#ভালোবাসি
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া_জাহান
সারা রাত ট্রেনে জার্নি করার পর অবশেষে পৌছালাম নিজ গন্তব্যে। কাল বিয়েতে রাজি হওয়ার ঠিক এক ঘন্টা পর বাবা আবার ফোন দিয়ে বললো পাঁচ দিন পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে ।আর আজ রাতের ট্রেনেই আমাকে বাড়ি ফিরতে বলছেন।তাই একরকম বাধ্য হয়েই রাতের ট্রেনে উঠতে হলো।আমার সঙ্গে তিহাও এসেছে।একমাত্র বেস্টুর বিয়ে বলে কথা না এসে পারে।আর আমার উপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে সেটাও তো জানে তাই এসময় আমার পাশে থাকার জন্য আমার সাথে এসেছে।
সারারাত আমি নির্ঘুমে কাটিয়েছি।শুনেছি মানুষ ভালোবেসে ঠকলে রাতে ঘুমাতে পারে না।তখন কথাটা নিয়ে খুব হাসতাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতোটা কষ্টের কারনে সেই মানুষ গুলো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে আমার পাশে থাকা মহান ব্যাক্তিটি কে নিয়ে।উনি আসার সময় বুক ফলিয়ে খুব গর্ববোধ নিয়ে বলেছেন উনি আমার সাথে যাচ্ছেন আমাকে মানুষিক ভাবে সাপোর্ট করার জন্য। ট্রেনে উঠার সাথে সাথেই একটা হাই তুলে
—- ” মিহু একদম চিন্তা করিস না আমি আসি তো তোর সাথে!তোর এক বিন্দু ক্ষতিও আমি হতে দিবো না।কোনো রকমের অসুবিধা হলে শুধু একবার আমায় ডাকবি সাথে সাথে সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে।খুব ক্লান্ত লাগছে রে আমি দুই মিনিট একটু ঘুমিয়ে নেই!”
এই বলে যে তখন ঘুমিয়েছে এখন বারো ঘন্টা হয়ে গেছে ওনার উঠার কোনো নাম নেই।মরার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। দেখে৷ মনে হচ্ছে শতোজনমের ঘুম এক সাথে ঘুমিয়ে নিচ্ছে।আমি ওকে হাত দিয়ে ঢেলছি আর জোরে জোরে ডাকছি,
—- ” তিহা! এই তিহা!উঠ আমারা পৌঁছে গেছি। এই দেখ ট্রেন অনেকক্ষণ আগে থেমেছে। সবাই নেমে গেছে।শুধু আমরা দুজনই ট্রেনে! আর কেউ নাই!এই উঠ বলছি উঠ!কি রে শুনতে পাচ্ছিস না? উঠ!”
আমার কথায় উনার কিছুই হলো না।আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন। আমি মুখে বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করে এই কুম্ভকর্ণ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানো যায়।সোজা কথায় যে এই ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না তা তো বুঝতেই পারছি।ভাবতে ভাবতেই আমার হাতের দিকে নজর পরলো।আমার হাতে একটা পানির বোতল।বোতল টাকে ভালো করে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- ” সোজা আংগুলে ঘি না উঠলে তো আংগুল টা বাঁকাতেই হয়!সরি তিহু বেবি এখন তোমার একটু শাওয়ারের দরকার! ”
শেষের কথাটা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম।তারপর পানির বোতল টা বাঁকা করে ধরে তিহার মুখ বারার উপর থেকে শাওয়ারের মতো ছাড়লাম পানি গুলোকে।তিহার মুখে পানি গুলো পরতেই ও ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ মুখ থেকে পানি গুলো জেরে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
—- ” ওভাবে তাকালে লাভ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমরা এই দুই এলিয়েন ব্যাতিত আর কোনো মানুষ আছে কি-না! অনেকক্ষণ ডাকার পরও কেউ যদি না উঠে তাহলে তো এমন টা করতেই হবে!”
আমার কথায় তিহা চারিপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সত্যি আমরা ছাড়া আর কেউ নাই।তাই আমার উপর শতো রাগ হওয়া সত্বেও মুখে কিছু বললো না।কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার উপর চরম ক্ষেপে আছে।চোখমুখ খিঁচে চুপচাপ ব্যাগ উঠিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর কান্ড দেখে আমি মুখ টিপে টিপে হেসে ওর সাথে বেরিয়ে আসলাম।
মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো ট্রেন থেকে নেমে যে এর প্রথমেই এর সাথে দেখা হবে বুঝতে পারিনি।পারলে নামতামই না যত্তসব! আমার সামনে অর্ক আহমেদ মানে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই ব্যাটা ছোটো বেলা থেকেই আমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে।যেখানে যাই সেখানেই হাজির হয়ে যায়।কেন জানি একে আমার কিছুতেই সহ্য হয় না।দেখলেই গা জ্বলে যায়।আমাকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর জিজ্ঞেস করলো,
—- ” কেমন আছো মিহি?”
মনে মনে বললাম,
—- ” এতোক্ষণ তো ভালাই ছিলাম তোরে দেইখা এখন বহুত খারাপ হইয়া গেছি।”
কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে বললাম,
—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো অর্ক ভাইয়া?”
আমার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে ছোটবেলা থেকেই উনার মুখ টা কালো হয়ে যেতে।আজও তাই হলো মুখ টা কালো করেই করুন গলায় বললো,
—- ” আমাদের বিয়ের ডেটও ঠিক হয়ে গেছে আর পাঁচ দিন পর বিয়ে তুমি এখনো আমাকে ভাইয়া ডাকবে?এখন তো এই ডাক টা না ডাকতে পারো!”
—- এখনো বিয়ে টা হয়নি। যখন হবে তখন দেখা যাবে ঠিক আছে অর্ক ভাইয়া!
আমার কথাটা শুনে অর্কের চুপসে যাওয়া৷ মুখ টা আরো চুপসে গেলো।তিহা অর্কের অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।এমন সময় বাবা চলে আসলো।এসেই আমাকে বলতে লাগলো,
—- ” কিরে মা তুই কখন নামলি?সবাই আরো কতো আগে নেমে গেছে! তোরা নামছিস না দেখে তোকে কতোবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। এতোক্ষণ ট্রেনে বসে কি করছিলি?আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় এই ট্রেনে আসিস নি!”
আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললাম,
—- ” সে অনেক লম্বা কাহিনি বাবা পরে একসময় শুনাবো।আর ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ফোন বন্ধ! ”
বাবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—- ” ঠিক আছে এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। তোর মা সেই কখন থেকে তোর জন্য রান্না করে বসে আছে।”
।
।
।
আমরা সবাই বাড়ি চলে এলাম।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই মাহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলছে,
—- ” আপুই কতো দিন পর তোর সাথে দেখা!আমি তো আজ খুব খুব খুব খুশি!”
আমি ওকে ওর মাথায় হালকা একটা বারি মেরে বললাম,
—- ” আমাকে কি মেরে ফেলার ধান্দায় আছিস নাকি?এতো জোরে কেন ধরেছিস আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড় আমাকে!”
মাহি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত ভাজ করে মুখ গোমড়া করে বললো,
—- ” ছোটো বোনটা কতো ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রকাশ করলো আর তুমি কিনা এইভাবে বলছো!আচ্ছা ছাড়ো তোমার থেকে এর থেকে বেশ কি বা আশা করবো!তোমাকে এখন আর লাগবে না আমার আরেক টা মিষ্টি আপু চলে এসেছে এখন আমি তাকেই ভালোবাসবো হুম! ”
কথাটা বলেই তিহার কাছে গিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” তুমি নিশ্চয় তিহা আপু তাই না!”
তিহাও একটা মিষ্টি করে হেসে মাথা নেরে হ্যা বললো।মাহি আবার একটা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” আমি মাহি নিশ্চয় আপুই তোমাকে আমার পরিচয় আগেই বলেছে!”
তিহা এবার দুহাত দিয়ে মাহির মুখ টেনে বললো,
—- ” হ্যা গো মিষ্টি বোনুটা তোমার কথা তোমার আপুই এর থেকে শুনতে শুনতে আমি তোমার ওপর ফিদা হয়ে গেছি।”
মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
—- ” সত্যি!!! ”
—- ” হুম সত্যি! সত্যি! সত্যি! তিন সত্যি। ”
মাহি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা ওকে থামিয়ে বললো,
—- ” বাকি আলাপ ভিতরে গিয়ে করিস মাহি।মেয়ে দুইটা সারারাত জার্নি করে এসেছে।এখন ওদের আগে ঘরে ঢুকতে দে!”
বাবার কথায় মাহি চুপসে গেলো মনমরা হয়ে বললো,
—- ” ওকে বাবা।”
মাহির চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে আমার খুব হাসি৷ পাচ্ছে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখেছি খুব কষ্টে।তারপর আমরা বাড়িতে ঢুকলাম।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।একটু পরই মা জননী আমাদের দুজন কে পেট ভরে খাবার খাইয়ে তারপর আমাদের ছেড়েছে।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,
—- ” আপনি এখানে?”
চলবে,,,,,সারা রাত ট্রেনে জার্নি করার পর অবশেষে পৌছালাম নিজ গন্তব্যে। কাল বিয়েতে রাজি হওয়ার ঠিক এক ঘন্টা পর বাবা আবার ফোন দিয়ে বললো পাঁচ দিন পর বিয়ের ডেট ফিক্সড করেছে ।আর আজ রাতের ট্রেনেই আমাকে বাড়ি ফিরতে বলছেন।তাই একরকম বাধ্য হয়েই রাতের ট্রেনে উঠতে হলো।আমার সঙ্গে তিহাও এসেছে।একমাত্র বেস্টুর বিয়ে বলে কথা না এসে পারে।আর আমার উপর দিয়ে এখন কি যাচ্ছে সেটাও তো জানে তাই এসময় আমার পাশে থাকার জন্য আমার সাথে এসেছে।
সারারাত আমি নির্ঘুমে কাটিয়েছি।শুনেছি মানুষ ভালোবেসে ঠকলে রাতে ঘুমাতে পারে না।তখন কথাটা নিয়ে খুব হাসতাম কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কতোটা কষ্টের কারনে সেই মানুষ গুলো রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়।ভেবেই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে আমার পাশে থাকা মহান ব্যাক্তিটি কে নিয়ে।উনি আসার সময় বুক ফলিয়ে খুব গর্ববোধ নিয়ে বলেছেন উনি আমার সাথে যাচ্ছেন আমাকে মানুষিক ভাবে সাপোর্ট করার জন্য। ট্রেনে উঠার সাথে সাথেই একটা হাই তুলে
—- ” মিহু একদম চিন্তা করিস না আমি আসি তো তোর সাথে!তোর এক বিন্দু ক্ষতিও আমি হতে দিবো না।কোনো রকমের অসুবিধা হলে শুধু একবার আমায় ডাকবি সাথে সাথে সব প্রবলেম সল্ভ হয়ে যাবে।খুব ক্লান্ত লাগছে রে আমি দুই মিনিট একটু ঘুমিয়ে নেই!”
এই বলে যে তখন ঘুমিয়েছে এখন বারো ঘন্টা হয়ে গেছে ওনার উঠার কোনো নাম নেই।মরার মতো ঘুমিয়েই যাচ্ছে। দেখে৷ মনে হচ্ছে শতোজনমের ঘুম এক সাথে ঘুমিয়ে নিচ্ছে।আমি ওকে হাত দিয়ে ঢেলছি আর জোরে জোরে ডাকছি,
—- ” তিহা! এই তিহা!উঠ আমারা পৌঁছে গেছি। এই দেখ ট্রেন অনেকক্ষণ আগে থেমেছে। সবাই নেমে গেছে।শুধু আমরা দুজনই ট্রেনে! আর কেউ নাই!এই উঠ বলছি উঠ!কি রে শুনতে পাচ্ছিস না? উঠ!”
আমার কথায় উনার কিছুই হলো না।আমার হাত টা সরিয়ে দিয়ে আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন। আমি মুখে বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করে এই কুম্ভকর্ণ কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙ্গানো যায়।সোজা কথায় যে এই ঘুম ভাঙ্গাতে পারবো না তা তো বুঝতেই পারছি।ভাবতে ভাবতেই আমার হাতের দিকে নজর পরলো।আমার হাতে একটা পানির বোতল।বোতল টাকে ভালো করে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
—- ” সোজা আংগুলে ঘি না উঠলে তো আংগুল টা বাঁকাতেই হয়!সরি তিহু বেবি এখন তোমার একটু শাওয়ারের দরকার! ”
শেষের কথাটা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম।তারপর পানির বোতল টা বাঁকা করে ধরে তিহার মুখ বারার উপর থেকে শাওয়ারের মতো ছাড়লাম পানি গুলোকে।তিহার মুখে পানি গুলো পরতেই ও ধড়ফড়িয়ে উঠে চোখ মুখ থেকে পানি গুলো জেরে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
—- ” ওভাবে তাকালে লাভ নেই। আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন আমরা এই দুই এলিয়েন ব্যাতিত আর কোনো মানুষ আছে কি-না! অনেকক্ষণ ডাকার পরও কেউ যদি না উঠে তাহলে তো এমন টা করতেই হবে!”
আমার কথায় তিহা চারিপাশে ভালো ভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সত্যি আমরা ছাড়া আর কেউ নাই।তাই আমার উপর শতো রাগ হওয়া সত্বেও মুখে কিছু বললো না।কিন্তু ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আমার উপর চরম ক্ষেপে আছে।চোখমুখ খিঁচে চুপচাপ ব্যাগ উঠিয়ে বাইরের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর কান্ড দেখে আমি মুখ টিপে টিপে হেসে ওর সাথে বেরিয়ে আসলাম।
মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো ট্রেন থেকে নেমে যে এর প্রথমেই এর সাথে দেখা হবে বুঝতে পারিনি।পারলে নামতামই না যত্তসব! আমার সামনে অর্ক আহমেদ মানে যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।এই ব্যাটা ছোটো বেলা থেকেই আমার পিছনে আঠার মতো লেগে আছে।যেখানে যাই সেখানেই হাজির হয়ে যায়।কেন জানি একে আমার কিছুতেই সহ্য হয় না।দেখলেই গা জ্বলে যায়।আমাকে দেখেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো আর জিজ্ঞেস করলো,
—- ” কেমন আছো মিহি?”
মনে মনে বললাম,
—- ” এতোক্ষণ তো ভালাই ছিলাম তোরে দেইখা এখন বহুত খারাপ হইয়া গেছি।”
কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও মুখে বললাম,
—- ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো অর্ক ভাইয়া?”
আমার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনলে ছোটবেলা থেকেই উনার মুখ টা কালো হয়ে যেতে।আজও তাই হলো মুখ টা কালো করেই করুন গলায় বললো,
—- ” আমাদের বিয়ের ডেটও ঠিক হয়ে গেছে আর পাঁচ দিন পর বিয়ে তুমি এখনো আমাকে ভাইয়া ডাকবে?এখন তো এই ডাক টা না ডাকতে পারো!”
—- এখনো বিয়ে টা হয়নি। যখন হবে তখন দেখা যাবে ঠিক আছে অর্ক ভাইয়া!
আমার কথাটা শুনে অর্কের চুপসে যাওয়া৷ মুখ টা আরো চুপসে গেলো।তিহা অর্কের অবস্থা দেখে মুখ টিপে টিপে হাসছে।এমন সময় বাবা চলে আসলো।এসেই আমাকে বলতে লাগলো,
—- ” কিরে মা তুই কখন নামলি?সবাই আরো কতো আগে নেমে গেছে! তোরা নামছিস না দেখে তোকে কতোবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তোর ফোন বন্ধ। এতোক্ষণ ট্রেনে বসে কি করছিলি?আমি তো ভাবলাম তুই বোধহয় এই ট্রেনে আসিস নি!”
আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললাম,
—- ” সে অনেক লম্বা কাহিনি বাবা পরে একসময় শুনাবো।আর ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ফোন বন্ধ! ”
বাবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
—- ” ঠিক আছে এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি চল। তোর মা সেই কখন থেকে তোর জন্য রান্না করে বসে আছে।”
।
।
।
আমরা সবাই বাড়ি চলে এলাম।বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই মাহি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আর খুশিতে গদগদ হয়ে বলছে,
—- ” আপুই কতো দিন পর তোর সাথে দেখা!আমি তো আজ খুব খুব খুব খুশি!”
আমি ওকে ওর মাথায় হালকা একটা বারি মেরে বললাম,
—- ” আমাকে কি মেরে ফেলার ধান্দায় আছিস নাকি?এতো জোরে কেন ধরেছিস আমি তো ব্যাথা পাচ্ছি। ছাড় আমাকে!”
মাহি আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত ভাজ করে মুখ গোমড়া করে বললো,
—- ” ছোটো বোনটা কতো ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসা প্রকাশ করলো আর তুমি কিনা এইভাবে বলছো!আচ্ছা ছাড়ো তোমার থেকে এর থেকে বেশ কি বা আশা করবো!তোমাকে এখন আর লাগবে না আমার আরেক টা মিষ্টি আপু চলে এসেছে এখন আমি তাকেই ভালোবাসবো হুম! ”
কথাটা বলেই তিহার কাছে গিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” তুমি নিশ্চয় তিহা আপু তাই না!”
তিহাও একটা মিষ্টি করে হেসে মাথা নেরে হ্যা বললো।মাহি আবার একটা হাসি দিয়ে বললো,
—- ” আমি মাহি নিশ্চয় আপুই তোমাকে আমার পরিচয় আগেই বলেছে!”
তিহা এবার দুহাত দিয়ে মাহির মুখ টেনে বললো,
—- ” হ্যা গো মিষ্টি বোনুটা তোমার কথা তোমার আপুই এর থেকে শুনতে শুনতে আমি তোমার ওপর ফিদা হয়ে গেছি।”
মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো,
—- ” সত্যি!!! ”
—- ” হুম সত্যি! সত্যি! সত্যি! তিন সত্যি। ”
মাহি আরো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বাবা ওকে থামিয়ে বললো,
—- ” বাকি আলাপ ভিতরে গিয়ে করিস মাহি।মেয়ে দুইটা সারারাত জার্নি করে এসেছে।এখন ওদের আগে ঘরে ঢুকতে দে!”
বাবার কথায় মাহি চুপসে গেলো মনমরা হয়ে বললো,
—- ” ওকে বাবা।”
মাহির চুপসে যাওয়া মুখ টা দেখে আমার খুব হাসি৷ পাচ্ছে ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে রেখেছি খুব কষ্টে।তারপর আমরা বাড়িতে ঢুকলাম।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা ফ্রেশ হয়ে নিলাম।একটু পরই মা জননী আমাদের দুজন কে পেট ভরে খাবার খাইয়ে তারপর আমাদের ছেড়েছে।আমার রুমে গিয়ে আমি আর তিহা একটু রেস্ট নিতে যাবো এরমধ্যেই একজন এসে হাজির।আমি তার দিকে তাকাতেই অবাক।অবাক কন্ঠে বলে উঠলাম,
—- ” আপনি এখানে?”
কে হতে পারে মিহির সামনে থাকা লোক টা?🤔
চলবে,,,,,