#ভোরের শিশির
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১
“জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে যদি খালি পায়ে হেঁটে যেতে পারো তবে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিব।”
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে পা রাখার সাথে সাথে নিজের স্বামী হামিমের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠে আদিয়া।উপস্থিত সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হামিমের দিকে।
“হামিম এসব কী বলছিস তুই?”
“আপু এটা আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার,তুই এতে নাক না গলালেই ভালো হয়।”
হামিমের বোন নিলা কিছু বলতে গেলে হামিম হাত উঠিয়ে বাঁধা দেয় আর আদিয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠে।
“তোমাকে কী এখন কথাটা আবার রিপিট করতে হবে,নাকি কাজটা করবে?”
আদিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে,আপাতত আদিয়ার কিছু বলার নেই।এখন হামিম তাকে যা করতে বলবে তাকে সেটাই করতে হবে।আদিয়ার হাত পা বাঁধা কিছু করার নেই তার,তাই সে আর বেশি কিছু না ভেবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।হামিমের ঠোঁটের কোনে তৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠে।
“হামিম তুই এসব পাগলামি বাদ দিবি নাকি আমি চলে যাব এখান থেকে!”
হামিম তার বোনের কথার কোন উওর না দিয়ে তার গার্ডকে বলে উঠে,,,
“আপুকে তার শ্বশুর বাড়িতে সাবধানে পৌঁছে দিয়ে আসো।”
“আমি গেলে আমার সাথে আদিয়াও যাবে।”
“আমার বউ আমার সাথেই থাকবে,আর আমার যা খুশি তাই করব।কারন আমার সে অধিকার আছে আদিয়ার উপর,ত তুই বেশি কথা না বলে আয় এবার।”
“বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তকে নিজের সন্তানের মত কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি,আর তুই!তকে ত আমি এমন শিক্ষা দেই নি যে একটা মেয়ের উপর এতটা নিষ্ঠুর হবি।”
হামিম এবার খুব রেগে যায় আর তার গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বলল।
“তোমাকে বলেছি না আপুকে পৌঁছে দিয়ে আসতে,তবে এখনও এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
গার্ড হামিমের চিৎকারে খুব ভয় পেয়ে যায় আর নীলার কাছে গিয়ে একপ্রকার জোর করেই নীলাকে নিয়ে চলে যায়।ততক্ষণে জ্বলন্ত কয়লা দিয়ে ফ্লোর সাজানো হয়ে গেছে।আদিয়া এক কোনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাচ্ছে,বেচারি খুব ভয় পেয়ে আছে।নিজের হাত কাটলেও যে মেয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলত আজ সেই মেয়ে নাকি জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে হবে।কথাটা ভেবেই আদিয়ার বুকটা ভার হয়ে আসে,চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
“কই তাড়াতাড়ি এসো,এমন ডং করলে কয়লা ত ছাইয়ে পরিনত হবে।”
হামিমের কথায় আদিয়া কেঁপে উঠে,তারপরও কাঁপা কাঁপা পায়ে জ্বলন্ত কয়লার দিকে এগিয়ে যায়।একটা সময় আদিয়া কয়লাগুলোর সামনে এসে দাঁড়ায়।একপলক হামিমের দিকে তাকায় এটা ভেবে যে হামিম তাকে আটকাবে।কিন্তু তার ভাবনা ভুল প্রমান করে হামিম চোখের ইশারায় আদিয়াকে বলে এগিয়ে যেতে।আদিয়ার চোখ দিয়ে দু-ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।আদিয়া চোখের পানিটা মুছে নেয়,আর কিছু না ভেবে নিজেই মনে মনে বলে উঠে।
“আদিয়া এটা তুই করতে পারবি,এটা করলে হয়ত তুই সাময়িক কষ্ট পাবি।আর না করলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
কথাগুলো নিজ মনে আওড়ে আদিয়া দুই হাত দিয়ে শাড়িটা ধরে উঁচু করে।এক পা তুলে কয়লার উপর পা ফেলার জন্য কিন্তু আদিয়ার সাহস হচ্ছে না তাই আবারও পা নামিয়ে ফেলে।আদিয়া আবারও হামিমের দিকে তাকায়,তখন হামিম বাঁকা হেসে আদিয়াকে কিছু একটা দেখায়।যেটা দেখে আদিয়ার গলা শুকিয়ে যায় আর কিছু না ভেবে কয়লাগুলোর উপর এক পা ফেলে আর সাথে সাথে জ্ঞান হারায়।অতিরিক্ত ভয় আর মানসিক চাপ থেকে এমনটা হয়েছে।আদিয়া ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ার আগেই হামিম এসে আদিয়াকে ধরে ফেলে আর কোলে তুলে নেয়।
_____________________________________
ড্রয়িংরুমে বসে একের পর এক শাড়ি দেখেই চলেছে হামিম।কিন্তু কোনটাই তার মনমত হচ্ছে না,অনেকগুলো দোকানদার তাঁদের দোকানের বেস্ট শাড়ি নিয়ে এসেছে কিন্তু হামিমের সেসব কিছুই পছন্দ হচ্ছে না।এভাবে অনেকক্ষণ দেখার পরও যখন হামিম শাড়ি পছন্দ করতে পারল না তখন হামিম হার মেনে নিলো।এসব তার দ্বারা সম্ভব নয়,আর সম্ভব হবেই বা কী করে!মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে তার কোন আইডিয়া থাকলে ত।কখনও কোন মেয়ের জন্য শাড়ি কিনেছে নাকি সে!
হামিম এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আর কিচেন থেকে মলিকে(কাজের মেয়ে) নিয়ে আসে।
“দেখ ত এখানে কোন শাড়িটা ভালো,কোনটা আদিয়ার জন্য বেস্ট হবে।”
মলি হামিমের কথাশুনে যেন রাতের আকাশে সূর্য দেখতে পেলো এতটাই অবাক হয়েছে মলি।বিয়ের প্রথম দিন যিনি তার বউকে জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটায় সে নাকি তার বউয়ের জন্য শাড়ি কিনছে।মলি অবাক চোখে ড্যাবড্যাব করে হামিমের দিকে তাকিয়ে আছে।হামিম এবার খুব বিরক্ত হয়।
“আমার দিকে তাকাতে বলি নি শাড়ির দেখতে বলেছি তকে।”
হামিমের কথাশুনে মলি নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বলে উঠে।
“ছোট সাহেব আমি ত শাড়ি পড়ি না থ্রি পিছ পড়ি, কোনদিন শাড়ি কিনিও নাই।আমার সব কাপড়চোপড় ত নিলা মেডামই আইন্না দেয়।আমি কেমনে বউমনির লাইগ্গা শাড়ি পছন্দ করমু!”
হামিম মলিকে রেগে কিছু বলতে যায় কিন্তু কিছু একটা ভেবে চুপ করে তার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।হামিম তার রুমে এসে দেখে আদিয়া খাটে বসে তার পা দেখছে।হামিম পকেটে হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকায় আদিয়ার দিকে।আর আদিয়া ঘরে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে দরজার দিকে তাকায়।আর দেখে হামিম থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর কালো গেন্জি পড়ে পকেটে হাত দিয়ে তার দিকেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আদিয়া সেটা দেখে খাট থেকে নেমে হামিমের সামনো দাঁড়ায়।
“আমার পায়ে কোন পোড়া দাগ নেই কেন?”
আদিয়ার কথাশুনে হামিম হেয়ালি করে বলে,,,
“সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে নিজের পা কে জিজ্ঞেস করো।”
“দেখুন আমি মজা করার মত মুডে একদমই নেই।”
“আমার ত খেয়েদেয়ে কাজ নেই তোমার সাথে মজা করব,এখন চলো আমার সাথে।”
“আমি কোথাও যাব না আপনার সাথে,আগে বলুন পায়ে কোন পোড়া দাগ নেই কেন?আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি জ্বলন্ত কয়লার উপরে এক পা ফেলে ছিলাম তারপর কী হয়েছে জানা নেই।ত সেই হিসাবে ত আমার এক পায়ে পোড়া দাগ থাকবে তাই না!”
“আমার সাথে কেউ এভাবে কথা বলুক সেটা আমি একদমই পছন্দ করি না।প্রথম বার তাই কিছু বললাম না কিন্তু নেক্সট টাইম এমন হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।এখন চুপচাপ আমার সাথে চলো।”
হামিম কথাগুলো বেশ গম্ভীর হয়েই বলে,তাতে আদিয়া অনেকটা ভয় পায়।তাই আর কোন কথা না বলে হামিমের পিছন পিছন যায়।
“এখান থেকে যে শাড়ি গুলো পছন্দ হবে রেখে দাও।”
“কিন্তু আমি ত শাড়ি পড়ি না।”
“তোমার থেকে জানতে চাই নি আমি কী পড়ো আর কী পড়ো না!আমি তোমাকে যেটা করতে বলব সেটাই করবে তুমি।তাই আজ থেকে তুমি শাড়িই পড়বে,শাড়ি ব্যাতীত কোন কিছু যাতে পড়তে না দেখি।ত চুপচাপ শাড়ি সিলেক্ট করো বেশি কথা বলবে না।”
কথাগুলো বলে হামিম তার ফোনটা নিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।আর আদিয়া মন খারাপ করে শাড়ি দেখছে।আদিয়া না ত শাড়ি পড়তে পারে আর না পারে সামলাতে।বিয়েতে শাড়িটা পড়তে যে কত কষ্ট করতে হয়েছে সেটা আদিয়া ছাড়া আর কেউ জানে না।কিন্তু হামিম যখন বলেছে তখন তার যত কষ্টই হোক সেটা আদিয়াকে করতেই হবে,নয়ত হীতে বিপরীত হবে।তাই আদিয়া চুপচাপ শাড়ি দেখছে।
_______________________________________
রাত ১২ টা বেজে ২০ মিনিট হামিম তার ঘরে আসে,আর এসে দেখে আদিয়া ঘরে নেই।হামিমের খুব রাগ হয়,হামিম রেগে ঘরে থেকে বের হয়ে যায় আর সারা বাড়ি আদিয়াকে খুঁজে।প্রায় পনেরো মিনিটের মত খোঁজার পরও যখন আদিয়াকে পায় না তখন হামিম তার ঘরে আসে।আর ফোনটা হাতে নেয় কাউকে কল দেয়ার জন্য কিন্তু তখন সে কিছু একটার আওয়াজ শুনতে পায়।হামিম আওয়াজটা কোন দিক থেকে আসছে সেটা বুঝার চেষ্টা করছে আর সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আওয়াজটা তারই ঘরে হয়েছে তাই হামিম চারপাশটা ভালো করে দেখে ওয়াশরুমে যায়।আর গিয়ে যা দেখে তা দেখার পর হামিম খুব জোড়ো একটা চিৎকার দেয়।
#চলবে,,,