গল্পঃ #ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে
পর্বঃ০৬
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
সকালের নাস্তা করে দিঘীর পাড়ে এসে বসে আছি। এখন সকাল নয়টা। রিমি-তিন্নি এখনো ঘুম থেকে উঠে নি। অন্যসময় আমিও হয়ত ঘুম থেকে উঠতাম না। কিন্তু কালকে আমার বিয়ের ব্যাপারটা শোনার পর থেকে দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না। বিয়েতে আমি মত দেই নি। তবে বাড়ির সবাই বিয়ে দেওয়ার জন্য যেই পাগল হয়ে আছে কে জানে কি হয়?
বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে আজকে সকালে আমাদের বাড়িতে ফিরার কথা ছিল। কিন্তু আম্মুর
হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে আজকে যাবে না। প্রতিবার আম্মু সেম কাজ করে, নানু বাড়ি আসার আগে
বলে, দুইদিনের বেশি থাকবে না কিন্তু একসপ্তাহ আগে যায় না। মামা-মামি থাকার জন্য জোর করে আর আম্মুও থেকে যায়। নানুবাড়িতে এসে এতদিন থাকতে ভালো লাগে না। আগে লিজা আপু, মিম আপু ছিল তাও একটু ভালো লাগত। এখন তো তাদেরও বিয়ে হয়ে, ব্যস্ত হয়ে গেছে তারা।
এসব ভাবতে ভাবতেই কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি নিষান
ভাইয়া পা টিপে টিপে আসছে। আমাকে ঘুরতে দেখে
সে বলে উঠে,
‘ধুর এখনি তোমার মাথা ঘুরিয়ে আমাকে দেখতে হলো? তোমাকে ‘ভাউ’ দিয়ে ভয় দেখাতাম।’
নিরা মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দিল,
‘আমি বাচ্চা মানুষ না যে আপনি ‘ভাউ’ দিলে আমি
ভয় পাব।’
নিষান নিরার পাশেই বসতে বসতে বলল,
‘কি করছিলে নিরা?’
‘আপনাকে মিস করতে করতে ম’রে যাচ্ছিলাম। এখন আপনাকে দেখে প্রানে বাঁচলাম।’
‘ওমা তাই? এখনই এত মিস করলে ভবিষ্যতে কি হবে গো নিরা?’
‘উফ, অসহ্য। যেখানেই যাই সেখানেই আপনি পিঁপড়ার মত ঘ্রাণ পেয়ে চলে আসেন। এখানে এসেছেন কেনো?’
‘তোমার সাথে কথা বলতে।’
‘আমি এত বেহায়া নই, আপনার সাথে কথা বলব। আপনি আমাকে সেদিন মেলায় চ’ড় মে’রেছেন।’
নিরার কথা শুনে নিষান কিছুটা ক্ষেপে গিয়ে বলল,
‘ এই এক প্যাঁচাল শুনতে শুনতে কান ধরে গেল।
এই কথা এই নিয়ে তুমি মনে হয় ৫৫০ বার বললে।
যতবার দেখা হয় ততবারই এককথা, থা’প্পড়টার
যদি কান থাকতো তাহলে সে তো বয়রা হতোই সাথে
পালানোর চেষ্টা করতো। এই একটা থা’প্পড়ের খোঁটা আর কত দিবা? ১০০ বছর পরে ম’রার পরেও কঙ্কাল হয়ে এসেও আমাকে খোঁটা দিবা। তুমি যে আমার ফোন ভাঙছো আমি কিছু বলছি?’
নিরা নিষানের কথার বিপরীতে কিছু বলতে পারল না। নিজের কাছে লজ্জিত হলো। সত্যিই সে তো এই এক থা’প্পর নিয়ে কতবার হেনস্তা করল নিষানকে।
নিষান তো ফোন ভা’ঙা নিয়ে ওকে কিছুই বলেই নি।
নিরা এবারে নিষানের সাথে ভাব জমাতে চাইল। কিন্তু কি বলবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না। আমতা- আমতা করে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনার প্রিয় রং কি?’
নিরার প্রশ্ন শুনে নিষান এক ভ্রু উপরে তুলে বলল,
‘কি রাগী ম্যাডাম! এখন এত ভালো ব্যবহার।
সবসময় তো আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেই ত্যাড়াব্যাঁকা মার্কা উত্তর দাও? তবে রাগলে কিন্তু তোমাকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগে।’
‘ধ্যাত, আপনার সাথে ভালো করে কথা বলাই ভুল।’
নিষান কিছু বলবে এরমাঝেই রিমি নিরাকে ডাক দিল। নিষান বলে উঠল, ‘রিমি মেয়েটা একটা গাধা,হাঁটুর নিচে বুদ্ধি। কতকিছু করে রাগী ম্যাডাম
নিজ থেকে একটু কথা বলতে এসেছে…
নিষান পুরো কথা শেষ করার আগেই নিরা বলল,
‘খবরদার! আমার বোনকে গাধা বলবেন না।আরেকবার বললে আপনার খবর আছে।’
তবে আপনাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ আপনি না।’
বলে নিরা দৌড়ে চলে গেল। নিষান নিরার দৌড়ে চলে যাওয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবতে লাগল নিরা শেষ কথাটা আসলে কি বলতে চাইছিল?
.
.
নিরা রুমে আসার সাথে সাথে রিমি বলল,
‘নিরাপু, তোমার কাছ থেকে একটা কথা গোপন করেছিলাম? শোনার পরে প্লিজ তুমি আমাকে বকা দিও না।’
‘কি কথা শুনি?’
‘আমাকে একটা ছেলে পছন্দ করতো, আমারও মোটামুটি তাকে ভালো লাগতো।কিন্তু কেউ কাউকে বলি নি। কাল রাতে ও আমাকে ওর মনের কথা বলেছে।
আমিও রাজি হয়েছি। আমার মনের মানুষ আমি পেয়ে গেছি তুমি নিষান ভাইয়াকে বিয়ে করে নাও আপু। তাকে জিজু হিসেবে আমার বড্ড পছন্দ হইছে।’
রিমির কথা শুনে আমার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেল। ক্লাস টেনে পড়েই তলে তলে এতকিছু। আমি ওর চুলের ঝুঁটি টেনে ধরে বললাম,
‘আপনাকে খালমনি ছোট মানুষ মনে করে, আর আপনি তলে তলে এই। আর নিষান ভাইয়ার সাথে
প্রেম করার জন্য পাগল হয়েছিলেন এখন বলছেন জিজু হিসেবে তোমার পছন্দ হইছে; বদমাইয়া,
লুচু মাইয়া।’
‘আরে নিরাপু তুমি ভুল ভাবছো আমি নিষান ভাইয়ার ওপর ক্রাশ খেয়েছি ঠিকই প্রেম করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন তাকে চাই না । এখন আমার জনকে পেয়ে গেছি।’
‘ভাইরে ভাই! টেনে পড়ে কতকিছু বুঝিস, আমি তো
কিছুদিন ইন্টার পাশ করব তাও কারো সাথে সম্পর্কে জড়ায় নি। শোন এখন আবেগের বয়স, নিজের আবেগকে কন্ট্রোল করতে শিখ। যার তার সাথে প্রেম
করিস না।’
‘আরে না আপু, এই দুইজনকেই আমার পছন্দ হইছে, এছাড়া আর কেউ নেই। কাউকে পছন্দ হওয়া কি দোষের নিরাপু?’
‘না, দোষের হবে কেনো? একজনকে একজনের ভালো লাগতেই পারে।
কিন্তু রিমি আফা আপনি তো
তাইলে বেগার খাটা খাটলেন, নিষান ভাইয়ের মাকে
যেই সেবাযত্ন করলেন।’ বাঁকা হাসি দিয়ে নিরা বলল।
‘ধুর! আর ওই কথা বলে লজ্জা দিও না তো। মনে করো তোমার শাশুড়ী ভেবেই সেবা করেছি।’
আমাদের কথার মাঝেই লিজা আপু ঘরে ঢুকলেন।
কে জানে তিনি কিছু শুনেছেন কিনা?তাকে দেখে আমরা কথা প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করলাম। লিজা আপু ঘরে ঢুকেই সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন,
‘রিমি তুই নাকি নিষানকে পছন্দ করিস? এজন্য নিষানকে নিরা বিয়ে করতে চায় না? তুই নাকি
এজন্য আমার শাশুড়ীকে অনেক সেবাযত্ন করেছিস?’
লিজা আপুর কথা শুনে আমরা দুজনেই টাসকি খেলাম। ওনি এতকিছু জানেন কীভাবে? রিমি বলে উঠল,
‘কে বলেছে তোমায় এসব কথা? তোমার শাশুড়ী? ‘
‘আরে না, নিষান বলেছে।’ (লিজা)
‘আরে না, লিজা আপু। নিষান ভাইয়া মজা করেছে, আমরা তার বেয়াইন হই বলে।’
রিমিটাকে কিছু বলতে দিলাম না আমি। কি বলতে কি বলে ফেলে,তখন আবার ঝামেলা হতে পারে।
আপু সেসব কথা বাদ দিয়ে আমাকে বললেন,
‘শোন নিরা, তোকে কিছু কথা বলি। তুই তো দুই ফুপ্পির এক ফুপ্পিরও কথা শুনতে চাস না তাই আমাকে পাঠিয়েছে। ফুপ্পি তোকে আজকে সারাদিন
ভাবার সময় দিয়েছে। যদি তুই এ বিয়েতে মত না দিস তাহলে কালকে আমার শাশুড়ী আর নিষান চলে যাবে। ভেবে দেখ তুই কি করবি? নিষান ছেলে হিসেবে ভালো, চেহারাও মাশাআল্লাহ সুন্দর, পড়াশোনাও করেছে। শশুর-শাশুড়িও ভালো।আবার তুই আমার জা হলে কত ভালো হবে!
আমি লিজা আপুকে বললাম, ‘আচ্ছা আপু ভেবে নিই, পরে জানাচ্ছি।’
.
.
সারাদিন এটা-সেটা করে কাটিয়েছি। এখন রাত বারোটা, কিছুতেই ঘুম আসছে না। একবার মনে হচ্ছে এখন বিয়ে করলে সামনে পরীক্ষা, রেজাল্ট অনেক খারাপ হবে।
আবার মনে হয়,
বিয়েটা করে ফেলি, জামাইও দেখতে সুন্দর আছে। নিষান ভাইয়াকে যে একেবারে ভালো লাগে না তাও না, এ কয়েকটা দিনে তার সাথে কথা বলতে বলতে বলা যায় তাকে ভালোই লাগে আমার যদিও বাইরে তা প্রকাশ করি নাই।
এসব এসব ভাবতে ভাবতেই একসময় নিরা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। সকালে নিরা ঘুম থেকে উঠে দেখে…
#চলবে