গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ- ০৪
উফফ সারাদিন কাজের চাপে খুব টায়ার্ড লাগছে এই সময় একটা কফি পেলে আর কি লাগে.কফি কাপটা হাতে নিয়ে সোফায় সাবার পাশে বসতে বসতে কথাটা বললো ইরফান ভাইয়া.
-এটা কি হলো?কফিটা মামনি আমাদের দিয়েছে .আপনি কোথ থেকে এসে আমার কফিটা নিয়ে নিলেন.
সাবার কথা শুনে ভাইয়া কফি মগটা উল্টে পাল্টে দেখে বলে .
-কই আমি তো এখানে তোমার নাম দেখছি না.তাহলে কফিটা তোমার কি করে হলো?
সাবা ব্রু কুঁচকে বলে ,
-নাম কেন লেখা থাকবে.মামনি বলে গিয়েছে তার মানে এই কফিটা আমারি .
-মোটেও না যেহেতু এটা এখন আমার হাতে সেহেতু এটা এখন আমি খাবো.
-আপনার এত খাবার ইচ্ছে হলে নিজে বানিয়ে খান আমারটায় কেন নিতে হবে.
-তুমি বানিয়ে নিয়ে এসো.আমি ওয়েট করছি.
-আমি পারবোনা.
-এখনই মুখের উপর পারবোনা বলে দিচ্ছে আল্লাহই জানে বিয়ে পর এই মেয়ে কি করে.
আমি এবার বিরক্ত হয়ে বললাম.
-এই তোমরা দুজন চুপ করবে.এত ঝগড়া কেন করো বলতো?
-তোর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস কর.উনার তো কাজই হলো আমার পেছনে লাগা.
-ওহ আচ্ছা আমি তোমার পেছনে লাগি.আর তুমি যে সামান্য একটা কফির জন্য আমাকে এত কথা শুনাচ্ছ সেটা কিছু না.
সাবা এবার উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বলে ,
-কি এখন সব আমার দোষ.আর আপনি তো ধোয়া তুলসী পাতা.
-হুম এটা ঠিক বলেছো আমি তো ধোয়া তুলসী পাতায় .এক্কেবারে কিউট ভদ্র হেন্ডসাম.
সাবা ভেংচি কেটে বলে.
-হুম আসছে কোথ থেকে কিউট ভদ্র হেন্ডসাম.শুনুন আপনার মতো রাগি আর বদমেজাজি মানুষ আমি একটাও দেখিনি.আবার নিজেকে বলে ধোয়া তুলসী পাতা.
-আমি মোটেও শুধু শুধু রাগ দেখায় না.রাগ দেখানোর মতো কাজ করলে তো রাগ দেখাতে হবেই.
ওদের দুজনের ঝগড়ায় আমি বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বললাম
-সাইলেন্ট .কি শুরু করেছো বলতো!বাচ্চাদের মতো ঝগড়া কেন করছো?
-তুই দেখছিস না প্রত্তু তোর ভাইয়া তো পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করছে.আমার কি দোষ!
-কি আমি ঝগড়া করছি আর তুমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুড়ি ভাজছো.
-দেখলি প্রত্তু কি ত্যারা ত্যারা কথা বলে.
ভাইয়া মুখ ঘুরিয়ে বলে
-যে যেমন তার সাথে এমন ভাবেই কথা বলতে হয়.বাই দা ওয়ে আমি এখন খুব টায়ার্ড রুমে যাচ্ছি.
-হুম যান .আমিও একটু শান্তিতে থাকি.
ভাইয়া দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ঘুরে বলে ,
-আমি রুমে গেলাম.
সাবা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে ,
-যাচ্ছেন তো নিজের রুমে এটা এত বার বলার কি আছে .এমন একটা ভাব যেন মঙ্গোল গ্রহে যাচ্ছেন.
ভাইয়া আবার কিছুটা রেগে গিয়ে বলে ,
-আমি রুমে যাচ্ছি তুমি কি বুঝতে পারছো না!
আমি এবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম .ভাইয়া ব্রু কুঁচকে সাবার দিকে তাকিয়ে আছে.এবার বুঝলাম ভাইয়া বার বার রুমে যাচ্ছি রুমে যাচ্ছি বলে চিল্লাচ্ছেন কেন.আসলে ভাইয়া সাবাকেও উনার রুমে নিয়ে যেতে চাইছে .কিন্তু আমার সামনে সেটা সরাসরি বলতে পারছেন না.আহারে বেচারা.প্রচুর হাসি পাচ্ছে ভাইয়াকে দেখে কিন্তু এখন ভাইয়ার সামনে হাসলে নির্ঘাত মার্ খেতে হবে তাই কোনো রকমে হাসিটা দমিয়ে রেখে সাবাকে বললাম ,
-সাবু তুই না কিচ্ছু বুঝিস না ।
সাবা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ,
-কি বুঝিনা আমি ?
-এই যে কারোর ইশারার তো পাত্তাই দিচ্ছিস না.
ভাইয়া আমার সামনে এসে বলে ,
-এই কি বলছিস তুই?
-না কিছু না.আমার না রুমে একটা কাজ আছে আমি আমার রুমে গেলাম .কেমন!
আমি উঠে দাঁড়াতেই সাবা বললো ,
-আচ্ছা দাঁড়া আমিও আসছি .
আমি কিছু না বলে চলে আসি .কিন্তু সাবা আমার পেছনে আসতে নিলেই ভাইয়া ওর হাত ধরে ফেলে .দৃশ্যটা একবার হালকা চোখে দেখে মুখ টিপে হেসে নিজের রুমে চলে আসি.রুমে এসে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবি .থাক না এই সময়টা দুটো ভালোবাসার মানুষের জন্য.একান্তই ওদের জন্য বরাদ্দ থাক.
.
বুক সেলফ থেকে একটা বই নিয়ে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে সেটা পড়ছিলাম .তখনি আমার ফোনটা বেজে উঠে.
-হ্যালো!আস্সালামুআলাইকুম .কে বলছেন .
ওপাশ থেকে কেউ বললো ,
-নাম্বারটা সেইভ করেননি বুঝি?
বেশ বুঝতে পারলাম মানুষটি কে.তাই কর্কশ গলায় বললাম
-না.প্রয়োজন বোধ করেনি .
আমান হালকা হাসলো .তারপর ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,
-রেগে আছেন আমার উপর?
-না রেগে থাকার মতো কি আপনি কিছু করেছেন?
-জি অবশ্যই করেছি.আর আমি সত্যিই দুঃখিত.আসলে আমি বুঝতে পারিনি যে এই ব্যাপারটা নিয়ে আপনি এতটা কষ্ট পাবেন.আর সাবার উপরও রাগ করে থাকবেন না ও আপনাকে খুব ভালোবাসে তাই ভেবেছিলো আর কি আপনি বোধ হয় আমার সাথে ভালো থাকবেন আর এই জন্যই এতো কিছু করা .
-হুম বুঝলাম .তা আপনি কি শুধু এই কথা গুলো বলার জন্য আমাকে কল দিয়েছেন?
-না .আসলে আমার আপনার কাছে একটা অনুরোধ ছিল.
-কিসের অনুরোধ?
-দেখুন আমাদের বিয়েটাতো এরেঞ্জ ম্যারিজ .আমরা আগে থেকে কেউই কাউকে চিনি না সম্পর্ণ দু জন অপরিচিত মানুষ .তাই আমি চাইছিলাম আরকি যদি আমরা বিয়ের আগে একদিন আমাদের মধ্যে কিছুটা সময় কাটাই আই মিন আমরা একজন আরেকজনকে জানার জন্য আলাদা ভাবে কথা বলি.যাতে করে বিয়ের পর এটা মনে না হয় যে বিয়ের আগে আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা উচিত ছিল .এমন কিছু যার জন্য পরে আফসোস না করতে হয় .তাই বলছিলাম আরকি!তা আপনি কি বলেন?
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম .
-আচ্ছা ঠিক আছে .কিন্তু আপনি কবে দেখা করতে যাচ্ছেন?
-যদি কাল বিকেল 4.00 ফ্রি থাকেন তাহলে কালই .
-কালকেই?
-আপনার আপত্তি থাকলে আমি জোর করবো না .সমস্যা নেয় আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারেন.
-না না সমস্যা নেয় .কালই দেখা করবো .
আমান খুশি হয়ে বলে ,
-ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে.আল্লাহ হাফেজ ।
-ওকে আল্লাহ হাফেজ.।
পরদিন..
ঘড়িতে পরপর ৪টা ঘন্টা বেজে জানান দিচ্ছে যে ৪টা বেজে গিয়েছে.আর এইদিকে আমি পুরো আলমারির কাপড় খুলে বিছানার উপর ফেলে রেখে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি .আর আমার ঠিক সামনে সাবা গালে হাত দিয়ে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে .
আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম ,
-সাবু দেখ না আমি কোনটা পরে যাবো .৪টা তো বেজে গিয়েছে আর আমি এখনো একটা ড্রেসই সিলেক্ট করতে পারলাম না .
সাবা এবার সোজা হয়ে বসে রাগি কন্ঠে বলে ,
-কবে থেকে তুই এই জামা গুলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছিস অথচ এখন অবধি একটা ড্রেস ও চুস করতে পারলি না .আর আমি যেটা বেছে দিচ্ছি সেটা তোর পছন্দ হচ্ছে না .এক কাজ কর যেটা তোর পরনে আছে সেটা পরেই চলে যা .
-কি আমি এটা পরে যাবো এই প্লাজু আর টি শার্ট .তোর কি মাথা খারাপ?
-না এখনও মাথা খারাপ হয়নি তবে আর কিছুক্ষনের মধ্যে হয়ে যাবে .
-উফফ দোস্ত বল না কোনটা পরবো?
সাবা অনেক ঘেটে ঘুটে একটা ব্লেক কালার কামিজ বের করে বললো ,
-দোস্ত তুই এই ব্লেক কালার জামাটা পর .দেখবি তোর সাদা চামড়ায় এই ব্লেক কালারটা কি সুন্দর মানায় .
ওর কথায় জামাটা গায়ে লাগিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালো ভাবে দেখছি আমাকে কেমন লাগে .না ভালোই লাগছে
-আচ্ছা তো এটা পরে আসি .
-হুম যা .
কিছুক্ষন বাদে ড্রেসটা পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় .না বেশ ভালোই মানিয়েছে .ব্লেক কালারের লং কামিজ .সাথে চুড়িদার পায়জামা আর ব্লেক কালার একটা জর্জেটের ওড়না .জামাটার বুকে গোল্ডেন কালার কাজ আছে তাই সেটার সাথে ম্যাচ করে একটা গোল্ডেন কালার হিজাব বাধলাম .ব্যাস আমি রেডি .আমার সাজগোজ পছন্দ না তাই মুখে শুধু হালকা একটু ক্রিম দিয়েই সব জায়গায় যাই.আজও তাই করলাম।
‘
রেডি হয়ে পার্সটা কাঁধে নিয়ে সাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছি .উদ্দেশ্য হলো ওকে ও আমার সাথে নিয়ে যাওয়া .কিন্তু ও কোনো ভাবেই রাজি হচ্ছে না .ও নাকি কাবাব মে হাড্ডি হতে চায় না .অবশ্য আরেকটা কারণও আছে.সেটা হলো ও যখন ভাইয়ার সাথে প্রথম ডেটিং এ যায় তখন ও আমাকে অনেক সাধছিলো ওর সাথে যাওয়ার জন্য .কিন্তু আমি যায়নি এখন ও যে সেইদিনের রিভেঞ্জ নিচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারছি .
-সাবু তুই তাহলে আমার সাথে যাবি না এটাই ফাইনাল .
-হুম .
-ঠিক আছে তাহলে একাই যাচ্ছি . আমি কি তোর মতো ভীতু নাকি হুহ .যত সব ভিতুর ডিম্
.
-হুম আমার সাহসী বান্ধবী এবার আপনি যান .
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ি .নিচে নামতে দেখি আমান এক হাত পকেটে পুরে অন্য হাত দিয়ে মোবাইল নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে .পরনে তার অ্যাশ কালারের শার্ট আর ব্লেক কালার পেন্ট .শার্টের হাত গুলো ফোল্ড করা .বাম হাতে ব্রেন্ডের একটা ঘড়ি .আমি উনার মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম .ফর্সা গালে ছোট ছোট দাড়ি .হালকা গোলাপি ঠোঁট.উনি মোবাইলে কি যে নো করছেন মাঝে মাঝে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরছেন .আবার কিছুক্ষন বাদে বাম.হাত দিয়ে হালকা করে চুলটা উপরের দিকে নেড়ে দিচ্ছেন .বেশ কিছুক্ষন যাবৎ উনাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার পর কেন যেন নিজের মনের ভেতর এক অজানা লাজুকতা ভর করলো .আনমনেই বলে উঠলাম ‘ছি! প্রত্যাশা তুই কি লুচু .এভাবে কেউ কোনো ছেলেকে দেখে নাকি!’ পরক্ষনেই আমার মন বলে উঠলো’বা রে কয়দিন পর তো আমার বরই হবে তো আমিতো দেখতেই পারি!’
চলবে..