গল্পঃ #ভালোবাসি প্রিয় তোমাকে
পর্বঃ ০৪
নিঝুম জামান (ছদ্মনাম)
.
আজকে মিমের বৌভাত। তাই নিরা তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠেছে। নিরা ঘুম থেকে উঠেই দেখে ওর বাবা চলে এসেছে। ওর বাবা যে সত্যিই চলে আসবে
তা কখনোই ভাবে নি। বাবাকে বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে ওর বাবা কোন উত্তর দেয় না।
রিমি নিরার কাছে সকাল সকালই মিলতে এসেছে। নিরাকে পাগল বানিয়ে
ফেলছে নিষানের কাছে ওর ব্যাপারটা বলার জন্য।
নিরার সাফ কথা- ও নিষানকে কিছু বলতে পারবে না আর নতুন করে অপমানিত হতেও চায় না।
কিন্তু রিমি তো নাছোড়বান্দা, মুখ দিয়ে একটা কিছু বের হলে সেটা না করা অবধি ভাঙা রেডিওর মত
কানের কাছে বাজতে থাকে। ওদিকে ফোনটাও খুঁজে
পাচ্ছি না, মেজাজটা পুরো খিটখিটে হয়ে আছে।অথচ কিছুক্ষন আগেই ফোনটা ওয়্যারড্রবের ওপরে রেখেছিলাম। নিশ্চিত আমার ছোটবোন মিরা নিয়েছে। ওকে পেলে মাথায় চারটা গাট্টা মা-র-ব।
রিমি কথা রাখতে আমি নিষান ভাইয়াকে খোঁজা শুরু করলাম। খুঁজতে খুঁজতে তাকে খুঁজে পেলাম দীঘির পাড়ে। রিমির মনের কথাগুলো তাকে জানানোর জন্য তার পাশে বসলাম। বসার পরে তার হাতের দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম আমি ফোনটা। আমার গ্যালারীর ছবি দেখছেন। ব্যাপারটাতে আমার বেশ রাগ হলো। আমি বাজপাখির
মতো ছোঁ মে-রে ফোনটা নিয়ে নিলাম। তার দিকে
রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
‘ আপনিই সেই ফোন চোর! এদিকে মনে মনে মিরাকে ইচ্ছামত বকে, ভেবেও রেখেছি ও আসলে ওকে উদুম কেলানি দিব। আর আপনি আমার ফোন ধরেছেন ক্যান? আর ফোনের লক পাসওয়ার্ডই বা জানলেন কীভাবে? আপনি কি আর এই জীবনে আমার পিছু ছাড়বেন না, নাকি? বলা নেই, কওয়া নেই আমার ফোন চালাচ্ছেন। আপনার সাহস তো কম না! ‘ একদমে কথাগুলো বলল নিরা।
নিষান মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
‘একসঙ্গে এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কীভাবে? একটা একটা করে উত্তর দেই। প্রথমত, আমি তোমার ফোন চুরি করি নি, তানভীরকে দিয়ে আনিয়েছি তাছাড়া চুরি করলে ফোন বন্ধ থাকতো। আর যেহেতু তুমি আছাড় দিয়ে ফোন ভাঙছো তাই তোমার ফোন ধরেছি; এতে সাহসের কিছুই নাই। আর গাঁয়ের হলুদের দিন তোমার ফোনের লক খুলতে দেখেছি। তোমার পাসওয়ার্ড প্যার্টান L, এত সহজ পাসওয়ার্ড দিলে চোরও খুলতে পারবে। দ্বিতীয়ত, তুমি যদি বলো তবে সারাজীবন তোমার পিছু পড়ে থাকতে পারি।’
‘বিরক্তিকর ! তানভীরটা হয়েছে আপনার খাস চামচা। যেমন গুরু, তেমন তার শীর্ষ। অন্যের পার্সোনাল জিনিস না বলে ধরেন। এসব আমি মোটেও পছন্দ করি না। নেক্সট টাইম আমার কিছুতে হাত দিলে হাত কেটে রেখে দিব।’
বলে নিরা চলে যেতে নিলেই নিষান বলল,
‘ বাহ, নিরা ঝগড়া করতে তো তুমি বেশ এক্সপার্ট। ‘
‘ আর আপনি যে মা’রা’মা’রিতে এক্সপার্ট।মেয়েদের ঠাসঠুস চ’ড় মে’রে বসেন, সেটা? আমার মত ভোলাভালা মেয়েকে চ’ড় দিয়েছেন। শুনছেন, আপনার এই বদরাগের কারণে একদিন আপনার বউ ভাগবে।’
‘আমি মোটেও বদরাগী না। সেদিন তোমার দোষেই থা’প্পড় খেয়েছিলে। একা একা মেলায় গিয়েছিলে বলে খুব রাগ হয়েছিল।
আর বউ ভেগে যাওয়ার কথা বলছো? বউকে এত ভালোবাসব যে বউ আমাকে চোখে হারাবে।’
‘হয়েছে বিয়ের আগেই বউ পাগলা হয়ে বসে আছেন।’
তা তুমি কি কিছু বলতে এসেছিলে নিরা?’
‘হ্যাঁ, এসেছিলাম। কিন্তু এখন আপনার সাথে কথা মুড নাই। আপনার কর্মকাণ্ডে বেশ রাগ লাগছে আবার গতকালকের থা’প্প’ড়ের কথা মনে গেল।’
‘সুন্দরী মেয়েদের এত রাগ দেখাতে নেই, জানো না?
রাগলে তাদের ভয়ংকর সুন্দরী লাগে। তা যেই কথা বলতে এসেছো বলে যাও।’
রিমির কথা ভেবে নিরা নিজেকে শান্ত করল। তারপর নিষানকে জিজ্ঞেস করল,
‘আপনি জানলেন কীভাবে আপনাকে কিছু বলতে এসেছিলাম?’
‘এই তো, আমাকে দেখলে সবসময় দূরে দূরে থাক, আর এখন এসে আমার পাশে বসলে..’
‘হ্যাঁ, কিছু কথা বলতে এসেছি। কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব সোজাসুজি উত্তর দিবেন। যদিও জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগছে তবুও। আজাইরা উত্তর দিলে ঘুষি দিয়ে নাক ফাটিয়ে ফেলব আগেই বলে দিলাম।’
নিষান হাহা করে হেসে দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা, বলো।’
‘আপনার মনের মানুষ আছে? কিংবা আপনি কাউকে ভালোবাসেন?
নিরার কথা শুনে নিষান মনে মনে হাসলো। যাকে সে ভালোবাসে সেই যখন এইকথা বলে তখন কি উত্তর করা উচিত? তাহলে কি নিরাও ওকে পছন্দ করে?
‘ মনের মানুষ বলতে একটা মেয়েকে আমি দেড় বছর আগে একটা বিয়েতে এসে একটা মেয়েকে খুব ভালো লেগে যায়। এরপরে কিছুদিন আগে তার সাথে আবার দেখা হয়েছে। সে আমাকে পছন্দ কি না জানি না! শুধু আমাকে দেখলেই পা-লানোর চেষ্টা করে। আমি তাকে খুব ভালোবাসি। বলা যায় একপাক্ষিক ভালোবাসা। ‘
‘নিষান ভাইয়া, ভালোবাসি, সে বাসে না এত প্যাঁচিয়ে বললে হবে না।সহজ কথায় বলেন, আপনি কি সিঙ্গেল নাকি রিলেশনশিপে আছেন?’
‘আমি সিঙ্গেল।’
‘গুড। রাস্তা তাইলে ক্লিয়ার। প্রেম করতে চান?
নিরার কথা শুনে নিষান খুশিতে আটখানা। বেশ চিৎকার দিয়েই বলে উঠল,
‘আই কান’ট বিলিভ দিস! আমি যাকে ভালোবাসি সেই আমাকে প্রপোজ করছে। তার মানে তুমিও আমাকে ভালোবাসতে? গ্রেট!
নিষান ভাইয়ার কথা শুনে আমি মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। তার মানে তার একপাক্ষিক ভালোবাসার
মানুষটা আমি। এটা কি বলছেন উনি? উনি তো
আমাকে দেখতেই পারেন না। উনার মাথা-টাথা খারাপ হয় নি তো!
আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে নিষান ভাইয়া বলে উঠল, ‘কি ভাবছো নিরা?’
‘নিষান ভাইয়া, আপনি এসব কি বলছেন? আমি আপনাকে ভালোবাসতে যাব কেনো? আমি আপনাকে ভালোবাসি না। আমি তো জাস্ট জিজ্ঞেস করছিলাম আপনি সিঙ্গেল কিনা!
আপনাকে আমার খালাতো বোন রিমি পছন্দ করে।
ও আপনার সাথে প্রেম করতে চায়। তাই…
নিষান ভাইয়া হুট করে চিল্লিয়ে উঠলেন, তার চিল্লানিতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
‘ব্যাস আর একটা কথা না। তুমি এখানে আবার প্রেমের ঘ’ট’কা’লী করতে এসেছো? মন চাচ্ছে তো তোমাকে থা’প’ড়ায়ে গাল লাল করে ফেলি। তো-তোমাকে আমি ধাক্কা মে’রে দীঘীর পানিতে ফেলে দিব।’
বলে নিষান ভাইয়া রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে দিঘীর সিঁড়িতে থাকা একটা ইটে লা’থি মে’রে সেটা পানিতে ফেললেন। তার পায়ের আঙুলে যথেষ্ট ব্যথা পেয়েছেন, দুটো আঙুল থেকে নখ উঠে গিয়ে রক্ত পড়ছে। কিন্তু তাতে তার কোন
ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি তাকে শান্ত করানোর চেষ্টা করলাম।
‘ভাইয়া আপনার পায়ের নখ উঠে গেছে। আপনি প্লিজ শান্ত হয়ে বসুন। আমি ব্যান্ডেজ এনে ব্যান্ডেজ করে দিই।’
আমার কথা শুনে তিনি আরও ক্ষেপে গেলেন। আমাকে বললেন,
‘আমার প্রতি তোমার দয়া দেখাতে হবে না। তোমাকে আমি ছা’ড়’ব না। আমি আন্টিকে আবার পুরো ঘটনাটা জানাব। তোমার ঘটকালী করা আমি বের করব।’
আমি করুন গলায় বললাম ,
‘আপনি কিছু বলবেন না প্লিজ। এবার মা জানলে আমাকে প্রাণে মে’রে ফেলবে। আপনি রিমির কথাটা ভেবে দেখবেন একবার, ও ভীষণ ভদ্রমেয়ে, লক্ষ্মী মেয়ে ওর মত মেয়ে আর দুইটা হয় না।’
নিষান নিরার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
‘আবার?’
আমি এবারে কিছু না বলে তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে আসলাম। কি একটা পরিস্থিতিতে পড়লাম আমি?
একদিকে বোন পাগল বানাচ্ছে নিষান নিষান করে, অন্যদিকে ওনি আবার নাকি আমাকে ভালোবাসেন?
এখন আমি কি করব? মাঝখানে দুইজনের কাছে
আমি ফেঁ’সে গেলাম। রিমি আমাকে কত আশা নিয়ে
পাঠিয়েছে, এখন ওকে কি উত্তর দিব? বলব, নিষান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে! ধুর এসব চিন্তা করতে
একদম ভালো লাগছে না। দুনিয়ায় এত সুন্দরী
মেয়ে থাকতে ওনি যে কেন আমাকে পছন্দ করতে গেলেন।ওনি অন্য কাউকে পছন্দ করলেই তো রিমিকে সহজে বুঝিয়ে বলতে পারতাম।
এদিকে নিষান ভাইয়া আবার মাকে যদি পুরো কাহিনি বলে দেয়? এই অল্পবয়সেই এত চিন্তা করতে
করতে পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি।
আল্লাহ তুমি আমাকে বাঁচাও দুইজনের হাত থেকে।
.
.
বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে সন্ধ্যায় মিম আপুকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
সারাদিন নিষান ভাইয়ার সামনে যাই নি। রিমি আমাকে নিষান ভাইয়ার ব্যাপারটা নিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল আমি কিছুই বলি নি। এখন বাড়িতে ভালোয় ভালোয় ফিরতে পারলেই এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাব।
.
বসার ঘরে বড়দের বৈঠক বসেছে। সেখানে ছোটদের মানে আমরা কাজিনদের যাওয়া নিষেধ। তাই আমরাও নিজেদের মত আড্ডা দিচ্ছি, গানের কলি খেলছি। আড্ডাতে সবাই থাকলেও রিমি ছিল না সেই ব্যাপারটা নিয়েই কথা বলছিল তিন্নি আর তানভীর। তিন্নি তানভীররের কাছে রিমির নিষানকে পছন্দ করার ব্যাপারটা আকারে-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করছিল, যেহেতু তানভীর নিষানের খাস চামচা। তানভীর জানা মানেই নিষানের জানা।নিরা নিশ্চুপ শ্রোতা হয়ে ওদের কথা শুনছিল।
হঠাৎ করে রিমি এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। এসেই নিরাকে বলল,
‘নিরাপু, একটা বিশাল কাহিনি ঘটেছে…
আমি বড়দের কথা আড়ি পেতে শুনে এসেছি।’
বলে হাঁপাতে লাগল।
নিরা একটু পন্ডিত ব্যাক্তিদের মত রিমিকে বলতে লাগল,
‘কারো কথা আড়ি পেতে শুনতে নেই। আর বিশাল কাহিনিটাই বা কি?’
রিমি হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগল,
‘তো-তোমার বিয়ে নিষান ভাইয়ের সাথে। আমি এইমাত্র শুনে এলাম।’
রিমির কথা শুনে আমি এক লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে গেলাম। মুখ দিয়ে অটোমেটিক বের হয়ে গেল,
‘অসম্ভব!’
#চলবে..