ভালোবাসি তোকে পর্ব-৮+৯+১০

0
4906

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৮
.
ইশরাক ভাইয়ার লাশ দাফন করার পর আদ্রিয়ান ভাইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। কাউকে কিছু না বলে কোথাও একটা চলে গেছিলেন। সবাই মিলে অনেক খুজেছিল কিন্তু পায়নি। এমনিতেই ইফাজ ভাইয়ার মৃত্যুতে সবাই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছেন তারওপর আদ্রিয়ান ভাইয়ারও খোজ নেই। একটা দমবন্ধ করার মতো পরিবেশ তৈরী হয়েছে। ওনার মানসিক অবস্হা এমনিতেই ঠিক নেই,সবাই জানে সেটা, এই অবস্থায় উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যেতেই পারে যেকোনো মুহূর্তে। তাই সবাই আরও টেনশনে ছিলো। মানিক আঙ্কেলদের সাথে রক্তের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও ওনাদের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে আমাদের, তারওপর এখন নতুন আত্মীয়তা হয়েছে। তাই আমরাও কেউ শান্তি পাচ্ছিলাম না। আদ্রিয়ান ভাইয়া ফিরেছিলেন তার পরের দিন। ওনাকে দেখে চমকে গিয়েছিলাম পুরো। চোখ, নাক লাল হয়ে গেছে, সিল্কি চুলগুলো একরাতেই উস্কোখুস্কো হয়ে গেছে। ইফাজ ভাইয়া, মানিক আঙ্কেল সবাই মিলে ওনাকে অনেকরকম প্রশ্ন করেছ কিন্তু উনি কারো প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও কেউ খোলাতে পারেননি। আমরাও আর ঘন্টাখানেক থেকে চলে এলাম বাড়িতে।

সেদিনের পর আদ্রিয়ান ভাইয়ার সাথে আমার আর দেখা হয়নি। ওনাদের বাড়িতে দুইবার গেলেও ওনাকে দেখতে পাইনি। দুই একদিন আমার মুড অফ থাকলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। কারণ সামনেই আমার এইচ এস সি এক্সাম ছিল। বলেনা কারও জন্যে কারো জীবন থেমে থাকেনা আমারটাও থাকেনি। ‍তাই সব ভোলার চেষ্টা করে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। ধীরে আমি স্বাভাবিক হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে যে আদ্রিয়ান ভাইয়া কেমন আছে এখন? উনিকি নিজেকে সামলাতে পেরেছেন? নাকি এখনো ওরকমি আছেন? তবে সবার কাছে শুনতাম উনি নাকি সবার সাথে মেশা বন্ধ করে দিয়েছেন। সারাদিন বাইরে থাকেন আর বাকি সময়টা নিজেকে ঘরে বন্দি করে রাখেন। আমি বেশ অবাক হলাম যে ছেলেটা সবাইকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতেন সে কারও সাথে ঠিকভাবে কথা বলছেননা? আস্তে আস্তে আমার এইচ এস সি এক্সাম দেওয়াও শেষ হয়ে গেল। এক্সাম শেষ হওয়ার দুদিন পর আপি আর ইফাজ ভাইয়া এলো বেড়াতে। সেদিন মোটামুটি খুব খুশি ছিলাম আমি। বিকেলে আপিদের সাথে শপিং করে ফিরে এসে দেখি মানিক আঙ্কেলরা আমাদের বাড়িতে এসছেন। সবার চোখেমুখে একরাশ গাম্ভীর্যতা। একটু অবাক হলেও ভাবলাম এমনিই এসছে। তাই আমি ভেতরে চলে গেলাম। হঠাৎ করেই আম্মু আর আপি এলো। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনাদের দিকে। আম্মু একটা নীল রং এর লং গ্রাউন বের করে দিয়ে বলল,

— ” হিয়া ওকে তাড়াতাড়ি এটা পরিয়ে বাইরে নিয়ে আয়।”

বলে আম্মু এক মুহূর্ত দেরী না করে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার সাথে এক্সাক্টলি কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আপিও কোনো কথা না বাড়িয়ে বলল,

— ” যা তাড়াতাড়ি এটা পরে আয়।”

আমি অবাক কন্ঠেই বললাম,

— ” কিন্তু কেনো? কী হয়েছেটা কী? এখন এটা কেনো পরতে যাবো?”

আপি আমার দিকে করুণ চোখে একবার তাকালো। তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,

— ” সোনা বোন আমার। প্লিজ চুপচাপ রেডি হয়ে নে। তোকে পরে সব ক্লিয়ার করে বলব এখন ড্রেসটা পরে আয়।”

আমি কিছুই বুঝলাম না। মনে একগাদা প্রশ্ন নিয়ে ড্রেসটা পরে এলাম। আপি কোনোরকমে আমার চুলটা বেধে দিয়ে মাথায় ওড়না দিয়ে ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। ওখানে যাওয়ার পর আপি আমাকে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসালো। সবকিছুই আমার মাথার বেশ অনেকটা ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আব্বু মানিক আঙ্কেলকে বললেন,

— ” আদ্রিয়ান কোথায়?”

মানিক আঙ্কেল একটু ইতস্তত করছেন। ইফাজ ভাইয়া ফোনটা বের করে বললেন,

— ” আমি দেখছি।”

বলে ফোনে কানে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন। প্রায় পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে উনি এসে বললেন যে আদ্রিয়ান ভাইয়া আসছেন। মানিক আঙ্কেল বললেন,

— ” বিয়েটা তাহলে সামনের সপ্তাহেই হয়ে যাক?”

আব্বু একটু ভেবে তারপর বললেন,

— ” হ্যাঁ সেই। আর এই অবস্হায় যতো তাড়াতাড়ি করা যায় ততোই ভালো।”

আমি শুধু বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওনাদের দিকে কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমাকে এভাবে রেডি করে আনলো, তারমানে কী আমার বিয়ের কথা বলছেন? কিন্তু আব্বুতো বলেছিল আমার বিয়ে এতো তাড়াতাড়ি দেবেন না তাহলে? আর দিলেও কার সাথে দেবেন? এসব নানারকম চিন্তা মাথায় আসছে কিন্তু কিছুই জানতে পারছিনা। কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান ভাইয়া এলেন ওনাকে দেখে বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো আমার। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে। সেই প্রাণচ্ছল আদ্রিয়ান ভাইয়া যেনো হারিয়ে গেছেন কোথাও। আমি অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। কেউ ওনাকে কিছু বলবে তার আগেই উনি অতি গম্ভীর এবং শক্ত গলায় বললেন,

— ” কী করতে হবে তাড়াতাড়ি বলো। আমি জাস্ট দশ মিনিট থাকবো।”

সবাই একেঅপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। মানিক আঙ্কেল কিছু বলবেন আব্বু চোখের ইশারায় ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

— ” আচ্ছা ঠিকাছে। দশ মিনিটের বেশি সময় নেবোনা আমরা। ”

বলে আম্মুর দিকে ইশারা করতেই আম্মু ভেতরে থেকে ছোট্ট বক্স নিয়ে এলো। আমি এখনো অবাক হয়ে দেখছি সবটা। সত্যিই আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আঙ্কেল আদ্রিয়ান ভাইয়াকে ইশারা করতেই উনি আমার পাশে এসে বসলেন। আন্টিও একটা বক্স বের করে আদ্রিয়ান ভাইয়া এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” এটা অনিকে পরিয়ে দাও।”

আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। মানে কী? ওনারা কী আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার বিয়ের কথা ভাবছেন নাকি? এটা কীকরে হয়। আমি এসব ভাবতে ভাবতেই আদ্রিয়ান ভাইয়া আমার হাত ধরে হাতটা ওনার সামনে নিয়ে গেলেন। তারপর রিংটা একবারেই পরিয়ে দিয়ে সাথে সাথেই হাত ছেড়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আব্বু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— ” মামনী? আদ্রিয়ানকে রিংটা পরিয়ে দাও।”

আমি পুরো শকড হয়ে আছি। কী থেকে কী হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। আব্বু আরেকবার বলতেই আমি শকের মধ্যে থেকেই ওনার দিকে তাকালাম। উনি ওনার হাত বাড়িয়ে দিলেন, তবে চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। আমিও আস্তে করে ওনার আঙ্গুলে রিংটা পরিয়ে দিলাম। উনি এবার সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” হয়ে গেছে? আসতে পারি এবার আমি?”

মানিক আঙ্কেল খুব বিরক্ত হয়ে তাকালেন ওনার দিকে। কিন্তু আব্বু এবারেও ওনাকে শান্ত থাকতে বলে বলল,

— ” হ্যাঁ যেতে পারো কিন্তু কিছু খেয়ে গেলে ভালো হতো না?”

উনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” সরি আঙ্কেল এখন কিছু খাওয়া সম্ভব নয় আমার পক্ষে। আসছি।”

বলে উনি হনহনে পায়ে বেড়িয়ে চলে গেলেন। আমার সাথে ঠিক কী হলো নিজেই বুঝতে পারছিনা। মানিক আঙ্কেলরাও কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলেন। ওনারা চলে যেতেই আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” সামনের শুক্রবার তোমার বিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে। মেন্টালি প্রিপার্ড থাকো।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আব্বুর দিকে। যেই আব্বু একটা জুতো কেনার জন্যেও আমায় সাথে নিয়ে যেতো যাতে আমার নিজের পছন্দেরটা কিনতে পারি। আমার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বারবার আমার মতামত জানতে চাইতো সে আজ এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার মতামত তো দূরে থাক জানানোর প্রয়োজনটাও মনে করলো না। আমার এখন আর কিছু বলারও নেই কারণ বাগদান তো হয়েই গেলো। এখন আপত্তি করা মানে আব্বুকে অসম্মান করা যেটা আমি করতে পারিনা। আমি চুপচাপ উঠে নিজের রুমে গিয়ে বেডে উপর হয়ে শুয়ে নিরবে কাঁদছি। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে হবে কোনোদিন ভাবিইনি। আর তাছাড়া ওনাকে তো দেখলাম। একটা বাচ্চাও বুঝে যাবে যে উনি আমাকে বিয়ে করতে চান না। তাহলে কেনো এমন করলো সবাই আমার সাথে?

পাঁচদিন কেটে গেছে। এই পাঁচদিন আপি ছাড়া বাড়ির কারোর সাথে কথা বলিনি। ওনারাও খুব বেশি বিরক্ত করেন নি আমায়। শুধু একবার আব্বু এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গিয়েছিল। কিচ্ছু ভালোলাগছে না আমার। সবকিছুই বিরক্ত লাগছে। এটা বিয়ে? না ছেলে বিয়েতে রাজি আর না কোনো আনন্দমুখর পরিবেশ আছে। সবটাই থমথমে। অথচ এই বিয়ে নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো আমার। উনি রাজি থাকলেও না হয় মানা যেতো। তাহলে হয়তো আমার এতো কষ্ট হতো না। হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠল। একটা আননোন নাম্বার। কিছুক্ষণ ভেবে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,

— ” ফ্রি আছো?”

চমকে উঠলাম আমি কারণ এটা অদ্রিয়ান ভাইয়া? উনি আমাকে ফোন কেনো করলেন? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি বললেন,

— ” চুপ করে কেনো আছো?”

আমি একটু হকচকিয়ে বললাম,

— ” ক্ কেনো?”

উনি গম্ভীর কন্ঠেই বললেন,

— ” ফ্রি থাকলে তোমাদের বাড়ির কাছে লেক পার্কটাতে চলে এসো। কথা আছে।”

আমার কী হলো জানিনা আমার মুখ দিয়ে এমনিই বেড়িয়ে গেলো,

— ” আচ্ছা আসছি।”

উনি ফোন রেখে দিতেই আমি ভাবলাম কী বলবে? যাবো? হ্যাঁ বলে দিয়েছি যেতে তো হবেই। তাই একটা ওড়না নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। ওখানে গিয়ে দেখি উনি একটা বেঞ্চে বসে আছেন গম্ভীরভাবে। আমি মনের মধ্যে অনেক সংকোচ নিয়ে ওনার কাছে গিয়ে হালকা করে কাশি দিলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” বসো।”

আমি কয়েকসেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে ইতস্তত করে ওপার পাশে বসলাম। উনি বেশ অনেকটা সময় চুপ করে রইলেন। ওনাকে দেখে এমন মনে হলো উনি কিছু বলতে চাইছেন না কিন্তু সেটাই বলার চেষ্টা করছেন। অনেকক্ষণ পর উনি নিরবতা ভেঙ্গে বললেন,

— ” তুমি এটা নিশ্চয়ই বুঝে গেছো। বিয়েটা করতে চাইনা আমি?”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললাম। এসব বলতে ডেকেছেন আমায় উনি?সেটাতো আব্বুকেই বলতে পারতেন। উনি আবারও বললেন,

— ” দেখো আমি বিয়েটাতে রাজি হতে বাধ্য হয়েছি শুধুমাত্র বাবা মায়ের জন্যে। কিন্তু সত্যিই এটাই এই বিয়েটা হলে না তুমি সুখি হবে আর না আমি কারণ আমি কখনো তোমাকে বউ হিসেবে মানবোনা। এতে তোমার জীবণটা নষ্ট হবে সাথে আমারটাও। আমার পক্ষ থেকে বিয়েটা ভাঙ্গা সম্ভব হচ্ছে না। তাই বলছি বিয়েটা তোমার পক্ষ থেকে ভেঙ্গে দাও । ”

আমার এবার ভীষণ রাগ হলো। বউ বলে মানতে পারবেনা মানেটা কী? তা সেটা নিজের বাবা মা কে না বলে আমায় কেনো বলছে? আর আমি কেনো ভাঙতে যাবো? আমার দিক দিয়ে তো প্রবলেম নেই। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে উনি বললেন,

— ” আশা করি তুমি বুঝতে পারছো। আর তাছাড়া তুমি এখন খুব ছোট। তোমার ক্যারিয়ার, জীবণ সবকিছুই পরে আছে। তাই বলছি যা কিছু করে হোক বিয়েটা ভেঙ্গে দাও। ইউ আর নট রাইট পার্রসন ফর মি।”

এমনিতেই রেগে ছিলাম কিন্তু লাস্টের লাইনটা মাথায় জেদ চাপিয়ে দিলো। মানে কী এসবের? আমি কী এদের হাতের পুতুল নাকি? বাবা বলছে বিয়ে করো হবু বর বলছে বিয়ে ভাঙ্গো। মাঝখান থেকে আমি স্যান্ডউইচ কেনো হবরে ভাই? উনি বললেন;

— ” বুঝতে পেরোছো কী বলেছি?”

— ” হুম।”

বলে উঠে চলে এলাম ওখান থেকে। ওনাকে হুম বলেছি ঠিকই কিন্তু মাথায় অন্যকিছু চলছে। মাথায় এখন জেদ চেপে আছে তো কী করছি নিজেও বুঝতে পারছিনা।

সন্ধ্যায় মানিক আঙ্কেলরা এলেন আমাদের বাড়িতে সাথে আদ্রিয়ান ভাইয়াও। সবাই নানারকম কথা বলছেন। এরমধ্যেই আমি বলে উঠলাম,

— ” আমি কিছু বলতে চাই তোমাদের।”

সবাই তাকালো আমার দিকে। আমি বিকেলে আদ্রিয়ান ভাইয়া আমাকে যা যা বলেছে সবটাই বলে দিলাম। ইনফ্যাক্ট আরো বাড়িয়ে বললাম তারসাথে ন্যাকাকান্না তো আছেই। আঙ্কেল হতাশ দৃষ্টিতে আদ্রিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালেন। ওনার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে যাতে এখনি খেয়ে ফেলবে। আমি মনে মনে ভীত হলেও বাইরে দিয়ে এমন ভাব করলাম যেনো এতে আমার কিছুই যায় আসেনা। উনি রেগে উঠে চলে গেলেন। উনি যেতেই সবাই মিটমিটিয়ে হাসতে শুরু করলেন। আমি একটু লজ্জা পেলাম। কারণ ওনারা সবাই শুরুতেই বুঝেছেন যে আমি ড্রামা করছিলাম। জেদে বসে এসব করলেও রুমে গিয়ে অনেকক্ষণ ভাবলাম বিয়ে যখন উনি করতে চাননা আমারও উচিত ছিলো বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করা। অনেক্ষণ ভেবে আব্বুর রুমে গিয়ে সব দ্বিধা কাটিয়ে বলেছিলাম আব্বু আমি বিয়ে করতে চাইনা। আব্বু শুধু আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, ‘বিশ্বাস করো আমাকে? তাহলে আপত্তি করোনা। এখন বুঝতে না পারলেও একদিন বুঝবে যে এই সিদ্ধান্তটা কতোটা ঠিক ছিলো। এরপর আমার আর কিছুই বলার ছিলো না। অবশেষে ইচ্ছে না থাকা সত্তেও বিয়ে করতেই হয়েছে আমাদের।

আদ্রিয়ান ভাইয়ার ডাকে কল্পনা থেকে বেড়িয়ে এলাম। উনি হাত ভাজ করে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

— ” আমি তোমাকে পড়তে দিয়ে গেছিলাম আর তুমি বসে বসে ভাবনায় হারিয়ে যাচ্ছো?”

— ” কে বলেছে ভাবছিলাম হ্যাঁ? পড়ছিলাম তো?”

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

— ” আচ্ছা? তাহলে হয়ে গেছে নিশ্চয়ই? দেও দেখি কতোটুকু হয়েছে?”

আমি একটু ইতস্তত করে বললাম,

— ” না মানে ওই ছয় পেইজই হয়েছে আরকি।”

উনি বেডে বসে বললেন,

— ” তাহলে আর কী? সারারাত বসে বসে কম্প্লিট করে। তারআগে ঘুম নেই। এন্ড ইয়েস, কোনো এক্সকিউস নয়।”

আমি এবার একটু অসহায় ফেস করে বললাম,

— ” এমন করছেন কেনো? বিলিভ মি আমি সত্যিই মন দিয়েই পড়েছি। প্রথম দিনেই এই সুইট, লিটল, ভোলিভালি বাচ্চাটাকে এতোটা টর্চার করবেন না প্লিজ প্লিজ প্লিজ। প্রমিস করছি কাল থেকে যা বলবেন তাই করবো একটুও নড়চড় হবেনা।”

— ” একটুও না?”

আমি মেকি হেসে একটু তুতলিয়ে বললাম,

— ” ও্ ওই একটুখানি হবে বেশি না।”

উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে তারপর একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললেন,

— ” ড্রামাবাজ একটা। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো সকালে উঠে অন্তত দুঘন্টা পরে তারপর কোচিং এ যাবে।”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। এতো সকালে কে উঠবে? আচ্ছা? উনিকি এভাবে আমার ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন? বিয়ে করেছি বলে? ব্যাটা খবিশ টর্চারের আর কোনো ওয়ে পেলিনা? পড়া দিয়েই করতে হবে? উনি আমার মাথায় একটা গাটা মেরে বললেন,

— ” কী হলো শুয়ে পরতে বললাম তো।”

আমি মুখ ফুলিয়ে শুয়ে পরলাম। উনি খাবারটা খেয়ে লাইট অফ করে ওপর পাশে শুয়ে পরলেন। বলা বাহুল্য যে মাঝখানের সেই ইন্ডিয়া পাকিস্তানের বর্ডার আজও বিদ্যমান। ব্যাটা কোলবালিশের বাচ্চা। নিজে একটা বিয়ে করে হাজবেন্ট নিয়ে সুখে থাকনা আমার আর আমার বরের মাঝখানে কাবাবের হাড্ডি হয়ে কেনো আছিস। এখন এই কোলবালিশটাকে দেখলেই কেমন সতীন সতীন ফিলিংস আসে। ইচ্ছে করে ছিড়ে কুটিকুটি করে দেই। আর আমার বর মহাশয়? হুহ, ব্যাটা বজ্জাতের হাড্ডি, ঢং করে কোলবালিশ দেয়া হচ্ছে। যত্তোসব ন্যাকামো। কোথায় হাজবেন্ট রা বউয়ের কাছে আসার বাহানা খোজে। আর এ ভুল করেও জেনো আমার কাছে না আসতে হয় সেটাই ভাবে। জেনো আমাকে ছুলেই ওনার ভার্জিনিটি শেষ হয়ে যাবে, অদ্ভুত। আমার তো এখন খবিশটাকে নিয়ে যথেষ্ট ডাউট হচ্ছে, কোনো ডিফেক্ট নেই তো? দূর কী আবলতাবল ভাবছি। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,

— ” মনে মনে আমার গুষ্ঠির পিন্ডি না চটকে ঘুমোও।”

আমি একটু চমকে উঠলাম। সামনাসামনি কিছু বলার সাহস তো পাইনা মনে মনে বকে যে গায়ের জ্বালা মেটাবো খবিশটার জন্যে সেটাও করতে পারিনা। রিডিউকিলাস!

#চলবে…

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৯
.
সকালে কারো অনেক কর্কশ ডাকে চোখ খুলে তাকালাম। সকাল সকাল আমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলো। উফফ ডিসগাস্টিং। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি একটা হাই তুলে উঠে বসে বললাম,

— ” কী হয়েছে?”

উনি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললেন,

— ” কী হয়েছে? আধ ঘন্টা ধরে ডাকছি তোমাকে। উঠে যে পড়তে বসতে হবে ভুলে গেছো?”

আমি বিরক্ত হয়ে তাকালাম ওনার দিকে। এই লোকটা ইহকালে আমাকে শান্তি দেবেনা সেটা আমি শিউর। আরে ভাই হাজবেন্ড হাজবেন্ড এর মতো থাকনা টিচার হতে কে বলেছে? হাজবেন্ডরা যা করে তার কিছুই তো করছেই না উল্টে আমার পড়া নিয়ে পরে আছেন। ধ্যাত ভাল্লাগেনা। উনি আমার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললেন,

— ” এই যে মহা গবেষক? এতো গবেষণা বাদ দিয়ে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।”

আমি ওনার দিকে এক ড্রাম বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে তারপর ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেড় হয়ে দেখি উনি দুটো কফির মগ হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” ব্যালকনিতে এসো।”

আমি একটু অবাক হলেও কিছু বললাম না। হাতমুখ মুছে ওনার পেছন পেছন ব্যালকনিতে চলে গেলাম উনি আমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিলেন। আমিও চুপচাপ সেটা হাতে নিয়ে নিলাম। উনি কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে বললেন,

— ” আমি নিজে বানিয়েছি খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে?”

আমি এবার চরম অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম ওনার দিকে। উনি কফি করেছেন তাও আমার জন্যে? আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে ফেললেন। ভ্রুজোড়া কুচকে রেখেই বললেন,

— ” আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে কফিটা খাও। আমাকে দেখার জন্যে যথেষ্ট সময় আছে। যতোদিন বেঁচে আছি দেখতে পাবে কিন্তু কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেলে আর খেতে পারবেনা।”

আমি কিছু না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম। এক চুমুক খেতেই উনি ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলেন কেমন হয়েছে? আমিও মাথা নেড়ে বললাম বোঝালাম দারুণ। আসলেই দারুন হয়েছে খেতে। উনি এতো ভালো কফি বানায় জানতামি না। উনি আবারও কফির মগে চুমুক দিয়ে বললেন,

— ” এখানে মিনিট দশএক থাকো, ফ্রেশ এয়ার নাও এরপর ভেতরে গিয়ে পড়তে বসবে ঠিক আছে?”

আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। উনি কিছু বলছেন না রেলিং ও ভর দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে আর মাঝেমাঝে কফির মগে চুমুক দিচ্ছেন। আমিও কফির মগে চুমুক দিতে দিতে সকালের এই ফ্রেশ এয়ার উপভোগ করছি। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে উনি বললেন,

— ” অনি?”

আমি হালকা চমকে উঠলাম। এমন আদুরে কন্ঠে অনি উনি আগে ডাকতেন। আপির বিয়ের আগে। প্রায় চারমাস পর ওনার মুখে এরকমভাবে অনি ডাক শুনলাম। কোনরকম তুতলিয়ে বললাম,

— ” জ্ জ্বী?”

উনি ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” কাউকে কখনো ভালোবেসেছো?”

আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো করলেন আমায়? উনি আবারও বললেন,

— ” কী হলো বলো?”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,

— ” বেসেছি তো। এখনো বাসি। আব্বু,আম্মু, কাব্য, আপি, ভাইয়াদের। এবাড়ির সবাইকেও এখন খুব ভালোবেসে ফেলেছি।”

উনি মুখে হালকা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললেন,

— ” আমাকেও?”

আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম। কী উত্তর দেবো বুঝতে পারছিনা ভালোবাসি আমি ওনাকে? এই প্রশ্নের উত্তর তো আমার কাছে এখনো অজানা। আমার কোনো উত্তর না পেয়ে উনি বললেন,

— ” চলো রুমে চলো পড়তে হবে।”

আমিও ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ ভেতরে চলে গেলাম। উনি প্রায় দেড় ঘন্টা পড়িয়েছেন আমায়। পড়া শেষ করে আমি রেডি হয়ে নিলাম। উনিও আমার সাথেই রেডি হয়ে নিচে নামলেন। এখন উনি সবার সাথে একটেবিলেই খান। ইফাজ ভাইয়া ইচ্ছে করে ওনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে মামনীকে বললেন,

— ” ছোট আম্মু বড় মাছের পিসটা আমাকেই দাও তো।”

কিন্তু আদ্রিয়ান কোনো রিঅ্যাক্ট করলেন না। ওনাকে পাতে যেটা দেওয়া হয়েছে চুপচাপ সেটাই খাচ্ছেন। ইফাজ ভাইয়া অাবারও হতাশ হলেন সাথে বাকিরাও। আমি খেয়ে উঠে বললাম,

— ” আচ্ছা তাহলে আমি আসছি হ্যাঁ। কোচিং এ লেইট হয়ে যাবে নয়তো।”

উনি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন,

— ” ওয়েট ওয়েট। আমি ড্রপ করে দেবো তোমাকে।”

আমি একটু হেসে বললাম,

— ” নাহ তার প্রয়োজন নেই আমি যেতে পারবো।”

উনি ভ্রু কুচকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” অফার করছিনা তোমাকে। ইটস মাই ওর্ডার।”

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি একটু বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” আসার সময় তো একাই আসতে হবেনা? প্রবলেম কী?”

— ” আগ্গে না। আমি নিজে আপনাকে পিক করবো। আর যেদিন আমি যেতে পারবোনা সেদিন গার্ড পাঠিয়ে দেবো।”

আমি অবাক সাথে খুব বিরক্ত হয়ে বললাম,

— ” মানেটা কী? আমি কী বাচ্চা যে হাত ধরে রাস্তা পার করাবেন? প্রথম দিন যাওয়াটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু তাই বলে রোজ?”

উনি এবারেও শক্ত কন্ঠে বললেন,

— ” আমি আগেও বলেছি দিস ইজ মাই ওর্ডার। আমার পার্মিশন ছাড় বাড়ির বাইরে কোথাও যাবেনা তুমি।”

— ” কিন্তু..”

— ” আমার কথার ওপর কথা শুনতে আমার ভালো লাগেনা অনি। যা বলেছি সেটাই ফাইনাল।”

সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওনারা মাথা নিচু করে খাচ্ছে আর মিটমিটিয়ে হাসছেন। আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই উনি বললেন,

— ” চলো?”

আমি ওনার পেছন পেছন গেলাম। কোচিং সেন্টারের পৌছে উনি আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন। উনি যেতেই একজন লোক এসে বললেন,

— ” আরে মিস্টার এডি এখানে?”

বলে আদ্রিয়ানের সাথে হ্যান্ডশেইক করলেন। আদ্রিয়ান কিছু বলবেন তার আগেই লোকটি বললেন,

— ” তা হঠাৎ স্যার? কোনো কাজ ছিলো নাকি?”

উনি আমার দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন,

— ” হুমম আসলে ওকে ভর্তি করেছি এখানে। মেডিক্যাল এর জন্যে কোচিং করবে। তাই পৌছে দিয়ে গেলাম।”

— “আচ্ছা কে হয় উনি আপনার?”

উনি খুব স্বাভাবিকভাবেই বললেন,

— ” ও আমার ওয়াইফ।”

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম ওনার দিকে। উনি সবার সাথেই পরিচয় করিয়ে দিয়ে তারপর ক্লাসে পাঠিয়ে নিজেও চলে গেলেন। আমি ভাবছিলাম যে লোকটা বাসররাতেও বলেছিল আমায় বউ বলে মানেনা অথচ আজও সবার সামনে কতো সহজ সাবলীলভাবে আমাকে নিজের স্ত্রীর হিসেবে পরিচয় দিয়ে দিলো।

______________________

বিকেলে আপির রুমে আপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি। আপি আমার মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল,

— ” আদ্রিয়ান কী এখনো তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে?”

— ” না আপি শুধু ঐ একদিনিই করেছিলেন।আসলে একটু রেগে ছিলেন আমার ওপর। এরপর তো কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি। উল্টে আরো কেয়ার করে এখন।”

আপি বিলি কাটা থামিয়ে বলল,

— ” ভালোবেসেছে?”

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম আপির দিকে তারপর বললাম,

— ” কী বলছো? এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা হয়? যেটুকু করছেন দায়িত্ববোধ থেকে করছেন।”

আপি আবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— ” দেখ। কোচিং এ ভর্তি করা, পড়তে বলা এই পর্যন্ত দায়িত্ববোধ থেকে করে মেনে নিলাম। কিন্তু নিজের বসিয়ে এতো যত্ন করে পড়ানো, নিজের হাতে কফি করে খাওয়ানো, মাত্র বিশ মিনিটের রাস্তাটাও একা ছাড়তে না চাওয়া। এগুলোও কী শুধু দায়িত্ব?”

আমি নিজেও একটু ভাবনায় পরলাম। কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে বললাম,

— ” হ্যাঁ তাছাড়া আর কী?”

আপি আমার মাথায় একটা চাটা মেরে বলল,

— ” গাধি একটা?”

বলে মাথায় আবার বিলি কাটতে শুরু করলো। আমি আপির কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও প্রশ্নগুলো আমার মনেও যে উঠছে না তা কিন্তু নয়। সত্যিই কী এগুলো শুধুই দায়িত্ববোধ নাকি অন্যকিছু?”

_____________________

আমি মাথা নিচু করে মুখ কাচুমাচু করে বসে আছি আর আদ্রিয়ান বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনি বইটা সামনে ঠাস করে রেখে একগাদা বিরক্তি নিয়ে বললেন,

— ” লাইক সিরিয়াসলি? তো জিকে এতোটা খারাপ আই জাস্ট কান্ট বিলিভ।”

আমি মুখ ফুলিয়ে হালকা তুতলে বললাম,

— ” আসলে ঐ ফিজিক্স ক্যামিস্ট্রির চক্করে এসব পড়া হয়নি।”

উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” তাই বলে এই সামান্য জিনিসগুলো কেউ না পারে? যেভাবে সাল আর মাস বলছো এতে করে তো দেশেই ইতিহাসটাই বদলে দেবে তুমি। কবে জেনো বলে বসো সাত মার্চের ভাষণ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দিয়েছে, আর উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৫২ তে হয়েছে, আর ভাষা আন্দলন ১৯৭১ এ।”

— ” আমি এতোটাও ডাফার নই।”

— ” এর চেয়ে কমও নও। পাঁচ বছর যাবত আমার কোনো প্রাকটিস নেই তবুও চোখ বন্ধ করে বলতে পারবো।”

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,

— ” আপনার মতো ওতো ট্যালেন্ট নেই আমার মধ্যে।”

— ” না না ট্যালেন্ট আছে তোমার। সারাদিন লাফালাফি করার, টুইন্টি ফোর সেভেন আবলতাবল বকার, বোকা বোকা কথা বলার আর আমার গুষ্ঠির পিন্ডি চটকানোর ট্যালেন্ট খুব বেশি পরিমাণ আছে তোমার।”

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। সারাদিন আমাকে টিজ করে খবিশ একটা। উনি ভ্রু কুচকে রেখেই ল্যাপটপটা অন করে বললেন,

— ” তাড়াতাড়ি কম্প্লিট করে এটা। আমি অ্যাপটা ডাউনলোড করে ওটায় লগ ইন করছি। কাল সকালে এক্সাম আছে তো?”

বলে ল্যাপটপে কিছু করতে লাগলেন। আমিও পড়তে শুরু করলাম। একটু পর উনি বলে বললেন,

— ” তোমার ফোনে মেসেজ আছে দেখো ওটা দেখে কোচিং রোলটা বলো?

আমি দেখে বললাম ওনাকে। উনি ওটা টাইপ করে বললেন,

— ” পাসকোডটা বলো?”

আমি সাথে সাথেই চমকে উঠলাম। শরীর জমে যাচ্ছে আমার আস্তে আস্তে। এই উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” কী হলো পাসকোডটা বলো?”

ওনার আওয়াজে আমি কেঁপে উঠলাম। আমার শরীর অবস হয়ে আসছে। আমি বাক্যটা বড্ড বিষাক্ত লাগছে আমার কাছে। বড্ড বেশি। আমি কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললাম,

— ” অ্ আমি জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা। কিচ্ছুনা।”

উনি ল্যাপটপটা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে আমার দুই বাহু ধরে চিন্তিত কন্ঠে বলল,

— ” অনি? কী হয়েছে তোমার? আমিতো জাস্ট পাসকোডটা জানতে চেয়েছি।”

আমি জোরে চেঁচিয়ে বললাম,

— ” আমি জানিনা কোনো পাসকোড।”

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনি এবারেও চিন্তিত কন্ঠে বললেন,

— ” তুমি এতোটা হাইপার হচ্ছো কেনো? আমি পাসকো..”

— ” নাহ। নাহ আপনি কিচ্ছু জানতে চাইবেননা আমার কাছে। আমি কিচ্ছু জানিনা,কিচ্ছুনা।”

বলে শব্দ করেই কেঁদে দিলাম আমি। উনি এবার আমাকে নিজের বুকে জরিয়ে ধরলেন। তারপর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

— “ওকে ফাইন। আমি কিচ্ছু বলছিনা। কুল।”

বলে আমাকে ওনার বুকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। এই প্রথম উনি নিজে থেকে এতোটা কাছে টেনে নিলেন আমায়। অন্যসময় হলে হয়তো লজ্জা পেতাম, ওনার থেকে একটু দূরে সরে যেতাম। কিন্তু এখন এতোটাই ভয় পেয়ে আছি যে আমিও শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওনাকে শরীর ভীষণ রকম কাঁপছে। কাপুঁনি থামাতে ওনার পিঠের ওপর দিয়ে টিশার্টটা শক্ত করে ধরে আছি। অদ্ভুত ব্যাপার ওনাকে আমি যতোটা শক্ত করে ধরে আছি তার চেয়েও বেশি শক্ত করে ধরে রেখেছেন উনি আমাকে।

#চলবে…

#ভালোবাসি তোকে ❤
#লেখিকা- অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ১০
.
উনি বেশ অনেকটা সময় খুব শক্ত করে আমাকে জরিয়ে ধরে ছিলেন। শক্ত করে জরিয়ে ধরার ফলে আমার কাঁপুনি আস্তে আস্তে কমে গেছে। কিন্তু আমি এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছি। উনি এবার ওনার হাত আলগা করে পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে আমার চুলের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে চুলগুলো নাড়তে নাড়তে বললেন,

— ” অনি? কান্না বন্ধ করো।”

ওনার কথায় কান্না বন্ধ করে দিলাম। কিন্তু শরীর মাঝেমাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। সেটা দেখে উনি আমাকে ছেড়ে দিতে নিয়েও ছাড়লেন না নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রাখলেন। তারপর বললেন,

— ” কিচ্ছু হয়নি। সি, এভরিথিং ইজ ফাইন। অনি?”

আমি আবার ওনার টিশার্ট খামছে ধরে ওনার বুকে মুখ গুজে রইলাম। কী করছি আমি নিজেও জানিনা কিন্তু এইমুহূর্তে ওনার বুকেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করছি। উনিও আর কিচ্ছু বললেন না আমাকে বুকে নিয়েই বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে রইলেন। আমিও একদম চুপ করে ওনার বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ কাঁদার কারণে মাথা ভার হয়ে আছে চোখেও ভারী হয়ে এলো। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম ওনার বুকেই।

__________________

সকালে আমি তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছি। আর উনি তখন থেকে তাড়া দিয়ে যাচ্ছেন। আমি ওড়না সেট করছি তখন আদ্রিয়ান বললেন,

— ” অনি ডু ফাস্ট। অলরেডি দেরী হয়ে গেছে।”.

— ” এইতো হয়ে গেছে। আর একটুখানি।”

আদ্রিয়ান একটু রাগী কন্ঠে বলল,

— ” হ্যাঁ তাড়াতাড়ি।”

আমি ওড়নাটা সেট করে ব্যাগটা কাধে নিয়ে বললাম,

— ” হয়ে গেছে।”

উনি বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,

— ” অবশেষে। চলো!”

নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে গেলাম। কোচিং সেন্টার থেকে বেড়িয়ে নিচে নেমে গিয়ে দেখলাম উনি দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ওনার সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর পরে উনি কিছু না বলে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসে পরলাম। উনিও ড্রাইভিং সিটে বসে আমার সিটবেল্ট বেধে দিলেন। এটা ভাববেন না যে আমি সিটবেল্ট বাধতে জানিনা। আসলে প্রথম দিন উনি নিজেই বেধে দিয়েছিলেন তারপর থেকে আমি আর বাধিনা। উনি নিজে বেধে দেন এটাই ভালোলাগে আমার কাছে। অনেকক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম। হঠাৎ করেই উনি বলে উঠলেন,

— ” কাল রাতে এমন কেনো করলে? কী হয়েছিল?”

সাথেসাথে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো। নিজেকে সামলে কথা ঘোরানোর জন্যে বললাম,

— ” আচ্ছা আমি এক্সাম দিলাম কীকরে? আপনি কী অ‍্যাপে লগ ইন করেছিলেন?”

— ” হ্যাঁ। তোমাকে ঘুম পারিয়ে আমি নিজেই সব সেট করে রেখেছিলাম।”

— ” ওহ।”

উনি পাল্টা আর কোনো প্রশ্ন না করে ড্রাইভিং এ মন দিলেন। আমি একটু অবাক হলাম এমনি সময় হলে তো আমাকে প্রশ্ন করতে করতে শহীদ করে দিতেন আজ কী হলো? কী জানি কখন কী হয় ওনার সেটা শুধু আল্লাহ জানেন আর উনি জানেন।

_________________

বিকেলে বসে বসে পড়ছি। সত্যি বলতে বই সামনে নিয়ে বসে থাকলেও ওনার কথা বেশি ভাবছি। এতোদিনে এটুকু বুঝেছি ওনার অন্যকোথাও কিছু নেই। মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলেননা উনি। যতোটুকু বলে নূর আপুর সাথে আরেকটা বিশেষ তথ্য যেটা পেলাম সেটা হলো ওনারা কলেজ থেকেই পরিচিত। মানে কলেজ লাইফে নূর আপু ওনাদের পরিচিত ছিলেন। তাহলে আমার সাথে ওনার কী প্রবলেম ভাই। এসব ভাবতে ভাবতে কোলবালিশটার দিকে চোখ গেলো। আগেই বলেছি এটাকে দেখ আমার সতীন সতীন ফিলিংস আসে তাই কোলবালিশটা হাতে নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওটার দিকে তারপর বললাম,

— ” এই তোর লজ্জা করেনা? একটুও লজ্জা নেই তোর মধ্যে হ্যাঁ? অন্যের বরের দিকে নজর দিস? তারওপর বর বউয়ের মাঝখানে শুয়ে থাকিস? হাউ শেইমলেস ইয়ার। আচ্ছা তুই একটা কথা বল এটা কী ঠিক? জানি কী বলবি। এটাই তো যে আমার বর নিজে তোকে মাঝখানে আনে? আচ্ছা একটা কথা বল উনি আনলেই তুই যাবি কেনো? হোয়াই? মিনিমান সেল্ফরেস্পেক্ট নেই? নিজে থেকে উঠে চলে যেতে পারিস না? তা যাবি কেনো? আমার ওমন সুইট, কিউট, হ্যান্ডসাম বরটাকে কেই বা ছাড়তে চাইবে? উফফ কী জ্বালা। এই জন্যেই সুন্দর ছেলেদের বিয়ে করতে নেই। জ্বলতে জ্বলতে ভেতরটা পুরে পুরো কয়লা হয়ে যায়।”

হঠাৎ কাশির আওয়াজে চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এইরে কিছু শুনেটুনে ফেলেনি তো? ইস! আমিও না কথা বলার সময় কিছুই খেয়াল থাকেনা। উনি কিছু না বলে সোজা ওয়াসরুমে চলে গেলেন। আর আমি ভাবছি ওনার মুখ দেখেতো কিছুই বুঝলাম না কিছু শুনেছেন? নাকি শোনেননি? ধ্যাত্তেরি ছোট্ট মাথা এত্তো প্রেশার কীকরে নেয়? উফফ আল্লাহ আমার দিকে একটু দেখো।

__________________

দুইদিন কেটে গেলো। এই দুইদিন ওনাকে একটু অন্যরকম দেখতাম জেনো খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছেন। বেশিরভাগ সময়ই বাইরে বাইরে কাটান। তবে তাই বলে যে আমার লেখাপড়ায় ছাড় দেন তা কিন্তু একদমি না। যখনই আসেন ঠিকই পড়া আদায় করে নেন।আর আমি আমার প্যারাময় লাইফে একদম অতিষ্ঠ। বর বেশি পন্ডিত হলে জীবনটা তেজপাতা হয়ে যায় এটা শুনেছিলাম এখন নিজেই নিজের জীবন দিয়ে দেখেও নিচ্ছি।রাতে আমার ইঞ্জিনিয়ার প্লাস সাইন্টিস্ট বর আবার টিচার বরের রোল প্লে করতে শুরু করলেন। আর আজ খুব গুরুতর একটা সাবজেক্ট নিয়ে বসেছেন। সেটা হল ফিজিক্স। যেটা বরাবরই আমার কাছে ভীষণ ভয়াবহ লাগে। তারওপর উনি এমন এমনভাবে কোয়েশচন করছেন যে পুরো কনফিউসড হয়ে যাচ্ছি। আর না পারার ফলসরূপ একটা করে রামধমক দিয়ে যখন উত্তরটা বলছেন তখন আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি কারণ উত্তরটা আমার জানাই ছিলো। কিন্ত ওনার প্রশ্নগুলোই কেমন আজব আজব। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

— ” আপনি এমন কেনো বলুনতো? এভাবে পেঁচিয়ে কেউ প্রশ্ন করে?”

উনি বইটা বন্ধ করে আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললেন,

— ” মেডিকেল এক্সামে তোমার জন্যে বেছে বেছে সহজ করে প্রশ্ন দেবে তাইনা?”

আমি মুখ ফুলিয়ে উঠে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি উনি বিছানা করে ফেলেছেন। আমি ভাবি লোকটা এমন কেনো? এতো যত্ন নেয় আমার। পারলে জলটাও ঢেলে খেতে দেয়না। এত্তো কেয়ারিং একটা হাজবেন্ট তো সবাই চায়। কিন্তু একটা জিনিসেরই অভাব রেখেছেন উনি। ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটাই এখনও পাই নি ওনার কাছ থেকে। কী হয় একটু ভালোবাসলে?

— ” কী হলো ঘুমাবেনা? এসো?”

ওনার কথায় হুস এলো আমার। কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে পরলাম। উনিও লাইট অফ করে যথারীতি মাঝখানে আমার সতীনকে রেখে শুয়ে পরলেন। উনি উল্টোদিকে মুখ করে শুয়ে আছেন। আমি উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলাম। দুজনেই চুপচাপ আছি। অনেকটা সময় কেটে গেল, উনি ঘুমিয়েছেন কী না জানিনা কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ উনি বলে উঠলেন,

— ” জেগে আছো?”

আমি একটু চমকে গেলাম। ওনার দিকে ঘুরে ইতস্তত করে বললাম,

— ” জ্ জ্বী জেগে আছি।”

উনিও আমার দিকে ঘুরে বললেন,

— ” আচ্ছা তোমার কী মনে হয়? তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে? আমাকে বিয়ে করে ভুল করেছো তুমি?”

আমি কোনোপ্রকার সংকোচ না করে সরলভাবে বললাম,

— ” আপনার মতো হাজবেন্ট পাওয়া তো যেকোনো মেয়ের কাছে ভাগ্যের বিষয়। কিন্তু কী বলুন তো শুধুমাত্র সাড়ে তিন অক্ষরের এই ‘কবুল’ শব্দটা ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে দুজনকে এক ছাদের নিচে থাকার অনুমতি দিয়ে দিলেও দুজনকে সত্যিকারের বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারেনা।”

বলেই আমি আবার উল্টো ঘুরে শুয়ে পরলাম। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারছি উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। থাকুক তাকিয়ে যতোখুশি তাকিয়ে থাকুন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে অন্ধ হয়ে যাক তাতে আমার কী? আমিতো তাকাবো না ওনার দিকে। একদম না।

_________________

সকালে ওনার ডাকেই আমার ঘুম ভাঙলো। তবে রোজকার মতো আজকের কন্ঠস্বর কর্কশ নয়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি আজকেও কফির মগ নিয়ে বসে আছে। আমি একটু অবাক হয়ে উঠে বসে ওনার দিকে তাকালাম। উনি মুচকি হেসে আমার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

— ” গুড মর্নিং ম্যাডাম।”

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে। আজ ওনার ব্যবহারে অন্যকিছু দেখছি আমি। প্রতিদিন ওনার ডাকে একটা টিচার টিচার ফিলিংস থাকে কিন্তু আজ ওনার ডাকে কেমন যেনো হাজবেন্ট হাজবেন্ট ফিলিংস পাচ্ছি আমি। অবাক হয়েই ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটিয়ে বললাম,

— ” ভেরি গুড মর্নিং।”

বলে কফির মগটা হাতে নিয়ে নিলাম। উনি একটু এগিয়ে এসে আমার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে গুছিয়ে দিলো। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি আমার কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে কিছু বলবেন তখনই দরজার কাছে কেউ গলা ঝাড়ল, তাকিয়ে দেখি জাবিন, ইফাজ ভাইয়া, আপি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাকাতেই তিনজনেই দাঁত বেড় করে একটা হাসি দিলো। এরপর তিনজনই হেলেদুলে রুমে ঢুকলো। উনি আর আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি। ইফাজ ভাইয়া দাঁত কেলিয়ে ভ্রু বলল,

— ” কী চলে?”

সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদ্রিয়ানও একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,

— ” চলতে আর দিলি কোথায়? সবেতো শুরু করছিলাম এসেই তো সব ঘেটে দিলি।”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে। কারো মুখে কথা নেই। উনি ভ্রু কুচকে সবার দিকে চোখ বুলিয়ে বলল,

— ” হোয়াট? এম আই লুকিং লাইক আ এলিয়েন?”

আমরা চারজনেই একসাথে না বোধক মাথা নাড়লাম। উনি এবার নিজেকে একবার চেইক করে বললেন,

— ” অদ্ভুত কিছু দেখছো আমার মধ্যে? লাইক ডানা, এক্সট্রা হাত পা বা আইস?”

আমরা এবারেও সবাই না বোধক মাথা নাড়লাম। উনি এবার বিরক্ত হয়ে বললেন,

— ” তো? এভাবে সবাই চোখ বড় বড় করে দেখছো কেনো? আই নো আ’ম হ্যান্ডসাম। তাই বলে এভাবে নজর? সো শেইমফুল।”

ইফাজ ভাইয়া অবাক কন্ঠে বললেন,

— ” ত্ তু তুই…”

আদ্রিয়ান হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতে বললেন,

— ” ভাইয়া বিয়ে করে বউয়ের ভয়ে তোতলাতে তোতলাতে তোতলা হয়ে গেছিস?”

আমরা এখনো ওনার দিকে তাকিয়ে আছি অবাক হয়ে। উনি পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,

— ” হোয়াট এভার। এই যে ম্যাডাম হা করে তাকিয়ে না থেকে পড়তে বসুন। আর আপনারা এই মুহূর্তে আমার বউকে কোনো ডিসটার্ব করা যাবেনা। যা বলার বলে চলে যাও আড্ডা পরে হবে। আমি বাবার রুম থেকে বই আনতে যাচ্ছি।”

এটুকু সিটি বাজাতে বাজাতে চলে গেলন উনি। আমরা চারজনেই হা করে তাকিয়ে আছি ওনার যাওয়ার দিকে। আদ্রিয়ান আবার আগের মতো বিহেভ করছেন। এটা সত্যি ছিলো? দ্যাট মিনস আদ্রিয়ান আবরার জুহায়ের ইজ ব্যাক?

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে