গল্পঃ- ভালোবাসি
লেখকঃ- সাব্বির আহমদ
পর্বঃ ০২
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে বেশ গভীর ভাবে দেখছে।খুব অস্বস্তি ও বিরক্ত লাগছে,বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে দেখি সাবা আমার উপর ঝোকে আহাম্মকের মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে,ওকে দেখেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল তাই রাগে দিলাম এক ধাক্কা,বেচারি তাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়।
-ওমাগো আমার কোমর গেলো গো,আল্লাহ এখন আমার কি হবে,এই কোমর ভাঙা মেয়েকেতো কেউ বিয়েও করবে না,আমাকে তো সারাজীবন আয়বুড়ো হয়ে থাকতে হবে।
কথাগুলো বলে ও ন্যাকা কান্না জুড়ে দিল,আমি বড় করে একটা হায় তুলে বললাম,
-শোন সাবু তোর শুধু কোমর কেন যদি শরীরের সব গুলো হাড় ও ভেঙে যায়না তবুও আমার ভাইয়া তোকে বিয়ে করবে,সো তোকে আর বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না।
আমার কথা শুনে সাবু মুখ ভেঙচিয়ে বলে,
-এএ আমার বয়েই গেছে তোর ঐ রাগি চন্ডালি ভাইকে বিয়ে করতে,
-আচ্ছা তাই নাকি।ভাইয়াকে ডেকে বলি যে তুই ভাইয়াকে বিয়ে করবি না?
-ডাক ডাক আমি তোর ভাইকে ভয় পায় নাকি!
আচ্ছা দাড়া এক্ষণি তোর সাহস বের করছি,কথাটা বলেই আমি গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলাম,
-ভাইয়া ও ভাইয়া,শুনে যাও তোমার বউ কি বলে,সে নাকি তোমার মতো রাগি চন্ডালিকে বিয়ে করবে না।ও ভাই কই তুমি?জলদি আসো আমার রুমে।
.
আমার চিৎকারে ভাইয়া না এসে আম্মু আসলো,এসেই বিরক্তি নিয়ে বললো,
-কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে চিল্লাচ্ছিস কেন?
-আম্মু ভাইয়া কই?
-তোর ভাই তো অফিসে গেছে,কেন?
-ও তাই বলি এই সাবুর এত সাহস দেখাচ্ছে কি করে,ভাইয়া তো বাসায় নায় তাই উনার আজ অনেক সাহস হয়ে গিয়েছে।
আমার কথা শুনে আম্মু সাবার দিকে তাকিয়ে দেখে ও বাম পায়ের উপর ডান পা ভাজ করে মেঝেতে আরামসে বসে মুখ টিপে হাসছে,
-কিরে সাবু আমাদের বাসায় কি বসার জায়গার অভাব পড়েছে যে তুই এভাবে মেঝেতে বসে আছিস?
সাবু এবার ইনোসেন্ট ফেইস করে বলে,
-আমি কি ইচ্ছে করে আর মেঝেতে বসে আছি,তোমার মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।
.
আম্মু এবার চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকায়,আম্মুর চাহনি দেখে আমি বোকার মতো একটা হাসি দিয়ে বলি,
-আম্মু ও সকাল সকাল এসে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে তাই রাগে ধাক্কা দেই,আর এই ঢংগি মেয়ে এখনো মেঝেতে বসে আছিস কেন উঠতে পারছিস না।
-কি করে উঠবো আমি কোমরে অনেক ব্যাথা পেয়েছি,
-এই এত ঢং করিস কেন!আম্মু ও একটুও ব্যাথা পায়নি,হুদাই আমাকে বকা শুনানোর জন্য মিথ্যে বলছে।
-না না মামনি আমি সত্যি বলছি,
-ঐ কুত্তি আর একবার মিথ্যে বললে আমি এবার তোর কোমরে পারা দিয়ে সত্যি সত্যি তোর কোমর ভেঙে দিবো কিন্তু।
আমার কথা শুনে আম্মু দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-প্রত্যাশা,,
.
সাবুর দিকে তাকিয়ে দেখি পেতনিটা মুখ চেপে হাসছে,আমি ওকে টেনে উঠিয়ে বেডে বসিয়ে ওয়াশ রুমে চলে আসি।এই পেতনিটাকে পরে দেখে নিবো,
‘
-মামনি, প্রত্তুকে যারা দেখতে এসেছিল তাদের ফ্যামিলি কেমন?
-আমাদের কাছে তো ভালোই মনে হলো।ইরফান ওদের সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবরও নিয়েছে।সবকিছু তো ভালোই দেখলাম,এখন বাকিটা আল্লাহ ভরসা।আমার তো চিন্তা হয় প্রত্যাশাকে নিয়ে ,দেখিস না এখনো ওর মধ্যে থেকে বাচ্চামু স্বভাব গুলোই গেলনা,কে জানি সংসার ঠিক ভাবে সামলাতে পারবে কিনা।
সাবা উঠে মামনির হাতে ধরে বলে,
-তুমি এত টেনশন করো নাতো মামনি,বিয়ের পর দেখবে ওর মধ্যে ম্যাচুরিটি চলে আসবে।
-হুম রে মা তুই ও একটু বুঝাস ওকে,তোর কথায় তো একমাত্র ও পাত্তা দেয়,নাহলে তো আমাদের কথা কানেও তুলে না।
-তুমি কোনো চিন্তা করো না,আমি ওকে সব কিছু বুঝিয়ে বলবো তাহলেই ও বুঝবে।
মামনি সাবার থুতনিতে হাত রেখে বলে,
-হুম সাথে তোমারও কিন্তু নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে কারণ আর বেশি দিন নেয়,প্রত্তুর বিয়ের পরপরই তোমাকে তুলে আনার ব্যবস্থা করবো,আমার বাড়ির বউকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার সময় হয়ে গিয়েছে।
.
মামনির কথায় সাবা লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নিচু করে ফেলে,সাবার লজ্জা মাখা মুখ দেখে মামনি হালকা হেসে রান্নাঘরে চলে যায়।
‘
কিছুক্ষণ বাদে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি পেতনিটা বারান্দার স্কটেচে বসে মোবাইল গুতাচ্ছে,আমি টাওয়ালটা বারান্দার দড়িতে রাখতে রাখতে বলি,
-কিরে আবার কার সাথে প্রেম করছিস?
সাবু মুচকি হেসে বললো,
-তোকে কেন বলবো!
আমি গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলি,
-কি আমাকে বলবি না মানে,
কথাটা বলেই ছো মেরে ওর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নেই,মোবাইলের স্ক্রিনে ভাইয়ার আর ওর চ্যাট বক্স ওপেন করা,আমি শয়তানি হাসি দিয়ে বলি,,
-আহা আমার ভাইয়া ও তো দেখছি খুব রোমান্টিক,কি কিউট ভাবে লিখেছে I love you dear❤।ওহহো কি প্রেম!
-ছি তোর লজ্জা করে না ছোটো বোন হয়ে ভাই আর ভাবির চ্যাট পড়ছিস!
আমি মোবাইলটা সাবার হাতে ধরিয়ে এক হাত দিয়ে ঢং করে সামনের চুল গুলো পেছনে ফেলে দিয়ে বলে,
-Nope. Because i have no shame. Understand?
আমার কথায় সাবা হালকা হেসে বলে,
-ওকে দেখবোনে তোমার জামাই যখন তোমাকে আদর করতে আসবে তখন তুমি লজ্জা না পেয়ে কি করে থাকো।
আমি ভেংচি কেটে বলি,
-আমি তো বিয়েই করবো না আবার জামাইয়ের আদর তো দূরে থাক।
আমার কথা শুনে সাবা জোড়ে জোড়ে হাসতে আরাম্ভ করে,তারপর হাসতে হাসতে বলে,
-কালকে তোকে আংটি পরিয়ে চলে গেছে আর এখনো তুই বিয়ে না করার ধান্দায় আছিস?
আমি সাবার পাশে বসে খুব সিরিয়াস হয়ে বললাম,
-আচ্ছা বিয়ে করাটা কি খুব জরুরি?
আমার প্রশ্নে সাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-হ্যাঁ রে সব মেয়েকেই বিয়ে করতে হয়,সব মেয়েকেই বাপের বাড়ি ছেলে অন্যের বাড়িতে যেতে হয়।এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
-কিন্তু তুই বল আমার দ্বারা কি সংসার করা পসিবল?আমি কিছুই করতে পারিনা,আম্মু না ডাকলে আমার ঘুম ভাঙে না,আম্মু না বলা অবধি আমি গোসল করতে যায় না,আম্মু না বললে আমি খেতে বসি না,আম্মু না বললে আমি পড়তে বসিনা,আমার সব কিছুই তো আম্মু ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে করায়,আমি তো নিজের মত করে কিছুই করতে পারি না।বিয়ের পরে আমাকে কে এসব বলে বলে করাবে বলতো?(মন খারাপ করে বলি)
আমাকে মন খারাপ করতে দেখে সাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
-জানিস তো প্রত্তু আমরা মেয়েরা না ঠিক তরল পদার্থের মতো যে পাত্রে আমাদের রাখা হয় আমরা সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করতে পারি।আজকে তুই বলছিস না তুই কিভাবে সংসার করবি একদিন দেখবি তুই পুরোপুরি নিজেকে সংসারের মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছিস।তখন তোর জন্য তোর বরের বাড়ির মানুষ গুলোই সব হবে,
-সাবু তুই কবে এত বড় হয়ে গেলিরে?
সাবা মুখ ফুলিয়ে বলে,
-তোর ভাইয়ের জন্যই তো আমাকে বড় হতে হয়েছে,নাহলে আমি এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে,তোর ভাইই তো আমার সাথে কাবিন করে আমাকে বড় বানিয়ে দিল,কতবার বললাম আমার ভার্সিটিটা আগে শেষ হোক তারপর না হয় বিয়েটা হবে কিন্তু না উনার তো সব কিছুতে তাড়াহুড়ো,তাই তো আগে আগে কাবিনটা হয়ে গিয়েছে,আর মামনিতো এখন বলছে তোর বিয়ের পরই নাকি আমাকে তুলে আনবে।
-oh great. কিন্তু আমি তো তখন এত মজা করতে পারবো না।(মন খারাপ করে)
-কেন পারবি না?তোর শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে একসাথে আনন্দ করবি বুঝেছিস!
-হুম।
‘
আমি আর সাবা অনেক গল্প করছিলাম।হঠাৎই পেছন থেকে কেউ গলা কাশি দিয়ে উঠল,আমি পেছনে ফিরে দেখি আমান মুখে একটা টেডি স্মাইল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর আমানকে দেখা মাত্রই সাবা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে,সাবার কর্মকান্ডে আমি পুরো হা হয়ে গেলাম।
‘
চলবে,,,