সাথে।
বিন্দু তাহলে এখন আমার কাছে চলে আসুক।কি বলো?
_কেন?বিন্দু কিছু বলেছে?
_না কিছু বলেনি।তবে আমার ভালো লাগেনা ওকে ছাড়া।
_আমারো যে মেয়েটার জন্য মায়া জন্মে গেছে অনেক।

আচ্ছা দেখি বিন্দু কি বলে।

খালামণি আমার কাছে এসে বসেন।

_তোর মা ফোন করেছিলো।
_তাই?আজ কথা হয়নি আমার সাথে।
_ও বলছিলো,তোকে বাসায় চলে যেতে।
_ও আচ্ছা।
_তুই কি বলিস?
_আমারো যেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু আপনি একা হয়ে যাবেন না খালামণি?
তাই কিছু বলিনা।
_সম’স্যা নেই।মায়ের সন্তান মায়ের বুকেও চলে যা।এখন তো আ”পদটাও দূর হয়েছে।
আমার জন্য চিন্তা করিস না।তোর ফুফু আছেতো।

_হ্যাঁ বিন্দু।আমি আছিতো।আমি ভাবীকে দেখে রাখবো।আর তাছাড়া আমার তো আর ভাই ভাবী ছাড়া কেউ নেই।এখানেই তো থাকতে হবে আমার সারাজীবন।

_আচ্ছা,তাহলে আমি আগামীকাল আম্মুর কাছে চলে যাবো।

_আমাদের আবার ভুলে যাস না।
_না খালামণি।কোন দিন ভুলবোনা।

আমি অভ্র ভাইয়াকে বলে আমাদের বাসায় চলে আসি।
যেহেতু তার ফুফু বাসায় আছেন,তাই তিনিও আমাকে আম্মুর কাছে চলে আসার অনুমতি দেন।
ফুফু না থাকলে ভাইয়া কখনোই খালামণিকে ছেড়ে আসতে দিতেন না।আর আমিও আসতাম না।

বাসায় এসে এখান থেকেই গিয়ে মাঝে মাঝে ক্লাস করি।

এদিকে অনেক গুলো দিন কেটে যায়।
আমি ইন্টার কমপ্লিট করি।
খুব ভালো রেজাল্ট হয় আমার।

আমি ডিগ্রীতে ভর্তি হই।
নতুন বাসায় আসার সাথে সাথে লিমন নামক দু”ষ্ট”ছায়া আমার জীবন থেকে সরে যায়।
কথায় বলে না,চোখের আড়াল মানে মনের আড়াল।হয়তো সেটাই হয়েছে।

হঠাৎ ফ্রেন্ডদের পাল্লায় পড়ে আমি একটা ফেসবুক আইডি খুলি।

দূর দুরান্তের মানুষের সাথে ফেসবুকে এড হই।বেশির ভাগই অন্য জেলার মানুষকে এড করি।কারণ অন্য জেলা সম্পর্কে,অন্য জেলার মানুষ সম্পর্কে,জায়গা সম্পর্কে, জানার আগ্রহ আমার বহু দিনের।
ফ্রেন্ড লিস্টে নেই সবাইকে রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট এর মাধ্যমে।কিন্তু কথা বলি না তেমন কারো সাথেই।
লাইক কমেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা।

এর মধ্যে একটা ছেলের সাথে আমার কমেন্টে প্রায়ই কথা হয়।আমি কোন পোস্ট দিলে সে কমেন্ট করে।আমি কমেন্টের রিপ্লাই দেই।এই টুকুই কথা।
ছেলেটার প্রোফাইলে Er”ror লিখা একটা ব্ল্যা’ক প্রোপিক দেয়া।খুব ভালো লিখে ছেলেটা।তার পোস্ট গুলা হৃদয় ছুঁয়ে যায়।কিন্তু সমস্যা হলো এই,সব লিখাই তার দুঃ”খ ময়।

অনেক দিন যাবত আমরা একে অপরের লিস্টে থাকলেও ইনবক্সে কখনোই কথা হয়না আমাদের।

কিন্তু হঠাৎ একদিন ছেলেটা আমাকে সালাম দিয়ে নক দেয়।
আর আমি তার মেসেজ দেখেতো রীতিমত অবাক।

তারপর..

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে