ভিলেনি ভালোবাসা পর্ব-০১

0
1909

#ভিলেনি ভালোবাসা
পার্ট ০১
লেখিকাঃ তিথি সরকার

কলেজে ঢুকেই ধাক্কা খেলাম এক সিনিয়র আপুর সাথে।আর উনিও তাল সামলাতে না পেরে পরে যান। উনি দাত কিটমিট করতে করতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মধ্যেই ওনার বন্ধুরা এসে ওনাকে টেনে তুললেন। আর ওনাদের মধ্যে একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেই আপু টি পড়ে গিয়েছিল তিনি উঠে আমাকে চড় মারতে নিলে সেই ছেলেটি এসে বাধা দেয় এবং ওনাকে ধমক দেয়।

এবার চলুন পরিচয় করিয়ে দেই সবার ব্যপারে। যেই আপুর সাথে ধাক্কা খেলাম তিনি হলেন নীলিমা আপু। আর যেই ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো তিনি হলেন আমার কাকাতো ভাই তিয়াশ চৌধুরী। বয়স 24 ভার্সিটি থার্ড ইয়ার। গায়ের রং শ্যামলার চেয়ে একটু ফর্সা। লম্বায় ৬ ফুট ২ ইন্চি।বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। নীলিমা আপুর সাথে ভাইয়ার বিয়ের কথা চলছে। নীলিমা আপু ভাইয়ার খালাতো বোন। আর আপু আমাকে একদমই দেখতে পারে না। ধরতে গেলে কলেজে তিয়াশ ভাইয়ার কথায় সব চলে। কারণ তার বাবা এই কলেজে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেন ডোনেট হিসাবে। আর তিয়াশ ভাইয়া কলেজেও টপার। আমি তুলি বয়স ১৯। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এর ছাত্রী। দেখতে সুন্দর। গায়ের রং হলুদ ফর্সা লম্বায় ৫ ফুট ৩ ইন্চি। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।
আগে কাকারা আর আমরা এক সাথেই থাকতাম বাবারা ৩ ভাই। কিন্তু ব্যবসায় আমার বাবার সাথে রাগারাগি হলে আলাদা হয়ে যাই আমরা। তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। আর তার পর থেকেই ভাইয়া আমার সাথে আর কথা বলে না। আমি জোর করে কথা বলতে গেলে অপমান করতো তাই আমিও এখন আর ভাইয়ার সাথে কথা বলি না। ভাইয়া খুবই রাগী সভাবের তবে আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমার সাথে কখনো রাগী ভাবে কথা বলেন নি। কিন্তু এখন আর আমাকে সহ্য করতে পারেন না।
গল্পে ফেরা যাক….

নীলিমা আপু আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। যেনো এখনি সুযোগ পেলে আমাকে কাচা চিবিয়ে খেলে ফেলে। ভাইয়া সবাইকে যেতে বললে আমিও আর না দাঁড়িয়ে ক্লাস যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াই। তখন তিয়াশ ভাইয়া আমাকে বলে উঠে খেয়ে এসেছিস। নাকি না খেয়েই চলে এসেছিস? দেরি করে এসেছিস তাই বললাম অন্য কিছু ভাবিস না আবার। আমি ছোট্ট করে না বলেই চলে আসলাম। আজকে আমাদের সেকেন্ড ইয়ার এর ফার্স্ট ক্লাস। এই কলেজে আমি নতুন। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার আমি যেই স্কুলে পড়েছি সেই কলেজেই পড়েছি।
ক্লাস শেষ হতে হতে দুপুর ৩ টা বেজে গেছে। ক্লাস থেকে বের হতে হতে দেখলাম সবাই মাঠে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের মধ্যে একজন কথা বলছে। যে কথা বলছে সে হলো আমার তুহিন ভাইয়া। আমার বড় কাকার বড় ছেলে। তুহিন ভাইয়ার একটি ছোট বোন আছে নাম মিলি। তুহিন ভাইয়াকে সকালে দেখতে পাই নি তাদের সাথে হয়তো কোনো কাজে বেস্ত ছিলো। তুহিন ভাইয়া আমাকে খুব আদর করে।
তুহিন ভাইয়া সবাইকে পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু বলছে। আমিও গিয়ে দাঁড়ালাম। সেখানে তিয়াশ ভাইয়া নেতার মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।আর পাশে নীলিমা আপুরাও ছিলো। কথা শেষ হওয়ার পর কলেজ থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হওয়ার পর শুনলাম কেউ আমাকে ডাকছে পিছন থেকে। তাকিয়ে দেখি তুহিন ভাইয়া।

তুহিন ভাইয়াঃ কিরে তুলি তুই আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছিস! ও না বললে তো জানতামই না তুই এই কলেজে ভর্তি হয়েছিস।

তুলিঃ কে বললো ভাইয়া আমার ব্যাপারে?

তুহিন ভাইয়াঃ ছাড়তো এসব চল কিছু খাবি।

তুলিঃ আমি খেয়ে এসেছি ভাইয়া। বাসায় গিয়ে আবার খাবো।

তুহিন ভাইয়াঃ আমি অতোকিছু জানি না তুই না খেলে আমার অবস্থা ও খারাপ করে ছাড়বে। চল বোন।

তুলিঃ কার কথা বলেছিস ভাইয়া? কে তোর অবস্থা খারাপ করবে?

তুহিন ভাইয়াঃ তোর এতো কিছু জেনে লাভ নেই চলতো আমার সাথে।
বলেই টেনে নিয়ে কেন্টিনে বসলো আর খাবার অর্ডার দিলো। তার সাথে সাথেই দেখলাম তিয়াশ ভাইয়ারাও চলে এসেছে এখানে। তারা তাদের মত আড্ডা দিচ্ছে। আর তুহিন ভাইয়াও ওদের সাথে তাল মিলাচ্ছে। খাবার খাওয়ার সময় দেখলাম তিয়াশ ভাইয়া আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি ওদিকে ধেয়ান না দিয়ে খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। কারণ না খেলে তুহিন ভাইয়া আমাকে বকবে। খাওয়া শেষ হলে তুহিন ভাইয়া আমাকে বাসায় পৌঁছে দিলো আর বললো কলেজে যেতে দেরি হলে ভাইয়াকে বলতে। তাহলে আমাকে এসে নিয়ে যাবে।

বাসায় ঢুকেই দেখলাম আম্মু সোফায় বসে টিভি দেখছে আর সবজি কাটছে। আমাকে দেখেই বলল হাত মুখ ধুয়ে আয় খেতে দিচ্ছি। আমি তখন বললাম কলেজে তুহিন ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল তখন ভাইয়া আমাকে খাইয়ে দিয়েছে তাই খিদে নেই। আম্মুও আর কিছু বললো না। আমি ঘরে এসে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম আমার ফোন নিয়ে। নেট অন করতেই দেখি প্রতিদিনের মতো আজও মেসেজ এসেছে একটি আইডি থেকে। প্রতিদিন বলতে রোজই আমাকে একটি ছেলে মেসেজ দেয়, যেদিন থেকে ফোন পেয়ে আইডি খুলেছি সেদিন থেকেই। আর অবাক করা বিষয় হলো সে আমার ব্যাপারে সব কিছুই জানে। এমনকি আমি কখন কোথায় যাই তাও জানে। আজ যেই মেসেজ টি দিলো তা হলো…কেশোবতি তুমি আজকে চুল খোলা রেখে কেনো কলেজে এসেছো? আর কখনো যেনো এমন না দেখি।
আসলে আজ দেরি হওয়ায় চুল না বেঁধেই চলে গিয়েছিলাম।
প্রথম প্রথম ছেলেটার ব্যাপারে জানতে চাইতাম কিন্তু কিছুই বলতো না তাই এর পর আর কখনো কিছু জিজ্ঞেস করিনি আর উত্তর ও দেই নি তার কথার। ব্লক করলে অন্য আইডি দিয়ে মেসেজ দেয় তাই এখন আর ব্লক ও দেই না।
তার এই মেসেজ টি পড়ে ফোন রেখে দিলাম। বিকাল হয়েছে তাই ছাদে গেলাম এক কাপ কফি নিয়ে। এই সময়ে ছাদে দোলনায় বসে কফি খেতে খেতে আকাশ দেখতে আমার খুব ভালোলাগে। হাতে করে ফোন নিয়ে এসেছিলাম পাশেই রাখা ছিলো। হঠাৎ আবার তার মেসেজ… ভিজে চুলে কেনো এসেছো ছাদে। ঘরে যাও আর চুল খোলা রেখো না।
মেসেজ টি পড়ে সাথে সাথে আমি ছাদের সব দিকে ভালো করে দেখলাম নিচেও দেখলাম কিন্তু কারো দেখা পেলাম না। তখনি আবার মেসেজ এলো.. খুঁজে লাভ নেই। সময় হলে নিজেই ধরা দেবো। ঘরে যাও।

আম্মুও ডাকছে তাই নিচে চলে এলাম। এসে টিভি দেখতে বসে পড়লাম আর আম্মু রহিমা চাচির সঙ্গে কাজ করছে। রহিমা চাচি আমাদের বাসায় কাজ করে। রাত্রে আব্বু বাসায় আসলে আমার কলেজে কেমন দিন কাটল জানতে চাইলে আমিও সব বললাম তারপর এক সাথে খেয়ে ঘরে এসে পড়ি। সকালে কলেজে যেতে হবে তাই ফোনে অ্যালার্ম সেট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।


চলবে….

#ভিলেনি ভালোবাসা
পার্টঃ ০২
লেখিকাঃ #তিথি সরকার

সকালে কলেজের জন্য রেডি হচ্ছে তুলি। সকালের নাস্তা করে তুলির আব্বু আর তুলি বের হয়ে গেলো বাসা থেকে।তুলির আব্বু অফিসে গেলো আর তুলি কলেজে। কলেজে ঢুকতেই তুলি শুনতে পেলো তুহিন আর তিয়াশ কিছু নিয়ে কথা বলছে তার মধ্যে একটি কথা তুলির কানে এলো যা তুহিন তিয়াশ বলছে। কথাটি হলো…তুই তোর কেশোবতি কে নিয়ে আর কত চিন্তা করবি এখন তো ও তোর চোখের সামনেই থাকবে।

তুলির ও সেই মেসেজের কথা মনে পরে যায় যেই মেসেজ টায় লিখা ছিলো (কেশোবতি চুল খোলা রেখে কলেজে কেনো এসেছো)। তার মানে তিয়াশ ভাইয়াই সেই ছেলেটা যে আমাকে প্রতিদিন ফলো করে আর মেসেজ পাঠায়। মনে মনে ভাবতে লাগলো তুলি।কথাগুলো ভাবতেই মনের মধ্যে আলাদা ভালো লাগা কাজ করছে। কারণ তিয়াশ তুলি ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে কিন্তু তিয়াশ সব সময় তুলিকে বকাঝকা করতো এই কথা বললে। তুলির ভাবনার মাঝেই নীলিমা তার বাকি সাঙ্গোপাঙ্গো নিয়ে হাজির তিয়াশের সামনে।

নীলিমা আপুঃ তিয়াশ তোমাকে কতোগুলো কল করেছি ধরনি কেনো? তোমাকে কল দিয়ে কখনই আমি পাই না।

তিয়াশঃ তোমার কল ধরার আমার কোনো ইচ্ছে নেই তাই ধরিনি। আর যার তার কল আমি রিসিভ ও করি না। নেহাত তুমি আমার খালার মেয়ে নয়তো কবেই ব্লক দিয়ে রাখতাম।

তিয়াশের কথায় তুলির মনটা খুশিতে আরো উৎফুল্ল হয়ে গেলো। তুহিন তুলিকে দেখে ডাক দিতেই তুলিও তাদের সামনে গেলো।

তুহিন ভাইয়াঃ কিরে ঠিকঠাক ভাবে এসেছিস তো?

তুলিঃ হ্যাঁ ভাইয়া।

তখনি আবার নীলিমা তুলিকে দেখানোর জন্য তিয়াশের হাত ধরে বললো তিয়াশ চলো না আজকে কোথাও ঘুরতে যাই। তিয়াশ হাত ছাড়িয়ে ধমক দিলে আবার বলে উঠে চলো না তিয়াশ। তুলিও তখন বলে উঠে ভাইয়া যখন যেতে চাইছে না বেহায়া মেয়েদের মতো জোর করছো কেনো নীলিমা আপু। তুলির কথায় তিয়াশ কিছু না বললেও নীলিমা তুলির গালে চড় বসিয়ে দিলো। তুলি তিয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে এই ভেবে যে ভাইয়া নিশ্চই এর প্রতিবাদ করবে যেমন টা আগে করতো। আমাকে কেউ সামান্য বকা দিলেও ভাইয়া তার খবর করে ছারতো। কিন্তু অনেকক্ষণ হওয়ার পরেও দেখলো তিয়াশ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে যেনো কিছুই ঘটেনি এখানে। তিয়াশকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুহিন বলে উঠলো নীলিমা তুমি তুলির গায়ে হাত তুললে কোনো। ও যা সত্যি তাই ই তো বলেছে। তুমি তিয়াশ কে জোর কোনো করছিলে যখন যাইতে চাইছে না তোমার সাথে।

নীলিমা আপুঃ যেখানে তিয়াশ নিজেই কিছু বলছে না সেখানে ও আমাকে বেহায়া কোনো বললো। থার্ড ক্লাস মেয়ে একটা।

তুহিনঃ তিয়াশ কিছু বল। ও তুলির গায়ে হাত তুলেছে।

তিয়াশঃ আমি কি বলবো। আমি আমার জন্য কাউকে কিছু বলতে বলেছি? যে যেমন করবে সে তেমনি ফল পাবে এতে আমার কিছু করার নেই তুহিন।

কথাটি বলে ভাইয়া আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়ালো না সোজা কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো। নীলিমা আপুও বাঁকা হাসি দিয়ে চলে গেলো। আর যাওয়ার সময় বলে গেলো তিয়াশ এখন আর তোমার আগের তিয়াশ ভাইয়া নেই। যে তোমার একটু কষ্ট হলেই পৃথিবী এক করে ফেলবে। তুহিন তুলিকে বুঝিয়ে ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো। তুলি মনে মনে ভাবতে লাগলো আসলেই ভাইয়া বদলে গেছে এই চার বছরে। যখন ওই বাড়ি ছেড়ে আমরা চলে আসি তখন ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে ছিল কান্না করার ফলে। এর পর আর ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি। আচ্ছা কথা না হলেই কি ভালোবাসা কমে যায়? হয়তো ভাইয়া সত্যিই আমাকে আর ভালোবাসে না। সকালে তুহিন ভাইয়া যে ভাইয়াকে কেশোবতির ব্যাপারে বললো তা কি ছিলো তাহলে। আমাকে তো ফেসবুকের ওই ছেলেটাও কেশোবতি বলে ডাকে। তাহলে কি সেই ছেলে আর তুহিন ভাইয়া একই ছেলে না। তারা আলাদা। শুধু শুধুই মনের অজানতে খুশি হয়ে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে সত্যি সত্যিই তিয়াশ ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। তুলি এসব ভাবতে ভাবতেই ক্লাসে স্যার চলে এলেন।



কিরে তিয়াশ তুই নীলিমা কে কিছু বললি না কেনো? আমি তোকে যতদূর চিনি যে তোর তুলির গায়ে একটা আচর ও দেয় তাকে তুই ছাড়িস না। তাহলে আজ কেনো চুপ ছিলি?

তিয়াশঃআজকে আমার মায়াবতী আমার প্রতি জোর দেখিয়েছে আমি তখন এতোটাই খুশি হয়েছিলাম যে আমি কিছু বলার ভাষাই পাই নি। কিন্তু চিন্তা করিস না তুহিন নীলিমার কর্মের ফল নীলিমা খুব বাজে ভাবে পাবে।

তুহিন ভাইয়াঃতুই তুলির সামনে নীলিমাকে কিছু বললি না কেনো? তাহলে মেয়েটা এতো কষ্ট পেতো না তিয়াশ।

তিয়াশঃ না এখন আমি যদি দেখাই আমি ওর প্রতি দুর্বল তাহলে ওর পড়া লেখায় ব্যাঘাত ঘটবে যা আমি চাই না। ছোটো কাকা আমাকে কথা দিয়েছে ওর পড়া লেখা শেষ হলে ওর সাথে আমার বিয়ে দিবে।

তুহিনঃ যদি তেমন টা না হয় তিয়াশ? আর তাছাড়া তোর মা ও তো ওকে পছন্দ করে না। তোদের বিয়ে কি মেজো কাকি মেনে নেবে?

তিয়াশঃ মেনে কিভাবে নেওয়াতে হয় তা তিয়াশ ভালো ভাবেই জানে। জাগ্গে ছাড় এসব কথা এখন ভাব আমার মহারানীর রাগ কিভাবে ভাঙাবো।

তুহিনঃ সে তোদের ব্যাপার ভাই। ছোটবেলা থেকেই দেখছি তোদের এসব নেকামো। নেহাত তোদের দুটো কেই ভালোবাসি তাই কিছু বলি না নাহলে দুটোকেই আচ্ছামতো ধোলাই দিতাম।

তিয়াশঃ হা হা হা.. হে এখন সব দোষ আমাদের। চল কলেজে যাই দেখি আবার কোন গণ্ডগোল পাকায় মহারানী।



কলেজে আর এক পিরিয়ড ক্লাস আছে কিন্তু স্যার আসবে না। তাই তুলিরা সবাই বের হয়ে গেলোক্লাস থেকে। ক্লাস থেকে বের হতেই তুলি দেখলো একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তুলিকে বের হতে দেখেই সামনে এসে দাঁড়ায়। আর হাত বাড়িয়ে বলে হ্যালো আমি নীরব। তুলিও ভদ্রতার খাতিরে নিজের নাম বলে তবে হাত মিলায় নি। নীরব এই কলেজেই পড়তো। ওর সাথে ওর আরো বন্ধু আছে তাদের সাথেও পরিচিত হলো তুলি। ওর সাথে কথা বলে যা বুঝতে পারলো ছেলেটি খুব মিশুক। নীরবের সাথে কথা বলতে বলতেই শিড়ি দিয়ে নিচে নামলো তুলি। নিচে নামতেই দেখে তিয়াশ তুলির দিকে রাগী চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তুলি সেই দিকে পরোয়া না করে নীরবের সাথে কথা বলতে বলতে রাস্তায় চলে এলো। তখনই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো একা একা কেনো যাচ্ছো জান। আমি তোমার জন্যে সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।

পিছনে তাকাতেই তুলি দেখলো তিয়াশ। হটাৎ করে তিয়াশ তুলির সামনে এসে তুলির হাত ধরে বললো একা একা কেনো বের হয়েছো কলেজ থেকে?তোমাকে না বলেছিলাম আমার দাঁড়াতে? ধমক দিয়ে কথা টা বললো তিয়াশ। তুলি বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে যেনো তিয়াশ কি বলছে তার কিছুই তুলির মাথায় ঢুকছে না। কলেজের বাইরে যেই কয়জন ছিল সবাই তাকিয়ে ছিলো ওদের দিকে কারণ তিয়াশ কোনো মেয়ের হাত ধরা তো দূরে থাক কথা পর্যন্ত বলে না। আর কেউ সাহস করেও বেশি কথা বলতে আসে না কারণ তিয়াশের অনেক রাগ আর রাজনীতি করে তাই। বড়রাও ওর সাথে ঝামেলায় জড়ায় না ভয়ে।
তিয়াশকে নীরব দেখতে পেয়েই সালাম দিলো আর বললো ভাই কেমন আছেন?

তিয়াশঃ ভালো আছি। এটুকু বলেই তুলির হাত ধরে হাঁটতে লাগলো তিয়াশ।
তুলির ভাবনার জগত ভাঙলে বলে উঠে একি আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? হাত ছাড়ুয়ে আমার। লোকে কি বলবে।

তিয়াশঃ লোকে কি বলবে লোকে এই ই বলবে যে একটি বাজে মেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সাথে কথা বলছিলো তাকে আমি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি যাতে কলেজের সামনে রাস্তায় কোনো খারাপ দৃশ্য তৈরি না হয়। রাগী ভাবে বললো তিয়াশ।

তুলিঃ কি বলছেন এইসব। আর সবাই ই তো দাঁড়িয়ে কথা বলে আমি বললে দোষ কি? আর সবাই তো কথা বলছে তাদের কিছু না বলে আমাকে কেনো এসব বলছেন।

তিয়াশঃ যে যা খুশি করুক তুই করবি না।

তুলিঃ কেনো আমি করলে প্রবলেম কি?

তিয়াশঃ অতকিছু বলতে আমি বাধ্য নই। যা বলেছি তা শুন নয়তো তোর জন্য খুব খারাপ হয়ে যাবে। এই কথা বলে রিকশা ডেকে তুলিকে তুলে দিলো।আর রিকশা ওয়ালা মামাকে বললো সাবধানে নিয়ে যেতে।রিকশার ভাড়া দিয়ে দিলো লোকটাকে আর তুলিকে বললো সোজা বাসায় যেতে অন্য কোথাও না নামতে রাস্তায়। তুলিও রিকশায় উঠে বাসায় চলে এলো।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলো তুলি। তারপর ঘুমিয়ে গেলো।


এদিকে তিয়াশ কলেজে ঢুকেই তুহিন কে বললো তুলির সাথে যেই ছেলে কথা বলেছে তার ব্যপারে সব খবর নিয়ে তিয়াশ কে জানাতে। তুহিন ও বাধ্য ছেলের মতো ওর সাথের আরো একটা ছেলে আবির কে নিয়ে নীরবের ব্যপারে সব খবর নিতে চলে গেলো। আর তিয়াশ চলে গেলো কোনো একটা রাজনৈতিক কাজে।
তিয়াশ তার দলের ছেলেদের সাথে কথা বলছিলো তখনি তুহিনের কল দেখে রিসিভ করে প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে আর একটি বাঁকা হাসি দিয়ে কল কেটে দেয় আর আবারো দলের লোকেদের সাথে কথায় বেস্ত হয়ে পরে।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে