ভালোবাসি ভালোবাসা পর্ব-০১

0
1703

ভালোবাসি ভালোবাসা ❤️
#Written_by_Liza_moni
#part_1

জানেন সাদাফ ভাই আজ চারটি বছর আমি আপনাকে আড়ালে বসে একতরফা ভালোবেসে যাচ্ছি।কী করবো বলেন আমি তো এত সাহসী নারী না যে প্রেমিক পুরুষের সামনে গিয়ে নির্দ্বিধায় বলে দিব আমি আপনাকে ভালবাসি সাদাফ ভাই ভীষণ মারাত্মক ভাবে পুড়ে যাচ্ছি আপনার প্রেমে। কী করলে এই প্রেমের আগুন নিভে যাবে আপনি কী জানেন? আপনার সামনে পড়লেই তো আমার হার্ট বিট করা বন্ধ হয়ে যায়। আপনার সাথে কথা বলতে গেলে শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠে। একটা কথা খুব করে জানতে ইচ্ছে করে আপনি কী অন্য কাউকে ভালোবাসেন সাদাফ ভাই? কাল আমার বিয়ে হয়ে যাবে সাদাফ ভাই।অন্য কেউ আসবে আমার জীবনে। আমি পারিনি সাদাফ ভাই।শত চেষ্টা করেও আমি আম্মু আর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমি বিয়েটা আটকাতে পারিনি। দেখলাম নিজের হাতেই আমার বিয়ের সব সামলাচ্ছেন। অনেক আনন্দ করলেন গায়ে হলুদে।আজ রাতটা যেন শেষ না হয় আল্লাহ। একতরফা ভালোবাসা কেন এতো অসহায় আল্লাহ? কাল আমি অন্য কারো হয়ে যাবো। আচ্ছা সাদাফ ভাই কেন আমি আপনাকে এতো ভালোবাসি বলেন তো?সাদাফ ভাই আমি আপনাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না। আমার আর লিখার মতো শক্তি নেই গো সাদাফ ভাই। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যে।ডাইরিটা ড্রয়ারে রেখে ভাবনায় ডুব দিলো হিয়া,,,
প্রথম যেদিন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল সেই দিনটি অনেক সুন্দর ছিল। কলেজে যাবো তাই রাস্তার পাশে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে পুরো কাক ভেজা হয়ে গেছি। কোথা থেকে আপনি এসে মাথার উপর ছাতা ধরেছিলেন।আর বলেছিলেন,
.
আপনার কি আক্কেলের গোড়ায় পানি নাই নাকি? সাদা রঙের ড্রেস পরে এখানে বৃষ্টি তে ভিজছেন।
.
আমি তখন কিছুই বলতে পারি নাই। ইসসস এই যুগে এত্ত ভালো কোনো ছেলে হয়?অন্য কোনো ছেলে হলে কী সাদাফ ভাইয়ের মতোই ভাবতো নাকি সবাই মিলে চোখের তৃষ্ণা মেটাতো?
.
তার প্রতি আমার এক আলাদা অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বাড়িতে চলে আসি। সেদিন আর আমার কলেজে যাওয়া হয় নি।
সেদিন বিকেলে ছাদে বসে ছিলাম। তাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছিল একা বসে। আম্মু ডাক দিল,,
.
হিয়া, হিয়া
রিয়ানের বন্ধুরা এসেছে রিয়ান কে ডেকে দে।
আম্মুর কথা শুনে ভাইয়া কে ডাকতে গেলাম রুমে। ভাইয়া তো ষাঁড়ের মত ঘুমাচ্ছে।এরে ঘুম থেকে উঠানোই যায় না।কী যে ঘুম বাপরে। আমাদের বাড়ির কুম্ভকর্ন আমার ভাইয়া।
ভাইয়াকে ডেকে আমি আমার রুমে যাওয়ার সময় ড্রইং রুমে চোখ পড়তেই ভড়কে গেলাম। সকালের সেই ছেলেটা।ভয় হতে লাগলো কেন জানি।
এ ভাইয়ার বন্ধু কৈ আগে তো কখনো দেখিনি।
রিয়ান ভাইয়া জানালো তার নাম সাদাফ আহমেদ।ভাইয়ার সাথে ফেসবুকে পরিচয়।সেখান থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। পেশায় তখন তিনি টটো কোম্পানির মেনেজার ছিলেন মানে বেকার। অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন আমার ভাইয়ের সাথে।
আমাকে দেখে সেদিন সে অবাকই হয়েছিল।সাদাস নামটা একা একাই বিড় বিড় করতে থাকি আমি।ইসস সে যদি আমার হতো খুব কী ক্ষতি হতো?
এসব ভাবতে ভাবতে টেবিলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে হিয়া।
.
.
হিয়া, হিয়া, হিয়য়য়য়া
হিয়ার মামাতো বোন আনহা হাত ধরে টান দিতেই চোখ মেলে তাকায় হিয়া। বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করে,উফ আনহা একটু কী ঘুমাতে ও দিবি না নাকি?
.
ঘুমা তোকে মানা করছে কে?তাই বলে কি এতো বড় বিছানা রেখে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাবি?কাল রাতে তো আর ঘুমাতে পারবি না 😉।যা এখন বিছানায় গিয়ে ঘুমা।
.
কাল রাতে ঘুমাতে পারবোনা কেন?
.
হাডুডু খেলবি তো তাই।
.
ধেত যা তো।
.
.
পরের দিন সব নিয়ম কানুন মেনে হিয়া কে বউ সাজানো হয়েছে। একটু পরেই আমান আসবে ( হিয়ার হবু বর)। ছেলেটা হিয়া কে বড্ড বেশি ভালোবাসে।
আর হিয়া কিনা অন্য একজনকে ভালোবাসে।
.
সবাই খুব খুশি শুধু হিয়ার মুখেই হাসি নেই। জানালার পাশে বসে আছে হিয়া। মনে মনে কিছু পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষছে সে।একটু পরেই অন্যের হয়ে যাবে সে। চিরতরে হারিয়ে ফেলবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে।
.
নিজেকে কষ্ট দিয়ে বিয়েটা তুই সত্যিই করছিস হিয়া?
.
হিয়ার ভাবনায় ছেদ পড়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ড মীরার কথায়।
.কী করবো বল?
আমি তো একাই ভালোবাসি তাকে। সেতো আমায় ভালোবাসে না।সে যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে হয়তো বিয়েটা ভাঙ্গা যেতো।
.
এখন ও সময় আছে হিয়া, তুই সাদাফ ভাইকে বলে দে তোর মনের কথা।নাহলে যে তুই মরে যাবি হিয়া।
.
আসলে কি জানিস আল্লাহ নিজেই চান না আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।মা হচ্ছে হতে দে,,,,
.
বিয়ে বাড়ি হই হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে।সবাই খুব বেশি খুশি। বাড়ির একমাত্র মেয়ের বিয়ে খুশি হবার কথাই তো।
.
হঠাৎ হৈচৈ এ ভরা বিয়ে বাড়িটা নীরবতায় ছেয়ে গেছে।সবার মাঝে হাহাকার ছড়িয়ে পড়ে।
অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ে বাড়ীতে কান্নার রোল পড়ে যায়,,,
.
কান্নার শব্দ শুনে হিয়া রুম থেকে বের হয়ে আসে। অস্থির হয়ে জিগ্গেস করে কী হয়েছে? তোমরা সবাই কান্না করছো কেন?
.
এই আনহা কি হয়েছে?বড় মামি, ছোট মামি,চাচি আম্মু,কী হয়েছে কাঁদছো কেন?
এই আম্মু কাঁদছো কেন?
,
এই ভাইয়া কী হয়েছে?
.
সাদাফ ভাই আপনি অন্তত বলেন কী হয়েছে?
.
আরে কী হয়েছে বলছো না কেন আমাকে তোমরা
চিল্লিয়ে উঠে হিয়া।

হিয়ার আম্মু মিসস সাবিনা ইয়াসমিন হিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলে আমানদের গাড়ি মারাত্মক ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে।ড্রায়বার ঘটনা স্থলেই মারা গেছেন।
.
হিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কী শুনলো ও?স্তব্দ হয়ে গেছে হিয়া।
.
পাড়া প্রতিবেশীর কিছু নিচু মন মানসিকতার মানুষ মুখ বাঁকিয়ে বলেই যাচ্ছে,কি অপায়া অলক্ষী মেয়ে। বিয়ের দিনি জামাইরে খেয়ে বসলো।হায় হায় বেচারা ছেলেটার জীবন শেষ।আহারে। এমন অপায়া মেয়ে যেন আর কারো ঘরে জন্ম না নেয়।
.
মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন হিয়া কে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো আমার মেয়েটার সাথে এমন কেন হলো? আমার মেয়েটার জীবনে দাগ লেগে গেল।
.
সাদাফ রিয়ানকে তাড়া দিয়ে বলে রিয়ান তাড়াতাড়ি হসপিটালে চল,,,আর দেরি করিস না,,
সবাই হসপিটালে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
হিয়ার যখন চার বছর বয়স আর রিয়ানের দশ বছর তখন বাইক দুর্ঘটনায় হিয়া আব্বু মাহবুব হোসেন মারা যান। মিসেস সাবিনা চাকরি করে নিজের সন্তানদের বড় করেছেন।
,
,
হসপিটালে পৌঁছে দেখে সেখানে আমানের বাড়ির সবাই কাঁদছে। হিয়া কে দেখে আমানের মা তেড়ে আসেন। অপায়া অলক্ষী মেয়ে আমার ছেলেটাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য কেন আসছো হ্যাঁ।এই অপায়া মেয়ে দায়ী আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য। কোনো দিন ও বিয়ে হবে না এই মেয়ের।
.
আমার মেয়েকে এতো বড় অভিশাপ দিবেন না। আমার মেয়ের কি দোষ? আমার মেয়েটার জীবনটাও তো শেষ হয়ে গেল।
.
কথা গুলো হিয়া সহ্য করলেও সাদাফের কেন জানি কথা গুলো হজম হলো না।
সাদাফ বলে
.
আপনি যে ভাবে কথা গুলো বলছেন যেন হিয়া নিজে ওদের এক্সিডেন্ট করিয়েছে। হিয়া যেন জানতো ওদের এক্সিডেন্ট হবে। আপনি কি ভেবে দেখেছেন আপনার ছেলের এক্সিডেন্ট হয়ে বিয়ার জীবনটা কোথায় গিয়ে থমকে গেছে?আজ হিয়ার জায়গায় অাপনার মেয়ে হলে কী এমন অভিশাপ দিতেন?
.
আহ সাদাফ বাবা বাদ দাও।মা তো ছেলের এই পরিনতি মেনে নিতে পারছেন না। বললেন আমানের বাবা ইকবাল হোসেন।
.
আমানদের গাড়িতে ড্রাইবার আমান আর আমানের দুই বন্ধু সিফাত আর জায়ান ছিল। ড্রাইবার ঘটনা স্থলেই মারা যায়। ওদের তিন জনের অবস্থা ও খুব খারাপ।
.
নার্স এসে বলে পেষেন্ট আমান চৌধুরীর জ্ঞান ফিরেছে। হিয়া ছুটে যায় আমানের কেবিনে। ডিয়ার ছুটে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সাদাফ।ইসস ভালোবাসা গুলো এতো অসহায় কেন? হিয়া আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় আমানের দিকে। আমানের ডান হাত টা ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।

বিশ্বাস করুন আমি সত্যি চাইনি এমনটা হোক। হয়তো আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে পেতাম না তবুও ও কখনো এমন কিছু চিন্তা করিনি। আপনি তো আমাকে ভালোবাসতেন তাই না? ভালোবাসা তো অপরাধের কিছু না। তবু ও কেন সত্যিকারের ভালবাসা এই ভাবে হেরে যায়?
আমান কিছু বলতে পারলো না।ডাক্তার এসে তাকে চেক করে বললেন আমান কোমায় চলে গেছে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে এই অব্দি এসেছে সে।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই থমকে গেল।ছায়ানটের কেন থেকে অন্য এক ডাক্তার এসে জানালো জায়ান আর এই পৃথিবীতে নেই।জায়ানের পরিবারের সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সিফাতের এখনো জ্ঞান ফিরেনি।
.
মিসেস সাবিনা পাগলের মতো করছেন।আজ যদি আমার মেয়েটার বিয়ে না হয় আমার মেয়েকে যে এই সমাজ বাঁচতে দিবে না।
আমার মেয়ের জীবনটা যে এই সমাজের মানুষ নষ্ট করে দিবে,,,,
রাত ১১ টার দিকে সাদাফ রিয়ান, মিসেস সাবিনা এবং হিয়া কে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
হিয়া রুমে গিয়ে গোসল করতে চলে যায়।
মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন সোফায় বসে পড়েন। এখন ও কাঁদছেন তিনি।হিয়ার মামিরা সবাই মিলে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
বড় মামি বলেন,
আপা দেখিয়েন আমাদের হিয়ার কপালে এর থেকে ভালো কিছু আছে। আমাদের হিয়ার জন্য হয় তো আমান ঠিক ছিল না। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখেন। তিনি সব ঠিক করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।

সাদাফ রিয়ানের সাথে রিয়ালের রুমে যায়।
.
রিয়ান চিন্তা করিস না দোস্ত। আল্লাহ তা করেন ভালোর জন্যই করেন।
.
আমার বোনের জীবনটা এমন হলো কেন বলবি? আমার সেই ছোট্ট আদরের বোনের জীবনটা আজ এমন অসহায় হয়ে গেছে কেন বল না। এই সমাজ আমার বোনকে অপায়া অলক্ষী মেয়ে হিসেবে গালাগালি করছে। আমার বোন যদি এসব মেনে নিতে না পেরে অন্য পথ বেছে নেয়,,
রিয়ানের কথাটা শুনে বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠলো সাদাফের। নিজেকে শক্ত করে বললো,
.
এই সমাজের মানুষ গুলো কি ভাত না খেয়ে থাকলে এক বেলা ভাত খাওয়াবে? বিপদে কী পাশে এসে দাঁড়াবে? এদের কাজই হলো মানুষের নামে সমালোচনা করা,, এদের কথায় পাত্তা না দিলেই হবে,,,
.
আমি না হয় তোর কথা বুঝলাম কিন্তু হিয়া, হিয়া যদি এই সব কথা মেনে নিতে না পারে?ও যদি মানুষের কটুক্তি গুলো সহ্য করতে না পারে তখন কী হবে?
আমি আমার বোনকে হারাতে চাই না রে সাদাফ।
.
হিয়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আসে। চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে প্লোরে। উদাসীন ভাবে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
আকাশের দিকে চেয়ে বলে,
আব্বু জানো আমার জীবনটা না অদ্ভুত ভাবে পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আমার নামের সাথে না অপায়া অলক্ষী মেয়ে হিসেবে যোগ হয়েছে।
আমার সাথে এমন কেন হলো?তাকে ভালোবাসি তাকে ও পাবো না যে আমাকে ভালোবাসে তাকে ও পেলাম না।এ কেমন নিয়ম?
.
.
সাদাফ রিয়ানকে বলে,,

যদি কিছু মনে না করিস একটা কথা বলবো?
.
হুম বল
.
আমি হিয়া কে বিয়ে করতে চাই,,,,,,,,
,
চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে