#ভেজা_চুলে
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৪
নবজাতক যখন কাঁদে অনেকে বলে কাঁদতে দাও তাকে, গলার স্বর ভালো হবে। বেশি কাঁদলে মা আগলে নেয়,দুধ খাওয়ায়।বুকে আগলে ধরে বলে,
“পায়ে ধরছি,পায়ে ধরছি, কে বকেছে? কার এত সাহস? এত রাগ কেনো বাবার?”
মা অস্থির হয়ে উঠে অথচ যখন মাধুর্য নামের মেয়েটা মা মারা যাওয়ার দিন মাত্র ১৫ দিনের ছিল তখন তাকে রোদে পুড়তে রেখে চলছিল তার মায়ের লাশ নিয়ে তুমুল ঝগড়া।
ছোট্ট মাধুর্য কান্না করে লাল হয়ে গেছে। তখন মনে হচ্ছিলো দম পাচ্ছে না।বারান্দায় যে দিকটায় রোদ পড়েছে সেখানে একটা লুঙ্গির টুকরো কাপড়ে হাত-পা নেড়ে কাঁদছে।
তখন দু পক্ষে তুমুল ঝগড়া। উঠোনে রাখা লাশ তারা দিবে না, তাদের বাড়ির বউ বলে কথা।
এদিকে এত কষ্টের মৃত্যুর পর ও গ্রামে কবর দিতে দিবে না মাধুর্যের মামারা।
ছোট্ট মেয়েটার দিকে কেউ খেয়াল করছেই না।হঠাৎ ওর ছোট মামা মঈনুল হোসেন তাকিয়ে দেখে তাকে।
লোক চক্ষুর সবার আড়ালে চুরি করে আনে ওই এক রত্তির মেয়েকে। নিয়ের টি-শার্টে লুকিয়ে, প্যাঁচিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে আসে তাদের গ্রামের দিকে।
এদিকে কাঁদতে থাকা মাধুর্য প্রায় নিস্তেজ।
সেদিন মাধুর্য কে নতুন প্রাণ দিয়েছিল আরেক মা।
সে মায়ের নাম প্রকৃতি। ঝুপঝুপিয়ে বৃষ্টি এলো। আংগুলের ডগায় করে মামা যে সেই পানি দিয়ে তার গলা ভিজিয়েছিল।সে পেলো নতুন জীবন।
এরপর থেকে আর কোনো মঈনুল সাহেব ও গ্রামে যায়নি। না মাধুর্য। মাধুর্যের মায়ের কবর অবধি একটা বার জিয়ারত করেননি মঈনুল সাহেব।
পত্রী বসে আছে তার কোলে একটা পাখি। মাধুর্য জন্য জন্মদিনের উপহার হিসেবে এনেছিল তার ভাই রৌদ্র।
সেদিক দিয়ে শিষ বাজাতে বাজাতে যাচ্ছে শয়ন। ওদিকটায় ছায়ায় বসবে সে। ওখানে নেটওয়ার্ক বেশ ভালো। থিসিস এর জন্য কিছু ইনফরমেশন প্রয়োজন। পত্রী মাথা তুলে দেখলো শয়ন এক হাতে ল্যাপটপ অন্য হাতে পানির বোতল নিয়ে যাচ্ছে। তার দিকে না তাকিয়েই পত্রী ময়নার গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“জানিস ময়না?শিষ বাজানো কতটা খারাপ?আমি বুঝিনা, একজন শিক্ষক হয়ে কীভাবে রাস্তার বখাটে দের মতোন শিষ বাজাচ্ছে ? তারা কী জানে না, গুণীজনেরা বলেন শিষ বাজালে মুখের বরকত থাকে না।”
পত্রীর কথায় কপাল কুঁচকে শয়ন তাকিয়ে দেখলো,
সতেরো কী আঠারো বছর বয়সের মেয়ে বসে আছে তার হাতে পাখি।
পাখির হাতে পাখি। আচ্ছা মেয়েটা কী জানে?সে তো জ্ঞান দিতে এসেছে। তার জ্ঞান পরীক্ষা করা যাক।
“পত্রী না তোমার নাম?”
“হুম।”
“তোমার নামের অর্থ কী জানো?”
“না।”
“বেশ তো। আমি……..”
“থামেন।আমরা আপনাদের ছাত্রী না।আপনারা সবগুলো টিচার বলে আমাদের সারাদিন জ্ঞান দিবেন?তা হচ্ছে না।বিয়ে বাড়ি আর তাছাড়া লকডাউনে কলেজ বন্ধ তাই নো পড়ালেখা।”
বলেই গটগটিয়ে চলে গেল পত্রী।শয়ন গালে হাত দিয়ে ভাবছে,
“সে কী ধীরেধীরে ওয়াহেদ ভাইয়ের মতোন হয়ে যাচ্ছে?”
“প্রতিদিন ১৫ মিনিট প্রাণ খুলে হাসলে ২০-৪০ ক্যালোরি ক্ষয় হয়।”
কারো কন্ঠস্বর শুনে উঠোনে বসে থাকা অর্ণি,খুশবু এবং পত্রী চিৎকার করে উঠে।দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো সেই ব্যক্তিটির উপর।
“দাদা ভাই! কখন এলে? তুমি এত কালো হয়েছো কেনো?”
অর্ণির প্রশ্নে সাকিব অর্থাৎ ওদের দাদা ভাই বলল,
“বুড়ি! দূরে থাক। এই লকডাউনে বিয়ে করেছিস। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবি ছয় ফুট।”
সাকিবের কথায় অর্ণি গাল ফুলিয়ে বলল,
“টিটকারি মারলে?দিলে কেনো বিয়ে?”
তাদের কথার মাঝে কোথা থেকে যেন তারেকা বানু এসে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তারেকা বানু হচ্ছেন সাকিব এবং অর্ণির দাদীজান।সাকিব সেনাবাহিনীতে আছেন। বৈশ্বিক মহামারির কারণে প্রায় ছয় মাসের পর বাড়ি এলেন।
যদিও আসতে চাননি তবে বোনের বিয়ের জন্য আসতে হলো।এজন্য তাকে টেস্ট করিয়েই আসতে হয়েছে। সুরক্ষার জন্য দুই বার টেস্ট এবং চেস্ট এক্স-রে করিয়ে এসেছে। তার নাতী এতদিন পর আসছে, শুকিয়েছে। এসব বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
“দাদী জান আমি ঠিক আছি। আপনি কাঁদবেন না।”
“তুমি বাবা কহন আইছো?সকালে আইয়া এহন আমার লগে দেহা করলা?”
“দাদী জান আমি সকালে না কিছুক্ষণ আগে আসছি। গোসল করে কাপড় বদলে এদিকে এসেছি। কারণ আমার জন্য তো আপনাদের ক্ষতি করতে পারি না।”
দাদীকে বুঝ দিয়ে সাকিব খুঁজতে লাগলো তার সূর্যতামসী কে। কোথায় সে?
কিছুক্ষণ পরেই তার দেখা পেলো সাকিব। মরিচ গাছ থেকে মরিচ তুলসে সে।
মৃদু পায়ে এগিয়ে গেলো তার দিকে। তারপর মরিচ তুলতে তুলতে বলল,
“হাত জ্বললে ফু দিবে কে?”
“কেনো?সূর্য আলো দিবে। তামসী কে পথ দেখাবে।”
“ক্ষুধা লেগেছে রে। খেতে দিবি আয়।”
বলেই সাকিব হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো মাধুর্য কে। মাধুর্য কে সাকিব সূর্যতামসী বলে ডাকে। যার অর্থ অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতের সূর্য। মাধুর্যের প্রতি সাকিবের এই অমোঘ টান তারেকা বানু মোটেও সহ্য করতে পারে না।ও যে একটা অলুক্ষুণে মেয়ে। মা মরলো,জীবনেও বাপেরে দেখে নাই। ওমন মাইয়্যা সে নিবো না।
কারণ সাকিব তার একমাত্র নাতী। বংশের প্রদীপ। অথচ পোড়া কপাল।এই মাইয়্যা জোকের মতোন লাগছে তার নাতীর পিছনে।
দুপুর বেলা আহরার, ওয়াহেদ, শয়ন,ইনহানদের সাথে খাবার টেবিলে পরিচয় হলো সাকিবের সাথে। খাবার পরিবেশ করছিল অর্ণি এবং মাধুর্য। খুশবু এবং পত্রী খাবার আনা নেওয়া করছে।
খাবার পরিবেশনের পর সবাই মুখে খাবার তুললেও সাকিব তুললো না।
মাধুর্যকে পাশে না দেখে অর্ণি পত্রীকে দিয়ে তাকে ডাক পাঠালো।
মাধুর্য ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে এসে সাকিবের পাশে দাড়াতেই সাকিব মুচকি হেসে এক লোকমা ভাত মাধুর্যের দিকে এগিয়ে দিলে মাধুর্য চুপচাপ খেয়ে নিলো।
বাকীরা যেন কিছুটা অবাক হয়েছে এমন ব্যবহারে। অর্ণি হেসে বলল,
“মাধুর্যের মুখে প্রথম ভাত দাদাভাই তুলে দিয়েছিল।তাই দাদাভাই বাড়ি এলে তার প্লেটের প্রথম খাবার মাধুর মুখে দিয়েই খাওয়া শুরু করে৷”
চলবে।
#ভেজা_চুলে
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৫
“বিচ্ছেদে এক আলাদা অনুভূতি আছে সূর্যতামসী। যা তুই বুঝিস না আমি বুঝি। তবে আমার বিচ্ছেদটাই যে প্রিয়।তোর এই বিচ্ছেদে আমি যেন বেঁচে থাকার শক্তি পাই।”
সাকিবের কথা শুনতে শুনতে মাধুর্য তার ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলল,
“তুমি কী জানো?আমরা দুজন চাইলে সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনো শক্তি নেই যে আমাদের আলাদা করতে পারবে।”
“জানি।জানি বলেই পিছিয়ে যাই। কারণ তোর হাসিটা আমার সকল অনুভূতি বির্সজনে হলেও যে চাই।”
সাকিবের কথায় জবাব দেয় না মাধুর্য। ভেজা কাপর মেলতে থাকে বাঁশের আড়ে।
তারপর তার কাছে গিয়ে বলল,
“জেরিন আপুকে বিয়ে করে ফেললেই হয়। তোমাদের সম্পর্কের বয়স তো আর কম হলো না।”
চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো সাকিবের। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“সম্পর্কটা নিছক সম্পর্ক। তা দিয়ে সংসার হবে না।”
“আমাকে নিয়ে আর অশান্তি করো না।সারা জীবন তোমার সান্নিধ্যে থাকতে চাই৷ একজন মেন্টর হয়ে আমাকে পথ দেখাও তবে আমার জন্য তোমার পরিবার এবং দাদীজানের মনে কষ্ট দিও না।”
“হুম।”
“তুমি হয়তো জানো না, দাদীজান এটা নিয়ে খালামণিকে অনেক কথা শোনায়।তার ধারণা সত্যি করে দিলে তোমার বাবা আমার খালামণি কে তালাক দিয়ে দিবে। এটা আমরা ছোট বেলা থেকেই জানি।”
“তাই তুই সব অনুভূতি কবর দিয়েছিস?”
“দাদা ভাই! আমি আমার মা কে বড্ড ভালোবাসি।অষ্টাদশী নারী যে আমাকে জন্ম দিতেই প্রাণ হারালো।জানো আমি জন্মের পর প্রায় সতেরো ঘন্টা মায়ের সাথে যুক্ত ছিলাম।কারণ আমার নাভীর সাথে যুক্ত বন্ধন কাটার মতোন কেউ ছিলো না।”
“হুম জানি।”
“এজন্য আমার মা মরেই গেলো।সেই মা কে তোমার দাদী কবরেও শান্তি দিচ্ছে না। সারাদিন শাপ-শাপান্ত করে। বুঝতে শেখার পর থেকে দেখছি।
তার ঘরের ছেলের বউ হয়ে যাবো?এতটা নিচ আমি নই।”
“এজন্যই অনুভূতি প্রকাশ করিনি। কিন্তু সেরাতে…..”
“তুমি নেশায় ছিলে। বাদ দাও।”
হাতে থাকা আধ পাকা আম মাধুর্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে সাকিব বলল,
“জেরিনের বাড়ি খবর পাঠাতে হবে। অর্ণির বিয়ের খবর দিতে। সে এলে যে তোকে আরেক দফা কথা শোনাবে। তাই চাচ্ছিলাম……”
“সমস্যা নেই। আমি ঠিক আছি।আপুর বিয়ের সব থেকে দূরেই থাকবো। শুধু তুমি দেখো আমার মা কে যেন বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে বেশ্যা বলে গালি না দেয়। মা তো মরে গেছে। তাকে বকা দিও না।”
তারেকাবানুর ছোট ছেলে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন মাধুর্যের মা কে। একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন।আবার যখন সাকিব-অর্ণির মা-বাবার বিয়ে হলো তখন আরো অধিকার।
কিন্তু মাধুর্যের মায়ের জন্য আগে থেকেই প্রস্তাব এসেছিল পাশের গ্রাম থেকে। তারেকাবানু ছোট ছেলের সম্বন্ধ নিয়ে যাওয়ার আগেই কাবিন হয়ে যায় মাধুর্যের মা-বাবার।
এই কথা শুনে তারেকা বানুর ছোট ছেলে আত্নহত্যা করে।
আর তারেকা বানু এসবের জন্য মাধুর্যের মা কে দোষ দিতে লাগলেন। বিয়ের বছর দুই পর মাধুর্যের মায়ের ওমন মৃত্যুতে যেন শান্তি পেলেন তারেকা বানু। তবে মাধুর্যকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারলেন না।
শুধু তারেকা বানু নয়, তার ছেলে ওবায়দুল অর্থাৎ সাকিবের বাবাও মাধুর্য কে সহ্য করতে পারেন না৷
এই সবের মাঝেই সাকিব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে মাধুর্যের দিকে। তবে সবটা গোপনে। পনেরো বছরের ভালোবাসা সযত্নের সাথেই নিজের মধ্যেই রেখেছে। মাঝে হঠাৎ এক রাতে নেশায় মাধুর্যের ঘরে ঢুকে বেশ ভাংচুর করে সাকিব। তখন মাধুর্যের থেকে লুকোতে পারেনি তার অনুভূতি। কারণ দুদিন পর তাকে চলে যেতে হয়েছিল শান্তি রক্ষা মিশনে।
অর্ণি ঘুমিয়ে আছে। ঠিক ঘুমিয়ে নেই। সে আসলে ঘুমের ভান ধরে আছে। কারণ ওয়াহেদের প্রশ্ন তাকে বিরক্ত করবে।
আজ সেই ব্যক্তির মুখ দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে, যে বলে –
“আরে কী যে বলিস না?দেখতে এলেই বিয়ে হয় না কী?”
সেই ব্যক্তিগুলো কই?তারা এসে দেখে যাও। বিয়ে হয়েছে৷ লকডাউনের মাঝেই বরপক্ষ ভ্যানে করে এসেছে। তারপর এক দেখায় বিয়েও হয়েছে।
খুব দ্রুত না কী সবাই শহরে ফিরবে।তারপর হবে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান।কিন্তু অর্ণি ভীষণ ভয়ে আছে। কী করে কাটাবে এই স্বামী রুপী স্যারের সাথে?
ল্যাপটপে স্ক্রীণ থেকে চোখ সরিয়ে অর্ণির দিকে তাকিতে ওয়াহেদ দেখতে পায়,
অর্ণি ঘুমিয়ে আছে। তবে তার কপাল কুঁচকে আছে। নাকের দিকটায় কেমন একটা রাগী রাগী ভাব।
ওয়াহেদ ল্যাপটপ রেখে অর্ণির পাশে আধশোয়া অবস্থায় বসে তাকে দেখতে লাগলো।
অজান্তেই হাত চলে গেলো অর্ণির মাথায়। হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার চুলে। ফোনের রিংটোন ভেজে উঠতেই দেখল ইনহান কল দিয়েছে।
“ইনু বল।”
“ভাবী কি করে? তাকে আবার পড়াচ্ছো না তো?”
“সে? সে তো ঘুমোচ্ছে।”
“আর তুমি?”
“আমি বসে বসে তার ঘুম পাহাড়া দিচ্ছি।”
“বাহ্ বেশ উন্নতি। শুনো ভাই, ঘুম পাহাড়া দেও।আমি আরহান ভাই, আর শয়ন ভাইকে নিয়ে একটু ওদিকে যাবো। মুনা, মাইশা আসবে আজ।”
“শোন ওদের সাবধানে নিয়ে আসিস।”
আহরার,ইনহান, শয়ন, ওয়াহেদ। সম্পর্কে চার চাচাতো ভাই।চার জনের মাত্র দুটো বোন।ওয়াহেদ এর আপন বোন মাইশা এবং শয়নের বোন মুনা।ইনহানের বড় বোন ছিল সে মারা যাওয়ার পর ইনহানের কাছে মুনা, মাইশাই ওর বোন। আহরার তার বাবার একমাত্র ছেলে।
মুনা,মাইশা এসে অর্ণিকে দেখে ভীষণ খুশি। বিকেলবেলা ওদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে দিঘির দিকে।
পত্রী, খুশবুর সাথে তাদের ভাব জমেছে বেশ।
পত্রী অর্ণির বড় মামার মেয়ে এবং খুশবু মেঝ মামার। ছোট মামার এক ছেলে রৌদ্র আর তার সর্বস্ব মাধুর্য।
আড্ডায় সবাই থাকলেও ছেলেরা একটু দূরে। সাকিব,রৌদ্র,আহরার,ইনহান,ওয়াহেদ,শয়ন ওদের আড্ডা চলছে একটু দূরে।
মাধুর্য মুনা-মাইশা কে খাবার পরিবেশন করছিল। এটা সে আনন্দের সাথেই করে। তখন খুশবু এবং মুনার কথা চলছে।
খুশবু মুনাকে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার ভাইদের নাম এমন কেনো?”
“কেমন?”
“শয়ন,আহরার,ইনহান… কেমন কেমন না?”
“আসলে শয়ন ভাইয়ের নাম শামস্, আহরার ভাইয়ের নাম আরহান এবং ইনহান ভাইয়ের নাম ইহান।
বড় আপু সবার নাম এমন করে পাল্টেছিল।”
“বড় আপু কে?”
“সাবিহা আপু। ইনহান ভাইয়ার বড় আপু। এবং আরহান ভাইয়ার বাগদত্তা। আপুর অভ্যেস ছিল সবার নাম নিয়ে এমন উদ্ভট এক্সপেরিমেন্ট করার। আর ভাইয়ারাও মেনে নিয়েছে।”
“সে এলো না কেনো তোমাদের সাথে?”
“আপু নেই। কারণ একটা গ্যাং রেইপ কেসের জন্য সে পরকালে।”
“আমি সরি মুনা।আমরা জানতাম না।”
“জানো,আরহান ভাই আপুকে এত ভালোবাসতো যে আপু যখন তার নাম বদলে দিলো তখন সে তার সব সার্টিফিকেটস, পাসপোর্ট সবকিছুতে নাম চেঞ্জ করে ফেলেছে। আপু মৃত্যুতে সব’চে কষ্ট পেয়েছে সে। তাই দেখো না একদম চুপচাপ থাকে অথচ এই আরহান ভাই আমাদের সবার আনন্দের খোড়াক ছিল।”
মুনার কথায় চোখ তুলে তাকিয়ে মাধুর্য দেখতে পেল,
বাম হাতে সিগারেট নিয়ে বসে থাকা যুবকটার বয়স কত হবে? ত্রিশ?না আরো কম?অথচ কষ্টের সীমা?
চোখ বন্ধ করে মাধুর্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল,
“আমরা প্রিয়জনের জন্য নয়, মাত্র আপনজনদের জন্যই বেঁচে থাকি।”
চলবে