#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:07
#Writer: Unknown Writer
সাগর দৌড়ে নিজের ঘরে এসে দেখে সাগরের মা ও তার বোন নদীর উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করছে। আর নদী চিৎকার করে কাঁদছে। নদীর পিঠে তিনটা ছেঁকা ওরা ইতিমধ্যে দিয়ে ফেলেছে। এটা দেখে সাগর অবাক হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই সাগরের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে।সাগর তাড়াতাড়ি রহিমা বেগমকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে স্নেহার গালে ঠাসস করে থাপ্পড় মেরে স্নেহাকেও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। নদী ইতিমধ্যে মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সাগর নদীকে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে রহিমা বেগম ও স্নেহাকে বলল
–তোমরা কি মানুষ? আমার তো মনে হচ্ছে না তোমরা মানুষ৷ নাহলে এভাবে কেউ একটা নিষ্পাপ অসুস্থ মেয়ের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার করতে পারে?
রহিমা বেগম সাগরকে রেগে বলল
–সাগর তুই এই ভিখারির বাচ্চার জন্য তোর মাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলি! তুই তোর মায়ের গালে হাত তুললি সাগর?
সাগর এবার রেগে রহিমা বেগমকে বলল
–হ্যা হ্যা হ্যা আমি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বেশ করেছি। নাহলে তো তোমরা নদীকে জানেই মেরে ফেলতে। তোমরা আমার ঘর থেকে এই মুহুর্তেই বেরিয়ে যাও।
রহিমা বেগম চিৎকার করে সাগরকে বলল
–সাগর তুই তোর মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস শুধুমাত্র এই মেয়েটার জন্য! তোর কি একটুও লজ্জা করছে না? শেষমেশ তোর এই কাজের মেয়েটার প্রতি দরদ উতলে পড়ে তোর মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করছিস?!
এদিকে স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বেগমকে বলল
–দেখো মা দেখো। এই মেয়েটা তোমার ছেলের মাথাটা একেবারে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে৷ এই মেয়েটার জন্য তোমার ছেলে আমাকে থাপ্পড় মারলো মা! তুমি দেখলে?
সাগর তার মা ও বোনের এসব কথা বার্তা শুনে যেন মাথায় রক্ত উঠে গেল৷ সাগর নদীকে কোলে তুলে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে রহিমা বেগম ও স্নেহা দুজনের হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে রুমের বাইরে বের করে দরজা লাগিয়ে দিল। সাগরের এমন কান্ডে রহিমা বেগম ও স্নেহা দুজনেই অবাক। রহিমা বেগম ও স্নেহা দুজনেই দরজা ধাক্কাতে লাগল৷ রহিমা বেগম চিৎকার করে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলল
–সাগর দরজা খোল বলছি। তুই এই ছোটলোকের বাচ্চার জন্য তোর মা বোনকে অপমান করলি৷ দরজা খোল সাগর৷ তোকে ছোটবেলায় বিদেশ পাঠানোই আমার ভুল হয়েছে। তাই আমি তোকে ঠিকভাবে মানুষ করতে পারি নি।
সাগর এবার রেগে চিৎকার করে তার মাকে বলল
–বিদেশ পাঠিয়েই আমাকে তুমি উদ্ধার করেছো। নাহলে তোমাদের সাথে থেকে থেকে আমিও তোমাদের মতো অমানুষে পরিণত হতাম। এতদিন তোমাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমি নদীর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। কিন্তুু আর না। তোমরা এখন এখান থেকে বিদায় হও। নাহলে আমি যে কি করতে পারি তার কোনো ধারণা নেই তোমাদের কাছে।
রহিমা বেগম খুব ভালো করেই জানে তার ছেলে ভীষণ রাগী। ছোটবেলায় একবার খেলনা এনে না দেওয়াতে নিজের হাত কেটে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল সাগর। তখন তো সাজ্জাদ সাহেব ও রহিমা বেগম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। এসব কথা ভেবেই রহিমা বেগম স্নেহাকে নিয়ে দরজার সামনে থেকে চলে যায়।
সাগর দ্রুত নদীর কাছে এসে নদীর পাশে বসল। নদী এখনো জ্ঞান হারা। সাগর নদীর মুখে পানির ছিটে দেওয়ার জন্য হাতে পানির বোতল নিলেও কি মনে করে সাগর আবার পানির বোতলটা রেখে দিল। সাগর নদীকে উল্টো করে শুয়িয়ে দিয়ে দেখল নদীর পিঠে তিনটা কালচে দাগ যা রক্ত লাল হয়ে আছে। এই দৃশ্য দেখার পর সাগর নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। সাগর একটা বাটিতে কিছু পানি নিয়ে তাতে রুমাল ভিজিয়ে নদীর পিঠ মুছতে লাগল৷ তারপর নদীর পিঠে নিজের হাত দিয়ে মলম লাগিয়ে দিল। তারপর নদীকে আবারো আগের মতো শুয়িয়ে দিয়ে নদীর মুখে পানির ছিটে দিলে নদীর কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে আসে। নদীর জ্ঞান ফিরেছে দেখে সাগরের মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। নদী হালকা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সাগর নদীর পাশে বসে আছে। সাগরের চোখে জল৷ নদী সাগরকে দেখে হঠাৎ রহিমা বেগমের সেই ভয়ংকর অত্যাচারের কথা মনে পড়ে গেল। নদী হঠাৎই শুয়া থেকে উঠে বসে বিছানা থেকে গড়িয়ে একদম বিছানার কিনারায় গিয়ে ভয় পাওয়া মুখ করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল
–স্যার আ আ আপনি এখানে? স্যার আপনি এখান থেকে চলে যান নাহলে বড় ম্যাডাম আর স্নেহা আপামনি আবারো আমাকে মারবে। আমার খুব কষ্ট হয় স্যার। খুব কষ্ট হয়।
সাগর নদীর কাছে এসে নদীর দু গালে হাত দিয়ে বলল
–সরি। আমার জন্যই তোমাকে এতো কষ্ট পেতো হলো।
সাগরের মুখে তুমি ডাক শুনে নদী চমকে উঠল। নদী ভয় পেয়ে আবার কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সাগরকে বলল
–স্যার আপনি তো আমাকে তুই করে বলতেন। এখন তুমি করে কেন বলছেন? আর আপনি তো আমাকে কোনো কষ্ট দেন নি।
সাগর এবার নদীকে একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল
–যদি বলি আমি তোকে ভালোবাসি। তাই তোকে তুই থেকে আবারো প্রথম দিনের মতো তুমি করে বলছি।
সাগরের এমন কথা শুনে নদী সাগরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল
–স্যার আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কিসব বলছেন আপনি। কোথায় আমি আর কোথায় আপনি। আমি আর বড় ম্যাডাম, স্নেহা আপামনির কাছে মার খেতে চাই না স্যার। তাই দয়া করে আমার থেকে দূরে থাকুন স্যার।
সাগর নদীকে আবারো টেনে নিজের কাছে এনে বলল
— তুই কি বুঝিস না নদী যে আমি তোকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবাসি। তাই প্রথম দিনই তোর সাথে দুষ্টুমি করেছিলাম। আমি তোকে বিয়ে করতে চাই নদী।
সাগরের এমন কথায় নদীর এখন ভয়ই বেশী করছে। নদী সাগরকে হাত জোর করে কান্না করতে করতে বলল
–আমাকে নিয়ে এসব চিন্তা মাথায় আনবেন না স্যার। যদিও এসব চিন্তা মাথায় এনে থাকেন তাহলে ভুলে যান৷
সাগর এমনিতেও ভীষণ রাগী স্বভাবের ছেলে। নদীর অবহেলা সাগর মেনে নিতে পারল না। সাগর নদীর দুই হাত ধরে টেনে নদীকে বিছানায় চেপে ধরে নদীর একদম কাছে এসে বলল
–তোকে ভুলে যাওয়া মানে নিজেকে ভুলে যাওয়া। তোকে এতদিন কষ্ট দিতাম যাতে আমার পরিবার তোর উপর অত্যাচার কম করে। কিন্তুু তাতো হলোই না বরং আরো বেড়ে গেলো। এবার একটা কথা তুই কান খুলে শুনে রাখ নদী তোকে আমার মন থেকে কিছুতেই আমি মুছতে পারব না। তোকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। #ভুলতে পারব না তোকে।
।
।
।
।
#চলবে……
#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:08
#Writer: Unknown Writer
সাগরের কথা শুনে নদী সাগরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সাগর ধীরে ধীরে নদীর ঠোঁটের কাছে এগিয়ে আসলে নদী ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। সাগর বুঝতে পারল নদী সাগরকে ভয় পাচ্ছে। তাই সাগর নদীকে ছেড়ে দেয়। নদী চোখ খুলে দেখল সাগর বিছানার একপাশে মাথানিচু করে কি যেন ভাবছে। নদী শুয়া থেকে উঠে বসতে নিলে নিজের পিঠে ব্যথা অনুভব করে কিন্তু তবুও নদী উঠে বসে। সাগর বুঝতে পারে নদী উঠে বসেছে। তাই সাগর নদীর দিকে ঘুরে তাকিয়ে নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে একটা মুচকি হেসে রুম থেকে চলে গেল৷ সাগর রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল৷ রহিমা বেগম সোফায় বসে দেখল সাগর বাইরে যাচ্ছে কিন্তু বাঁধা দিল না৷ সাগর রাস্তায় আনমনে হাঁটতে লাগল। নদী সাগরের কান্ড কিছুই বুঝল না। এখনো নদী একইভাবে বিছানায় বসে রইল। সাগর রাস্তা হাঁটছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। সাগর মনে মনে বলল
–আমি জানি নদী আমাকে মানতে পারবে না৷ ওর মনে আমার প্রতি কোনো অনুভূতি নেই তাও আমি জানি কিন্তু আমি কেন নদীকে ভালোবেসে ফেললাম! আচ্ছা ভালোবাসার কি কোনো কারণ থাকতে হয় নাকি হুট করেই হয়ে যায়? মনে হয় হুট করেই হয়ে যায়৷ নদীর সব কিছুই আমার ভালো লাগে। নদী একটা সাধারণ মেয়ে হলেও আমার কাছে ওকে সবসময় অসাধারণ মনে হয়৷ আমি কি পারব পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নদীর পাশে এভাবে দাঁড়াতে?
সাগর এসব কথাগুলো ভাবছে আর রাস্তায় হাঁটছে৷ সাগর কোথায় যাচ্ছে তা সাগরেরও অজানা। ঐদিকে রহিমা বেগম সাগরের ঘরে এসে দেখল নদী এখনো সাগরের বিছানায় বসে আছে। এটা দেখে রহিমা বেগমের রাগ হলো। রহিমা বেগম রেগে নদীকে বলল
–তা কাজকর্মগুলো রেখে আমার ছেলের বিছানায় কি সারাদিন বসে থাকবি নবাবজাদি! কাজকর্মগুলো কি তোর মা এসে করে যাবে?
রহিমা বেগমকে দেখে নদী ভয় পেয়ে গেল। সাথেসাথেই নদী বিছানা থেকে অতি কষ্টে নেমে রহিমা বেগমকে বলল
–বড় ম্যাডাম এইতো যাচ্ছি।
নদী যেতে গেলে রহিমা বেগম নদীর হাত চেপে দাঁড় করায়। তারপর নদীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রহিমা বেগম নদীকে বলল
–আমার ছেলের থেকে তুই দূরে থাকবি৷ আমার ছেলে যদি তোর সাথে কথাও বলতে চায় তবুও তুই কোনো কথা না বলে এড়িয়ে চলবি৷ আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস তো নদী?
নদী একটা শুকনো হাসি দিয়ে রহিমা বেগমকে বলল
–আপনি চিন্তা করবেন না বড় ম্যাডাম। আমি আপনার কথা সবসময় মেনে চলেছি আর এবারও মেনে চলব। আপনার কথার খেলাপ আমি করব না।
নদী কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
রহিমা বেগম মনে মনে বলল
–তুই যতই বলিস আমার কথা তুই রাখবি কিন্তু আমি তোকে একটুও বিশ্বাস করতে পারছি না নদী৷ আমার ছেলে তোর প্রতি যে ভীষণ দূর্বল হয়ে পড়েছে তা আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকেই কিছু একটা করতে হবে। সাগর যাতে তোকে ঘৃণা করে তার ব্যবস্থা আমাকেই নিতে হবে।
রহিমা বেগম নিজের রুমে চলে গেল। নদী ব্যথা শরীরে এই বিশাল বড় বাড়িটা ঝাড়ু দিয়ে মুছতে লাগল। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে রান্না করতে লাগল৷ রান্না করে ডাইনিং টেবিলে নদী খাবার পরিবেশন করতে লাগল। এমন সময় স্নেহা ও রহিমা বেগম ডাইনিং টেবিলে এসে বসে। কিন্তু সাগরের এখনো ফিরে আসার নাম নেই। রহিমা বেগম স্নেহাকে বলল
–স্নেহা তোর ভাই গেলোটা কোথায়? ছেলেটা আমার মন খারাপ করে কোথায় গেলো?
স্নেহা রহিমা বেগমকে বলল
–মা তুমি চিন্তা করো নাতো। ভাইয়ার মাথা এমনিতেও সবসময় গরম থাকে। তাই বাইরের আবহাওয়া খেয়ে একটু পরেই চলে আসবে।
রহিমা বেগম মুখ গুমরো করে বলল
–তাই বলে আমরা সাগরকে ফেলে একা একা খেয়ে ফেলব?
স্নেহা এবার বিরক্ত স্বরে রহিমা বেগমকে বলল
–উফ মা ভাইয়া বাইরে গেছে মানে খেয়ে আসবে। এখন আমার খুব খিদে পেয়েছে৷ চলো তো আমরা খেয়ে ফেলি।
রহিমা বেগমও আর কথা না বাড়িয়ে স্নেহার সাথে টেবিলে বসে খেতে লাগল৷ নদী তাদের খাবার পরিবেশন করার সময় এসব কথা শুনল। নদী মনে মনে বলল
–সত্যি তো স্যার গেলেন কোথায়? রাত ১২ঃ৩০ বাজে কিন্তু স্যার তো এলেন না।
নদী মুখটা গুমরো করে নিজের রুমে চলে গেল। নদীও এখনো কিছু খায় নি৷ বলতে গেলে নদীর খেতে একদমই ইচ্ছে করছে না। সেটা কি সাগরের জন্য নাকি নিজের জন্য তা নদীর নিজেরও অজানা।
.
.
.
রাত ২ঃ০০ টা বাজে। সাগর মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসল৷ বাসায় ফিরে সাগর দেখল পুরো বাড়িটাই অন্ধকার তারমানে সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সাগর সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে যাচ্ছিল কিন্তু আবারও সাগর নদীর কথা মনে করে থেমে যায়। সাগর আবারো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ছোট রুমটার দিকে পা বাড়ায় যেখানে নদী ঘুমায়৷ সাগর নদীর রুমে গিয়েই অবাক হলো। কারণ নদী বিছানায় না শুয়ে মাটিতে দেয়াল ঘেঁষে বসে ঘুমিয়ে আছে। সাগর ধীরে ধীরে নদীর কাছে গিয়ে নদীর পাশে মাটিতে দেয়াল ঘেঁষে বসল। তারপর নদীর নদীর বাম গালে নিজের ডান হাত দিয়ে আলতো স্পর্শ করে নদীকে আস্তে করে ডাকল
–নদী….
নদী চোখ খুলে পাশে সাগরকে হঠাৎ দেখে চিৎকার করতে নিলে সাগর নদীর মুখ চেপে ধরে৷ সাগর নদীকে বিচলিত হয়ে বলল
–চুপ। একদম চুপ।
নদী চুপ হয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে রইল৷ নদী যতবারই সাগরের দিকে তাকায় ততবারই নিজের মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে যা নদীর অজানা। সাগর নদীর মুখ ছেড়ে দিয়ে একটু
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
— এভাবে নিচে বসে ঘুমাচ্ছিলি কেন?
নদী মাথা নিচু করে বলল
–এমনি স্যার৷
–খাবার খেয়েছিস?
–হুম।
নদী মিথ্যে বলেছে সাগর সেটা বুঝতে পেরে নদীর গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নদী নিজের গালে হাত দিয়ে বোকার মতো সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সাগর রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–আমাকে বোকা বানাচ্ছিস তুই?
নদী কাঁদতে কাঁদতে সাগরকে বলল
–স্যার আপনি কি করে বুঝলেন আমি খাই নি?
–তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুই মিথ্যে বলছিস।
সাগর উঠে খাবার আনতে গেলে নদী নিজের দুই হাত দিয়ে সাগরের ডান হাত চেপে ধরে বলল
–স্যার আমি কিছুই খাবো না।
–তুই না খেলে আমিও কিছু খাবো না।
সাগরের কথা শুনে নদী আরো এক ধাপ অবাক হলো। নদী চোখ বড়বড় করে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল
–স্যার রাত ২ঃ৩০ বাজতে চলল আর আপনি বাইরে থেকে কিছু খেয়ে আসেন নি?
–না কিছুই খায় নি।
–তাহলে আপনি এতক্ষণ ছিলেন কোথায়?
–নদীর পাড়ে বসে ছিলাম।
নদী সাগরের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে সাগরের দিকে তাকিয়ে রইল। নদী সাগরকে শান্ত গলায় বলল
–কেন স্যার? এতক্ষণ কেন ওখানে বসে ছিলেন?
–এমনি।
–এমনি কেন স্যার?
–এমনি মানে এমনি। তুই বুঝবি না৷
–স্যার আপনি যেহেতু কিছু খেয়ে আসেন নি তাহলে আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসি?
–লাগবে না।
–কেন স্যার?
–কারণ তুই খাবি না৷ তাই আমি খাবো না।
–এসব কথার মানে কি স্যার?
–আমি যা বলছি তার মানে খুঁজার তোর লাগবেও না৷
–আচ্ছা ঠিক আছে স্যার আমিও খাবার খাবো। তবুও আপনি খেয়ে নিন।
নদী উঠতে নিলে সাগর নদীর হাত চেপে বসিয়ে দিয়ে বলল
–তোকে যাওয়ার লাগবে না। আমি নিজে খাবার আনছি।
তারপর সাগর খাবার আনতে চলে গেল। আর নদী মাটির মধ্যে আঙুল দিয়ে নিজের মনের মতো রেখা আঁকতে লাগল যেখানে কোনো কালি নেই কিন্তু নদী তা মনের চোখ দিয়ে দেখতে পারছে। তারপর নদী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নদী মনে মনে বলল
–কেন স্যার! কেন আপনি আমার জন্য এতো ভাবেন?
তখনই নদীর সাগরের বলা কথাগুলো মনে পড়তে লাগল যে আমি তোকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবাসি নদী।
নদী আবারও মনে মনে বলল
–আপনি আমাকে ভালোবাসেন স্যার৷ কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না। সেই অধিকার আমার নেই৷ যে বাড়িতে কাজ করি সে বাড়ির কাজের লোক হয়ে কি করে বাড়ির মালকিনের ছেলেকে ভালোবাসব? আমি জানি আমি এই বাড়ির আশ্রিতা ছিলাম কিন্তু ধীরে ধীরে তো তা কাজের লোকে রূপান্তরিত হয়েছে।
নদী এসব ভাবতে ভাবতেই সাগর খাবার নিয়ে চলে আসে৷ সাগর খাবার হাতে নিয়ে নদীর পাশে মাটিতে বসে পড়ল। কিন্তু নদী দেখল সাগরের হাতে একটা খাবারের প্লেট। তা দেখে নদী সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–স্যার এখানে তো একটা খাবারের প্লেট।
সাগর অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল
–তো কি হয়েছে?
–না মানে আপনি বলেছিলেন আমি না খেলে খাবেন না। কিন্তু আমি যদি এই খাবার খেয়ে ফেলি তাহলে আপনি কি খাবেন?
নদীর কথা শুনে সাগর মুচকি হেসে নদীকে বলল
–নদী তুই বোধহয় ভুলে গেছিস যে তোর এঁটো খাবার খেতে গিয়ে আমি মায়ের কাছে বকা খেয়েছিলাম।
নদী অবাক চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–তারমানে স্যার আপনি ঐদিন ইচ্ছে করে আমার এঁটো খাবার খেয়েছেন?
–হুম ইচ্ছে করেই খেয়েছি।
–কেন স্যার?
–কারণ তোকে ভালোবাসি তাই তোর খাবার খেয়ে আমি এক অদ্ভুত অনুভূতি উপভোগ করতে পারি।
।
।
।
।
#চলবে……