#ভালোবাসি
#পর্ব_৩
#সুমাইয়া_জাহান
আমি ভালো করে তিহা কে একবার পরক করে।ওর গায়ে তাপমাত্রা চেক করে বললাম,
—- ” সব তো ঠিকই আছে! তাহলে এমন বিহেভ কেনো করছিস?”
তিহা আমার দিকে তাকিয়ে একটা জোর পূর্বক হাসি দিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
—- ” কে কেমন বিহেভ করছি?আ আরে আজ একটু তোকে নিয় ঘুরতে ইচ্ছে করছিলো তাই শাড়ি পরতে বলেছিলাম!একদিনই তো ভার্সিটি বাদ দিচ্ছি এতে কি এমন হয়েছে?এমন করছিস মনে হয় আমি মানুষ না রোবূট যে কোনো দিন ভার্সিটি বাদ দিবে না!”
কথাটা বলেই মুখ ফুলিয়ে বসে পরলো তিহা।কিন্তু ওর কথা আমার কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না।তারপরও নিজের মন কে বুঝিয়ে ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে তিহার পাশে ধপাস করে বসে চোখ বন্ধ করে বললাম,
—- ” ঠিক আছে তুই যখন সেই সকাল থেকে আদা জল খেয়ে লেগেছিস শাড়ি পরানোর জন্য, তো ঠিক আছে আমি শাড়ি পরবো।তবে….”
আমার কথা টা শোনা মাত্রই তিহা লাফ দিয়ে উঠে বাঁদর নৃত্য শুরু করে দিয়েছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে ও কোনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে।কিন্তু শাড়ি পরা নিয়ে এমন ওঠে পরে লেগেছে কেন?সে পরে দেখা যাবে এখন তো এই বাঁদর নৃত্য বন্ধ করতে হবে! আমি এক হাত দিয়ে টেনে ওকে আবার বসালাম।তারপর চোখ রাঙিয়ে বললাম,
—- ” এমন বাঁদর বাঁদর নৃত্য শুরু করলি কেন?জীবনে কাউকে কোনোদিন শাড়ি পরতে দেখিসনি?আর পুরো কথা না শুনে লাফাচ্ছিস কেন?আমি আজ শাড়ি পরবো একটা শর্তে!”
—- নো প্রবলেম তোর সব শর্তেই রাজি!
মুখে চওড়া হাসি রেখেই কথাটা বললো।আমি একবার ভ্রু কুঁচকে ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলাম,
—- ” ভেবে বলছিস তো?”
ও মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললো হুম মানে ও ভেবেই বলছে।আমিও মুখে একটা চওড়া হাসি এনে পাশ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিয় বললাম,
—- ” আমি যদি শাড়ি পরি তাহলে তোকেও পরতে হবে। এই শর্তেই আমি শাড়ি পরবো নাহলে পরবো না।”
আমি খুব ভালো করেই জানি ও কোনো দিনও শাড়ি পরতে রাজি হবে না।কারণ ও শাড়ি পরতে একদমই পছন্দ করে না।আজ অবদি ওকে কোনো দিন শাড়ি পরাতে পারিনি।তাই জেনে শুনেই এই শর্ত দিয়েছি।আমি একশো তে একশো সিউর ও আমার শর্তে রাজি হবে না।কিন্তু আমার ভাবনাকে পুরো পুরি পানিতে ডুবিয়ে দিয়ে বললো,
—- ঠিক আছে আমি তোর শর্তে রাজি।
কথাটা ও চোখ মুখ কুঁচকে বললো।ওর এই একটা কথা শুনে আমার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো।যে মেয়ে কে জীবনে কোনো দিন শাড়ি পরাতে পারিনি সেই মেয়ে আজ এককথায় শাড়ি পরতে রাজি হয়ে গেলো।ওকে আবার জিজ্ঞেস করলাম সত্যি ও রাাজি কিনা বললো হ্যা সত্যিই শাড়ি পরতে রাজি। আজ মনে হয় আমার অবাক করার দিন সবকিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।
দুজনেই শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিলাম।তিহা একটা নীল রঙের শাড়ী আর আমি পরেছি মেরুন রঙের একটা শাড়ি। তারপর ওর কথা মতো ওর সাথে যেতে লাগলাম।কিন্তু কোথায় যাচ্ছে এখনো বলেনি শুধু বলেছে সারপ্রাইজ! তাই কথা না বাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের চুপচাপ ওর সাথে যাচ্ছি।
।
।
।
—- এই ওর আসার কিন্তু সময় হয়ে এসেছে সব কিছু আরেকবার রিচেক করে নে।
রেহানের কথায় সবাই ভালো করে চেক করতে লাগলো সব কিছু প্লান মতো আছে কিনা!রেহান একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আবার সামনের রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে।
তিহা আমাকে নিয়ে একটা পার্কের সামনে আসলো।রিকশার ভাড়া মিটিয়ে আমাকে নিয়ে পার্কের ভিতর ঢুকলো।আমরা পার্কে ঢুকতেই কতো গুলো বাচ্চা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।আর প্রতিটা বাচ্চার হাতেই একটা করে রেড বেলুন।ওরা একজন একজন করে এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা একটা করে বেলুন দিতে লাগলো।আর বেলুন গুলোতে বড়ো বড়ো করে লেখা ” ভালোবাসি “।আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি মনে হচ্ছে কোনো পরির রাজ্যে এসে পরেছি।আমার চারিপাশে ছোট্ট ছোট্ট পরিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
আমি এমনিতেও বাচ্চাদের খুব ভালোবাসি তাই ওদের পেয়ে ওদের সাথেই খেলতে শুরু করে দিয়েছি।আমি ওদের পেয়ে এতোটাই খুশিতে মেতে উঠেছি যে আশেপাশের কোনো কিছুই খেয়াল করিনি।একটু সমনে তাকালেই খেয়াল করতাম রেহান কে দেখতে পেতাম।
রেহান মিহির এমন কান্ড দেখে নিজের অজান্তেই একটা মুচকি হাসি দিলো।তারপর এগিয়ে গেলো মিহির দিকে।মিহির সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে একটা ” ভালোবাসি ” লেখা বেলুন ধরে বললো,
—- ” ভালোবাসি মিহি খুব ভালোবাসি তোমায়!প্রতিদিন তো ফিরে দেও প্লিজ আজ আর ফিরিয়ে দিয়ো না!
রেহানের সাথে সাথে ছোট্ট বাচ্চা গুলোও বসে পরলো আর ওর সাথে সাথেই বলতে লাগলো,
—- প্লিজ প্রিন্সেস ফিরিয়ে দিও না প্লিজ!
ওদের সবার কথায় আমি বাকরূদ্ধ কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।এতোদিনে আমার মনেও রেহানের জন্য একটু একটু করে ফিলিংস তৈরি হয়েছে।কিন্তু আমি তা বাইরে প্রকাশ করতে দেইনি।আজ যেভাবে বলছে এতে আমি ওকে সত্যি আমি ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।না পারছি ফিরিয়ে দিতে না পারছি স্বিকার করতে।চোখ বন্ধ করে নিলাম।চোখ বেয়ে পানি পরার আগেই সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসলাম।
মিহি এভাবে দৌড়ে চলে যাওয়াতে রেহানের হাসি মুখ টা মলিন হয়ে গেলো।তিহা আস্তে আস্তে রেহানের কাছে এসে দাড়ালো। একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—- ” চিন্তা করবেন না ভাইয়া আমি জানিও আপনাকে খুব ভালোবাসে কিন্তু ও মুখে তা স্বিকার করছে না।মাঝে মাঝে নিরবতাই সম্মতির লক্ষণ হয়।মিহি যদি আপনাকে নাই ভালোবাসতো তাহলে ও আপনার মুখের উপরই না করে দিতো।কিন্তু ও তা করেনি এখান থেকে চলে গিয়ে কিন্তু ও বুঝিয়ে দিয়েছে ও আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছে।ওর চোখে আমি আপনার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। ”
তিহার কথা গুলো রেহানের বেশ পছন্দ হয়েছে।ওর মলিন মুখে আবার হাসি ফুটে উঠলো। এ হাসি আনন্দের ভিষন আনন্দের। এতোদিনের প্রচেষ্টা আজ সফল হলো।
—- ” থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ তিহা তুমি আজ আমায় হ্যাল্প না করলে তো এতো কিছু হতোই না!”
—- ” শুধু থ্যাঙ্কস এ চলবে না ভাইয়া! আমার ডাবল গিফট দিতে হবে। এক মিহি কে আপনার কথা মতো শাড়ি পরিয়ে আপনার সামনে আনার জন্য আর দ্বিতীয় টা হলো আপনাকে হ্যাল্প করার জন্য। ”
রেহান তিহার কথায় একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললাম,
—- ” হুম পেয়ে যাবেন শালি সাহেবা!”
তারপর দুজনেই হেসে দিলো।তিহার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো।
—- ভাইয়া শুনুন আপনি তো মিহুর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চান?
রেহান মাথা নেরে বলললো ” হ্যাঁ “।তিহার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
।
।
।
ওখান থেকে এসে দৌড়ে ওয়াস রুমে ডুকে শাওয়ার এর নিচে বসে একনাগাড়ে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি। আদা ঘন্টা পর তিহা ওয়াস রুমের দরজা ধাক্কালো।
—– ” মিহু! মিহু!তারাতাড়ি বের হো আমি আমারও তো ফ্রেশ হতে হবে শুধু তুই একা ফ্রেশ হলেই হবে!তারাতাড়ি বের হো!”
বুঝলাম এতোক্ষণে ও ফিরেছে।ওর কথায় কোনো জবাব না দিয়েই চোখের পানি মুছে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
আমি বের হতেই তিহা আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,
—- ” তুই এই ভাবে ওখান থেকে চলে আসলি কেন?”
ওর কথার কোনো উত্তর না দিয়েই ওকে পাস কাটিয়ে বেলকনির দিকে চলে গেলাম।ও আবার আমার সামনে এসে দাড়ালো। এবার ও যা বললো তাতে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম।
চলবে,,,,,