ভালোবাসি_শুধু_তোমায় পর্ব-০৮

0
2580

#ভালোবাসি_শুধু_তোমায় ?❤
#পর্ব : ৮
#লেখিকা : Aye Sha (Koyel Banerjee)

” নিজের ভুলে কয়েক বছর আগে জিজু কে হারিযেছিলি তুই মীরা। আজ এতদিনে সব ঠিক হচ্ছিলো আর তুই এভাবে দুরে সরিয়ে সবটা এলোমেলো করে দিলি? হাউ কুড ইউ ডু দ্যাট?”

সুমি প্রচন্ড রেগে আমাকে কথাগুলো বললো, আমি কি বলবো বুঝতেই পারছি না। নিজের কান্নার জন্য কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। তাও বললাম,

— আ..আমি ই..ইচ্ছে করে ক..করিনি। আমি ব..বু..বুঝতে পারিনি ও..ওটা আ..আমান ছিলো।

— তাই বলে তুই…

সুমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো এদিকে আমি তো কেঁদেই চলেছি। আমার চোখের পানি বান্ধ ভেঙেছে আজ। একই ভুল বার বার করে ফেলছি আমি। সুমি নিজেকে স্বাভাবিক করে আমাকে বললো,

— তুই ওয়েট কর। আমি খোঁজ করছি জিজুর।

সুমি চলে গেলো কথাটা বলে। আমান সেই সকালে বেরিয়ে গেছেন এখনও ফেরেননি। ১২ ঘন্টার উপরে হয়ে গেছে মানুষটা কোথায় আমি জানি না। আজ নিজেকে সত্যি বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। আজ আবারও আমি ওনাকে হারিয়ে ফেললাম কথাটা ভাবতেই বুক ফেটে কান্না আসছে, চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। ৪ বছর আগে আমার ভুলে আমান কে বদনাম নিয়ে ভার্সিটি ছাড়তে হয়েছিল। হারিয়ে ফেলে বুঝেছিলাম আমি ওনাকে কতটা ভালোবাসি আর আজ? আজ ভালোবাসা পেতে গিয়ে হারিয়ে ফেললাম।

__অতীত__

আজ ভার্সিটি তে এসে ভীষণ বোর লাগছে কারণ সুমি আসেনি আর আমার অন্য বান্ধবীরা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে ক্লাস অফ থাকায়। আমিই একা যার কি না কোনো বয় ফ্রেন্ড নেই। ধুর! ভালো লাগে না। হঠাৎই আমার একটা কথা মাথায় এলো,

— কে বলেছে আমার বয়ফ্রেন্ড নেই? আছে তো! মিস্টার আমান খান। হিহিহি! কিন্তু উনি কোথায়? অন্য সময় তো সারাক্ষন আমার পিছে পিছে ঘোরেন আর আজ ওনার পাত্তাই নেই!? অন্য কোনো মেয়েকে পটিয়ে নিলো না তো? বেটা বদ! মেরে মেয়ে পটানোর ভুত মাথা থেকে নামিয়ে দেবো ওনার। কিন্তু কি করে খোঁজ পাই ওনার? আমার কাছে তো ওনার নাম্বার নেই।

হতাশ হয়ে গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম আর আমার চোখ এদিক ওদিক আমান কে খুঁজে বেড়াতে লাগলো। তার দেখা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফোন দেখতে শুরু করলাম। ফোন দেখতে দেখতে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এলো হোয়াটসঅ্যাপে। আমি ওপেন করতেই আমার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো, মাথায় রক্ত উঠে গেলো। কারণ কিছু ছবি এসেছিলো আমার কাছে যা আমানের। শুধু আমানের না আমান আর আমানের প্রেমিকার।

— তার মানে আমিই ঠিক! আমার টাকার জন্যেই এতোদিন আমার পিছনে পরে ছিলেন মিস্টার আমান খান? এটা আপনি ঠিক করলেন না। মীরা চৌধুরির মন নিয়ে খেলে, তাকে ঠকিয়ে অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছেন আপনি। এই একটা ভুল আপনার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল হবে।

আমি কথাগুলো নিজেকে বলে চোখ মুছতেই একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এলো, হ্যালো বলতেই বললো,

— আমান কে হাতে নাতে ধরতে চাইলে ভার্সিটির পিছনে যে ফাঁকা পার্ক আছে ওখানে চলে আসুন।

কথাটা বলেই লোকটি কল কেটে দিলো, আমি কিছু বলতেও পারলাম না। আমার মাথায় রাগ এতটাই পেয়ে বসেছিল যে আমি লোকটার কথা মতো আমাদের ভার্সিটির পিছনের পার্কে চকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম পুরো পার্ক ফাঁকা! আমি একটু এগিয়ে যেতেই কেউ পিছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরলো, ব্যাস! তারপর আর কিছুই মনে নেই।

আমি আস্তে আস্তে যখন চোখ খুললাম তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা ঘরে। উঠে বসে মাথায় হাত দিয়ে মনে করতে লাগলাম আগের ঘটনা। মনে পরে গেলো আমি তো পার্কে ছিলাম। ভালোভাবে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এটা আমাদের ক্লাসরুম আর আমি বেঞ্চের উপর বসা। নিজের দিকে তাকাতেই আমি আতঙ্কিত হয়ে গেলাম,

— আ..আমার ওড়না? আমার ওড়না কোথায়? ত..তা..তাহলে কি আমার এই অবস্থা আ..আমান! নাআআআআ!!

আমার চিৎকার শুনে ঘরে আমান ছুটে এলেন, আমান কে দেখে আমার মাথা জানো আরো বেশি গরম হয়ে গেলো। নিচে পরে থাকা ওড়নাটা তুলে শরীরে জড়িয়ে চিৎকার করে আমান কে বললাম,

— ছিঃ আমান! আপনি এতটা নিচ! আপনি কি করে আমার এত বড় সর্বনাশ করতে পারলেন? শুধুমাত্র আপনাকে রিজেক্ট করেছিলাম দেখে?

— তুমি ভুল করছো মীরা। কোনোভাবে হয়তো তোমাকে এখানে আনার পর তোমার ওড়নাটা নিচে পরে গেছে। আমি এসবের কিছুই জানতাম না।

— একদম মিথ্যে বলবেন না। আপনি একটা দুশ্চরিত্র লোক!

— মীরাআআআআ!

আমানের চিৎকার শুনে আমি উল্টো চিৎকার করে বললাম,

— একদম চিৎকার করবেন না। ভুল করে গলা বাজি করছেন? আপনাকে আপনার কাজের শাস্তি পেতেই হবে।

আমাদের চেঁচামেচি শুনে ভার্সিটির প্রায় অনেক স্টুডেন্ট ভিতরে চলে এলো স্টুডেন্ট স্যার ম্যাডামরা চলে এলো স্যার ম্যাডামরা আমাকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে আমার কাছে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে মীরা তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন?

আমি সঙ্গে সঙ্গে আমান কে ইশারা করে উত্তর দিলাম,

— এই লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করে আমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে কলেজের এই কমনরুমে।

আমার কথা শুনে স্যার ম্যাডামরা আমানের দিকে তাকিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলেন,

— এসব আমি কি শুনছি আমার মীরা এসব কি বলছে তুমি মীরার থেকে তিন বছরের সিনিয়র হয়ে এমন টা কি করে করতে পারো?

— স্যার, স্যার আমার কথাটা একবার শুনুন আমি এরকম কিছুই করিনি।

— কি বলবেন টা কি হ্যাঁ আপনি? কি বলবেন? কী বলার আছে আপনার? এখন বানিয়ে কি বানিয়ে মিথ্যা কথা বলবেন? পার্ক থেকে আপনি আমাকে পিছন থেকে অজ্ঞান করে এই রুমে নিয়ে এসে আমার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আমার সন্মান নষ্ট করতে চেয়েছেন। আমি মোটেও আপনাকে এরকম ভাবিনি।

আমার কথা শুনে স্যার আমানকে বললেন,

— আমান তোমার থেকে আমরা এসব কিছুতেই আশা করতে পারি না। তুমি একজন ভাল স্টুডেন্ট এর সাথে সাথে ভালো ব্যবহারের মানুষ ছিলে অন্তত আমরা তো তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন তো আমরা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হলাম। একটা মেয়ের এহেনো অভিযোগ আমরা কিছুতেই অবহেলা করতে পারিনা। তুমি আর একটা কথা না বাড়িয়ে এখনই প্রিন্সিপালের রুমে আসবে, তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে রাস্টিকেট করা হবে।

আমান আর একটা কথা বললেন না। স্যার ম্যাডামরা আমাকে নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে এগোলেন। প্রিন্সিপালের রুমের আসতেই প্রিন্সিপাল আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমার এমন অবস্থা কি করে হলো। আমি পার্কে যাওয়ার পর থেকে সব ঘটনা বলতে শুরু করলাম। কিভাবে আমি অজ্ঞান হয়ে ছিলাম আর তারপর নিজেকে ক্লাসরুমে আবিষ্কার করে কি অবস্থায় পেয়েছি। সবটা শুনে উনি আমানকে ডেকে পাঠালেন। আমার নাচতেই উনি আমানকে কোনো রকম কোনো প্রশ্ন করলেন না কারণ উনি জানে আমি কার মেয়ে তাই আমার কথা উনি ফেলতে পারবেন না। প্রিন্সিপাল স্যার আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন

— মীরা তুমি আমানের নামে কি এলিগেশন আনছো?

এই কথাটা শুনতে চোখ বন্ধ করতেই আমার মনে পড়ে গেল সেই ছবিগুলোর কথা যেখানে আমান একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে আমি ঝট করে চোখ খুলে বলে ফেললাম,

— দুশ্চরিত্র! আমার সম্মানহানির চেষ্টা করেছে। আমি উনার প্রপোসাল একসেপ্ট করিনি, বারংবার ওনাকে রিজেক্ট করেছি তার প্রতিশোধ উনি আমার সম্মান নিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি ওনাকে কোনদিনও ক্ষমা করব না। আমি বাদে উনার অনেকগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে।

আমার কথা শুনে প্রিন্সিপাল স্যার মাথা নিচু করে নিলেন কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলেন আমাদের দিকে তাকিয়ে,

— আজ থেকে মিস্টার আমান খান তোমাকে এই ভার্সিটি থেকে রাসটিকেট করা হলো। আর আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে তুমি এই এলাকার কোন ভার্সিটিতে চান্স না পাও। মেয়েদের সাথে এরকম কাজ করার আগে এরপর থেকে তুমি হাজার বার ভাববে। এমন কাজ করার আগে তোমার মনে করা উচিত ছিল তুমি কার সাথে কি করতে চলেছো। আমি মোটেও তোমার থেকে এসব আশা করিনি। গেট আউট ইন দিস রুম রাইট নাও! ঠিক সময় তুমি তোমার টি.সি. লেটার পেয়ে যাবে।

আমার একটা কথাও বললেন না প্রিন্সিপালের সামনে শুধু যাওয়ার আগে আমার দিকে একবার তাকালেন ছল ছল চোখে আমি আমি ওনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম রাগে জেদে উনি প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আমিও নিজেকে স্বাভাবিক করে, প্রিন্সিপালের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু বেরিয়ে আসতেই ঠাস! করে কেউ আমার গালে চড় বসিয়ে দিল আমার কিছু বুঝে ওঠার আগেই। আমি গালে হাত দিয়ে মাথা তুলে তাকালাম তাকিয়ে দেখলাম আমানের একজন ফ্রেন্ড। তিনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে শুরু করলেন,

— তুমি আজ যেই ভুলটা করলে মীরা এর জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে। এর শাস্তি তোমাকে তিলে তিলে পেতে হবে। কোনদিনও ক্ষমা করব না আমি তোমাকে এর জন্য। একটা নির্দোষ ছেলের ভবিষ্যৎ কেড়ে নিলে তুমি।

আমি রেগে উত্তর দিলাম,

— নির্দোষ!? তাকে নির্দোষ বলছেন আপনি? আপনার ওই ফ্রেন্ডকেম মিস্টার আমান খান কে? যে কিনা আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করেছিল আমি রিজেক্ট করে দেওয়ায়?

— শাট আপ! জাস্ট শাট আপ! ও তোমাকে বাঁচিয়েছে তোমার সম্মানহানি হওয়ার থেকে। আগের দিন যেই ছেলেটা তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল, সেই ছেলেটাই আজকে আবার তোমার ক্ষতি করত। আগের দিন যেমন আমান বাঁচিয়েছিল আজও তোমাকে আমানই বাঁচিয়েছে আর তুমি ওকে তার কি প্রতিদান দিলে? দুশ্চরিত্রর ট্যাগ! বাহ মীরা বাহ! খুব ভালো কাজ করেছো তুমি। একটা নির্দোষ ছেলের জীবনটাকে শেষ করে দিলে। শুধু ভবিষ্যৎ না তুমি ওর পুরো জীবন নষ্টের পেছনে দায়ী এর জন্য তোমাকে একদিন অনেক পস্তাতে হবে।

— আ..আপনি মিথ্যে বলছেন। আমার কাছে ছবি এসেছে। আমান আরেকটা অন্য মেয়ের। আমান যদি আমাকে ভালোবাসে তাহলে কেন একটা অন্য মেয়ের সাথে ওরকম ভাবে ছবি তুলবে?

— ছবিটা দেখাতে পারবে?

আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার ফোন থেকে ছবিটা বার করে দেখাতে উনি সামান্য হেসে আমাকে উত্তর দিলেন,

— এই মেয়েটা ওর বোন। শুধু ওর নয়! আমারও বোন। আমি আর আমান দুজনে ওই মেয়েটার পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছি। মেয়েটা মরতে বসেছিল সেখান থেকে আমান ওকে বাঁচায়। আমান শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবাসে মীরা! আমি সিওর এতো কিছুর পরেও ও তোমাকে ভালোবেসে যাবে। যেখানে তুমি ওর জীবনে স্ট্রাগলের কারণ জেনেও তোমাকে ভালোবেসে গেছে সেখানে আজ তো তুমি ওর ভবিষ্যত শেষ করে দিলে। এখনও হয়তো বলবে ” আমার মীরু আমাকে ভালো না বাসলেও আমি ওকে ভালোবাসি! ”

— এ..এসব কি বলছেন আপনি? আমান কোথায়? উনি কোথায় বলুন আমায়?

— জানি না। এতো গুলো স্টুডেন্ট এর সামনে এতো অপমান, প্রিন্সিপালের রাস্টিগেট করার পরেও ও থাকবে মনে করেছো? আজ তুমি আমান কে অপমান করে নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছো। এই ভুলের মাশুল তোমাকে দিতে হবে মীরা। আশা করছি তুমি ভালো থাকবে।

__বর্তমান__

— সত্যি আমাকে তিলে তিলে শাস্তি পেতে হচ্ছে, পস্তাতে আমার করা ভুলের জন্য। সেদিন না বুঝে ওনাকে দুশ্চরিত্র বলেছিলাম। ভুল বুঝে, অপমান করে ওনার ভবিষ্যত নষ্ট করে দিয়েছিলাম। আর আজ? আজ ওনাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করলাম। আমার বোঝা উচিত ছিলো আমাদের বাসায় আমাদের ঘরে উনি আর আমি ছাড়া কেউ আসে না। কেন? কেন আমি এতো বড় ভুল করে ফেললাম? বার বার কেন আমাদের মধ্যে সব ঠিক হয়েও ভুল হয়ে যাচ্ছে? আমি, আমি কি কোনদিন ওনাকে পাবো না? ওনার ভালোবাসা পাবো না?

?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে