#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:14
#Writer:Unknown_Writer
রহিমা বেগম ও স্নেহা নদীর রুমের সামনে গিয়ে দেখল সাগর ও নদী পাশাপাশি দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে। নদীকে সাগর জড়িয়ে ধরে রেখেছে। আর নদীর সাগরের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। এটা দেখে রহিমা বেগমের মাথা আরো আগুন হয়ে গেল। রহিমা বেগম চিৎকার করে বলল
–সাগর!!!!
সাগর সামনে তাকিয়ে দেখে রহিমা বেগম ও স্নেহা দাঁড়িয়ে আছে। নদীর ঘুমটাও ভেঙে যায়। নদী সামনে তাকিয়ে রহিমা বেগম ও স্নেহাকে দেখে সাগরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দূরে সরে যায়। সাগর ও নদী দুজনেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রহিমা বেগম সাগরের সামনে এসে দাঁড়াল। সাগর রহিমা বেগমকে কিছু বলতে নেওয়ার আগেই রহিমা বেগম সাগরের গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ রহিমা বেগম সাগরকে থাপ্পড়টা মারলেও থাপ্পড়ের কষ্টটা নদীর বুকের ভিতর গিয়ে লাগল। নদীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সাগর রহিমা বেগমকে বলল
–মা আমি কি এমন অপরাধ করেছি যার কারণে তুমি আমাকে মারলে?
–কি করেছিস মানে! তুই কিছু করিস নি! এই মেয়ের ঘরে তুই কি করছিস সাগর? তোর তো নিজের রুমে থাকার কথা।
–আমার রুমে যে একটা বিষাক্ত সাপকে রেখে গেছো। সেই সাপের জ্বালায় নিজের রুমে শান্তিতে আমি ঘুমাই কি করে মা?
–সাগর!!! তুই কিন্তু উর্মিকে অপমান করছিস। মেয়েটা ঘরে একা একা শুয়ে আছে আর তুই কিনা এই মেয়েটার ঘরে! ছিহ্ সাগর তুই আমার ছেলে তা আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে।
–আমি নদীর সাথে একই রুমে থাকলে তোমার আপত্তি। আর যদি আমি নিজের রুমে উর্মির সাথে থাকি সেখানে তোমার কোনো আপত্তি নেই। বাহ্ মা বাহ্। ইউ আর রিয়েলি গ্রেট।
রহিমা বেগম হঠাৎই নদীর কাছে এসে নদীর চুলের মুঠি ধরে নদীকে থাপ্পড় মারতে নিলে সাগর রহিমা বেগমের হাত ধরে নেয়। রহিমা বেগম অবাক হয়ে সাগরকে বলল
–সাগর তুই কিন্তু এই মেয়েটার জন্য আমাকে আবারও অপমান করছিস। এই ফকিন্নির বাচ্চার জন্য তোর এতো দরদ কেন রে? কে হয় নদী তোর?
–মা যদি বলি নদী আমার জীবন। নদী আমার মরণ। নদী আমার সবকিছু।
রহিমা বেগম সাগররের কথায় অবাক হয়ে যায়। নদী এখনো কান্না করছে। তখনই স্নেহা রহিমা বেগমকে বলল
–দেখো মা তোমার ছেলের চরিত্রটাই গেছে। একটা কাজের মেয়ের জন্য কিভাবে তোমার সাথে তর্ক করছে৷ মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও তোমার ছেলে ভুলে গেছে।
সাগর রেগে স্নেহাকে বলল
–চুপ স্নেহা। একদম চুপ। তুই কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস৷ আর একটা উল্টো পাল্টা কথা বললে আমার হাতে তুই মার খাবি।
স্নেহা কান্নার অভিনয় করে রহিমা বেগমকে বলল
–মা তোমার ছেলে আমাকে থাপ্পড় মারার হুমকি দেয়। তাও আবার এই কাজের মেয়েটার জন্য।
সাগর স্নেহাকে থাপ্পড় দিতে নিলে নদী সাগরকে বাঁধা দেয়। নদী কাঁদতে কাঁদতে সাগরকে বলল
–থাক না স্যার। স্নেহা আপামনিকে মারবেন না। আপামনি বুঝতে পারে নি। আমি আপামনির হয়ে আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সাগর তখন স্নেহাকে বলল
–দেখ স্নেহা দেখ। যাকে তুই সবসময় কাজের মেয়ে, ফকিন্নির মেয়ে বলে অপমান করিস সেই কিনা আমার হাতে মার খাওয়ার থেকে তোকে বাঁচাতে চাইছে। তোর আর নদীর বয়স তো প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু তোদের মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য।
–ভাইয়া তুই কিন্তু আমাকে অপমান করছিস!
–অপমান কেন করব। আমার বোন যে কতটা গুনধর তার গুণগান গাইছি।
স্নেহা রেগে দাঁত কটমট করতে লাগল। রহিমা বেগম নদীর হাত ধরে বলল
–তুই এই বাড়িতে আর থাকতে পারবি না। তোর জন্য আমার পরিবারে এতো অশান্তি হচ্ছে। তোকে আজকে আমি এ বাড়ি থেকে বের করেই ছাড়ব।
রহিমা বেগম নদীর হাত ধরে টানতে টানতে ড্রইং রুমে নিয়ে যেতে লাগল। সাগর নদীর আরেকটা হাত তখনই চেপে ধরে রহিমা বেগমকে বলল
–মা নদী কোথাও যাবে না। নদী এ বাড়িতেই থাকবে।
রহিমা বেগম রেগে দাঁতে দাঁত চেপে সাগরকে বলল
–কেন রে সাগর তোর জন্য কি মেয়ের অভাব পড়েছে যে এই হারামজাদিটাকে এ বাড়িতে রাখতে হবে। তোর সাথে আমি উর্মির বিয়ে দিব।
সাগর একটা মুচকি হেসে রহিমা বেগমকে বলল
–তা কোনোদিনও সম্ভব নয় মা। আমার এই মন শুধু নদীকে আমি দিয়ে ফেলেছি। আর বিয়ে যদি করতেই হয় আমি নদীকে বিয়ে করব।
–সাগর তুই কিন্তু এই মেয়ের জন্য তোর মায়ের মুখে মুখে খুব তর্ক করছিস। এই মেয়েকে তো আমি কোনোদিনও এ বাড়িতে রাখব না। এই মেয়ে তুই বিদায় হ।
কথাটা বলেই রহিমা বেগম নদীকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে নিলে সাগর নদীকে ধরে ফেলে। নদী সাগরের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সাগর দেখল নদী কান্না করছে। এটা দেখে সাগর নদীকে বলল
–চল নদী আমরা এ বাড়িতে আর থাকব না। যেখানে তোর এ বাড়িতে কোনো জায়গা নেই সেখানে আমি কি করে থাকব।
সাগর নদীর হাত ধরে রহিমা বেগমের সামনে দিয়ে যেতে নিলে নদী থেমে যায়। সাগর নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো নদী তুই দাঁড়িয়ে গেলি কেন? চল আমার সাথে৷ দেখছিস না এ বাড়িতে আমাদের আর জায়গা হবে না।
নদী কান্না জড়িত চোখে সাগরের দিকে তাকিয়ে বলল
–কোথায় যাব আমি স্যার? আমার যে এ বাড়ি ছাড়া যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।
সাগর একটু হেসে নদীকে বলল
–পাগলী মেয়ে একটা৷ তোর এখানে আর থাকার লাগবে না। আজই আমি তোকে বিয়ে করে বিদেশে চলে যাব৷ এই নরক যন্ত্রণা তোকে আর ভোগ করতে হবে না।
নদী মাথা নিচু করে সাগরকে বলল
–স্যার আমি কোথাও যাব না। আর আমি আপনাকে বিয়েও করতে পারব না। আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।
সাগর মুহুর্তেই নদীর হাতটা ছেড়ে দিল। সাগরের বুকটা কষ্টে ছিঁড়ে যাচ্ছে। নদী যে সাগরকে এভাবে সবার সামনে ফিরিয়ে দিবে তা সাগর আশা করে নি। সাগর দেখতে পেল রহিমা বেগম ও স্নেহা হাসাহাসি করছে। এমনকি বাড়ির অন্যান্য কাজের লোকেরাও হাসাহাসি করছে। সাগর এসব অপমান, এসব কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে যায়। নদী কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে। রহিমা বেগম নদীর কাছে এসে হালকা নদীর দিকে ঝুকে বলল
–আজ আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তোকে ধন্যবাদ নদী।
নদী কাঁদতে কাঁদতে রহিমা বেগমকে বলল
–বড় ম্যাডাম আমি আমার কথা রেখেছি।
নদীর কান্না দেখে রহিমা বেগম ও স্নেহা দুজনেই হাসতে লাগল। রহিমা বেগম গম্ভীর গলায় নদীকে বলল
–যা এবার নিজের ঘরে যা।
নদী কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে মাটিতে বসে কাঁদতে লাগল।নদী মনে মনে বলল
–স্যার আজ আমার জন্য ভীষণ অপমানিত হয়েছেন। স্যারকে এতোটা কষ্ট দেওয়ার কোনো অধিকার আমার নেই। কিন্তু তবুও না চাইতেও আমি স্যারকে কেন কষ্ট দিয়ে ফেলি!
.
.
.
সাগর নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় উর্মিকে দেখতে পেল। আজ সাগরের মাথাটা আগুন হয়ে গেছে। সাগরের এখন মন চাইছে এই উর্মি নামের ঝামেলা মেয়েটাকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিতে কিন্তু সাগর নিজের রাগটা কনট্রোল করার জন্য বারান্দায় চলে গেল। এখনো আকাশে সূর্যের আগমন ঘটে নি। চারিদিকটা কেমন নিস্তব্ধ। সাগরের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। সাগর মনে মনে বলল
–কেন নদী কেন?!! তুই কেন বারবার আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিস! তোর এই অবহেলা যে আমি সহ্য করতে পারছি না।
সাগরের কাছে এখন কোনো সিগারেটের প্যাকেট নেই। থাকলে হয়তো এখন একটার পর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিজের বুকটাকেও জ্বালাত। সাগর বারান্দায় রাখা একটা চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলল
–ভালোবাসায় এতো কষ্ট হলে জীবনেও কাউকে ভালোবাসতাম না। কিন্তু এখন এই ভালোবাসার বাঁধনে নিজের মনকে আমি জড়িয়ে ফেলেছি। তাই চাইলেও নিজের মন থেকে আমি নদীর নামটা মুছতে পারব না। ভুলতে পারব না তোকে নদী৷ আমি কিছুতেই ভুলতে পারব না তোকে।
।
।
।
।
#চলবে……
#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:15
#Writer:Unknown Writer
আজ সাগর অফিস যাবে সেটা শুনে রহিমা বেগমের যেন খুশি কেউ ধরে রাখতে পারছে না। রহিমা বেগম উৎফুল্ল হয়ে সাগরকে বলল
–সত্যি বাবা তুই অফিস যাবি?
–হ্যা মা যাব। আর ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগছে না। বাবার বিজনেসটায় একটু মনোযোগ দেই। ম্যানেজার এতদিনে কি করেছে না করেছে তারও তো খুঁজ খবর নিতে হবে।
–যা বাবা যা অফিস যা।
সাগর কালো রংয়ের কোর্ট, কালো পেন্ট, সাদা টাই, সাদা শার্ট, কালো জুতা, চোখে কালো সানগ্লাস পড়েছে। সাগর এমনিতেও দেখতে ভীষণ সুন্দর। সাগরকে দেখতে যেন আরও সুন্দর লাগছে। সাগর অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। আজ নদীর কাছে কেমন যেন বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মনের মধ্যে এক অজানা ভয় নদীর মনটাকে গ্রাস করছে। তবুও নদী স্বাভাবিকভাবে বাড়ির সব কাজ করছে।
.
.
.
উর্মি ও স্নেহা ড্রইং রুমের সোফায় বসে গল্প করছে। নদী ঘর ঝাড়ু দিচ্ছিল তখনই উর্মি নদীকে দেখতে পেয়ে বলল
–এই মেয়ে এদিকে আসো।
উর্মি ঝাড়ু হাতে নিয়েই উর্মির সামনে গেলে উর্মি রেগে যায়।
উর্মি রেগে চিৎকার করে উর্মিকে বলল
–এই মেয়ে তোমাকে কি আমি ঝাড়ু হাতে নিয়ে আসতে বলেছি? ওটা হাত থেকে ফেলো বলছি।
নদী তাড়াতাড়ি হাত থেকে ঝাড়ুটা ফেলে দিয়ে বলল
–জ্বি ম্যাডাম বলুন।
উর্মি গম্ভীর গলায় নদীকে বলল
–আমার আর স্নেহার জন্য দুটো অরেঞ্জ জুস বানিয়ে নিয়ে আসো। ফাস্ট এন্ড ইমিডিয়েটলি ওকে?
–জ্বি ম্যাডাম আনছি।
নদী রান্নাঘরে কমলার জুস বানাতে লাগল। কিন্তু নদীর কেন জানি না সাগরের কথা খুব মনে পড়ছে। নদী মনে মনে বলল
–স্যার আপনি আমাকে একা ফেলে চলে গেলেন! আমার যে খুব ভয় লাগছে এই বাড়িতে একা একা থাকতে। আপনি যে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলেন৷ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসুন স্যার।
নদী কমলার জুস বানিয়ে হাতে নিয়ে ড্রইং রুমে এসে টেবিলে রাখল। উর্মি ও স্নেহা দুজনেই জুস হাতে নিয়ে জুস খাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ উর্মি ইচ্ছে করে নিজের জুতায় কমলার জুস ফেলে দেয়। উর্মি বলে উঠল
–এমা! ছিহ্ আমার দামি জুতাটা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল! ইসস কি যে করি। এই নদী আমার জুতাটা পরিষ্কার করে দাও তো।
উর্মির কথায় নদীর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় উর্মিকে বলল
–ম্যাডাম আ আ আমি পরিষ্কার করব?
উর্মি রেগে চিৎকার করে বসা থেকে উঠে বলল
–হোয়াট ননসেন্স তাহলে কি আমি পরিষ্কার করব! কাজের লোকের মুখে এতো তর্ক মানায় না। আমার জুতাটা তাড়াতাড়ি পরিষ্কার করো বলছি।
উর্মির কথায় স্নেহা বেশ মজা পাচ্ছে। স্নেহা মুচকি মুচকি হাসছে। নদী কান্না করতে করতে হাতে একটা রুমাল নিয়ে মাটিতে বসে উর্মির পায়ের জুতা মুছতে নিলে রহিমা বেগম এসে বলল
–উর্মি তুই এই মেয়েকে জুতা পরিষ্কার করাচ্ছিস ভালো কথা। কিন্তু রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করাবি?
উর্মি হেসে রহিমা বেগমকে বলল
–তাহলে একে কি দিয়ে পরিষ্কার করতে বলব আন্টি?
রহিমা বেগম উর্মিকে বলল
–কেন রে তোর এতো দামি জুতা শুধু রুমাল দিয়ে মুছলে তা খুব তুচ্ছ মনে হবে। তুই বরং নদীর মাথার চুল দিয়ে তোর জুতাটা পরিষ্কার করা।
রহিমা বেগমের কথা শুনে নদী অবাক হয়ে রহিমা বেগমের দিকে তাকায়৷ নদীর চোখ দিয়ে টপটপ চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। উর্মি হেসে রহিমা বেগমকে বলল
–ওয়াও আন্টি ইউ আর দা গ্রেট।এতো ভালো আইডিয়া!
এই নদী তোর মাথার চুলগুলো বেশ ভালোই বড়। তুই তোর চুলগুলো দিয়ে আমার দামি জুতাগুলো মুছে দে। তাহলে তোর জীবনটাও ধন্য হবে।
নদীকে আজ খুব অসহায় লাগছে। সাগরও বাড়িতে নেই৷ অফিসে চলে গেল সাগর। এখন নদীকে যে কেউ এই কাজ করার থেকে বাঁচাবে তারও কোনো উপায় নেই। নদী কাঁদতে কাঁদতে উর্মির জুতা জুড়া নিজের চুল দিয়ে মুছতে লাগল। উর্মি, স্নেহা, রহিমা বেগম তিনজনই নদীর কান্না দেখে মজা নিচ্ছে।
নদী উর্মির জুতা মুছে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। উর্মি বেশ খুশি হয়ে টেবিলে থাকা নিজের ব্যাগ থেকে পাঁচশ টাকার নোট নদীর মুখে ছুঁড়ে ফেলে বলল
–এটা তোমার কাজের বকসিস। এখন এই টাকাটা নিয়ে আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হও।
নদী চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল
–ম্যাডাম এসব টাকা আমার লাগবে না৷ আপনার টাকা আপনার কাছেই রেখে দিন।
নদী টাকাটা মাটি থেকে তুলে টেবিলে রাখল। এতে উর্মি বেশ রেগে গেল। উর্মি রেগে চিৎকার করে নদীকে বলল
–ইউ ইডিয়ট গার্ল তোর এতো বড় সাহস তুই আমাকে টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছিস!
কথাটা বলেই উর্মি নদীর গালে ঠাসস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। নদী নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে লাগল। উর্মি রহিমা বেগমকে বলল
–আন্টি এসব ইউসলেস গার্ল এই বাড়ির কাজের মেয়ে হওয়ারই যোগ্যতাই নেই। এসব কোথা থেকে রেখেছো?
–আমি রাখিনি রে উর্মি। তোর আংকেল এটাকে রাস্তা থেকে নিয়ে এসেছে।
–ওহ এখন বুঝলাম আন্টি। এসব রাস্তার মেয়েরা এমনি হয়।
নদী আর সহ্য করতে পারল না। সোজা নিজের রুমে চলে গেল। নদী দরজা বন্ধ করে মাটিতে বসে পড়ল৷ নদী কাঁদতে কাঁদতে মনে মনে বলল
–এতো কষ্ট আমার কপালেই কেন রাখা থাকে! মা-বাবা কেন তোমরা আমার সাথে এমন করলে! আমি কি এতোটাই ফেলনা ছিলাম তোমাদের কাছে! আমি তোমাদের কোনোদিনও ক্ষমা করব না মা -বাবা। কোনোদিনও না। তোমরা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছো। এই নরকে না চাইলেও আমাকে থাকতে হবে। স্যার আমাকে ভালোবাসলেও আমার ভীষণ ভয় করে। এসব বড়লোকেরা খুব ভয়ংকর হয়। এদের মন যেকোনো সময় পাল্টাতে পারে। তাই আমি স্যারকে চাইলেও ভালোবাসতে পারব না। কষ্ট সহ্য করতে পারব কিন্তু ধোঁকা সহ্য করতে পারব না। কিছুতেই না।
.
.
.
.
সাগর অফিসে বসে নিজের দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু এসবে যেন সাগরের মন নেই। সাগরের মন তো নদীর কাছে পড়ে আছে। কিছুতেই যেন সাগর অফিসের কাজে মন দিতে পারছে না। সাগর চেয়ারে বসে মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে বলতে লাগল
–কেন নদী! কেন তুই বার বার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিস! আমি তোকে এতো ভালো কেন বাসি বলতে পারিস? কিছুতেই আমার মন থেকে তোর কথা মুছতে পারছি না। এই ভালোবাসা যে এতোটা ভয়ানক আগে জানতাম না।
.
.
.
রাত ১ টা বাজে সাগর বাসায় ফিরে। বলতে গেলে সাগর ইচ্ছে করেই বাসায় দেড়িয়ে ফিরেছে। সবায় নিশ্চয়ই যার যার রুমে শুয়ে আছে। সাগর সিঁড়ি বেয়ে উঠে নিজের রুমে যেতে নিয়েও যায় নি। সাগর নদীর রুমের দিকে গেল৷ সাগর নদীর রুমে গিয়ে দেখল নদী ঘুমিয়ে আছে। সাগর নদীর কাছে গিয়ে নদীকে দেখতে গিয়েও যায় নি৷ দূর থেকে নদীকে এক নজর দেখে চলে আসল। সাগর নিজের রুমে বিছানায় আবারও সেই উর্মিকে শুয়ে থাকতে দেখে। সাগর মনে মনে বলল
–এই ফালতুটা কবে যে এই রুম থেকে বিদায় হবে কে জানে। আমার বিছানা মনে হয় এর বাবার দিনের সম্পদ পেয়েছে। যত্তসব।
সাগর ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে থাকল। এখন সাগর নদীর রুমে থাকে না। বারান্দায় বসে থাকে। আর না চাইতেও নদীর কথা ভাবতে থাকে।
সাগর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর নদীর কথা ভাবতে ভাবতে সাগর মাথায় হাত দিয়ে মনে মনে সাগর বেশ বিরক্তি নিয়ে বলল
–এই নদী আমাকে না মেরে ছাড়বে না। কিছুতেই আমি নদীকে ভুলতে পারব না। ওকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। হাজার ব্যস্ততার মাঝেই নদীকে আমার মনে পড়ে তাহলে এখন তো আমার মাথাটাই খারাপ হয়ে যাবে নদীর কথা ভেবে ভেবে।
সাগর আবারও নদীর রুমের দিকে গেল। সাগর নদীর কাছে এসে দেখল নদী এখনও গভীর ঘুম ঘুমিয়ে আছে৷ সাগর মনে মনে বলল
–আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে তুই আরাম করে ঘুমাবি তা কি করে হয়।
সাগর গ্লাসে একটু পানি নিয়ে নদীর ঘুমন্ত মুখেই ঢেলে দিল। নদী লাফিয়ে ঘুম থেকে উঠল। নদী মুখ থেকে পানি মুছে একটু উপরে তাকাতেই দেখে সাগর রাগী দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যার আ আ আপনি এখানে?
সাগর নদীকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দুই হাত চেপে নদীর কাছে মুখ নিয়ে বলল
–আমাকে কি তোর মানুষ বলে মনে হয় না নদী? আমি কি এমন অন্যায় করেছি যে তুই বার বার আমার ভালোবাসাটাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস।
নদী দেখতে পেল সাগরের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। বুঝাই যাচ্ছে সাগর আজ আগের থেকেও ভীষণ রেগে আছে। আজ মনে হয় নদীর রক্ষা নেই।
।
।
।
।
#চলবে……
#ভুলতে_পারব_না_তোকে❤
#Part:16
#Writer:Unknown Writer
সাগর নদীর হাত খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে। যার ফলে নদীর খুব ব্যথা লাগছে। নদী কাঁদতে কাঁদতে সাগরকে বলল
–আহ্ স্যার আমার হাতে ব্যথা লাগছে। আমার হাতটা দয়া করে ছেড়ে দিন।
সাগর নদীর হাত আরো জোরে চেপে ধরে বলল
–তোর খুব ব্যথা লাগছে তাই না? আমার বুকে যে তুই প্রতিনিয়ত আঘাত করে ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছিস সেই খেয়াল কি তোর নেই?
–স্যার আপনি এখানে কেন? কিসের জন্য এখানে এসেছেন আপনি? বড় ম্যাডাম জানলে আবারও অঘটন ঘটবে। তাই দয়া করে আপনি নিজের ঘরে চলে যান স্যার।
–যাব না আমি। কিছুতেই যাব না। আগে তুই বল আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ যে তুই আমাকে ভালোবাসতে পারছিস না! বল আমাকে?
–আপনি সব দিক দিয়েই ভালো স্যার। আপনার জন্য তো লক্ষ লক্ষ মেয়েরা লাইন ধরে থাকবে। কিন্তু আমার মতো কাজের মেয়ের সাথে আপনাকে মানায়। রাজপুত্রের সাথে রাজকন্যাকেই মানায়। কোনো কাজের মেয়েকে নয়।
সাগর নদীর কথা গুলো শুনে রেগে গেল। সাগর রেগে নদীকে বলল
–কি বললি তুই? আরেকবার বল?
–আমি আপনার যোগ্য……
নদীকে আর কিছু বলতে না দিয়ে সাগর নদীর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।এই প্রথম সাগর নদীকে এতো কাছে থেকে ছুঁয়েছে। নদী সাগরের কান্ড দেখে অবাক হলো। নদী চোখ বন্ধ করে সাগরকে ধাক্কাতে লাগল কিন্তু সাগরের শক্তির সাথে নদী পেরে উঠল না। সাগর নদীর ঠোঁটজোড়া অনেকক্ষণ পর ছাড়লে নদী সাগরকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। যার ফলে সাগর বিছানার একপাশে একটু সরে যায়৷ সাগর মাথা নিচু করে বসে থাকে। নদী শুয়া থেকে উঠে ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে কান্না করে বলল
–ছিহ্ স্যার। আপনি এতোটা বাজে! আপনি এতোটা জঘন্য এর আগে জানতাম না। আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করতে পারলেন?
সাগর মাথা নিচু করে শান্ত স্বরে নদীকে বলল
–ভালোবাসার মানুষের জন্য যদি আমাকে বাজে, জঘন্য, অমানুষও হতে হয় তাহলে আমি তাও হতে রাজী। ভালোবাসার ফল যেমন মধুর হয় তেমন তিক্তও হয়। আর সেই তিক্ততাটা তুই আনছিস নদী। আমি চাইনি তোর সাথে খারাপ আচরণ করতে কিন্তু তুই আমাকে বাধ্য করলি। আমি তোকে কতবার বলব যে আমি তোকে ভালোবাসি। আমি তোকে বিয়ে করে এখন থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই। তাহলে তুই কেন মানছিস না আমাকে!
নদী সাগরের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল। নদী ভয় পাওয়া কন্ঠে সাগরকে বলল
–স্যার আপনি আমাকে বিয়ে করে কিছুদিন ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন তাই না?
নদীর কথা শুনে সাগর অবাক হয়ে নদীর দিকে তাকায়। সাগর নদীকে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল
–তোর কি তাই মনে হয় নদী? তুই আমাকে এতোদিনে এই চিনলি? এতদিনেও তুই আমাকে বুঝলি না নদী?
–আপনাকে আমি চাইলেও বিশ্বাস করতে পারছি না স্যার। আপনি ইচ্ছে করলেই আমাকে যেকোনো সময় ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন তাই না?
নদীর কথায় সাগর একটা শুকনো হাসি দিল। যেই হাসিতে কোনো প্রাণ নেই। সাগর নদীর দিকে না তাকিয়ে মাথানিচু করে আছে। নদীর কথাগুলো সাগরের বুকে গিয়ে বিঁধছে। সাগরের চোখে জল জমাট বেঁধে আছে। যেকোনো সময় চোখ বন্ধ করলে টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। সাগর নিজের চোখের জল তাড়াতাড়ি মুছে নদীর দিকে তাকিয়ে বলল
–সত্যি রে নদী তোর চিন্তা ভাবনাগুলো জেনে আমার মন ভরে গেছে। তোর এই চিন্তা ভাবনায় আমি কি যে খুশি তোকে বলে বুঝতে পারব না।
সাগরের কথা নদী কিছু বুঝল না। চুপ করে রইল নদী। সাগর আবারও নদীকে বলল
–জানিস নদী মানুষ যা সহজে পায় তার মূল্য মানুষ সহজে বুঝে না। তুই ও ঠিক তাই। তুই এমন কিছু সহজে পেয়েছিস যা সবাই পায় না কিন্তু তুই তার মূল্য বুঝছিস না। সেই জিনিসটা যখন তোর জীবন থেকে হারিয়ে যাবে তখন তুই বুঝবি তোর কাছে সেই জিনিসটা কত মূল্যবান ছিল।
সাগরের কথা শুনে নদীর বুকে কেমন চাপা কষ্ট হতে লাগল। কিসের সেই কষ্ট নদী বুঝল না। নদী শান্ত গলায় সাগরকে বলল
–মানে কি স্যার? আপনি কি বলতে চাইছেন?
–মানেটা হয়তো বুঝবি কিন্তু সেদিন সেই সময় আর এই সময়ের তফাৎটা বিশাল আকার ধারণ করবে। কিন্তু একটা কথা কিন্তু সত্যি নদী, আমি কারও সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি না। আর আমার ভালোবাসাটাও মিথ্যে নয়। আমার ভালোবাসাকে তুই যেভাবে অপমান করলি তার দাম তোকে পেতে হবে নদী।
.
.
.
কথাগুলো বলে সাগর চোখ মুছে বিছানা থেকে উঠতে নিলে নদী সাগরের হাত চেপে ধরে। সাগর অবাক দৃষ্টিতে নদীর দিকে তাকায়। সাগর নদীকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো নদী আমার হাত চেপে ধরলি কেন? আমার হাতটা তুই ছাড়। আমি রুমে যাব।
–আগে আপনি বলুন স্যার আপনি ঐসব কি বললেন? আমি কি হারিয়ে ফেলব?
–তুই বুঝবি না।
–বলুন না স্যার?
–তোর খুব দামী জিনিস তুই হারিয়ে ফেলবি। যা চাইলেও তুই আর ফিরে পাবি না।
নদী সাগরের হাত ছেড়ে দিল। সাগর একটা শুকনো হাসি দিয়ে নদীর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই নদীর কাছে মনে হলো নদীর খুব কাছের কিছু নদীর কাছ থেকে খুব দূরে চলে যাচ্ছে।
নদী কান্না করতে করতে সাগরকে ডাক দিল
–স্যার একটু আমার রুমে থাকবেন।
সাগর পেছন ফিরে দেখল নদী কাঁদছে। সাগর ফিরে এসে নদীর কাছে এসে নদীকে বলল
–তোর আবার কি হলো? কাঁদছিস কেন এভাবে?
–স্যার আমার না আজকাল নিজেকে বড়ই একা একা লাগে। কই আগে তো এমন মনে হতো না। তাহলে এখন কেন এমন মনে হয়?
নদীর কথা শুনে সাগর মুচকি হাসল। সাগর মনে মনে বলল
–তোর মনে আমার জন্য কোনো ভালোবাসা আছে কিনা তা আমি জানি না৷ কিন্তু তোর যে আমার সাথে এতদিন সময় কাটিয়ে অভ্যাসে রূপান্তর হয়েছে তা আমি বুঝতে পারছি।
নদী আবারও সাগরকে জিজ্ঞেস করল
–কি হলো স্যার বলুন? আগে তো এমন মনে হতো না। তাহলে এখন কেন এমন মনে হয়? আমার এখন একা থাকতে খুব ভয় করে।
–তোর একা একা থাকতে ভয় করে কেন নদী? তুই না খুব সাহসী মেয়ে ছিলি? আমার সাথে একই ঘরে থেকে বুঝি অভ্যাস হয়ে গেছে?
সাগরের কথায় নদী কিছু বলল না। নদী ভাবতে লাগল। আসলে কি হচ্ছে কি নদীর সাথে৷ নদী নিজেও জানে না নদীর মন আসলে চায় টা কি।
নদী কিছুক্ষণ ভেবে সাগরকে বলল
–স্যার আমার অভ্যাস আপনি খারাপ করেছেন কেন? আমার আগের অভ্যাস আমাকে ফিরিয়ে দিন।
–সেটা আমি কি করে করব! পারব না আমি। আচ্ছা চল ছাঁদে যাবি?
সাগরের কথায় নদী কাঁপা কাঁপা গলায় সাগরকে বলল
–স্যার ছা ছাঁদে গেলে যদি আপনি আ আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেন ত তখন আমার কি হবে?
নদীর কথা শুনে সাগর হাসতে লাগল। তারপর সাগর নদীকে হঠাৎই কোলে তুলে নিল। নদী এটা দেখে ভয় পাওয়া কন্ঠে সাগরকে বলল
–স্যার আমাকে ছেড়ে দিন। আমি মরতে চাই না। আমি ছাঁদে যাব না।
সাগর দুষ্টুমি মেশানো কন্ঠে নদীকে বলল
–চল আমার সাথে। আজ তোকে ছাঁদ থেকে নিচে ফেলে দিয়ে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিব। আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিলি অথচ শাস্তি পাবি না তা কি করে হয়?
নদী চোখ বন্ধ করে সাগরের শার্ট খামচে ধরে বলল
–স্যার আমি মরতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই। আমাকে দয়া করে মেরে ফেলবেন না।
সাগর নদীর দিকে তাকিয়ে দেখল নদী চোখ বন্ধ করে আছে। নদীর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে নদী ভীষণ ভয় পেয়ে আছে। সাগর মুচকি হেসে নদীকে কোলে নিয়েই হাঁটতে লাগল ছাঁদের দিকে।
।
।
।
।
#চলবে…..