ভালোবাসি প্রিয় পর্ব-১৬+১৭

0
1008

#ভালোবাসি_প্রিয় (১৬)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

আমার জানা মতে আমাদের বাসায় চার পা বিশিষ্ট কোন বিড়াল নেই।তাই আমাদের বাসার দুই পা বিশিষ্ট বিড়াল চাইলে আমার সাথে এক‌ই প্লেটে খেতে পারে।

এই রে রাজ কি সেদিন দেখে নিয়েছিল আমি ওর রেখে যাওয়া খাবার খেয়েছিলাম। ছিঃ ছিঃ কি না কি ভেবেছিল রাজ।

কুয়াশা! খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে গেলে কিন্তু খেয়ে মজা পাবে না।

আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার এঁটো খাবার খাব?

সেদিন তো বিড়ালের মত চুরি করে ঠিকই খেয়েছিলে।

আপনি ই তো বলেন খাবার নষ্ট করতে হয় না। খাবার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য খেয়েছিলাম।

নাও এখন হা করো দেখি। কান্না কাটি করে তো চোখ মুখ লাল করে ফেলেছ। আমাকে ভালোবাস বলে দিলেই তো পারো #ভালোবাসি_প্রিয় । ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার নয় কুয়াশা। এমন ও তো পারে তোমার এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা সারাজীবন অপ্রকাশিত‌ ই থেকে গেল।প্রকাশ করার আর সুযোগ পেলে না। সময় থাকতে সবকিছুর মুল্য দিতে হয় কুয়াশা।



কেটে গেল বেশ কিছু দিন। কিন্তু রাজের প্রতি আমার ভালোবাসা অপ্রকাশিত থেকেই গেল।এর‌ই মধ্যে আবার শাফিনের সাথে শীতলের বিয়েটা ও হয়ে গিয়েছে । যদি ও বিয়েতে আমি পরীক্ষার দোহাই দিয়ে যাই নি তবে শুনেছি বিয়েটা নাকি সুন্নতি নিয়মে হয়েছে। বিয়ের পরে ওরা হানিমুনে যাওয়ার পরিবর্তে ওমরাহ ‌হজ্বে গিয়েছে। তবে আমার এখন শাফিন কে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে।ও‌‌ যদি সেদিন ব্রেকআপ না করত আমি কখনও রাজ কে পেতাম না। আমি কখনো পরিবর্তন হতে পারতাম না। আমারা দুইজনেই এক‌ই মেন্টালিটির ছিলাম। আমাদের কারোরই পরিবর্তন হ‌ওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। অথচ এখন আমরা দুজন‌ই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি। ইসলাম কে জানতে ও মানতে শিখেছি। আসলে আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।
আমার আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। যদিও পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালো নিয়েছি তবু ও টেনশন হচ্ছে, আমি কি ফাষ্ট ক্লাস করতে পারব? কিছু দিন আগে যখন রাজ কে সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কি সত্যিই দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?
আমি যতটুকু জানি প্রথম স্ত্রী যদি স্বামী কে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি না দেয় তাহলে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে না।

কিন্তু তুমি তো আর আমাকে স্বামী বলে মানো‌ না।

মানি বা না মানি আমি কখনোই আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিব না।

ঠিক আছে করব না দ্বিতীয় বিয়ে। তবে একটা শর্ত আছে।

কিসের শর্ত?

তোমাকে পরীক্ষায় ফাষ্ট ক্লাস পেতে হবে।আর আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি পারবে না।আর যদি না পার তখন আমার দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দিতে হবে।

ঠিক আছে আমি রাজি। আমি ও ফাস্ট ক্লাস পেয়ে দেখিয়ে দিব এই কুয়াশা কখনো আপনার ভাগ কাউকে দিবে না। (মনে মনে বললাম)।
আজ আমার কম্পিউটার পরীক্ষা। ৫ টা বোর্ডের প্রশ্ন দুই থেকে তিন বার করে শেষ করেছি। তাছাড়া রাজ ও সাজেশন জোগাড় করে এনে দিয়েছে।আর কাকতালীয় ভাবে রাজের এনে দেওয়া সাজেশনের সাথে শায়ান ভাইয়ার দেওয়া সাজেশন হুবহু মিলে গিয়েছে।হয়তো রাজ কোনো ভাবে শায়ান ভাইয়ার থেকেই সাজেশন আনিয়েছে। পড়া শেষ করে এসে দেখি সবাই না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি এসে বসতেই আম্মা আমার প্লেটে ভাত আর ডিম দিল। আমার পাতে ডিম দেওয়া দেখে রাজ ফোড়ন কেটে বলল, আম্মা ওকে ডিম দিচ্ছ কেন? এমনিতেই তো বেচারি পরীক্ষার খাতায় এতো গুলো ডিম পাবে। আবার এখন ডিম খাচ্ছে দেখা গেল পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখতে পেরে নকল করা শুরু করে দিল।

আম্মা আপনার ছেলেকে বলে দিন, আমি মোটেই পরীক্ষায় ডিম পাবো না আর না আমার নকল করতে হবে। আমি যথেষ্ট ভালো প্রিপারেশন নিয়েছি।আর যখন নকল করতাম সৎ ভাবেই করতাম। নকলবাজ হতে পারি তবে অসৎ ভাবে নকল করি না,সৎ নকলবাজ আমি।
আমার কথা শুনে রাজ এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেন আমি কোন‌ চোর।এই ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেন?

এর আগে তো কখনো শুনিনি সৎ ভাবেও নকল করা যায়।এই প্রথম শুনলাম তো তাই একটু অবাক হয়েছি ।

ধরেন, যেসব ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখতে পারছে না। খাতা কলম নিয়ে ঘাপটি মে*রে রয়েছে‌ কিন্তু যেই একবার ওয়াসরুমে গেল ,আর ওয়াসরুম থেকে ফিরে এসে বিদ্যাসাগর হয়ে গেল ‌সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের কে অসৎ নকলবাজ বলে। কিন্তু আমি তো সেরকম কিছু করি না। আমার সাথে কোন‌ নকলের টুকরো ও থাকে না। আমি আসল পয়েন্ট গুলো বেঞ্চে লিখে রাখি ।পরে যখন ভুলে যাই তখন দেখে নি। এইখানে তো আমার অসৎ কোন উদ্দেশ্য থাকে না।তাই আমি একজন সৎ নকলবাজ।

আহা কি লজিকের বাহার তোমার।

খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। তখন ই রাজ এসে বলল পরীক্ষা দিয়ে যাওয়ার আগে দুই রাকাত সালাতুত হাজতের নামাজ পড়ে যাও।

কিন্তু সালাতুল হাজতের নামাজ কি? কিভাবে পড়তে হয়? কখন পড়তে হয় আমি তো কিছুই জানি না।

ইচ্ছা পূরণের সালাতকেই সালাতুল হাজত বলা হয়!

⭕ সালাতুল হাজত পড়ার নিয়মঃ

” কোন হালাল চাহিদা পুরনের জন্য আল্লাহ’র সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়”

[ইবনু মাজাহঃ হা/১৩৮৫]

⭕ কখন পড়বেনঃ

কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে এ নামাজ পড়তে হয়!

⭕ নিষিদ্ধ সময়ঃ

সালাতুল হাজত নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতীত যেকোনো সময়েই পড়তে পারেন!

⭕ নিয়মঃ
নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। হাজতের নিয়তে অন্যান্য নামাজের মতোই দু-রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন!

⭕করণিয়ঃ
–সালাতুল ‘হাজত’ নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও ছানা (প্রসংসা) এবং নবী করিম সা. এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে!!
⭕ এই দোয়া পড়বেন মুনাজাতে ইনশাআল্লাহঃ

(ُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)

[রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্কিনা আজাবানা নার]

অথবাঃ

ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ
ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻣَﺔَ
ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻟَﺎ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻟَّﺎ
ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ
ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ ‎

উচ্চারণ: লাইলাহা‬ ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস‌ সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমীন।

[তিরমিজি, মিশকাতঃ হা/৮৭৩,
আবু দাউদঃ ১৩১৯; সালাত অধ্যায়-২]

এইবার বুঝতে পারলে তো কিভাবে পড়তে হবে।

হ্যাঁ।পড়ছি আমি।

দেখতে দেখতে আমার ছয় টা সাবজেক্টের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।সব কয়টা সাবজেক্ট ই ভালো পরীক্ষা হয়েছে আমার।আজ শেষ পরীক্ষা।তাই পরীক্ষা শেষ করে আমি আর জামিয়া বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফুচকা খেতে গেলাম। ফুচকা খাওয়ার এক পর্যায়ে জামিয়া বলে উঠলো ,দোস্ত শায়ান ভাইয়া কে #ভালোবাসি_প্রিয় কথা টা বলা হলো না আমার।

কেন জামিয়া? এখন তো আমাদের পরীক্ষা শেষ ‌। তাহলে এখন বলতে সমস্যা কোথায় তোর?

শায়ান ভাইয়ার এই ডিসেম্বর মাসেই বিসিএস পরীক্ষা।
এখন কি ভাইয়া কে বলা ঠিক হবে।

ডিসেম্বর মাসে শায়ান ভাইয়ার পরীক্ষার কথা শুনে আমি অনেক টা অবাক হয়ে গেলাম।কারন…

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,

#ভালোবাসি_প্রিয় (১৭)

#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)

ডিসেম্বর মাসে শায়ান ভাইয়ার পরীক্ষার কথা শুনে আমি অনেক টা অবাক হয়ে গেলাম।কারন অক্টোবর /নভেম্বর/ডিসেম্বর এর মধ্যে তো বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে কি শায়ান ভাইয়ার বিসিএস পরীক্ষার এক ধাপ শেষ হয়ে গিয়েছে জামিয়া?

আমি জানি না দোস্ত। আসলে বিসিএস সম্পর্কে আমার তেমন কোন ধারণা নেই।

মূলত বিসিএস পরীক্ষা পর্যায়ক্রমে তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা(এমসিকিউ) লিখিত পরীক্ষা, এবং মৌলিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ)। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে চুড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে।
প্রথম ধাপ: প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রতি বছর সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার এক মাস আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় এক থেকে দেড় মাস পর ফলাফল প্রকাশিত হয়।
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০ মার্কের হয়ে থাকে।এর মধ্যে
১.বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকে – ৩৫ মার্ক
২.ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ এবং লেকচার থেকে- ৩৫
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলী- ৩
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী-২০
৫.সাধারন বিজ্ঞান-১৫
৬.কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি -১৫
৭.গানিতিক চুক্তি_১৫
৮.মানসিক দক্ষতা- ১৫
৯.ভূগোল ,পরিবেশ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা – ১০
১০.নৈতিকতা , মূল্যবোধ ও সুশাসন – ১০

প্রিলিমিনারি শুধু টিকার পরীক্ষা। প্রার্থী কমানোর জন্য এই পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু প্রার্থী বাছাই করা হয়। এ যাবত কালের ইতিহাসে ১২০ বা এর একটু কম-বেশি যারা পেয়েছেন তারা সবাই প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করেছেন।

দ্বিতীয় ধাপ:লিখিত পরীক্ষা
এটি বিসিএস এর প্রধান পরীক্ষা। সাধারণত প্রতি বছরের অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক মাস আগে পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং পরীক্ষার প্রায় ২ থেকে ৩ মাস পর সাধারণত ফলাফল প্রকাশিত হয়।
লিখিত পরীক্ষা ৯০০ মার্কের হয়ে থাকে।
১.বাংলা – ২০০ সময় – ৪ ঘন্টা
২.ইংরেজি – ২০০ সময় -৪ ঘন্টা
৩.বাংলাদেশ বিষয়াবলী _ ২০০ সময় – ৪ ঘন্টা
৪.আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী -১০০ সময়-৩ ঘন্টা
৫.গানিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা-১০০ সময় _৩ ঘন্টা।
৬.বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি_১০০ সময় -৩ ঘন্টা

লিখিত পরীক্ষা ৯০০ নাম্বরের মধ্যে পাস নম্বর ৫০% অর্থাৎ ৪৫০ নম্বর পেলেই ভাইভা দেওয়া যায়। অর্থাৎ মোট ৪৫০ পেলেই হবে।তবে কোন বিষয়ে ৩০% এর কম নম্বর পেলে সে বিষয়ে কোন নম্বর পাই নি বলে বিবেচিত হয়।মানে ৩০% এর নিচের নম্বর গুলো যোগ হবে না।

তৃতীয় ধাপ: মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হ‌ওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষার দেড় থেকে দুই মাস পর বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। মৌখিক পরীক্ষা ২০০ মার্কের হয়ে থাকে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে ভাইভার জন্য ডাকা হয়।ভাইভায় পাশ হচ্ছে ১০০ নম্বর। ভাইভা পাশ করলে তখন লিখিত ও ভাইভা নম্বর যোগ করে মেধাক্রম করা হয়। মেধাক্রম ও চয়েজ যদি ব্যাটে বলে মিলে যায় তাহলে ক্যাডার আর না হলে নন ক্যাডার।

আচ্ছা বুঝলাম । কিন্তু কুয়াশা আমরা কি বিসিএসে আবেদন করতে পারব?

উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর চার বছরের অনার্স পাশ হলেও বিসিএস পরীক্ষায় আবেদন করা যায়।কেউ যদি ‌তিন বছরের অনার্স বা ডিগ্ৰী পাস কোর্সে পড়ে থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই মাস্টার্স পাশ হতে হবে। শিক্ষা জীবনে একের অধিক তৃতীয় শ্রেণী বা 3rd Division থাকলে বিসিএস পরীক্ষায় আবেদনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

বাহ্ কুয়াশা ‌! তোর তো বিসিএস সম্পর্কে অনেক ধারণা আছে।

আসলে শাফিনের সাথে রিলেশন থাকাকালীন ওর মুখে বিসিএস এর গল্প শুনতে শুনতে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।

এখন ও ভালোবাসিস শাফিন কে?

না।

তাহলে রাজ কে ভালোবাসিস?

হুম , অনেক।

তাহলে রাজ কে বলছিস না কেন #ভালোবাসি_প্রিয় ।যার জন্য নিজেকে এতো পরিবর্তন করলি, টিকটকার থেকে একজন সাধারণ মেয়ে হয়ে গেলি, নামাজ পড়া শুরু করলি, বোরকা হিজাব পরতে শুরু করলি ।আর তাকেই তোর মনের কথা টা বলতে পারলি না।

আচ্ছা জামিয়া, শায়ান ভাইয়া কি অনেক সুন্দর?

আমার চোখে দেখা সব থেকে সুন্দর ,স্মার্ট,শিক্ষিত সুদর্শন, আধুনিক পুরুষ।

জামিয়া তুই তো রাজকে দেখিস নি।রাজ যদি শায়ান ভাইয়ার থেকে ও সুন্দর হয় , তখন কি আবার রাজের প্রেমে ও পড়ে যাবি?

তুই এই কথাটা বলতে পারলি কুয়াশা? আমি রাজ কে দেখি নি তবে যথেষ্ট সম্মান করি। সে হাজার সুন্দর হোক তবু ও তার প্রেমে পড়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। তুই বিশ্বাস কর কুয়াশা আমি ও শায়ান ভাইয়ার মতো এক পুরুষে আসক্ত হয়ে গেছি। এখন অন্য পুরুষের প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই।তবে হিং*সা হচ্ছে সেই ভাগ্যবান মেয়েটার প্রতি যার প্রতি শায়ান ভাইয়া আসক্ত। একটা পুরুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসলে বলতে পারে আমি এক নারীতে আসক্ত।

কিন্তু ‌শায়ান ভাইয়া তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। তোকে কি শায়ান ভাইয়া মেনে নিবে?

মেনে নিবে না জেনে ও আমি তাকে ভালোবেসেছি । প্রয়োজনে আমি তার পায়ে পরব , আমাকে তার বুকে একটু ঠাঁই দেওয়ার জন্য।

বাদ দে জামিয়া।চল একটু শপিং এ যাবো।

হুম চল। আমার ও কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

অবশেষে দুই তিন টা দোকান ঘুরে আমার একটা বোরকা পছন্দ হল। আমার জন্য একটা বোরকা হিজাব নিলাম। আম্মার জন্য একটা জামদানি শাড়ি বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি নিলাম। মার্কেট থেকে বের হবো এমন সময় ডলের গায়ে একটা রয়েল ব্লু কালারের পাঞ্জাবি দেখে চোখ আটকে গেল। রাজের গায়ে এই কালার টা খুব ভালো মানাবে। কোন কিছু না ভেবেই রাজের জন্য পাঞ্জাবি টা নিয়ে নিলাম। বাসায় ফিরে কলিং বেল ‌দিতেই আম্মা দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই আম্মা বললেন, পরীক্ষা কেমন হলো মা?

আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে আম্মা।এই বার আমার ফাস্ট ক্লাস কেউ ঠেকাতে পারবে না।

আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো। অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার জন্য ঠান্ডা শরবত করে দিচ্ছি। আম্মা শরবত করতে গেলে আমি আম্মাকে পিছন থেকে জ*ড়ি*য়ে ধরলাম।

কি হয়েছে মা? তোমাকে তো ফ্রেশ হতে বললাম।

আম্মা আমি একটা ভুল করেছি আমাকে কি বকা দিবেন?

পা*গ*লী মেয়ে বকা কেন দিব? মায়েদের কাছে সন্তানেরা হাজার টাকা ভুল করলে ও ভুল মনে হয় হয় না। তুমি যখন মা হবে তখন বুঝতে পারবে। তোমাদের বিয়ের তো অনেক দিন হয়ে গেল , এখন ও একটা নাতি নাতনি আনছো না কেন? সন্তান ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না মা। কিছুদিন পরেই তোমার বাবা অবসরে যাবেন । তখন দুই বুড়ো বুড়ি মিলে নাতি নাতনির সাথে মজা ,হাসি ঠাট্টা , খেলাধুলা করব কতো মজা হবে ভাবতেই শান্তি লাগে।

বাহ্ যেমন ছেলে তেমন মা। ছেলে কথায় কথায় লজ্জায় ফেলবে আবার এই দিকে মা ও লজ্জায় ফেলছে। তিনি নাতি নাতনির স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। অথচ তার ছেলে ন্যাকা কিছুই বোঝে না। আমি তাড়াতাড়ি করে নাতি নাতনির টপিক চেন্জ করে আম্মার হাতে শাড়ির প্যাকেট টা ধরিয়ে দিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি রাজ এই অবেলায় শুয়ে রয়েছে। কিন্তু ওর তো এখন বাসায় থাকার কথা নয়।

আপনি এখন বাসায়?

কেন আসতে পারি না?

আমি ঐ ভাবে কিছু মিন করি নি। আপনার তো এখন মাদ্রাসায় থাকার কথা।এই অসময়ে বাসায় এসেছেন, তাই বললাম আর কি।

ঘরে এতো সুন্দরী ব‌উ থাকতে মাদ্রাসায় কি মন বসে বল?তাই তো চার দিনের ছুটি নিয়েছি মাদ্রাসা থেকে। কিন্তু ব‌উ তো আর পাত্তা দেয় না। শুধু শুধু ছুটি নিয়েছি। এখন ভাবছি ছুটি বাতিল করে দিব।

আপনি কি অসুস্থ? এখন শুয়ে রয়েছেন কেন?

একটু মাথা ব্যথা করছে তাই।

চা করে এনে দিব।

এই মাথা ব্যথা চা খেয়ে কমবে না।

তাহলে কিভাবে কমবে?ঔষধ এনে দিব মাথা ব্যথার?

এই ব্যাথা ঔষধে কমার নয় কুয়াশা।কবি বলেছিল,”হে বিবাহিত বৎস তোমার যদি কখনো মাথা ব্যথা হয় একমাত্র তোমার ব‌উয়ের নরম হাতের ছোঁয়ায় পারবে সেই মাথা ব্যথা কমাতে”। কিন্তু আমি বিবাহিত সিঙ্গেল আমার তো আর সেই সৌভাগ্য নেই। এজন্যই তো দ্বিতীয় বিয়ে

রাজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করলাম।

আহ্ খুব ভালো লাগছে কুয়াশা। তোমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে একদম মাথা ব্যথা কমে গেছে। আজকের পরীক্ষা কেমন হয়েছে ?পাস করবে তো ? নাকি খাতায় বড় বড় ডিম পাবে?

অনেক ভালো হয়েছে। শুধু পাস নয় দেখেন ফাস্ট ক্লাস পাবো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ । আপনার জন্যই এবার এতো ভালো পরীক্ষা দিয়েছি। আপনার জন্য একটা গিফট আছে।

কি গিফট দাও দেখি?

আমার লজ্জা করছে । আপনি চোখ বন্ধ করুন।

চলবে ইনশাআল্লাহ…
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে