#ভালো লাগে ভালোবাসতে
#পর্ব-৭
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি
সকালে আমার ঘুম ভাঙলো খুব বেলা করে।বলা বাহুল্য গতকাল রাতে খুব মজা করেছি।আমাদের ফিরে আসা হয়েছে অনেক রাতে।শরীরটা এখন অসাঢ় হয়ে এসেছে।বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে খুব কষ্ট করে বিয়ে বাড়িতে এক কাপ কফি জোগাড় করলাম।ঘাড়ে এক হাত রেখে আড়মোড়া ভেঙ্গে একটি চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।মাথাটা ঝিম মেরে রয়েছে।
আমার পাশে একটি চেয়ার টেনে সাফা বসে পড়লো।ফোন আমার মুখের সামনে ধরে বলল,’সুপ্তি দেখ দেখ,কালকের হলুদের অনুষ্ঠানে খুব সুন্দর পিক উঠেছে।’
আমি বিরক্তি নিয়ে ওর হাত ঠেলে সরিয়ে দিলাম।আর বললাম,’সকাল সকাল কি শুরু করলি?’
-‘আরে ভালো ভালো ছবিগুলো বেছে রাখতে হবে না।ফেসবুকে আপলোড করবো তো।’
আমি কফির কাপে একটা চুমুক দিতে না দিতেই সাফা আবারো ফোনটা এনে বলল,’দেখ তোর আর নিদ্র ভাইয়ার ছবি।’
আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই আমাদের দুজনের একসাথে একটি ছবি।আমি সামনে মুখ করে মুখের সামনে হালকা হাত এনে খিল খিল করে হেসে আছি আর নিদ্র ভাইয়া একটু পাশ থেকে তার ঘন কালো ভ্রু অদ্ভুত ভাবে কুঁচকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঠিক তখনই হয়তো কেউ ছবিটা তুলে নিয়েছে।
ছবিটা দেখতে অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে।
সাফা ওর কাঁধ দিয়ে আমাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,’সুন্দর হয়েছে না?ফেসবুকে ছেড়ে দেই কি বলস?’
আমি ফোন থেকে চোখ তুলে ওর দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাত টেনে ওর গালে একটা চড় মারলাম।
আর বললাম,’হুম ফেসবুকে ছেড়ে দেই!যাতে সবাই জেনে যায় আমাদের ব্যাপারে?’
সাফা এতক্ষণ মুখ ফুলিয়ে ছিল।আমার কথা শুনে চোখ কপালে তুলে বলল,’তোদের ব্যাপারে কি জানবে?তোদের ভেতর হয়েছে কি?’
নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে যাওয়াতে আমার হেচকি উঠে গেল।কি বলব না বলব ভাবতে ভাবতে তোতলিয়ে বলে দিলাম,’আমরা দুজন যে এক হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়েছি এটা জেনে যাবে না!’
-‘এটা জানলেই কি?’
-‘ঘোড়ার আন্ডা!তুই তো দেখি আমাকে পুলিশের মত জেরা করা শুরু করলি।’
কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম।
কখন কি বলে ফেলি তার ঠিক নেই।কিছুতেই কাউকে জানতে দেয়া যাবে না।
একটা কথা আছে না,আগে গেলে বাঘে খায়।আমরাও তেমনি সবার আগে এসে বসেও সবার পিছনে এসে পড়েছি।প্রথম সিট থেকে উঠতে উঠতে আমরা বাসের পুরো শেষের সিটে গিয়ে পৌঁছালাম।মুরুব্বিদের জন্য সিট ছাড়তে ছাড়তে আমাদের এই দশা।সাফার বাবা সারাজীবন ব্যাংক ম্যানেজার হয়ে থাকলেও প্রচুর কিপ্টা।বিয়েতে কোনো গাড়ি রিজার্ভ করেনি।একটি বড় বাস ভাড়া করেছে মেয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য।আঙ্কেলের মতে যাওয়াটাই বড় ব্যাপার,কি দিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা না।
বাসের সবথেকে পিছনের সিটে আমি,সাফা,সোমা আপু গাদাগাদি করে বসে আছি।সাফা তো পারলে কেঁদেই ফেলে।গরমে বাসে ওর সব মেকাপ না উঠে যায় সেই চিন্তায়।কিন্তু বেচারা কাঁদতেও পারছে না।প্রথমত,চোখের কাজল লেপ্টে যাবে আর দ্বিতীয়ত আমাদের দুই সিট সামনেই আঙ্কেল বসেছে।
দ্বিতীয় কারণটার জন্য বেশি বিরক্ত হচ্ছে ছেলেরা।আমরা মেয়েরা সব পেছনে বসেছি বলে ছেলেরাও সব পেছনের দিকেই বসেছে কিন্তু তার মাঝে আবার আঙ্কেল এসে বসেছে সাজেদ ভাইয়ার পাশে।এর জন্য ছেলেরা কোনো মজাই করতে পারছে না।সাজেদ ভাইও মুখ ভার করে বসে আছে।আঙ্কেলের মন মেজাজও ভীষণ খারাপ।যে পরিমাণ লোক হওয়ার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে।অনেক বয়স্করা আবার সাথে করে নাতি নাতনিও নিয়ে এসেছে।বাসে জায়গা হচ্ছে না।
ছেলেরা অসহায় মুখ করে বারবার এদিকওদিক দেখছে।আঙ্কেলের জন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে না পারায় সবথেকে বেশি বিরক্ত মামুন ভাই।একটু পরপরই সে মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করছে।তার হয়তো আজকে বিরক্ত হবারই দিন,সে কারণেই একটু পর এক বয়স্ক লোক কোমর ব্যাথার কথা বলে কিছুক্ষণের নাম করে তার কোলে একটি সাত আট বছরের বাচ্চা ছেলেকে বসিয়ে দিল।
বিরক্ত আমরাও কম হচ্ছি না।পেছনের সিটের সবার মাঝখানে বসেছি আমি।আমার বাম পাশে সোমা আপু আর ডান পাশে সাফা।সাফার পাশে আবার সব মেয়েদের ভেতর এসে বসেছে এক পান্জাবী পড়া দাড়ি গোঁফআলা বয়স্ক লোক।সেই চাচার মুখে আবার মুখ ভর্তি জর্দা দেওয়া পান।একটু পরপরই সে বাসের জানালা খুলে পানের পিক ফেলছে।জর্দার কড়া গন্ধে আমাদের সবার বমি আসার মত অবস্থা।সেই চাচা আবার পান চাবাচ্ছে আমাদের দিকে তাকিয়েই।
সাফা তো আমার দিকে মুখটা কাঁদো কাঁদো করেই রেখেছে।বেচারা ভুগছে যে সবথেকে বেশি।
বাস চলছে নিজস্ব গতিতেই।একসময় সবকিছু আমাদের সয়ে গেল।এখন আর অতো বিরক্ত লাগছে না।জীবনের প্রথম বাসে করে বরপক্ষ হয়ে বিয়েতে যেতে ভালোই লাগছে।
হঠাৎ করে মামুন ভাইয়ার সিট থেকে উৎকট গন্ধ নাকে ভেসে এলো।মামুন ভাই চরম বিরক্তি নিয়ে তার কোল থেকে ছোট ছেলেটিকে নামিয়ে নাক মুখ কুঁচকে বলল,’যাহ শালা এত সুন্দর বডি স্প্রে লাগিয়ে এসেছিলাম।আর এ পাদ দিয়ে সব দিল..!’
পুরো বাসে হাসির রোল পরে গেল।এই কর্মের জন্য দায়ী বাচ্চা ছেলেটি তার আগের সিটে গিয়ে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল।যেনো এই কাজ করতে পেরে সে গর্বিত।
আমরা নাকে আঁচল চেপে হাসতে লাগলাম।এভাবে একটু মজা একটু বিরক্ত একটু গল্পে জমে আমরা একসময় বিয়ে বাড়ি পৌঁছে গেলাম।
গায়ে হলুদ কমিউনিটি সেন্টারে হলেও বিয়ের আয়োজন বাড়িতেই করা হয়েছে।এসব আঙ্কেলের জন্যই।অবশ্য আঙ্কেল ঠিকই বলেছে,নিজ বাড়ির উঠোনে বিয়ের অনুষ্ঠানে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা কমিউনিটি সেন্টারে কোথায়!
সেখানে তো সব শুধু পটের বিবি সেজে বসে বসে ছবি তোলো।বিয়ের কাজে হাত না দিলে কি বিয়ের মজা উপভোগ করা যায়?
তামিম ভাইয়াদের বাড়ি ঢাকার শেষ প্রান্তে হওয়ায়
তাদের বাড়ির চারপাশে কিছুটা হলেও খোলা জায়গা আছে।সেখানেই প্যান্ডেল খাটিয়ে সব আয়োজন করা হয়েছে।
আজ আমরা মেয়েরা সবাই একরকম মিষ্টি রঙের শাড়ি পড়েছি।আমরা বাস থেকে নেমে বিয়ের জন্য বানানো রঙবেরঙের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সাজেদ ভাইয়ায় শালীরা এসে ফিতা দিয়ে গেট আটকে রাখল।আগে টাকা তারপর ভেতরে ঢোকা।
অনেকক্ষণ দরকষাকষি চলার পর অবশেষে আমরা ভেতরে ঢুকতে পারলাম।ভেতরে ঢুকতেই গতকালের মত চোখে পড়ল নিদ্র ভাই আর তাদের গ্রুপের উপর।নিদ্র ভাইরা আজ সবাই হালকা আকাশী রঙের শেরোয়ানী টাইপ ড্রেস পড়েছে।আমাদের মত তারাও কি সব পরিকল্পনা করে একরঙের জামা পড়ল নাকি।
আমরা তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমি একটু মজা করে ভাব নিয়ে বললাম,’এখানে আমরা কারো জুনিয়র না,আমরা ছেলেপক্ষ।তাই আমাদের যেনো ভালোভাবে আপ্যায়ন করা হয়।’
নিদ্র ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,’অবশ্যই।কিরে তামিম বিয়াইনদের কি কষ্ট করে হাঁটিয়ে নিব নাকি!আমরা আছি কি করতে!ধর।’
এই বলে নিদ্র ভাই আর তার বন্ধুরা সত্যি সত্যিই হাত বাড়িয়ে কাছে আসতে নিল কোলে নিতে।
আমরা এক ছিটকে সরে এসে দিলাম দৌড়।
বিয়ে বাড়িতে আমার নিদ্র ভাইকে ভাইয়া বলে ডাকায় আরো কয়েকজন আমাদের ভাই বোন ভাবল।নিদ্র ভাই তো কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল আমি ঢোক গিলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।
বিয়ের কাজ শেষ হলে সাজেদ ভাইয়াকে দিয়া ভাবীর পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো।এটাই তো সবথেকে মজার সময়।তাদের হাতে ধরিয়ে দিল ফুলের মালা।কেউ কাউকে মালা পড়াতে দিচ্ছে না।এপাশ থেকে একদল আবার ওপাশ থেকে একদল ধরে টানাটানি করছে।অবশেষে সব হাঁপিয়ে উঠলে মালা পড়ানো হলো।তাদের মালা পড়ানো দেখে আমার মনে পরে গেল সেই দৃশ্য,কিভাবে নিদ্র ভাইয়া আমার হাত থেকে ফট মালা পড়ে নিয়ে তৎক্ষণাৎ আমাকে পড়িয়ে দিয়েছিল।আমি তো অবাক চোখে হা হয়ে ছিলাম আর সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শয়তানি হাসি দিচ্ছিল।
তার দিকে চোখ পড়তে দেখলাম এখনো আমার দিকে তাকিয়ে সেভাবে শয়তানি হাসি দিচ্ছে।
সে কি বুঝতে পারছে আমি ঐ ঘটনা মনে করছি।
আমি অন্য দিকে তাকিয়ে একটা মুখ ভেংচি দিলাম।
বর কনেকে এখন আয়না দেখানো হবে।খুব সুন্দর কারুকার্য খচিত গোল আয়নায় তাদেরকে একত্রে দুজন দুজনের চেহারা দেখানো হলো।ব্যাপারটা আমার কাছে দারুণ রোমান্টিক লাগে।
আমি যখন সত্যি সত্যি বিয়ে করব তখন আমিও সব থেকে সুন্দর আয়নার আমার ভালোবাসার মানুষের মুখ দেখব আর সে দেখবে আমার মুখ।
তাদের আয়না দেখানো শেষ হলে আয়নাটা আমার হাতে দিয়ে বলা হল সাইড টেবিলে রেখে দিতে।আমি রাখতে যাচ্ছিলাম,হঠাৎ করে আয়নাটা আমার হাত থেকে ফসকে পড়ে যেতে নিল।কিন্তু তার আগেই নিদ্র ভাইয়া কোথা থেকে এসে আয়নার তল পিঠে হাত রেখে ধরে ফেলল।আয়নাটি এখন আমার আর তার দুজনের হাতেই আছে।আর সেখানে স্পষ্ট হয়ে আছে আমাদের দুজনের চেহারা।ব্যাপারটায় আমি হকচকিয়ে গেলাম।আয়না থেকে মুখ তুলে তার দিকে একপলক তাকিয়ে আয়না তার হাতে ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।
পথে মামুন ভাইয়ার সাথে ধাক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেলাম।সে আমাকে দেখেই দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল,’সুপ্তি চলো একটা সেলফি তুলি।’
আমি বিরক্তি লুকিয়ে বললাম,’মামুন ভাই আপনি একাই তুলুন আমার ভালো লাগছে না।’
কিন্তু সে প্যান প্যান করতেই থাকল।ফোন উপরে তুলে আমাকে ইনসিস্ট করতে লাগল।এর মাঝে হঠাৎ নিদ্র ভাই এসে ইচ্ছে করে তার সাথে ধাক্কা লাগিয়ে তার হাত থেকে ফোন ফেলে দিল।মামুন ভাই হায় হায় করতে করতে তার ফোন উঠাতে ব্যস্ত আর এদিকে নিদ্র ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বলল,’তোমার কাজ টাজ নেই?শুধু ঘোরাফেরা কর,যাও এখান থেকে!
আমি রাগে মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।সবসময় শুধু ধমক দেয় কেনো!
সাফার কাছে গিয়ে দেখলাম সাফা একটি টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে কোল্ড ড্রিংক পান করছে।আমি ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ও বলল,’সুপ্তি দেখ নিদ্র ভাইয়া কত ভালো,ঐ রাফি ভাইরা আমার হাতে কোল্ড ড্রিংকের নাম করে পানি ভরা বোতল ধরিয়ে দিয়েছিল।আমি তো চুমুক দিয়ে বোকা বনে গেলাম আর তারা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।তারপর নিদ্র ভাইয়া তাদেরকে থামিয়ে আমার জন্য কোল্ড ড্রিংক নিয়ে এলো।’
আমিও একটি কোল্ড ড্রিংকের বোতল হাতে নিয়ে বললাম,’তোর নিদ্র ভাই ছাই ভালো।সবসময় তো শুধু আমার পেছনেই লেগে থাকে তুই বুঝবি কিভাবে।’
-‘সর,নিদ্র ভাইয়া অবশ্যই ভালো।’
আমি কোল্ড ড্রিংকে একটা চুমুক দিয়ে বললাম,’আরেকবার যদি ভালো বলেছিস তাহলে এই ড্রিংক তোর মাথায় ঢেলে দিব।’
এর মধ্যে নিদ্র ভাইয়া এসে আমার হাত থেকে কোল্ড ড্রিংক নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলল,’হাই গার্লস,কি নিয়ে কথা বলছো?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,’আপনি আমারটা নিলেন কেনো?’
-‘ও,খুব তেষ্টা পেয়েছিল।এই নাও।’
আমি তার বাড়িয়ে দেওয়া বোতল না নিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললাম,’আমি কারো ঝুটা খাইনা।’
-‘একদিন খাবে।’
এই বলে সে মুচকি হেসে চলে গেল।এদিকে সাফাও দাঁত কেলিয়ে হাসছে।আমি ওঁকে ধমক দিয়ে বললাম,’তুই হাসিস কেনো?’
শাড়ি ছেড়ে নরমাল ড্রেসআপে ফ্রেশ হয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছি।
এদিকে সাফা পাশের সোফায় বসে বসে ব্লাশ করছে।আমি ওঁকে দেখে বললাম,’তোর আবার কি হয়েছে?’
আমার কথায় ও থতমত খেয়ে বলল,’কিছু না।’
তারপর আমার পাশে এসে বলল,’তোকে আর নিদ্র ভাইকে দেখলে না আমার খুব ভালো লাগে।আমার মনে হয় কি নিদ্র ভাই তোকে পছন্দ করে।’
আমি ঝারি দিয়ে বললাম,
-‘ছাই করে!ধমক ছাড়া তো কোনো কথাই বলে না।
আর সে অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে কিন্তু সেই মেয়েটি এখনো মানছে না।সে নিজে আমাকে বলেছে।’
-‘বাব্বাহ!তোর সাথে এতকিছু শেয়ার করে!ব্যাপার কি?’
-‘ব্যাপার তোর মাথা!যা এখান থেকে!
হঠাৎ ছাদ থেকে হাসাহাসির শব্দ কানে এলো।আমি আর সাফা দুজনেই অবাক হয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম।ছাদে গিয়ে দেখি নিদ্র ভাইয়া আর তাদের দল,সাজেদ ভাইয়ার বন্ধু আর কাজিনরাও আছে।সবাই এখন নরমাল গেট আপে আছে।আমাদের দেখে রাফি ভাই বলল,’আরে বেয়াইনরা যে!বসেন বসেন।’
আমরা তাদের থেকে একটু দূরত্বে চেয়ার টেনে বসলাম।
আমিই প্রথম বললাম,’আপনারা কখন এলেন?’
রাফি ভাই বলল,’আমরা তো দিয়ার সাথে এসেছি।কনের সাথে তার বাবার বাড়ির পক্ষ থেকে কিছু লোক আসার নিয়ম আছে না!’
-‘আপনারা এসেছেন টের পেলাম না তো?’
এতক্ষণে নিদ্র ভাইয়া মুখ খুলল।কিন্তু সে মুখ খুলেই আমাকে পঁচানোর জন্য।বলল,
-‘বাসের মধ্যে ভেড়ার মত বেহুঁশ হয়ে ঘুমিয়ে থাকলে টের পাবে কিভাবে!’
সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিল।মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে করে তার চুলগুলো গিয়ে খামছে ধরি।
তামিম ভাই উঠে গিয়ে নিচের থেকে কোল্ড ড্রিংক আনতে গেল।সোহেল ভাই বলে উঠল,’জামাই বউকে কি বাসর ঘরে ঢুকিয়ে ফেলেছে?’
সাফা বলল,’না,কেনো?’
-‘আরে গিয়ে কান পাততে হবে না!আমরা তো ফুল প্লান করে ফেলেছি।বিছানার নিচে পাপড় ভাজা রেখে দেওয়া হয়েছে।তারা গিয়ে বসলেই পাপড় ভাঙতে শুরু করবে।দুজনে হকচকিয়ে যাবে।তারপর করা হবে লোডশেডিং অপারেশন।একটু পরপর লাইট অন হবে অফ হবে।বেচারারা চমকাতে চমকাতেই শেষ হয়ে যাবে।’
আমরা তো থ মেরে রয়েছি তাদের কথা শুনে।
নিদ্র ভাইয়া বলে উঠল,’সোহেল,বেচারাদের এত জ্বালাস না।শেষমেষ কিন্তু বাসর না করতে পারলে তোদের সারাজীবন অভিশাপ দিয়ে যাবে।’
সোহেল ভাই বলল,’মামা তুমি আমাদের অভিশাপের ভয় দেখিয়ে কিছু করতে পারবে না।
তোর বাসর ঘরে তো আমরা সারারাত জ্বালামু।’
-‘আচ্ছা!এই নিদ্র করতে দিলে তো!’
ইশ কি কথার ছিরি!আমি সাফাকে চোখ ঘুরিয়ে দেখালাম ‘দেখ তোর ভালো ভাইয়ার গুণ।’
বর কনেকে বাসর ঘরে নেওয়া হয়েছে শুনে সবাই উঠে চলে গেল।বাকি রইলাম আমি,সাফা,তামিম ভাই আর নিদ্র ভাই।হঠাৎ তামিম ভাই বলে উঠল সে বাথরুমে যাবে।আর সাফাও লাফ দিয়ে বলে উঠল সে দেখিয়ে দিতে যাবে।আমি সাফাকে ফিসফিস করে বললাম,’তোর যাওয়ার কি দরকার।?’
কিন্তু ও একটু আসছি একটু আসছি বলে চলে গেল।আমিও ওর পিছু পিছু যাওয়া ধরলে নিদ্র ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে বলল,’কি করছো?দুজনের নতুন নতুন প্রেম শুরু হয়েছে,একটু একলা সময় দাও।’
আমি চরম অবাক হয়ে বললাম,’প্রেম শুরু হয়েছে মানে!কবে থেকে?’
-‘দুজনের মনে মনে তো আগের থেকেই ছিল,এপ্রুভাল আজকে পেল।’
-‘তারা দুজন তো শুধু লেগেই থাকে।প্রেম ছিল কিভাবে?’
-‘ঐ লেগে থাকার ভেতরেই তো প্রেম।’
আমি আরো অবাক হয়ে বললাম,’এত কিছু হয়ে গেল আর আমি বুঝালাম না কিভাবে?’
সে একটু পিছনে সরে গিয়ে এক হাতে কোল্ড ড্রিংক ধরে আরেক হাত পকেটে ঢুকিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
-‘তার জন্য না ঘিলু লাগে।’
আমি মুখ ফুলিয়ে রইলাম।সে আবার আমাকে পচাঁনো শুরু করছে!
চলবে,,