#ভালোবাসি_প্রিয়
পর্ব:০৪
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
আমি ঘুমবো কোথায়?
আমার বু*কে।
মানে কি?
মানে এতো বড় একটা বিছানা তোমার তো চোখে পরছে না। তুমি ঘুমনোর জায়গা পাচ্ছ না তাই তোমাকে ঘুমনোর জায়গা দেখালাম।
আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার মতো থার্ড ক্লাস লোকের সাথে বেড শেয়ার করব? প্রয়োজনে আমি এই সিঙ্গেল সোফা তে বসে বসে রাত কাটাব তবু ও আপনার সাথে এক বিছানায় থাকব না।
ঠিক আছে। আমার কোন সমস্যা নেই। তবে আমাদের রুমের পিছনে আমার দাদুর ক*ব*র। জানোই তো আগেকার মানুষ ক*ব*র*স্থানে ক*ব*র না দিয়ে যেইখানে সেইখানে ক*ব*র দিত।তো মাঝরাতে দাদু নতুন বউ দেখতে ও আসতে পারে। আমি ঘুমলাম।শুভ রাত্রি।
ধ্যাত এখন নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে।কি দরকার ছিল এতো পা*ক*না*মি করার?একে তো অপরিচিত জায়গা ভ*য় লাগছে, তার ওপর আবার মশার য*ন্ত্র*ণা।মনে হচ্ছে মশা কে এক সিরিঞ্জ র*ক্ত দিয়ে বলি “নে ভাই আমার পক্ষ থেকে এই র*ক্ত টুকু খা তবু ও আমাকে বিরক্ত করিস না”। এই মশার জ্বা*লা সহ্য করার চেয়ে আমি বরং মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পরি। কিন্তু রাজ তো আর এক বার ও ডাকল না।
কুয়াশা এখন ও সময় আছে। চাইলে বিছানায় আসতে পারো। এখন তোমার ইচ্ছা। দাদুর সাথে দেখা করতে চাইলে সোফাতে থাক।
এই আপনার কোলবালিশ কই?
বউ থাকতে অবৈধভাবে কোলবালিশের ব্যবহার করব কেন?
“আজব তো “। কোলবালিশ আবার অবৈধ হলো কবে?
দেখ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। দেনমোহর পরিশোধ করেছি। কিন্তু কোলবালিশ কে তো আর মোহরানা দেয় নি। তাহলে এখন যদি কোলবালিশ কে জ*রি*য়ে ধরি সেইটা তো অবৈধ হবে তাই না?কি দরকার বৈধ জিনিস থাকতে অবৈধ জিনিস ব্যবহার করার?
“আহা কি লজিক আপনার”।দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে জানেন না। অথচ কথা বলেন লাগাম ছাড়া।
কথা কা*টা*কা*টি*র এক পর্যায়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি ঠিক পায় নি। ঘুম ভাঙল ফজরের আযান শুনে। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি ডিম লাইটের মৃদু আলোতে এক জোড়া চোখ আমার দিকে গোলগাল করে তাকিয়ে আছে।
রাতে তো খুব বলেছিলে আমার মতো থার্ড ক্লাস লোকের সাথে বেড শেয়ার করবে না।অথচ এখন আমার বু*কে*র উপর শুয়ে আছ ।আমার বু*ক টা কেই বেড বানিয়ে নিয়েছ।
আসলে রাতে আমার খুব ভ*য় লাগছিল। মনে হচ্ছিল দাদু এসে আমাকে বলছে,” কুয়াশা চল আমরা রো*মা*ন্স করি”। আমি রাজের থেকে ও হ্যান্ডসাম , আবার রোমান্টিক ও।
ক ক কি বলছেন আপনি? আমি আপনার নাতবউ।
তো কি হয়েছে? বোনের বোন মানে শালি যদি আধাঘরওয়ালি হতে পারে তাহলে বরের দাদু কেন আধাবর হতে পারবে না?
কিন্তু এখন তো আমার মনে হচ্ছে আপনি ইচ্ছে করে আমাকে ভ*য় দেখিয়েছেন যাতে আমি আপনার কা*ছা*কা*ছি আসি। আচ্ছা ধরিবাজ লোক আপনি।
উঠবে নাকি আজ সারাদিন আমার বু*কে*র উপর শুয়ে থাকার পরিকল্পনা করেছ?অবশ্য তুমি চাইলে আমার কোন সমস্যা নেই।
বয়েই গেছে আপনার বু*কে শুয়ে থাকতে। নির্ঘাত ভ*য় পাচ্ছিলাম তাই ।
হুম দেখতেই তো পাচ্ছি।
আমি ফ্রেশ হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে যাব। তুমি ও নামাজ পড়ে নিও।
আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। আমি নামাজ পড়ি বা না পড়ি তাতে আপনার কি?
তুমি এখন আমার স্ত্রী। তোমার ভালো মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। নামাজ না পড়ার ভ*য়া*ব*হ শাস্তির কথা উল্লেখ আছে হাদিসে।কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তায়ালা তার উপর থেকে নিজের জিম্মাদারি উঠিয়ে নেয়।[বুখারী :১৮]
অথাৎ যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল সে যেন আল্লাহ তায়ালা থেকে নিজের সম্পর্ককে গুটিয়ে নিল। আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল, কাফেরদের মধ্যে গন্য হলো। হাদিস শরীফে এসেছে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়া শিরকের পর সবচেয়ে বড় গুনাহ।এমনকি একটা হ*ত্যা,লুন্ঠন, ব্যা*ভি*চা*র, চুরি এবং মদ পানের চেয়ে মা*রা*ত্ব*ক গুনাহ যার শাস্তি দুনিয়া এবং আখিরাতে উভয় স্থানে ভোগ করতে হবে।যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না আর নামাজের ব্যাপারে অলসতা করে তাকে ১৫ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে।তার মধ্যে থেকে ৬ ধরনের শাস্তি দুনিয়াতে,৩ ধরনের শাস্তি মৃ*ত্যু*র সময়, ৩ ধরনের শাস্তি ক*ব*রে, এবং ৩ ধরনের শাস্তি হাশরে।
সকাল ৭ টা
রুমে বসে ছিলাম এমন সময় নাদিয়া আপু আমার হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বলল, কুয়াশা শাড়ি টা পরে এসো। অনেক মহিলারা আসছে তোমাকে দেখতে। আচ্ছা শাড়ি পরতে পার তো? অবশ্য না পারলে ও সমস্যা নেই। তুমি অলরাউন্ডার বর পেয়েছ। রান্না করা থেকে শুরু করে সংসারের সব কাজ পারে। আম্মা বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকে, আমি ও শ্বশুর বাড়ি থাকি বাধ্য হয়ে ভাইয়াকেই রান্না বান্না সংসারের অন্য কাজ করতে হয়। ভাইয়া খুব ভালো শাড়ি ও পরাতে পারে। তুমি পরতে না পারলে ভাইয়ার থেকে সাহায্য নিতে পার।
না না আপু আমি নিজেই পরতে পারব ।কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমার।
ঠিক আছে । তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।
রাজের মা, শুনলাম তোমার ছেলের বউ নাকি ফোনের মধ্যে নাচানাচি লাফালাফি করে বেড়ায়।ঐ যে কি জানি টিকটিকি না টিকটক বলে।রাজের মতো সোনার টুকরা ছেলেকে এমন একটা ধায়ছানি মেয়ের সাথে বিয়ে দিলে? এই মেয়েকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর মধ্যে শিক্ষা দিক্ষা কম।আমরা যে মুরব্বি দাঁড়িয়ে আছি কোথায় পা ছুঁয়ে সালাম করবে তা না করে মুখে মুখে সালাম দিল।
আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই নাদিয়া আপু বলে উঠলো, কাকিমা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করা শরিয়তে সম্মত নয়।পা ছুঁয়ে সালাম করা অমুসলিমদের কাজ।আর তা সালাম নয়,তা আসলে প্রণাম। সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য মাথা নত করা বৈধ নয়।আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল,হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন তার কোন ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাত করবে, তখন সে কি মাথা ঝুকাবে বা তাকে জ*ড়ি*য়ে ধরবে বা চু*মু খাবে? তিনি বললেন না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুছাফাহা করবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , হ্যাঁ।[তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৮০
শিষ্টাচার অধ্যায় মুছাফাহা ও মু`আনাক্বা অনুচ্ছেদ-৩]
এরপর আপু আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।রাজদের এক তলা বিশিষ্ট বাসা। সর্ব মোট চারটি রুম। মাঝখানে ডাইনিং। প্রত্যেকটা রুম খুবই পরিপাটি করে গোছানো। রুম দেখেই বোঝা যায় বাসার মানুষ গুলো ঠিক কতটা পরিপাটি। একটা রুমে দেখতে পেলাম শুরু বইয়ের সমাহার। ছোটখাটো একটা লাইব্রেরী বলা যেতে পারে। হঠাৎ একটা বইয়ের দিকে আমার চোখ আটকে গেল, বিসিএস প্রিলিমিনারি লেকচার শীট।
আপু বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কে নিচ্ছে?
কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি নাদিয়া আপু নেই। আমার জানা মতে রাজের বাবার তো বিসিএস দেওয়ার বয়স নেই,আপু ও শ্বশুরবাড়ির থাকে,রাজ ও শিক্ষকতা করে। তাহলে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি কে নিচ্ছে?
চলবে ইনশাআল্লাহ…..