ভালোবাসি বলে পর্ব-০৭

0
472

#ভালোবাসি_বলে(৭)
#Jannat_prema

” কিন্তু আমি তোকে ভালোবাসি না আইরিশ। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। আমি অবশ্য তাকেই বিয়ে করবো। আর তোর ভালোবাসাটা হলো এক তরফা, আইরিশ। ”

আরহাম ভাইয়ের কথা শুনে আমার মনটা ভেঙে খানখান হয়ে গেলো। আরহাম ভাই আমাকে ভালোবাসেন না! আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,

” তাহলে কাকে ভালোবাসেন? ”

আরহাম ভাই হঠাৎ স্নেহা আপুকে নিয়ে আসলেন৷ এক সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

” আমি স্নেহাকে ভালোবাসি। ওকেই বিয়ে করবো। তুই অবশ্যই আমাদের বিয়েতে আসবি। ”

এরপর স্নেহার আপুর হাত ধরে তিনি চলে যেতে লাগলেন। আচমকা আমি ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলাম। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলাম আমি নিজ বিছানায় বসে ভ্যা করে কাঁদছি। তার মানে আমি এতক্ষণ সপ্ন দেখলাম৷ দরজার ওপাশ থেকে আশরাফ ভাইয়ার কন্ঠ শুনে নিজেকে সামলে একবার আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আমার চুলগুলো পুরো কাকের বাসার মতো হয়ে আছে। কান্নার জন্য চোখ মুখ ফুলে টমেটোর মতো হয়ে আছে। এই অবস্থায় ভাইয়ার সামনে গেলে ভাইয়া হাজারটা কথা জিজ্ঞেস করবে এখন।

.

ভরা রেস্টুরেন্টে থাপ্পড় খেয়ে লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে আছে স্নেহার। নিঃসন্দেহে থাপ্পড়টা আরহামই মেরেছে৷ সবাই নিজেদের খাবার রেখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। আরহাম নিজেকে শান্ত করে শক্ত কন্ঠে ব’লে উঠলো,

” তোকে আমি নিষেধ করেছিলাম, আমার সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করতে আসবি না। তোদের মতো সস্তা মেয়েদের পাশ ও এই আরহাম খান মারায় না। তুই শুধু আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে বলে যে তোকে টলারেট করেছি এমনটা ভাববি না। নেহাতই তোর বাবা একজন ভালো মানুষ। যার জন্য তোর নোংরামিগুলো সহ্য করেছি। নেক্সট টাইম যদি আমার সামনে দেখেছি তোকে, আই সোয়ার তোকে গোলা টিপে মেরে ফেলবো। ”

চোখ বড় বড় করে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে স্নেহা। তাকে তুই তোকারি করতে দেখে সে চরম অবাক। আরহাম কে সে কখোনো এতোটা রাগতে দেখেনি। রাগলেও এমন ভয়ংকর কখনো হয়নি৷ সে তো সামান্য তার ঠোঁট ছুঁতে গিয়েছিলো। আরহাম স্নেহাকে পাশ কাটিয়ে রেসটুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো৷ আশপাশ কিছুক্ষণ তাকালো। মানুষটাকে তো এখানেই দেখেছিলো। তার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে ছিলো। আরহাম চোখ বন্ধ করে আইরিশের টলটলে চোখ জোড়া কাতর হয়ে তাকিয়ে আছে ভাবলো, ভাবতেই তার হৃদয়টা নিংড়ে আসে। বুকের ভিতর অজানা এক আশংকায় ছটফটিয়ে উঠে।

বাসায় প্রবেশ করতে না করতেই মাহতাব খান বলে উঠলেন,

” তুমি নাকি আজকে স্নেহাকে ভরা রেস্টুরেন্টে অপমান করেছো। ”

বাবার প্রশ্নে থেমে গেলো আরহাম। মাথা ঘুরিয়ে তাকালো বাবার দিকে৷ তার মা নিহা খান তার বাবার পাশেই দাড়িয়ে আছেন। আর যাই হোক তার ছেলে কোনো ভুল কাজ করবে না।

” বেয়াদবি করেছে তাই শিক্ষা দিয়ে দিয়েছে। ”

ছেলের উত্তরে তপ্ত চাহনি নিক্ষেপ করলেন। একটা মেয়েকে পাবলিক প্লেসে অপমান করেছে কোথায় অনুতপ্ত হবে, সেখানে এই ছেলে কি না বুক ফুলিয়ে বলছে শিক্ষা দিয়েছে। তিনি খেকিয়ে উঠলেন,

” আজকাল কি তুমি শিক্ষকতা করছো নাকি? যে সবাইকে শিক্ষা দিয়ে বেড়াবে৷ ”

আরহাম তার মায়ের দিকে তাকালো৷ তিনি ইশারায় বুঝালো শান্ত হতে। আরহাম মায়ের থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,

” লিসেন বাবা, আপনার বন্ধুর মেয়েটাকে বলে দিবেন নেক্সট টাইম থেকে যেনো আমার থেকে দশ হাত দুরে থাকে। নাহলে সেটা আপনার ওই বন্ধুর মেয়ের জন্য ভালো হবে না৷ ”

আর এক মুহুর্তও দাড়ালো না আরহাম। গটগট করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো৷ তার মনটা শান্ত নেই। মাহতাব খান ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে স্ত্রীকে বলে উঠলেন,

” দেখেছো, দেখেছো তোমার ছেলের কর্মকান্ড? কিভাবে আমার মুখের উপর ঠা*শ ঠা*শ কথা বলে চলে গেলো। ”

নিহা খান স্বামীর কাঁধে হাত রেখে বললেন,

” আপনি একটু শান্ত হোন। ছেলেটার পিছনে এভাবে সারাদিন লেগে থাকবেন না। ”

” লেগে থাকবো না মানে? আমাদের একটা মাত্র ছেলে সে। তার পিছনে লাগবো না! তোমার ছেলেকে আমি পইপই করে বলেছিলাম ডাক্তারি নিয়ে পড়ো৷ ভবিষ্যতে আমার অবর্তমানে তুমি আমার চেম্বারে বসবে। সে শুনেছে? উল্টো নিজের মন মতো পড়াশোনা করছে আবার একটা প্রাইভেট কম্পানিতে পার্ট টাইম জবও করছে৷ কেনো? আমার কি টাকা পয়সার অভাব আছে! আমার এত টাকা পয়সা, গাড়ি, বাড়ি তো সব ওরই। তাই বলে কি ওর থেকে একটু আশা রাখতে পারি না? ”

নিহা খান অসহায় হয়ে তাকিয়ে আছেন স্বামীর মুখপানে৷ আরহামটা ঠিক তার বাবার গায়ের রং পেলেও চেহারার আদল অনেকটা তার মতোই। তিনি মুচকি হেসে বললেন,

” আরহামেরও পছন্দ বলতে কিছু আছে তাই না? আমরা বাবা মা বলে তো আর নিজেদের সব পছন্দ ওর উপর চাপিয়ে দিতে পারি না৷ এই দেখুন, ও নিজের যোগ্যতায় প্রাভেট কম্পানিতে চাকরি করছে৷ এটা কি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় না? ”

মাহতাব খান কিছু বললেন না। নিরবেই তিনি কিছুটা মুচকি হাসলেন।

.

” চোখ মুখের এই অবস্থা কেনো, তোর? ”

আশরাফ ভাইয়ার কথায় সবাই আমার দিকে তাকালো৷ এখন কি আমি বলতে পারবো যে ছ্যাকা খেয়ে বাকা হয়ে গেছি৷ মুখ হাত ভালো করে ধোয়ার পরেও ভাইয়া বুঝে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,

” মাথা ব্যাথা করছিলো আর ঘুমানোর কারণে কিছুটা এমন লাগছে ভাইয়া। ”

” কিন্তু তুই তো বিকেলে বললি ঘুরতে যাচ্ছি। হঠাৎ মাথা ব্যাথা কেনো উঠলো? আইরিশ তুই কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত? ”

আমি চমকে উঠলাম। আম্মু আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা জানেন আমি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকলো আমার মাথা ব্যাথা উঠে।

” কিরে বলছিস না কেনো? আশরাফ যেটা জিজ্ঞেস করছে সেটা বল। ”

আম্মুর ধমকে বলে উঠলাম,

” আসলে কালকে রাতে ঘুম হয়নি। ”

” কেনো? ”

আম্মুর প্রশ্নে এবার কিছুটা বিরক্ত হলাম৷ এতো প্রশ্ন করার কি আছে। ভাঙা মন নিয়ে কি এতো কথা বলা যায়। আমি মাথা ঠান্ডা করে বললাম,

” এলার্জির কারনে। ”

কথাটা শুনা মাত্রই আম্মু খ্যাকিয়ে উঠলেন।

” তোকে হাজার বার বলেছি, এলার্জির ঔষুধটা মনে করে খেয়ে নে খেয়ে নে৷ শুনেছিস কখোনো আমার কথা। মানুষ হবি না আর তুই। ”

” আহা তুমি চুপ কর। আইরিশ যা ঘরে যা। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নে। ”

আব্বুর কথায় মনে মনে কিছুটা সস্তি অনুভব করলাম৷ রুমে আসতেই আরহাম ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেলো। সাথে সাথে মনটা খারাপ হয়ে গেলো আমার। আমার আরহাম ভাইয়ের প্রতি অনুভূতিটা এক তরফা৷ তিনি হয়ত সত্যি অন্য কাউকে ভালোবাসে। আরহাম ভাই অন্য কাউকে ভালোবাসে ভাবলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে৷ যাকে নিয়ে এতো অনুভুতি শেষে কিনা সেই মানুষটাই আমার হবে না। বিছানার উপর বাজতে থাকা ফোনটার দিকে একবার তাকালাম। পা চালিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই আগত কলটা ততক্ষণে কেটে গেলো। আমি কল লিস্টে চেক করতেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। আরহাম ভাই ইতিমধ্যেই ১০+ কল দিয়েছেন। উনার এতোগুলো কল দেওয়ার ব্যাপারটা মাথায় আসলো না। আবারো ফোনে রিং বাজতেই আমার হাতটা কেঁপে উঠল। চোখের সামনে রেস্টুরেন্টের দৃশ্যটা ভাসতেই আবার কান্না চলে আসলো। কান্নাটাকে গিলে ফোন রিসিভ করতে আরহাম ভাই ধমকে উঠলেন,

” এতক্ষণ লাগে কল রিসিভ করতে। কয়টা কল দিয়েছি আমি। আমাকে হয়রানি করতে তোর ভালো লাগে আইরিশ। কথা বলছিস না কেনো? ”

” আসলে ড্রয়িংরুমে ছিলাম। ”

আমার উত্তরটা শুনে আরহাম ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলেন। ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেলাম৷

” তুই রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলি? ”

আরহাম ভাইয়ের প্রশ্নে থমকে গেলাম৷ তার মানে উনি আমাকে দেখেছিলো। হঠাৎ উনার এমন প্রশ্ন শুনে কান্না চলে এলো। আমি হালকা করে নাক টেনে বললাম,

” হুম! ”

” আমাকে দেখেছিস? ”

” হুম দেখেছি। ”

” জানিস স্নেহা মেয়েটা খুব বাজে! ”

আমি উনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। স্নেহা মেয়েটা বাজে মানে! আবারো আরহাম ভাইয়ের কথা শুনতে পেলাম৷ উনি বলছিলেন,

” তুই কান্না করছিলি কেনো? ”

” কখোন? ”

” আমাকে আর স্নেহাকে দেখে? ”

আমার খুব করে বলতে ইচ্ছে করছিলো, হ্যাঁ। আমি আপনাকে স্নেহা আপুর সাথে দেখে সহ্য করতে পারিনি। আমার হৃদয় যে ভেঙে গিয়েছে আরহাম ভাই। আপনি আদেও কি বুঝতে পারবেন? পারবেন না আরহাম ভাই পারবেন না।

চলবে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে